এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৭
#নুসাইবা_রেহমান_আদর_লেখনীতে
#পর্ব_৭
সাফোয়ানের এই কেয়ারটুকু খুব ভালো লাগলো সানার। লোকটা খারাপ নয় শুধুমাত্র রাগী দেখে কি হয়েছে। কিন্তু এত রাতে বেলকনিতে এসে নিজেই অনুতপ্ত হচ্ছে। তার উপরে চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে ছিল নায়িকাদের মত। সে তো নিজের চিন্তা ভাবনায় এতোই মশগুল ছিল বাকি কথা ভুলে গিয়েছে। রাত বিরাতে বাহিরে বের হওয়া উচিত না। সানার খেয়াল ছিল না যদি সাফোয়ানের ঘুম থেকে উঠে তাকে এখানে না ডাকতে আসতো তাহলে। ভাবতেই আবার ভয় লাগছে ওর৷
সাফোয়ান রুমে এসে সেই যে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়েছে আর নড়াচড়া করেনি। সানা ও আর দেখে ডিস্টার্ব করোনা সেও চুপচাপ সাফোয়ানের পাশে শুয়ে পরলো।
রাফিয়ার সাথে সাইফের প্রচণ্ড ঝগড়া চলছে রুমের মধ্যে।
~আপনাদের এত বড় অফিস আপনি সেখানে কাজ না করে ভাইয়ের চামচামি করবেন কেন? ভাইয়ের পিছু পিছু না থেকে নিজের একটা পরিচয় বানান।
~মুখ সামলে কথা বলে রাফিয়া।চামচামির মানে কি? তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি বলে এই না যে তুমি আমাকে যা মুখে আসবে তাই বলবে। আমি আমার ভাইয়ের হয়ে কাজ করবো না আমাদের অফিসে বসবো সেটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে তুমি কথা বলবে কেন?
~আপনার বাড়িতে সবার কাছে যে সাফোয়ান ভাইয়ের মূল্য এত বেশি সেটা কি আপনি বুঝতে পারেন না?
~সাফোয়ান শিকদার এই শিকদার বাড়ির বড় ছেলে তাই সবকিছুর প্রতি সবার আগে অধিকার সাফোয়ান ভাইয়ের আছে। এটাই স্বাভাবিক বিষয়। আমি কি করবো না করবো সেটাও আমার বিষয়। আমাদের ভাইদের মাঝখানে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করব না। তুমি কেন আমাদের ভাইদের বিষয়ে কথা বলবে? তুমি এই বাড়ির বউ এই বাড়ির কাজ সামলাও। বাড়ির কাজ করতে যদি না মন চায় তাহলে ভার্সিটি যাও অথবা জবের জন্য এপ্লাই করো। তোমায় যা খুশি সেই কাজ কর। ভিলেন হইতে এসো না। আমার মা কিন্তু খা*রা*প শাশুড়ি নয় যে তার বউদের পড়ালেখা চাকরির বিষয় হস্তক্ষেপ করবে।
~তুমি আমার সাথে এই রকম ভাবে কেন কথা বলছো সাইফ? আমি ভুল কিছু বলছি না। আগে যা হয়েছে হয়েছে, এখন তোমার সংসার আছে এখন তুমি কাজ করবে। তা না করে ভাইয়ের পিছু পিছু কেন ঘুরবা এই কথাটা বুঝাও আমাকে?
রাফিয়ার কথা বলার ধরন সাইফের মোটেও ভালো লাগছে না। এই রাফিয়ার কথাবার্তা প্রচন্ড আলাদা লাগছে তার কাছে। মানুষ কয়েকদিনে এতটাই বদলে যেতে পারে? সাইফ নিজের মাথা ঠান্ডা করে রাফিয়াকে প্রশ্ন করলো”
~আমি যদি ভাইয়ার ইলেকশনে কাজ করি তাতে তোমার কোথায় সমস্যা হচ্ছে?
~আমার কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
~তাহলে এমন আশ্চর্যজনক ব্যবহার তুমি আমার সাথে কেন করতেছ? আর এই বিষয়ে আমার সাথে ঝগড়াই বা কেন করছো তুমি?
রাফিয়া এবার চুপ হয়ে গেল কি কথা বলতে গিয়ে কি বলে ফেলছে রাগের মাথায় সে নিজেও টের পাচ্ছে না। এভাবে মাথা গরম করে সাইফ কে কিছু বলে কোন কাজ হবে না ঠান্ডা মাথায় তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। তা না হলে হীতে বিপরীত হতে পারে।
~আমি এটা বলতে চাইনি যে তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে কোন ঝামেলা করো বা তার কোনো কাজ কইরো না। আমি চাচ্ছি যেহেতু তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের সংসার আছে সেই হিসেবে তুমি যদি এখন নিজের কাজ শুরু করো তাহলে ভালো হতো। ইলেকশনের কাজ করার জন্য তো হাজার লোক আছে তাই না?
~যতোই লোকজন থাকুক আমার ভাইয়ের জীবনে এই ইলেকশনের প্রায়োরিটি অনেক বেশি তাই তার পাশে আমি ছায়ার মত থাকবো। ভাইয়া চাইলেও থাকবো, না চাইলেও থাকবো।
~তুমি অনেক ছেলে মানুষি করছো সাইফ পরে না তোমাকে পস্তাতে হয়।
~তোমার মাথায় যা চলাচল করছে সব ঝেড়ে ফেলে দাও। কিছু না বুঝার মত অবুঝ কিন্তু আমি না। এইবারের সব কিছুতে প্রথম অধিকার ভাইয়ার ছিল আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে। আমাকে ভাইয়া যা দিবে আমি তাতেই খুশি। তার থেকে এক বিন্দু বেশি লাগবে না। আমি মা এবং তোমার থেকে আমার ভাইয়াকে বেশি ভালোবাসি। তাই আমার আর আমার ভাইয়ের কাজের মাঝে কোন কথা আমি এলাও করবো না।
রাফিয়া বুঝতে পারল কিছু বলেই সাইফ কে বুঝানো যাবে না। এখন এই ব্যাপারটা এখানেই থামাতে হবে। না হলে বড় রকমের ঝগড়া বেঁধে যাবে যা এক মুহূর্তে সে চাচ্ছে না। চাইবেই বা কেন এখনো তো সবকিছু ক্লিয়ার হচ্ছে না তার কাছে, সানার সাথেও ঠিক মত কথা বলতে পারছে না। সাফোয়ানের উপর রাফিয়ার অনেক রাগ সে সানাকে বিয়ে করে এনেছে এই বাড়িতে এর জন্য।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসে সাফোয়ানের জন্য। সানা বুঝতে পেরেছে কাল রাতে সাফোয়ান তার উপর প্রচন্ড রেগে গিয়েছিল এখন সেই রাগ ভাঙ্গানোর দায়িত্ব তার কাঁধে। যেভাবেই হোক সাফোয়ানের রাগ তার কমাতেই হবে। এক রুমে তারা থাকে, বিয়েটা যেভাবেই হোক সে এখন তার স্ত্রী। সেই হিসেবে সাফোয়ানের উপর তার অনেক দায়িত্ব। সব পূরণ করতে না পারলেও কিছু কিছু কাজ করার চেষ্টা করতেই পারে।
~এই যে শুনছেন আপনার জন্য কফি এনেছিলাম ।
সানার ডাক শুনেও চুপচাপ শুয়ে থাকলে সাফোয়ান। ইচ্ছে করেই চুপচাপ শুয়ে থাকলো। সানার সাথে বিন্দুমাত্র কথা বলতে ইচ্ছা করছে না তার। সানা দমে যাবার পাত্রী নয়। যেহেতু এত কষ্ট করে কফি বানিয়ে এনেছে তা খাইয়েই যাবে সাফোয়ানকে।
~আমি যে আপনাকে ডাকছি আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
~আমি ঘুমাচ্ছি, আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না? ডিস্টার্ব না করে এখান থেকে চলে যান, কফি আমি আনতে বলিনি।
সাফোয়ান অনেক রুডলি কথাটি বলে সানাকে। সানা তবুও সাফোয়ানের কথায় কিছু মনে করে না। সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে সেখান থেকে সব পানি সাফোয়ানের মুখে ছুড়ে মারে। পানি সাফোয়ানের মুখে পরায় সে হকচকিয়ে উঠে। রাগি চোখে তাকায় সানার দিকে। সানার কিছু যায় আসছে না এই ভাব।
~কি করলেন এটা আপনি আমার সাথে? এগুলো কোন ধরনের মজা, বাচ্চাদের মত আচরণ না করলেই কি নয়?
~আমি যে আপনাকে অনেকক্ষণ ধরে ডেকে যাচ্ছি আপনি শুনেও না শোনার মত ভান ধরে শুয়ে আছেন। এইজন্য আমি আপনার উপর পানি মারতে বাধ্য হয়েছি। প্রথম ডাকে উঠে পড়লেই হত। এখানে আমার কোন দোষ নাই।
~ না আপনার কেন দোষ থাকবে সব দোষ তো আমার? শুধু শুধু কেন আপনি কফি বানিয়ে এলে আমার ঘুমের ১২ টা বাজালেন? এরপর থেকে আমার কোন কাজ আপনাকে করতে হবে না। এখন সামনে থেকে সরুন আমাকে যেতে দিন।
সানা বুঝতে পারছে যে তার উপর সাফোয়ান প্রচন্ড পরিমাণ রেগে আছে কালকে রাতের কারনে। এই কারণে এই রকম ব্যবহার তার সাথে করেছে। এবার কিন্তু সব অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। আর একবার বলবে না হলে ধমক দিয়ে সোজা করে দিবে। কি ধরনের মজা চলছে তার সাথে। সাফোয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে সানার সামনে থেকে এনে সেই ঠান্ডা কফিটা এক চুমুকে শেষ করে ফেলল। এরপর খাটের উপর টান হয়ে শুয়ে ফোন চাপতে লাগলো। সানা যে তার সামনে বসে আছে সেদিকে কোন খেয়াল দিচ্ছে না। কিভাবে দিবে সে খেয়াল সানা কে বুঝতে হবে সব সময় নিজের কথামতো জেদ ধরে কাজ করতে হয় না। নিজের ভালো খারাপ বুঝতে হয়। সাফোয়ান নিজেও বুঝতে পারে সে এই সামান্য বিষয়ে সে এক সাইজ বেশি করে ফেলছে। এতটা না করলেও হতো। তবুও সানারা এটেনশন পেতে তার খুব ভালো লাগছে।
#to_be_continued