#এক কাপ চা.
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব ১০
(২৮)
নিজের আধ খাওয়া সিগারেট তাশদীদের দিকে এগিয়ে দিয়ে রাশেদ বলল,
“মেঝ ভাবী কী বলেছে শুনেছিস?”
“তোমার সাথে আমার সম্পর্ক সিগারেট ভাগ করে নেওয়ার। তোমার মনে কি চলছে আমি বুঝি।”
“সব কিছু আয়ত্তের বাহিরে চলে যাচ্ছে।”
“তুমি যদি চন্দ্র কে হাতে নিয়ে সূর্যকে স্পর্শ করেও মাফ চাও, ভুল স্বীকার করো তবুও তোমার কোনো মাফ হয় না।”
“আমি নিরুপায়।”
“পুরুষ মানুষকে নিরুপায় হতে নেই।নারীরা নির্ভর করে পুরুষদের উপর। সেই পুরুষ যখন মাঝ পথে নারীর হাত ছেড়ে দেয় তবে নারীর কী হয় কখনো ভেবেছো?
তুমি যতই নিরুপায় হও না কেন, একজন নারীকে তোমার মানসিক ভাবে ভেঙে দেওয়ার কোনো অধিকার তোমার নেই। একজন নারীর অনাগত সন্তানকে খুন করতে চাওয়ার মতো দুঃসাহস তোমার দেখানো উচিৎ হয়নি।”
“দায়িত্ব এমনি।”
“না, ভুল বললে।দায়িত্ব এমন নয়। দায়িত্ব এমন হতেই পারে না।নিজ সন্তানকে খুন করে অন্যের সন্তানের দায়িত্ব নিতে হবে?এমন দায়িত্ববান পুরুষ উপন্যাসেও হয় না।”
“আমি জানি ইখুম নিজের সন্তানের কোনো ক্ষতি করবে না।তাই আমিও মেঝ ভাবীকে দমাতে ওসব বলেছি।আর তুই?”
“হাসালে তুমি। খুব ক্ষতি হতো বিয়ের রাতেই সবটা খোলাসা করলে?রাঙ্গাবৌ তো মা হতে চলেছে, তুমি তার গায়ে হাত তুলেছো।বাদ দাও কথা বলতেও গায়ে লাগছে আমার।”
রাশেদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।মাথার উপর দিয়ে নাম না জানা এক অতিথি পাখি উড়ে গেল।আলো ফুটেছে কিছুক্ষণ হলো। কুয়াশাটা জেকে বসতে শুরু করেছে। শীতের আমেজ বুঝতে হলে গ্রামে যাওয়া প্রয়োজন। এমন দিনে ভাপা পিঠা, সকালের প্রথম রোদে বসে আগের দিন রাতের বানানো দুধ চিতই খাওয়ার আমেজ আলাদা।
তাছাড়া ফুলকপি এবং শিমের বাসি তরকারি যখন চুলোয় জাল হয় এবং সেই তরকারির সাথে রুটি! আহা সে যেন এক অমৃত৷ কিন্তু জীবনটাই এখন বিষাক্ত লাগছে রাশেদের কাছে। তাশদীদ চলে গেছে অনেকক্ষণ পূর্বে। দ্রুত পায়ে দৌড়াচ্ছে সে। রাশেদের আজ আর দৌড়াতে ইচ্ছে হলো না। ইচ্ছে হচ্ছে কোথাও একটা শান্তির ঘুম দিতে৷
(২৯)
আজ মৌসুমির বড় ভাই মুনিরের গায়ে হলুদ।সকাল থেকে তোড়জোড় চলছে হলুদের অনুষ্ঠানের। তার বাবা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি।তার বড় ছেলের বিয়ে হচ্ছে ধুমধামে। ফোন হাতে নিয়ে মৌসুমি বার পাঁচেক কল দিয়েছে তাশদীদকে।কিন্তু কল রিসিভ করছে না সে। কল রিসিভ না করায় মৌসুমির মেজাজ দ্রুতই খারাপ হতে লাগলো।
তার মা রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত। এত মানুষের খাবারের আয়োজন নিজে দেখছে। মৌসুমি সেখানে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“মামারা কখন আসবে?”
ব্যস্ত হয়েই নীলুফার বেগম বললেন,
“এসে যাবে। আমার সাথে তো কথা হয়নি।”
“কল দিয়ে জিজ্ঞেস করো।”
“সময় নেই আমার। তুই এক কাজ কর ওইযে আমার ফোন জিজ্ঞেস করে নে।”
“তুমি আমাকে হুকুম দিচ্ছো?কী এমন ব্যস্ত তুমি?আমি বলেছি মানে এখনি কল দিবে।”
মিনিট খানেকের মধ্যে মৌসুমি পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছে। তার চেঁচামেচি শুনে তার বাবা দ্রুত নিচে নেমে এলো।একমাত্র মেয়ের কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেনি তিনি।কাজের লোকেরা কাজ বাদ দিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মৌসুমি এমন ব্যবহার করছে যে শুধু তার মায়ের গায়ে হাত তুলতে পারছে না।
তার বাবা এসে কোনো কথা না বলেই সজোরে থাপ্পর মারলো নীলুফার বেগমের গালে।নীলুফার বেগমের গালে দাগ পড়তে খুব একটা সময় নিলো না।ততক্ষণে তার চুলের মুঠি ধরে মেয়ের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলল,
“এবার বল কী হয়েছে? “
মৌসুমি বললেই স্ত্রীর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে কথা বলতে বলল,
এবার একবার কল হতেই তাশদীদ রিসিভ করে কথা বলে জানালো তারা খুব দ্রুত বের হবে। সবাই তৈরী হচ্ছে। মৌসুমির মুখে দ্যুতি খেলে গেল এক মুহুর্তে।
ছোটো বেলা থেকেই মা কে এভাবে মার খেতে দেখে সে অভ্যস্ত। তাদের মা হলেও নীলুফার বেগমকে সে বা তার মেঝ ভাই তোয়াক্কা করে না।বরঙ প্রচন্ড রাগ হলে বাবার কাছে নালিশ করে তাকে মার খাওয়াতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু তার বড় ভাই মুনির মা ভক্ত। সে থাকলে মৌসুমির গালেই থাপ্পর লেগে যেত কয়েকটা।
প্রশন্ন চিত্তে টেবিলের উপর থেকে একটা কমলা তুলে নিয়ে ছিলতে ছিলতে উপরে উঠে এলো মৌসুমি। হলুদের জন্য স্পেশাল অর্ডার দিয়ে আনা শাড়ি এবং স্লিভলেস ব্লাউজ বের করে রাখলো বিছানার উপর।
সম্পূর্ণ কাপড় ছেড়ে নগ্ন অবস্থায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে দেখছিল সে।
কী এমন কমতি আছে তার যে তাশদীদ ফিরেও তাকায় না।
কিন্তু হায়! আফসোস, আয়নায় শুধুই বাহিরের আবরণ দেখা যায়, যদি ভিতরটা দেখা যেত তাহলে সেখানে শুধুই কালো অন্ধকার এবং ভ্যাপসা বাজে গন্ধ পেত মৌসুমি।
(৩০)
ইখুমের খাওয়ায় বিশেষ নজর দিচ্ছে সাগরিকার মা।যাই রান্না হোক না কেন সে নিজ হাতে গরম গরম অবস্থায় ইখুমকে খাইয়ে দিয়ে আসছে। কাউকে বিশ্বাস করে না সে। মাঝেমধ্যে নিজের ছায়াকে দেখেও মানুষ বড্ড সন্দেহ করে এখন তেমন সময় চলছে।
ইখুম মোটামুটি সুস্থ। রাশেদের সাথে কথা বলার জন্য খুব মন খারাপ হয় কিন্তু সামনে সামিনা চলে আসে। চলে আসে গতকাল যখন সে মরতে বসেছিল তখন সামিনার কণ্ঠ।
হলুদ শাড়ি পরে গড়পড়তায় তৈরী হয়েছে ইখুম। সে জানে তার শাশুড়ি আজ আসবে না তাই গয়না পড়েনি খুব একটা।প্রচন্ড ঘুম পায় তার ইদানীং। বাচ্চাটাকে নিয়েও ভয়ে থাকছে কিন্তু রাশেদ নেই,যার তাকে রক্ষা করার কথা ছিল,ভরসার হাত দেওয়ার কথা ছিল, রাত-বিরেতে ভয়ংকর মন খারাপ হলে তাকে নিজের পাশে পাওয়ার কথা ছিল সে নেই। কোথাও নেই৷ তার মধ্যে বেড়ে উঠা একটা ছোট্ট স্বত্তা এবং সে দুজনেই যেন বড্ড একা।
সাগরিকা আজ হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে৷ সাদা সিল্কের ব্লাউজের সাথে৷ ঠোঁটে দিয়েছে কড়া রঙের লাল টকটকে লিপস্টিক। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে হাতে চুড়ি নিয়ে বসে আছে৷
তাকে দেখে মৃদু পায়ে ঘরে প্রবেশ করেছে তাশদীদ৷ নেভি ব্লু ডেনিমের প্যান্টের সাথে সাদা রঙের পাঞ্জাবী। হাতের ঘড়িটায় যেন তাকে বেশ মানিয়েছে কিন্তু তার ঠোঁটে থাকা সিগারেট অসহ্যকর।
ঘরে প্রবেশ করতে না করতেই সাগরিকা উঠে দাঁড়িয়েছে।তার কোল থেকে টুপ করে সকল চুড়ি নিচে পড়ে গেল।হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠেছে গত দিনের ঘটনা।একরাশ ভয় এসে গলায় জমাট বেধেছে৷ মাথার পিছনের ভোতা যন্ত্রণা হওয়ার আগেই সাগরিকা অনুভব করলো তাশদীদ এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে। এক হাত দিয়ে তাকে ধরে অন্য হাত গলিয়ে দিয়েছে সাগরিকার শাড়ির দিকে।
কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সাগরিকা অনুভব করলো,
জ্বলন্ত সিগারেট তাশদীদ ঠেসে ধরেছে তার নাভির দিকটায়।
চলবে ……..