‘জানিস নেহা, আমি একটা বড়লোক মুরগী পাইছি।’
বান্ধবী তুবার কথা শুনে টাসকি খাইলাম। মুরগী আবার বড়লোক হয় কেমনে? চোখ দুইটা মার্বেলে মতো করে বললাম,
‘ঝাইড়া কাশ! মুরগী বড়লোক মানে কি?’
‘আরে তুই আসলেই কিছু বুঝোস না। একটা বড়লোক বয়ফ্রেন্ড পাইছি।’
‘ছেলে মুরগী হয় কেমনে? বলবি বড়লোক মোরগ পাইছিস। তুই তো ছেমরি জেন্ডার পাল্টায় দিছিস।’
‘ঐ একই কথা! জানিস ও অনেক বড়লোক। ওর বাপের অনেক টাকা। আমার সাথে বনানীর একটা রেষ্টুরেন্ট দেখা করবে বলছে।’
‘বনানী বানান কর আগে। এ্যাহ আইছে বনানীর রেষ্টুরেন্ট! বাড়ির পাশের রেষ্টুরেন্ট যাওয়ার ক্ষমতা নাই সে যাবে বনানীর রেষ্টুরেন্টে।’
‘ধূর, কি যে বলিস না। শোন, শোন আরো কি বলছে! আমাকে একটা আইফোন গিফট করবে।’
‘করে নাই তো এখনো। আগে কইরা নিক। হাতের মোবাইল দুইবার থাপ্পড় দিয়া অন করে সে স্বপ্ন দেখে আইফোন চালাইবো। তাও আবার বয়ফ্রেন্ডের কেনা।’
‘তুই এভাবে বলছিস কেন?’
‘তাহলে কিভাবে বলবো?’
‘ওর বাবার নিজস্ব বিজনেস, বাড়ি, গাড়ি সব আছে।’
‘তাইলে তোর বয়ফ্রেন্ড একটা ভাদাইম্মা।’
তুবা এবার বেশ রাগী স্বরে বললো,
‘তুই ওরে ভাদাইম্মা বললি কেন? গরু, ছাগল, মোষ,হাতি যা খুশি বলতে পারতি। কিন্তু ভাদাইম্মা মানবো না।’
‘বাপের টেকায় যারা ফুটানি করে তাদের ভাদাইম্মাই কয়। তোর বয়ফ্রেন্ডের বাপের সবকিছু আছে। তোর বয়ফ্রেন্ডের কিছু নেই।’
‘না থাকলে কি হবে? ওর বাবা মারা গেলে ওরই সব হবে।’
‘বয়ফ্রেন্ড ফালাইয়া বয়ফ্রেন্ডের বাপরে ধর। এতে লাভ হইবো।’
আমার কথায় তুবার টনক নড়লো। কিছুটা আফসোসের সুরে বললো,
‘ভালো কথা বলছিস। আগে ভেবে দেখি নাই।’
‘এখনও সময় আছে ওমন ভাদাইম্মা বয়ফ্রেন্ড ডাস্টবিনে ছুইড়া ফালাইয়া তার বাপেরে ধইরা ফেল।’
‘কিন্তু আমি ওরে বিয়ে করবো বলে কথা দিছি।’
‘বাবাগো বাবা, কত কাজের! এখনো একদিন মিট করতে পারলো না বিয়ে অব্দি চলে গেছে। এবার আমারে একটা সত্যি কথা বল।আসলেই কি তোর বয়ফ্রেন্ড অনেক বড়লোক। নাকি ঐ ভাঙ্গারি ওয়ালা ফেসবুকে প্রিন্স রাকিব সাইজা তোর লগে কথা কয়।’
‘তোর যতো আজাইরা কথা। আমার সাথে কি এসব ছেলে যায় নাকি।’
মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
‘ভাঙ্গারি ওয়ালা ভালোই। তোর সাথে কটকটি ওয়ালা যায় না।’
তুবা ফোঁস করে উঠে বললো,
‘তুই কিন্তু আমারে অপমান করতেছিস।’
‘আচ্ছা রাগিস না। অনেক তো তোর বড়লোক মুরগী থুরি মোরগের প্রশংসা করলি। এবার একটু চাঁদ মুখখানা দেখা। দেখি কোন পোলার কপাল পুড়লো তোরে পছন্দ কইরা।’
তুবা খুশিতে গদগদ হয়ে সাইড ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে একটা ছবি দেখালো। কোর্ট প্যান্ট পরা ছেলেটাকে দেখে প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলাম,
‘এই পোলা!’
তুবা কিছুটা ভড়কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কেন কি হয়েছে?’
‘আর পোলা খুঁজে পাস নাই দেশে?’
‘বলবি তো কি হইছে?’
‘তুই বলদ জানতাম এতো বলদ তা জানতাম না।’
‘মরি জ্বালা! কি হইছে তা বল।’
‘এ পোলা নিউমার্কেটের ফুটপাতে জুতা বেঁচে। তোরে মুরগী বানাইছে।’
তুবা চোখ মুখ খিঁচে বাপ্পারাজ স্টাইলে চিৎকার করে বললো,
‘না, এ হতে পারে না।’
‘সত্যি কইতাছি। সপ্তাহ খানেক আগেও এর থেকে দুইশো টাকা দিয়া জুতা কিইনা আনলাম।দেখ, এখনো আমার পায়ে আছে।শালায়, দুই নাম্বার মাল বেচে। সপ্তাহ না যাইতেই আমার জুতার ছাল-বাকল উইঠা গেছে।তোরে কি আমি মিথ্যা কথা বলমু?’
তুবার এবার প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা।নিজেকে কিছুটা সামলে রাগ, ক্ষোভ, কষ্ট নিয়ে বললো,
‘দাঁড়া, আজকে ওর খবর আছে। আমার সাথে চিটারি।’
বর্তমানে আমি গাছের সাথে হেলান দিয়ে ছোলা বুট ভাজা কটমট করে চাবাচ্ছি। সামনেই বান্ধবী পুরা বোম হয়ে তার বড়লোক মুরগী না থুরি মোরগের সাথে ঝগড়া করতেছে। ছোলাবুট ভাজা খেতে খেতে ঝগড়া উপভোগ করতে মন্দ লাগছে না। আলহামদুলিল্লাহ, আজকেই ব্রেকআপ হয়ে যাবে।
কিসের প্রিন্স রাকিব না সাকিব একটা হবেই। আমি এরে চেনা তো দূরে থাক জীবনে দেখিও নাই। ফকিন্নির বান্ধবী হয়ে বড়লোক পোলার লগে প্রেম করবো। ইশ, শখ কত! আমি নিজেও প্রেম করবো না, আমার বেস্ট ফ্রেন্ডরেও প্রেম করতে দিবো না। আমি সিঙ্গেল থাকবো আর ও বান্ধবী আমার হাতে মূলা ধরিয়ে বয়ফ্রেন্ড নিয়া বনানী, শ্যামলীতে ঘুরতে যাবে তাতো হবে না। এর জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করছি নিজে সিঙ্গেল থাকবো, বান্ধবীকে সিঙ্গেল রাখবো। মিঙ্গেল মুক্ত দেশ গড়বো।
#সমাপ্ত
#সিঙ্গেল_কাহিনী
#Writer_NOVA