#অন্যরকম তুমি পর্ব ৫৫
#তানিশা সুলতানা
রাগে গজগজ করতে করতে সারা রুমময় পায়চারি করছে ছোঁয়া। খাটের এক কোনায় আরামসে বসে বসে হাতের নখ গুলো দেখছে মেঘা। যেনো জীবনেও নখ দেখে নি। ছোঁয়ার রাগ তরতর করে বাড়ছে। একেতো মেয়েটা কথা বলছে। তারওপর ছোঁয়াও ঠিক করে নিয়েছে আগে আগে কথা বলবে না।
সাদি বেরিয়েছে অনেকখন হলো। কোথায় গেছে বলে যায় নি। খাবারটাও খেয়ে যায় নি। অবশ্য খাবেই বা কি? বিস্কিট ছাড়া তো আর নেই ও কিছু। সাদি চলে যাওয়ার পরপরই মেঘা এসেছে। না দেখেই দরজা খুলে ছিলো ছোঁয়া। আর ডাইনিটা হুরমুরিয়ে ঢুকে গেছে। এখনো যাওয়ার নাম নেই। সরাসরি বেড রুমে এসে পা গুটিয়ে বসেছে। যেনো আর নামবেও না।
মতলব সুবিধের ঠেকছে না ছোঁয়ার। ঘাপলা আছে কোনো। কিন্তু ঘাপলাটা কি ধরতে পারছে না।
ছোঁয়ার পেটের মধ্যে কথা গজগজ করছে। কিন্তু বলছে না। ইচ্ছে করছে না এই মহিলার সাথে কথা বলতে। তারওপর সাদির গুম হওয়া। আচ্ছা ছেলে ধরারা নিয়ে গেলো না কি? আরে ধুর এত বড় দামড়া ছেলেকে ছেলে ধরারা নেবে না। তাহলে গেলো কোথায়? ঝগড়াও তো হয় নি। মেঘা আসবে এটা আগে থেকে আন্দাজ করে পালায় নি তো? পালাতেও পারে। যে হারে ভীতু লোকটা।
ছোঁয়ার পরনে এখনো সাদির সেই সাদা শার্ট। শার্ট খুলতেও ইচ্ছে করছে না। আর শার্ট খুলে পড়ার মতো কিছু নেই ও। এখন থেকে ছোঁয়া ঠিক করে নিয়েছে সাদির শার্টই পড়বে। দারুণ হবে বেপারটা। টাকাও বেঁচে যাবে। ফ্রী তে সাদির ঘামের গন্ধও পাওয়া যাবে।
“সাদির শার্ট কেনো পড়েছো?
মেঘা গোমড়া মুখো হয়ে বলে। ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়। মেঘার দিকে তাকিয়ে কেবলা মার্কা হাসি দেয়।
” তাহলে কি আপনার অর্ধেক জামাটা খুলে নিয়ে পড়বো?
থমথমে খেয়ে যায় মেঘা। টেনেটুনে জামাটা একটু নিচে নামানোর চেষ্টা চালায়।
ছোঁয়া আবারও পায়চারিতে মন দেয়। পায়চারি করলে টেনশন কমে। এমনটাই শিখেছে সিনেমা দেখে। কারণ সিনেমার ম্যাক্সিমান হিরোরা টেনশনে পড়লে পায়চারি করে।
“এভাবে হাঁটছো কেনো?
মেঘা কাচুমাচু হয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে। ছোঁয়া কোমরে দুই হাত দিয়ে বড়বড় চোখ করে তাকায় মেঘার দিকে।
“আপনাকে দেখে খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছি না। তাই পায়চারি করে নাচ আটকাচ্ছি।
চিঁবিয়ে চিবিয়ে বলে ছোঁয়া।
” ওহহ আচ্ছা।
মেঘা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে। ছোঁয়া এবার এসে মেঘার পাশে বসে।
মেঘা মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলো পেছনে ঢেলে ছোঁয়ার দিকে একটু এগিয়ে বসে।
“তোমাদের মধ্যে কি কখনো কিছু হয়েছে?
মেঘা জিজ্ঞেস করে। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকায় মেঘার দিলে। আসলে মেঘা কিসের কথা বলছে সেটাই বোঝার চেষ্টা।
” কত কিছুই তো হয়েছে। তুমি কিসের কথা বলছো?
ছোঁয়া সোজাসাপ্টা বলে।
“বলতে চাইছি রোমাঞ্চ টোমাঞ্চ
রিনরিনিয়ে বলে মেঘা।
ছোঁয়া এতখনে বুঝতে পারে।
” ও মা হবে না? কতো আগেই হয়েছে। প্রেগন্যান্ট আমি। তুমি জানো না? দুই মাস চলছে। তোমার হাতটা দেখি। পেটে ওপর রেখে দেখে বেবি নরছে।
ছোঁয়া মেঘার হাত টেনে নিতে যায়। মেঘা হাত গুটিয়ে নেয়।
“তুমি প্রেগন্যান্ট?
চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করে মেঘা।
” হ্যাঁ। দেখে মনে হয় না?
ছোঁয়া গোল হয়ে বসে বলে।
“হুম হয়।
আনমনা হয়ে উওর দেয় মেঘা।
এরই মধ্যে কলিং বেল বেজে ওঠে। ছোঁয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সাদি দাঁড়িয়ে আছে৷ এক হাতে শপিং ব্যাগ অন্য হাতে খাবারের প্যাকেট। ঘাটে জবুথবু হয়ে গেছে। যে গরম পড়েছে ঘামারই কথা।
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে সাদির হাত থেকে শপিং ব্যাগটা নেয়
” কোথায় নিকনিক করতে গেছিলেন?
ভেংচি কেটে বলে ছোঁয়া। সাদি উওর না দিয়ে ছোঁয়াকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে। ক্লান্ত শরীরটা সোফায় এলিয়ে দেয়।
ছোঁয়া দরজা বন্ধ করে সাদির পাশে এসে দাঁড়ায়।
“যাও লেবুর শরবত করে নিয়ে এসো আমার জন্য। দেখছো না ক্লান্ত আমি।
সাদি চোখ বন্ধ করে বলে। ছোঁয়া চুল গুলো টেনে দিয়ে চলে যায়। সাদি মুচকি হাসে।
মেঘা গুটিগুটি পায়ে সাদির পাশে এসে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে আছে।
” স্যার ফাইলটা।
মেঘা রিনরিনিয়ে বলে। সাদি মেঘাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়। ধপ করে চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে।
“তুমি এখানে?
ভ্রু কুচকে বলে সাদি।
” সন্ধায় চলে যাচ্ছি। তাই আপনাকে ফাইলটা দিতে এসেছিলাম। আর দেখা হবে না কখনো।
সাদির গায়ের ওপর এক প্রকার ফাইলটা ছুঁড়ে মেরে হনহনিয়ে চলে যায় মেঘা। মেঘার চোখ দুটো ভেজা ছিলো। কি হলো এটা বুঝতে পারলো না সাদি? কান্না কেনো করছে? আর চলেই বা গেলো কেনো?
ছোঁয়া শরবত নিয়ে সাদির পাশে দাঁড়ায়।
“আপনার শরবত।
সাদির দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি দরজার দিকে তাকিয়েই গ্লাসটা হাতে নেয়।
” মেঘা এসেছিলো?
একবার চুমুক দিয়ে বলে সাদি
“হুমম এসেছিলো। জিজ্ঞেস করছিলো আমাদের মধ্যে রোমাঞ্চ হয়েছে কি না? আমিও বলে দিছি আমি দুই মাসের প্রেগন্যান্ট।
সাদি সবে দ্বিতীয় চুমুক দেওয়ার জন্য গ্লাস মুখে নিয়ে ছিলো। ছোঁয়ার কথা শুনে বিষম খায়। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে সাদির দিকে তাকায়।
” বিষম কেনো খাইলেন? নিশ্চয় ওই ডাইরিটা আপনাকে বকছে।
সাদি কোনোরকমে কাশি আঁটকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। অন্যের বউ হলে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতো কতো রকম আহ্লাদ করতো। আর এই মেয়ে
সকাল বেলা সিমির নিয়ে বাসায় চলে আসে সিফাত। দুই বার কলিং বেল চাপতেই সাবিনা বেগম দরজা খুলে দেয়। সিমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
সাবিনা বেগমকে দেখে পরি দুই হাত বাড়িতে দেয়। উনিও মুচকি হেসে কোলে তুলে নেয় পরিকে। সিফাত আর সিমির সাথে এক কথাও বলে না
“ভেতরে এসো
সিফাত বলেই গটগটিয়ে ভেতরে ঢুকে। সিমি ধীরে ধীরে পা ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে।
আজকে বাড়িটাকে বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছে। ঝিকিমিকি বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। মেহমান এসেছে অনেক।
সিমি বসার রুমের সোফার পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। কোথায় যাবে? কি করবে বুঝতে পারছে না? আশেপাশে চেনা কেউ নেই ও। সব অচেনা মানুষ। যাদের কখনো দেখেই নি সিমি।
” এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাও তনুর রুমে। শপিং এ যাবে ও। কাল গায়ে হলুদ অথচ এখনো কোনো শপিং করা হয় নি আমার মেয়েটার। তুমিও রেডি হয়ে যাও ওর সাথে।
সাবিনা বেগম গম্ভীর গলায় বলে। সিমি ঠিক বুঝতে পারছে না উনি কি রেগে আছে?
সিমি মাথা নারিয়ে তনুর রুমে চলে যায়। তনু এখনো ঘুমচ্ছে।
সিমি এক পাশে গিয়ে বসে। তনুকে কি ডাকবে?
এই বাড়িতে তো আগেও থেকেছে কিন্তু এরকম অস্বস্তি তো কখনো হয় নি? আজ এমন হচ্ছে কেনো?
“তনু ওঠ
শপিং এ যাবো
সিফাত তনুকে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে যায়।
সিমি উঠে দাঁড়ায়। ভীষণ নার্ভাস লাগছে। তনু আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। সিফাত সিমির দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। অন্যরকম লাগছে সিমিকে। কিন্তু কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
সিফাত মনে মনে ভাবে।
” ডাকছিস কেনো?
তনু আবারও কোলবালিশ জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বলে। সিমিকে এখনো খেয়াল করে নি ও।
“শপিং এ নিয়ে যাবো তোকে। জলদি ওঠ।
তনুর থেকে কোলবালিশ নিয়ে বলে সিফাত। তনু বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। সাথে সাথে সিমিকে দেখে তনু। মুহুর্তেই ঘুম উবে যায়। ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি।
” আপু তুমি এসেছো?
তনু এক লাফে উঠে জড়িয়ে ধরে সিমিকে। সিমিও আলতো হেসে জড়িয়ে ধরে তনুকে।
“জলদি কর।
আর ওকেও তোর একটা ড্রেস দিস।
বলেই সিফাত চলে যায়৷ তনু ঠাস করে সিমির কপালে চুমু দিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। সিমি শব্দ করে হেসে ফেলে।
” পাগলী একটা
চলবে…..