
কেয়া পায়েলের পিক
অরোনী তোমার জন্য
পর্ব ১৯
লিখা- Sidratul Muntaz
অরোনী মাত্র তিনদিন নিজের বাপের বাড়ি অবস্থান করেছিল৷ আর এই তিনদিনেই শ্বশুরবাড়িতে বিভিন্ন অঘটন ঘটে গেছে। দীপ্তি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে৷ কিন্তু মাহথীরকে ফেলে গেছে। দুইদিনের মধ্যে রাহাত বাড়ি না ছাড়লে সে ডিভোর্স পেপার পাঠাবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চলছে নীরব ঝগড়া। মাহাথির এখন সারাদিন দাদীর কোলে বসে কাঁদছে। কথায় কথায় বলছে,” মা যাবো।” অবস্থা খুবই গুরুতর।
এর চেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হলো আজ সকালে রুবায়েত এসেছিল এই বাড়িতে। উদ্দেশ্য নাকি রুমার সাথে দেখা করার কিন্তু সবাই জানে রুমা নয়, রুবায়েতের মূল উদ্দেশ্য ছিল অরোনী। এই বাড়িতে পা রাখার মতো বিরাট বড় দুঃসাহসটা রুবায়েত আবার করেছে। রাফাত তার আগমনের খবর জানতে পেরে অফিস থেকে ছুটে এসেছিল আজ। কাঁচা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে রুবায়েতকে চোরের মতো পেটাতেও চেয়েছিল। কিন্তু রুমা পা ধরে কেঁদেছিল বলে রক্ষা। নাহলে আজ রুবায়েত অবশ্যই হসপিটালে যেতো।
অরোনী বাড়ি ফিরে রিতুর কাছে এসব জানতে পেরেছে। তার এখন মাথাটা ভনভন করছে। রাফাত অফিস থেকে ফেরার সময় অরোনীকে এখানে নিয়ে এসেছিল। আপাতত সে গোসল করছে। অরোনী ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখল৷ এই সবকিছুর মধ্যে ভালো যেটা হয়েছে তা হলো, অরোনী শাড়িটা ফেরত পেয়েছে। রুমা নিজে এসে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে শাড়ি দিয়ে গেছে। অরোনী বুঝতে পারছে না এটা কিভাবে হলো! তবে রুমার মতো মেয়ে ক্ষমা চেয়েছে এটাই আশ্চর্য ব্যাপার।
রাফাত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অরোনীকে দেখল। আর স্তম্ভিত হয়ে গেল। রাত-বিরাতে অরোনী জামদানি শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে পরীর চেয়েও দশগুণ সুন্দর লাগছে। রাফাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরেই তার চোখ ধাঁধিয়ে এলো। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলো। অরোনী মিষ্টি হেসে বলল,” কেমন লাগছে আমাকে?”
রাফাত খুব কষ্টে কয়েক শব্দ উচ্চারণ করল,” দূর থেকে তো বুঝতে পারছি না৷ আরেকটু কাছে এসো। ভালো করে দেখে বলছি।”
অরোনী ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল,
” খালি ছোঁয়ার ধান্দা!”
” ধান্দা কেন হবে? অধিকার বলো!”
” ইশ, আসছে আমার অধিকারওয়ালা। শোনো, এই শাড়ি আমি পেয়েছি তাহসিনের বুদ্ধিতে। তাই ঠিক করেছি শাড়ি পরে তাহসিনের সাথে আড্ডা দিবো। আমার কিছু বইও লাগবে। তাহসিনের থেকে আনবো।”
” তাহসিনের থেকে বই আনার জন্য শাড়ি পরে কেন যেতে হবে? শাড়ি না পরলে কি তাহসিন তোমাকে বই দিবে না?”
” অবশ্যই দিবে। কিন্তু শাড়ি পরেছি জেসচারের জন্য। সুন্দরী ভাবী বলে কথা! একটা ব্যাপার আছে। তুমি বুঝবে না।”
অরোনী সুন্দরমতো বের হয়ে যাচ্ছে। রাফাত চেঁচিয়ে বলল,” আন্টি, অরোনী আমাকে পানি দিচ্ছে না।”
অরোনী থতমত খেল। শারমিন লিভিংরুমে বসেই হাঁক ছাড়লেন,” কি দিচ্ছে না?”
” পানি চেয়েছিলাম এক গ্লাস। কিছুতেই দিচ্ছে না।”
রাফাতের ঠোঁটে দুষ্টমীর হাসি। অরোনী রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। আজ তাদের সাথে শারমিন আর অথৈও বেড়াতে এসেছে। সামনে ঈদ সেই উপলক্ষ্যে আসা। তাছাড়া অথৈ এরও মনখারাপ ছিল। এখানে এসে যদি সবার সাথে মিশে মন-মেজাজ ভালো হয়! শারমিন দরজার কাছে এসে বললেন,” সমস্যা কি তোর? এক গ্লাস পানি পর্যন্ত ছেলেটাকে খাওয়াতে পারছিস না? এমন পটের বিবি সেজে ঘুরে না বেড়ালেই কি চলবে? স্বামীর সেবা করা স্ত্রীর দায়িত্ব। যা পানি এনে দে।”
অরোনী বিড়বিড় করে বলল,” এমন শয়তান স্বামীর আবার সেবা!”
শারমিন রেগে বললেন,” একটা চড় দিবো। শয়তান মানে কি আবার? কানে ধর! কানে ধরে ওর কাছে ক্ষমা চা। বল আর এমন ভুল হবে না।”
অরোনীর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। বিস্ফোরিত গলায় বলল,” মা এসব কি বলছো? আমি ক্ষমা চাইবো?”
” নিশ্চয়ই চাইবি। স্বামী পানি চাইলে পানি দিস না। আবার শয়তান বলে গালি দিস। এসব কোনো ভদ্র মেয়ের আচরণ? তাড়াতাড়ি ক্ষমা চা। নাহলে কিন্তু আসলেই থাপ্পড় খাবি।”
অরোনী অসহায় দৃষ্টিতে রাফাতের দিকে তাকালো। রাফাতের হাসি পাচ্ছে খুব। হাসি সামলাতে বেগ পেতে হলো। মুখ গম্ভীর রাখতে হলো। অরোনী থমথমে গলায় বলল,” স্যরি।”
শারমিন আবারও ধমক দিলেন,” স্যরি কি আবার? ভালো করে ক্ষমা চা। আমার বাসা থেকে দেখে আসছি তুই ছেলেটার সাথে কি পরিমাণ বেয়াদবি করেছিস। সবকিছুর জন্য একেবারে ক্ষমা চাইবি। কানে ধর আগে। তারপর বল, এমন আর হবে না। ক্ষমা করে দাও।”
অরোনী কানে হাত রেখে বলল,” এমন আর হবে না। ক্ষমা করে দাও।”
রাফাত সরলমুখে বলল,” ইটস ওকে। এবার অন্তত পানিটা নিয়ে এসো৷ তেষ্টা পেয়েছে খুব।”
শারমিন কঠিন গলায় বললেন,” যা পানি নিয়ে আয়।”
অরোনী রাগে গজগজ করে পানি আনতে গেল। ফিল্টার থেকে পানি ঢেলে এনে ঘরে ঢুকতেই রাফাত দরজা আটকে দিল। অরোনী বলল,” নাও পানি। খাওয়ার জন্য তো মরে যাচ্ছিলে।”
রাফাত পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলল,” থ্যাঙ্কিউ। “
অরোনী রাগে জ্বলছে। ক্ষীপ্ত গলায় বলল,
” মায়ের সামনে আমাকে অপমান করা কি খুব দরকার ছিল?”
রাফাত খুব আন্তরিক গলায় বলল,” স্যরি জানপাখি। আই লভ ইউ।”
” খবরদার আমাকে ধরবে না। ঘুষি মারবো।”
” আন্টি..”
রাফাত আবারও ডাকতে নিচ্ছিল। অরোনী সাথে সাথে রাফাতের মুখ চেপে ধরে বলল,
” আবার কেন ডাকছো?”
” তুমি আমাকে কিভাবে ঘুষি মারবে সেটা আন্টিও দেখুক!”
” করে যাও। যতদিন মা আছে ইতরামি করে যাও। মা চলে যাওয়ার পর আবার সোফায় শোওয়াবো তোমায়। তখন দেখো কেমন লাগে! অরোনীর সাথে পাঙ্গা নেওয়ার মজা বুঝবে।”
রাফাত অরোনীর হাত দু’টো চেপে ধরে পিঠের পেছনে আটকে কাছে এসে বলল,” সোফায় তো নিশ্চয়ই শুবো। কিন্তু তোমাকে সাথে নিয়ে।”
” ইশ, আমি তোমার সাথে সোফায় শুবো না।”
” ঠিক আছে। তাহলে বিছানাতেই..”
” চুপ। আরেকটা শব্দ উচ্চারণ করলে কিন্তু..”
অরোনী নিজেই আর কিছু উচ্চারণ করতে পারল না। রাফাত তার মুখ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। যেভাবে সবসময় বন্ধ করে দেয়।
রাবেয়া এমনভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছেন যেন বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। দরজা ধাক্কানোর শব্দ খুব জোরে হলেও কণ্ঠ স্থির। অনেকটা আদুরে গলায় ডাকছেন,” অরোনী, একটু বের হও তো মা।”
অরোনী ধড়মড় করে শোয়া থেকে উঠে বসল। রাফাত বলল,” মা এইসময় দুইতলায় কি করছেন?”
” মনে হয় আমার মায়ের সাথে গল্প করতে এসেছিলেন।”
” তাহলে তোমাকে কেন ডাকবেন?”
” এখানে বসে আমি কিভাবে জানবো যে কেন ডাকছেন? আগে তো দরজা খুলতে হবে। ছাড়ো।”
রাফাত একটু করুণ স্বরে বলল,” শোনো, মা যদি আবার তোমাকে সিনেমা দেখার জন্য নিচে যেতে বলে তুমি কিন্তু যেও না। বলবে তোমার শরীর খারাপ লাগছে। প্লিজ।”
রাফাত এমন অনুরোধ করে বলল যে অরোনীর খুব হাসি পেয়ে গেল।
দরজা খোলার পর দেখা গেল রাবেয়া মাহাথিরকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মাহাথির খুব কাঁদছে। অরোনী প্রশ্ন করল,” ওর কি হয়েছে মা?”
” ওর মন খুব খারাপ। মা নেই যে। বার-বার মায়ের কথা বলে কাঁদছে। রাহাতও অফিস থেকে ফিরেনি। নাকি ফিরে আবার বউয়ের বাপের বাড়ি গিয়ে বসে আছে কে জানে? কিছুই বুঝতে পারছি না। বাচ্চাটাকে নিয়ে আমি পড়েছি মহা ঝামেলায়। আমার কাছে থাকতেই চাইছে না।”
” আহারে, মাহাথির বাবু। তুমি আমার কোলে আসবে?”
মাহাথির সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে অরোনীর কোলে চলে এলো। অন্যসময় হলে কখনোই আসতো না। অরোনী ভেবেছিল মাহাথির বুঝি তাকে অপছন্দ করে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে খুবই পছন্দ করে। তাহলে আগে কোলে আসতে চাইতো না কেন? নাকি অরোনীর কোলে এলে দীপ্তি মারতো বলে!
রাবেয়া হাসি মুখে বললেন,” একটু ঘুম পাড়াতে পারো নাকি দেখো। ছেলেটা আজ সারাদিন ঘুমায়নি। খালি কেঁদেছে। শরীর ক্লান্ত আছে এখন। দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে।”
” আপনি কোনো চিন্তা করবেন না মা। মাহাথির আজরাতে আমার কাছে থাকুক। আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমান।”
” ঠিক আছে মা। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।”
রাবেয়া খুশি হয়ে চলে গেলেন। অরোনী দরজা আটকে মাহাথিরকে নিয়ে বিছানায় বসল। রাফাত চিন্তিত কণ্ঠে বলল,” ভাইয়া-ভাবী কি শুরু করেছে আমি বুঝতে পারছি না। এতোটুকু একটা বাচ্চাকে ফেলে দু’জনই গায়েব। এটা কেমন কথা?”
অরোনীর খুব আনন্দ লাগছে। মাহাথির আজরাতে তার কাছে থাকবে এই ব্যাপারটাই তাকে আনন্দ দিচ্ছে। অরোনীর যে বাচ্চা-কাচ্চা খুব পছন্দ তা না। কিন্তু মাহাথিরকে তার ভালো লাগে। কি জানি? হয়তো রাফাতের মতো দেখতে বলেই! অরোনী খুশি খুশি কণ্ঠে বলল,” সমস্যা নেই। আজরাতের জন্য না হয় ও আমাদের কাছেই থাকুক।”
” তুমি ওকে সামলাতে পারবে সারারাত?”
” কেন পারবো না?”
” যদি কল ছেড়ে দেয়, কি করবে?”
” কল ছেড়ে দেয় মানে কি?”
” মানে পি করার কথা বলছি।”
” আচ্ছা সমস্যা নেই। পেম্পার্স আছে তো।”
” একটা বাচ্চার সারারাত তিন-চারটা পেম্পার্স লাগে। এক পেম্পার্স দিয়ে তো কিছু হবে না।”
” তাহলে এখন উপায়?”
” দাঁড়াও ব্যবস্থা করছি।”
রাফাত মেট্রেসের নিচ থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ বের করল। সেটা মাহাথিরের শোবার জায়গায় রাখল। তারপর অরোনীর একটা পুরনো শাড়ি ছিঁড়ে কয়েক টুকরো বানালো। এগুলো কাঁথার কাজে লাগবে। অরোনী হেসে বলল,” বাহ, বাহ, ভালোই তো বুদ্ধি তোমার। সবধরণের পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করে ফেলতে পারো। অবশ্য এক্সপেরিয়েন্স থাকা উচিৎ! ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।”
রাফাত হাসল। অরোনী মাহাথিরকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে ফেলল। এই প্রথম কোনো বাচ্চা তার কোলে ঘুমিয়েছে। এর আগেও জারাকে সে অনেকবার কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জারা তার কোলে ঘুমাতোই না৷ শেষমেষ মায়ের কোলে গিয়েই ঘুমাতো। মাহাথিরকে বিছানায় শুয়িয়ে তার মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল অরোনী। কি নিষ্পাপ, কোমল একটি চেহারা। অরোনীর ইচ্ছে করছে বার-বার চু/মু দিতে। রাফাত বলল,” ঘুমিয়েছে?”
” হুম।”
” তাহলে এবার দয়া করে আমার দিকে একটু তাকাও।”
আবেদন শুনে অরোনী হেসে ফেলল। রাফাতের দিকে ঘুরে বলল,” বলো।”
রাফাত অরোনীকে চু/মু দিল। সেই চু/মুর শব্দেই হোক কিংবা অন্যকোনো কারণেই হোক, মাহাথিরের ঘুমটা ভেঙে গেল। সে নড়ে-চড়ে উঠেই মুখ ভেঙে কাঁদতে শুরু করল। রাফাত বিরক্ত গলায় বলল,” ধূর শালা!”
অরোনী অবাক হয়ে তাকাল।
” ভাইপোকে কেউ শালা বলে?”
রাফাত তিরিক্ষি শব্দে বলল,
” শালার ভাইপো।”
অরোনী মাহাথিরকে আবার ঘুম পাড়ালো। কিন্তু এবার মাহাথির অরোনীর শাড়ি হাতের মুষ্টিতে ধরে ঘুমিয়ে গেল। রাফাত দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে বলল,”দেখেছো কি চালাক? একটা দিতে মন চাইছে এখন।”
অরোনী হাসতে হাসতে বলল,” বাচ্চা মানুষ। একা শুতে ওর ভয় লাগবে না? প্লিজ আজকে অন্তত একটু সেক্রিফাইস করি আমরা।”
” একা শুতে হচ্ছে কোথায়? শুধু আমার দিকে একটু ফিরবে। এটাও সহ্য হচ্ছে না বেটার।”
অরোনী খিলখিল করে হাসছে। তার খুব মজা লাগছে। মনে হচ্ছে মাহাথির তাদেরই বাচ্চা। রাফাত অরোনীর শাড়িটা সরিয়ে মাহাথিরের হাতে দিয়ে দিল। আর অরোনীকে নিজের কাছে টেনে আনল। অরোনী বলল,” এটা কি হচ্ছে?”
” চালাকি। তোমার শাড়ি ওইদিকে থাকুক। ভাববে তুমি ওর পাশে শুয়ে আছো। আর কাঁদবে না।”
” দারুণ বুদ্ধি।”
” আমার বুদ্ধি তো দারুণ হবেই।”
কিন্তু মাহাথিরকে বেশিক্ষণ সামলে রাখা গেল না। সে ঠিক বুঝে ফেলল। শাড়ি সরিয়ে আবার কাঁদতে লাগল। অরোনীকে আশেপাশে খুঁজতে লাগল। রাফাত রেগে মাহাথিরের দিকে তাকিয়ে আছে। অরোনী হেসে বলল,” তোমার ভাইপো না? তাই তোমার মতোই বুদ্ধি।”
রাফাতের মেজাজ খুব খারাপ হলো। অরোনী মাহাথিরের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। এবার মাহাথির চুপ।
অথৈ আর শারমিনকে গেস্টরুমে শুতে দেওয়া হয়েছে। গেস্টরুমটা বিশাল বড়। একপাশে বিছানা, আলমারী। অনেকটা বেডরুমের মতো। আরেকপাশে সোফা আর বুকশেলফ। একদম লিভিংরুমের মতো। রিতু শারমিনদের বিছানা করে দিল। মশারি খাটিয়ে দিল। অথৈ এর মন এখন কিছুটা ভালো। সন্ধ্যাটা তার আজ ভালোই কেটেছে রিতু আর উর্মির সাথে গল্প করে। নিলিমাও খুব মিশেছে অথৈ এর সঙ্গে।
মানুষে গমগম করা এই বাড়িটিতে আসার পর হাসিবের কথা তার একদম মনে পড়েনি। কিন্তু মায়ের সঙ্গে যখন ঘুমাতে এলো তখন মনে পড়ল। এখন আবার একটু একটু খারাপ লাগছে। তারা যখন এই রুমে প্রথম এসেছিল তখন চশমা পরা একটা ছেলেকে দেখেছিল বই পড়তে। এখন অবশ্য ছেলেটা নেই। রিতু তাদের সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে চলে গেল। একটু পরেই ছেলেটা আবার ঘরে এলো। অথৈ ছেলেটিকে দেখে একটু চমকে গেল। এতোরাতে সে কেন এসেছে?
তাহসিনের হাতে একটা খোলা বই। সে শারমিনের কাছে এসে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলল,” আন্টি, আপনারা তো এইখানে ঘুমাচ্ছেন। আমি যদি পর্দার ওই পাশে ডিম লাইট জ্বালিয়ে একটু পড়াশুনা করি তাহলে কি অসুবিধা হবে?”
শারমিন দ্বিগুণ বিনয়ের সঙ্গে বললেন,” একদম না। কিসের অসুবিধা? তুমি পড়ো।”
” আসলে আন্টি, অসুবিধা হলে বলতে পারেন। তাহলে আমি লিভিংরুমে চলে যেতাম। কিন্তু সেখানে আলো জ্বালানো থাকলে আবার রিতু আপুর ঘুমাতে কষ্ট হয়ে যাবে। ওর রুমের দরজা নেই তো। লিভিংরুমের আলো সরাসরি ওইখানে পড়ে।”
” আরে আমি বললাম না, কোনো অসুবিধা নেই। তুমি পড়ো, পড়ো যাও। আচ্ছা, কিসে পড়ো তুমি?”
” এইচএসসি পাশ করেছি। এইবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।”
” নিশ্চয়ই দোয়া করবো। খুব মন দিয়ে ভালোমতো পড়াশুনা করবে। ভালো কিছু হবে।”
” ধন্যবাদ আন্টি।”
তাহসিন চলে গেল। যাওয়ার আগে পর্দা ভালোমতো টেনে দিয়ে গেল। তারপর ডিমলাইট জ্বালালো। দুইবার জিজ্ঞেস করল,” আলোতে সমস্যা হচ্ছে না তো আন্টি?”
শারমিন দুইবারই উত্তর দিলেন,” কোনো সমস্যা নেই।”
অথৈ পুরো ব্যাপারটা দেখছে। তার বিরক্ত লাগছে। শারমিন আগ্রহী কণ্ঠে বললেন,” ছেলেটা কি ভালো দেখেছিস? সবাইকে নিয়ে চিন্তা করে। অরোনীর মুখে ওর অনেক প্রশংসা শুনেছি। সারাদিন নাকি পড়াশুনা করেই কাটায়। এইচএসসিতে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। এমন ছেলে থাকলে মা-বাবার আর কিছু লাগে না। আবার ব্যবহারও কত সুন্দর!”
অথৈ বুঝতে পারছে না মা কেন এতো প্রশংসা করছে ছেলেটার! অথৈ এর কাছে তো ছেলেটিকে খুব বিরক্তিকর মনে হলো। এখানে দাঁড়িয়ে সে দুইমিনিট মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু একবারও অথৈ এর দিকে ফিরে তাকায়নি। কেন? অথৈ কি ফেলনা নাকি তার দিকে তাকালে চোখে ডায়রিয়া হবে? ছেলেটা এমন ভাব করল যেন অথৈ বলে এখানে কেউ নেই। খুবই অস্বস্তিকর ব্যাপার। এমন ভাবওয়ালা ছেলে সে কখনোই দেখেনি।
পরদিন ছিল শুক্রবার। রাহাত দীপ্তিকে নিয়েই বাড়ি ফিরল। দীপ্তি কেঁদে-কেটে অস্থির। ননদদের নামে বিচার দিয়েছে স্বামীর কাছে। রাহাত নিলিমা, রুমা, তানজিমা আর উর্মিকে ধমক দিয়ে দীপ্তির কাছে মাফ চাওয়ালো। কারণ তারা দীপ্তির পরিবার নিয়ে ঠাট্টা করেছিল। এতোকিছুর পরেও দীপ্তির রাগ কমল না। রাফাতকেও নাকি মাফ চাইতে হবে। নাহলে সে রাফাতের সাথে কথা বলবে না৷ রাফাত স্পষ্ট জানিয়ে দিল,” কথা না বললে নেই। মাফ চাওয়ার মতো কোনো অপরাধ আমি করেছি বলে মনে হয় না। যদি করতাম তাহলে বলতে হতো না। আমি নিশ্চয়ই মাফ চাইতাম।”
রাবেয়া দীপ্তিকে খুব তেল মালিশ করলেন। শত হলেও বড়লোক বাড়ির মেয়ে। তার জন্য সাত খুন মাফ। উর্মি ছাড়া বাকি ননদরা এতোকিছুর পরেও দীপ্তির বলতে পাগল।
তাদের প্রধান সমস্যা অরোনীকে নিয়েই। বিশেষ করে রুমা অরোনীকে দেখলেই হিংসায় জ্বলে-পুড়ে কয়লা হতে থাকে। তাই তারা একজোট হয়ে অরোনীকে জ্বালানোর জন্যই ইচ্ছে করে দীপ্তির সাথে ভালো ব্যবহার করে। বড় ভাবী থুতু ফেললে সেটাও তাদের কাছে সুন্দর। দীপ্তি তার মাকেও সাথে করে বেড়াতে এনেছে। সবাই তাকে সাদরে আপ্যায়ন করল।
অথচ অরোনীর মাও এই বাড়িতে আছেন। দীপ্তির মাকে মাথায় তুলে সকলে যেভাবে নাচছে শারমিনের সাথে তেমন কিছুই করা হয়নি। দুপুরে খাওয়ার সময় রাবেয়া দীপ্তির মায়ের পাতে মাংস তুলে দিলেন। সব হাতে হাতে এগিয়ে দিলেন। খোশমেজাজে গল্প করলেন। শারমিনের সাথে তেমন কিছুই করলেন না। যেন তিনি এই বাড়ির অতিথি নন। দীপ্তির মা-ই কেবল অতিথি। আসলে যে যতই অন্যায় করুক, টাকার কাছে সব ঢাকা পড়ে যায়। এই হলো আমাদের সমাজের নিয়ম।
শারমিন বিকালে অরোনীর ঘরে এসে জানালেন, তিনি সন্ধ্যায় চলে যেতে চান। রাফাত যেন তাদের পৌঁছে দেয়। অরোনীর মনটা প্রচন্ড খারাপ হলো। সে জানে মা কেন চলে যেতে চাইছেন! গতরাতে যে মাকে গেস্টরুমে থাকতে দেওয়া হয়েছিল সেটা অরোনী জানতো না। যদি জানতো তাহলে অবশ্যই মাকে নিজের রুমে এনে রাখতো। প্রয়োজনে নিজে বাহিরে চলে যেতো।
আহারে, শ্বশুরবাড়িতে মাকে যোগ্য সম্মানটুকুও দেওয়া গেল না। এই বাড়িটা যদি সম্পূর্ণ তার নিজের বাড়ি হতো তাহলে অরোনী মাকে রানীর আসনে বসিয়ে রাখতো। সেও চায় না মা এখানে থেকে আর অপমানিত হোক। অরোনী সাথে সাথেই রাফাতকে বলল মাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য। রাফাত হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল। সে সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দিল। এতে যদি সকলের মন ভালো হয়। অরোনী আর অথৈ সেজে-গুজে তৈরী হলো।
রাফাত গাড়ি বের করল। এসব দেখে রাবেয়া বায়না ধরলেন তিনিও যাবেন। ঘুরতে যাওয়ার শখ তাঁর ষোলআনা। রাবেয়ার সাথে বাকিরাও লাইন ধরল। এবার মনে হচ্ছে বাড়ির সব সদস্যকে নিয়ে যেতে হবে। সবাই যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। সিদ্ধান্ত হলো সবাই ‘ঠিকানা’ রেস্টরন্টে যাবে। এক গাড়িতে সবার জায়গা হবে না। তাই বড় দু’টো মাইক্রো ভাড়া নেওয়া হলো। রাফাত ঠিক করেছিল অরোনীকে নিজের পাশে বসাবে।
তারপর মাঝরাস্তায় তারা নেমে গিয়ে আলাদাভাবে রিকশায় করে আসবে। এতে রোমান্টিক রিকশা রাইডিংও হবে আবার কিছু সুন্দর সময়ও কাটবে। অরোনী রাস্তার ধারে ফুচকা খাবে। রাফাত তাকে ছবি তুলে দিবে। কিন্তু সব আশায় পানি ঢেলে রাবেয়া অরোনীকে নিয়ে অন্য মাইক্রোতে উঠে পড়লেন। এমনভাবে সবার সামনে অনুরোধ করলেন যে অরোনী নিষেধও করতে পারল না।
রাফাত গাড়িতে উঠে অরোনীকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ফোনে টেক্সট করল। অরোনী তখন জানাল, সে অন্য মাইক্রোতে চলে গেছে। রাফাতের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।
চলবে………
viagra price viagra vs levitra vs cialis sildenafil citrate tablets
drugs not to take with viagra viagra cialis or levitra sildenafil price cvs
do you need a prescription for cialis viagra cialis does cialis make you bigger
ivermectin shampoo ivermectin toxicity in dogs heartgard ivermectin dose
ivermectin cream for guinea pigs ivermectin paste for horses generic ivermectin injectable
Good ranking of https://top-gambling-affiliate-programs.com/ casino and sports betting affiliate programs, Super affiliate programs only with us, review, rating