#শিমুল_ফুল
#৩১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
সবাই খেয়েদেয়ে যখন রুমে চলে যায় তখন পলাশ বাড়ি আসে।সন্ধ্যায় তার আব্বা বাড়িতে ছিলো না বিধায় কথা বলতে পারেনি।ফোন দিয়েছিলো কিন্তু ফোন রিসিভ করেনি।উপায় না পেয়ে ক্লাবে,চেয়ারম্যান অফিসে সব জায়গায় খুঁজেছে কোথাও না পেয়ে আবার বাড়িতে আসে।
শওকত হাওলাদার তখন বিছানায় বসে টিভিতে খবর দেখছে।পলাশ হন্তদন্ত হয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।ছেলের এমন কান্ডে রাবেয়া খুব অবাক হয়।শওকত হাওলাদার ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকে,যেন উনি জানতেন পলাশ আসবে।পলাশ কাছে এসে বললো,
“আব্বা আপনি মি*থ্যা কেন বলেছিলেন?”
শওকত হাওলাদার অবাক হওয়ার বান ধরে বললো,
“কিসের মি*থ্যা?কিসের কথা বলছো?”
পলাশ নিজের রা*গ সংযত করে বললো,
“নিধির কথা।”
শওকত হাওলাদারের চোখে রা*গের আভাস ফুটে উঠে।
“তোমার কি মনে হয় আমি মি*থ্যা বলেছি?”
“নিধির বিয়ে হয়নি!আর আপনি বলেছিলেন নিধির বিয়ে হয়ে গেছে।”
শওকত হাওলাদার পলাশের চোখের দিকে তাকায়।সহজ গলায় বলে,
“তাতে কি হয়েছে?”
পলাশের শরীরের র**ক্ত টগবগিয়ে উঠে,
“কি হয়েছে তাই না?নিধিকে আমি ভালোবাসতাম।”
“ওটা আবেগ ছিলো।”
“আবেগ!আমার অবস্থা আপনার চোখে পড়ে না?অবশ্য আপনার মতো বাপের চোখে পড়ার কথাও না।”
অতিভদ্র ছেলের মুখে এমন কথা শুনে শওকত হাওলাদার হতভম্ব,
“মুখ সামলে কথা বলো।”
“মুখ সামলে কথা বলেছি,সম্মানও দিয়েছি কিন্তু আপনি সেসবের সুযোগ নিয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন।আমার সম্মান দেয়ার কোনো দাম দেন নি।আমার জীবনটাকে ন*ষ্ট করে দিয়েছেন।আপনি যে আমার আব্বা এটা ভাবতে আমার ঘৃ*ণা লাগে।”
শওকত হাওলাদার বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।চোখের বর্ণ র*ক্তিম হয়ে কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
“পলাশ!”
“পলাশ বলে ডাকবেন না।আজকে থেকে আপনার পলাশ বলে কোনো ছেলে নেই।”
শওকত হাওলাদার ক্ষু*দ্ধ চোখে রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“রাবেয়া তোমার ছেলেকে সামলাও।”
রাবেয়া পলাশের এমন রূপ এই প্রথম দেখলো।পলাশ জন্মের পর থেকেই নদীর মতো শান্ত,রে*গে গেলেও চুপচাপ হজম করার ক্ষমতা প্রচুর।কিন্তু আজকে হঠাৎ রে*গে যাওয়ার কারনটা বুঝে উঠতে পারছেনা।অনেক বছর আগের নিধি নিয়ে এখন আবার কিসের আলোচনা সেটা ধরতে পারছেনা।তারপরেও পলাশের দিকে এগিয়ে যায়।হাতের বাহু ধরে টেনে বলে,
“কি হয়েছে আব্বা?মা’কে বলবি চল,আয় বাহিরে আয়।”
পলাশ মায়ের বাধন থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে,
“কিছু হয় নি আম্মা।শুধু আমার জীবন থেকে সুখ নামক শব্দটা চলে গেছে।”
শওকত হাওলাদার নাক কুঁচকে বলেন,
“এই ছোটলোকের বাচ্চার জন্য তোর সুখ চলে গেছে?”
“আপনার চোখে সবাই ছোটলোক বড়োলোক শুধু আপনি।শিমুল বিয়ে করার সময়ও এগুলো বলেছেন।এগুলা বলে পরিচয় দিয়েছেন আপনি কতো বড় নিচু মনের মানুষ।”
“আমার মুখে মুখে তর্ক করিস!থা*প্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।”
পলাশ দুই’কদম এগিয়ে যায়।নিজের গাল দেখিয়ে বলে,
“নেন থা*প্পড় দেন।তারপরেও আমি আমার পথেই থাকবো।”
পলাশের কথা শুনে শওকত হাওলাদার নিজেও কিছুটা অবাক।ছেলেটা এমন রা*গী বুঝাই যায় না।
“আচ্ছা কি চাস সেটা বল।”
“আপনাকে বলার কোনো প্রয়োজন মনে করছিনা।”
“আচ্ছা,যা ভালো হয় কর।আমি আর কিছু বলবনা।”
পলাশ তার আব্বার এরূপ উত্তর শুনে অবাক হয়।উনি তো এই কথা বলার মানুষ না।পলাশের হঠাৎ করেই মনে হলো তার আব্বা নিধির কথা জেনে যায়নি তো?অবশ্য এলাকার চেয়ারম্যান হয়ে এসব জানা কোনো বড়ো ব্যাপার না।পলাশ তার আম্মার দিকে ফিরে বললো,
“আম্মা বউ নিয়ে আসবো।”
রাবেয়া কিছু বলার আগে শওকত হাওলাদার হিসহিসিয়ে বলে,
“ওই মেয়েকে এই বাড়ির সিমানায় আনলে তোর আম্মাকে তা*লাক দিয়ে বের করে দিবো।মনে রাখিস।”
রাবেয়া পাথর হয়ে তার স্বামীকে দেখে।এতো বছরের সম্পর্ক কি এতোই ঠুনকো যে কথায় কথায় তা*লাকের নাম চলে আসে!উনার চোখ ছলছল করে উঠে।
পলাশ বলে,
“তাহলে আর এই বাড়িই আসবো না।বিয়ে করে বউ নিয়ে থাকবো।দেখি আপনি কি করেন।”
“বিয়ে করবি?”
“করবোই।”
“নিধির দে*হটা আ*স্ত পেলেই তো বিয়ে হবে যদি আস্ত না পাস তাহলে?”
পলাশের বুকটা কেঁ*পে ওঠে।
“মানে?”
শওকত হাওলাদার ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।
“মানে কিছুনা।রাবেয়া রাত হয়েছে দরজা বন্ধ করো।”
“আব্বা নিধির কিছু হলে আমি আপনাকে জ্যান্ত কবর দেবো।ভুলে যাবেন না আমি আপনারই সন্তান,আপনার মতো নি*ষ্ঠুর আমিও হতে পারি।”
“যা যা।”
পলাশের বুদ্ধিমান মস্তিষ্ক তার আব্বার কথার ধরন বুঝতে বেশী সময় নেয় না।হন্তদন্ত পায়ে বেরিয়ে যায়।কাঁ*পা-কাঁ*পা হাতে বাইক স্ট্রাট করে আল্লাহর কাছে দোয়া করে,
“আল্লাহ আমার নিধির যেনো কিছু না হয়।একবার হারিয়ে আবার পেয়েছি।এবার হারাতে চাই না আল্লাহ,সহায় হও।”
পলাশ যখন নিধির বাসায় যায় তখন দেখে নিধির দরজা চাপানো।ধাক্কা দিয়ে খুলে নিধি নিধি বলে কয়েকবার ডাকে।কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে নিধির শোয়ার রুমের দিকে এগিয়ে যায়।ওখানে গিয়ে পলাশের ক*লিজা মু*চড়ে উঠে।নিধি!তার নিধির উপর আস্ত এক মানব।পুরুষালী ছোঁয়ায় নারীদেহ ছি*ন্নভি*ন্ন করতে ব্যস্ত।নিধি পা*গলের মতো ছ*ট*ফ*ট করছে,মুখ বা*ধা বিধায় উ আ ছাড়া আর কোনো কথা বের হচ্ছেনা।পলাশ ডুকড়ে কেঁ*দে উঠে,আল্লাহ এটাও দেখার ছিলো!এর চেয়ে মরণ ভালো ছিলো না?
ভোর সকাল পেশকারা শিমুলের দরজায় জোড়ে জোড়ে আ*ঘা*ত করে।কোনো সাড়া না পেয়ে গলা ছেড়ে ডাকে,
“শিমুল।শিমুল রে!তোর বউ কই? উঠাই দে।”
এই বলে আরো জোড়ে জোড়ে দরজা ধা*ক্কায়।
“এই মাইয়া উঠো না কেন?লাস-সরম কিছু নাই,মা বাপ কি শিখাইছে?এই জন্যই বড়ো ঘর থেকে মেতে আনা লাগে।এতো বেলা হলো এখনো ঘুমায়!যেন নবাবের মেয়ে ধরে আনছে।”
কাঠের দরজায় ধু*পধা*প শব্দ আর পেশকারার জোড়ে কথা শুনে শিমুল আর পুষ্প দুজনেরই ঘুম ভেঙে যায়।ঘন্টা দুয়েক আগেই দুজনে ঘুমিয়েছে।পুষ্পর সারাদিন আ*তংকে কাটলেও সারা রাত যায় স্বপ্নের মতো।শিমুল তার অদৃশ্য চাদরে নরম পাখিকে আঁকড়ে রাখে।পুষ্প শিমুলের সানিধ্যে এসে সব কষ্ট ভুলে যায়।তার মনে হয় এতো সুখে না জানি ম*র*ণ হয়ে যায়!
পেশকারা তখনও বলে,
“কি গো কথা কানে যায় না?সারাদিন জামাই বুকে নিয়া ঘুমাইতে হয়?”
পুষ্প তড়াক করে উঠে বসে।শিমুল হাত বাড়িয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে রাখে।
“খবর*দার উঠবে না।চুপচাপ শুয়ে থাকো।বুড়ি ক্যাট*ক্যাটিয়ে চলে যাবে।”
পুষ্প শিমুলের চুলে হাত রাখে।এখন দরজা না খুললে সারাদিন অশা*ন্তি করবে,পুষ্প চায়না ঘরে কোনো অশা*ন্তি হোক।মাথা নেড়ে বললো,
“শুনে আসি কি বলে।”
“আমি জানি গেলে আর আসবেনা।”
পুষ্প হাত দিয়ে শিমুলের কপালের এলোমেলো চুল সরিয়ে মাথা ঝুকিয়ে তার কপালে গভীর চুমু এঁকে বলে,
“আসবো।”
পেশকারার ডাক তখন লাগামছাড়া।অগ্যতা শিমুল পুষ্পকে ছেড়ে বালিশে মাথা রাখে।
পুষ্প বিছানা থেকে নেমে গায়ের কাপড় টেনেটুনে ঠিক করে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।দরজা খুলার সাথে সাথেই পেশকারা চোখ পা*কিয়ে তাকায়।
“দরজা খুলতে এতোক্ষণ লাগে?”
পুষ্প পাশে দাঁড়ানো সুইটির দিকে তাকায়।সুইটি মুখ বেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“বুবু ঘুমিয়ে ছিলাম।”
শিমুল যেনো না শুনে এমন করে পেশকারা বললো,
“সারারাত জামাইর কাছে থাইকা মন ভরেনা?সকালেও থাকা লাগে?”
পুষ্প ল*জ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।পেশকারা পুষ্পর মাথায় ধা*ক্কা দিয়ে বলে,
“খেয়া জাল থেকে এক কেজী ছোট মাছ এনেছে।কেটে কুটে রাখবা।জলদি চলো।”
পুষ্প আমতা আমতা করে বললো,
“আচ্ছা আসছি।”
“আসছি কি হ্যাঁ?মাছ নরম হয়ে যাবে।তাড়াতাড়ি আসো।”
পুষ্প পেছন ফিরে শিমুলের দিকে তাকায়।
“আপনি যান,আমি আসছি।”
পেশকারা পুষ্পর হাত খাবলে ধরে।
“এখনি আসো।”
পুষ্প মুখ কাচুমাচু করে বলে,
“বুবু আমার গোছল বাকি?”
পেশকারা ঝটকা মেরে পুষ্পর হাত ছুড়ে ফেলে।
“ছিহ!ছিহ!তুমি অপবিত্র অবস্থায় আমার সামনে এসেছো কেন?”
পুষ্প মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
“অ*স*ভ্য মাইয়া কোথাকার!এই অবস্থায় ঘরের যা ধরবা তাই অপবিত্র হয়ে যায় আর তুমি আমারেও ধরে ফেলেছো?বে*লাজ মাইয়া।মানুষকে দেখাও যে তোমার জামাই আছে?তাড়াতাড়ি বেরিয়ে।আসবা।”
তারপর চলে যেতে নিয়ে আবার ঘুরে পুষ্পর আপাদমস্তক দেখে বলে,
“ছিহ!ছিহ!এমন বউ ঘরে থাকলে ঘরে উন্নতি হয় না,অল*ক্ষী।”
পেশকারা চলে গেলে পুষ্প দরজা বন্ধ করে।শিমুল হাতের উপর মাথা রেখে তাকেই দেখছে।পুষ্প তাকিয়ে মলিন হাসে।তারপর দ্রুত পায়ে বাথরুমে ঢুকে যায়।বাথরুমে গিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে মুখে হাত চেপে ফুপিয়ে কেঁ*দে উঠে।
চলবে….
❝শহরে এমন হয় কিনা জানিনা তবে গ্রামের প্রায় শাশুড়ীই নতুন বিয়ে হলে সকালে দরজা ধা*ক্কায়।ছেলের কাছে ছেলের বউকে দেখলেই পি*ত্তি জ্ব*লে উঠে।দুজনকে পাশাপাশি দেখতে উনাদের বিরাট সমস্যা।
উনারা বুঝতেই পারেনা নতুন বিয়ে হলে একটু কাছাকাছি থাকার ইচ্ছেটা বেশি জাগে।ভাই ছেলেকে বউয়ের কাছে দেখলে যদি এতোই সমস্যা তাহলে বিয়ে দিয়েননা।তাহলেই তো হলো।
বি দ্র,,সব শাশুড়ী এমন না অনেকে খুবই ভালো যাদের কথা শুনলেও শান্তি লাগে।❞
সবাই কমেন্ট করবেন,আপনাদের সবার কমেন্টই পড়া হয়,সময়ের অভাবে সবগুলো রিপ্লাই দেয়া হয়ে উঠে না।