#দ্বাবিংশ #Yasira_Abisha (#Fatha)
দীর্ঘ সময় ধরে ইরাদ যে জীবন অতিবাহিত করে আসছে রুহিও আজ থেকে সেই পথেই পা বাড়িয়ে দিলো। জীবনে ভালোবাসা ভুল না তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসা জীবনের চরম কিছু ভুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ একটা ভুল। যে ভুলের কোনো ক্ষমা হয় না। কারণ এই কষ্টটা আজীবন নিজেরই বহন করে চলতে হয়। রুহির কলিজাটা একদম ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কে যেনো বারবার ধাড়ালো কোনো অস্র দিয়ে রুহির কলিজাটা চিড়ে ফেলছে। বাসায় ঢোকার সময় রুহিকে কেউ দেখেনি কাজের মেয়ে ঝুমা ছাড়া। রুহির চোখ মুখ ফোলা একদম অসুস্থ দেখাচ্ছে ওকে। এই জিনিসটা ঝুমার চোখ এড়ায়নি একদমই, ও রুহির এই অবস্থা দেখে মেঘার কাছে গিয়ে রুহির এই অবস্থার কথা বললো,
মেঘার বুঝতে বাকি রইলো না আসলে কি হয়েছে সেখানে। যে ভয়টা ও পাচ্ছিলো তাই হলো। ছেলেটা বোধহয় আমার বোনটাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে। কিন্তু এতো বড় সাহস তার হলো কি করে? রুহির মতো একটা মেয়েকে সে রিজেক্ট করে কিভাবে? আর সে নিজে এমন কি যে তার এতোটাই সাহস হলো রুহিকে না করে দেওয়ার? কেনো যেনো খুব রাগ লাগছে মেঘার। বোনের জন্য কষ্ট ও যেমন হচ্ছে তার চেয়ে অপমান বোধটা বেশি কাজ করছে মেঘার। রুহির ঘরে গিয়ে দেখলো ও দরজা লাগিয়ে রেখেছে। মেঘা ভাবলো এখন ওকে কিছু জিজ্ঞেস না করাই ভালো হবে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো, খাটের ওপরে শুয়ে সারা রাত রুহি কান্না করে, খুব করে কান্না করে। ইরাদের বলা কথা গুলো ওর কানে বারবার বেজে উঠছে। “আজকে বয়সের জন্য মনে হচ্ছে এটা ভালোবাসা তবে এটা মোহ ছাড়া আর কিছুই না। কিছুদিন গেলে এমনিতেই সব ভুলে যাবেন। কিছুদিন পর নতুন ভাবে সব শুরু করতে পারবেন” কত সহজভাবে ইরাদ এই কথা গুলো বললো, জীবনটা কি আসলে এতটাই সহজ? বারবার ভালোবাসা যায়? একটা মানুষকে এতোটা ভালোবাসার পর কি আবার অন্য কাউকে ভালোবাসা যাবে? আমার এই অগাধ ভালোবাসা মিথ্যা? এসব মোহ? তার থেকে দূরে গেলেই আমি তাকে ভূলে যেতে পারবো? সে ভালোই চিনেছে আমাকে এতোদিনে। শুধু প্রেম তার প্রতি ছিলোনা ছিলো ভালোবাসা, তবে এই মানুষটা এতো গুলো দিন রুহির পাশে থেকেও ওকে চিনতে পারে নি। হয়তো বা রুহিরই ভুল ছিলো যে ও বুঝাতে পারে নি। তবে আজ থেকে রুহি নিজেকে গুটিয়ে ফেলবে আর প্রেম ভালোবাসা নিয়ে সে ভাববে না, ইরাদ না হলে নাই জীবনে আর কাউকে তার প্রয়োজন নেই।
.
রুহি যাওয়ার পর ইরাদ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো ওখানেই। কেমন যেনো অসহ্য একটা বেদনা ওকে গ্রাস করে নিচ্ছে। কি রকম একটা যন্ত্রণা হচ্ছে ইরাদের তা আসলে বলে বুঝানো সম্ভব না৷ আরো একযুগ আগে যে কষ্ট ও সহ্য করে এসেছে আজ মনে হচ্ছে সেই একই কষ্ট কেউ ওকে আবার দিচ্ছে। মনের অবস্থা কাউকে বোঝানো যায় না, আজকে ইরাদ জানে রুহি ওকে ভালোবাসে। তবে এই ভালবাসা তো দীর্ঘ স্থায়ী হবে না, এ তো ক্ষনিকের ভালোবাসা আর তাছাড়া বয়সটা বড্ড বেমানান। এই রকম বড় সমস্যাটা তো এড়িয়ে যাওয়া যায় না, তাই রুহি আর ইরাদ এক হবে না এটা ইরাদ জানে।
ইরাদ চলে আসবে এমন সময় খেয়াল এলো রুহির ডায়েরিটা ওখানেই রয়ে গেছে টেবিলের ওপরে। চলে যাওয়ার আগে রুহি নাহয় সাথে যাবে না কিন্তু রুহির ডায়েরিটাকে নিজের করে নিতে দোষ কোথায়? হ্যাঁ রুহির অনুমতি ছাড়া ওর জিনিস নিজের করে নেওয়া ঠিক না তবে ইরাদ নিবে। ইরাদ এয়ারপোর্টে এসে পড়েছে, আর কিছুক্ষন পড়েই ও ফ্লাই করবে। খুব খারাপ লাগছে রুহিকে ছেড়ে যেতে, আর তো রুহির সাথে সম্পর্কই রইলো না ওর। ইরাদ চলে গেলো রুহিকে ছেড়ে।
রুহি কান্না করতে করতে ঘড়ির দিকে তাকায়, কলিজাটা এক কামড দিয়ে উঠে তখন এখনি তো ইরাদের ফ্লাই করার সময়।
তখনি এক দৌড়ে বারান্দায় চলে গেলো, কিছুক্ষণ পরে দূর আকাশে দেখা যাচ্ছে একটা প্লেন যাচ্ছে। আর রুহির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
ইরাদ ফিরে এলো ওর পুরোনো জীবনে তবে আজকে নিজেকেই অসহ্য লাগছে ওর। ও রুহিকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে, মেয়েটার মনটা ভেঙে গেছে একদম। ইচ্ছে করছিলো খুব রুহিকে জড়িয়ে ধরে ওর সব দুঃখ কষ্ট গুলো মুছে দিতে। কিন্তু ইরাদ তা পারবে না। আজ সে অনেক অনেক দূরে চলে এসেছে রুহির থেকে। শুধু রুহির স্মৃতি গুলো নিয়ে আর এই ডায়েরিটা নিয়ে।
এভাবেই পুরো ৩বছর কেটে যায়। ইরাদের কোনোদিন সাহস হয়নি রুহির ডায়েরীটা খুলে পড়ার তবে সবসময় এই ডায়েরিটা সে নিজের সাথে রেখেছে।রুহির স্পর্শ অনুভব করার জন্য। আর আর এদিকে রুহি সম্পুর্ণই নিজেকে বদলে ফেলে এই বছর গুলোর মাঝে। এতো বড় পরিবর্তন ওর জীবনে আসবে তা কেউ ভাবতে পারে নি।
রুহি ইরাদের ভাবনায় এখনো থাকে, কষ্ট গুলো রুহিও এখন লুকাতে শিখে গেছে। নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে ও। রোগীদের মধ্যে নিজের সুখ খুজে নিয়েছে মেয়েটা, এখন তো ও ডাক্তার হয়ে গেছে।
সবকিছুই ভালো চলছিলো রুহির।
মনের কষ্ট চাপা দিয়ে মুখে ম্লান একটা হাসি সে একে রেখেছিলো যতক্ষণ না ওকে বলা হয় বিয়ের কথা বলা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত।
(চলবে..)
#অনুতাপ
#ত্রয়োবিংশ_প্রহর #Yasira_Abisha (#Fatha)
একা জীবন কাটানো বেশ কঠিন, রুহি আগে বুঝতে পারতো না কিন্তু এখন ঠিকি বুঝতে পারে। ইরাদ ওকে রেখে যাওয়ার পরে যেখানে যেখানে ইরাদের স্মৃতি আছে, সেসব জায়গা রুহি ত্যাগ করেছে। রুহি আজও ঠিক তেমনি ভালোবাসে ইরাদকে যতটা আগে ভালোবাসতো। যদিও যোগাযোগ নেই কোনোভাবেই তবুও ভালোবাসা তো শেষ হবার নয়। কারণ রুহি যখন থেকে ভালোবাসা বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই ওর ধ্যানে জ্ঞ্যানে ইরাদ ছিলো। আজকে রুহি ২ মাস পরে সিলেট যাচ্ছে, ইন্টার্নি শেষ করে রুহির আর ঢাকা যায়নি। সিলেটে হাসপাতালে রুহির নতুন জয়েনিং কাল থেকেই আজ তাই সকাল বেলায় রুহির ফ্লাইট আছে।
বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে রুহি সিলেট চলে এলো। রুহি বাসায় আসার খুশিতে ওর খালা খালু সবাই মিলে ওকে বরণ করে নিলো, আর আজ না এলেও রুহির খালা অর্থাৎ মেঘার মা শান্তি পেতেন না। মেয়েটাকে কিছুদিন পরপর এক নজর না দেখলে সে থাকতেও পারেন না। আর কিছুই ক্ষনই তো মেয়েকে কাছে পাবেন উনি কারণ আজকে রাতেই মেঘার ও মা মিলে সিংগাপোর যাবেন মেঘার শাশুড়ীকে নিয়ে উনার অসুস্থতার জন্য। আর আগেভাবেই ওখানে সবকিছু ঠিক করে রেখেছে দিবা সেখানে। কারণ শত কাজই থাকুক না কেনো নিজের মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য মেয়ের তো সাথে যাওয়াই লাগে। অবশ্য এই ডাক্তারের খোজ রুহিই এনে দিয়েছে তাদের।
সারাদিন খালা আর বোনের সাথে পার করার পরে রুহি তাদের বিদায় দিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো। খালু এখনো বাড়ি ফিরেনি কাজে বাইরে আছেন, এইজন্য রুহি ওপরে চলে এলো ওর ঘরে এবং এসে গোসল করে হলুদ আর লাল একটা জামা পরে বসে রইল অজি চেয়ারে, বাইরে আবহাওয়াটা আজকে বেশ পরিমাণে গরম ছিলো রুহি ঘরটা ঠান্ডা করার জন্য উঠে গিয়ে জানালাটা লাগালো দরজা আটকে দিলো, আলমারি থেকে এসির রিমোটটা নেওয়ার জন্য একটা পাট খুলতেই এসির রিমোটের নিচে ইরাদের টিশার্টের দিকে নজর যায় রুহির। এটা ও রাতারগুলের ট্রিপ থেকে নিয়ে এসেছিলো। কেনো যেনো কলিজার ভেতরে একটা কামড় দিয়ে বসলো। এই সিলেটের সাথে তো রুহির বেড়ে ওঠা, ওর প্রেম ওর ইরাদের কাছে নিয়ে আসা, এবং এখান থেকেই বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া ওদের। কতশত স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
অনেক দিন পর রুহি সিলেট এসেছে, ইরাদকে ছাড়া এখন আর আগের মতো হাসি পায় না কিছুতেই। মেয়েটা যতটা হাস্যজ্বল ছিলো ঠিক ততটাই চুপচাপ থাকে এখন, এমন নয় রুহি গম্ভীর হয়ে গেছে তবে আগের মতো মন থেকে হাসি পায় না। সবার সামনে হাসে ঠিকি কিন্তু প্রতি রাতে একটা চাপা কষ্ট ওর মনে ধরে। আজকে এই রাতটা তো ও ইরাদের বুকে মুখ গুজেও কাটিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস? রুহি আজকে একদম একা। মেঘা অনেক চেষ্টা করেছে রুহির এই একাকিত্ব দূর করতে তবে এই একাকিত্ব ঘুচবে কি করে?রুহি যে হাজারো চেষ্টা করে ইরাদের জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারে না। এই লোকটা সব কিছুই যে রুহির মনে এক অন্যতম জায়গা দখল করে রেখেছে৷ রুহি ভেবে নিয়েছে ইরাদ না থাকলে নাই, ওর স্মৃতি গুলো জড়িয়ে নিজেকে ঘিরে রাখবে ও। আর কারো দরকার নেই এই জীবনে। সকালে নতুন হাসপাতালে ওর জয়েনিং শুরু হবে। এখন ঘুমিয়ে যাওয়াটাই ভালো ইরাদের টিশার্টটা নিজের বুকে নিয়ে রুহি ঘুমিয়ে গেলো। মাঝ রাতে হঠাৎ করেই রুহির ঘুম ভেঙে গেলো, গলা শুকিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেলো। কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো আশেপাশে ইরাদ আছে, রুহির কাছে আছে ও। পরক্ষণেই মনে হলো
” উনার টিশার্টটা কাছে তাই হয়তো বা মনে হচ্ছে উনিই আমার কাছে”
রুহি ঘুমিয়ে পড়লো আবারো।
.
সকাল বেলা রুহি ঘুম থেকে উঠে একবারে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে চলে এলো এবং এসেই পাপা কে খোঁজ করতে শুরু করে,
সামনে কাজের মেয়ে টুনি পড়তেই ওকে জিজ্ঞেস করে,
– পাপা কোথায়?
– বড় সাহেব ঘুমায়
রুহি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০টা বাজে,
– এই সময় পর্যন্ত কোনোদিন ও পাপা ঘুমায় না।
– না মানে আপা
টুনি আমতা আমতা করছে দেখে রুহি ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কিছু হয়েছে?
– কালকে বড় সাহেব এক্সিডেন্ট করসিলো আপা। এইজন্যই এখন ঘুমায়।
রুহি সাথে সাথে হকচকিয়ে উঠে
– এক্সিডেন্ট মানে?
– হুম আপা পায়ে ব্যাথা পাইসেন অনেক
– আমাকে ডাকিস নি কেনো?
– অন্য একজন সাহেব আসছিলো উনিই স্যারের সাহায্য করসিলেন আর উনি ডাক্তার ও ছিলেন তাই বড় সাহেব বলসে আপনাকে না জাগাইতে ঘুম থেকা।
রুহি খুব চিন্তায় পড়ে যায় ওর খালুর জন্য। কারণ এই মানুষটাকে ও নিজের আপন বাবার মতো ভালোবাসে। রুহি তাড়াতাড়ি করে তাকে দেখার জন্য ঘরে চলে যায়। রুহিকে দেখে সোবাহান সাহেব উঠে বসেন,
– আরে মা আয়
– পাপা তোমার পায়ে কি হয়েছে দেখি?
-ডান হাতটা খানিকটা ছিলে গেছে,
রুহি দেখলো ঠিকি বলেছে উনি,
– আমাকে ডাকো নি কেনো পাপা? কিছু মেডিসিন তো নিতে হবেই।
– মেডিসিন নিয়েছি তো।
এই যে দেখ
এই বলে রুহিকে মেডিসিন বক্স এগিয়ে দিলো সোবহান সাহেব।
রুহি দেখলো সব গুলো ঠিক মেডিসিনই দেওয়া হয়েছে তাকে এবং পায়ে ঠিক মতোই ব্যান্ডেজ করা আছে।
– পাপা এগুলো?
– যে আমায় প্রাণে বাচিয়েছিলেন সেই কাল আমার জীবনে দূত হয়ে এসেছিলেন
– মানে?
-একজন ডাক্তারের সাথে দেখা হয়েছিলো, আজকে তার কারণেই আমার জীবন বেচে গেছে।
– কিভাবে পাপা?
– কাল আমি যখন সিলেট ঢুকি আমার গাড়ির ড্রাইভার হার্ট এট্যাক করে তখন গাড়িতে আমি আর সেই ছিলাম তখন আমি এয়ারপোর্টের দিকে। ঠিক তখনই একটা বড় গাছের সাথে গাড়িটা বাড়ি খায়। তখন আমি বেড় হয়ে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। এমন সময় পেছন থেকে একটা বাস আসছিলো খেয়াল করিনি যদি ওই ভদ্র লোক না থাকতেন তাহলে আমি আজকে মারাই যেতাম সে আমার হাত টেনে ধরে যার ফলে মাটিতে পড়ে যায় অন্য সাইডে তখনই হাতটা ছিলে যায়। এবং উনি আমাদের ড্রাইভারকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে যান আমিও ছিলাম সেখানেই আমার ট্রিটমেন্ট এবং ড্রাইভারের ট্রিটমেন্ট ও করেন৷ এতো বড় একজন ডাক্তার উনি, উনি ঢুকার সাথে সাথে পুরো হাসপাতাল ভরে তাকে সালাম দেওয়া শুরু করে গিয়েছিলো। নেহাৎ একজন ভালো মানুষ, বিন্দুমাত্র গরিমা নেই তার মনে তার চেহারায় তা স্পষ্ট ফুটে উঠছিলো। এবং রাতে সেই আমাকে বাড়ি দিয়ে গিয়েছিলেন।
– আচ্ছা পাপা আমি খাবার পাঠাচ্ছি, তুমি খাবার খেয়ে এখন ঘুমাও, আজকে পুরো রেস্টে থাকবে। আর আমাদের ড্রাইভার কোন হাসপাতালে আছেন?
– সিলেট মেডিকেলে।
– আমার ও তো আজ থেকেই জয়েনিং ওখানেই। তাকে আমি দেখবো তুমি চিন্তা করো না
– ঠিক আছে মা তুই খেয়ে তারপর যাস কিন্তু।
-ওকে পাপা।
রুহি মনে মনে আল্লাহ কে অনেক শুকরিয়া করলো আর সেই অচেনা ডাক্তারকেও। আজকে উনি ছিলো বলে দুটো প্রাণ বেচে গেলো। প্রথম দিন রুহির বেশ ভালোই কাটলো, ড্রাইভার সাহেব ও এখন ভালো আছেন। তাকে দেখে তো এলো রুহি কিন্তু কোন ডাক্তার চিকিৎসা করেছে তা জিজ্ঞেস করতে আর খেয়াল ছিলো না।
বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে এমন সময় এসব মনে পড়ে আর পাপার চকলেট পেস্ট্রি কেক খুব পছন্দ, আজকে পাপা যেহেতু বাসায় আছেন তাই সেক্ষেত্রে রুহির ইচ্ছে হলো আজ পাপার জন্য পাপার পছন্দের শপ থেকে কেক নিয়ে যাবে ও। যেই কথা সেই কাজ।
রুহি কেক নেওয়ার জন্য শপে গেলো, বেশ ভিড় ছিলো আজকে প্রায় দুটো রো তে ভাগ হয়ে অর্ডার করতে হচ্ছে সবকিছুই। রুহির একটা কেক পছন্দ হয়। ঠিক তার পাশে খুব সুন্দর করে একটা লাল কালারের কেকের মধ্যে
“2 yrs of Togetherness
I love you Baby” লিখা
রুহি কেকটা দেখে মুচকি হাসলো, নিশ্চিত কোনো কাপলের এই কেকটা যেহেতু তিন’দিন বাদে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। এমন সময় রুহি নিজের কেক নিয়ে কথা বলতে ব্যাস্ত এবং পাশ থেকে চিরচেনা কন্ঠে ভেসে এলো
– বিল টা কতো এলো?
আওয়াজটা শুনে রুহির কলিজা ধুক করে ওঠে,
রুহি পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে মনের ধারণাটাই ঠিক, পাশের ছেলেটা ইরাদ৷ নীল একটা শার্ট পড়ে দাড়িয়ে আছে ও। রুহি ওকে দেখে তাকিয়েই আছে, এটা সত্যি কি মিথ্যা রুহির মাথায় আসছে না।
পাশ থেকে ইরাদ রুহিকে দেখে নিজেও অবাক হয়ে যায়। রুহি কোনো কথা বলছে না,
ইরাদ ও রুহিকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে৷ আজ তিন বছর পর এই চেহারাটা ইরাদ কত কাছ থেকে দেখছে। ওদের ঘোর ভেঙে গেলো ওয়েটারের কথায়।
-ম্যাম আপনার বিল ১৫৪০টাকা
রুহি টাকাটা দিয়ে ইরাদকে দেখে আর কিছু বললো না,
– রুহি কেমন আছেন?
রুহি খুব কষ্টে নিজের চোখের জল আটকে বললো,
-ভালো, আপনি?
– আমিও ভালো আছি
– সিলেটে?
– হুম কাজে এসেছি বাংলাদেশে কিছুদিন হলো
– আপনি?
– আমিও কাল এসেছি
– বিয়ে করেছেন?
ইরাদের এমন প্রশ্ন রুহি একদম এক্সপেক্ট করে নি৷ কিছুটা হকচকিয়ে উঠে ও। ইরাদের কেকটা দেখে রুহির খুব খারাপ লাগে। কেনো যেনো যেই মানুষটার জন্য ও এভাবে একা জীবন পার করে যাচ্ছে তাকে বলতেও ইচ্ছা করলো না,
” না করিনি বিয়ে, তোমার প্রতি আমার কোনো মোহ ছিলো না। ভালোবাসা ছিলো আছে আর হ্যাঁ থাকবে। আর হ্যাঁ আমি একা আছি, পেরেছি তোমায় ছাড়া নিজেকে গুটিয়ে নিতে”
তাই রুহি বললো,
– হুম বিয়ে করেছি। আচ্ছা আমি আসি আজকে একটু তাড়া আছে।
এই বলে রুহি প্রস্থান করে আর এক মিনিট ও না দাড়িয়ে।
আর এদিকে প্রায় তিন বছর পর ইরাদ বাংলাদেশে ফিরেছে। রুহির চলে যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো ইরাদ,
” হুম বিয়ে করেছি। “
কথাটা বারবার কানে বারি খাচ্ছিলো ইরাদের, কলিজার ভিতরটা কেমন যেনো লাগতে শুরু করে। এক হাহাকার এক রাশ শূন্যতা ঘিরে ধিরে মনের মাঝে।
(চলবে…)