মায়াবতী পর্ব ৪
তানিশা সুলতানা
এতোদিন কলেজে না আসাতে ওরা জানতেই পারে নি কালকে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে।
অথৈ তো ভীষণ খুশি। কলেজে এই প্রথমবার অনুষ্ঠান হচ্ছে। সবাই বাসন্তি রংয়ের শাড়ি পড়ে আসবে বলে ঠিক করেছে। কলেজের কানাই কানাই আলপনা করা হচ্ছে। বেলুন, কুলো, বিভিন্ন হাতেরকাজ দিয়ে সাজানো হচ্ছে।
যারা যারা পারফরম্যান্স করবে সবাই রিয়ারসেল দিচ্ছে।
তন্নি খুব ভালো নাচ করে। অথৈয়ের জন্মদিনে নেচেছিলো। নাচতে চায় নি। খুব জোর করেই নাচিয়েছিলো অথৈ।
তন্নি আর অথৈ পারফরমেন্স দেখছে। তন্নি খুব মন দিয়ে নাচ দেখছে হাত তালি দিচ্ছি মাঝেমধ্যে গানের তালে তালে ঠোঁট মেলাচ্ছে।
যে মেয়েটা ডান্স করছে সে ঠিকঠাক ভাবে স্টেপ গুলো পারছে না। তন্নির খুব করে ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে শিখিয়ে দিতে। কিন্তু আবার লজ্জা লাগছে।
অথৈয়ের ফোন বেজে ওঠে। অর্ণব কল দিয়েছে।
“আমার ভাইকে বোধহয় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
তন্নি ভ্রু কুচকে তাকায়। অথৈ খিলখিল করে হেসে ওঠে। তন্নিও হেসে ফেলে।
” কল করছে। চল দেখে আসি।
“তুই যা। আমি প্লিজ যাবো না।
” আমার ভাই তোকে আর কখনোই কিছু বলবে না। চল তুই।
অথৈ তন্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে কল রিসিভ করে।
“ওই ছাগল কোথায় তুই?
অর্ণব বলে ওঠে।
” ঘাস খাচ্ছি। খাবি?
“বল না ইয়ার। আমি রোদে দাঁড়িয়ে আছি।
” পাঁচ মিনিট দাঁড়া আসছি আমি।
অথৈ কল কেটে দেয়। পা চালিয়ে চলে আসে কলেজের মাঠে। গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব। চোখে সানগ্লাস। ফর্সা কপালে ঘাম গুলো মুক্তোর দানার মতো চিকচিক করছে। কপালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেস লাগিয়েছে। সাদা শার্টের বুকের কাছে দুটো বোতাম খুলে দিয়েছে। তাতে ফর্সা বুকের কালো লোম গুলো উঁকি দিচ্ছে। হাতা ফোল্ড করে কনুই ওবদি উঠিয়েছে। হাতেও বড়বড় লোম। ফর্সা হাতের কালো লোম দেখতে মন্দ লাগছে না। তন্নি এক পলক তাকিয়ে ছিলো অর্ণবের দিকে৷ পরপরই চোখ নামিয়ে নিয়েছে।
অর্ণবের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। হবে নাই বা কেনো? বিদেশি বাবু তো। তার কি আর রোদে মজা লাগবে?
অথৈ আর তন্নিকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায় অর্ণব। হাতের উল্টো পিঠে ঘাম গুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করে। সানগ্লাস খুলে শার্টে ঝুলিয়ে রাখে।
“এতোখন লাগে আসতে?
বেজায় বিরক্ত গলায় বলে অর্ণব।
” উড়োজাহাজ ছিলো না তো আমার কাছে। যে উড়ে উড়ে আসবো।
নিজের ওড়না দিয়ে অর্ণবের কপালের ঘাম গুলো মুছে দিতে দিতে বলে অথৈ।
অন্য সময় হলে অর্ণব ছেড়ে দিতো না কিন্তু এখন মুড ভালো। তাই তর্ক করলো না।
“গাড়িতে বস। মার্কেটে যাবো।
অর্ণব গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিয়ে বলে।
” কিছু কেনার নেই আমার।
“চুপচাপ বস। বড় ভাইয়ের মুখে মুখে তর্ক।
তন্নি কি করবে বুঝতে পারছে না। চলে যাবে এখান থেকে? না কি দাঁড়িয়ে থাকবে? প্রচন্ড অস্বস্তিতে পড়ে গেছে।
” এই যে অথৈয়ের তন্নি। তুমি দাঁড়িয়ে কেনো? বসো জলদি।
অর্ণব তন্নিকে বলে ওঠে। চমকে ওঠে তন্নি। আসলে এটা ও এক্সপেক্ট করে নি। অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকায় তন্নির দিকে।
“বুঝলাম না
ধমক দিলে কেঁপে ওঠো। ডাকলে কাঁপো। মিষ্টি কথা বললেও কাঁপো।
কাঁপা-কাঁপির রোগ আছে না কি তোমার?
বুকে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে অর্ণব। তন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না।
প্রচন্ড নার্ভাস সে। তার গলা শুকিয়ে কাঁঠ হয়ে গেছে।
” কিছু বলেছি আমি।
অর্ণব এবার গম্ভীর গলায় বলে।
তন্নি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
“আমাকে বাসায় যেতে হবে।
মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে তন্নি।
” আই নো দেট। ইভেন আমাদেরও বাসায় যেতে হবে। সো কটামি বাদ দিয়ে দ্রুত বসে পড়ো।
খালি কটামি। গুরুজন মানেই না।
বলতে বলতে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে অর্ণব। তন্নি ভেজা বেড়ালের মতে অথৈয়ের পাশে বসে পড়ে। অথৈ আপাতত সাজুগুজু করতে ব্যস্ত।
অর্ণব সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি স্ট্রাট করে।
কয়েক মিনিটের ব্যবধানে চলে আসে শপিং মলে। ইয়া বড় শপিংমল। কয় তালা হবে? তন্নি জানালার কাঁচের ফাঁকে মাথা বের করে গুনতে থাকে।
আট তালা ওবদি গোনার পরেই অর্ণবের ডাক কানে আসে।
“পবলেম কি তোমার বলবে প্লিজ? এই গাড়িতে উঠতে চাইছিলে না এখন নামতে চাইছো না।
অর্ণব পেছন ঘুরে বলে। তন্নি পাশে তাকিয়ে দেখে অথৈ নেমে গেছে। শুকনে ঢোক গিলে। মাথায় পেঁচানো ওড়নাটা ঠিক আছে কি না চেক করে নেমে পড়ে তন্নি।
” তোর তন্নির হাত ধরে রাখ। আবার হারিয়ে গেলে বলবি “ভাইয়া আই হেট ইউ। তুমি আমার তন্নিকে কিডন্যাপ করেছে”
অথৈকে নকল করে বলে অর্ণব। খিলখিল করে হেসে ওঠে অথৈ। তন্নিও ঠোঁট চেপে হাসে।
তিন তালায় বড় একটা শাড়ির দোকানে আসে ওরা।
“এখান থেকে সব থেকে বেস্ট শাড়িটা চুজ করবি।
আমি ওইদিকেই আছি।
বলেই অর্ণব চলে যায়।
অথৈ শাড়ি দেখতে থাকে। দোকানের ডান পাশে সুন্দর বাসন্তি কালার একটা শাড়ি পুতুলকে পড়ানো। যেই শাড়িটার দিকে চোখ আটকে যায় তন্নির। এতো সুন্দর শাড়ি কখনোই দেখে নি।
শাড়িটা একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না। তাই চুপচাপ দেখে যাচ্ছে।
” জান এই শাড়িটা দেখ তো।
অথৈ একটা শাড়ি দেখিয়ে বলে।
“হুম সুন্দর নিতে পারিস।
” তাহলে এটাই ফাইনাল।
তন্নি মাথা নারায়।
তারপর অথৈ নিজের জন্য বাসন্তি রংয়ের শাড়ি দেখতে থাকে।
“শাড়িটা পছন্দ তোমার?
পেছন থেকে অর্ণব বলে ওঠে। চমকে ওঠে তন্নি। বড়বড় চোখ করে পেছনে তাকায়।
” রিলাক্স
আমি অর্ণব। খে*য়ে ফেলতে চাই নি তোমায়। জাস্ট বলেছি পছন্দ কি না।
দুই হাত উঁচু করে বলে অর্ণব।
তন্নি চোখ নামিয়ে নেয়।
“হ্যাঁ পছন্দ হয়েছে অথৈয়ের জন্য।
অথৈ এই শাড়িটা নিতে পারিস।
অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। অথৈ সেই শাড়িটা দেখতে থাকে। সত্যিই শাড়িটা খুব সুন্দর।
অর্ণব চোখের ইশারায় অথৈকে বলে শাড়িটা তন্নির জন্য নিতে। অথৈয়ের ভাইয়ের প্রতি এক রাশ ভালোবাসা জমা হয়। ইচ্ছে করছে জাপ্টে জড়িয়ে ধরতে।
” তন্নি এই শাড়িতে তোকে ভীষণ সুন্দর লাগবে।
তন্নির মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে বলে অথৈ।
তন্নি লজ্জা পায়।
“অথৈ প্লিজ।
অথৈ বুঝে যায় তন্নির কাছে টাকা নেই তাই এমন বলছে।
অথৈ তন্নির কানের কাছে ঠোঁট নেয়।
” তুই আমাকে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে পড়া বুঝিয়ে দিস না? দিস তো। কেনো দিস? কারণ তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমিও তো তোকে ভালোবাসি। তোকে এই শাড়িটা গিফট দিতে পারি না? বল? তুই শাড়িটা না নিলে আমি তো তোর কাছে আর পড়বে না তন্নি।
ফিসফিস করে বলে অথৈ। তন্নি কিছু বলার মতো খুঁজে পায় না। বাধ্য হয়েই নিয়ে নেয়।
অর্ণব হাসে।
চলবে……….