#ইটা পাটকেল পর্ব ৪৫
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব ৪৫
রাতের শেষে হসপিটালে পা রাখলো আশমিন। কাপড়ে কাদা মাটি লেগে আছে। রক্তিম চোখ দুটো হালকা ফুলে আছে। হসপিটালে উপস্থিত হতেই সানভি সহ বাকি গার্ডরা ঘিরে ধরলো আশমিন কে। বাহাদুর আর রফিক নিজের জায়গা ছেড়ে দৌড়ে এলো আশমিনের দিকে। আশমিন হাত ইশারার থামিয়ে দিল তাদের। নিজের জায়গায় যেতে বলে নিজের কেবিনে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়েই নূরের কাছে যাবে। আজ মেয়েরা ও নূরের সাথে ছিল।তাই তার কেবিন একেবারে খালি। আশমিন কোনদিকে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। মন মেজাজ খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। নূর কে কিভাবে সামলাবে সেই চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে আশমিনের। সানভি আশমিনের জন্য অপেক্ষা করছে। সারারাত কোথায় ছিল তা সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না।এভাবে চলতে থাকলে শত্রুরা যেকোন সময় আক্রমণ করতে পারে। গার্ড ছাড়া বের হওয়াটা কোন ভাবেই আশমিনের জন্য নিরাপদ নয়। এটা বলার সাহস আপাতত সানভির নেই। তবুও সে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে বলতে না পারলেও হাবভাবে বোঝাতে হবে আশমিন ভুল করেছে।
আশমিন বের না হতেই কেবিনে প্রবেশ করলো লুবানা। হাই তুলতে তুলতে সামনে তাকাতেই সানভি কে দেখে দাত বের করে বলল,
— আরে কংকাল দাদু যে,কি খবর আপনার? সব ঠিক ঠাক?
সানভি বিরক্ত চোখে তাকালো লুবানার দিকে৷ মেয়েটা বাচাল। সকাল সকাল গা জ্বালানী কথা বলছে। সানভি নিজের রাগটা কে চেপে হাসি হাসি মুখ করে বলল,
— আরে সাবানা যে! তোমার সেলাই মেশিনের কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে তো? এভাবে সারা রাত জেগে কাজ করো না। দেখলে তো অকালে চোখ দুটো হারালে। এখন আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলে কে তুমি কংকাল দেখছো!দুঃখ!
সকাল দশটায় চোখের ডাক্তার বসবে। তিন তলায়।দেখিয়ে আসবে। হুম?
সানভির কথা শুনে লুবানার গা পিত্তি সব জ্বলে গেলো। একটু ঘুমানোর আশায় আসলেও সেসব ছেড়ে সানভির দিকে তেড়ে গিয়ে শাসানোর ভঙ্গিতে বলল,
— একদম বাজে বকবেন না দাদু। ঠিক সময় বিয়ে করলে চার বাচ্চার বাপ হয়ে যেতেন। আবার বড় বড় কথা! হ্যান্ডসাম না ছাই।আপনাকে,একটা আস্তো মিষ্টি কুমড়ার মতো লাগে। আমার চোখ ঠিকই আছে। আপনার যন্ত্রপাতি ঠিক নাই। বিয়ে করে প্রমাণ করুন আপনি হ্যান্ডসাম ছেলে। আপনা,,,,
লুবানার কথা বন্ধ হয়ে গেলো। চোখ বড় বড় করে সামনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে সে। সানভির একহাত তার কোমড়ে আরেক হাত তার চুলের ভাজে। মিনিট দুয়েক পর লুবানার ঠোঁট ছেড়ে হাতের বাধন শক্ত করলো সানভি। চুলে টান পরতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো লুবানা। সানভি তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
— আমার চারটে বাচ্চা কে পৃথিবীতে আসতে লেট করানোর শাস্তি এটা। কাজটা তুমি ভালো করো নি সাবানা! বাই দ্যা ওয়ে,ইয়াম্মিইই!!!(চোখ টিপে)
লুবানা কে ছেড়ে মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল সানভি। লুবানা এখনো একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আশমিন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে লুবানাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। লুবানা কে কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে।
কেবিন থেকে বেরিয়ে সানভির মুখোমুখি হলো আশমিন। সানভি করিডোরেই দাঁড়িয়ে আছে। আশমিন তার দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে টিস্যু বের করে এগিয়ে দিলো সানভির দিকে। সানভি টিস্যু হাতে নিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। আশমিন ইশারায় ঠোঁট দেখাতেই সানভি তারাহুরো করে মুছে ফেললো। এই মেয়ে গুলো রাতের বেলা কেন লিপিস্টিক লাগিয়ে ঘুমায়! আজব!
আশমিন কেবিনে ঢুকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো নূরের দিকে। নূর পাখি কে বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে। সুখ দোলনায় ঘুমিয়ে আছে। এতক্ষণ হয়তো লুবানার কাছে ছিল সে। পাখি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছে। একটু পর পর নিজের পা টেনে নিয়ে মুখে দেয়ার চেষ্টা করছে। নূর ঘুমের ঘোরেই তা বারবার সরিয়ে দিচ্ছে। এতে মেয়ে খুব বিরক্ত হচ্ছে। নাক মুখ কুচকে ফেলে আবার পা মুখে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশমিন হাসলো। যাকে বলে প্রানবন্ত হাসি। এটাই তো সুখ। কলিজায় প্রশান্তির হাওয়া লাগা সুখ। শেষ বারের মতো মেয়ের পা সরিয়ে দিতেই মেয়ে ক্ষেপে গেলো। ঠোঁট ফুলিয়ে কেদে নূরের ঘুমন্ত মুখেই কয়েক থাবা লাগিয়ে দিলো। আশমিন শব্দ করে হেসে ফেললো। দ্রুত পায়ে এসে পাখিকে নিজের কোলে তুলে নিলো। পাখিও বাবাকে পেয়ে আহ্লাদী হয়ে উঠলো। এতক্ষণ ফুপিয়ে কাদলেও এবার চিৎকার করে কাদতে শুরু করলো। নূর ক্লান্ত ভঙ্গিতে উঠে বসলো। আশমিন কে দেখে অভিযোগের স্বরে বলল,
— দেখেছেন কি বিচ্ছু? একেবারে আপনার মতো হয়েছে।
আশমিন মেয়েকে থামাতে ব্যস্ত। মেয়ের সারা মুখে আদর করে মুচকি হেসে বলল,
— ডিএনএ টেস্ট ছাড়া এটাই তো প্রমাণ। আমার মেয়ে আমার মতো হবে না তো কার মতো হবে? ওর মনে হয় ক্ষিদে পেয়েছে নূর। (চিন্তিত ভঙ্গিতে)। মেয়েকে আগে খাইয়ে নাও।
পাখি কে নূরের কোলে দিয়েই ওদের পাশেই ধপ করে শুয়ে পরলো আশমিন। আশমিনের ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নূর।
— সারা রাত কোথায় ছিলেন?
— কাজ ছিল বউ।
— সে কি বেচে আছে?
— হুম।
— তার কি বেচে থাকা উচিত?
আশমিন চুপ থাকল।নূর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
— তাকে একা করে দিন মন্ত্রী সাহেব৷ সে প্রতিশোধের নেশায় নিজের বিবেক হারিয়েছে। তার কাছে নিজের সন্তান ও মেটার করে না। সে আমাদের জন্য সেইফ নয়। তাকে এতটা একা করে দিন যাতে সে একটু কথা বলার জন্যও তরপাতে থাকে। বাকিটা জীবন সে নিঃস্ব হয়ে বেচে থাক। যে পরিবারের মর্ম বোঝে না তার পরিবারে থাকার অধিকার নেই।
আশমিন চুপচাপ নূরের কথা শুনলো। কিছু বললো না। পাখিকে খাইয়ে আশমিনের পাশে শুয়িয়ে দিলো নূর। পাখি আশমিনের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আশমিন ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। পাখি তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হুট করে আশমিনের মুখে নিজের ছোট্ট হাতে থাবা মেরে দিলো। আশমিন লাফিয়ে উঠলো। তার গাল জ্বলে যাচ্ছে। এই টুকু মেয়ের থাপ্পড়ে এতো ঝাজ! আশমিন নূরের দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত গলায় বলল,
— মেয়ে আমাকে মারলো কেন? আর হাত এতো শক্ত কেন?(হাত চেক করতে করতে)
নূর ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
— বললাম না মেয়ে আপনার মতো বিচ্ছু। এবার মেয়ের মার খান।
আশমিন পাখির হাত ছেড়ে নূর কে জরিয়ে ধরলো। নূরের কাধে থুতনি রেখে সিরিয়াস গলায় বলল,
— একটা কথা বলি? রাগ করবে না। কথাটা সিরিয়াস।
নূর কিছু বললো না। আশমিন নূর কে আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,
— আজ আমরা বাসায় চলে যাবো। ডক্টর রিলিজ দিয়ে দিয়েছে তোমাকে। শোন বউ, আমার ইদানীং একটু বেশি বেশি প্রেম পায়। অনেকদিনের জমানো প্রেম বুঝলে? কিন্ত বউ অসুস্থ। তার উপর আমার দুটো মেয়ে! মাশআল্লাহ। বাপের জেনারেশন এরা বাড়াতে দিবে না। এখন বউ হিসাবে বে তোমার উচিত আমাকে সাপোর্ট করা। সময় বের করে আমার সাথে চিপায় চাপায় প্রেম করা। মেয়ে দুটো কে ঘুম পারিয়ে আমাকে টেক্সট করা। আমি তো ব্যস্ত থাকি বলো? সব সময় ঘাপটি মেরে সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকতে পারিনা। তুমি টেক্সট করলে বিষয় টা আমার জন্য সহজ হয়। বুঝেছ তো?
নূর হতাশার শ্বাস ফেললো। কাচি দিয়ে আশমিনের বার বার প্রেমের আগাছা কেটে পরিস্কার করার ইচ্ছে হলো তার। এই অসহ্য লোকটা কেই কেন তার ভালবাসতে হলো! একটু ভালো ভাবে খুজলে হয়তো একটা ভালো মানুষ সে পেয়ে যেতো। যার এত ঘনঘন প্রেম পায় না। এখন এই বিরক্তিকর লোকটার সাথেই তো সারাজীবন কাটাতে হবে! নূর আবারও হতাশ হলো। এদিকে আশমিনের কয়েকদফা চুমু খাওয়া শেষ। নূর বিরক্ত গলায় বলল,
— আরে ব্রাশ তো করতে দিন!
— কোন দরকার নেই। আমি করেছি। তুমি ছোট মানুষ ব্রাশ করে কি করবে? আসো বরের চুমু খাও।
চলবে,,,
(ছোট বলিয়া লজ্জা দিবেন না।কাল হয়তো শেষ পর্ব পাবেন। অনেকদিনের একসাথে থাকা। ইট পাটকেল কে আপনারা অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। সাথে আমাকেও।আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নই।জ্বর ১০১° আছে এখনো আপনাদের সুস্থতা কামনা করছি।ভালবাসা সবাইকে।)