#এক কাপ চা .
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব ৪
(১০)
ইখুমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাশদীদ, সাগরিকা, তাজবীদ তিনজনে নিয়ে গিয়েছে।
ইখুমের মুখ তখন ব্যথায় নীল রঙ ধারণ করেছে।
রাশেদকে কেউ ডাকেনি।কিন্তু আজ আর কেউ চুপ রইল না।বড় বৌ এবং সাগরিকার মা সব কিছু তাদের কর্তাদের জানিয়েছেন। এতদিন শাশুড়ি মায়ের ভয়ে দুই বৌ চুপ থাকলেও আজ দুজনে সব কিছু জানিয়েছে।
সব জানার পর দুই ভাই কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ডেকে পাঠালেন রাশেদকে৷ রাশেদ বেরিয়ে এলো সামিনার ঘর থেকে। ইখুমের এই অবস্থার কথাও সে জানে না।
বড় ভাই রাশেদকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,
“ইখুমের গায়ে হাত তুলেছো তুমি?”
রাশেদকে চুপ থাকতে দেখে রেগে গেলেন তার সেঝ ভাই সোহেল।সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রাশেদের গালে।রাশেদ তবুও নিশ্চুপ।
“ইখুম এই বাড়ির মেয়ের মতোন না। এই বাড়ির মেয়ে।কোন দিন দেখছো?তোমার ভাবীদের সাথে আমরা উঁচু গলায় কথা বলেছি? তুমি কোন সাহসে বৌ মারো?
কত দিন ধরে এসব চলে? আর তোমরা এত দিন আমাদের বলার প্রয়োজন মনে করো নাই?
একটা মেয়েরে এতটা মানসিক অশান্তিতে রাখছো?
ভুলে যাও কেন?সাগরিকাও বড় হচ্ছে, অন্যের ঘরে দিতে হবে। তার সাথে এমন করলে মেনে নিতে পারবো আমরা?”
রাশেদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথা শুনছে। তখন ইখুমকে নিয়ে প্রবেশ করলো সাগরিকা৷ তাশদীদের মা এগিয়ে গিয়ে তাকে ধরে বসিয়ে দিলো।
তাশদীদ ফিরতেই তাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কী বললেন?”
“মা সন্তান দুজনেই সুস্থ আছে। কিন্তু কেয়ারফুল থাকতে বলেছেন।”
রাশেদ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো,
“ইখুম তুমি ডক্টরের কাছে কেন গিয়েছিলে?তোমার শরীর ভালো তো?”
রাশেদের দিকে তাকিতে ম্লান মুখে হাসে ইখুম।চোখ বন্ধ করে তাশদীদের বাবাকে বলল,
“ভাইজান, আমাকে আমার বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দিবেন? আমি এখানে থাকতে ভয় পাচ্ছি।আমার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য হলেও অনুমতি দিন।”
রাশেদের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা সামিনার চোখেমুখে বিস্ময় প্রকাশ পাচ্ছে।ঘন্টা কয়েকের মধ্যেই ইখুম কথাগুলো যেন তাকেই ফেরত দিয়ে দিচ্ছে।
(১১)
মৌসুমী দাঁড়িয়ে আছে তাশদীদের ঘরের সামনে।তাশদীদ সকালের মর্নিং ওয়ার্কআউটে ব্যস্ত। তার পেটানো শরীর এবং পিঠ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।সেদিকে তাকিয়েই কামনার দীর্ঘশ্বাস ফেলল মৌসুমি। সম্পর্কে সে তাশদীদের ফুপাতো বোন।
তাশদীদ পুশ-আপ করছিল এবং সাগরিকা তার পাশে বসে আঙ্গুরের পাতলা খোসা ছাড়াতে ব্যস্ত।
ইখুমের জন্য নিয়ে যাবে সে। কিন্তু তাশদীদ তাকে ডেকেছে। কারণ আজ বাড়িতে মৌসুমীর বাবা-ভাইয়েরা আসবে।
তাদের খুব একটা পছন্দ করে না এই বাড়ির কেউ।বোন বিয়ে দিয়েছে তাই তাদের সাথে নাম মাত্রের সম্পর্ক। কারণ পুরো পরিবার রাজনীতির সাথে যুক্ত। এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মৌসুমীর মা কে তার বাবা তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল আজ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর পূর্বে।এলাকায় প্রভাবশালী ছিল বলে আটকাতে পারেনি কেউ।তাছাড়া তখন তার ভাইয়েরাও ছিল ছোটো।শুধু তাশদীদের বাবা বড় ছিলেন।
“কালো রঙের জামাটা পড়ে তৈরী হয়ে নে৷ তুলিকেও বল তৈরী হয়ে নিতে। রাঙ্গাবৌ কে নিয়ে ঘুরে আয় আশেপাশে।
তাজবীদ যাবে সাথে।”
“আপনি যাবেন না?”
তাশদীদ এবার ফ্লোরে বুক ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ে৷ বার দুয়েক শ্বাস নিয়ে বলল,
“কাজ আছে আমার। তাজবীদ তো থাকছেই।তবুও হবে না?”
“কোথায় যাবো?রাঙ্গামা তো অসুস্থ।”
“শপিংয়ে যাবি?অথবা কোনো প্রিয় রেস্টুরেন্টে?”
“ইচ্ছে করছে না।”
তাশদীদ এবার উঠে এসে সাগরিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“ক্যাশ রেখে যাচ্ছি।পাশের এলাকায় কুমোর পাড়ায় যেতে পারিস। রাস্তা ভালো।সাথে আমার ফোন নিয়ে যা।”
সাগরিকা এবার খুশী। তাশদীদের জায়গায় যদি তাজবীদ থাকতো তবে এতক্ষণে তার চুল এলোমেলো করে দিতো সে৷ কিন্তু তাশদীদকে এমন কিছু করার চিন্তাও করতে পারবে না।
সাগরিকা চলে যেতেই মৌসুমি ধীরেধীরে প্রবেশ করলো তাশদীদের রুমে। পিছন থেকে তাশদীদকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁট ছোঁয়ায় তার পিঠে।
তাশদীদ দ্রুত সরে গিয়ে পিছন ফিরে মৌসুমিকে কিছুটা ধমকে বলল,
“এটা কেমন বেয়াদবি? থাপড়ে গাল লাল করে দিবো।”
“এই বাহানায় তো স্পর্শ করবে?”
তাশদীদ এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে না।বড় বড় কদমে শার্ট নিয়ে নেমে যায় নিচে। তাশদীদের থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে মৌসুমি তাজবীদের রুমে যায়।তাজবীদ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছে।
“ভালোবাসায় কীভাবে তাকে ভোলাবো রে তাজ?”
“কাকে আবার পটাতে চাইছো?তুমি যা মেয়ে মাইরি!তোমাকে আবার ভোলাতে হয়?”
“হয় রে। হয়।এই বান্দা চালু চিজ।বলতো কী করি।সরাসরি কিসিং অফারটাও নেয় না।”
“চুমুই ক্যান দিতে হবে। কাছাকাছি আসা যায়। দুষ্টু মিষ্টি টাইপ। আদর না করে ডিরেক্ট ধর তক্তা মার পেরেক করলে কি আর হবে?
আইমিন আস্তেধীরে আগাও। আজ চোখাচোখি, তারপর হাত ধরাধরি তারপর না হয় বাকী সব।”
(১২)
ইখুম গতকাল থেকে রাশেদের সাথে কথা বলেনি।রাশেদ চেষ্টা করেছিল কিন্তু সে তাকে সুযোগ দেয়নি।
কারণ ইখুমের মনে হচ্ছে,
“আঘাতের পরিমাণ যখন বেশি হয়ে যায়, মাফ চাওয়াটা তখন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা।”
তুলি, সাগরিকার সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে ইখুম।রাশেদ তাকে ডাকলেও সে ফিরে তাকায়নি।সম্পর্কটা যখন মরেই গেছে সামান্য বৃষ্টির পানি গড়িয়ে সম্পর্কটা জীবন্ত করতে পারে না।
তাজবীদ ড্রাইভ করবে। তার পাশে বসবে সাগরিকা।পিছনে তুলি,ইখুম এবং স্নেহা।গাড়িতে উঠার আগে তাশদীদ সাগরিকার কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধ থেকে ওড়নাটা সরিয়ে বেরিয়ে থাকা আন্ডারগার্মেন্টস এর স্ট্রিপ কামিজের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ওড়না ঠিক করে দিতে দিতে তাশদীদকে বলল,
“সাবধানে যাবি।আর ফোন সাথে রাখিস। কোনো প্রয়োজনে কল দিবি।আর অবশ্যই সাবধানে ড্রাইভ করবি।”
কিন্তু তাশদীদের করা কাজ তুলির নজর এড়িয়ে গেল না।সে ফাঁকা ঢোক গিলে মনে মনে বলল,
“আমি তবে ফুপাতো স্ককায় দুলাভাই পেতে চলেছি।”
তাশদীদ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“যদি শুনেছি উল্টোপাল্টা কিছু….”
ভয়ে থতমত খেয়ে থাকা সাগরিকা বলল,
“আমি কিছু করবো না। সাবধানে থাকবো।”
সাগরিকারা চলে যাওয়ার পর তাশদীদ সবাইকে বলল সেঝ কাকীকে তৈরী হতে কারণ আজ তাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে।
তাশদীদের পরিচিত একজন।কেউ আপত্তি করলো না। তাশদীদের দুটো যুক্তিতে।
সামিনার বয়স এখনো অনেক বাকী।সে চাইলে পুনরায় শুরু করতে পারবে।
ইখুম, রাশেদের সংসার কিংবা অনাগত সন্তানের জন্যও এটা প্রয়োজন।
কিন্তু রাশেদ মেনে নিতে পারলো না। সে তাশদীদের মতে দ্বিমত।ইখুমের সমস্যা আলাদা।এখানে সামিনাকে টেনে আনা বোকামি।সে সামিনার বিয়েতে রাজি নয়।
সামিনা শুনেও অঝোরে কাঁদছিল।কিছুক্ষণ পর সে দৌড়ে গিয়ে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
বাহির থেকে ডাকাডাকির পর দরজা খুলছিল না। পিছনের জানালা দিয়ে রাশেদ ঘরে উঁকি দিয়ে দেখতে পেলো সামিনার দেহ ততক্ষণে ঝুলছে সিলিংয়ের সাথে।
চলবে ….