- ধর্ষণের বর্ণনা
- শারীরিক সম্পর্কের গল্প
- ১৮ প্লাস গল্প।
ধর্ষক
আজকেও তনু’র পাজামায় র*ক্তের দাগ দেখে আঁতকে উঠলো মৌমিতা। কয়দিন পরপরই এই জিনিসটা ওর চোখে পড়ছে। বিষয়টা মৌমিতাকে খুব ভাবাচ্ছে। এমনকি রাতের বেলা ঘুমাতে গেলেও ওর চোখে ভেসে উঠছে তনু’র র*ক্তভেজা পাজামা। ওটুকু একটা নয় বছর বয়সী বাচ্চা মেয়ের এমনটা কেন হবে? আর এ বিষয়টাই বা কীভাবে আলোচনা করা যেতে পারে এইটুকু একটা মেয়ের সাথে? তবুও বিষয়টা জানতে হবে। এটা একদমই এড়িয়ে যাবার মতো বিষয় নয়। মৌমিতা তনুকে ডাকলো, ”এদিকে আয় দেখি তনু।”
তনু এলো। নতমুখে দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাবভাব মোটেও স্বাভাবিক লাগলো না মৌমিতার কাছে। মৌমিতা ভেবে বললো, “তুই কী কী শিখলি স্কুলে গিয়ে?”
তনু কথা বলছে না।
”আচ্ছা, ঋতুস্রাব কী তা বলতে পারবি?”
তনু ফ্যালফ্যাল করে তাকালো যেন এমন অদ্ভুত শব্দ কখনোই শুনে নাই। মৌমিতা সংকোচবোধ করলো। এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে ও এসব কী বলছে!? ঋতুস্রাব কী -এটা জানার মতন বয়স তো ওর এখনো হয় নাই। তাহলে এ কীসের দাগ কয়দিন পরপরই দেখা যাচ্ছে ওর পাজামায়? ওকে কেউ physically abuse করছে নাতো!? কিন্তু এমন কাজ এ বাসায় কে করবে? মৌমিতার কোনো ভাই নেই। সিরাজ ব্যতীত আর কোনো বাইরের পুরুষ এ বাসায় আসে না বললেই চলে। সিরাজের সাথে মৌমিতার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কাবিন হয়ে গেছে। ছয়মাস পর উঠিয়ে নিবে।
মৌমিতা আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করলো যে, ইদানীং তনু একদমই চুপচাপ থাকে। পাঁচটা প্রশ্ন করলে একটার জবাব দিলে দেয়! আর বাকি চারটা প্রশ্নেরই কোনো জবাব দেয় না। চুপচাপ তাকিয়ে থাকে কিংবা মাথা নত করে রাখে। কিন্তু তনু তো মোটেও এমন নয়!
তনু মৌমিতার খালামণি’র মেয়ে। ওকে জন্ম দেবার সময় খালামণি মারা যান। সেই থেকে তনু মৌমিতাদের পরিবারের সদস্য হয়েই আছে। মৌমিতার মা-ই ওকে বড়ো করেছে। মৌমিতার সাথে তনু সারাক্ষণই আঠার মতো লেগে থাকতো। সারাক্ষণই এটা ওটা প্রশ্ন করতো। মৌমিতাকে ছাড়া ও কিছুই বুঝে না। ওর পুরো পৃথিবীটাই যেন মৌমিতা। এই বাচ্চা মেয়েটা ওদের সারা বাড়ি মাথায় তুলে রাখতো। সারাক্ষণ ইঁদুরের মতো হুটহাট ছুটাছুটি করে বেড়াতো সারাবাড়িময়। সিরাজ এলে ওর কোলে বসে ওর আনা আইসক্রীম খেতো। সেই তনু এখন এতটা চুপচাপ কেন হলো? এমনকি ওর প্রাণের আপু মৌমিতার সাথেও কেন কথা বলছে না? মৌমিতা দৃঢ়মনে সিদ্ধান্ত নিলো, বিষয়টা নিয়ে ও ওর মতো করে তদন্ত চালাবে কয়দিন। রাতের বেলা সবাই ঘুমাতে গেলে পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায় যখন, তখনও ও তনু’র রুমের সামনে লুকিয়ে লুকিয়ে টহল দিতে থাকে। বেশ কয়েকদিন এটা করার পরও কোনো সুরাহা পাওয়া গেল না। তনু’র রুমে ও কাউকেই ঢুকতে দেখলো না এ কয়দিনে। তবুও ওর সন্দেহ কাটছে না। সেদিন রাতে খেয়ে-দেয়ে সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর ও সরাসরি তনু’র রুমে ঢুকলো। লাইন অন করলো। টেবিলের উপর বাড়ির কাজের নীল কাভারের খাতাটা পড়ে আছে। তনু ঘুমায় চুপচাপ। পাজামা হাঁটু পর্যন্ত উঠে আছে। হাফ হাতা গেঞ্জিটা নাভীর উপরে উঠে যাওয়ায় ছোট্ট পেটটা দেখা যাচ্ছে। কী পবিত্র! মৌমিতার চোখে জল চলে আসে। একটা শিশুর সাথে এই জঘন্য কাজটা কে করে? আদৌ করে? না-কি সবই ওর ভ্রম বা ভুল ধারণা? কিন্তু এভাবে এরকম সন্দেহ ভেতরে বয়ে তনুকে ছেড়ে ওর যেতে ইচ্ছে করলো না। ডেকে তুললো তনুকে। ”চল্, আজ থেকে তুই আমার ঘরে ঘুমাবি। এই ঘরে তোকে আর একা একা ঘুমাতে হবে না।” তনু ঘুম ঘুম চোখে মৌমিতার হাত ধরে ওর রুমে চললো।
তনু খাটের একপাশে নিশ্চিন্তে ঘুমায়। মৌমিতা’র মাথা থেকে চিন্তা সরে না। ও ওর বড়ো আপাকে ফোন করে পুরো ব্যাপারটা জানালো। বড়ো আপা ওকে সবটা সত্যভাবে যাচাই করে বা প্রমাণ করে পরে বিষয়টা নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিলেন। ”কেবলমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে এটাকে বড়ো করা যাবে না।” সেইথেকে মৌমিতা প্রমাণ আয়ত্ত করার সূত্রগুলো খুঁজতে লাগলো। এই কয়দিনের পুরো ঘটনাগুলো চিহ্ন এঁকে এঁকে মাথাতে গুছিয়ে নিলো–
”এ কয়দিনের মধ্যে আমাদের বাসায় দুইজন পুরুষ এসেছেন। –মা অসুস্থ থাকার রাতে রেস্টুরেন্ট থেকে ওয়েটার এসে আমাদের রাতের খাবার দিয়ে গিয়েছিল;
আর সিরাজ এসেছিল মোট সাতদিন। কিন্তু!! ওয়েটার তো দরজার ওপার থেকে খাবারটা দিয়েই চলে গিয়েছিল। সে তো ঘরে আসেই নি। আবার দারোয়ানও সুযোগ পেলেই ‘চোর, চোর’ বলে ঘরে ঢুকে, উপর তলায় আসে। যদিও কখনো চোর আসতে দেখি নি। কিন্তু সে তো কোনো রুমেরই ভেতরে ঢুকতো না। রুমগুলোতে একটু উঁকি মেরেই চলে যেতো। তাহলে কী সিরাজ?”
তনুকে যেভাবেই হোক পুলিশের সাহায্য নিয়ে মেডিকেল টেস্ট করাতে হবে। তনুর সাথে সত্যিই খারাপ কিছু ঘটেছে কি-না সেটার প্রমাণ সহকারে সত্যতা যাচাই করতে পারলেই বাকি কাজটুকু সহজ হবে।
আর এ ব্যাপারে একজনই ওকে সবচে’ বেশি সাহায্য করতে পারে। তিনি হলেন ওর বাবা ইমরুল সাহেব। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া, বাজার করা আর অবসরে বই পড়া বা টিভি দেখা –এটুকুই বর্তমানে ইমরুল সাহেবের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম। ইমরুল সাহেব বই পড়ছিলেন। মৌমিতা বললো, ”আব্বু , তোমার একজন পুলিশ অফিসার বন্ধু আমাদের থানায় ছিলেন। উনার ফোন নাম্বারটা দিবে?”
”রফিকের কথা বলছিস, মা?”
“হুম।”
“কিন্তু ও তো ক’মাস হলো চট্টগ্রামে বদলি হয়ে গেছে।”
“ও।”
”ওর ফোন নাম্বার দিয়ে কী করবি, মা?”
মৌমিতা কাজটা খুব গোপনে করতে চাচ্ছে তাই মিথ্যে করে বললো, ” আমি কিছু করব না, আব্বু। আমার এক বান্ধবীর দরকার।” ইমরুল সাহেব একটা আফসোসের নিঃশ্বাস ছেড়ে আবার বই পড়ায় মনোনিবেশ করলেন।
মৌমিতা হতাশ হলো কিন্তু হাল ছাড়লো না। তনুকে নিয়ে তখনই থানায় এলো। একজন পুলিশ অফিসারকে সব খুলে বললো। অফিসার প্রথমে রাজি না হলেও অনেক অনুরোধের পর মেডিকেল টেস্ট করাতে সম্মতি দিলেন। সেদিনই তনুর মেডিকেল টেস্ট হলো। রিপোর্ট দিবে দুইদিন পর।
মৌমিতা এক ভয়ানক অস্থিরতায় প্রতিটা সেকেন্ড পার করছে। অপরদিকে সিরাজের মুখটা ওর চোখের সামনে ভাসছে। কোনো এক অজানা আশংকায় ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে ও। সিরাজকে ও নিজেই পছন্দ করেছে। ওর জন্যই সিরাজ আজ ওদের পরিবারের একজন। ওর জন্যই সিরাজ রাত-বিরাতে অবাধে ওদের বাসায় ঢোকার অনুমতি পেয়েছে। ওর সাথে যদি সিরাজের কাবিন না হতো , এতখানি অধিকার সিরাজ পেতো না।
সেই সিরাজ যদি হয় ধর্ষক? সেই সিরাজের জন্যই যদি একটা শিশু এতটা কষ্ট পেয়ে থাকে, তাহলে মৌমিতা কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। মৌমিতা মনে মনে সিদ্ধান্ত স্থির করে রাখলো যে, ওর পছন্দ করা মানুষটা যদি ধর্ষক হয়, তাহলে আত্মহত্যাই ওর শেষ রাস্তা। সিরাজকে ফোন দিয়ে সরাসরি এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেও পারছে না। কেননা তদন্ত করতে গিয়ে ও আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করলো —
যেদিন যেদিন রাতে সিরাজ ওদের বাসায় এসেছে, ঠিক সেদিন ভোরেই ও তনু’র পাজামায় রক্তের দাগ দেখেছে। তাই এখন সিরাজকে বললেও সবটা বলা যাবে না।
নিজের থেকেও বেশি বিশ্বস্ত সিরাজই কি তবে সেই পশু? সেই বিশ্বাসঘাতক?
মাঝরাতে রুমের জানালার দিকে চোখ পড়তেই মৌমিতা দেখলো, কালো চাদরে সারা শরীর মোড়ানো একটা লোক ওদের গেইট দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল। ও দ্রুত নিচে নেমে গেইটের কাছে গেল। উঁকি দিয়ে দেখলো রাস্তা পুরো ফাঁকা। দারোয়ান বড়ো বড়ো চোখ করে ওকে দেখছে। গেইটের বড়ো বড়ো দু’টো বাল্বের কড়া আলোয় দারোয়ানের চোখ দু’টো হায়েনার মতো ঠেকছে। মৌমিতা বিষয়টা খেয়াল করলো। কিন্তু কিছু বললো না। তনু’র ব্যাপারটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাওকে কিচ্ছুটি বুঝতে দেয়া যাবে না।
………
……….
চলবে…..
…….
……..
ধর্ষক
#পর্ব-১
নেক্স পাঠ আজকে দেওয়া হবে
ধর্ষক পার্ট ২ ওশেষ
.
.
মৌমিতা’র ভীষণ ঘৃণা হচ্ছিলো। তবুও সে সিরাজকে কয়েকটা প্রশ্ন করার জন্য ফোন দিলো।
“সিরাজ?”
“হ্যাঁ, বলো মৌ।”
“সত্য করে একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে?”
“উত্তর দিলে সত্য উত্তরই দেবো। তুমি বলো কী প্রশ্ন?”
“তুমি যে আমাদের বাসায় আসো, কখনো কি তনু’র রুমে যাও?”
”আমি তনু’র রুমে যাবো কেন? তনুই তো আমি তোমার ওখানে গেলে দৌড়ে এসে আমার কোলে বসে পড়ে। তাছাড়া আমি তো সারাদিন কাজের চাপে তোমার ওখানে যেতেই পারি না। রাতে যাও একটু যাই, অত রুমে রুমে ঘুরার সময় পাই কই বলো?”
মৌমিতা মনে মনে বললো, “ঠিকই তো! সিরাজ আসলেও তো দশ-পনেরো মিনিটের বেশি সময় থাকে না।”
অনেকক্ষণ মৌমিতা আর কিছু বলতে পারলো না। সিরাজ বললো, “এসব প্রশ্ন কেন করলে মৌ? তনু ঠিকআছে? কোনো সমস্যা হলো না-কি? মৌ, ও মৌ, কথা বলছো না যে!”
“না, কোনো সমস্যা হয় নি। রাখি।”
সিরাজের ফোন রাখতেই থানা থেকে ফোন এলো।
”বলুন অফিসার।”
“আপনি একটু থানায় আসুন, ম্যাডাম। মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেয়েছি।”
“রিপোর্টে কী আছে বলুন আমায়?”
“ফোনে নয়। আপনি জলদি থানায় আসুন।”
মৌমিতা তখনই বেরিয়ে পড়লো থানার উদ্দেশ্যে। অফিসার গম্ভীরমুখে রিপোর্ট হাতড়াচ্ছেন। মৌমিতা অধীর আগ্রহে অফিসারের দিকে তাকিয়ে আছে। কী এক অজানা শংকায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। অফিসার বললেন, ” পুরো বিষয়টা এখন আমাদেরকে দেখতে হবে। আপনাকে একটা মামলা করতে হবে। তনু’র কাছে যে যে পুরুষের আনাগোনা আছে, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। বাচ্চাটাকে একটানা অনেকদিন ধরে রেপ করা হচ্ছে।”
মৌমিতা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ওর সন্দেহ এভাবে সত্যি হোক -সেটা ও চায় নি। সত্যি যখন হয়েছেই, তখন বাকিটাও ওকেই করতে হবে। এর শেষটা ও দেখতে চায়। পুলিশ তখনই তনুকে প্রশ্ন করা শুরু করলো- ”তোমার কাছে কে কে এসেছিলো? তোমাকে কে কষ্ট দিয়েছে? তুমি কি তাকে চিনো? তার নাম বলতে পারবে?” তনু কিছুই জবাব দিলো না। ভয়ে চুপসে গেছে। মৌমিতার পায়ের কাছে শক্ত করে চেপে ধরে ওর আঁচলের আড়ালে মুখ লুকাচ্ছে। মৌমিতা পুলিশকে থামিয়ে বললো, “প্লিজ অফিসার,আমাকে কয়েকটা দিন সময় দিন। তনু আমার কাছে সব বলবে। আপনার কোনো জিজ্ঞাসাবাদেরও দরকার পড়বে না। আমিই আপনাকে সব ধরনের তথ্য-প্রমাণ দিয়ে যাবো। দেখুন, আমিই তনু’র বিষয়টা লক্ষ্য করে আপনার কাছে ওর মেডিকেল করার অনুরোধ করেছি। কারণ আমি চাই, অপরাধী শাস্তি পাক। অপরাধী যদি আমার সবচে’ কাছের মানুষও হয়, আমি তাঁর ভয়াবহ শাস্তি চাই। আপনি আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন। ইতঃপূর্বেও আমি অনেকভাবে আইনকে সহযোগিতা করেছি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।”
“কিন্তু…”
“প্লিজ! কোনো কিন্তু নয় অফিসার। আমাদের এলাকার ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি’ চিনেন নিশ্চয়ই? আমিই ঐ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা। আমি নারী বিষয়ক অনেক মামলাতেই আইনকে সহযোগিতা করেছি। আপনি এ থানায় নতুন এসেছেন। তাই হয়তো এসব জানেন না।”
অফিসার কলম ঘুরাতে ঘুরাতে কী যেন ভেবে বললো,”আচ্ছা ঠিকআছে, আপনাকে আমি দায়িত্ব দিলাম। তবে সময় বেশি পাবেন না। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি কিছু বের করতে না পারলে আমরাই যা করার করবো। একটা বাচ্চা শিশুকে রেপ করা হয়েছে। ব্যাপারটা খুবই সেনসিটিভ।”
মৌমিতা মাথা নেড়ে অফিসারকে বিষয়টা সমাধান করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে থানা ত্যাগ করলো। কিন্তু ও আদৌ জানে না, ঠিক কোন কোণ থেকে শুরু করলে এর সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে। তবুও ও মনে মনে একটা প্ল্যান করলো। রাতের খাবারটা কোনোমতে সেরেই তনুকে নিয়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করলো। ও তনুর চোখে তাকালো। দেখলো, বাচ্চাটার চোখে ঘুমের রেখাটিও নেই। ওর কি তবে ঘুম আসে না? ও কি তবে বুঝতে পেরেছে– কতটা জঘন্য কিছু ঘটে গেছে ওর সাথে?
”তোর ঘুম পায় নি?”
তনু মাথা নাড়লো।
”তুই না কত সুন্দর ছবি আঁকতে পারিস? আমার মুখের একটা ছবি এঁকে দেখা তো!”
তনু রং-পেন্সিল নিয়ে আঁকতে বসে গেল। বিশ মিনিট পর মৌমিতা দেখলো, হুবুহু ওর মতো একটা মুখ এঁকেছে তনু। ও ভেবে বললো,”আচ্ছা এবার তোর ইচ্ছে মতো একটা ছবি এঁকে দেখা তো! তত পর্যন্ত আমি একটা বই পড়তে থাকি।”
বই পড়তে পড়তে মৌমিতা কেমন বইয়ের জগতে ডুবে গেল! কখন দুইঘণ্টা পার হলো! তনু ওর আঁকা ছবিটা হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে গেল –ও সেটা খেয়ালই করে নাই। বইটা শেষ করে খাটে যেতেই ওর চোখে পড়লো তনুর নিজস্ব ইচ্ছানুযায়ী আঁকা ছবিটা–
–একটা ছোটো মেয়ে শুয়ে আছে। পা উপরের দিকে উঠানো। মেয়েটার তলপেটের উপর বসে আছে একটা অদ্ভুত প্রাণী যার মুখটা মানুষের মতো, কিন্তু শরীরটা শুয়োরের মতো। ছবিটা কালো করে অন্ধকারের চিত্র দিয়ে আঁকা। তাই শুয়োর শরীরের মানুষটার চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। মৌমিতা ভরসা পেল। আগামীকাল নিশ্চয়ই এই শুয়োর শরীরী মানুষটার মুখোশ উন্মোচন হবে।
পরেরদিন রাতে মৌমিতা একইভাবে তনুকে ছবি আঁকতে বললো। আগের ছবিটাকেই স্পষ্ট করতে বললো, “তনু, এই ছবিতে তো মানুষটার মুখের চারপাশে অন্ধকার করে রেখেছিস। একটু আলো দে তো! মুখটাকে স্পষ্ট করে আঁকা দেখি!”
তনু চুপচাপ মুখটাকে স্পষ্ট করে আঁকলো। সেটা দেখে মৌমিতার মাথায় বজ্রপাত হতে থাকলো। আরও পরিষ্কারভাবে জানার জন্য তনুকে প্রশ্ন করলো,”এই লোকটাই কি তোর ঘরে যেতো? তোকে কষ্ট দিতো?”
তনু কেঁদে ফেললো,”আপু, ও তোমাকে মেরে ফেলবে।”
“আমাকে মেরে ফেলার কথা বলে তোকে ভয় দেখিয়েছে?”
তনু মাথা নেড়ে ”হ্যাঁ” বললো।
“আমাকে সে মারতে পারবে না। তুই সত্য করে বল্ এই লোকটাই?”
“হ্যাঁ” বলে তনু কান্না শুরু করলো।
“কাঁদিস না তনু। তোর কোনো ভয় নেই। আমি আছি তো!”
“তোমাকে ও যদি মেরে ফেলে?”
“পারবে না।”
”সত্যি তো?”
“হুম, সত্যি। এই লোকটা রাতের বেলা তোর ঘরে যেতো, না?”
“হ্যাঁ।”
“তোকে জানোয়ারটা অনেক কষ্ট দিয়েছে। বিশ্বাস কর্, আজকের পর থেকে আর তোকে সে কষ্ট দিতে পারবে না।”
তনুকে ঘুম পাড়িয়ে গভীর রাতে মৌমিতা নিচের ঘরে এলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, “আজকে হয় মারবো, নয়তো মরবো।” একটা নষ্ট হয়ে যাওয়া মোবাইল চার্জারের তার হাতে নিয়ে বাবার রুমে ঢুকলো। বাবা ঘুমোচ্ছে। বাবা’র বয়স্ক কপালটা খুব কোমল দেখাচ্ছে। শীতের রাত। বাবার পায়ের কাছে লেপ পড়ে রয়েছে। পাশেই মা শুয়ে। দেখে মনে হচ্ছে মায়ের গভীর রকমের ঘুম হচ্ছে। বাবার গায়ে শাদা পাঞ্জাবি।
শাদা ঘন দাড়ি গলা থেকে বুক অবধি পড়ে রয়েছে। সেটাকে আলোর রশ্মির মতো স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। কিন্তু মৌমিতার একটুও মায়া হচ্ছে না। তবুও ও বাবা’র গলায় চার্জারের তারটা প্যাঁচিয়ে আবার সরিয়ে নিলো। ওর মা অসুস্থ। ও ছাড়া তনুর আর কেউ নেই। ও যদি খুন করে জেলে যায়, তাহলে তনু’র জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। এক শকুনে ওকে ছিঁড়ে খেয়েছে জানার সাথে সাথে সমাজের আরও নয়টা শকুন ওর দিকে তাকাবে ; ওকে ছিঁড়বে; তারপর গিলে গিলে খাবে। আর তখন তনুর জায়গা হবে হয় কবরে, নয় পতিতালয়ে! ও তখনই তনুর কাছে দৌড়ে এলো। তনুকে জাগিয়ে বললো, “একটু পরেই ভোর হবে, তনু। চল্ আমরা চলে যাই। এ বাড়িতে আর এক মুহূর্ত নয়।”
যাবার সময় মা দরজায় দাঁড়ালেন। বললেন,” তোর বাবার উপর অভিমান করে চলে যাবি?”
“ছিঃ মা, এটাকে তুমি ‘অভিমান’ বলছো কেন? এটা ঘৃণা, তীব্র ঘৃণা।”
“তোর বাবা সংসারের অনেক কাজই করতে পারেন না। কিন্তু কখনো তো সংসারের প্রয়োজনে টাকা-পয়সা খরচা করতে কোনো কুণ্ঠাবোধ করেন নাই। সারাজীবনে ‘তিনি অলস এবং একটু বেশি কথা বলেন’ -এই দুইটা দোষ ছাড়া আর কোনো দোষ তো মানুষটার ছিল নারে, মা! এই বুড়ো বয়সে এসে একটা ভুল না-হয় করেই ফেলেছে। তাই বলে…”
“চুপ করো, মা। এই তোমাদের এইরকম ভক্তি আর সরলতার সুযোগ নিয়েই এই শয়তানগুলো পৃথিবীটাকে দিনকে দিন বিষাক্ত করে তুলছে।”
মৌমিতার স্বর শুনে মা চমকে উঠলেন। ও যাবার জন্য পা বাড়াতেই মা আবার ডেকে বললেন,
“যাবি যখন, আমাকেও সাথে নিয়ে চল্, মা।”
মৌমিতার প্রচণ্ড ঘৃণা লাগছে। ও জেনে গিয়েছিল যে, তনুকে কে রেপ করতো নিয়মিত -এটা দারোয়ান জানতো। তাই ওর মা-ই সেদিন কালো চাদরে শরীর মুড়িয়ে দারোয়ানের কাছে গিয়ে বলেছিলেন দারোয়ান যাতে মৌমিতাকে কিছু না বলে। তিনি চাননি যে, মৌমিতা এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করে সমাজের সামনে পুরো পরিবারটাকে ছোটো করুক। মৌমিতা ভাবতেও পারে নি যে, একটা শিক্ষিত মহিলা যে কি-না এত বছর চাকরিও করেছেন, সে তাঁর স্বামীর এতটা নোংরামি এভাবে মেনে নিতে পারবেন! সমাজকে যদি এতই ভয় পাবে, তাহলে কী দরকার ছিল শিক্ষিত হবার? এত ধৈর্য কই থেকে আসে? এমন ধৈর্যশীলা’র সান্নিধ্যে থাকলে ওরও একদিন এরকম ধৈর্যশীল হয়ে উঠার সাধ জাগতে পারে। ওর মায়ের থেকে ও এইরকম ধৈর্যের শিক্ষা নিতে চাইছে না। এইরকম ধৈর্যের শিক্ষা গ্রহণ করলে ওর এ জীবনের বাকিসব শিক্ষা বিফল হবে।
মৌমিতা চিৎকার করলো, “পথ ছাড়ো, মা। আমি তোমাদের কারোর ছায়াও দেখতে চাই না এ জীবনে। তবে, আমি খুব জলদি এই বাড়িতে আবার আসবো। থাকতে আসবো না; ঐ জানোয়ারটাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেবার ব্যবস্থা করে পরে আসবো।”
মৌমিতা তনু’র হাত ধরে গেইট পার হয়ে রাস্তায় নামলো। তখন সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে। নিশ্চয়ই এই সকালটা তনুকে দেয়া একটা সুন্দর পৃথিবীর প্রথম সকাল।
…….
………
…….সমাপ্ত……..
২.শারীরিক সম্পর্কের গল্প
(১৮+ এলার্ট)
বিরক্তি নিয়ে বাসরঘরে ঢুকলাম। জি ঠিকই পড়েছেন৷ বসার ঘর নয়, বাসরঘর। রিমিকে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকতে দেখে আমার অস্বস্তি হচ্ছে। অথচ এমন হবার কথা ছিল না। রিমির আজকে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহুর্তে নাকি পাত্রের বাবা, চাচা, ফুপুরা মিলে রিমির বাবার সাথে কোনো অপ্রীতিকর কাণ্ড করেছে। আজই সবে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসায় বিষয়টা ঠিক জানি না। আমার বাবার সাথে আলাপ করতেই বাবা এই অঘটনটি ঘটিয়েছেন। আমি প্রতিবাদ করার সুযোগ পাই নি, রিমি কেন করল না, বিষয়টা বুঝলাম না। রিমি আর আমি সমবয়েসি। দুই পরিবারের আলাপ বহুদিনের। কিন্তু ওকে বিয়ে করার কথা কখনো ভাবি নি।
আমি ঘরে ঢুকতেই রিমি নড়েচড়ে বসল। মাথার পাগড়িটা খুলে টেবিলের উপর রাখলাম।
তুই চেঞ্জ করে নে রিমি। এভাবে জবড়জং হয়ে বসে থাকিস না। আমি বারান্দায় আছি, বলে বের হয়ে গেলাম।
রিমি দেখতে খারাপ না। সুন্দরী, অনার্স শেষ করেছে স্থানীয় কলেজ থেকে, মাস্টার্সে ভর্তি হয় নি এখনো। আমার ওকে অপছন্দ না কিন্তু তাই বলে ওকে বউও ভাবি নি কখনো।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট টেনে শেষ করার আগেই রিমি এসে দাঁড়ালো। শাড়ি পাল্টে সালোয়ার কামিজ পরেছে।
রেহান,ভেতরে আসতে পারিস।
তাকিয়ে বললাম, তুই যা, আমি আসছি।
রিমি গেল না।
আমি আবারও তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু বলবি?
-না, তোকে বোধহয় ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি?
-তা একটু?
-তোর কোনো এ্যাফেয়ার আছে? মানে বিয়ে করতে চেয়েছিস, এমন?
-কেন? থাকলে কী করবি?
-কিছু করার নেই এখন! কী আর করব, এমনি জানতে চাইলাম।
-যা ভেতরে যা!
-তোকে দেখে মনে হচ্ছে, তোর জেল বা ফাঁসি হয়েছে!
আমি হেসে ফেললাম।
-তার থেকে কম কিছু না বল? তুই বাইরে যা, আম্মা, আপাদের সাথে চা টা খা। এখানে দাঁড়িয়ে বোর হওয়ার দরকার নেই।
– হুম, যাচ্ছি।
রিমি চলে গেল। আমি আরেকটা সিগারেট টেনে শেষ করলাম।
রিমি, রিমিকে কত ছোটো বেলা থেকে চিনি, আলাদা স্কুল ছিল, একই ব্যাচ, মোটামুটি আলাপ ছিল, নামে বন্ধু বলা যায়। আচ্ছা ওকে নিয়ে কখনো ভাবিনি, উত্তর পাড়ার বাড়িওয়ালার মেয়েকে নিয়ে ভেবেছিলাম, সেটা রিমিও জানত। মেয়েটা কোথায় আছে, এখন আর জানি না।
-তোর একটা এ্যাফেয়ার ছিল না উত্তর পাড়ায়?
রিমি ফিরে এসেছে।
-তো?
-না মানে কেমন একটা ভাব করছিস তো, তাই জানতে চাইলাম।
রিমি সন্ধ্যাটা আমাদের বাড়িতে বেশ ভালোই কাটাল, বিপত্তি হলো রাতে। এক বিছানায় ঘুমাতে হবে। আমার একদমই ইচ্ছে করছে না।
অনেকক্ষণ রুমের সোফায় বসে রইলাম। ঝিমুনি লেগে যাচ্ছিল। রিমি এক ঘুম দিয়ে উঠে এলো কাছে। রেহান, এই রেহান, লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।
-বিছানায় আয়, বসে থাকতে থাকতে ঘাড় ব্যাথা করবে।
হুম, প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। বিছানায় গিয়ে আরেকপাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেলাম।
এইটুকু অস্বস্তি নিয়ে আরো দুইরাত পেরিয়ে গেল। রিমির সাথে খুব একটা কথা হয় না। আমি অনেকটা সময় কাটিয়ে আসি বাইরে। টেনশন আর প্রেশারে স্মোকিং বেড়েছে কিছুটা৷ ছুটি শেষ হয়ে আসছে, ঢাকায় ফিরতে হবে। টিকিটও কেটে ফেললাম একদিন।
দুপুরে খাবার সময়, বাবা বললেন, রিমিকে নিয়ে যাও। ও মাস্টার্স ঢাকায় করুক।
-আমি হুট করে ওকে কোথায় নিয়ে তুলব আব্বা।একটু গুছিয়ে নিই। ও এখানেই থাকুক না, অথবা ওর যা ইচ্ছে।
রিমি কিছু বলল না। আব্বাও কথা বাড়ালেন না।
রাতে চলে যাব। গত কয়েকদিনের মত বারান্দায় বসে সিগারেট টানছিলাম৷ রিমি হঠাৎ ভেতর থেকে ডাকলো।
-রেহান, আসবি একটু?
আধখাওয়া সিগারেটটা ফেলে উঠে গেলাম। রিমি বিছানায় বসে আছে।
-কিছু বলবি?
-এখানে বস একটু।
ওর সামনে বসলাম। একটু নার্ভাস দেখাচ্ছে।
-কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?
-না।
-তাহলে?
রিমি হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরল। পাঞ্জাবীর খোলা বোতাম থেকে বুকের পশমে পোষা বেড়ালের মত মুখ ঘষে বলল, আজ তো চলে যাবি, আমাকে একটু আদর করে দে।
সহসা নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। রিমিকে নিয়ে আমি কখনো এসব ভাবি নি। আমার কল্পনার কোথাও ও ছিল না। রিমির চিবুক ধরে ওর মুখটা তুলে বললাম, তোর অস্বস্তি হবে না?
একটু হবে!
তাহলে?
তাহলে কী তুই দূরে দূরে থাকবি?
রিমির চুল থেকে পাঞ্চ ক্লিপটা খুলে নিলাম। কানের পাশ থেকে চুলগুলো সরিয়ে নিতে নিতে ওর পাতলা ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলাম।
ঠোঁট ছেড়ে দিতেই ওর অভিযোগ, উফফ, এত সিগারেট খাস তুই! পুরো টক টক গন্ধ!
ওর কথায় কান দিলাম না। কখনো খেয়াল করা হয়নি, ওর চুল গুলো এত নরম। চুমুর বিস্তার ওর ঘাড় গলা থেকে নেমে ছড়িয়ে গেল ওর সারা শরীরে।
এ যেন আমার চেনা রিমি নয়, কোনো রহস্য মানবী, যার প্রতিটি রহস্য আমি উন্মোচন করে নেবো প্রতি চুমুতে।
আমি যেন অন্য কোনো নতুন জগতে অচেনা গন্তব্যে হাঁটতে শুরু করেছি। পাহাড়ি নদীর অচিন স্রোতে ভেসে কোনো অজানায় হারিয়ে যাচ্ছি।
রিমি সাড়া দিতে শুরু করল। আদর চেয়েছিল কিন্তু ফিরিয়ে দিলো শতগুণে। আমার নিজেকে সম্পূর্ণ মনে হতে লাগল।
ঠিক কতক্ষণ কেটে গেল, জানি না। ঘোর কাটল রিমির ডাকে।
আবার কবে আসবি?
তুই বল কবে আসব?
আমি বললেই আসবি?
বলেই দেখ না!
তাহলে যাসই না। আমাকে জড়িয়ে আরেকটু সময় থাক।
মন আগে নাকি শরীর? আমি ঠিক জানি না। আমার মত সাধারণ একজন মানুষের এই জটিল সমীকরণ না জানলেও চলবে। সে সহজ সত্যটা আমি জানি, আজ আমি যাচ্ছি না। এই মুহুর্তে শুধু রিমিই সত্য, যে আমার সত্যের বাঁধনে বাঁধা।
বন্ধন
শানজানা আলম
৩. ১৮ প্লাস গল্প
#১৮+
দুনিয়ার সবগুলা পর্ন সাইটে হঠাৎ করে একসাথে একটা ভিডিও প্রকাশিত হলো।
ভিডিওতে বাচ্চার কন্ঠে ইংরেজিতে যে কথাগুলো শোনা যাচ্ছে বাংলায় তার মর্মকথা হলো
-“এ ওয়েবসাইটটি আগামী ছয় ঘন্টা পর পার্মানেন্টলি ডিলিট করে দেওয়া হবে।পৃথিবী হবে আবর্জনামুক্ত এবং নিরাপদ।”
সবগুলা পর্ন এবং পর্ন রিলেটেড ওয়েবসাইটে একই ভিডিও একই সাথে প্রকাশ পেয়েছে।এছাড়া সাইটগুলোর হোমপেইজে কাউন্টডাউনও শুরু হয়েছে।ভিডিওতে অন্ধকারে একজন ব্যক্তির অবয়ব দেখা যায় যার চোখজোড়া অদ্ভুত ভয়ংকর রকম উজ্জ্বল লাল।তবে লোকটিকে ঠিক পুরুষ,নাকি মহিলা নাকি কোন রোবট- তা চিহ্নিত করার উপায় নেই।
ষোলো সেকেন্ডের একটা ছোট্ট ভিডিও এখন Talk of the World। শুধু যে সাধারন ওয়েবসাইটগুলোই এ আক্রমনের শিকার, তা নয়।ইন্টারনেট জগতের আন্ডারওয়ার্ল্ড-খ্যাত ডার্ক ওয়েব এবং মারিয়ানা ওয়েবের পর্নসাইটগুলোও বাদ যায়নি।দুনিয়ার বাঘা বাঘা হ্যাকার এবং আইটি স্পেশালিস্টদের চোখের ঘুম হারাম।ট্রিলিয়ন ডলারের উপরের একটা ব্যবসা আজ হুমকির মুখে।সাধারন মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।হ্যাকার এবং সাইট মালিকদের এখন নিজ চুল ছেঁড়ার মতো অবস্থা!
কে কোথা থেকে একত্রে দুনিয়ার সবগুলা পর্ন সাইটে হামলা করেছে তা ট্রেস-ই করা যাচ্ছে না।এর চেয়েও মজার ব্যাপার হলো তারা হাজার চেষ্টা করেও কোন সাইট হতেই ষোলো সেকেন্ডের ভিডিও এবং কাউন্টডাউন সরাতে পারছে না।
ইন্টারনেট দুনিয়ার এমন একটি বিপর্যয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং বলতে গেলে একমাত্র কার্যকরী হ্যাকার কমিউনিটির ডাক পড়েছে মিটিং এ।অত্যন্ত গোপনীয় এ কমিউনিটির বিশেষত্ব হলো দুনিয়ার যাবতীয় মেধাবী ও জিনিয়াস হ্যাকার-রা এর সাথে সম্পৃক্ত।কেউ কারো পরিচয় জানে না; জানার উপায়ও নেই।মিটিং গুলো হয় নেটের মাধ্যমে মারিয়ানা ওয়েবে।এই কমিউনিটিতে বাংলাদেশ হতেও আছে দুজন- White Panther ও Pieris তাদের কোডনেইম।পর্নসাইটগুলোর কতৃপক্ষও ধারস্ত্ব হয়েছে এ কমিউনিটির কাছেই।এদিকে কাউন্টডাউনে সময় কমেই আসছে।
টিক টিক টিক… আর বাকি ২ ঘন্টা আট মিনিট সাত সেকেন্ড!
প্রায় ঘন্টাখানেকব্যাপী মিটিং এ সবাই মিলে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে-
• ওয়েবসাইটগুলোকে রক্ষা করার মতো যোগ্যতা কিংবা সক্ষমতা কমিউনিটির নেই।তাই মিরাকেল না হলে সাইটগুলো আসলেও শুন্যে মিলিয়ে যাবে।
• আক্রমনকারী কোন একা একজন মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা কম।হয়তো এরা একটা গ্রুপ হয়ে কাজ করে।
•আক্রমনকারীর কাছে রয়েছে অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি।তাই তাকে ট্রেস করা তো দূরে থাক,ছয় ঘন্টার কাউন্টডাউন থাকার সময় থাকা সত্ত্বেও আমাদের কারোর কিছুই করার নেই।এটা আমাদের হ্যাকার গোষ্ঠীর জন্য এক বিশাল “ব্ল্যাক মার্ক” হিসেবে পরিগণিত হবে।
•আক্রমনকারী সৌদি আরব,তুরস্ক,ইরান বা এমন মুসলিম দেশের নাগরিক হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।কারন মুসলিমদেরই পর্নের বিরুদ্ধে এলার্জি রয়েছে।তবে ইতিপূর্বে মুসলিম কোন দেশ হতে হ্যাকিং এর এতোটা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।আর এতোটা জোরালো আক্রমন তো অসম্ভব।আর বিষয়টা শুধু অশ্লীলতা নয়, ট্রিলিয়ন ডলারেরও উপরের ব্যবসা এটি।তাই আক্রমন যেকোন দিক হতেই আসতে পারে।
•আক্রমনের ধাঁচ অনেক উন্নত।ইতিহাসে এর পূর্বে এমন আক্রমন আগে কখনোই হয়নি।তাই কিছু বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও কমিউনিটির অধিকাংশ হ্যাকারদের দাবী-
আক্রমনকারী কোন মানুষ নয়,হয়তো উন্নত ভিনগ্রহী কোন সত্ত্বা।
………
হ্যাকার কমিউনিটির মিটিং এখানেই সমাপ্ত।বুয়েট EEE পড়ুয়া আহনাফ( হ্যাকিং জগতে যে White Panther নামে পরিচিত) গম্ভীরভাবে দম ফেললো। কয়েকটা ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলো কোন পরিবর্তন আসে কিনা।না,কোন পরিবর্তন নেই।কাউন্টডাউনের আরো ১৫ মিনিটের মতো বাকি।সে আরো মনোযোগী তীক্ষ্ম নজরে কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকায়।দেখাই যাক না কি হয় ১৫ মিনিট পর!
হঠাৎ করেই রুমে প্রবেশ করে নিশান।হাতে বই আর কলম।
“তুই তো কম্পিউটার কোর্সটা ভালো বুঝিস,দেখ না এই বাইনারির অঙ্কটা কিভাবে করবো?”- এ প্রশ্নটাই করতে যাবে,এমন সময় দেখে আহনাফ মনোযোগ দিয়ে ডেস্কটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে, আর ডেস্কটপে আপত্তিকর দৃশ্য।
নিশান সাথে সাথে চোখ অন্যদিকে সরিয়ে ফেলে চেচিঁয়ে উঠে-
” ছি ছি,আহনাফ। তুই এসব কি দেখছিস,ছি!”
এতোক্ষনের চিন্তায় আহনাফ একদমই নিশানের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো।পিছনে ঘুরে দেখে নিশান দাঁড়িয়ে।কম্পিউটার অফ করে উলটো ঘুরে জবাব দেয়-“তেমন কিছু না..।” (আমতা আমতা করে।মনে মনে বলে, এই শালা বুঝে না কিচ্ছু,সাধারন মোবাইলটাই চালায় না।সারাদিন পড়াশোনা নিয়েই থাকে।কম্পিউটারে এসব দেখে কি ভাবতে কি ভেবে ফেলেছে,আল্লাহ মালুম)
আহনাফ আবার বলে উঠে-“কি হইছে শালা আতেল?জানোস কিছু?”
আহনাফের চেহারার এক্সপ্রেসনে বুঝা যায় বিশাল কিছু হইছে।
নিশান-” কি হইছে?(আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে) আগামীকালকের ক্লাসটা কি রফিক স্যার ক্যান্সেল করে দিয়েছেন নাকি কম্পিউটার কোর্সের ক্লাস টেস্ট ক্যান্সেল হইছে। এতো কষ্ট করে পড়লাম!”
আহনাফ-“ধূর শালা আতেল। তোর খালি পড়া আর পড়া। দুনিয়ার খবরও রাখোস কিছু? যে কথাই উঠুক না কেন ঘুরেফিরে পড়াতেই চলে আছিস।”
নিশান-“ক্যা,দুনিয়ার আবার কি হইছে? আর দুনিয়ার খবর রাইখ্যাই বা কি অইবো? দুনিয়ার বড় খবর বলতে দেখাইবো হয়তো সালমন খানের কুত্তার ডায়রিয়া হইছে নয়তো ডোলান টাম্পের দুইটা চুল পড়ছে,নিলামে বেচবো সেগুলা,হাহা..।”
(নিশান সবসময় এভাবেই গ্রাম্য ভাষায় কথা বলে, আর মানুষ হাসানোর চেষ্টা করে নিজেই হাসির পাত্র শামীল হয়।)
নিশানের কথা শুনে আহনাফ এই দুশ্চিন্তার মাঝেও হেসে দিলো।
আহনাফ- ” দুনিয়ার কিছুই তো বুঝিস না,বুঝার মধ্যে বুঝিস এক পড়াটাই।মোবাইলটাও ঠিকভাবে চালাতে জানিস না,শালা।দুনিয়ায় এখন কি যে চলতেছে সেটা তোকে বলেও বুঝাতে পারবো না।কাল সকালে পেপারেই পড়ে নিস।আর আমি এখন কম্পিউটারে ব্যস্ত আছি,এভাবে হুটহাট রুমে চলে আসবি না।এক কাজ কর,পাশের রুমে দরজা বন্ধ করে পড়, আমারও ডিস্টার্বও হবে না,তোরও হবে না।”
নিশান মনে মনে বুঝলো আহনাফ এখন কম্পিউটারে খারাপ কিছু দেখবে।পাশের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
আহনাফও বুঝলো নিশান ওর সম্পর্কে খারাপ কিছু ধারনা করেছে।ভাবলে ভাবুক গিয়ে,এই আতেলের সাথে তর্ক করলে কাজের কাজ হবে না।সে কম্পিউটার অন করে দেখে আর ২ মিনিট বাকি।সে তীক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে আছে কম্পিউটারের স্ক্রিনে।দুনিয়ার আরো কোটি মানুষ এভাবেই তাকিয়ে আছে আজ কম্পিউটার স্ক্রিনে।একমাত্র ওর ভার্সিটি ফ্রেন্ড এবং রুমমেট অভ্রনীল আহমেদ যার ডাক নাম নিশান এই মুহুর্তেও পড়তেছে।
“শালা একটা জিনিসই বটে!”- মনে মনে ভাবে আহনাফ।
তিন সেকেন্ড,
দুই সেকেন্ড
এবং এক সেকেন্ড.. কাউন্ট ডাউন শেষ।
সবগুলা ওয়েবসাইট ব্ল্যাংক হয়ে একটা সাদা ধবধবে স্ক্রিন ফুটে উঠে।আর অটোমেটিক্যালি চালু হয় একটা অডিও। অডিও-তে সেই আগের বাচ্চার কন্ঠ-
” These porn industries are ended up here.The world in now free. Mission one is completed successfully!”
নয় সেকেন্ডের অডিও শেষে প্রত্যেকের কম্পিউটার স্ক্রিন হোম পেইজে চলে আসে।ইন্টারনেট সার্স দিয়ে পর্ন ওয়েবসাইটগুলো খুজতে থাকে আহনাফ।খোজে পায় না কিছু। ষোলো সেকেন্ডের ভিডিও কিংবা নয় সেকেন্ডের অডিও; কিচ্ছু না।নিজের কম্পিউটার ব্রাউজার হিস্ট্রিতেও খোজে পায় না কিছু।
আহনাফ ভীষন চিন্তিত,দরদর করে ঘামছে সে। একটা ৩ মিলিয়ন ডলার বাজারমূল্যের পর্ন সাইটের মালিক যে সে নিজেও ছিলো যা এখন আর নেই!
তার পাশের রুমে আরেকটা ছেলে হাসছে।তবে তাকে ঠিক হাসি বলে চিহ্নিত করা যায় না।কেউ দেখলে সহসাই বুঝতে পারবেনা সেটা হাসি।তবে নিশান নিজ হাসিটা চিহ্নিত করতে পারে।কারন ছোটবেলা হতেই নিজের সম্পর্কে একটা অদ্ভুত বিষয় খেয়াল করেছে।নিশান যখন অন্ধকারে হাসে, তার চোখগুলো উজ্জ্বল লাল হয়ে চকচক করে জ্বলে।যত বেশি খুশি, তত বেশি উজ্জ্বল লাল হয়ে উঠে তার চোখ!
অস্ফুট স্বরে সে বলে উঠে- ” আহা,মুক্ত।”
||প্রহেলিকা||
কে এম মেহেদী হাসান,