এক সমুদ্র প্রেম পর্ব ৩০
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৩০)
মারিয়ার মেজাজ গরম। মনটাও খা*রাপ। মাত্র একটা ইন্টারভিউ দিয়ে বের হলো। না, ইন্টারভিউ খা*রাপ হয়নি। ভালোই দিয়েছে। চাকরিটা হলেও হতে পারে। খা*রাপ লাগাটা অন্য কোথাও। পিউয়ের তখনকার আচরণ মনে পড়লেই অন্ধকারে অন্তকরন ছেঁয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা ওভাবে কেন বলল? কোন অপরা*ধে? জেনে-বুঝে ওর কোনও ক্ষ*তি আদৌ কি করেছে? আর কেনই বা ওমন ফুটফুটে মেয়েটা আত্মহ*ত্যা করতে যাচ্ছিল? আচ্ছা, ধূসর ভাইয়ের সাথে কিছু হয়েছে কী!
মারিয়া আবার সজাগ হলো। তড়িঘড়ি করে ফোন বের করল ব্যাগ থেকে। পিউ চলে যাওয়ার পর লাগাতার ধূসরকে কল করেছে সে। হিসেব করলেও কূলাবেনা। কিন্তু ফোন তোলেনি। মারিয়া এখন আবার ডায়াল করল। এইবার বন্ধই বলছে। সে ‘চ ‘বর্গীয় শব্দ করল মুখ দিয়ে। পিউ নির্ঘাত ওদের নিয়ে আজে*বাজে ভাবছে। সেই বিয়েবাড়ির ঘটনার জন্যে নয়তো? ধূসর ভাই জানেন এসব? ওনার ফোন তো বন্ধ থাকেনা কখনও। আজ হঠাৎ বন্ধ কেন তাহলে ? উফ! কী যে ঘটছে!
মারিয়া হতাশ হলো ধূসরকে না পেয়ে। পিউ যে অত ভয়ান*ক একটা স্টেপ নিতে যাচ্ছিল ওনাকে যে জানানো দরকার। মেয়েটা আবার উল্টোপাল্টা কিছু না করে বসে। ভালো-মন্দের বুঝ-ই বা কতটুকু!
সে ভাবুক হয়ে কান থেকে ফোন নামায়। অন্যমনস্ক থেকেই ব্যাগের ভেতর ফোন রাখতে যায়। আচমকা কেউ একজন ব্যাগটা ছো মেরে কে*ড়ে নিলো। পিলে চমকে গেল তার। চিকন চাকন ছেলেটা মুহুর্তমধ্যে দৌড়ে পালাল। মারিয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে চেয়ে থাকে,হুশ ফিরতেই পেছনে ছুটল। গলা ফাঁটিয়ে চি*ৎকার করল,
‘ আমার ব্যাগ! আমার ব্যাগ! ‘
ছুটতে ছুটতে কেঁ*দে ফেলল মেয়েটা। ব্যাগের ভেতর তার সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ফোনটা রওনাকের দেয়া। ভাইয়ের স্মৃতি, আবার এখন নতুন স্মার্টফোন কেনার সাধ্যও নেই। সাথে আইডি কার্ড, টুকটাক টাকা-পয়সা। টিউশন করে ঢাকার বাড়িতে একটা বাসা,নিজেদের খরচ,সংসার টানা,সব মিলিয়েই তো করুণ অবস্থা। ইকবাল ওরা মাসে মাসে বাজারটা করে দেয় এখনও। মানা করলেও শোনেনা। ওইটুকু দিচ্ছে ভাগ্যিশ! নাহলে কী করত সে? সামনে থেকে কত লোকজন এলো, গেল, কেউ একটু ছেলেটাকে আটকালও না। মারিয়ার চোখ গড়িয়ে জল পরল। সে বিপর্যস্ত পায়ে ছোটে। একটা পুরুষের দীর্ঘ কদমের সাথে কূলোতে পারবেনা নিশ্চিত। তবুও থামলোনা। আজকের এই দিনটাই অশুভ তার। প্রথমে পিউয়ের থেকে দোষ আরোপ,আর এখন ব্যাগ ছিন*তাই। তার ছোটার ফাঁকেই একটা ক্ষিপ্র*গামী বাইক পাশ কা*টাল। রীতিমতো ছুটে গেল সামনে। ছিন*তাইকারীর দুরন্ত কদম, সেথায় সুবিধে করতে পারল না। বাইক আরোহী নিমিষে ছুঁইছুঁই হয় তার। এক হাতের ওপর বাইকের গতি রেখে,অন্য হাতে খপ করে ছেলেটার ঘাড় চে*পে ধরল। ভড়কে গেল সে। দৃশ্যটা দেখতেই মারিয়া থেমে গেল। অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। আরোহীর মুখমণ্ডল হেলমেটের আবডালে। ছেলেটি ভী*ত লোঁচনে তাকায়। বাইক থামেনা। উলটে তাকে টেনেটুনে নিয়ে চলে সাথে। ছেলেটির পা দুটো হিমশীম খায় তাল মেলাতে। ছেলেটা হতভম্ব,হতবুদ্ধি। অচিরাৎ আক্র*মনে দিশেহারা। আরোহী হঠাৎ কলার ছেড়ে দেয়। ছেলেটা মুখ থুব*ড়ে পরে গেল ওমনি। থুত্নী ঠেকল রাস্তায়। র*ক্ত বের হলো সাথে সাথে। হাত থেকে ছুটে গেল ব্যাগ। খোলা চেইনের ফাঁক গলে জিনিসপত্র বেরিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। বাইকের গতি আস্তে-ধীরে কমে আসে। লোকটা বাইক স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে নীচে নামল। হেলমেট খোলার পর, উন্মুক্ত চেহারাটা দেখেই মারিয়ার চোখ বেরিয়ে এলো। কোটর ছড়িয়ে গেল বিস্ময়ে। সাদিফ দাঁত খিঁচে ছেলেটার কলার চে*পে ধরে,টেনে ওঠায়। ভ*য়ে জড়োসড়ো সে। শুকনো ঢোক গি*লল কয়েকবার। সাদিফ পরপর দুটো ঘু*ষি মে*রে বলল,
‘ রাস্তাঘাটে ব্যাগ ছিন*তাই করে বেড়াস?শালা! তোকে পুলিশে দিচ্ছি দাঁড়া।’
সাদিফ পকেট থেকে ফোন বের করতে উদ্যত হয়। হুড়মুড়িয়ে ছেলেটা পা চেপে ধরে বলল,
‘ ভাই আর করতাম না। এইবারের মত ছাইড়া দেন ভাই,কসম লাগে ভালো হই যামু। আর করতাম না ভাই,পুলিশে দিয়েন না আমারে।’
সাদিফ সন্দিহান কণ্ঠে বলল,
‘ ভেবে বলছিস? আর করবি না তো?’
মারিয়া ততক্ষণে দৌড়ে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল। ছেলেটা বলল,
‘ না না ভাই না। ‘
তারপর গলায় চিমটি মেরে বলল’
‘ এই কসম খাইলাম। আর জিন্দেগীতে করতাম না।’
সাদিফ বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। বুকের সাথে হাত ভাঁজ করে বলল,
‘ ঠিক আছে, দশ বার কান ধর।’
ছেলেটা যত্রতত্র কানে হাত দেয়। নিজেই গুনতে গুনতে ওঠবস করে। দশ হলেও দাঁড়ালোনা। মারিয়া গোল গোল চোখে সবটা দেখছে। একবার ছেলেটির দিক তাকাচ্ছে,একবার সাদিফের দিক। বারো -তের পার হলেও থামছেনা দেখে মিনমিন করে বলল,
‘ দশ হয়ে গেছে তো। ‘
ছেলেটা শুনেও থামলোনা। সে সাদিফের দিক শ*ঙ্কিত নেত্রে তাকিয়ে। উঠতে-বসতে অপেক্ষা করে অনুমতির। উনিশ থেকে বিশ আওড়াতেই সাদিফ হাত উঁচু করে বলল
‘ হয়েছে থাম।’
ছেলেটা থামল। কান থেকে হাত সরাল। সাদিফ বলল,
‘ যা।’
সে স্বস্তি সমেত পা বাড়ায়। এবারের মত বেঁচে গেল।
সাদিফ ওমনি ডেকে ওঠে,
‘ দাড়া।’
কলের পুতুলের মত আবার দাঁড়িয়ে গেল ছেলেটা । সাদিফ মানিব্যাগ থেকে দুশো টাকা নিয়ে, বাড়িয়ে দিয়ে বলল’
‘ নে। কা*টা জায়গার ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিস। ‘
সে অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল। সাদিফ বলল
‘ কী? ধর!’
ছেলেটি দ্বিধাদ্বন্দ্ব সমেত টাকা ধরল। চট করে হাত উচিয়ে সামাল ঠুকল সাদিফকে। আস্তেধীরে বিদেয় হলো তারপর।
সাদিফ চোখ সরিয়ে মারিয়ার দিক তাকাল। মেয়েটা যে অনেকক্ষন আগেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সে ফিরেও তাকায়নি। সাদিফ ভুরু কোঁচকায়। মারিয়া আশ্চর্য বনে তাকিয়ে। মূক তার দৃষ্টি। বিভ্রমে ভুগছে সাদিফের আচরণ দেখে। লোকটা ছিন*তাইকারী কে ধরল,মা*রল,কান ধরাল,আবার টাকাও দিল? এ কেমন অদ্ভূত লোক!
সাদিফ কুঞ্চিত ভ্রুঁ নিয়েই চেয়ে থাকল কিছুক্ষণ। পরপর খ্যাক করে বলল,
‘ ব্যাগ পরে আছে দেখছেন না? তুলুন যান।’
মেয়েটা নড়ে উঠল উচু কণ্ঠে। চমকপ্রদ দৃষ্টি তৎক্ষনাৎ উবে গেল। সাদিফ আরেকদিক মুখ ঘুরিয়ে অনীহ কণ্ঠে বলল,
‘ ছিনতা*ইকারী ধরেছি মানে এই নয়,আপনার ব্যাগটাও তুলে এনে দেব। মিষ্টি করে বলব,এই নিন ম্যাডাম আপনার ব্যাগ।’
মারিয়া মুখ কোঁচকায়। উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যায়। পরে থাকা কয়েকটি জিনিস ব্যাগের ভেতর ঢোকায়। ফোনটাও বেরিয়ে গিয়েছিল। প্রটেক্টর ভে*ঙেছে,বাকী সব অক্ষ*ত দেখে প্রান ফিরল তার। ব্যাগ সমেত উঠে দাঁড়িয়ে, হাসিমুখে ফিরে তাকাল। সাদিফের জন্যেই হলো এসব। খুশিমনেই ভাবল একটা ধন্যবাদ জানাবে এখন। অথচ মুখ খুলতেও দিলোনা সাদিফ। যেঁচে, ভাব নিয়ে বলল,
‘ প্লিজ! এখন সিনেমার নায়িকাদের মত গদগদ হয়ে ধন্যবাদ জানাবেন না। বলবেনা, আপনি না থাকলে আমার যে কী হত! ওসব শুনলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। ম্যালেরিয়ার ধন্যবাদের আমার প্রয়োজন নেই। ‘
মারিয়া কট*মট করল। হা করল কিছু বলতে। পরক্ষনে মিইয়ে গেল। উপকার করেছে ভেবে গি*লে নিল অপ*মান। মিহি কণ্ঠে বলল,
‘ আমি অভদ্র নই। ভদ্রতার খাতিরে হলেও বলব ‘ ধন্যবাদ’। আপনার রাখতে হলে রাখুন, নাহলে রাস্তায় ফেলে দিন।’
‘ দেব না আবার? নিশ্চয়ই দেব। ম্যালেরিয়া রোগীদের জিনিসপত্র আমি নিজের কাছে রাখিনা। এনি ওয়ে,এত কথা বলছি কেন? আমারতো সময় নেই।’
সাদিফ উঠে বসল বাইকে। স্টার্ট দেয়ার আগে
মারিয়া বলল ‘ শুনুন।’
সাদিফ ঘাড় ঘোরায় ‘ কী?’
‘ বলছিলাম যে,আপনি কি বাড়িতে যাচ্ছেন?’
সাদিফ শৈলপ্রান্ত বাঁকায়, ‘ কেন?’
মারিয়া জ্বিভে, ঠোঁট ভিজিয়ে জানাল,
‘ না আসলে, যদি বাড়িতে যেতেন তাহলে ধূসর ভাইয়াকে একটু বলবেন, আমায় ফোন করতে? ওনার নম্বরটা সুইচড অফ পাচ্ছিতো।’
মারিয়ার অতিশয় মার্জিত আওয়াজ সাদিফের ওপর একটুও প্রভাব ফেলল না। সম্পূর্ন ধৃষ্ট কণ্ঠে বলল,
‘ এহ, এলেন আমার মহারানী! আপনার কথা আমি বলতে যাব কেন? নিজেরটা নিজে বলুন। আমি পারব না।’
মারিয়া মুখ কালো করে চোখ নামাল। ফেলল ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস। সাদিফ খেয়াল করেছে। এ পর্যায়ে চোখমুখ খানিক শিথিল হলো। একটু ভেবে বলল,
‘ আমি বাড়িতে যাচ্ছিনা। একবারে রাতে ফিরব,যদি ভাইয়াকে পাই বলে দেব আপনার কথা।’
মারিয়া ঝলমলে চেহারায় তাকায়। হেসে জানায় ‘ ‘ধন্যবাদ।’
সাদিফ সৌজন্যে বোধ দেখাল না। কথাও বাড়াল না। ব্যস্ত ভাবে বাইক ছুটিয়ে অদৃশ্য হলো।
****
সরগরম একটি পরিবেশ হঠাৎ করে নিস্তব্ধ হলে যেমন হয়,সিকদার বাড়ির বসার ঘর তেমন একটি মুহুর্তের পাশ কা*টাল মাত্র। ধূসরের অতর্কিত আগমন, ছু*ড়ে দেয়া প্রশ্ন রুবায়দা বেগম কে ভড়কে দিলো। তিনি বিভ্রান্ত নজরে মিনা বেগমের দিক তাকালেন। ভদ্রমহিলা নিজেও কৌতুহল নিয়ে চেয়ে। পিউ বিস্ময়াবহ। ধূসর হঠাৎ আসায়,এই ভাবে জিজ্ঞেস করায়। একইরকম বিস্মিত প্রতিটি মানুষ। জবা আর সুমনা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। এই ঘটনার কিছুই তারা জানেন না। মারিয়ার সাথে ধূসরের বিয়ে কথাটুকু তাদের মস্তিষ্কের ওপর দিয়ে গেল।
প্রত্যেকে তটস্থ, জিজ্ঞাসু,উদগ্রীব। মিনা বেগম নিশব্দে দুপাশে আলতো মাথা নেড়ে বোঝালেন ‘ সে বলেনি।’
রুবায়দা বেগম ফের তাকালেন ছেলের দিকে। জেনে গিয়েছে, তাতে সমস্যা নেই। ওদেরইত বিয়ে। আজ হোক কাল জানতোই।
তিনি সহজ গলায় বললেন ‘ তোকে কে বলল?’
ধূসর বরফ কণ্ঠে বলল,
‘ হ্যাঁ বা না তে উত্তর দাও মা।’
রুবায়দা বলতে নিলেন,
পথিমধ্যে পিউ কথা কে*ড়ে নেয়। আগ বাড়িয়ে শুধায়,
‘ কেন ধূসর ভাই,মারিয়াপুর সাথে বিয়ে হবে,আপনি খুশি হননি শুনে? ‘
তার কণ্ঠ ভেজা,অথচ ত্যাড়া প্রশ্ন। ধূসরকে ইচ্ছে করে খোঁ*চানোর জন্যে বলেছে। পুষ্প চোখ খিচে জ্বিভ কাঁটল। পিউয়ের বোকা বোকা কথাটার উত্তর কী হবে আন্দাজ আছে তার। ধূসর রাগে আ*গুন সম। পিউয়ের কথাটা তার মধ্যে কেরোসিনের মত কাজ করে। সে রু*ষ্ট চোখে তাকাল । বজ্রকণ্ঠে ধম*কে উঠল,,
‘ চুউপপপপ! বড়দের মধ্যে কথা বলিস! চাপ*কে পিঠের ছাল তুলে নেব বেয়া*দব! ‘
ছ্যাৎ করে উঠল পিউয়ের বক্ষস্থল। অন্তরাত্মা কাঁ*পুনি দিল। ভ*য়ে সুমনাকে খাম*চে ধরল রিক্ত। রাদিফ আড়াল হলো মায়ের পেছনে। উপস্থিত প্রত্যেকেটি সদস্য হতবিহ্বল। তিন বছরে, তিন হাজার ধম*ক ধূসরের খেয়েছে পিউ। গায়ে মখেনি, আমোলে নেয়নি। অথচ প্রথম বারের মত কোটর ছড়িয়ে গেল অশ্রুতে। কান্নার দমকে কণ্ঠনালি বুজে এলো। গত কয়েক দিনের য*ন্ত্রনা হানা দিলো মনে। ধূসরের প্রতি একরাশ অভিমান নিয়ে খাবার ছেড়ে উঠতে গেলেই সে হু*ঙ্কার ছাড়ল
‘ খবরদার পিউ! এক পা-ও সামনে এগোবি না।’
পিউ থমকে গেল। আত*ঙ্কিত নেত্রপল্লব তিরতির করে কাঁ*পছে। পুষ্প সহ সবাই তখন খাবার ছেড়ে দাঁড়িয়ে।
রুবায়দা হতবাক হয়ে বললেন,
‘ এভাবে ধম*কাচ্ছিস কেন ওকে? ও কী করেছে?’
ধূসরের র*ক্তাভ চোখে মায়ের দিকে নিবদ্ধ হয়। ক্রো*ধ সংবরন করে ঠান্ডা গলায় ফের শুধায়,
‘ মারিয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছ?’
রুবায়দা ছেলের চোখমুখ দেখে মিইয়ে এলেন। রয়ে-সয়ে জবাব দিলেন,
‘ ঠিক করেছি সেরকম না। ভাবছিলাম বিয়ের ব্যাপারে।’
‘ কেন ভেবেছো? ‘
চিৎকারের তোপে রুবায়দা বেগমও কেঁ*পে ওঠেন। তীব্র আক্রো*শে ফেটে পরল ধূসর। মায়ের কম্পমান হাত থেকে থালাবাসন সজোরে ছু*ড়ে মা*রল মেঝেতে। হকচকাল সবাই। বুয়া, রান্নাঘর থেকে উঁকি দিয়েও ভ*য়ে মাথা ঢুকিয়ে নিলেন। রুবায়দা বিমুঢ় চোখে তাকালেন। মিনা বেগম সুমনাকে ফিসফিস করে বললেন,
‘ ছেলেদুটোকে নিয়ে যা এখান থেকে।’
ভয়ে জুবুথুবু বাচ্চাদুটোকে সাথে নিয়ে সুমনা ত্রস্ত জায়গা ত্যাগ করলেন।
‘ কী করছিস কী? মাথা খা*রাপ হয়ে গেছে তোর?’
‘ হ্যাঁ খারাপ হয়ে গেছে। তোমরা খা*রাপ করে দিচ্ছ আমার মাথাটাকে। আমার একটু শান্তি কি তোমাদের সহ্য হচ্ছেনা মা?’
মিনা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন
‘ধূসর! কী আবোল-তাবোল বলছিস! আর এত রে*গেই বা যাচ্ছিস কেন? তুই কি মারিয়াকে বিয়ে করতে চাস না?’
ধূসর বলল ‘ আশ্চর্য বড় মা! মারিয়ার পাশে তোমরা বিয়ে শব্দটা ব্যবহার করছো কোন যুক্তিতে?’
রুবাইদা বেগম বললেন,
‘ মারিয়া কে আমার ভালো লাগে। তোর মুখে শুনলাম মেয়েটা কষ্ট করে অনেক! তোদের মধ্যে ভাবও দেখেছি, তাই জন্যেই তো…. ‘
ধূসর কথা কে*ড়ে নেয়, কড়া কন্ঠে বলে,
‘ ওর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক মানেই আমরা প্রেম করছি না। একটা ছেলে একটা মেয়েকে প্রেমিকা হিসেবে নয়, ছোট বোন হিসেবেও দেখতে পারে। তাহলে কেন তোমরা কুৎ*সিত করে ভাবছো আমাদের নিয়ে?’
মিনা বেগম বোঝাতে গেলেন,
‘ শান্ত হ বাবা! রুবা বুঝতে পারেনি। তুই চাস না যখন বিয়ে হবেনা। একটু মাথা ঠান্ডা কর।’
‘ কথাতো সেটা নয় বড় মা,কথাটা মায়ের বোকামির। কেন এমন ইউজলেস একটা কথা মাথায় আনবে সে! একটা বার আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ ও করল না? ‘
‘ কেন? মা হিসেবে ছেলের জন্যে মেয়ে পছন্দ করার অধিকার নেই আমার? তার জীবন নিয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা?’
ধূসর মুখের ওপর বলল,
‘ না পারো না। যে মা ছেলের মন বোঝেনা,সে কী চায় বোঝেনা, তার অধিকার কীসের? তোমার এই সিদ্ধান্ত আমার জন্যে অভিশাপ হয়ে নেমেছিল। কোনও ধারনা আছে তোমার, এই একটা অযৌক্তিক সিধান্তের জন্যে,গত সাতটা দিন আমার ওপর দিয়ে ঠিক কী কী গিয়েছে? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া ?’
রুবায়দা বেগম আঘা*ত পেলেন মনে। চোখ ছলছল করে উঠল। ফিচেল কণ্ঠে বললেন,
‘ এভাবে আমাকে বলতে পারলি তুই? আমি তোর মন বুঝিনি?’
‘ মিথ্যেতো বলিনি। আমাকে বুঝলে এইরকম একটা কথা তুমি মাথাতেও আনতেনা। তুমি কি আদৌ বোঝো সন্তান কী? বোঝো মায়ের দায়িত্ব কী? বুঝলে আমাকে দিনের পর দিন বড় মায়ের কাছে রেখে নিজে শান্তিতে ঘুমোতে পারতেনা। তোমার চেয়ে উনিও আমায় ভালো বোঝেন । যখন আমি চাইনি বিদেশ যেতে , কাঁদ*ছিলাম,অনুরোধ করছিলাম,তখনও তুমি আটকাওনি। বলোনি আমাকে যেন না পাঠায়। ছোট থেকে আমাকে দূরে দূরে রেখে বড় হওয়ার পর কেন এত ভালোবাসা দেখাচ্ছো? যখন তোমাকে আমার প্রয়োজন ছিল তখন তো পাইনি। তাহলে এখন কেন আসছো মায়ের অধিকার দেখাতে? আমিতো তোমার মত মাকে চাই না। বলতে বাধ্য হচ্ছি, তোমার মধ্যে সন্তান মানুষ করার কোনও যোগ্যতাই নেই। ‘
ধূসর কথা শেষ করল। অকষাৎ, বিদ্যুৎ বেগে তার বাম গালে চ*ড় মা*রলেন আফতাব। থমকে গেল সবকিছু। নিস্তব্ধ হয়ে পরল সকলে। আঁ*তকে উঠলেন মিনা বেগম। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল পিউ। বাকীরা বিস্ময়ে বাকরহিত। রুবায়দা বেগম ত্রস্ত ভঙিতে পাশ ফিরলেন। আফতাব ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন,
‘ অভদ্র! অসভ্য! মায়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় শেখোনি?’
রুবায়দা বললেন,
‘ কী করলে এটা?’
‘ এত বড় ছেলের গায়ে হাত তুললে ভাই?’
আফতাব সিকদার গরম চোখে তাকালেন,
‘ আপনি চুপ করুন ভাবি। আপনাদের জন্যেই ও এরকম বেয়া*দব তৈরি হয়েছে। বড় -ছোট কাউকে মানেনা। এই চ*ড়টা বহু আগে দেয়া উচিত ছিল আমার। ভুল করে ফেলেছি। আদর দিয়ে একটা বাদড় তৈরি করেছেন সবাই।’
ধূসর একটা বার বাবার দিক তাকালো না। হাত মুঠো করে দড় এক লা*থি বসাল সিড়ির পাশে দাঁড়ানো বিশাল ফুলদানির ওপর। ফ্লোরে আছ*ড়ে পরল সেটা। টুকরো টুকরো হয়ে ভাঙল। আরেক দফা চমকে গেল সকলে। আফতাব ক্ষে*পে গেলেন আরও। রা*গে শরীর থরথর করছে। শান্ত মানুষ বছরে একবার রাগলে ভয়াবহ রুপ ধারন করেন। হলোও তাই। তিনি ছেলের দিকে ফের তেড়ে যেতে নিলেই মিনা বেগম টেনে ধরলেন। অনুরোধ করলেন,
‘ থাক না ভাই। ও ছেলেমানুষ।’
‘ ছেলেমানুষ? কীসের ছেলেমানুষ? মা*রপিট করে বেড়ায়,গুন্ডামি করে সে ছেলেমানুষ? পিউকে বলছো পিঠের ছাল তুলবে? ছাল তোমার তুলে নেয়া উচিত। অমা*নুষ ছেলে একটা! ‘
পরমুহূর্তে আবার বললেন,
‘ বিয়ে করতে চাইছোনা, বেশ, করতে হবেনা তোমাকে। কেউতো জোর করেনি। সামান্য একটা আলোচনা হয়েছে। মেয়েটাকে তোমার মায়ের পছন্দ ছিল। তাই বলে এত রিয়্যাক্ট কেন করতে হবে? বিদেশ পাঠানো ব্যাতীত তোমার ওপর কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়নি। এটাও দিতাম না। কতটুকু মানোই বা তুমি আমাদের সিদ্ধান্তের? তুমি একবার না বললেই হতো। তাই বলে নিজের মাকে যা নয় তাই শোনাবে? তুমি তোমার মাকে কতটুকু চেনো?তোমার জন্মের সময় ওর শরীর কতটা কমপ্লিকেটেড হয়েছিল আমি দেখেছি। ঝুঁকি ছিল তার জীবনের । ব্যাগ ভরে ভরে র*ক্ত দিতে হয়েছে। আনিস দিয়েছে,আজমল দিয়েছে। কত রকম অসুস্থতায় দিন রাত এক করে কাটিয়েছে। তবু সে পিছপা হয়নি তোমাকে দুনিয়া দেখাতে। ভাবির কাছে তোমাকে এইজন্যে রাখা হতো কারণ তোমার মা অসুস্থতায় বিছানা থেকে উঠতে পারতোনা তখন। এখনও কতটা অসুস্থ থাকে তুমি জানো? তোমাকে বিদেশ পাঠানোর সময় তুমি কেঁ*দেছ, আর সে কেঁ*দেছে প্রত্যেকটা রাত। আমাকে অনুরোধ করেছে তোমাকে নিয়ে আসার। আমরা আনিনি। কারণ তুমি বখে যেতে। অবশ্য বখে যাওনি তাও নয়। গিয়েছ! আস্ত একটা গোঁয়ার হয়েছ৷ রা*গলে মানুষ হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেলেও মায়ের যোগ্যতা নিয়ে কেউ কথা তোলে না। তোমার মত অস*ভ্যের পক্ষেই তা সম্ভব। ‘
রুবায়দা বললেন ‘ আহ থাক না, থামো এখন।’
‘ তুমি থামো। আমার চুপ থাকাকে ও দূর্বলতা ধরে নিয়েছে। তুমি আমার সামনে থেকে বের হও ধূসর। তোমাকে দেখলেও আমার গা জ্ব*লছে। বের হও এক্ষুনি।’
ধূসর মায়ের দিকে একবার নরম চোখে তাকাল। নীচে চোখ এনে কোটরে আসা জল আঙুল দিয়ে ছিটকে ফেলল। চোয়াল শ*ক্ত করে ঘুরে হাঁটা ধরল সদর দরজার দিকে। পিউ অভিশ*ঙ্কায় নিস্তেজ হয়ে পরলো। ধূসর ভাই যাওয়া মানে আসবেন না আর। মানুষটার তেজ সে জানে। ধূসর এগিয়ে যায়, রুবায়দা বেগম
ধড়ফড়িয়ে ছুটে গেলেন। পেছন থেকে হাতখানা চে*পে ধরলেন ছেলের। কেঁ*দে বললেন,
‘ যাস না বাবা!আমি বুঝতে পারিনি। মায়ের একটা সামান্য ভুলে বাড়ি ছাড়বি? আর কখনও এসব নিয়ে ভাবব না আমি। তবুও আমাকে ছেড়ে যাসনা। ”
মায়ের অশ্রুজল ধূসরের ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়। নিজেকে সংবরন করতে পারেনা। অভঙ্গুর ভীত দুলে ওঠে। ফিরে তাকায় সে। রুবায়দা বোজা গলায় বললেন,
‘ যাস না। ‘
ধূসর দুহাতে মায়ের মুখ তুলল। চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আ’ম সরি মা! ভুল হয়ে গেছে। রে*গে গেলে তোমার ছেলের মাথা ঠিক থাকেনা জানোইত। এতোটা বাড়াবাড়ি করা উচিত হয়নি আমার। ক্ষমা করবে না?’
রুবায়দা শব্দ করে কেঁ*দে ফেললেন। পরপর ঝাপিয়ে পরলেন ছেলের বক্ষে। ধূসর মায়ের মাথাটা বুকের সঙ্গে চে*পে ধরে। ডান চোখ থেকে গড়িয়ে পরে পানি। পুষ্প যখন জানাল কথাটা,ক্রো*ধে অন্ধ হয়ে গেছিল সে। তার ওপর পিউয়ের খোঁচানো কথা। সব মিলিয়ে নিজের মধ্যেই ছিল না। জ্ঞানশূন্য হয়ে যা মুখে এসেছে বলে বসল। প্রথম বার মাকে এতটা আ*ঘাত দিয়ে, তার বুকটাও দ্বিখ*ণ্ডিত। মিনা বেগম আঁচলে চোখ মুছে হাসলেন। ধূসরের পাশে দাঁড়াতেই ধূসর অন্য হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে নিল তাকেও। মিনা বেগম ঠোঁট ভে*ঙে কান্না চাপালেন যেন। মাথা এলিয়ে দিলেন ওর বুকে। জবা বেগম থেমে রইলেন না, চোখে জল নিয়ে ছুটে গেলেন। হাত বাড়িয়ে যতটুকু পারলেন আকড়ে ধরলেন তিনজন কে। পুষ্পও ছুটল একইরকম। তৈরি হলো পরিবারের মিলনায়তনের একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। আফতাব সিকদার ফোস করে এক নিঃশ্বাস ফেললেন । মৃদূ হেসে দুপাশে মাথা নেড়ে ঘরে দিক চললেন।
পিউ নড়ছে না। সে স্থির, অটল। তার চোখ দুটোতে উপচে পরছে সমুদ্র। বক্ষে বইছে উ*ত্তাল ঢেউ। ধূসরকে ভুল বোঝার অনুশোচনায় দ*গ্ধ হচ্ছে হৃদয়। নিজেকেই নিজের কাছে কদা*কার লাগছে। বিয়ের খবর শুনে ধূসর ভাইয়ের এই প্রতিক্রিয়াই তাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সে ভুল। বুঝিয়ে দিলো তার অপরাধের গণ্ডি। সে দোটানায় ভোগে। এই মিলনে সামিল হবে কী না!
তার কী যাওয়া উচিত? ধূসরের কাছে যাওয়ার আছে সেই উপায়? না জেনে কত আজেবা*জে কথা বলে দিল সেদিন!
তখনি পুষ্প হাত বাড়ায়,ইশারা করে ‘ আয় পিউ।’
পিউ উজ্জ্বল চোখে তাকায়। চোখ মুছে এগোতে নিতেই ধূসর ভে*ঙে দিল সন্ধিক্ষণ। সরে গেল সবাইকে ছেড়ে। ছোট করে বলল,
‘ যেতে হবে এখন।’
পিউ থেমে যায়। পুষ্প সহায়হীন নেত্রে তাকায়। ধূসর লম্বা পায়ে রওনা করল। রুবায়দা বেগম উদগ্রীব কণ্ঠে বললেন,
‘ আজকে ফিরবি তো বাবা?’
ধূসর যেতে যেতে জানাল ‘ হ্যাঁ।’
সকলে স্বস্তি পেলেও, পিউ আশাহত হয়ে তাকিয়ে থাকে। ধূসর ফিরেও দেখল না একবার।
****
পিউয়ের কাল পরীক্ষা নেই। মাঝখানে গ্যাপ, তারপর ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র। আর এই গ্যাপটা যে কী কাজে লেগেছে! এই যে, সে সন্ধ্যে থেকে টেবিলের ধারে-কাছে যায়নি। উশখুশ করেছে,করেছে হাঁস*ফাঁস। রুমের এ মাথা, ও মাথা পায়চারি করেছে অ*শান্ত ভঙিতে। পুষ্প দুধের গ্লাস দিতে এসে তাকে দেখে মিটিমিটি হাসল। প্রকাশ করল না। পিউ তাকাতেই স্বাভাবিক করে ফেলল মুখশ্রী। সে অধৈর্য হয়ে বলল,
‘ ধূসর ভাই ফিরেছেন আপু?’
‘ না।’
‘ একটা ফোন করে দেখবি কখন আসবে?’
পুষ্প ভ্রুঁ কুঁচকে, ভাণ করে বলল
‘ কেন? উনি যখন ইচ্ছে তখন আসবে,তাতে তোর কী?’
পিউ মুখ ফুটে দিতে পারল না উত্তর। তার যে প্রান ওষ্ঠাগত, যাচ্ছে আর আসছে। কী করে বোঝাবে? আজ বাড়িতে এই বিশাল ঝামেলার মূলে সে। ধূসর ভাই এক চ*ড় খেলেন। চাচ্চু প্রথম বার গায়ে হাত তুলেছেন ওনার। এই সব তার জন্যে। পিউয়ের অন্তঃপুর আবার ভে*ঙে এলো। কা*ন্না পেল। পুষ্প সামনে থাকায় আটকে রাখল সব। সে শান্ত নজরে বোনকে নিরীক্ষন করে ঠোঁট চেপে হাসে। মাথা নেড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
**
ধূসর বাড়ি ফিরল দশটার পর। পার্লামেন্টে যায়নি বলে তাড়াতাড়ি এসেছে। পিউ দাঁড়িয়ে ছিল পুষ্পর বারান্দায়। অক্ষিযূগল ছিল মেইন গেটে। ধূসরের বাইক দেখতেই সোজা হয়ে দাঁড়াল। হৃদসঞ্চালন জোড়াল হলো মুহুর্তে। ধূসর বাইক থেকে নামতে নামতে ফোন বাজল। সে পকেট থেকে এনে সামনে ধরে। রিসিভ করে কানে গোঁজা অবধি পিউ দেখলো। তারপর চঞ্চল পায়ে ছুটে গেল বাইরে। পুষ্প বিছানায় বসেছিল। চোখের সামনে বই। পিউয়ের অবস্থা দেখে হাসল আবার।
পিউ এসে সোজা ধূসরের ঘরে ঢুকল। মনে মনে আরেকবার রিহার্সাল করল ক্ষমা চাওয়ার। সন্ধ্যে থেকে মনের মধ্যে সাজানো শব্দগুলো আরেকবার আওড়াল।
‘ ধূসর ভাই আমি সরি। আমার ভুল হয়েছে। আপনি বললে কানেও ধরব। ‘
পিউ আরো অনেককিছু সাজাল। বেশ কয়েকবার প্র্যাকটিস করল কী কী বলবে। ধূসর ভাই কান মলে দিলে দিক,মা*রুক,ছাল ওঠাক পিঠের। সে ক্ষমা নিয়েই যাবে। তক্ষুনি কলিংবেল বাজাল। সবাই জেগে থাকায় দরজার ছিটকিনি তোলা ছিল। ঘুমোতে গেলে লক করা থাকে। দরজা কে খুলেছে পিউ জানেনা। সে স্পষ্ট শুনছে হৃদপিণ্ড লাফ-ঝাঁপের আওয়াজ। সাথে নীচ থেকে ধূসরের গুমোট কণ্ঠ
‘ পিউ কোথায়?’
এরপর সেজো মায়ের গলা ‘ ওর ঘরেইত।’
পিউ দরজার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। ধূসর ভাই সোজা রুমে এসে ঢুকবেন। দরজা চাপাবেন। তারপর বের হবে সে। ভ*য় লাগুক,নার্ভাস হোক যাই হোক সব বলবে। ভুলের জন্যে মাফ চাইবে। মাফ না করলে সে পা ধরে ঝুলে থাকবে। ক্ষমা নিতেই হবে আজ।
অনেকক্ষন হলো ধূসর এলোনা। পিউয়ের খুশখুশ মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে এদিকে। আচমকা বাইরে জুতোর শব্দ পেলো। পিউয়ের বুক লাফাচ্ছে।
ধুকপুক শব্দ বাড়ছে। ধূসর রুমে ঢুকল। দরজা চাপিয়ে সোজা হেঁটে গেল। আচমকা থেমে দাঁড়াল। কপাল গুছিয়ে পেছনে ঘুরল। দৃশ্যমান হলো পিউ। ওকে দেখতেই তার অভিব্যক্তি পালটায়। দূর্বোধ্য হয়। পিউ সময় নিলোনা। উদ্বিগ্ন পায়ে গিয়ে তার মুখোমুখি হলো। পল্লব ঝাপ্টে, ঢোক গি*লে বলতে গেল
‘ আমার ভু….
কথা সম্পূর্ন হয়না। আকষ্মিক ধূসর ঠাটিয়ে এক চ*ড় বসাল গালে। পিউ চমকে গেল। গালে হাত চেপে তাকাতেও পারল না,ধূসর অন্যগালে আরেকটা থাপ্পড় মা*রে। পিউ কিংকর্তব্যবিমুঢ়! মাথা ভন ভন করে ঘুরে ওঠে তার। হতচেতন সে। কেন মা*রলেন, কী জন্যে মা*রলেন? সেত কিছু বলেইনি এখনও। দু দুটো শ*ক্তপোক্ত চ*ড়ে তার পৃথিবী ঘুর্নায়মান। ধূসর সহসা কনুই চে*পে ধরল। চকিতে তাকাল পিউ। মুচড়ে উঠল ব্য*থায়। ধূসর দাঁত কিড়মি*ড়িয়ে শুধাল,
‘ সুইসা*ইড করার খুব শখ তোর, তাইনা?’
চলবে।…………………
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/somudro/