#অবন্তিকা_তৃপ্তি
(সংবেদনশীল ১৮+)
— তুই থাক তোর বইনগিরি নিয়ে। ফাসছি আমি; ভালো তো বাসছি আমি। তুই তো এখন কথাই শোনাবি, তোরই তো জিন্দেগি। শান্তি হয়ে বইসা থাক; জিতসস তুই. . . প্রাইজ তোরে দেওয়া হলো না এখন! ওটা আমি বাসর রাইতে দিমু।
কায়া এবার ঠোঁট টিপে হেসে স্নিগ্ধের দিকে মায়াবি চোখে তাকাল। ইচ্ছে হয়েছে. . বশ করে নিতে এই রাগী-কাঁচা ভাষার স্নিগ্ধ সিদ্দিককে। স্নিগ্ধ কায়ার জিতে যাওয়া ওই হাসি দেখে তেলেবেগুনে জলে যায়। চট করে কায়ার সামনে থেকে উঠে যায় জায়গা থেকে। উঠে নিচের থেকে গিয়ে মিউজিক বক্স নিয়ে আসে! সবার সামনে দাড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো;
— গানের কলি খেলব আমরা; চলো। মেয়ে পক্ষ আর ছেলেপক্ষ। আজ যে পক্ষ হারবে. . তারে উইনার পক্ষরে খাওয়াতে হবে। আমরা পোলারা ক্যান সবসময় কমলা খাটব? ওরাও খাটুক।
স্নিগ্ধের চোখে-মুখে আগুন জ্বলছে। কায়া তখনও ঠোঁট টিপে হেসে যাচ্ছে; হাসি থামছেই না. . ওর বড্ড মজা লাগছে স্নিগ্ধকে ক্ষ্যাপাতে পেরে।
স্নিগ্ধের কথা শোনে কুহু সবার আগে ভীষণ আগ্রহ নিয়ে নড়েচড়ে বসলো। স্নিগ্ধের দিকে ডাগর ডাগর চোখদুটো তার আটকানো। কাব্য ফোন দেখছিল মাদুরে আধশোয়া হয়ে। ও এইবার উঠে বসলো; হাতের ফোনটা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে মনোযোগীও হয়েছে। স্নিগ্ধ কায়ার ঠিক পাশটায় মিউজিক বক্স রাখল; রাখার সময় কায়ার দিকে একটা ত্যাড়া নজর নিক্ষেপ অব্দি করে গেল। কায়া এখনো মজা নিচ্ছে; হাসছে মিটমিট করে।
মহুয়া চোখের চশমা ঠেলে দিয়ে বিজ্ঞদের মতো বললো;
— স্নিগ্ধ ভাইয়া; গানের কলি খেলার জন্যে গান জানা লাগে ওবেক। তুমি পারবে?
স্নিগ্ধ কাব্যের পাশে সবে বসেছিল। এমনিতেই কায়ার হাসি দেখে ওর ফাটছে; তারউপর মরার উপর খাড়ার ঘা স্বরূপ এই মহুয়ার পণ্ডিতি লেকচার। স্নিগ্ধ চেতে উঠে বললো;
— জ্ঞানীগুণী বইন আমার; চুপ থাকবি; মুখ খোলবি জাস্ট খ্যা খ্যা করে গান গাওয়ার জন্যে। ফারদার. . লিপস ক্লোজড!
স্নিগ্ধ ভাইয়া আজ অযথাই রাগ দেখাচ্ছেন কেন; বোকা মহু ওসব বুঝতে পারছে না। ওর ছোট মনে কখনো এ কথা আসেনি. .ওর স্নিগ্ধ ভাইয়া বড় হয়েছে; প্রেমে পড়েছে; এবং চুমু চেয়েছে। এসব কিছু যখন মেলে নি; তার প্রেমিকার রাগ এবার ওদের উপর দেখাচ্ছেন। মহুয়া ওসব জানে না; বুঝে না; শিখেও নি। তাই চুপচাপ ঠোঁটে আঙুল চাপল।
কাব্য দুজনের ঝগড়া দেখে; স্নিগ্ধের কাঁধে হাত রেখে ঝগড়া থামাতে ইশারা করে একবার। স্নিগ্ধ চুপ করে বসে থাকে; তার তীক্ষ্ম চোখ কায়ার হাসিহাসি মুখের দিকে।
কুহু এইবার কিছুটা ব্যথিত গলায় বলে উঠল;
— স্নিগ্ধ ভাইয়া; তুমি ইদানিং এত ঝগড়া কোথা থেকে শিখেছো? মিস্ট থেকে এইবার আসার পর থেকেই শুধু খ্যাকখ্যাক করছো।
স্নিগ্ধ আড়চোখে কায়ার দিকে তাকাল। কায়ার হাসি ততক্ষণে থেমেছে; খুকখুক করে কেশে উঠে অন্যপাশে মুখ সরিয়েছে। স্নিগ্ধের রাগের প্রধান কারণ তো সামনে বসা ও। এক মাস ধরে অনবরত একটাই আবদার করে যাচ্ছে— ও মানছে না, উল্টো টিজ করে যাচ্ছে ছেলেটাকে! প্রেমিকের জন্যে এইবার আসলেই বড্ড মায়া লাগছে কায়ার. . .চুমুই তো একটা। দিলে কি মহাভারত কিছু হয়ে যাবে? কায়া হিসেব কষছে!
কাব্য এইবার আসর ভাঙলো। খেলার পরিবেশ জমানোর জন্যে এইবার নিজেই কথা তুললো;
— তোরা খেলা শুরু করবি? রাত বাড়ছে; সকালে ভার্সিটি আছে আমার।
কাব্যের কথা শোনে সবাই তৎপর হয়ে গেল খেলা শুরু করার জন্যে। কাব্য হঠাৎ হাত উচিয়ে নিজের গায়ে জোড়ানো জ্যাকেট খুলছে! সেটা কুহুর চোখে পড়লে কুহু হা করে সেটা তাকিয়ে দেখতে থাকে। কাব্য গরমে অতিষ্ট ভঙ্গিতে জ্যাকেট খুলে সুন্দর করে সেটা চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখল। কুহু মোটামোটি হতাশ . . কাব্য ভাই এত পরিপাটি; নিট-ক্লিন ছেলে. .আর কুহু অপরিষ্কারের বাচ্চা একটা। নিজের জামা কাপড় কোথায় ফেলে রাখে নিজেও জানে না. . .চুলে শ্যাম্পু করে সপ্তাহে একবার. ! আর কোনো কাজ গুছিয়ে করা. .এটা কুহুর স্বপ্নেই সম্ভব শুধু।
শুরুতে কুহুকে গান বলতে বলা হলো। কুহু কি শুনবে; ও তো তখনো হা করে কাব্যের দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধ আবার ডাকতেই; কুহুর ধ্যান ফেরে। ও চটজলদি গলা কেশে নিজেকে তৈরি করে চোখ বুজে গাওয়া শুরু করে—
~~ একটা ছেলে মনের আঙ্গিনাতে
ধীর পায়েতে এক্কা-দোক্কা খেলে. . . ~~
কুহু ধীরে ধীরে চোখ খুলে কাব্যকে দেখে গান গাইতে থাকে: কাব্য কুহুর দিকে স্বাভাবিক চোখেই তাকিয়ে আছে। কাব্য ভাই কি বুঝেন. . . কুহু এই গান কার জন্যে গাইল? কাকে ডেডিকেট করে গাইল এই ভরা আসরে?
কুহু গান থামাতেই; স্নিগ্ধের পালা এলো। স্নিগ্ধ পড়লো মহা বিপাকে। কিছুতেই ‘ল’ দিয়ে কোনো গান মাথায় আসছে না। ও কাব্যের দিকে ফিরে ফিসফিসিয়ে বললো ;
— ভাই হেল্প প্লিজ!
কাব্য কিছু বলার আগে কায়া জ্ঞানীদের ন্যায় গুরুগম্ভীর গলায় বললো;
— স্নিগ্ধ ভা. . শুনুন; খেলাতে চিটিং ইজ নট অ্যালাউড! আপনার পয়েন্টস কমিয়ে রেখে দেব আমরা মেয়েপক্ষ।
কায়া কথাটা বলতেই পাশ থেকে কুহুও সায় দিয়ে শাসিয়ে ফেলল;
— নো চিটিং স্নিগ্ধ ভাইয়া। কাব্য ভাই. . . আপনি কিন্তু মোটেও তাকে হেল্প করবেন না। খেলা ক্যানসেল করে দেব আমরা মেয়েপক্ষ।
কাব্য ওসব পরোয়া করে না তেমন একটা ভান করে কাঁধ উঁচিয়ে ভাবলেশহীন গলায় বললো;
— আমি কেন হেল্প করতে যাব? আমি ওর দিকে তাকাচ্ছি না যাহ!
কাব্য কথাটা বলে ফোনে কিছু একটা দেখার জন্যে হাতে নিলো। স্নিগ্ধের ফোনে কিছু একটা মেসেজ করলো লুকিয়ে। স্নিগ্ধর মোবাইলের নোটিফিকেশন ভাসল স্ক্রিনে! মেসেজটা দেখে স্নিগ্ধের হাসি চলে এসেছে আপনা-আপনি। ও আলগোছে ফোনের স্ক্রিন বন্ধ করে বাকা হেসে কায়ার দিকে তাকিয়ে গাইল;
~~ লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া. .ধরেছে যে বায়না
চাই তার লাল ফিতে. . . চিরুনি আর আয়না ~
কায়া মুখ লটকে শুনে গেল স্নিগ্ধের ওকে টিটকারি করে গাওয়া গান। স্নিগ্ধও কায়াকে জ্বলানোর জন্যে বেশি বেশি এক্টিং করে গাইছেও এই গান। এইবার সবার গাওয়া শেষে কাব্যের পালা এইবার। কাব্যও নড়েচড়ে বসল। গাওয়া শুরু করলো;
~ Aisa dekha nahi khubsurat koi
Jism jaise Ajanta ki moorat koi
Jism jaise nigaahon pe jaadu koi
Jism naghma koi, jism khushboo koi
Jism jaise mehakti hui chaandni ~~
কাব্য এটুকু গেয়ে থামলো। কুহু ডান গালে হাত দিয়ে এতক্ষণ গিলছিল কাব্যের গাওয়া গান। কাব্য গান থামাতেই কুহুর মনোযোগ বিঘ্ন হয়ে গেল। ও একপ্রকার বিরক্ত হয়েই বলে ফেলল;
— থামলেন কেন. .কাব্য ভাই? বাকিটুকুও গান।
কুহুর কথা শেষ হতেই; বাকিরাও হই-হল্লোর করে বলে উঠে;
— পুরোটা গাও ভাইয়া। তোমার গিটারটা আনবো?
মহু কথাটা শেষ করতেই স্নিগ্ধ কিছু বলার আগেই উঠে গেল। বলল;
— আমি নিচের থেকে নিয়ে আসছি ভাইয়ার গিটার।
বলে স্নিগ্ধ এক দৌড়ে নিচে চলে গেল। কাব্য পেছন থেকে ডাকলো কয়েকবার:
— খালি গলায় গাইব. .যাওয়ার দরকার নাই। অ্যাই স্নিগ্ধ!
স্নিগ্ধ থামে না। বেরিয়ে যায়। কুহু ততক্ষণে আনন্দ-উত্তেজনা নিয়ে বসে আছে কাব্যের দিকে তাকিয়ে। কাব্য লিরিক্স বের করে ফোনে! গানের কলি হিসেবে অল্প লিরিক্স জানত. . বাকিটা জানা নেই। তাই একনার দেখে নিচ্ছে। কারণ আজ গান না গেয়ে এই বিচ্ছুর দল ওকে ছাড়বেই না. .যা বোঝা যাচ্ছে এদের কান্ড দেখে।
স্নিগ্ধ গিটার নিয়ে আসে। কাব্যের এই গিটার এক্সপেনসিভ অনেক. .ওর এইটিন বার্থডেতে গিফট দিয়েছিলেন আনোয়ার সিদ্দিক। কাব্য সহজে এটা কাউকে ব্যবহার করতে দেইনা। কাবার্ডের ভেতর থাকে বেশিরভাগ সময়ই। স্নিগ্ধ চাবি দিয়ে খুকে নিয়ে এসেছে।
স্নিগ্ধের পেছন পেছন ‘ ভাইকুঞ্জের ‘ গিন্নিরাও এসেছেন ছাদে। ছেলেটা গান গাইবে শুনেই ওরা এসেছেন। আজকাল সোমলি হয়না কাব্যটার গান-টান গাওয়ার। বহুদিন শোনা হচ্ছে না। তাই আজ কেউই সুযোগ মিস করতে চাননি। মা-চাচীকে দেখে কাব্য বোধহয় একটু লজ্জা পাচ্ছে। ও গিটার নিয়ে সেটার তার ঠিক করতে করতে একবার বলেও ফেলল;
— তোমাদের কষ্ট করে সিড়ি বেয়ে আসার কি দরকার ছিলো?
কবিতা তো গদগদ হয়ে বলে ফেললেন;
— তুই গান গাইবি আর আমরা শুনব না?
শামিমাও ছেলের দিকে চেয়ে বললেন;
— কোন গান গাইছিস রে?
পাশ থেকে মুবিন জানাল;
— বড়মা; রাহাত ফাতেহ আলীর আফরিন গান।
স্নিগ্ধ এইবার মুবিনের মাথায় গাট্টা দিয়ে টিটকারি করে বললো;
— ওরে ছোট প্যাকেট; তুইও গান শোনিস?
মুবিন বিরক্ত চোখে মাথা ঘষতে ঘষতে স্নিগ্ধের দিকে চেয়ে বললো;
— বন্ধুরা শোনে; আমি তো শুনি না ভাইয়া। আম্মু নো রেস্ট্রিকশন দিয়েছে।
স্নিগ্ধর মেজাজ খিঁচে গেল; আড়চোখে ছোটমায়ের দিকে তাকিয়ে মুবিনের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো;
— তুই এমন হাবাই থাকবি ব্যাটা? বউ গান শুনতে চাইলে না পারলে পরে বউ ধরে পেটায়. . এটা জানিস?
মুবিন জ্ঞানী-গুণীর ন্যায় শার্টের কলার নাড়িয়ে বললো;
— ভাইয়া, অ্যাইম থার্টিন! অ্যাইম স্টিল এ বেবি। বউ হওয়ার বয়স হয়নি আমার।
স্নিগ্ধ ত্যারা চোখে তাকিয়ে কিছু বলবে: তার আগেই মুবিন বিরক্ত হয়ে উঠে তার প্রিয় কাব্য ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসে গেল। স্নিগ্ধ ভাইয়া আজকাল ভীষন এডাল্ট কথা বলেন. . ওসব ও ছোট হয়ে শোনা ঠিক না! এসবেও মা ‘নো রেস্ট্রিকশন’ দিয়েছেন। আর মুবিন হচ্ছে গুড বয়. . মায়ের সব কথা শোনা লক্ষ্মী বাচ্চা।
রেড গিটার হাতে কাব্য ভাই কুহুর ভীষণ ফেভরেট। ওর চক শীতলকারী একটা দৃশ্য এইটা। কুহুও দেখা গেল তাই নড়েচড়ে আরাম করে বসেছে. . গান শুনবে বলে।
কাব্য গাইতে থাকে বাকিটা—
~~ Chehra ek phool ki tarah shaadaab hai
Chehra uska hai ya koi mahtaab hai
Chehra jaise ghazal, chehra jaan-e-ghazal
Chehra jaise kali, chehra jaise kanwal
Chehra jaise tasawwur bhi tasveer bhi
Chehra ek khwab bhi, chehra taabeer bhi
Afreen Afreen, Afreen Afreen
Husn-e-jaana ki tareef mumkin nahi
Afreen, Afreen Afreen
কাব্য গান থামাতেই সবার আগে কুহু করতালি দিয়ে উচ্চসিত গলায় বললো;
— ওয়াও!
কুহুর করতালি শুনে বাকিরাও দেখা গেল জোরে জোরে কাব্যকে এপ্রিশিয়েট করতে করতালি দিতে থাকল। কাব্য লজ্জা পেয়ে যায়। আলগোছে গিটার রেখে বললো;
— থামো. .এত ভালো-ও গাইনা আমি।
ছোট মা. .. প্রেমা তো কানের পেছন থেকে কাজল নিয়ে কাব্যের হাতে লাগিয়ে বললেন;
— তোর বউ তো তোর গান শুনেই পটে যাবে কাব্য। এত সুন্দর গলা তোর . .নজর না লাগুক আমার।
কাব্য হেসে ফেললো! মাথার পেছনটা চুলকে নত মস্তকে বললো;
— বেশিবেশি বলছো এইবার. .ছোট মা।
কবিতা এ কথায় সরাসরি না করে বললেন;
— না রে কাব্য। আসলেই ভালো গেয়েছিস। মাঝেমধ্যে তো আমাদের গান গেয়ে শোনাতে পারিস বাবা!
কাব্য মৃদু হাসলো শুধু। কুহু আরও একবার ফিদা হয়ে গেল কাব্যের এই হঠাৎ- আকাশের চাঁদের ন্যায় হাসিটার দিকে! মনে হলো. .তামাম দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর হাসিটা তার কাব্য ভাইয়ের। এই পৃথিবীতে সব ছেলেদের হাসি এমনই হওয়া উচিত! মৃদু হাসি. .অথচ গম্ভীর মুখে! দারুণ লাগে এমন হাসি।
___________
বারবিকিউ পার্টি শেষ করে ‘ভাইকুঞ্জ’ — এর সকল রমণীরা যার যার ফ্ল্যাটে ফিরেছেন। বাচ্চারা এখনো ছাদে গানের কলি খেলে যাচ্ছিলো। কাব্য এইবার আসর ভেঙ্গে মোবাইলে টাইম দেখে বললো;
— তোদের ঘুম নাই? রাত দুটো বাজে। আমি চলে যাচ্ছি। ক্লাস আছে আমার কাল।
বলে কাব্য জ্যাকেট চেয়ারের উপর থেকে নিয়ে সবার আগে উঠে দাঁড়াল। সবাই জোর করলেও আর থাকল না। কাব্য চলে যেতেই আসরটা ভেঙ্গে গেল। কায়াকে এখনো স্নিগ্ধ ইশারা করছে; কায়া পাত্তা দিচ্ছেও না ওসব। বন্ধুদের সাথে থেকে এই স্নিগ্ধ প্রেমিক ভীষণ নির্লজ্জ হয়েছে। সবে কলেজে পাশ করেছে; মিস্ট তে পড়া সব ছেলেগুলোকে দেখে দেখে অশ্লীল হয়ে হচ্ছে। কায়ার কাছ পাত্তা না পেয়ে স্নিগ্ধ এবার সবার অগোচরে মেসেজ করলো;
—- সবাই গেলেও তুই থাকবি, কায়ার বাচ্চা। নাহলে আমি তোরে আজ খাইসি!
কায়া মেসেজটা পড়ে ভ্রু কুচকে তাকাল ওর অসভ্য প্রেমিক স্নিগ্ধের দিকে। স্নিগ্ধও পাল্টা রাগী চোখে শাসালো! দেখা গেল; কুহুও কাব্য চলে যেতেই ওর মনটাও আসর থেকে উঠে গেল। এইবার; নির্ঘুম রাতের সঙ্গী চলে যাওয়ার কারণে এখন ওর-ও ঘুম ঘুম পাচ্ছিল ভীষণ। কাব্য যতক্ষণ ছিলো; ঘুমটুকু নাই হয়ে ছিলো। এখন কাব্য নেই; আগ্রহও নেই। তাই কুহু হেলেদুলে ফোনটা পাশ থেকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। কুহুকে দাঁড়াতে দেখেই কায়া ভড়কে গিয়ে বলল;
—‘আপু কই যাও?’
কুহু জবাবে হামি তুলে বলল; —-‘ঘুমুতে। তোর শেষ হলে আসিস।’
কথাটা বলে কুহু বেড়িয়ে গেল ছাদের দরজা দিয়ে। কায়া আতঙ্ক নিয়ে উঠে ; দৌড়ে তাড়াহুড়ো করে দাঁড়াতেই; স্নিগ্ধ দ্রুত ওর উঠে দাড়িয়ে কায়ার হাত পেছন থেকে ঝাপটে ধরল।
‘ও আল্লাহ!’ —- কায়া ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।
স্নিগ্ধ দ্রুত ওর মুখটা চেপে বললো;
—কায়া; স্টপ; আস্তে! সবাই শুনবে না? এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছিস কেন তুই? চুমু তো তুই নিজে আমার কাছে থেকে চেয়েছিলে প্রথমে; আমি না! রিমেম্বার? আমাকে উষ্কে দিয়ে এখন আমার থেকেই পালাচ্ছিস। না; না! তা তো হবে না জানেমান! চুমু খাবি; তারপরেই এইখান থেকে বেরুতে পারবি।
কায়ার ঠোঁটে স্নিগ্ধের বড়বড় আঙুল-গুলো চাপা। কায়া চোখ ঝাপটে ঝাপটে ওভাবেই তাকিয়ে থাকলো স্নিগ্ধের চোখ-দুটোর দিকে। স্নিগ্ধ নম্র গলায় বললো;
— জাস্ট একটা কিস। তারপর আর বিয়ের আগে এই জীবনে কিছু চাইব না; খোদার কসম!’
কায়া জোর করে এইবার স্নিগ্ধের হাত মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে মিনমিন করে বললো;
— ‘লাই দিলে পরে আরো কতকিছু চাইবা!
স্নিগ্ধ কন্ঠমনীতে হাত রেখে বললো;
— খোদার কসম; চাইবো না। আমারে এত খারাপ ভাবিস তুই? বাকি যা হওয়ার বিয়ের পরেই হবে. . প্রমিজ!
কায়ার ভীষণ মায়া হলো স্নিগ্ধের এমন অনুরোধ-কাতরতা দেখে।
কায়া চুপ করে মাথা নামিয়ে নিলো! একটা চুমু খেলে কি খাইব বড় অপরাধ হয়ে যাবে। স্নিগ্ধকে তো ওই বলেছে. . রিলেশন করে একটা চুমু না খেতে পারলে কিসের রিলেশন ওইটা স্নিগ্ধকে রাস্তা দেখিয়ে এখন নিজে পালিয়ে বেড়াচ্ছে. .এটা তো ওর দোষ!
কায়া অস্ফুটে নিচু মাথা নিয়ে বললো;
— স. .সত্যিতো? প. .পরে কিছু চাইলে…
স্নিগ্ধ কায়ার হাতটা ধরে বললো;
— তোর গা ছুয়ে বলছি; আর কিছু না। চাইলে আমারে মারিস ধরে। পারমিশন দিলাম তোরে আমি।
কায়া এখনো মাথাটা নিচু করে রেখেছে। ওর বুকটা কাঁপছে ভয়াবহ-ভাবে। স্নিগ্ধের ঠোঁট-চুমু ওর-ও বড্ড সাধের; শখের।
স্নিগ্ধ মাথাটা ঝুঁকে কায়ার নিচু করে মুখ দেখার চেষ্টা করে কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বললো;
— করবো?
কায়া চুপ করে মাথা দুলালো স্রেফ! লজ্জায় ওর ভেতরটা কেপে উঠছে বারবার। স্নিগ্ধ বুঝে না কায়ার নীরবতা। ও আবার জিজ্ঞেস করে;
— করবো?
কায়া স্নিগ্ধের চোখের দিকে তাকাল না অব্দি; এখনো চুপ করে আছে। স্নিগ্ধ এবার অধৈর্য হলো; বললো;
— কি? চুপ ক্যান? করবো নাকি চলে যাবো?তুই কি বেশি প্রেসার ফিল করছিস.? যদি তুই না চাস তাহলে. আমার সমস্যা ন. . .!
বাকি কথা শেষ হওয়ার আগে কায়া এইবার ভীষণ বিরক্ত হয়ে ; স্নিগ্ধের চোখের দিকে চেয়ে রেগে বললো;
— হাদারাম! প্রেম করো আর আমার উত্তর বুঝ না? মুখে যদি বলা লাগে আমার তাহলে তুমি কিসের পুরুষ মানুষ! সরো আমার সামনে থেকে! বোকার হদ্দ একটা!
বলে ছটফটিয়ে যেতে নিল কায়া। স্নিগ্ধর কি ওসবে পোষায়? পোষালো না. . প্রেমিক স্নিগ্ধ এইবার ভীষণ ধৈর্য দেখাল। আচমকা কায়াকে রেলিংয়ের সাথে চেপে ঠোঁটে ঠোঁট বসালো! কায়া থরথরিয়ে কাপতে কাপতে রেলিংয়ের দেয়ালের সঙ্গে মিশে গেল। স্নিগ্ধ বাধ্য করলো কায়কে ওর গলা জড়িয়ে ধরতে। দীর্ঘ ঠোঁট-চুমুর একটাপর্যায়ে এসে কায়ার বোধ হল— ও সুখেই হয়তো মরে যাচ্ছে। স্নিগ্ধ আজ এটুকু অনুভূতি ওকে না বোঝালে; হয়তবা ওর বোঝা হত না—একটা সামান্য চুমুতে এত সুখ; এত পূর্ণতা থাকে।
কায়া স্নিগ্ধের গলাটা নাগালে পাচ্ছিল না; স্নিগ্ধ লম্বা ভীষণ তাই। স্নিগ্ধ হেল্প করলো। কায়াকে উঠিয়ে রেলিংয়ে বসিয়ে দিয়ে সুবিধা করে দিল। কায়াও এইবার সুবিধামতো দুহাতে স্নিগ্ধের গলাটা জড়িয়ে ধরলো! স্নিগ্ধের হাত কায়ার দুগালে চেপে আছে। ব্যস্ত দুজন; নিজেদের মধ্যে থাকা সুখের স্পর্শ চরম আবেশে শুষে নিতে। শান্তি-শান্তির চুমুতে অশান্তি সৃষ্টি কে করলো এইবার? আচমকা; হঠাৎ স্নিগ্ধের একটা কামড় কায়ার ঠোঁটে পড়তেই কায়া ‘উহ— আর্তনাদ করে স্নিগ্ধকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো। চোখে পানি এসে গেছে একদম ওর। স্নিগ্ধ নিজের ভুল বুঝতে পেরে; অসহায় গলায় বললো;
— ব্যথা বেশি লেগেছে? দেখি. .. কতটুকু কেট. .
কথা শেষ হওয়ার আগে কায়ার স্রেফ একটা কথাই শোনা গেল;
— নাথিং! জাস্ট হিল মি নাও।
বলেই কায়া নিজেই এইবার আগবাড়িয়ে চুমু খেতে লাগলো! স্নিগ্ধ শুরুতে অবাক হলেও; পরমুহূর্তে হালকা হেসে সায় দিল।
কুহু নিচে নামতেই দেখে কাব্য ফ্ল্যাট থেকে বের হচ্ছে তড়িগড়ি করে। কুহু ওকে দেখে বললো;
— এই রাতে কোথায় যান কাব্য ভাই?
কাব্য পায়ে বাইরের স্যান্ডেল পড়তে পড়তে বললো;
— আমার হেডফোনটা ছাদে রেখে এসেছি মনে হয়।
কুহু শুনে আগ বাড়িয়ে মনেমনে নাচতে নাচতে বললো;
— আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।
বলে কাব্যকে রেখে তরতরিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠে গেল। ছাদের দরজা পেরুতেই স্নিগ্ধ-কায়াকে চুমু খাওয়া অবস্থাতে দেখে কুহুর থতমত খেয়ে গেল একপ্রকার। হা করে দেখে যেতে কাপল এদের দুজনকে। অথচ ওদের এসবে কোনো খেয়াল নেই; ওরা তো তখন এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য প্রেমের পৃথিবীতে ভাসছিল।
কুহুর ভয়ে-আতঙ্কে পেছনে একবার তাকাল; কাব্য ভাই এদের এই অবস্থায় দেখে নিলে আজ ঘরে একটা ফাটাফাটি হয়ে যাবে। আর কায়াকেই দেখো. . কুহুকে সারাক্ষণ কাব্য ভাইকে নিয়ে পচিয়ে-মজা নিয়ে এখন ওদিকে নিজে নির্লজ্জের মতো চুমু খেয়ে যাচ্ছে। অথচ কায়ার চেয়েও বড় হওয়া সত্বেও; চার বছর ধরে প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া সত্বেও একটা চুমু কাকে বলে বুঝেনি আজ অব্দি. . পোড়া কপাল তো তারই।
কুহু ভেবেছে, আলগোছে কাব্য ভাই আসার আগে ছাদে পা টিপে টিপে ঢুকে হেডফোন এনে ফেলবে ওইপাশ থেকে; ওরা হয়তো দেখবেও না। কিন্তু তার আগেই কাব্য নিচে থেকে ছাদের সিড়িতে এসে ডেকে উঠলো;
— কুহু!
কুহু চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকাল। কাব্য দুহাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে ওর দিকে সন্দেহের চোখে চেয়ে আছে।
#চলবে