গল্পর নাম : ১৬_বছর_বয়স
পর্ব_১৫ : ফেলবেন_না
আমি ড্রয়ারটা আস্তে করে বন্ধ করে উঠে দাঁড়াতেই শাওন আমার এক হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে বিছানায় নিয়ে এলো। আর আমার দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল। আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে বললাম আ… আপনি… ঘু…ঘু…ঘুমান নি!”
“এত রাতে আমার রুমে কি করছ?” শাওন বলল।
“আ…আমি ত।”
“তুমি ত!”
আমি একটা ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা করে বললাম,”বাথরুমে এসেছিলাম আমি, হেহে।”
“বাথরুম ড্রয়ারে থাকে?” শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম,”ই… ইদুর ছিল।”
“আমার এই রুমে ইদুর, পেইনট্রিং এর রুমে বিড়াল, আর সারা রুম জুড়ে ঘুরে বেড়ায় তোমার মত একটা গাধা, চিড়িয়াখানা পেয়েছ?”
আমি মনে মনে বললাম, নিজে যে গরিলা সেটা বলতে ভুলে গেছে।
“না। এখন ছাড়ুন।”
শাওন আরো শক্ত করে হাত দুটো চেপে ধরল।
“কি করছেন আপনি! লাগছে ত!”
“কি করতে এসেছ?”
“আপনার সাথে ঘুমাব তাই এসেছি।” আমি রেগে বলে উঠলাম। আরো বললাম,”হয়েছে! খুশি আপনি শুনে!”
শাওনের রিএকশন বুঝতে পারছি না। অবাক ত হয়েছে কিন্তু ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে।
“উফ আর কতসময়! এখন আর পারছি না। গরম লাগছে। আপনি প্লিজ ছাড়ুন আমাকে। আপনি আমাকে এভাবে ধরলে আর ছাড়তেই চান না। ফুলসজ্জার রাতে ত…”
শাওন ফট করে বলে উঠল,”Shut up, ষ্টুপিড।”
“আর আপনি কি!” আমি গোমড়া মুখ করে বললাম।
“তুমি সত্যিই গাধা৷” বলে শাওন উঠে বসল।
আমি শুয়ে থেকেই দুই হাত চোখের সামনে ধরে বললাম, “আপনি আবার লাল বানিয়ে দিয়েছে হাতের কব্জি।”
শাওন বলল, এখন যাও এখান থেকে।
আমি প্রশ্ন করে ফেললাম,”আপনি আমাকে ওই মুভিটা দেখতে দেবেন না কেন?”
শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,”সেটা তোমার জানার দরকার নেই।”
“আপনি দেখেছেন, তাই না?” হাই তুলতে তুলতে বললাম।
শাওন রেগে গিয়ে বলল,”তুমি অতিরিক্ত কথা বলো।”
আমি শাওনের কথায় কান না দিয়ে মনমরা গলায় বললাম,”আমিও দেখতে চাই।”
সাথে সাথে শাওনের ফোন বেজে উঠল। আমি শুয়ে থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে আমার বাম পাশে পরে থাকা শাওনের ফোন টার দিকে তাকালাম। শাওন ফোন টা নিয়ে বিরক্তির সাথে কেটে দিল।
আমি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে রইলাম। কাটার পরেই আবার ফোন এসে ঢুকল। এদিকে আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। ইচ্ছা করছে এখানেই ঘুমিয়ে যাই। কি সুন্দর বিছানা!
শাওন ফোন আবার কেটে দিয়ে বলল,”get up and get out.”
আমি কোনো উওর দিলাম না। শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,”হেই, আমার এখানে ঘুমাচ্ছ কেন!”
আমি ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলাম আর বললাম,”হ্যা যাচ্ছি যাচ্ছি। আমার ত কাজ নেই আপনার সাথে ঘুমাব!”
ওনার রুম থেকে বেরিয়ে এসে সোফায় পরেই এক ঘুম দিয়ে দিলাম।
অনেক সকালে ঘুম ভেঙে গেল এক বাজে স্বপ্নে। উঠে বসলাম। হাতের মুঠোয় থাকা চাবিটা নিচে পরে আছে। সেটা হাতে তুললাম তারপর ঘড়ির দিকে তাকালাম। ভোর সাড়ে পাঁচটা?! শাওনের রুমের দরজার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে উকি দিলাম। ঘুমাচ্ছে মনে হয়। আমি একটা ঝলমলে হাসি দিয়ে সেই রুমের সামনে গেলাম। চাবি ঘোরাতেই দরজাটা খুলে গেল। আমি চাবি টা দরজা থেকে নিয়ে ঢুকলাম। জলদি ডাস্টবিনের কাছে গিয়ে খুজতে লাগলাম। এখানে নেই! তাহলে কোথায়! রাগে পা দাপাদাপি করে চিন্তা করতে লাগলাম। আমি আশেপাশে তাকিয়ে ওই টেবিলটার দিকে গেলাম। টেবিলটার চারটা ড্রয়ার আছে। আমি ড্রয়ারগুলো খুলতে লাগলাম। একদম নিচের টা খোলার জন্য যখন বসলাম তখনি দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। সাথে সাথে টেবিলের নিচে ঢুকে গেলাম। টেবিলটা কাঠের। এটা এক সাইডে ঢাকা আর যে সাইডে চেয়ার থাকে সেই সাইডটা খোলা। লুকানোর জন্য ত ভাল কিন্তু ধরা ত পরেই যাব মনে হয়। শাওন রেগে বলল,আমি জানি তুমি এখানেই আছ। Get out.
আমি টেবিলের নিচে বসে দুই পায়ের হাটু দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ভয়ে সামনে পিছনে হেলতে হেলতে মনে মনে বললাম,”এখন!”
শাওন রুমে ঢুকতে ঢুকতে গম্ভীর গলায় বলল, আমি জানি তুমি টেবিলের নিচেই আছো।
আমি কাচুমাচু হয়ে বসেই রইলাম। শাওন এসে টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে হাটু ভাজ করে নিচে ঝুঁকতেই আমি দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলাম।
শাওন বলল,”এখন কি বলবা? যে, রুমে কুকুর এসেছিল সেটাকে কামড়াতে এসেছো?”
আমি মুখ ঢেকেই বসে রইলাম। শাওন আমার দুই হাত টেনে নামিয়ে দিল। আমি চোখও বন্ধ করে ছিলাম। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আস্তে করে এক চোখ খুললাম। শাওন একটা ট্রাউজার এর সাথে সেন্ডো গেঞ্জি পরে আছে। অনেক ঘেমে গেছে। জিম করছিলো মনে হয়। আমি ত ঘুমাচ্ছে মনে করেছিলাম। আস্তে আস্তে দুই চোখ ই খুললাম। তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে হাত দুটো ছাড়িয়ে নিলাম।
শাওন বলল,”বের হও এখনি।”
আমি ওনার দিকে একটু তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলাম। মনে মনে বললাম,আজ বের হলে আবার যদি ডাইনিং এর সামনে টানতে টানতে নিয়ে ধাক্কা দেয়! তখন আবার হাত কেটে গেলে!
ভাবার সাথে সাথে না সূচক মাথা ঝাকালাম। অর্থাৎ আমি বের হব না।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল,বের হতে বললাম না?
আমি আবার না সূচক মাথা ঝাকিয়ে বললাম, বের হলেই আপনি আমাকে আবার ব্যাথা দেবেন।
শাওন বিরক্তির সাথে বলল, আবার এই রুমে কেন এসেছ তাহলে? আর চাবি কই পেয়েছ?”
আমি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম,
চা..চাবি! কিসের চাবি!
– জানোনা কিসের চাবি?
আমি একটু আড় চোখে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলাম।
শাওন কিছু একটা চিন্তা করে বলল, কাল রাতে এজন্যই ড্রয়ার হাতাহাতি করছিলা!
আমি যেন কিছুই জানিনা এমন ভান করে তাকালাম।
শাওন আমার কোলের উপর পরে থাকা চাবির দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথে চাবিটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ফটাফট বলে ফেললাম, হ্যা ঠিক ধরেছেন চাবি নিতে গেছিলাম। আমার ল্যাগেজ থেকে পাখি দুইটা নিয়েছেন কেন!
শাওন আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল, চাবি এদিকে ফেরত দেও।
আমি হাতটা পিছনে সরিয়ে নিলাম। তারপর ওনার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালাম। আবার রেগে যাচ্ছে! উফ উনি অফিসে যাবার পর আসলে এমন ঝামেলা হতই না।
শাওন বলল, তাহলে আজ সারাদিন এই রুমেই থাকো। বলেই শাওন উঠে দাড়াল। আমি শুনে ভয়ে সাথে সাথে বের হলাম। শাওন হেটে দরজার বাহিরে গিয়ে সেটা আটকাতে যেতেই আমি হাত দিয়ে দরজা ধরলাম আর কাদো কাদো গলায় বললাম, বের ত হয়েছি। আটকাবেন না প্লিজ।
শাওন গম্ভীর মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে দরজা ছেড়ে দিল। আমি সাথে সাথে বাহিরে এসে দাড়ালাম আর আড়চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম।
শাওন আমার দিকে এক পা এগিয়ে এসে বলল, চাবি দেও।
আমি পিছিয়ে গিয়ে বললাম, না দিব না।
শাওন আমার হাতের দিকে হাত বাড়াতেই আমি আবার পিছিয়ে গেলাম।
– আগে পাখি দুইটা দিন তারপর দিব।
শাওন রেগে এগিয়ে আসতেই আমি আরো পিছাতে গিয়ে টাঙানো আগাছার পেইনটিং এর ফ্রেমের কোনার প্রান্তের সাথে পিঠে গুতো খেলাম। ঠিক যেখানে কাটা ফুটেছিল। আসলে কাটা ছেড়া জায়গাতেই এসে সব গুতো লাগে।
আমি ব্যথায় উফ বলে উঠলাম আর পিঠের পিছনে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলাম। শাওন একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে এসে আমাকে টান দিয়ে পিছনে ঘুরালো। তারপর বলল, চুল বাধতে পারোনা! কি সারাদিন ছেড়ে রেখে দেও! সরাও চুল।
আমি ভ্রুকুচকে মনে মনে বললাম, সারাদিন কখন খুলে রাখি! আর রাখলেও সেটা আমার ইচ্ছা।
শাওন আবার বলল, কি হলো, সরাও!
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে তারপর সরালাম।
“মাতবারি করে ব্যান্ডেজ খুলেছ কেন?”শাওন বলল।আমি কিছু না বলে কপাল কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“এখানে চুপ চাপ দাড়াও।” গম্ভীর গলায় বলে শাওন নিজের রুমে গিয়ে আবার সেই ব্যান্ডেজ আর এন্টিসেপটিক ক্রিম নিয়ে আসল।
আমি বললাম, আমি নিজেই পারব।
শাওন আমার কথায় কান না দিয়ে পিঠে ক্রিমটা লাগিয়ে দিল। শাওনের ছোঁয়ায় একটু কেমন কেমন লাগলেও নড়লাম না। তারপর ব্যান্ডেজ টা লাগিয়ে দিতে দিতে বলল, এটা যেন এখানেই থাকে।
আমি ওনার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বললাম, গোসলের সময় আমি খুলে ফেলব।
“এটা water proved গাধা” বলেই শাওন নিজের রুমে চলে গেল।
আমি একবার ওই রুমটার দিকে আবার তাকিয়ে তারপর মন মরা হয়ে নিজের সোফায় গিয়ে বসলাম। তারপর ডাইনিং এ তাকিয়ে দেখলাম কোনো নাস্তা তৈরি এখনো করেনি শাওন।
যাক ভালো! আমি আজ কুমড়া খেতে চাচ্ছিনা। তাই ফট করে কিচেনে চলে গেলাম। ফ্রিজ থেকে একটা ডিম বের করে ফ্রিজ বন্ধ করতে গিয়েই থেমে চিন্তা করলাম, উনি কি খাবেন? দুইটা ভাজি করব!
এদিক ওদিক তাকিয়ে ভাবলাম, নিই দুইটা। না খেলে আমিই খেয়ে নিব। হুহ।
রুটি বেলে ফ্রিজে আগে থেকেই রাখা। একটা রুটি আবার একটা টিস্যু তার উপর আবার আরেকটা রুটি এইভাবে। তাই রুটি নিয়ে সেকে নিলাম। আর পেয়াজ ও আলু কুচি করে নিয়ে তেলের উপর ভেজে ডিম দিয়ে দিলাম। অনেক দিন পর ডিম খাব। কি যে মজা লাগছে। গরিলাটা কুমড়ো খাওয়াতে খাওয়াতেই মারত আমাকে।
আমি টেবিলে খাবার রেডি করতেই শাওন গোসল করে একটা কালো টি শার্ট পরে বেরিয়ে এলো।
আমি ওনার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে টেবিলে বসে গেলাম। শাওন দূর থেকেই টেবিলের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে আমি…
আমি ওনাকে থামিয়ে দিয়ে ব্যঙ্গ করে বললাম, হ্যা হ্যা, রান্নাঘরে যেতে মানা করেছেন। রোজ রোজ কুমড়ো খেয়ে আমি কুমড়োর মত হয়ে যাচ্ছিলাম তাই আজ ডিম খাব।
শাওন কিচেনের দিকে যেতে লাগল। তখন আমি আবার বলে উঠলাম, আপনার জন্যও…ডিম।
শাওন আমার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে আবার কিচেনের দিকে রওনা দিল। আমি বলে উঠলাম, ভয় নেই খেলে আপনি মরে যাবেন না।
শাওন রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, shut up.
আমি একটা মুখ ভেংচি দিলাম তারপর নিজের প্লেটে মনোযোগ দিলাম।
শাওন একটু পরেই এসে টেবিলে বসল। সাথে করে আনল গাজর ভাজি।
ওই ভাজির দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললাম, ‘ভিটামিন এ’ খেতে এত ভালো লাগে! তবে এই কুমড়া, গাজর আর ছোট মাছ আমি খেতেই পারিনা। আমার পছন্দের পুরোই উলটো ওনার পছন্দ।
ডিম খেলেন না। আমার সেকে আনা রুটি দিয়ে ওই গাজর ভাজি খেয়ে নিলেন। আর খাওয়ার সময় সর্বদা হাতে থাকবে ফাইল না হলে ফোন। আজও আছে তবে ফোন।
খাওয়া শেষ করে শাওন বের হচ্ছিল। তখন আমিও গুটি গুটি পায়ে ওনার পিছনে বেরিয়ে আসতে লাগলাম। শাওন ভ্রুকুচকে বলল, তুমি কোথায় যাচ্ছ?
“আপনার সাথে যাচ্ছি।” আমি কপাল কুচকে বললাম।
শাওন রেগে বলল, আমি বলেছি যে নিয়ে যাব?
আমি বললাম, রেগে যাচ্ছেন কেন? আমার সারাদিন বসে থাকতে ভাল্লাগেনা। আমিও যাব।
বলেই ওনার উওরের অপেক্ষা না করেই লিফটের সামনে এসে দাড়িয়ে পরলাম। উনি দরজা অফ করে বিরক্তির সাথে আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বললেন, তোমার সমস্যা কি?
আমি বললাম, আমার ত কোনোই সমস্যা নেই।
শাওন কিছু বলার আগেই লিফট চলে আসল। তাই আমি উঠে পরলাম।
শাওন আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, আজ ই লাস্ট।
আমি কোনো কথা না বলে মুচকি হাসলাম।
গাড়িতে বসে খুশি মনে সীট বেল্ট লাগালাম। আজ আবহাওয়া টা সত্যিই অনেক সুন্দর। এই রাস্তাটাতে সকালে একটু কম জ্যাম থাকে। মোটামুটি ফাকা রাস্তায় সাথে এই ঝলমলে রোদে বাহিরের দৃশ্যটা অনেক ভালো লাগছে। এছাড়া পুরো নীল আকাশে মেঘগুলো উড়ছে। মেঘগুলোকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে। ইস জালানা টা খোলা হলে ভালো হত! এসি ছেড়ে কি পায় বুঝিনা! জালানা খোলা হলে সেটা দিয়ে কত সুন্দর বাতাস আসত! ফুরফুরে বাতাসে মনও ফুরফুরে হত। এগুলা জানেনা বলেই ত অনেক বড় গোমড়া মুখো হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।
আমি শাওনের দিকে তাকালাম তারপর একটু চিন্তা করেই বলে উঠলাম, জালানার কাচ টা নামিয়ে দিন না।
শাওন সামনেই তাকিয়ে আছে যেন শুনতেই পায় নি। তাই আমি জোড়ে বলে উঠলাম, কাচটা নামিয়ে দিন।
শাওন রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালো। আর বলল, আর একটা এক্সট্রা কথা বললে এখানেই নামিয়ে দিয়ে চলে যাব।
আমি মেজাজ খারাপ করে ওনার দিকে তাকিয়ে তারপর মুখ গোমড়া করে সামনে তাকিয়ে রইলাম। সত্যিই গরিলাও এর চেয়ে ভালো।
শাওনের অফিসে এসে পৌছেই বড় কাচের দেওয়াল দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম। আজ যদি গ্রামে থাকতাম তাহলে অবশ্যই পুকুরে গোসল করতে যেতাম। শাওন চেয়ারে বসে লেপটপ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। একটু পরেই সুমনা এসে ঢুকলো। আমাকে দেখেই বলল, ওরে তুমি এসেছ আজ ও। অনেক অনেক ভাল করেছ। এমনিও আমি ফোন করতাম। কিন্তু ভুলে গেছিলাম।
আমি হাসি মুখে সুমনার দিকে তাকালাম। সুমনা আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, সামনে আমাদের অফিসের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আছে। আমরা সবাই থাকব। আমি চাই তুমিও আসো। মজা হবে অনেক।
আমি শাওনের দিকে তাকালাম। সে কাজেই ব্যস্ত। সুমনা বলল, ওর দিকে তাকানো লাগবে না। আমি ইনভাইটেশন দিয়েছি ওর কিছু করার নাই।
শাওন এবার এদিকে তাকালো। আমিও তাকালাম। শাওন কিছু না বলে আবার নিজের কাজ করতে লাগল। সুমনা ফিসফিসিয়ে আমার কানে কানে বলল, নীরবতা সম্মতির লক্ষন।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ মারল সুমনা। আমি নিঃশব্দ হাসি দিলাম।
সুমনার আজ কাজ আছে। ওকে ক্লাইন্টদের সাথে মিটিংয়ে বসতে হবে। আজ ওকে পাওয়া যাবেনা। তাই আমি কি করব ভাবতে লাগলাম। যদিও করার কিছুই নেই। তাই কাচের জালানার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। যতই দেখি ততই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।
অনেক ক্ষন পর চোখ সরিয়ে শাওনের চেয়ারের দিকে তাকালাম। শাওন নেই। বাহিরে গেছে হয়ত।
ভাবলাম চেয়ার টেনে এইখানে বসে দৃশ্য দেখব। তাই চেয়ার টা নিতে গেলাম। হঠাৎ মনে হলো শাওনের এই বুক সেল্ফের থেকে বই নিয়ে পরলে কেমন হয়? দারুন হবে। এমন মনোহর দৃশ্যের সামনে চেয়ার পাতিয়ে পায়ে পা তুলে বই পড়ার মজাই আলাদা হবে। গায়ে এসে হালকা রোদ পরবে। এসির ঠান্ডায় শীতকাল শীতকাল পরিবেশ তৈরি হবে। আর আমি মনোযোগ দিয়ে বই পড়ব। সাথে এক কাপ চা হলে আরোই ভাল হয়। কিন্তু সেটা পাওয়া যাবেনা জানি। তাই যেটুকু পাচ্ছি তাই যথেষ্ট।
আমি কাঠের উচু বুকসেল্ফ টার দিকে এগিয়ে গেলাম। সব বই ই প্রায় ইংলিশ এ। আমার ঠাকুর মায়ের ঝুলি পড়তে ভালো লাগে। স্কুলে ওগুলোই পড়তাম। সাথে বিভিন্নি ইংলিশ গল্প পড়তাম যেগুলো বিশেষ বিশেষ মানুষদের জীবন নিয়ে লেখা। এখানে ত তেমন কিছু পাব বলে মনে হয় না! উচুতে কয়েকটা বই থাকতে পারে মনে করে চেয়ার টেনে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। সত্যিই অনেক বড় সেল্ফ। উপরের বইগুলো কিভাবে নাগাল পাবে কেউ? অবশ্য গরিলাটা বই অাদৌ পড়ে কিনা আর শুধু সাজিয়ে রাখার জন্য রেখেছে কিনা কে জানে!
আমি পা উঁচু করে বই খুজতে লাগলাম। একটাও ত পড়ার মত না। সব কি সব আর্ট সমন্ধে লেখা বই। হঠাৎ শাওন পিছন থেকে বলল, কি করছ তুমি?
আমি চমকে উঠলাম। বুকে এক হাত রেখে হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে বললাম, দেখছেন না? বই খুঁজছি। পড়ব।
“তোমার জন্য ওখানে কোনো বই নেই। নামো।” শাওন বিরক্তির সাথে বলে উঠল।
আমি ওনার কথায় কান দিলাম না। বই খুজতে লাগলাম। আর একটা পেয়েও গেলাম। ডেল কার্নেগীর বই। বাহ আর কি লাগে! এই লোক অনেক সুন্দর লেখে। কীভাবে জীবনে সফল হওয়া যায় এছাড়া আরো অনেক কিছু। কিন্তু বইটা একটু বাম দিকে। নেমে চেয়ার সরিয়ে আমার উঠলে হাতে পাব। কিন্তু নামতে ইচ্ছে করছে না। আমি ওভাবেই হাত বাড়িয়ে বইটা কোনো মতে হাতে নিলাম সেই সময়ই শাওন এসে আমার চেয়ার নাড়িয়ে বলল, নামতে বললাম না!
ওনার এই চেয়ার নাড়ানোর জন্য আমি ব্যালেন্স না রাখতে পেরে পড়ে গেলাম।
ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে নিলাম। কিন্তু অবাক কান্ড হলো ব্যাথা লাগল না। তাই আস্তে আস্তে ঠোঁটে ঠোঁট চিপে একটা চোখ খুললাম। তারপর চোখ বড়সড় হয়ে গেল। শাওন ধরে নিয়েছে! যাক বাবা বাঁচলাম। কিন্তু ওনার চোখে মুখে যে রাগের আভাস দেখছি তাতে মনে হচ্ছে আমাকে এখনি ফেলে দিবে। এক হাত দিয়ে আগে থেকেই ওনার কাধ ধরা ছিলাম। সেই হাতেই বইটা আছে। আর এখন ভয়ে ভয়ে অন্য হাত দিতে ওনার কাধের কাছের শার্ট চিপে ধরে বললাম, “ভুলেও ফেলবেন না একদম!”
শাওন আমার শার্ট চিপে ধরে থাকা হাতটার দিকে তাকালো তারপর রেগে আমার দিকে তাকালো। আমি ভয়ে একটা ঢোক গিয়ে বললাম,”আপনাকে আপনার মায়ের দিব্যি একদম ফেলবেন না।”
(চলবে……….