#অন্যরকম তুমি
পর্ব ৩৫
#তানিশা সুলতানা
সাবিনা বেগম ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সিমির দিকে। সিমি কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। সামনে কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি তো হবেই। পরি সিমির কোলে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ছোঁয়া শাশুড়ীর পায়ের কাছে বসে আছে।
“শাশুড়ী আমার আপি কিন্তু খুব ভালো। সব রান্না পারে। খুব কাজের মেয়ে।
এক গাল হেসে বলে ছোঁয়া।
” তুমি কি পারো সেটা বলো?
মুখ বাঁকিয়ে বলেন তিনি।
“আমি খেতে পারি। আপনি আর আপি রান্না করবেন আমি শুধু খাবো। দারুণ না বেপারটা?
হাতে তালি দিয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে ছোঁয়া। সিমি অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। সাবিনা বেগম ওপরে কঠিন হয়ে থাকলেও ভেতরে হাসছে।
” শোনো মেয়ে আমি তোমাকে সোজাসাপ্টা কিছু প্রশ্ন করবো। বিনা সংকোচে উওর দিবা।
সিমির দিকে তাকিয়ে বলে সাবিনা বেগম। সিমি সময় না নিয়েই মাথা নারায়।
“তোমার কি নতুন করে সংসার বাঁধার ইচ্ছে আছে?
সিমি তাকায় সাবিনা বেগমের দিকে। এরকম প্রশ্ন করবে এটা যেনো সিমি জানতো। ছোঁয়া গোল হয়ো বসেছে রায় শোনার জন্য।
” ইচ্ছে থাকলে এতদিন অপেক্ষা করতাম না। অনেক আগেই বিয়ে করে নিতাম।
মাথা নিচু করে আলতো হেসে উওর দেয় সিমি।
“আমি কখনোই আমার ছেলেমেয়েদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিয়েছি বলে তো মনে হয় না। হ্যাঁ সাদু বিয়ে করতে চাই নি। আমি জোর করেছি। সাদু যদি বলতো ওর পছন্দের কেউ আছে তাহলে কখনোই এমনটা করতাম না।
কিন্তু ওর পছন্দের কেউ ছিলো না।
সিফাত কখনো তোমার কথা আমাকে বলেই নি। কেনো মিথ্যে বললো ও তোমায়?
দুধের শিশু পরিকে কোলে নিয়ে সিফাত যখন বাড়িতে ঢুকে ছিলো আমি তখন শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম বাচ্চাটা কে? ও বলেছিলো ওর মেয়ে। ব্যাস আর কখনো কিছুই জিজ্ঞেস করি নি।
কোলে পিঠে করে বড় করেছি।
তাহলে আমার সেই সন্তান কেনো মায়ের নামে এতবড় মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তোমার মতো নিষ্পাপ মেয়েকে ঠকালো?
গলা ধরে আসে সাবিনা বেগমের। চোখ দুটো ভিজে ওঠে। সিমির চোখেও পানি। ছোঁয়া শাশুড়ীর পা জড়িয়ে ধরে কোলে মাথা রাখে।
” খুব খারাপ মা আমি হয়ত। ছেলেরা কখনোই আমাকে কিছু বলে না। আমার মেয়েও কখনো কিছু বলে না। যেনো আমি ওদের বোঝা।
এবার সাবিনা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে।
“পরিকে আমরা সবাই খুব ভালোবাসি। ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
আমি চাই তুমি সারাজীবন আমাদের সাথে থাকো। আমার মেয়ে হয়ে।
সাবিনা বেগমের প্রস্তাবে ঘাবড়ে যায় সিমি। এটা কি করে সম্ভব?
করুন চোখে তাকায় সাবিনা বেগমের দিকে।
” ভেবে দেখো। তারপর বলো। জোর করা হবে না তোমায়।
আমার ছেলে কখনোই তোমার ধারে কাছেও আসবে না তুমি না চাইলে এটা আমি তোমায় কথা দিতে পারি।
সিমি মাথা নারায়। পরির মুখের দিকে তাকায়। এখানে এদের সাথে থাকতে চায় না সিমি। আবার পরিকে কি করে এদের থেকে আলাদা করবে? এতোগুলো বছর তো এরাই সামলেছে পরিকে।
“আমি বরং যাই। আপনার ছেলেকে গিয়ে দেখি কি করছে।
ছোঁয়া উঠে চলে যায়। সাবিনা বেগম সিমির সাথে টুকটাক গল্প জুড়ে দেয়। পড়ালেখা পরিবার স্বপ্ন এসব সম্পর্কে।
সাদি এখনো ঘুমিয়ে আছে। শরীর খারাপ থাকায় ঘুম ভাঙছে না।
ছোঁয়া রুমে এসে সাদির মাথায় হাত রাখে। এখনো কপাল গরম। চট করে কিচেনে চলে যায়। ঝাল করে নুডলস রান্না করে রুমে আসে।
সাদির মাথার কাছে নুডলসের বাটিটা রাখে।
” এই যে শুনছেন?
উঠুন না। শুনছেন?
মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় ডাকে ছোঁয়া।
সাদি এক লাফে উঠে বসে। ছিটকে কিছুটা দুরে সরে যায়। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ছোঁয়া ভয় পেয়ে যায়। এভাবে সিটকে কেনো গেলো?
“এভাবে একদম ডাকবা না আমায়।
বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে সাদি।
” ও মা কেনো? এভাবে না ডাকলে কিভাবে ডাকবো?
ভ্রু কুচকে বলে ছোঁয়া।
“যেভাবে খুশি ডাকো। কিন্তু এইভাবে ডাকবা না।
বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে বলে সাদি। ছোঁয়া মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলে।
” ডাকছো কেনো? মাএ না ঘুমাইলাম।
হাই তুলে বলে সাদি।
“খাবার খেয়ে ঔষধ খেতো হবে তাই।
মাথা নিচু করে বলে ছোঁয়া।
” এক ঘন্টা হয় নি ঔষধ খাইছি। এখন আবার কিসের ঔষধ?
কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে সাদি।
“জ্বর তো কমে নাই তাই।
” জ্বর কমে নি বলে দুই মিনিট পরপর ঔষধ খেতে হবে? তোমার কি হয়েছে বল তো? মাথা খাচ্ছো কেনো আমার?
ধমক দিয়ে বলে সাদি। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ছোঁয়া। ইদানীং সাদির ধমক গুলো সয্য হয় না। একটু কি ভালোবেসে বলা যেতো না? এভাবে ধমক দেওয়ার কি আছে?
সাদি ফোঁস করে শ্বাস নেয়। মাথাটা টনটন করছে ব্যাথায়। আর একটু ঘুম হলে ভালো লাগতো। এখন আবার প্যাঁচ প্যাঁচ করে কান্না। জীবনটা একদম যা ইচ্ছে তাই অবস্থা।
“খাইয়ে দাও
চোখ বন্ধ করে চুল টেনে বলে সাদি। ছোঁয়া যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। চট করে চোখের পানি মুছে বাটি হাতে সাদির দিকে এগিয়ে বলে। চামচে নুডলস পেঁচিয়ে সাদির মুখের সামনে ধরে।
সাদি সরু চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
” একটু বসো। কুলি করে আসি।
আলস ভঙিতে বিছানা ছাড়ে সাদি। হাঁটতে ইচ্ছে একদমই হচ্ছে না। কি আর করার? মহারানী যখন বলেছে তখন তো খেতে হবেই।
বেশ সময় নিয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে বের হয় সাদি। ছোঁয়া এখনো একই ভঙিতে বসে আছে বিছানায়।
সাদি তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ছোঁয়ার সামনে বসে। ছোঁয়া পরম তৃপ্তিতে খাইয়ে দিতে থাকে সাদিকে।
দুই এক বার মুখে দিয়েই নাক মুখ কুঁচকে ফেলে সাদি। ছোঁয়ার হাসি মুখটা চুপসে যায়।
“রেখে দাও পরে খেয়ে নিবো।
আবারও কম্বল টেনে শুয়ে পড়ে সাদি। ছোঁয়া সাদির আধখাওয়া খাবার টার দিকে তাকিয়ে আছে।
” চুল টেনে দাও।
ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে সাদি। ছোঁয়া মুচকি হাসে। আধখাওয়া খাবারটা তারাহুরো করে খেয়ে নিয়ে সাদির মাথার কাছে বসে টুল টেনে দিতো থাকে।
বিকেলে সিমি আর ছোঁয়াকে নিয়ে সাবিনা বেগম বের হবেন বলে তাড়া দিচ্ছে। সাদির জ্বর অনেকটা কমে গেছে। কিন্তু এখনো ঘুমচ্ছে। সাদিকে একা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না ছোঁয়ার। আবার শাশুড়ীর মুখের ওপর বলতেও পারছে না যাবে না।
তাই মন খারাপ করে কালো একটা থ্রি পিছ পড়ে নেয়। সাথে কালো হিজাব বেঁধেছে। সিমিও কালো জামা পড়েছে। পরিকে সিফাতের কাছে রেখে যাবে।
সিফাতের কাজ নেই। সামিম চৌধুরি সিফাত আর সাদি বাড়িতে থাকবে আর মেয়েরা বেরবে।
শেষবার সাদির চুলের ভাজে হাত বুলিয়ে বেরিয়ে যায় ছোঁয়া।
শাশুড়ী প্রথমে ওদের নিয়ে পার্লারে আসে। ছোঁয়া ভীষণ ভয় পাচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করছে না। নাক তো ফুটো করতেই হবে। সাবিনা বেগম নাক ফুল সাথে এনেছে। একেবারে নাক ফুল পড়িয়েই নিয়ে যাবে।
চোখ বন্ধ করে সাদির মুখটা স্বরণ করে আর তখনই নাক ফুটো করে দেয়।
নাক ফুটো করা শেষে কিছু কেনাকাটা করে নেয়। সিমি নিজে পছন্দ করে পরির জন্য কিছু জামাকাপড় কিনে নেয়৷
সিমিকেও একটা নাক ফুল কিনে দেয় সাবিনা বেগম। সিমি নিতে ইতস্তত করছিলো কিন্তু মুখের ওপর না করতে পারো না।
সাদি ভাই আর বাবার সাথে গল্প করছে। পরি সাদির কোলে বসে আছে।
ছোঁয়া বাসায় ঢুকেই সাদির সামনে পড়ে। সাদি এক পলক ছোঁয়ার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নেয়। ছোঁয়াও রুমে চলে যায়। এখন অপেক্ষা সাদি রুমে আসার।
সাদির থেকে খুব করে শুনতে ইচ্ছে করছে “তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে “
কিন্তু এটা কি আদো সাদি বলবে? যদি না বলে?
মন খারাপ করে বসে আছে ছোঁয়া। জামাকাপড় পাল্টাতে ইচ্ছে করছে না।
আয়না দেখতেও ইচ্ছে করছে না।
একটু পরেই সাদি রুমে আসে। তবুও ছোঁয়া তাকায় না সাদির দিকে। সাদি এসে ছোঁয়ার পাশে বসে ছোঁয়ার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
“ঔষধ তো খেয়েছি। তাহলে মন খারাপ কেনো?
ছোঁয়া উওর দেয় না। তাকায়ও না সাদির দিকে। সাদি জোরে শ্বাস টানে।
” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। নাক ফুলে খুব মানিয়েছে।
চলবে………..