ইব্রাহিম এবং আমাদের ক্যান্সার যুদ্ধ…
২০১২ সাল আমার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যান্সারের চিকিৎসা করছেন নিউইয়র্কের স্লোন ক্যাটারিং ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এ। চিকিৎসা চলাকালীন তিনি ‘ নিউইয়র্কের আকাশে ঝলমলে রোদ’ নামে প্রথম আলো তে কিছুদিন পর পরই লেখেন। সেখানে নিউইয়র্কে তার জীবন এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক কিছুই থাকে। আমি আবার হুমায়ূন ভক্ত একজন মানুষ। এক শাওনের সঙ্গে তার বিয়ে ছাড়া হুমায়ূন আহমেদ আমার চোখে অন্য লেভেলের একজন ব্যক্তিত্ব। যেহেতু তিনিও মানুষ তার জীবনেও অনেক ছোট বড় ভুল থাকবে, স্বাভাবিক।
ক্যান্সার জয় করে তিনি ফিরে আসবেন অনেকের মতো আমারও দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা তিনি নিচ্ছিলেন।
সেই সময় টা তে আমরা , আমি এবং হাসান দ্বিতীয় সন্তানের কথা চিন্তা করছিলাম । আসলে চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছিলাম আমাদের মেয়ে আইশার জিদের কারণে। আইশা যখন তিন বছর তখন থেকে এক কথা তার একটা ভাই লাগবে । তারপর হয়েছে তার একটা ভাই আছে নাম ইব্রাহিম সে ছোট তো তাই সিএমএইচে আছে।
দিন যায় মেয়ের পাগলামি বাড়ে, এখনই ভাই কিনে আনো ,সবার ভাই আছে আমার ভাই কোথায়?
কোন কারণে সিএমএইচে গেলাম মেয়ে বলবে মা চলো আজকেই নিয়ে যাই ভাইকে। তার ধারণা হসপিটাল থেকে কিনে আনতে হবে ভাই কে।
এক পর্যায়ে জান ভাজা ভাজা করে ফেলল ভাই লাগবে ভাই ইব্রাহিম কে কিনে নিয়ে আসো সিএমএইচ থেকে।
ওর জিদের কারণে আর বাচ্চা নিব না সিদ্ধান্ত থেকে আমরা সরে আসলাম।
আমি সেই তখন চিন্তা করতাম আমার যদি একটা ছেলে হয় সে যেন হুমায়ূন আহমেদের মতো হয়। অনেক অনেক প্রতিভাবান। যেখানে হাত দিবে সেটাই সোনা হয়ে উঠবে।
ভাগ্যের কি দারুন লীলা আল্লাহ আমার মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করলেন। তার ভাই ইব্রাহিম কে তার কাছে পাঠালেন। আমার ছেলে হুমায়ূন আহমেদ এর মতো প্রতিভাবান না হলেও মাত্র সাত বছর বয়সেই সে হুমায়ূন আহমেদের মতো কর্কট রোগের রোগী হয়ে গেল …..
কি চাইলাম আর কি হলো ।
আমার জীবনে সবচেয়ে আনন্দের দিন যদি বলা হয় কবে, আমি বলব ২০১৩ সালের ১ লা এপ্রিল। এই দিন আমরা জানতে পারি আমার মেয়ের ইচ্ছা আল্লাহ পূরন করছেন আল্ট্রোসনোগ্রাম এ জানতে পারি আইশার একটা ভাই হবে। আমার মেয়ে এতটাই ডেসপারেট ছিল ভাই লাগবে বলে সে আল্ট্রোসনোগ্রাম এর ফিল্ম টা দুটো কপি দেখে আশেপাশে র সবাইকে বলে আসছে তার দুটো ভাই হবে । এবং সবাই প্রশ্ন করা শুরু করলো জমজ বাচ্চা হবে নাকি?
অদ্ভুত দিন ছিল সেই গুলো।
ইব্রাহিম এর সাত বছরের জীবনে কখনো হসপিটালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়নি এমনকি সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা ও অন্য বাচ্চাদের তুলনায় খুব কম হতো। স্বাস্থ্যও মাসাআল্লাহ ভালো ছিল। সেই ছেলে গত বছর জুন মাসে হঠাৎ একটু দম ফেলতে কষ্ট হচ্ছে দেখি। কয়েক মিনিটে র মাঝে ঠিক হয়ে গেল।
আমি কিন্তু ব্যাপারটা হালকা ভাবে নেই নাই । ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললাম।
তিনি বললেন, ঠান্ডা থেকে এমন হয় বাচ্চাদের।
কিন্তু ওর ঠান্ডা ছিল না।
ডাক্তার বললেন, এডিনোয়েড কিনা একটা এক্সরে করে দেখতে হবে।
গেলাম সাভার সিএমএইচে।
এক্সরে করে দেখা গেল এডিনোয়েড না।
সেদিন ডাক্তার ব্লাডের কিছু টেস্ট দিল।
সেই টেস্ট এ ধরা পড়লো ওর হিমোগ্লোবিন ৭.৫ । অনেক কম।
হাসানের বন্ধু ডাক্তার মুকিব ভাই বললেন, আগের কোন রিপোর্ট আছে ? যেন বোঝা যায় ওর এনিমিয়া আছে কিনা। অনেক সময় বাচ্চাদের এমন হয় ।
দুই মাস আগেই ব্লাড টেস্ট করা হয়েছিল রুটিন টেস্ট।
সেই রিপোর্ট এ দেখা গেল হিমোগ্লোবিন ১২.৩ । যা যথেষ্ট ভালো।
তাহলে কেন দুই মাসের মধ্যে হিমোগ্লোবিন এতটা কমে যাবে ?
করোনা পরিস্থিতি তখন চরম খারাপ। এর মধ্যে আমরা ডিসিশন নিলাম ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে যাব। সাভার সিএমএইচে চিকিৎসা নিব না।
১৭ জুন ২০২০ ইব্রাহিম কে নিয়ে আমরা ঢাকা সিএমএইচে চলে এলাম।
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে।
আমরা যখন সিএমএইচে আসছি গাড়িতে বসে আমি চিন্তা করছিলাম কিভাবে করোনার এই খারাপ অবস্থায় সিএমএইচে র এক রুমে আমার ছেলেকে বন্দী করে রাখব ? ওকে যদি স্যালাইন, ব্লাড দেয় তাহলে কি ও হাতে রাখবে ক্যানোলা ?
সেদিন আমার দুঃচিন্তা দেখে উপর থেকে আল্লাহ হেসে হয়তো বলেছেন , তোর তো সবে শুরু পরীক্ষা। তোর আর তোর ছেলের জন্য আমি অনেক কঠিন দিন লিখে রেখেছি যা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।
শুধু কেনোলা না সেন্ট্রাল লাইন, পিক লাইন হবে সুই দিয়ে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে তোর ছেলের হাত, পা সব ।
কোভিড টেস্ট করে ভর্তি হলাম সিএমএইচে। সেই থেকে শুরু। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে এক গাদা টেস্ট শুরু এবং সব রিপোর্ট এলো খারাপ। এক্সরে রিপোর্ট এ এলো ফুসফুস ভর্তি পানি। এত পানি কেন ফুসফুসে। করা হলো সিটি স্কেন।
সিটি স্কেন করতেই ধরা পড়লো বাম ফুসফুসের কাছে একটা বড় সর টিউমার। যার সাইজ ১৩ সেঃমিঃ লম্বায়।
উপর থেকে দেখে কিছুই বোঝা যায় না। এই টিউমার নিয়ে আমার ছেলে দৌড়ে, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে! আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না !
আমাকে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার বলল, টিউমার আর পানি প্রেসার দিয়ে ওর হার্টকে বাম দিক থেকে ডান দিকে সরিয়ে দিয়েছে!
২১ জুন ২০২০ ওর বায়োপসি হলো। এসেন্থেশিয়া দেওয়া হলো । বায়োপসির স্লাইড নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর হাইপোকসিয়া হয়ে গেল। পার্লস ৩৫ এর নিচে নেমে গিয়ে ছেলে আমার কমায় চলে গেল।
ব্রিগেডিয়ার পারভেজ ভাই যখন আমাকে আর হাসান কে পোস্ট অপারেটিভ এ ডেকে নিয়ে যেতে যেতে বলল, আসেন ভাবি every thing is alright now…
আমার মাথায় সঙ্গে সঙ্গে একটা কথাই ঘুরতে থাকলো তাহলে কি আগে সব খারাপ ছিল?
পোস্ট অপারেটিভ এ ঢুকে দেখি ছেলের পাশে ষোল জন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে।
ঢাকা সিএমএইচে র এমন কোন এনেস্থেশিয়ালিস্ট নেই যে সেখানে অনুপস্থিত। রেডিওলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট সবাই ঘিরে আছে আমার ছেলেকে।
এরা সবাই মিলে সেদিন আমার ছেলের জ্ঞান ফিরিয়ে এনেছিলেন।
ওর সামনের দুটো দাঁত পড়ে গেল বায়োপসির সময়।
বায়োপসি রিপোর্ট এ আসলো উইং সারকোমা। এটা একধরনের ক্যান্সার সেল যা হাড়ের পাশে হয়। ইব্রাহিম এর বেলায় হয়েছে সেটা বুকের তিন নম্বর হাড়ে। যার জন্য জটিলতা বেশি হলো। হার্ট, ফুসফুস সব রিস্কে পড়ে গেছে। ওর বাম পাশের ফুসফুস টা অলমোস্ট কলাপস।
বোন মেরো নিলো ২৬ জুন ২০২০ ।
সেদিনের কথা আমি মনে করতে চাই না কারণ সেদিন চীফ এনেস্থেশিয়ালিস্ট ডেকে নিয়ে আমাকে আর হাসান কে বলল, আগের দিন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল তো তোমরা জানোই আজকে যেকোন কিছুর জন্য প্রস্তুত থেকো।
আমার মনে হচ্ছিল আমি ঠসা হয়ে গেছি কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।
ওটিতে নিয়ে যাচ্ছে যখন হাসান কোলে নিয়ে আমি তাকিয়ে দেখছি আমার ছেলে হাত বাড়িয়ে রেখেছে আমার দিকে । আমি জানি না এভাবে আর ওকে দেখতে পাব কিনা। সেদিনের মত ভয় আমি ওর দুটো অপারেশন এর সময় ও পাই নাই।
আলহামদুলিল্লাহ আর কোন জটিলতা হলো না এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে ওর বোন মেরো ক্লিয়ার ছিলো। ওর ক্যান্সার বোন মেরোতে পৌঁছায় নাই ।
ডাক্তার রা বারবার এসে বলেছে , আমরা ইচ্ছা করলে দেশের বাহিরে নিয়ে যেতে পারি।
কিন্তু তখন পুরো পৃথিবী লক ডাউন। কোথায়, কিভাবে নিয়ে যাব ছেলেকে ?
কোন উপায় ছিল না।
আমরা ঢাকা সিএমএইচে ই চিকিৎসা শুরু করলাম। ওর প্রোটোকল দিল ডাক্তার প্রথমে সাত সাইকেল কেমো দিবে তারপর অপারেশন তারপর আবার সাত সাইকেল কেমো।
আমি আর হাসান ক্যান্সার সম্পর্কে কিছুই জানতাম না সাইকেল, রিক্সা কিছুই বুঝি না।
৩০ শে জুন ২০২০ আমার জন্মদিনের দিন আমার ছেলের প্রথম ইনিশিয়াল কেমো দেয়া হলো। আমার সেদিনের অনুভূতি কি যে ছিল কাউকে বোঝাতে পারব না। এরকম জন্মদিন কোন দিন আসবে কল্পনাতেও ছিল না।
ফুলডোজ কেমো শুরু হলো ৫ জুলাই ২০২০ ইব্রাহিম এর সাত বছরের জন্মদিনের পর দিন থেকে।
কেমো দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো বমি। বার বার বমি করে।
খাওয়া দাওয়া তো করেই না।
কেমোর ফলে হোয়াইট ব্লাড সেল কমে যায় দিতে হয় ইনজেকশন। হিমোগ্লোবিন কমে যায় দিতে হয় ব্লাড।
এক একটা কেমো শেষ হয় আবার শুরু হয় জ্বর, হিমোগ্লোবিন কম একটার পর একটা।
পাঁচ দিনের কেমো গুলোতে টানা ছয় দিন একটানা হাইড্রেশন চলে। রাত দিন জেগে পাহারা দেই।
দুজনে চেপে ধরে খাওয়াতে হয়। তার উপর আছে কাশি এবং বমি।
মাথা ভর্তি চুল ছিল আমার ছেলের সেই চুল পড়ে গেল। ভ্রু পড়ে গেল। হাতে, পায়ের নখ গুলো কালো হয়ে গেল।
সবচেয়ে কষ্টকর ছিল ওর হাতের সকল শিরা গুলো পুড়ে শুকিয়ে গেল। কেনোলা করা হয়ে গেল খুব কষ্টের। বারবার চেষ্টা করে যখন করতো নার্স রা, ছেলে আমার চিৎকার করে কেঁদে হসপিটাল মাথায় তুলতো। সেই জন্য হসপিটালে র সামনে দিয়ে গাড়ি দিয়ে গেলেও আতঙ্ক গ্রস্ত হয়ে কান্নাকাটি করতো।
কেমো চলছে এর মাঝে হাসান ওর বন্ধু সৈকত ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে ইন্ডিয়ার সকল অনকো সার্জন দের হিস্ট্রি, প্রোফাইল এনালাইসিস করা শুরু করলো। কোথায় নিয়ে গেলে ভালো হবে সেই চেষ্টা চলছে দিন রাত।
কখনো কখনো ডাক্তারদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছে।
আমি কখনো এসব জানতে চাইতাম না এমনকি আমরা কখনো ইব্রাহিম এর অবস্থা, চিকিৎসা কি হবে, ভবিষ্যৎ কি এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতাম না।
আমি শুধু একটা করে দিল পার করতাম তাতেই বলতাম, আল্লাহ আজকের দিনটা আলহামদুলিল্লাহ ভালো গেছে।
এভাবে নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখ সাত নম্বর কেমো শেষ হলো আমরা ভালো ভাবেই হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরলাম। কিন্তু যথারীতি চার পাঁচ দিন পরেই হিমোগ্লোবিন আর হোয়াইট ব্লাড সেল কমে গেল।
এবার সঙ্গে প্লাটিলেট ও কমে ১০ হাজারের নিচে নেমে গেল।
হসপিটালে ভর্তি হয়ে ব্লাড দেয়া হচ্ছে, প্লাটিলেট দেয়া হচ্ছে কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ হচ্ছে না। কাউন্ট বাড়ছে না আবার সব কিছু দেয়া হচ্ছে।
দশ দিন পর ওর কাউন্ট কিছু বাড়লেও মুখে শরীরে পানি চলে এলো। বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকতে হতো ওর কারণ টিউমার টা বাম দিকে ছিল। ফলে বাম দিকের চোখ টা পর্যন্ত ফুলে গেল।
ডাক্তার সিটি স্কেন করতে পাঠালেন।
ডিসেম্বরের ৪ তারিখ সিটি স্কেন করলো সেই রিপোর্ট আসলো ভয়াবহ!
আমাদের এত দিনের সকল পরিশ্রম, ইব্রাহিম এর সকল কষ্ট বৃথা গেল সাত টা কেমো কোন কাজ ই করেনি। উপরন্তু টিউমার বড় হয়ে গেছে আরও।
ডাক্তার হাসান কে ডেকে বলল, ক্যান্সার চিকিৎসার কেমো কাজ না করা মানে চিকিৎসা করে কোন লাভ নেই আর। হাসান অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি , ওকে বাসায় নিয়ে যাও একটা পীসফুল জীবন দাও বাকি যত দিন ওর হায়াত আছে।
সেদিনই আমরা হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরে এলাম। মাথা কাজ করছিল না কি হবে সামনে।
আমি শুধু আল্লাহ কে প্রথম থেকেই বলেছি , আল্লাহ তুমি যা করার করো কিন্তু আমার ছেলেকে কষ্ট কম দিও।
বাসায় এসে গ্লোবাল গ্লেনেগেলস ব্যাঙ্গালুরুর ডাক্তারদের সঙ্গে হাসান ভিডিও কনফারেন্স করলো ওরাও সব রিপোর্ট দেখে বলল, শুধু শুধু ছেলেটাকে কষ্ট দিও না ওকে আর এনো না।
সেদিন কনফারেন্স শেষ করে হাসান চুপ করে বসে আছে আমি তাকিয়ে আছি, আমি অপেক্ষা করছি ও কি বলে শোনার জন্য।
আমার দিকে তাকিয়ে হাসান বলল, ইন্ডিয়া না হলে সিঙ্গাপুর নিব হাত তুলে বসে থাকব নাকি ?
বাবা হিসেবে আমি সব চেষ্টা করব। দেখা যাক ইব্রাহিম কতটা সহ্য করতে পারে।
আমি মনে মনে এটাই শুনতে চাইছিলাম সেদিন ওর মুখ থেকে।
ডাক্তার হাল ছাড়লেও বাবা মা হাল ছাড়তে পারে না।
শুরু হলো শ্বাসকষ্ট। অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় কিনে আনলাম। অক্সিজেন দিচ্ছি ছেলেকে। ওর এই কষ্ট সহ্য করার মতো ছিল না।
হাসান সেদিনই সৈকত ভাই কে বলল, বন্ধু আমাকে তুমি এমন একটা হসপিটাল বল যেখানে নিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হবে। এমন একজন ডাক্তার বলে দাও যে আমার ছেলের চিকিৎসা করবে হাল ছেড়ে দিবে না। আমার হাতে সময় খুব কম।
সৈকত ভাই বললেন, তাহলে চেন্নাই এপোলো ক্যান্সার হসপিটাল ।
টাটা মেমোরিয়াল মুম্বাই ক্যান্সার চিকিৎসায় বেস্ট কিন্তু ওদের অনেক রোগীর রাশ ওখানে অনেক সিরিয়াল।
আমি এসবের কিছুই জানতাম না। ও কি কথা কার সঙ্গে বলছে আমার কাজ ছিল ইব্রাহিম এর খাওয়া দাওয়া, ওষুধ, পানি কতটা খাচ্ছে, হিসু কতটা করছে এসব হিসাব রাখা। ওকে একটু ভালো রাখা।
ডিসেম্বর এর ১১ তারিখ কোভিড সেম্পল নিতে যখন লোক এলো বাসায়, তখন জানলাম আমরা ১৩ তারিখ চেন্নাই যাচ্ছি।
আমার সারাজীবন দুই দিনের জন্য গেলেও তিন থেকে চার টা লাগেজ ব্যাগ সঙ্গী হবে হাসান চিৎকার করতো এত কিছু কেন সঙ্গে নিচ্ছি। সেই আমি চেন্নাই গিয়ে দেখি চারটা জামা আর কিছু শীতের কাপড় নিয়ে এসেছি।
আমার মাথায় গোছানো, ওখানের ওয়েদার ঠান্ডা না গরম কিছুই ছিল না আমার শুধু একটাই চিন্তা হাসি মুখে ফিরতে পারব তো ?
আইশা যখন এয়ার পোর্টে বলল, বাবা আমার ভাই টা কে সঙ্গে নিয়ে ফিরবে কিন্তু ! সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল যুদ্ধটা এখনো অনেক কঠিন ই রয়ে গেল। সত্যি ই কি ফিরতে পারব ইব্রাহিম কে নিয়ে?
১৩ ডিসেম্বর ২০২০ স্পাইস জেট এর ফ্লাইটে চেন্নাই এর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলাম এক বুক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে।
আর শুধু মহান আল্লাহর উপর ভরসা ছিল।
চলবে …..
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক একসাথে