ব্রেকআপ পরবর্তী অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসবেন যেভাবে-
যদি আপনার হৃদয় ভেঙে থাকে অথবা আপনি নিজেই সম্পর্কে ইতি টেনে থাকুন, সম্পর্কে বিচ্ছেদ সবসময়ই কঠিন এবং বেদনাদায়ক। ব্রেকাপের পরপরই আপনি ক্রুদ্ধ হতে পারেন, কিংবা একাকী অনুভব করতে পারেন কিন্তু সবসময়ই ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন ভাঙা হৃদয়ের যেখানে চিড় ধরেছে তার মধ্য দিয়ে আলোর দ্যুতি প্রবেশ করার সুযোগ রয়েছে।
বিচ্ছেদ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া থেকে বেড়িয়ে আসতে নিম্নের অভ্যাসগুলো রপ্ত করুন-
১. আরেকটা সুযোগের প্রার্থনা করবেন নাঃ অবশ্যই আপনি আপবার সঙ্গীকে মিস করবেন এবং বিচ্ছেদ পরবর্তী ক্ষত আপনার হৃদয়ে রয়েছে তবু পুনরায় সম্পর্ক ফিরর পাবার প্রার্থনা করবেন না! যদি একান্তই তা করতে হয় তবে নিজেকে একবার পরীক্ষা করুন। ভেবে দেখুন আপনি কি সুনির্দিষ্টভাবে আপনার সাবেক প্রেমিক/প্রেমিকা করছেন, নাকি একজন সঙ্গীর অনুপস্থিতি অনুভব করছেন। দুইটা ভিন্ন জিনিস।
২. কল বা ম্যাসেজ দিবেন নাঃ তার সাথে ৩০ দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। ৩০ থেকে ৪০ দিন, ৫০ দিন… এবং তারপর একসময় আপনার অপেক্ষাকৃত ভাল অনুভব করার সুযোগ রয়েছে।
৩. দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে পিছপা হবেন নাঃ ব্রেকাপ এর ব্যাপারটাকে নতুনভাবে সাজান। কল্পনা করুন আপনিই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এটা আপনাকে আরও শক্তিশালী ও দৃঢ় সংকল্প অনুভব করতে সাহায্য করবে।
৪. ব্রেকাপ এর পরপরই সাক্ষাৎ হওয়া ব্যক্তর সাথে ডেট কিংবা বিয়ে করবেন নাঃ স্বাভাবিকভাবেই আপনি প্রতিহিংসা বসত: হারানো অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে চাইবেন। কিন্তু সাবধান! আপনার পরবর্তী সম্পর্ক যে আবেগ তাড়িত বা এলোমেলো নয় তা নিশ্চিত করতে ব্রেকাপের পর কিছুকাল সিঙ্গেল থাকুন। যা ঘটেছে, কোথায় আপনার কাজ আশানুরূপ হয়নি এবং পরবর্তীতে আপনি ভিন্নভাবে করতে চান তার জন্য সময় নিন।
৫. নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পরবেন নাঃ ব্রেকাপের পর কিছু মানুষ নিজেকে কাঙ্ক্ষিত ও আকর্ষণীয় এটা প্রমাণের জন্য উঠে পরে লেগে যায়। কিন্তু বিচ্ছেদের সাথে সাথেই যদি আপনি অত্যধিক পরিমাণে এলকোহল পানে আসক্ত হয়ে পড়েন, ফ্লার্টিং অথবা হই-হুল্লোড়ে মজে থাকেন তবে তা আপনার বেদনাদায়ক পরিস্থিতিকে আরও বিভ্রান্ত করে তুলতে পারে।
৬. কষ্ট এড়িয়ে যাবেন নাঃ বিচ্ছেদের ব্যথায় ভয়াবহভাবে দুঃখ ভারাক্রান্ত হওয়ার কারণে আপনি আপনার ব্যথা বেদনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আপনি কখনোই পুরনো সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবেননা। বরং আপনি এসকল দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি হোন এবং ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনুন।
৭. পুরনো সঙ্গীর সমালোচনা থেকে বিরত থাকুনঃ যদি সদ্য পুরনো কোন সমালোচনা করতে ইচ্ছা করে তবে মুখ বন্ধ রাখুন। কারণ বাজে আলোচনা যতটা না তার উপর প্রভাব ফেলবে তার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে আপনার নিজের উপর। তার ব্যাপারে নীরন থেকে মহান হওয়ার চেষ্টা করুন। একান্তই যদি বলতে হয় তবে তা কাছের মানুষ কিংবা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
৮. নিজেকে আঘাত করবেন নাঃ নিজের উপর রূঢ় হবেননা। আপনার ইগো এবং আত্মসম্মানবোধ ইতোমধ্যেই আপনাকে আঘাত করে চলেছে। সে অবস্থাকে সচেতনভাবে আরও সংকটাপন্ন করে তুলবেন না। আপনার কোন বন্ধুর বিচ্ছেদের বেলায় আপনি তার প্রতি যতটা সহানুভূতিশীল হতেন ঠিক ততটাই হোন নিজেফ উপর।
৯. বাসায় বসে থাকবেনা নাঃ আত্মগ্লানিতে নিমজ্জিত হওয়ার খুবই সহজ। যেমন পুনরায় শুরু করার আশা নিয়ে ৩০ সেকেন্ড পরপরই মোবাইলে চেক করা যে সে কোন কল ম্যাসেজ দিল কিনা! বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজেকে ব্যস্ত রাখাই হচ্ছে এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার উত্তম পন্থা। প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৫ টা কাজ নির্ধারণ করুন যা করলে আপনি ভাল অনুভব করেন এবং আপনার ফ্রি টাইম কেটে যায়। অচিরেই আপনি ভাল অনুভব করতে শুরু করবেন এবং সাবেক সঙ্গীর ব্যাপারে চিন্তা করার সময়ই পাবেন না!
১০. নিজের প্রতি মনোযোগ দিনঃ নিজেকে সময় দিন, নিজের সখ ইচ্ছাকে লালন করুন। সিঙ্গেলে থাকার স্বাধীনতা উপভোগ করুন। নিজের ব্যক্তিত্ব বৃদ্ধিতে মনযোগ দিন। নতুন কোন ভাষা শিক্ষা, সুইমিং ক্লাব কিংবা সাইক্লিং ইত্যাদিতে যোগ দেওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই। তাছাড়া সেখানে আপনি একজন ভাল বন্ধুও পেউএ যেতে পারেন।
১১. প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন নাঃ যদি প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকেন কিংবা আপনার হৃদয় ভেঙে গিয়ে থাকেন তবে সম্ভাবনা থাকে যে, আপনি চান সেও একই পরিমাণের ব্যথা অনুভব করুক। সে আপনার কাছে কোন প্রিয় জিনিস কিংবা স্মৃতি চিহ্ন রেখে গেলে তা নষ্ট করে ফেলুন কিংবা সরিয়ে ফেলুন।
১২. অন্যান্য সাবেক বন্ধুদের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করা থেকে বিরত থাকুনঃ ব্রেকাপের পরে আপনার অন্য আরেকজন সাবেক সঙ্গী, যার সাথে আপনার একসময় রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল তার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের ইচ্ছা হতে পারে। কিন্তু তার আড়ালে থাকে থাকে সাম্প্রতিক ব্রেকাপের প্রতিশোধ নেয়ার আকাঙ্ক্ষা!
১৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে অনুসরণ করবেন নাঃ সকল প্রকার যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তাকে এবং তার পরিবারের সদস্য যাদের সাথে আপনার যোগাযোগ থাকতে পারে তাদেরকে আনফলো, আনফ্রেন্ড কিংবা ব্লক করুন। তাতে সে আপনার থেকে ভাল না খারাপ জীবন যাপন করছে তা চেক করা থেকে বিরত রাখবে।
১৪. কোন স্মৃতিচিহ্ন রাখবেন নাঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সাথে আপনার কোন সুখকর স্মৃতিচিহ্ন থাকলে তা মুছে দিন। সে কোন উপহার দিয়ে থাকলে তা নষ্ট করে দিন অথবা অন্য কাউকে দিয়ে দিন। যে যে জায়গাগুলোতে একসাথে ঘুরেছেন তা এড়িয়ে চলুন। এ অভ্যাস আপনালে নতুন একটা শুরুর স্বাদ দেবে।
১৫. শিক্ষা নিতে ভুলবেন নাঃ কোন সম্পর্কই সময়ের অপচয় নয়। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন এই সম্পর্কের বিচ্ছেদ, কিংবা ব্রেকাপের পেছনে আপনার কোন ভূমিকা ছিল কিনা কিংবা ভবিষ্যতে কিভাবে আপনি আরও ভাল একজন সঙ্গী হতে পারেন। যদি আপনি সৎ থাকেন অবশ্যই আপনি এই সম্পর্ক থেকে কোন কিছু আদায় করে নিতে সক্ষম হবেন।
রিডার্স ডাইজেস্ট থেকে অনূদিত।
ব্রেকআপ হওয়ার ছোট গল্প।
সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে_লিখিত।
দীর্ঘদিনের রিলেশন ব্রেকাপ করে বিয়ে করেছিলাম বাবার পছন্দের ছেলের সাথে৷ বাবার ডিসিশনের সামনে নিজের ডিসিশন রাখার সাহস কখনো হয়নি তাই হয়তো ভাগ্যকে মেনে নিয়ে অপরিচিত মানুষের হাত ধরে চলে এসেছিলাম একদম নতুন পরিবেশে৷
প্রাক্তনের কি অবস্থা জানতে চাইলেও আশেপাশে এতো লোকজন যে খোঁজ নিতেই পারলামনা। অবশ্য আমি জানতাম সে খুব বেশি কষ্টে থাকলে দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
আজও তাই করছে৷
একমিনিট সে থাকতে পারেনা আমাকে ছাড়া।
প্রাক্তনের কথা ভাবতে ভাবতে মনমরা হয়ে বসেছিলাম। এমন সময় আমার স্বামী এসে বসলেন আমার পাশে। আস্তে করে নামাজটা পড়ে নিতে বললেন। কিছু বলতে পারলামনা। নামাজ পড়ে এসে উনার পাশে বসলাম।
কিছুক্ষণ কথপোকথন করার পর জানতে পারলাম তিনিও পারিবারিক চাপে বিয়ে করেছেন। ভরসা পেলাম। আমার কথাও জানালাম৷ তিনি কেমন যেন আশ্বস্ত হয়ে বললেন সমস্যা নেই দুজনেরই উচিত একটু সময় নেওয়া৷
হুম্ম! সময় নিলাম।
সংসারজীবনে দুজনের ভালো বন্ডিং হলেও দুজনই প্রাক্তনের স্মৃতি থাকে বের হতে পারিনি৷
আমার স্বামী এককথায় খুব ভালো মানুষ। চারমাসের সংসারে বুঝতে পারলাম তিনি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। পরে জানতে পারি তার ডায়েরি দেখে আসলে প্রাক্তন বলে কেউ নেই আমাকে সঙ্গ দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা। তিনি বিশ্বাস করতেন আমি একদিন সব ভুলে তার সাথে জীবন শুরু করবো।
ডায়েরি পড়ে কেমন চিট মনে হচ্ছিলো উনাকে। বাসায় ফিরলে খুব রেগে উনার সামনে ডায়েরি ফেলে দিয়ে বললাম এটা কি? প্রতারণা করছেন আমার সাথে?
তিনি নিটোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিছুই বললেননা৷ আমি সব গুছিয়ে নিয়ে ফিরে এলাম বাবার বাড়িতে। ফিরে আসার কারন সবাই জানতে চাইলেও আমি কিছু বলিনি। তিনিও বলেননি। শুধু ম্যাসেজ করেন “ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবো”।
আমি ম্যাসেজ সীন করে রেখে দিলাম।
কেটে গেলো ছয় মাস। আমাদের বিয়ে দশমাস।
এদিকে প্রাক্তনের সাথে যোগাযোগ হলো। দূর্বলতা আগের মতোই৷ কথা কথা বলতে সিদ্ধন্ত নিলাম দুজনেই পালিয়ে যাবো। কিন্তু যেদিন যাবো সেদিন কেনো জানি উনার কথা খুব মনে পড়ছিলো। তবুও গেলাম। দেখি প্রাক্তন বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে ছুটেই যাচ্ছি। তার সামনে এসে দাঁড়ালাম। তাড়াতাড়ি করে বাসে উঠলাম। কিন্তু ব্যাগটা আমার হাতেই। সে একবারের জন্যেও নিলোনা। ক্লান্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলেও একবার বললোনা মুখটা মুছে নাও। কি অদ্ভুত!
এগুলো ভুল ধরার বিষয় না। আমি জানি প্রাক্তনের অভ্যাস৷ কিন্তু আজ কেনো জানি আমার স্বামী আর প্রাক্তনের মাঝে খুব বেশিই পার্থক্য নির্ণয় করতে ইচ্ছে করছিলো। এমন সময় মোবাইলে একটা ছোট্ট ম্যাসেজ। ” সে হাসপাতালে “।
বুকটা ধক করে উঠলো। বাস ছাড়বে এমন সময় ড্রাইভারকে থামতে বলেই নেমে গেলাম। সোজা চলে গেলাম পিজি হাসপাতালে। উনি অক্সিজেন মাস্ক পরে আছে। মাথা ফেটে গিয়েছ। পুরো শরীরে ব্যথা পেয়েছেন। খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু উনার সাথে সরাসরি কথা বলার অনুমতি নেই কারো।
বাইরে বসেই অপেক্ষা করছিলাম। পরেরদিন বিকেলে সবাইকে অনুমতি দেয়া হলো দেখা করার। তিনি প্রথমেই আমাকে খুঁজলেন। লজ্জানত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিনা। এমন সময় তিনিই জিজ্ঞেস করলেন, ” যাওনি?”
আমি কিছুই বললাম না।
কি হলো?
চলে গেলে কি খুব সুখী হতে?
অবশ্য আমি সইতে পারতামনা কিন্তু।
যাও।
আমি শক্ত করে উনার হাত ধরে বললাম, “না”। আপনার সাথেই থাকতে চাই। ফিরিয়ে দিবেন?
তিনি ঠিক তার বুকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ” কখনোই না”।
আমি খুব শান্তি পাচ্ছিলাম।
তিনি প্রশ্ন করলেন কেনো ফিরে আসলে আগে বলো?
যত্নের অভাবে। ভালবাসায় শুধু আবেগ থাকলে হয়না। যত্নও থাকতে হয়। তার প্রতি ভালবাসা ছিলো। কিন্তু আপনার প্রতি ভালবাসা সৃষ্টিকর্রতা প্রদত্ত৷ আমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারিনি৷ আপনার কাছেই সুখ। এই যত্নের লোভ সামলাতে পারিনি।
তাই।
তিনি কাছে টেনে নিয়ে বললেন, “আর যেওনা”। কপালে চুমু দিয়ে বললেন ” তুমি শুধু আমার”।
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
শুরু করলাম সংসার।
মাঝেমাঝে প্রাক্তনের জন্য আফসোস হতো। কিন্তু এখন আর হয়না। সেও বিয়ে করে সুখে আছে।
ভাগ্যের ফায়সালায় আমি সন্তুষ্ট।
বেঁচে থাকুক প্রত্যকটা মানুষ বৈধ ভালবাসায়।
না ভাঙুক কোনো সংসার৷
#ভাগ্যের_ফায়সালা
লেখাঃ #আশনা_আরাফ।
[নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারো ব্যক্তিগত জীবন থেকে নেওয়া।]
ব্রেকআপ হওয়ার গল্প ফেসবুক
বান্ধবী হঠাৎই ফোন দিয়ে বললো, এই আমাকে ভালো কিছু বইয়ের নাম বলিস তো।
আমি অবাক হয়ে বললাম, তুই বই পড়িস?
ও বললো, আরে না! কিন্তু তন্ময়কে তো বলেছি পড়ি এখন ও আমাকে গিফট দিতে চায়।
তন্ময় ওর নতুন বফ। আমি বললাম,বলেছিস কেন এমন?
ও বললো, আরে! বইটই পড়ি না বললে মান থাকে? এখন ও বললো, তোমার খুব পড়ার ইচ্ছা কিন্তু কাছে নাই এমন কিছু বইয়ের নাম দিও গিফট করবো।
আমি রাগে রাগে আমার উইশলিস্টের একশ বইয়ের নাম পাঠিয়ে দিলাম।
সপ্তাহখানেক পর বান্ধবীর পোস্ট দেখতে পেলাম একশ বইয়ের এবং এক তোড়া লাল গোলাপের ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছে, “থ্যাংকস লাভ”
সেখানে একটা ছেলে কমেন্ট করেছে, মধ্যাহ্ন বইটা আগে পইড়েন আপু। দারুন।
বান্ধবী রিপ্লাই এ লিখেছে, হ্যাঁ ওয়ান অব দা মাস্টারপিস অব জাফর ইকবাল।
আমি রিপ্লাই এ লিখলাম, জাফর ইকবাল না হুমায়ূন আহমেদ। ডানের দিকে পাঁচ নাম্বার বইটার কথা বলছে।
বান্ধবী রিপ্লাই ডিলিট দিলো।
আমার রাগ উঠে গেল। এদিকে এই একশ বই কেনার জন্য আমি কত কষ্ট করে টাকা জমাই। আমি মাসে দুই তিনটা করে কিনে কমাই আবার নতুন পছন্দের বই এসে একশ পূর্ণ হয়ে যায় কিন্তু কমে না।
কিছুদিন পর বান্ধবীর আবার ফোন।
এই দূর্গা কে রে?
আমি বললাম, দূর্গা চিনিস না? মা দূর্গা। ঠাকুর।
ও বললো, আরে না! আমিও তো প্রথমে তাই মনে করেছিলাম। পরে তন্ময় বললো দূর্গার মৃত্যুতে ও অনেক কেঁদেছে। আমি বললাম আমিও দুঃখে তিনদিন ভাত খাইনি।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,পথের পাঁচালীর দূর্গা। তারপর ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলাম।
এরপর ও বফের হাতের ওপর হাত রেখে একটা ছবি তুলে আমাকে পাঠালো। তারপর বললো, ক্যাপশন বল। বইয়ের যেন হয়।
আমি বললাম,মাথায় আসছে না।
ও রেগে বললো,এত কি বই পড়িস? এমন একটা কবিতা মনে কর যেটাতে হাতের ওপর ভালোবেসে হাত রাখা নিয়ে সুন্দর কথা লেখা আছে।
আমি বললাম,আমি গল্পের বই পড়ি,কবিতা না। গুগলে সার্চ দিয়ে খোঁজ।
ও গুগলে সার্চ দিয়েও হাতের ওপর হাত রাখা কিছু না পেয়ে রাগ করে অনলি মি করে প্রোফাইল পিক দিলো।
আরেকদিনের কথা। ভোরবেলায় আমার ঘুম নষ্ট করে ফোন দিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো, তুই আজ শেষের কবিতা বইটা পড়বি।
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম,পড়েছি।
ও বললো,আবার পড়বি। তন্ময় আজ আমাকে ওটা পড়তে বলেছে। ও প্রশ্ন করতে পারে। যদি করে তুই স্টান্ডবাই থাকবি।
সেদিন রাতে তন্ময়ের সাথে আমাকে অমিত লাবণ্যের জটিল কেমিস্ট্রি নিয়ে আলোচনা করতে হলো। মাঝখান থেকে বান্ধবী নিজে শুধু বললো, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমার বান্ধবীর নাম আর বইয়ের নায়িকার নাম এক।
আমার কাছে এটাকে সবচেয়ে মজার কিছু বলে মনে হলো না।
এরমধ্যে একদিন ও কাশফুলের মধ্যে একটা বই নিয়ে শুয়ে পড়লো। আমি বিব্রত ভঙ্গিতে এদিকে ওদিক তাকাচ্ছি এদিকে ও রিল্যাক্স মুডে শুয়ে সহজ গলায় বলছে, তোল ভালো করে তোল। প্রোফাইল পিক দিবো। দারুন হবে।
এরপরে সুন্দর একটা ছবি এডিট ফেডিট করে প্রোফাইল দিয়ে দেয়ার পরে আমি কমেন্ট করলাম,বইটার কোন অংশটা তোর সবচেয়ে বেশী ভালো লাগলো?
ও রিপ্লাই করলো,যে অংশে ঐযে একজন মারা গেল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
কিন্তু বইটা তো কমেডি বই! কেউ মারাই যায়নি। সামনাসামনি ওকে একথা বলতেই জিভ কেটে বললো,আমি আন্দাজে ঢিল মেরেছি। আসলে বেশীরভাগ বইয়েই তো কেউ না কেউ মরে! এই তো কাহিনী! যাক গে যাক।
কিছুদিন পর আবার এক কান্ড। ফেসবুকে পোস্ট দিলো, “পৃথিবীতে অনেক খারাপ ছেলে আছে কিন্তু একটাও খারাপ প্রেমিক নাই।” – হুমায়ূন আহমেদ
আমি কমেন্ট করলাম, হুমায়ূন আহমেদ এমন কথা বলেননি। বাবা প্রসঙ্গে এরকম একটা কথা আছে।
ও বললো,বলেছে তুই জানিস না। চুপ কর।
আমি চুপ করতে নারাজ। বললাম, খারাপ প্রেমিক তো অহরহ ই আছে। চারপাশেই তো দেখি খারাপ প্রেমিক। তোর আগের বফই তো তোরে চিট করলো।
ও পোস্ট ডিলিট করে ফোন দিয়ে আমার সাথে রাগারাগী করলো। আমার কমেন্ট নাকি ওর বফ দেখে ফেলেছে। আমি অবাক হয়ে বললাম,জানতো না তোর আগের কথা?
ও আরো অবাক হয়ে বললো, জানবে কেন?
আমি ভেবে দেখলাম তাই তো! যে বয়ফ্রেন্ড ওকে পড়ুয়া ভাবে সে ওর পাস্ট জানবে কিভাবে? ছেলেটার মাথায় কি কিছুই নেই?
যাইহোক, কিছু দিন পর আমার বান্ধবীর ব্রেকাপ হয়ে গেল। কারণ জানতে চাইবেন না। ওর এমনিতেই কিছুদিন পরপর ব্রেকাপ হয়,আবার নতুন রিলেশনে যায়।
আমি খুশী খুশী গলায় বললাম,এই বিষয়ে একটা ক্যাপশন আমার মনে পড়েছে। “প্রেম মানুষকে শান্তি দেয় কিন্তু স্বস্তি দেয় না।” এটা দিতে পারিস।
ও নাকে কেঁদে আমাকে বললো, এখন আমি ওর স্মৃতি নিয়ে কি করি?
আমি বললাম, তোর বইগুলো আমাকে সেল কর। নতুনের দাম পাবি না। পুরান দামে।
ও উদাস গলায় বললো, দাম লাগবে না নিয়ে যা। আমি খুশিমনে বই নিয়ে বাড়ি আসলাম। এদিকে ওর বফ সরি বলে ওর সাথে আবার প্যাচআপ করে নিলো। ও আমাকে ফোন দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, বইগুলো দিয়ে যা।
আমি রাগী গলায় বললাম,গাড়িভাড়া দিবি। বারবার বই আনো,নাও। ও রাজি হলো না। খুব কিপ্টা এমনিতে।
কিছুদিন পর আবার হাতের ওপর হাত রেখে পোস্ট। এবার ক্যাপশন খুঁজে পেয়েছে। লিখেছে, “দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।”
Jannatul Firdous