#ছোটগল্প
#প্রাপ্তি
হাসান ঘরে ঢুকে যে ছবিটা দেখল সারাদিন পরে বাড়ি ফিরে তা কারোই কাম্য কোন দৃশ্য নয়।অন্তত নব বিবাহিত কোন পুরুষের কাছে তো নয়ই।এখন রাত দশটা।ওর স্ত্রী লিপি এক গামলা ছোট মাছ কাটছে।ওকে দেখে একটু হেসে আবারও মাছ কুটতে ব্যস্ত হয়ে গেল।পাশে মায়ের ঘরে উঁকি দিতেই দেখল ওর ছোট বোন ইমার মাথায় মা তেল ঘষে দিচ্ছে, ইমার হাতে বই।এটা মায়ের পুরনো অভ্যাস – পরীক্ষার আগের রাতে ছেলে মেয়েদের মাথায় তেল দিয়ে বিলি কেটে দেওয়া।এতে নাকি মাথা ঠান্ডা থাকে। কাল ইমার বি সি এস প্রিলি পরীক্ষা। তাই বাপের বাড়িতে এসেছে।কাল পরীক্ষার পরে চলে যাবে।
মাকে একটু নম্রস্বরেই জিজ্ঞেস করে,
-এত রাতে ছোট মাছ কে আনল মা?
– আর বলিস না,ইমার শ্বশুর কাল ওকে নিতে আসবে।উনি তো ছোট মাছ পছন্দ করেন, তাই তোর বাবা সন্ধ্যায় বাজার থেকে রাজ্যের বাজার করে এনেছে। সব গুছিয়ে মাছ কাটতে তোর বৌ দশটা বাজিয়ে ফেলল।
– বিলুর মা কোথায়?
– মেজ বৌ ওকে নিয়ে বাপের বাড়িতে গেছে।বিলুর মা ছাড়া একা হাতে দুটো ছোট বাচ্চা কিভাবে সামলাবে?
– আমাকে ফোন দিতে, আমি স্বপ্ন বা মিনাবাজার থেকে রেডি টু কুক ছোট মাছ নিয়ে আসতাম।
-ওগুলো খাওয়া যায় নাকি?ধুর…
– কেন সবাই খাচ্ছে না?
এসময় হাসানের বাবা সিরাজ সাহেব ঘরে ঢুকলেন।
– সবাই খেলে কি আমাদেরও খেতে হবে?তোমার সমস্যাটা তো বুঝলাম না।
– কাল তো লিপিরও পরীক্ষা আব্বু, তাই বলছিলাম।
– তুমি কি বি সি এস কে এত সস্তা ভাব হাসান?এটা দেশের সর্বোচ্চ পরীক্ষা। পিওর সায়েন্সের মেধাবী ছেলে মেয়েরা হিমসিম খায় আর বাংলায় এম এ পাশ করে কোয়ালিফাই করবে বি সি এস?
বলেই একটু উপহাসের হাসি হাসেন তিনি।
বাবার কথার ভালো যৌক্তিক জবাব দিতে পারত হাসান। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ওর এতটাই বিপক্ষে যে ও চুপ থাকতে বাধ্য হয়।
হ্যা আজকের এদিনটা বুঝি হাসানেরই কর্মফল!ওর বড় দোষ ও ভালোবেসেছে। এখনো চোখ বুজলে সে দিনটার কথা মনে পড়ে হাসানের…
বাবার স্কুলের বন্ধু জাফর মাস্টার গ্রাম থেকে তার মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ওদের বাড়ি নিয়ে আসেন।গ্রামের সরলতা ভরা লিপির মুখটা দেখে সেদিনই ভালো লাগে হাসানের।কদিন পর লিপি হলে চলে গেলেও হাসান প্রায়ই ওর সাথে দেখা করতে যেত।নিজের ডিগ্রি পাশ বিদ্যার দৌড় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যেতে সঙ্কোচ হলেও নিজেকে আটকে রাখতে পারত না সে। তবে লিপির ডাগর চোখে কি যেন এক প্রশ্রয় দেখতে পেত! তাই বার বার ছুটে যেত।এভাবে কখন দুজন দুজনের জীবনে জড়িয়ে গেল বুঝতেই পারল না। এম এ পরীক্ষার পর লিপির বাড়ি থেকে যথারীতি বিয়ের জন্য অস্হির হয়ে উঠলে হাসান তার মাকে সব খুলে বলে।সব শুনে প্রথমে ওদের বাড়ির সবাই বিশেষ করে বাবা সিরাজ সাহেব খুব রেগে গেলেও পরে নানা হিসেব নিকেশ করে বিষয়টা মেনে নেন।ঝানু ব্যবসায়ী সিরাজ সাহেব বুঝতে পেরেছিলেন তার বি এ পাশ আধা বেকার ছেলের জন্য এর চেয়ে ভালো মেয়ে পাওয়া কঠিন হবে।সেই সাথে মেয়ের বাবা তার বাল্যবন্ধু হলেও আর্থিক অবস্থায় অনেক পিছিয়ে, তাই এ মেয়ে ঘরে এলে সহজে মাথা তুলে চাইবে না।এছাড়া ছোটবেলার একটা হিসাব তো আছেই। এ জাফরের জন্য কোনদিন ক্লাসে প্রথম হতে পারেন নি তিনি।যদিও যৌবনে শহরে এসে ব্যবসা করে এখন গ্রামের মেধাবী শিক্ষক জাফরের চেয়ে তিনি সামাজিক আর আর্থিক মাপকাঠিতে অনেক এগিয়ে, তবু একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা যেন জাফর মাস্টারের সাথে এখনো রয়ে গেছে।তাই নিজের বি এ পাশ ছেলের সাথে জাফরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী মেয়ের বিয়ে দিয়ে মনে একটা প্রশান্তিও পাবেন তিনি। একারণে এক ঢিলে অনেক পাখি মারার খায়েশ নিয়ে সিরাজ সাহেবের উদ্যোগে পারিবারিকভাবেই ওদের বিয়ে হয়।তবে বিয়ের পর প্রতি মুহূর্তে নানানভাবে লিপিকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় সে এ বাড়িতে কতটা বেমানান।হাসানের সবচেয়ে বড় ভাই ইমান ডাক্তার। তার শ্বশুরও নামকরা ডাক্তার
সস্ত্রীক ইমান এখন কানাডা প্রবাসী।মেজ ভাই জামান মাস্টার্স পাশ করে বাবার স্যানিটারি ব্যবসা দেখাশোনা করছে,তার শ্বশুরও ব্যবসায়ী ।সে তুলনায় হাসান আসলে তেমন কিছু না। ছোটকাল থেকে পড়াশোনায় অমনোযোগী হাসান কোনমতে বিএ পাশ করেই ক্ষান্ত দিয়েছে।এরপর বছর খানেক আগে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শেয়ার ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান করে নিজের নামের সাথে “অপদার্থ ” টাইটেলটা স্হায়ী করে নিয়েছে।এজন্য পৈতৃক ব্যবসাতেও তাকে কোন দায়িত্ব দিতে বাবা আর ভাইরাও নারাজ। এখন তাই বন্ধুর সঙ্গে টুকটাক ঠিকাদারির চেষ্টা করছে।
সেখানেও যে খুব সুবিধা হচ্ছে তাও নয়।এমন অবস্হায় মা বাবার কোন কথার জবাব দিলে এ বাড়িতে তা বিরাট বেয়াদবি!
রাতে সবার খাওয়ার পর সব গুছিয়ে ঘরে ঢুকতে লিপির সাড়ে এগারোটা বেজে যায়। হয়তো একরাশ অভিমান থেকেই বিছানায় বসে থাকা হাসানের সাথে কোন কথা না বলেই কাপড় বদলে বই নিয়ে বসে।অপরাধবোধে ভোগা হাসানও কিছু বলতে পারে না।
সকালে এ বাড়িতে খুব সকালে নাস্তা খাওয়ার চল।সাতটার মধ্যে সবাই নাস্তা খায়।তাই ভোরে উঠেই হাসান হোটেল থেকে বাবার প্রিয় নেহারী আর পরোটা নিয়ে এলো ঝামেলা এড়াতে। নাস্তার টেবিলেই জানতে পারল মেজ ভাই গাড়ি দিয়ে ইমাকে নিয়ে যাবে পরীক্ষার হলে।ওর সিট পড়েছে সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে।কিন্তু লিপির সিট পড়েছে মোহাম্মদপুর তাই ওকে হাসানই নিয়ে যাবে।হাসান আশা করেছিল মা বাবা অন্তত নাস্তার টেবিলে লিপিকে কিছু বলবেন না।কিন্তু এখানেও কেমিস্ট্রিতে এম এ করা একমাত্র কন্যা ইমাকে বড় করতে গিয়ে লিপিকে বাংলা নিয়ে যথেষ্ট বিদ্রুপ করল সবাই। শুধু চুপ থাকলেও হাসান বুঝতে পারছিল সবার এ উপহাসে লিপি দুর্বল না হয়ে চ্যালেন্জটা গ্রহণ করছে আর অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপে ইমা অসহায় বোধ করছে।
সি এন জিতে সারাটা পথ একবারও বই থেকে চোখ তুলে না লিপি। হাসসনের খুব ইচ্ছে হয় শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরে রাখতে। কিন্তু ও জানে লিপি খুব শক্ত মেয়ে আলাদা শক্তির প্রয়োজন ওর নেই। তাই লিপির একটা হাত নিজের মুঠির মধ্যে নিয়ে রাখে সে।
হাসান গতকাল একটা বিল পেয়েছে, মিষ্টি নিয়ে বাসায় আসতেই দেখে ড্রইং রুমে মুখ অন্ধকার করে বসে আছে মা বাবা। কিছুক্ষণ আগে রেজাল্ট হয়েছে বিসিএস প্রিলির, ইমা পাস করতে পারে নি।কিন্তু লিপি পাস করেছে।হাসানের কিছুটা রাগ হয় এত বড় খুশির খবর লিপি তাকে জানায় নি বলে।তারপরও ওর হাতের মিষ্টির প্যাকেটের অন্য অর্থই করে সবাই। ও যতই বিল পাওয়ার কথা বলে কেউই তা বিশ্বাস করে না।রাতে খুব নিবিড় ভাবে লিপিকে কাছে টানে হাসান। পরম ভালোবাসা আর নির্ভরতায় হাসানের বুকে ঘুমিয়ে পড়ে লিপি।
বিপত্তি বাধে লিপির বিসিএস লিখিত পরীক্ষা নিয়ে। ওর এখন আটমাস চলছে।পড়ার সুযোগ তো পাচ্ছেই না,সেই সাথে শরীরটাও ভালো চলছে না।এদিকে শাশুড়ির কড়া হুকুম পরীক্ষার নামে তার বাচ্চার কোন ক্ষতি হলে এর কঠিন মূল্য দিতে হবে লিপিকে।লিপি অবাক হয়ে ভাবে ওর সন্তান কিন্তু ওকেই সে সন্তানের শত্রু ভাবা হচ্ছে তার জন্মের আগেই। অন্যদিকে ঘরকন্নার কাজের বেলায় বাচ্চার কথা ভেবে ওকে কোন ছাড় দেওয়া হয় না।
এ অবস্থাতেই পরীক্ষায় বসে লিপি, পাশে যথারীতি হাসান।আগে শুধু ঘরের মানুষ কথা শুনালেও এখন বন্ধুরাও হাসানকে বলতে ছাড়ে না, বিসিএস পাস করলে বৌ আর পাত্তা দিবে না।হাসান জবাবে শুধু হাসে। কারণ ও জানে শূন্য পকেটে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জেনেও যে হাত ধরে সে হাত ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরে না।
লিপির কোলজুড়ে তুলতুলে পুতুলের মতো মিষ্টি ছেলে এলো পরীক্ষার সপ্তাহ খানেক পর। প্রথম সন্তান হওয়ার জন্য বাবার বাড়ি যাওয়ার অনুমতি মিলল না।তাই লিপির মা এলেন মেয়ের প্রসবকালীন সেবার জন্য। হাসি ঠাট্টার ছলে তাকেও নানা কথা শুনতে হলো। লিপির মেজ জা তো বলেই বসলো,
– আপনার কষ্ট করে না এলেও চলতো খালাম্মা। আপনার জামাইই লিপির সেবার জন্য যথেষ্ট। আমাদের স্বামীর এতোটা সময়ও ছিল না,তাই তাকেই উল্টো সেবা করতে হতো।হা হা হা।
খুব যেন কৌতুককর বিষয়, এমন ভাবেই নানান কিছু শুনতে হলো লিপির মাকে।তাই এক সপ্তাহ থেকেই তিনি গ্রামে চলে গেলেন।
সারাদিন ঘরের রান্না আর কাজকর্ম সেরে প্রায় সারারাত ছেলেকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতেই সময় কেটে যায় লিপির।ঢাকার বাইরে একটা সাইটে কাজ চলছে হাসানের, তাই কদিন ধরে ঢাকায় নেই সে।লিপির খুব একা লাগছে ওকে ছাড়া কিন্তু কিছু করার নেই ঠিকাদারি কাজ নিজে থাকলে সমস্যা বেশি,তাই এটুকু ত্যাগ করতেই হচ্ছে। তবুও বাসার সবার চোখে বেকার ছেলের অলক্ষ্মী বৌ হয়ে কথার কাঁটায় রক্তাক্ত হয় রোজ রোজ।মাঝে মাঝে বড় ক্লান্ত লাগে তার,এদিনের কি শেষ নেই। গতদিন খালা শাশুড়ি বেড়াতে এসে শাশুড়ির সামনেই বললেন,
– তোমার বৌ সাহস আছে,বেকার ছেলেকে বিয়ে করে বছর না ঘুরতে বাচ্চা নিয়ে নিলে।এখন পরের দিনগুলো কি হবে ভেবেছ?
খুব ভদ্রভাবে লিপি জবাব দেয়,
– খালাম্মা, ওর বাবা বেকার হলেও দাদুর এত বড় ব্যবসা আছে।তিনিই দেখবেন।
পাশ থেকে মেজ জা বলে উঠে,
– হ্যা,অন্যের ওপর চললে নিজে কিছু করবে কেন খালা?
– ভাবি আপনার দেবরও তো ছোটখাটো কাজ করছে।
এতেই লিপির নামের সাথে নতুন উপাধি “বেয়াদব ” যোগ হলো।এমনি প্রতিদিনের যুদ্ধে লিপি যখন প্রায় ভুলেই গেছে তখনই এক বিকালে ছোটবোনের ফোনে জানতে পারে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছে ও।নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না।পরে হাসানে ল্যাপটপে চেক করে নিশ্চিত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
হাসান খবর পেয়ে সেদিনই রাতে ঢাকায় আসে।রাতের খাবারের টেবিলে শ্বশুর বলেন,
– আরে হাজার হাজার রিটেনে টেকায়।ভাইভাতেই সব বাদ পড়ে।
এই প্রথম মেজ ভাসুর প্রতিবাদ করে বলে,
– আব্বু শেষ পর্যন্ত যাই হোক, লিপি এতদূর এসেছে তা তো কম কথা নয়।
তার কথায় সারা টেবিলে নীরবতা নেমে আসে।
ভাইভার দিন মোটামুটি প্রস্তুতিহীনভাবেই পিএসসিতে যায় লিপি।কাল বিকেল থেকে বাবুর জ্বর, তাই হাসানকে বাসায় রেখেই এসেছে। এখন কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে।
ভাইভার সময় ছেলের জন্য মন এত অস্থির ছিল যে বুঝতেই পারেনি পরীক্ষা কেমন হলো।
শ্বশুরের কথাই ঠিক মনে হলো, আসলেই ভাইভাতে টেকা মুখের কথা নয়।
ছেলে এখন একটু বসার চেষ্টা করে, লিপি অবাক হয়ে দেখে।সংসারের হাজারো কাজের পরে ছেলেকে কোলে নিয়ে লিপির সব ক্লান্তি যেন মুছে যায়।হাসানের কয়েকটা বিল আটকে গেছে,ও কেমন যেন পাগল পাগল হয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়।বাড়ির পাশেই একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরির করার কথা ভাবছিল লিপি।এ চার/ সাড়ে চার ঘন্টা কষ্ট হলেও বিলুর মা-ই বাবুকে দেখতে পারত।কিন্তু শ্বশুর সোজা মানা করে দিলেন, পাড়ার স্কুলে এত ছোট চাকরি করা যাবে না।লিপির নিজের ওপরই রাগ হয়,নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে।
বিকেলে কাজ শেষে বাবুকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেরও চোখ লেগে এসেছিল।হঠাৎ ননদ ইমার ফোন পেয়ে ঘুম কেটে গেল।ইমা তো কোনদিন ফোন করে না।ফোন ধরতেই ইমা বলে,
– ভাবি তোমার রেজিষ্ট্রেশন নম্বরটা দাও তো,বিসিএস এর রেজাল্ট হয়েছে।
মুখস্ত নম্বরটা বলে দিয়ে লিপি ওকে বলে,
– আমার হবে না ইমা।ভাইভা ভালো হয়নি।
ইমা তেমন কিছু না বলেই কেটে দেয়।
মিনিট কয়েক পরেই ইমা ফোন দেয়,ওর চিতকারে কান ফেটে যাওয়ার যোগাড় হয় লিপির।
– ভাবিইইইইই,তোমার এডুকেশনে এসেছে।আজ রাতে বাসায় রান্না বন্ধ। আমি আর রাজিব সবার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।আজ হবে গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন!
হতভম্ব লিপি হাসবে না কাদবে বুঝতে পারে না। ফোন হাতে নিয়ে প্রথমে হাসানকে পরে গ্রামে বাবাকে জানায়। এর মাঝে বাবুর ঘুম ভেঙে গেলে ওকে কোলে ঘর থেকে বের হতেই শ্বশুরকে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে সালাম করে খবরটা জানালে তিনি যেন ঠিক হজম করতে পারেন না।বলেন,
– ইমা কি দেখতে কি দেখেছে? আগে কনফার্ম হও।আর এখন এক কাপ চা নিয়ে এস।আমি বাবুকে দেখছি।
লিপি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই সিরাজ সাহেব মেয়েকে ফোন করে নিজেই নিশ্চিত হলেন।ইমার হাত থেকে ফোন নিয়ে ইমার শ্বশুর সিরাজ সাহেবকেও অভিনন্দন জানান।চা নিয়ে শ্বশুরকে দেওয়ার সময় শুনতে পায় কাউকে তিনি ফোনে বলছেন,
-…আরে ওকে তো কোনদিন ছেলের বৌ ভাবিনি, আমার আরেকটা মেয়েই ভেবেছি।এমন মেধাবী মেয়ের বিসিএস না হবার তো কারণ নাই। হা হা হা।
বারান্দা থেকে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় লিপির চোখটা কেন জানি ভিজে আসে! ভাবে একটা প্রাপ্তিতে কত কিছুই না বদলে যায়!