#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ২২
#writer_Mousumi_Akter
দুপুর একটা বাজে ঘড়িতে।চাতক পাখির মতো কয়েকটা প্রাণ তৃষ্ণার্ত হয়ে ছটফট করছে নিদ্রাহীন, ঘুমহীন চোখে মৃথিলার সুস্থ হওয়ার জন্য।আল্লাহর কাছে এক মনে সবাই প্রার্থনা করে চলেছে মৃথিলার সুস্থতার জন্য।
নিরা হসপিটালের এদিক সেদিক দিয়ে পায়চারি করছে।তার মন ভীষণ বিষন্ন।ডাক্তার রয় এর রুমের সামনে বারবার আসছে আর যাচ্ছে।ডাক্তার রয় মৃথিলার চিকিৎসার করছে।নিরার খুব জানতে ইচ্ছা করছে ডাক্তারের কাছে মৃথিলার অবস্থা এখন কেমন।নিরার মন বলছে নিশ্চয়ই ডাক্তার ভালো কিছু বলবে।আর সে ছুটে গিয়ে তার দাদাভাই কে এই নিউজ টা দিবে।আর তার দাদাভাই এর মুখে বিজয়ের হাসি ফুটবে।তার দাদাভাই তাকে তার জীবনের সব খুশি আর আনন্দ এনে দিয়েছে।নিরার পক্ষে কোনদিন দাদা ভাই এর ভালবাসার প্রতিদান ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।কিন্তু আজ যদি সে একটা ভালো নিউজ দিতে পারে তাহলে তার দাদাভাই তাকে সারাজীবন যে খুশি উপহার দিয়েছে তার থেকে হাজারগুন খুশি সে উপহার দিতে পারবে।ডাক্তার রয় এর রুমের সামনে এসে বারবার উঁকি মারছে নিরা।দরজা হালকা খোলা। উঁকি দিয়ে দেখা যাচ্ছে ডাক্তার রয় কোনো ফাইলপত্র দেখছে।নিরার বয়স টা নিতান্তই কম।কি বলে ভেতরে প্রবেশ করবে সেটাও বুঝছে না।কিন্তু বারবার উঁকি ঝুকি দিয়েই যাচ্ছে।নিরা কে উঁকি মারতে দেখে হসপিটালের একজন স্টাফ খুব জোরে ধমক দিয়ে বললো,
‘কি ব্যাপার তুমি এভাবে উঁকি দিচ্ছো ক্যানো?যাও এখান থেকে আগে।এখানে কি তোমার।’
লোকটার ধমক ছিলো খুব জোরের সাথে।নিরা খুব জোরে কেঁপে উঠলো।কেঁপে উঠে পেছনে কারো সাথে ধাক্কা খেলো।
নিরা তাকিয়ে দেখলো,
শ্যামবর্ণের একটা ছেলে বয়স কম ই হবে।পরণে লাল পাঞ্জাবী আর সাদা পাজামা চোখে খয়েরী ফ্রেমের চশমা।নিরা ভায়ার্ত চোখে ছেলেটার দিকে তাকালো।কারণ লোকটার ধমকে নিরার হৃদপিন্ড কাঁপছে।ছেলেটা নিরার দিকে একবার তাকালো আবার চোখ সরিয়ে নিলো।ছেলেটা বুঝতে পেরেছে নিরা ভ*য় পেয়েছে।
ছেলেটা চোয়াল শক্ত করে স্টাফ কে বললো,
‘আপনি এমন ব্যবহার করছেন কেনো?এমন ব্যবহারের রাইট আছে আপনার।আপনি কোন পোস্ট এ আছেন হসপিটালের।’
ছেলেটার ধমক এ স্টাফ কিছুটা ভ*য় পেয়ে নরম কন্ঠে উত্তর দিলো,
‘আমি ইমারজেন্সি ওয়ার্ডের স্টাফ।’
‘কি ভেবেছেন কি আপনারা। নিজেদের কি ভাবেন শুনি।হসপিটালে মানুষ বিপদে পড়ে আসে।আপনাদের কাছে খেতে পরতে আসে না।মেয়েটার নিশ্চয়ই কোনো দরকার না হলে কি উঁকি দিতো।আপনি জানতে চাইবেন না কেনো উঁকি দিচ্ছে।জানতে না চেয়ে বরং ধমক দিচ্ছেন।আপনার বাপের সম্পত্তি কি এই হসপিটাল।’
‘উনি স্যারের দরজায় বারবার উঁকি দিচ্ছিলো।এটা আমাদের নিয়মে নেই।তাছাড়া স্যার অনেক বিজি আছেন এখন।বলে দিয়েছেন কেউ যেনো ডিস্টার্ব না করে।’
‘নিয়ম শেখাবেন না। মানুষের প্রয়োজন হলে তো মানুষ ডাক্তারের কাছে আসবেই তাইনা?’
‘স্যার এর নিষেধ ছিলো।আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।’
‘আপনার দায়িত্ব ছিলো এই মেয়েটি কেনো উঁকি দিচ্ছে সেটা জিজ্ঞেস করা।তাকে সাহায্য করা।আপনি সেটা না করে উল্টা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন।’
ছেলেটি এবার নিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘কোনো প্রয়োজন এখানে,ডাক্তার কে কিছু বলবে?’
বেশ নমনীয়তা কন্ঠে ছেলেটির।
‘জ্বী,আমার ভাবির অবস্থা ভালো না।এই ডাক্তার চিকিৎসা করছে।তাই আমি জিজ্ঞেস করতাম আমার ভাবি কবে সুস্থ হবে ভাবির কি অবস্থা জানতে চাই।’
‘কি হয়েছে তোমার ভাবির।’
‘গত কাল আমার জন্মদিন ছিলো।আর সেখান থেকে কিভাবে যেনো পড়ে যায় আমরা কেউ জানিনা।সেখান থেকেই ভাবির অবস্থা ভালো না।’
‘ওহ গড।তাহলে তো মারাত্মক অবস্থা। ‘
‘হ্যাঁ।ভাবির পেটে বাচ্চা ছিলো সেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’নিরার হঠাত খুব হেচকি হচ্ছে।
‘ইয়ে লেট উইশ হ্যাপি বার্থডে বেবিগার্ল।’
বেবিগার্ল শুনে নিরা ঘনঘন চোখের পলক ফেলে ছেলেটার দিকে তাকালো।দু’মিনিটের পরিচয়ে বেবিগার্ল ডাকছে তাকে।ছেলেটা এবার হেসে দিয়ে বললো,
‘ঘাবড়ানোর কিছুই নেই।একটু চমকানোর জন্য এমন করলাম।হেচকি উঠছিলো তোমার।দেখো চমকে গিয়ে হেচকি চলে গিয়েছে।’
নিরা এবার কিছুটা লজ্জা পেয়ে হেসে দিলো।সে কি ভাবছিলো আর ছেলেটা কি ভেবেছে।নিরা গাল ভরে হাসছে।মেয়েটা ভীষণ ই পিচ্চি আর কিউট দেখতে।গালে সুন্দর একটা টোল পড়ে হাসছে।তার স্বভাবে পুরোটাই বাচ্চামো।
ছেলেটা বললো,
‘নাম কি তোমার?’
‘নিরা।আপনার নাম?’
‘নিলয় আহমেদ।অনার্স তৃতীয় বর্ষ তে লেখাপড়া করি।আর তুমি?’
‘আমি ক্লাস টেনে পড়ি।এখানে কেনো এসছেন।’
‘ডাক্তার রয় আমার মায়ের চিকিৎসা করছে।আমিও মায়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসছি।’
‘ওহ আচ্ছা।’
‘পরিচিত হয়ে বেশ ভালো লাগলো।তুমি কি বিবাহিত।শাড়ি পরা দেখে মনে হলো।’
‘না আমার জন্মদিন ছিলো গতকাল তাই ভাবি আর আমি একই শাড়ি পরেছিলাম।’
‘আচ্ছা!ওয়েট ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করি তোমার ভাবির কথা।’
নিলয় ডাক্তার রয়ের কেবিনে প্রবেশ করলো সাথে নিরা কে নিয়ে।ডাক্তার রয় মৃথিলার ই রিপোর্ট গুলো দেখছিলো।ডাক্তার রয় গতকাল ই নিরার সাথে পরিচিত হয়েছে।নিরা কে দেখেই বললো,
‘নিরা মা’মনি কি হয়েছে মা। কিছু বলবে।’
নিরা বললো,
‘স্যার আমার ভাবির কি অবস্থা এখন।’
ডাক্তার রয় হেসে উত্তর দিলো,
‘ ভবিকে খুব ভালবাসো তাইনা মা?’
‘হ্যাঁ স্যার।ভাবিও আমাকে খুব ভালবাসে।’
‘তোমার ভাই আর তুমি দুজনেই বড্ড ইমোশনাল।তবে একটা গুড নিউজ আছে।মৃথিলার অবস্থা আগের থেকে অনেক ভালো।আজ না হলেও কাল মৃথিলার জ্ঞান ফিরে আসবে।প্রথমে অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।এখন আর ভয়ের কিছুই নেই।শী ইজ আউট অফ ড্যাঞ্জার।তবে আঘাত টা অনেক মারাত্মক ছিলো।আমি এক্ষুনি তোমাদের নিউজ টা দিতে যেতাম।তুমি এসছো ভালো হয়েছে।’
নিরা হেসে দিয়ে রুম থেকে ছুটে চলে এলো।নিলয় বা ডাক্তার কাউকেই কিছুই বললো না।এক ছুটে সে দাদাভাই এর কাছে যাচ্ছে।নিরব হাত কপালে ঠেকিয়ে নিচে দিকে তাকিয়ে আছে ওয়াল হেলান দিয়ে।চেহারায় ভীষণ ক্লান্তি।কালকের সেই পাঞ্জাবী এখনো পরা রয়েছে।নিরা ছুটে এসে নিরব কে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘দাদাভাই ভাবি সুস্থ হয়ে যাবে। ডাক্তার এক্ষুনি আমাকে বলেছে।’
নিরবের বন্ধ হওয়া শিরার র*ক্তগুলো যেনো আবার চলতে শুরু হলো।থমকে গেছিলো সব কিছুই।থমকে যাওয়া সব কিছু আবার চলতে শুরু করলো।মলিন মুখ টা উজ্জ্বল হলো।আনন্দে হেসে দিলো নিরব।অশ্রুসিক্ত হাসি ছিলো নিরবের চোখে আর মুখে।এই নিউজ টা নিরবের জীবনের ছোটবেলার ঈদের সমান।বোনকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে চোখের কয়েক ফোঁটা পানি ফেললো।কয়েক টা দীর্ঘ নিঃনিশ্বাস ফেলে মন হালকা করলো।
ইসহাক হাসান বললো,
‘আমার নিরা হলো একটা পবিত্র ফুল।আমার নিরার যার জন্য চোখের পানি পড়েছে সে কি সুস্থ না হয়ে থাকতে পারে।বাড়ি গিয়ে এক হাজার মানুষ খাইয়ে দিবো।মানত করেছিলাম।’
ইরিনা হাসান বললো,
‘আমিন।আল্লাহ দোয়া কবুল করেছেন।নিরব এবার তোমরা খেয়ে নাও বাবা।এমন হলে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে যাবা।তখন আর মৃথিলার জন্য ছোটাছুটি করতে পারবা না।’
সুপ্তির মুখ ভরা হাসি।যে হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রিফাত।
রিফাত বললো,
‘তুই ডাক্তারের কাছে গেলি কিভাবে রে পুচকি মেয়ে।’
‘ভাবির জন্য চিন্তা হচ্ছিলো।তাই সাহস করে গেছিলাম।’
নিরা এবার অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বললো,
‘বাবা,দাদাভাই জানো জীবনে প্রথম বার আজ আমাকে একজন বকেছে।’
নিরব আর ইসহাক হাসান নিরার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস।নিরা বোন হলেও নিরবের চোখে যেনো সন্তানসমান।ভীষন স্নেহ আর ভালবাসায় বড় করেছে।ইসহাক হাসান তিন ছেলেমেয়ের মাঝে নিরা কে বেশী ভালবাসে।
ইসহাক হাসান সাথে সাথে রেগে আগুন হয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,
‘কার এত সাহস আমার নিরাকে বকে।’
নিরব বললো,
‘বাবা ব্যাপার টা আমি দেখে নিবো।আমার উপর ছেড়ে দাও।’
রিফাত বললো,
‘কে কি বলেছে রে বুড়ি।’
‘ওইযে দেখো ওই লোকটা।আমাকে খুব জোরে ধমক দিয়েছে।’
রিফাত বললো,
‘আমরা লোকটাকে উ*প*রে পাঠিয়ে দিবো।আমাদের নিরাকে বকা।কি সাহস।’
পেছন থেকে নিলয় নিরা আর তার পরিবার কে দেখছিলো।এতক্ষণ নিলয় এর মনে হয়েছিলো মেয়েটা সাধারণ। কিন্তু নিলয় এর ধারণা সম্পূর্ণ ভূল।নিরা তো অত্যান্ত প্রভাবশালী ঘরের মেয়ে।হঠাত দেখায় নিলয়ের মনে নিরা কে নিয়ে যে সুপ্ত ইচ্ছা জেগে উঠেছিলো নিলয় তা সাথে সাথেই মাটি চা*পা দিয়ে দিলো।
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে হতেই মৃথিলার সেন্স ফিরেছে।তবে এখনো চোখ মেলে তাকায়নি। আই.সি.ইউ থেকে আবার কেবিনে শিফট করানো হলো।স্যালাইন আর র*ক্ত এখনো চলছে।নিরব আর রিফাত কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।নবনিতা নিরব কে দেখে বললো,
‘কিছু খেয়েছো?’
নিরব আকাশের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো,
‘না।’
‘কেনো নিরব?কি আছে বলতে পারো এই মৃথিলার মাঝে।খুব অবাক লাগছে জানো নিরব ছোট বেলা থেকে তোমার পেছনে ঘুরেও তোমার মন পেলাম না।অথচ,মৃথিলা না চাইতেই তোমাকে পেয়ে গেলো।তুমি কিভাবে মৃথিলার জন্য ছুটছো।ঘুম নেই,খাওয়া নেই পৃথিবীর সব কিছুর বাইরে চলে গিয়েছো তুমি।অথচ মৃথিলার থেকে কোন কিছুতে আমার কম ছিলোনা।টাকা,সম্পদ,প্রাচুর্য, ক্ষমতা সব দিক দিয়েই আমি মৃথিলার থেকে এগিয়ে আমি।তবুও ভালবাসলেনা কেনো আমাকে।’
‘তুমি যেসব বিশ্লেষণ দিচ্ছো এর কোনটায় ভালবাসার সঙ্গায় পড়ে না।ভালবাসা হার্ট কানেকটেড।’
‘হার্ট কি আমার নেই।আমার কি কম আছে নিরব বলতে পারো।’
‘হয়তো তোমার সব আছে অনেক বেশী বেশী ই আছে।অন্য কারো গল্পে তুমি পরিপূর্ণ কিন্তু আমার গল্পে মৃথিলা ই শ্রেষ্ঠ ।মৃথিলাকে দেখলে আমার যে অনুভূতি হয় সেটা তোমাকে দেখলে হয়না।প্লিজ নবনিতা আমার মন মেজাজ কিছুই ভালো নেই।আশা করি এসব ব্যাপারে আমাকে আর প্রশ্ন করবে না।’
‘নিরব আমি তোমাকে ভুলতে পারবো না কখনো।আমার খুব কষ্ট হয় তোমার জন্য।একদিন না একদিন তুমি আমাকে বুঝবে। ‘
‘আচ্ছা সুপ্তি বলছিলো তুমি মৃথিলাকে ধা★ক্কা দিয়েছিলে।ইজ ইট ট্রু নবনিতা।’
‘এসব কি বলছো তুমি।আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে সুপ্তি। সুপ্তি মেয়েটা তো একটুও সুবিধার না।আমাকে কিভাবে ফাঁসাচ্ছে।’
‘মেয়েটা অনেক ভালো।নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে তাই তোমার নাম বলেছে।এটা সত্য হলে কি হবে জানিনা।অগ্রিম সরি বলে রাখছি।প্রসঙ্গ যেখানে মৃথিলার আমি সেখানে একটু বেশী ই ডেঞ্জারাস।’
‘এটা সত্য নয় নিরব।আমি প্রতিহিংসায় কিছু কথা বলেছিলাম কিন্তু ধাক্কা মা*রি নি।আমি কি মানুষ খু*নের মতো জঘন্য কাজ করতে পারি।’
‘মৃথিলা সুস্থ হলেই সব প্রুভ হবে।এখন তুমি যাও প্লিজ।সুপ্তি তোমাকে দেখলে রিয়্যাক্ট করবে যাও এখান থেকে।’
‘আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো তুমি। আমিতো মৃথিলাকে দেখতেই এসছিলাম।’
‘কেনো এসছো?ডেকেছি তোমায়।’
‘না ডাকলে কি আসবো না।’
‘না আসবেনা,তুমি মানে আমার মৃথিলাকে হারানোর ভয়।’
রিফাত বললো,
‘নবনিতা ডোন্ট মাইন্ড।আই থিংক তোমার এখন নিজেকে শুধরএ নেওয়া ঠিক।কিছুই পাওয়ার নেই তোমার আর।’
রিফাত আর নবনিতা কথা বলছে।নিরবের মন পড়ে আছে মৃথিলার কাছে।
নিরব কেবিনের ভেতর প্রবেশ করলো।মৃথিলার সাথে তার খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে।নিরব মৃথিলার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,
‘মৃথিলা তুমি কি জানো পৃথিবীর ভয়ংকর তৃষ্ণা হলো কারো সাথে বলতে না পারার তৃষ্ণা। তুমি আমার ভয়ংকর তৃষ্ণা। তুমি ছাড়া ভয়ংকর কোনো নেশা আমাকে জড়াতে পারে নি।প্লিজ কথা বলো।’
নিরব একান্তে কিছু সময় কাটালো মৃথিলার সাথে।
রিফাতের ডিউটি আছে।রিফাত ডিউটি তে গিয়েছে।নিরা আর সুপ্তিকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।মৃথিলার পাশে শুধু আজ নিরব আছে।সুপ্তি নিরার সাথে বাসায় গিয়েছে।দুই রাত ঘুম নেই কারো চোখে।বাড়ি গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে ঘুম এর দরকার। ফাঁকা কেবিনে মৃথিলার পাশে আজ নিরব ছাড়া কেউ নেই।মৃথিলা চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে।নিরব তাকিয়ে আছে মায়াভরা মুখের দিকে।মৃথিলার হাত ধরে নিরব বসে আছে।মৃথিলার হাতে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো নিরব।ওষ্ট মৃথিলার কপালে নেমে গেলো নিরবের।মৃথিলার কপালে ওষ্ট ছোঁয়ানোর সময় নিরবের চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।প্রিয়তমার শরীর খারাপে কি কেউ মানসিক শান্তিতে থাকতে পারে।সারারাত নিরব মৃথিলার হাত ধরে বসে আছে।মধ্যরাতে হঠাত কারো চিৎকারে হসপিটালের সবাই জেগে উঠলো।নিরব ও এগিয়ে গেলো কিসের শব্দ শোনার জন্য।কিন্তু কোথাও কাউকে দেখা গেলো না।শব্দটার আদি অন্ত কেউ খুজে বের করতে পারলো না।পরের দিন সকালে হসপিটালের করিডরে একটা লা*শ পড়ে আছে।অথচ কাল রাতে এখানে কিছুই ছিলো না।লা*শ টার অবস্হা খুব ই ভয়াবহ।নিরব চমকে যায় লা*শ টা দেখে।গতকাল নিরা কে ধমক দেওয়া সেই স্টাফ টার লা*শ পড়ে আছে।নিরব রিফাত কে ফোন দিতেই রিফাত দ্রুত চলে আসে।কিছুক্ষনের মাঝেই নিরা আর সুপ্তি মৃথিলাকে দেখতে হসপিটালে ছুটে আসে।নিরব আর আর রিফাত দুজনেই অবাক হয়ে যায় এই মানুষ টার লা*শ দেখে।এই লা*শ টার ও সেই একই অবস্থা। কুচি কুচি করে কেটে রাখা লা*শ।নিরা আর রিফাত লা*শ টা দেখে ভ*য় পেয়ে যায়।নিরার মাথায় চক্কর দেয়। কিছু একটা সন্দেহ হয়।লোকটা তাকে বকেছিলো আর সেদিন ই লোকটার এমন অবস্থা হলো।স্হানীয় থানায় নিরব আর রিফাত লা*শ টা পাঠিয়ে দিলো।এই খু*ন টা যেনো সম্পূর্ণ টায় রহস্য।হসপিটালের সবাই আতঙ্কিত।এই খু*নে*র কুল কিনারা কেউ খুজে বের করতে পারে নি।তবে এর কঠিন ইনভেজটিগেশন চলছে।এই স্টা*ফ এর মৃ*ত্যু কোনো সাধারণ মৃ*ত্যু নয়।
দুপুর বারোটায় মৃথিলার জ্ঞান ফিরে এসছে।মৃথিলা চোখ খুলেই সুপ্তির মুখ টা দেখলো।সুপ্তি আনন্দে কেঁদে কি করবে বুঝতে পারছে না।নিরা আনন্দে হাসছে।ইসহাক হাসান ইরিনা হাসান সবাই আনন্দে হাসছে।মৃথিলার চোখ নিরবের দিকে গেলো।মৃথিলা খেয়াল করলো নিরবের চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছে।নিরব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।
নিরব হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে মৃথিলার হাত ধরে বললো,’
‘এই বেখেয়ালি মেয়ে এভাবে পড়ে গেলে কেনো?পড়ে গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলে। আর আমার কি হচ্ছিলো জানো।’
‘কি হচ্ছিলো।’
‘সেটা বুঝানোর ক্ষমতা নেই আমার।কিন্তু তুমি কিভাবে পড়ে গেলে।’
‘আমি তো পড়িনি।কেউ ধা★ক্কা দিয়েছিলো।’
নিরব চট করে উঠে গিয়ে নবনিতার গলা চেপে ধরলো।অত্যান্ত রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
‘হাউ ডেয়ার ইউ।আমি শুধু মৃথিলার সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম।’
নবনিতার জিভ বের হয়ে গিয়েছে।শুধু আউ আউ শব্দ হচ্ছে।কেউ ভাবতেই পারেনি নিরব হঠাত এমন করবে।মৃথিলা দ্রুত বলে উঠলো,
‘ও আমাকে ধাক্কা মারে নি।প্লিজ ওকে ছাড়ুন।’
‘সুপ্তি বললো, ও ই তো তোকে বাজে কথা বলছিলো।ও ছাড়া আর কে।’
নিরব নবনিতাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
‘মৃথিলার থেকে দূরে থাকো।নাহলে ভালো হবে না।’
‘কে তোমাকে ধাক্কা মে*রে*ছি*লো।বলো কে?’
‘কে জানিনা,তবে একটা ছেলে ছিলো।’
‘হোয়াট? ছেলে।’
‘হ্যাঁ। কানের কাছে ফিসফিস করে বলছিলো গুড বাই। কিন্তু আমি অন্ধকারে বুঝতে পারিনি কে?’
ইসহাক হাসান বললো,
‘বাড়িতে যারা এসছিলো সবার ডিটেইলস নাও নিরব।আমার বাড়িতে আমার ছেলেকে কেউ মে*রে যাচ্ছে,আবার বৌমার সাথেও এক ই ঘটনা।’
চলবে…..