রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ২৭
#নৌশিন আহমেদ রোদেলা
______________
রাত নয়টায় বিয়ে নামক ঝঞ্জাল শেষ করে বাড়ির ফেরার জন্য তাগিদ দিয়ে উঠলেন ছেলেপক্ষ। সবাই যখন একে অপরের থেকে বিদায় নিতে ব্যস্ত সেই ফাঁকে কেউ একজন হেঁচকা টানে সিঁড়ির নিচের ঝাপসা অন্ধকারে দাঁড় করালো আমায়। প্রথম ধফায় চমকে উঠলেও শুভ্র ভাইকে দেখে ভ্রু কুঁচকালাম। উনি এদিক ওদিক তাকিয়ে চারপাশটা দেখে নিয়ে বললেন,
—” চিঠিগুলো কই? দিয়েছিস?”
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে উনার পেছন দিকে তাকিয়ে জোর গলায় ডেকে উঠলাম,
—” রিদি আপু? শুশ্মিতা আপু? এদিকে আসুন না প্লিজ!”
আমার এমন কাজে খানিকটা ভরকে গেলেন শুভ্র ভাই। কিছু বলে উঠার আগেই সামনে এসে দাঁড়ালেন রিদি আর শুশ্মিতা আপু। ওরা দু’জনেই আনন্দমোহনে কেমিস্ট্রি নিয়ে অনার্স করছে। আমার থেকে একবছরের সিনিয়র। উনারা আমাদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বললেন,
—” কিছু বলবে রোদ?”
আমি গদগদবচনে বললাম,
—” হ্যাঁ,বলবো। তার আগে পরিচয় করিয়ে দিই। ইনি হচ্ছেন আমার একমাত্র মামাতো ভাই। ভীষণ ব্রিলিয়ান্ট এবং ভদ্র ছেলে। চুয়েটে পড়ছেন। মাস্টার্স ফাইনাল টার্ম। ব্রাইট ফিউচার। জাপানে স্কলারশিপের জন্য এপ্লাই করেছিলেন এবং রিসেন্টলি সিলেক্টও হয়ে গেছেন।”
রিদি আর শুশ্মিতা আপু একসাথে বললেন,
—“ওহ! কনগ্রাচুলেশন ভাইয়া।”
শুভ্র ভাই আমার মতিগতি উপলব্ধি করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। শুশ্মিতা আপুদের কথায় তিনি জোরপূর্বক হেসে আবারও আমার দিকে তাকালেন। আমি দাঁত বের করে হেসে বললাম,
—” এক্চুয়েলি শুশ্মিতা আপু, শুভ্র ভাইয়া আপনাকে খুবই পছন্দ করেন। লাভ এট ফার্স্ট সাইট ইউ নো। আমাকে একটা চিঠিও দিয়েছিলেন আপনাকে দেওয়ার জন্য কিন্তু আমার বোকামির জন্য আর দেওয়া হয়ে উঠলো না। তাই ভাবলাম সরাসরিই বলি। প্লিজ আপু….একসেপ্ট করে নিন। আপনাকে দেখার পর থেকে উনার মুখে আপনার নাম ছাড়া আর কিছু আসছেই না। আমাদের মুখ থেকেও বারবার ভাবি ভাবি চলে আসছে। আমি কিন্তু ননদ হিসেবে খারাপ হবো না। এনিওয়ে আপনারা গল্প করুন আমি আর আপনাদের প্রেমে হাড্ডি হচ্ছি না।”
এক নিশ্বাসে কথাগুলো শেষ করে উনার দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সেখান থেকে সরে আসতে নিতেই ডানহাতটা চেপে ধরলেন শুভ্র ভাই। আমি রাগী মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে নিয়ে বললাম,
—” হাত ছাড়ুন। শুভ্র ভাই হাতটা ছাড়ুন। শুশ্মিতা ভাবি আপনার সাথে কথা বলার জন্য ওয়েট করছে। আপনার ভাষায় আপনার “সুইটহার্ট” অপেক্ষা করছে। হাতটা ছাড়ুন! “
আমার কথায় কপাল কুঁচকে তাকালেন উনি। কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
—” মাইর না খেতে চাইলে একদম চুপ। এখন কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে, রোদ।”
উনার কথার তোয়াক্কা না করে আবেগ আপ্লূত গলায় বললাম,
—” দেখেছেন হবু ভাবি?আপনাকে কত্তোটা পছন্দ করেন উনি। আমাকে বলতে বলছেন যে, আপনি যদি রাজি থাকেন তো আপনাকে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চান উনি। আচ্ছা? সিকিম পছন্দ তো আপনার?এক্চুয়েলি শুভ্রভাই হানিমুনে সিকিম যাবে তো তাই। আপনাকে দেখে এক্সাইটমেন্টে কথা বলতে পারছে না বেচারা। তাই আমিই বলে দিলাম। এবার ডিসিশন নিন।”
আমার কথায় লজ্জায় রাঙা হয়ে আড়চোখে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালেন শুশ্মিতা আপু। আর আমি এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিলাম। পেছন থেকে ডেকে উঠলেন শুভ্র ভাই,
—” রোদ? আরে বাবা, আমার কথাটা তো শুনো।”
উনার ডাকে সাড়া না দিয়ে অলস ভঙ্গিতে এগিয়ে গেলাম মামানিদের দিকে। পেছন থেকে মৃদু কন্ঠ কানে এলো,
—” সরি আপুরা। বাচ্চা মেয়ে তো তাই বাচ্চামো আর রাগ দুটোই একটু বেশি। ও জাস্ট মজা করছিলো। আমি অলরেডি এনগেজড। আপনারা কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আসলে আমার ফ্রেন্ডরা…”
এরপরের কথাগুলো অস্পষ্ট হয়ে এলো কানে। আমি ধীর পায়ে মামানির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটা লোক এতোটা মিথ্যুক কি করে হতে পারে কে জানে?”আমি অলরেডি এনগেজড!” কিসের এনগেজড? কার সাথে এনগেজড?লাফিয়ে লাফিয়ে প্রেমপত্র দিতে গেলে খুশিতে মরে যায় আর বিয়ের কথা বললেই এনগেজড, তাই না? ফাজিল একটা। শুভ্র ভাইকে এদিকে আসতে দেখেই জোর গলায় বলে উঠলাম আমি,
—” মামানি? ওই ব্লু ড্রেস পড়া মেয়েটাকে কেমন লাগছে?”
মামানি আর আম্মু কোনো একটা বিষয়ে গভীর আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। আমার কথা কানে যেতেই সচেতন চোখে তাকালেন। মেয়েটিকে দু’মিনিট পর্যবেক্ষন করে নিয়ে বললেন,
—” ভালোই তো। খারাপ কি?”
আমি অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বললাম,
—” শুধু ভালোই তো? আরে মামানি, তোমার ছেলের এতো সুন্দর পছন্দকে তুমি শুধু “ভালোই তো” বলে জাজ করছো? দু’দিন পর তোমার পুত্রবধূ হবে আর তুমি তাকে “ভালোই তো” এর তালিকায় ফেলে দিচ্ছো? ভেরি ব্যাড মামানি।”
আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালেন মামানি। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে পরম আয়েশে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম আমি,
—” আম্মু? তোমার পছন্দ হয়েছে আমাদের ভাবিকে? তোমার ভাতিজার পছন্দ বলে কথা। গোলাপের পাঁপড়ির মতো ঠোঁট, বাঁশির মতো নাক, মোলায়েম রেশমের মতো চুল, মুক্তোর মতো হাসি আর কি কি জানি শুভ্র ভাই?”
শুভ্র ভাই আমার কথা শুনে অনেক আগেই দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন পাশে। রাগী চোখে ঝলসানোর চেষ্টাও করছিলেন সেই শুরু থেকে কিন্তু এবার যেন রাগের ষোল কলা পূর্ণ হলো তার। নাক ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন উনি। আমি নিঃসংকোচ ভঙ্গিতে আম্মুর দিকে তাকালাম। বোকা বোকা চাহনি দিয়ে বললাম,
—” আম্মু? শুশ্মিতা ভাবিকে তোমার পছন্দ হয় নি?
কিছু বলছো না কেন বল তো? শুভ্র ভাই তো বলছিলো তুমি রাজি হলেই বিয়ে করে নিবে ভাবিকে। তোমার রাজি হওয়াটা নাকি বিগ ম্যাটার।”
আম্মু খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,
—” আমি রাজি হবো না কেন? দরকার হলে মেয়ের বাড়িতে নিজে গিয়ে কথা বলবো। শুভ্র? তুই শুধু একবার মুখ ফুটে বলবি, ব্যস।”
আমি দাঁত বের করে হেসে শুভ্রর দিকে তাকালাম। চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,
—” দেখেছেন ভাইয়া? বলেছিলাম না? আম্মু একদম রাজি হয়ে যাবে।”
শুভ্র ভাই উত্তর দিলেন না। আম্মুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন,
—” বিয়ে করার হলে তোমাকে এমনিতেও আগে বলতে হবে ফুপ্পি। সে নিয়ে টেনশন করো না তো। আচ্ছা শুনো? রোদকে মিথি ডাকছিলো। ওর পাশে কেউ নেই। রাফিয়াকে দেখলাম ফোনে কথা বলছে। ওকে একটু পাঠিয়ে দিও, আমি তুষারদের সাথে মোড়ে যাচ্ছি। আমার কথা তো শুনবে না, তুমি একটু মনে করে পাঠিয়ে দিও কেমন?”
আম্মু মাথা নাড়লেন। সাথে সাথেই কপাল কুঁচকে এলো আমার। উহুম! হাওয়া সুবিধার নয়। কিছু একটা ঝামেলা তো নিশ্চয় আছে। আমার ভাবনার মাঝেই ধমকে উঠলেন আম্মু,
—” ওই? শুভ্র কি বললো শুনিস নি? মিথি ডাকছে যা জলদি। দিন দিন কানে কালা হয়ে যাচ্ছিস মনে হয়।”
আমি মুখ কালো করে মিথি আপুর রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু রুম পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সামনে দাঁড়ালেন শুভ্র ভাই। হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে ডান ভ্রুটা খানিক উঁচু করে বললেন,
—” ছাঁদে। একটা কথা বলবা তো এক চড়। ছাঁদে যেতে বলছি মানে ডিরেক্ট ছাঁদে… গো!”
উনার মুখ-চোখের ভাব দেখে আরকিছু বলার সাহস জুগাতে পারলাম না আমি। চুপচাপ মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইলাম। সাথেসাথেই ধমকে উঠলেন উনি। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সিঁড়ির ধাপ ভেঙে ছাঁদে গিয়ে দাঁড়ালাম। তুষার ভাইয়ারা ছাঁদে বসে গল্প করছিলেন। আমাকে দেখে খানিক থমকালেন। আলিফ ভাইয়া বললেন,
—” কি রে রোদ? এখানে কি? কিছু বলবি?”
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। আলিফ ভাইয়া আরো কিছু জিগ্যেস করতেন তার আগেই ছাঁদে এলেন শুভ্র ভাই। আলিফ ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—” আলিফ-তুষার? সবকটা নিচে যা।”
আলিফ ভাইয়া উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন,
—” কোনো সমস্যা শুভ্র ভাই?”
শুভ্রর স্পষ্ট জবাব,
—” কোনো সমস্যা নেই। তোরা নিচে যা।”
সবাই চুপচাপ নিচে নেমে গেলো। যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে থেকে জারিফ বলে উঠলো,
—“রোদাপু নিচে যাবে না?রোদাপু চলো। দাদাভাই সবাইকে নিচে যেতে বলেছে তো।”
শুভ্র বিরক্তি নিয়ে বললো,
—” তোর রোদাপু নিচে যাবে না। তোকে যেতে বলেছি তুই যা। আর একটা প্রশ্ন করবি তো চড় দিয়ে ছাঁদ থেকে ফেলে দিবো। যা..”
জারিফ কিছু বলতে গিয়েও বললো না। হয়তো শুভ্র ভাইয়ের মুখটা খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিলো না। সবাই নেমে যাওয়ার পর ছাঁদের দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন উনি। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলে উঠলাম,
—” কি সমস্যা?”
শুভ্র ভাই মৃদু গলায় বললেন,
—” কোনো সমস্যা নেই।”
—” তাহলে এখানে আনলেন কেন আমায়?”
উনি হেসে বললেন,
—” আমি কি কোলে করে এনেছি?”
আমি তেতে উঠে বললাম,
—” ফাজলামো করছেন আমার সাথে? সরুন সামনে থেকে। সরুন বলছি…আমি এক্ষুনি নিচে যাবো।”
উনি হেসে ফেলে বললেন,
—” একদম পার্ফেক্ট ম্যাচ। আমার বাচ্চারা খুবই নিরিহ টাইপ হবে। বাপ-মা দু’জনেই হাইপার তো তাদের নিরিহ না হয়ে উপায় আছে?
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
—” আপনার বাচ্চাদের গল্প আপনার সুইটহার্ট শুশ্মিতার সাথে করুন গিয়ে। আমার সাথে নয়। সরুন তো… আজাইরা।”
আমার ঝাঁঝালো কথায় কোনোরূপ হেলদোল হলো না উনার। মুচকি মুচকি হেসে আরো দু’পা এগিয়ে এলেন উনি। আমি মাথাটা পিছিয়ে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। উনি বামহাতে কোমরের পাশ ধরে কাছে টেনে নিয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে একজোড়া ঝুমকো বের করলেন। কালো আর সাদা পাথরের ঝুমকো। কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো “ফু” দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে ঝুমকো জোড়া পড়িয়ে দিলেন আমার কানে। দুল পড়ানো শেষ করে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন উনি। থুতনী ধরে মুখটা এদিক ওদিক ফিরিয়ে দেখলেন। ডান কানের ঝুমকোতে টোকা দিয়ে চোখ টিপে গাইলেন,
—” পরান যায় জ্বলিয়া রে,
পরান যায় জ্বলিয়া….
কি রে? জ্বলে নাকি?… মন!”
এক ধাক্কায় উনাকে সরিয়ে দিয়ে কানে হাত দিলাম। কান থেকে দুলগুলো খুলতে নিতেই গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন উনি,
—” খবরদার দুল খুলবি না। তোরা মেয়েরা মানেই এক্সট্রা ঝামেলা বুঝলি? তোদের সব কিছুতেই দেমাক। শরীরের প্রতি পার্টে পার্টে দেমাক। ওসব পার্টে লাগানোর জিনিসগুলোরও ওমনই দেমাক। ফ্রেন্ডদের সাথে টি-শার্ট কিনতে গিয়ে পাশের দোকানে চোখ পড়লো। দুলগুলো দেখে কিনতে গিয়ে শুনি ১১৫০ টাকা। ভাবতে পারছিস? একজোড়া দুলের দাম ১১৫০ টাকা! এই দুল কিনতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি দেশের নিরীহ ছেলেগুলো বিয়ে করতে ভয়টা পায় কেন। দুল কিনতেই যদি এগারোশো চলে যায় তাহলে বাকিসব কিনবে কিভাবে?তোরা একেকটা মেয়েই একেকটা আতঙ্ক,বুঝলি?”
আমি রাগ নিয়ে বললাম,
—” আমি বলেছি আপনাকে কিনতে? নিবো না আপনার দুল।”
আমার কথা শেষ হতেই আবারও কাছে এসে দাঁড়ালেন উনি। আমার দুটো হাত শক্ত করে ধরে চোখ রাঙিয়ে বললেন,
—” বেশি পাকনামো করলে খবর আছে। ঢং কমিয়ে কর বুঝলি? এখন চুপচাপ ছাঁদের ঘরে যা তো। ওখানে কিছু একটা ফেলে এসেছি নিয়ে আয়। যা…”
উনার কথায় মুখ ফুলিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। আমার হেলদোল না দেখে ভ্রু কুঁচকালেন উনি। কড়া গলায় বললেন,
—“তোর সাহস দেখে আমি হতবাক। এই? ক’দিন যাবৎ আদর করে কথা বলছি বলে কথা কানে যাচ্ছে না, তাই না? একটা চড় মেরে সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব। যা বলছি….”
উনার ধমকে প্রথমে কাঁদো কাঁদো হয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনার চেহারায় ভাবাবেগ না দেখে ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না কান্না ভাব নিয়ে ছাঁদ ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। ছাঁদের ঘরটা খুবই ছোট। একপাশে ছোট্ট একটা জানালা। সেই জানালার পাশ ঘেঁষে ছোট্ট চৌকি। তারপাশে ভাঙা আলনা আর টেবিল। মন খারাপ ভাব নিয়ে রুমের ঝং ধরা দরজাটা ঠেলে দিতেই বিছানার কিছু অংশে চোখে পড়লো।
চৌকির উপর একরঙা ময়লা চাদর বিছানো। তারওপর একগুচ্ছ তাজা কদম। সবুজ পাতার মাঝে দশ,পনেরটা কদম ফুলে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা। ফুলগুলো দেখেই ঠোঁটদুটোর আকার পরিবর্তন হলো আমার। কান্না কান্না ভাবটা মুহূর্তেই হাসি হাসিভাবে রূপ নিলো। ফুলগুলো হাতে তুলে নিতেই হলুদ রঙের টুকরো কাগজ গিয়ে পড়লো মেঝেতে। কাগজটা তুলে মেলে ধরতেই ভেসে উঠলো লাল কালিতে লেখা,
“স্নিগ্ধ শ্রাবণ রাতের শুভেচ্ছা, মহারাণী!
বর্ষায় আপ্লুত কদমের মতো আমাকেও একটু মুগ্ধতায় ছুঁয়ে দাও না প্লিজ! তোমার চুলের ঘ্রানে মাতাল করে তোমাকেই….হ্যাঁ, শুধু তোমাকেই চুপিচুপি “ভালোবাসি” বলার সুযোগটা দাও না প্লিজ! তোমাতে সিক্ত এই আমিকে আরেকটু সিক্ত করে ভালোবাসা নামক নীল ব্যাথায় ভরিয়ে দাও না-
প্লিজ!! ”
ছাঁদের ঘরের হলদে আলোয় দুই-তিন লাইনের ছোট্ট চিরকুটটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম আমি। চিরকুটটা পড়তেই অদ্ভুত এক লজ্জায় কেঁপে উঠলো সারা শরীর। সেই লজ্জায় রাঙা হয়ে পেছনে ফিরতেই চোখে পড়লো গভীর দুটো চোখ। ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে, হাত ভাজ করে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সে! আমার সে!
#রোদবালিকা
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/