কালোবউ পর্ব ১২
লেখিকাঃ Tahmina Toma
পর্বঃ১২
মেঘলাঃ আমার একটা কথা ছিলো?? (সবাই খাওয়া রেখে আমার দিকে তাকালো)
মাঃ কী কথা??
মেঘলাঃ মা আসলে আমিতো অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হয়েছি তাই পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে চাই (মাথা নিচু করে) যদি আপনারা অনুমতি দেন!!!!
মাঃ এটাতো ভালো কথা। তুই আগামীকাল আকাশের সাথে গিয়ে কাগজপত্র সব তোলে এনে এখানকার ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যাবি। এখানে অনেক ভালো ভালো ভার্সিটি আছে।
মেঘলাঃ আমি যে ভার্সিটিতে আছি সেটাও অনেক ভালো। আর এখান থেকে ১ ঘণ্টার মতো লাগবে যেতে।
আকাশঃ ভার্সিটিও ভালো আর যারা সেখানে পড়ে তারাও ভালো তাই না মেঘলা??
মেঘলাঃ ম,,মানে??
আকাশঃ কিছু না,,, তুমি সেখানেই পড়ো,,(সেখান থেকে চলে এলে তার দেখা পাবে কী করে,, তাই না??) আর তাছাড়া আগামীকাল আমার পক্ষে কোথাও যাওয়া পসিবল না।
মাঃ কেন??
আকাশঃ কেন তোমার মনে নেই আগামীকাল বিজনেস এওয়ার্ড ফাংশন। বাবা মোট ১৫ বার এওয়ার্ড পেয়েছে এই দিনে আর ৫ বছর একটানা।
মাঃ হুম ভুলেই গেছি ৩ বছরে।
আকাশঃ আগামীকাল আমরা সবাই যাচ্ছি ফাংশনে। গত ৩ বছর এওয়ার্ড পেয়েছে মির্জা গ্রুপ অব কোম্পানি(মুখটা শক্ত করে) এবার কে পায় সেটাই দেখার বিষয় (রহস্যময় হাসি দিয়ে)।
মাঃ কে আর পাবে যারা পায় তারায় পাবে,,,,,,
আকাশঃ দেখা যাক,,,,
মাঃ মেঘলা তাহলে তুই আগামীকাল থেকে ভার্সিটিতে চলে যাস। ড্রাইভারকে বলে দিবো দিয়ে আসবে আবার নিয়ে আসবে।
মেঘলাঃ না মা আমি এমনি চলে যাবো আগের মতো।
মাঃ না রে দেশের অবস্থা ভালো না। একা রাস্তায় বের হওয়া ঠিক না।
মেঘলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে ( কিন্তু এত দামী গাড়ি নিয়ে ভার্সিটিতে গেলে হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। ভার্সিটি থেকে একটু সামনে নেমে যেতে হবে। খাওয়া শেষে যে যার মতো রুমে চলে গেলো।আমিও টিয়া আপুকে হেল্প করে রুমে এলাম। চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে গেলাম)
আকাশঃ(আজ সারাদিনে একটা কথাও মেঘলা আমার সাথে বলেনি। মনে হচ্ছে কতদিন ও আমার সাথে কথা বলে না। কেমন ফাকা ফাকা লাগছে। এখন রুমে এসেও সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই হাত টেনে কাছে নিয়ে এলাম)
মেঘলাঃ আহ্ (ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হতেই আকাশ হঠাৎ হাত টেনে কাছে নিয়ে যায়। গতকাল রাতে হাতে ব্যাথা পেয়েছি মেডিসিন না নেওয়ায় ব্যাথা আরো বেড়েছে। তাই উনি ধরায় ব্যাথা পাচ্ছি কিন্তু আর শব্দ করলাম না)
আকাশঃ তুমি কী আমাকে ইগো দেখাচ্ছো?? (দাঁত কিটমিট করে বললাম।) আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করছো??
মেঘলাঃ ক,,,,কই নাতো,,,,,,,,,
আকাশঃ আজ সারাদিনে একটা কথাও বলছো আমার সাথে?? অফিস থেকে আসার পর তুমি এসে জিজ্ঞেস করেছো আমার কিছু লাগবে কিনা??
মেঘলাঃ (অবাক হয়ে তাকালাম। আমি উনার সাথে কথা না বললে উনার কী আসে যায়?? আর আমি কে উনার,,? এগুলো কেন করবো আমি,,,,,??) এগুলোতো স্ত্রীরা করে স্বামীর জন্য। আপনিতো আমাকে মানেন না স্ত্রী হিসেবে।
আকাশঃ আমি মানি আর না মানি কিন্তু আমার দায়িত্ব আমি পালন করছি। তোমার কিছুর অভাব রেখেছি এই বাড়িতে। তোমার যখন যা চাই পেয়ে যাবে। তাই তুমিও নিজের দায়িত্ব পালন করবে??
মেঘলাঃ হুম কিছুর অভাব রাখেননি। যা চাই পেয়ে যাবো। কিন্তু একজন স্ত্রী সবচাইতে বেশী যেটা চায় সেটাই কখনোই পাবো না। আর তা হলো স্বামীর ভালোবাসা।
আকাশঃ একদম বড় বড় কথা বলবে না (গাল চেপে ধরে) যা বললাম যাতে মনে থাকে। নিজের দায়িত্ব পালন করবে। অফিসে যাওয়ার আগে আর অফিস থেকে আসার পরে তোমাকে যাতে সামনে পাই। কথাটা মাথায় রেখো( হালকা ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলাম)
মেঘলাঃ(ঠিক আছে আগামীকাল থেকে নিজের দ্বায়িত্ব খুব ভালোভাবে পালন করবো। চুপচাপ সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম)
আকাশঃ(ওকে ছেড়ে বেডে শুয়ে পরেছি। না না ওর প্রতি দূর্বল হওয়া যাবে না। যে একজনকে ছাড়তে পেরেছে সে আমাকে ছাড়বে না তার কী নিশ্চিয়তা আছে)
মেঘলাঃ (ঘুম ভেঙে গেলো আযান শুনে। মসজিদটা মনে হয় কাছেই আযানটা স্পষ্ট শুনতে পাওয়া যায়। আড়মোড়া ভেঙে ওঠে বসলাম। বেডে তাকিয়ে দেখলাম আকাশের এখনো ঘুম ভাঙেনি। উনার কাছে গিয়ে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ মুখের দিকে। আপনার মনে হয়তো কোনদিন আমার জন্য জায়গা হবে না কিন্তু আমার মনে সারাজীবন আপনার রাজত্বই চলবে। কপালে একটা ছোট চুমু খেলাম যাতে জেগে না যায় এমনভাবে। ওয়াশরুম থেকে ওজু করে এসে উনার পাঞ্জাবি, প্যান্ট আর টুপি বের করে উনাকে ডাকলাম। আজ থেকে আমার দ্বায়িত্ব আমি পালন করবো ) এই যে শুনছেন,,,,,?
আকাশঃ( একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছি। নীল শাড়ী পড়া একটা মেয়ে হেটে যাচ্ছে আর আমি তার পেছনে ছুটচ্ছি। মেয়েটা হেটে যাচ্ছে কিন্তু আমি দৌড়েও তাকে ধরতে পারছি না। মুখটা দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু চেনা চেনা লাগছে। শাড়ীর আঁচলটা সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে যাচ্ছে, কালো মেঘের মতো চুলগুলো সারা পিঠ ছড়িয়ে আছে কোমরের নিচে পর্যন্ত। চুলগুলোও কেমন চেনা চেনা লাগছে আর ডানহাতে তিনটা পদ্মফুল সাদা,গোলাপি আর নীল। সব মিলিয়ে কোন মায়াবতী। হটাৎ মনে হলো পেছন থেকে কেউ ডাকলো। পিছনে ফিরে কাউকে দেখলাম না আবার সামনে তাকালাম কিন্তু মেয়েটা নেই। পাগলের মতো খুঁজছি কোথাও নেই,,,,)
মেঘলাঃ (কতগুলো ডাক দিলাম কিন্তু ওঠছে না। এবার হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাক দিলাম) এই যে শুনছেন,,,, নামাজের সময় চলে যাচ্ছে আর দেরি করলে জামাতে নামাজ পড়তে পারবেন না।
আকাশঃ(মেঘলার ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। ওঠে বসে পড়লাম। মেঘলার মুখের দিকে তাকাতেই মনে হলো মেয়েটার মুখটা মনে হয় দেখতে এমনি হতো)
মেঘলাঃ(উনি হঠাৎ ওঠে বসে পড়াতে একটু চমকে গেছিলাম। কিন্তু বসে যখন কিছু না বলে শুধু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে তখন একটু অবাক হলাম তাই আবার ডাকলাম।) কী হলো?? নামাজে যাবেন না??
আকাশঃ(মেঘলার ডাকে ঘোর কাটলো) হুম,, যাবো,,,(ওঠে দাড়াতেই প্রয়োজনীয় সব হাতে দিলো মেঘলা। ওয়াশরুম থেকে ওজু করে চেঞ্জ করে মসজিদের দিকে চলে গেলাম)
মেঘলাঃ (উনি ওয়াশরুমের দিকে যেতেই আমি নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। নামাজ পরে একটু কোরআন তিলাওয়াত করলাম তারপর রুমটা গুছিয়ে নিলাম। উনার এক্সারসাইজে যাওয়ার ড্রেস বেডে রেখে কিচেনে চলে এলাম। কিচেনে শুধু মাকে টুকিটাকি হেল্প করি আর রান্না শেখার চেষ্টা করি।)
আকাশঃ (নামাজ পরে রুমে এসে জগিং যাওয়ার জন্য চেঞ্জ করার সব বেডে পেয়ে গেলাম। চেন্জ করে জগিং করতে চলে এলাম।)
মেঘলাঃ (একটুপর রুমে এসে উনার অফিসে যাওয়ার ড্রেস, পায়ের শো ,ফাইল, ওয়ালেট সব গুছিয়ে বেডে রাখলাম। আবার কিচেনে গেলাম)
মাঃ তুই আবার এলি কেন?? তুইনা ভার্সিটি যাবি রেডি হয়ে নে। চাঁদের সাথে চলে যাস। চাঁদকে নামিয়ে দিয়ে তুই চলে যাস।
মেঘলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,, (আবার রুমে চলে এলাম। ওয়াশরুমে থেকে গোসল করে বের হতেই দেখলাম উনি রুমে ঢুকলেন। আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে চলে গেলাম আর উনি ওয়াশরুমে।)
আকাশঃ( এই মেয়েকে গোসল করার পর দেখলেই কেমন ঘোর লেগে যায় তাই তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে এলাম।)
মেঘলাঃ (ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। চুল ভেজা তাই খোলে রাখলাম যাওয়ার আগে চুল বেঁধে বোরখা আর হিজাব পরে নিবো। উনি ওয়াশরুম থেকে বের হলেন। আমি চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসলাম। আজও উনি শুধু টাওয়েল পড়ে বের হয়ে এসেছে। আচ্ছা উনার কী লজ্জাও করে না আমার সামনে এভাবে আসতে। আমারতো লজ্জা করে কেমন অদ্ভুত ফিলিংস হয় সেটাও বুঝে না।)
আকাশঃ (বেড়িয়ে এসে একটা ঝটকা খেলাম। নীল রঙের থ্রি-পিস পড়ে চুল ছেড়ে সোফায় বসে আছে মেঘলা চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে। হঠাৎ স্বপ্নে দেখা মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেলো। মুখে হয়তো কোন ক্রিম দিয়েছে দেখতে সফট মনে হচ্ছে, চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক এটুকুতেই সুন্দর লাগছে। চোখ দুটো সব চাইতে বেশি টানতে। হঠাৎ আবার রাগ ওঠে গেলো। ভার্সিটিতে যাবে বলে এতো সাজতে হবে কেন?? পড়াশোনা করতে যাবে নাকি রুপ দেখাতে। যা ইচ্ছে করুক। অফিসের জন্য রেডি হওয়ার সব বেডে গুছানো দেখলাম তাই রেডি হয়ে নিলাম। গতকাল কথাগুলো বলে ভালোই করেছি সব হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছি কষ্ট করতে হচ্ছে না)
মেঘলাঃ(উনি অফিসে যাওয়ার আগে উনার সামনে থাকতে বলেছে তাই বসে আছি।উনি রেডি হয়ে নিলেন। ফর্মাল ড্রেসে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। আসলে যারা সুন্দর যাই পড়ে সুন্দর লাগে। আর আমার জন্য ড্রেস কিনতে গেলে এটা পড়লে বেশী কালো দেখাবে, এটা ভালো লাগবে না, এটা গায়ের সাথে মিশে যাবে নানা সমস্যা। তাই আমি আমার ড্রেস কেনার সময় সাথেই যেতাম না। মা যা এনে দিতো তাই পড়তাম। উনি রুম থেকে বের হতেই আমিও বের হলাম। চাঁদ আগেই ছিলো ডাইনিং টেবিলে। চাঁদের পাশে বসে পড়লাম আর উনি আমার সরাসরি সামনে)
মাঃ মেঘলা তুই কী এভাবেই যাবি ভার্সিটি??(মাথা ইশারা করে)
মেঘলাঃ( আসলে চাঁদও হিজাব পড়ে কলেজে যায় আর আমি বাড়ির বউ হয়ে এভাবে গেলে কেমন দেখায়??) না মা যাওয়ার আগে বোরখা আর হিজাব পড়ে নিবো।
মাঃ ও আচ্ছা (মিষ্টি হেসে)
আকাশঃ যে সুন্দরী এমনিতেই কেউ তাকাবে না আবার বোরখা পড়তে হয়??
মেঘলাঃ(উনার কথা শুনে একবার তাকালাম উনার দিকে কিন্তু কিছু বললাম না। আমাকে আঘাত করার জন্য সবসময় উনার কথা রেডি থাকে মনে হয়,,)
মাঃ আকাশ,,,,, তুই দিনদিন এমন হচ্ছিস কেন?? মানুষকে আঘাত দিয়ে কথা বলে কী তুই মজা পাস??
মেঘলাঃ(অন্য মানুষকে না মা শুধু আমাকে)
চাঁদঃ মানুষ এত তাড়াতাড়ি তার স্বভাব পরিবর্তন করতে পারে না,,,,
আকাশঃ চাঁদ,,,,,,,,,
চাঁদঃ সত্যি কথা সবসময় তেতোই হয়।
আকাশঃ চাঁদ তুই কিন্তু দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস। আমি তোর বড় ভাই ভুলে গেছিস??
চাঁদঃ আমি কিছু ভুলিনি। হয়তো তুমি ভুলে গেছো ভাবী তোমার স্ত্রী। যাকে তুমি মিথ্যে বলে জোর করে,,,,,,
আকাশঃ চাঁদ,,,,,,,,,,,
মাঃ আর একটা কথাও যেনো এখানে না হয়। খেয়ে যে যার কাজে যাও।
মেঘলাঃ( আমি শুধু নিরব দর্শক। মাঝে মাঝে নিজেকে বড্ড বোঝা মনে হয়। আমার কোন যোগ্যতা নেই তাই সবার সব কথা নিরবে সয্য করতে হয়। আচ্ছা আমি কী চাইলে পারি না নিজের পায়ে দাড়াতে?? নিজের দায়িত্ব নিতে। তাহলে অন্তত নিজেকে অপদার্থ, অন্যের বোঝা মনে হবে না। খেয়ে বেড়িয়ে গেলেন উনি। আমি ওপরে এসে বোরখা আর হিজাব পড়ে নিলাম। তারপর চাঁদের সাথে চলে এলাম গাড়ি নিয়ে। চাঁদকে ওর কলেজের সামনে নামিয়ে আমি আমার ভার্সিটিতে চলে এলাম। ভার্সিটি থেকে একটু দূরে গাড়ি থামাতে বললাম বাকিটুকু হেটে গেলাম। অনেকদিন পর ভার্সিটি এসে ভালোই লাগছে। এসেই লিজাকে পেয়ে গেলাম আমার বেষ্টু আর গল্প শুরু করে দিলাম )
আকাশঃ অফিসে এসে সোজা কেবিনে চলে এলাম। এই মেয়ে আমার ছোট বোনের কাছে আবার কথা শুনালো। যে বোন আমার সাথে কখনো এভাবে কথা বলনি।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
আকাশঃ হ্যালো,,,,
,,,,,,,,
আকাশঃ হ্যা সময়মতো চলে আসবো(ফোন রেখে দিলাম) মেঘলা আর রুপ সারপ্রাইজ পেতে প্রস্তুত হও( ডেভিল হাসি দিয়ে)
চলবে,,,,,,,,