- আত্মীয় স্বজন নিয়ে স্ট্যাটাস।
- পরিস্থিতি নিয়ে স্ট্যাটাস।
- মানুষ নিয়ে স্ট্যাটাস।
- মানুষ চেনা নিয়ে স্ট্যাটাস।
- মানুষ চিনতে পারলাম না।
১.আত্মীয় স্বজন নিয়ে স্ট্যাটাস।
কুমিল্লা, চাদপুরের কিছু অঞ্চলের মানুষ বেড়াতে খুবই পছন্দ করে।
অনেক দূর সম্পর্কের আত্বীয় বাড়িও তারা ছেলেমেয়ে নিয়ে অনায়াসে চলে যায়। আত্মীয়তার সম্পর্ককে তারা বেশ গুরুত্ব দেয়। মেহমানদারীতেও তারা বেশ সচেতন।
আমার শ্বাশুড়ির বাপের বাড়ি চাঁদপুর। কখনও যাওয়া হয়নি। শ্বশুড়বাড়ি বাড়ি থেকে প্রায়ই তাগাদা আসে সেখান বেড়াতে যাওয়ার জন্য। সময়ের অভাবে যাওয়া হয়না।
একবার ঈদে শ্বশুরবাড়ি গেছি, সবাই চেপে ধরলো, চল চাঁদপুর থেকে ঘুরে আসি। সবার অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হলো। আমার শালা শালি বেজায় খুশি হলো,যখন আমি রাজি হলাম।
একদিন সকাল বেলা নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চে রওনা হলাম চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। আমার স্ত্রী গেল না, শালা শালি ভরসা।
সেখানে আমার মামাশ্বশুর থাকেন।
চাঁদপুর স্টেশনে নেমে ইলিশ মাছের আড়তে গেলাম। এতো ইলিশ মাছ বাপের জম্মে দেখিনি। অরিজিনাল পদ্মার ইলিশ দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না, অনেকগুলো মাছ কিনে ফেললাম।
মামা শ্বশুরের বাড়ি চাঁদপুর শহর থেকে একটু ভিতরে, গ্রামের দিকে। রাস্তাঘাট খারাপ। গাড়ি গ্রামে ঢুকে না,অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হলো। রাস্তা ভাংগা হেঁটে যেতে অসুবিধা। এক লোকের সাথে রাস্তায় পরিচয় হলো,সে আমাদের এগিয়ে নিতে এসেছে। সাথে মাছের ব্যাগ, নানা ফল ফলাদির পোটলা থাকায় আমাদের বেগ পেতে হচ্ছিল।
আমাকে পেয়ে মামা শ্বশুর বেজায় খুশি হলেন। তিনি বললেন, জামাই, ইলিশ মাছ বাদ, তোমাকে আমার পুকুরের টাটকা মাছ খাওয়াবো। মুখে লেগে থাকবে।
তক্ষুনি লোকজন পাঠালেন তাদের পুকুর থেকে মাছ ধরে আনার জন্য।
তিনি একজন বড় কৃষক। কোনকিছুই কিনে খেতে হয়না। আমাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করলেন। রাতে কুলি পিঠা বানানো হলো, এমন মজাদার পিঠা জীবনে খেয়েছি কিনা মনে করতে পারলাম না। সকাল বেলা মামা শ্বশুর ঘুরে ঘুরে গ্রাম দেখালেন। তাদের ক্ষেত খামার দেখলাম। সাথে আছেন সেই লোক যিনি আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিলেন।
কাজ থাকায় পরের দিন-ই আমাকে ঢাকায় ফিরতে হবে, তাদের শত অনুরোধ সত্ত্বেও আরেকটি দিন থাকা গেল না। আমার শালা শালি দু,একদিন থাকার জন্য রয়ে গেলো। মামা শ্বশুর সেই লোককে আমার সাথে দিলেন পথ এগিয়ে দেওয়ার জন্য। ফিরতি পথে ধন্যবাদ দিলাম এবং বললাম সম্ভব হলে আমাদের বাসায় বেড়িয়ে যেতে।
ছয় মাস পর, একটা কাজে বেরুনোর সময় দেখি সেই লোক তার বউ আর দুই বাচ্চা নিয়ে আমাদের বাসায় উপস্থিত। এসেই ভাইজান বলে আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরলো, মনে হল শত জনম আগে থেকেই তার সাথে আমার পরিচয় আছে।
শত হলেও শ্বশুরবাড়ির আত্বীয়, কাজ ফেলে ছুটলাম বাজার করতে।
রাতে খাওয়ার টেবিলে খাচ্ছি আর গল্প করছি, সেই লোক কথা প্রসঙ্গে বলল, অনেক দিন হয় সে খাসির মাংস খায় নি। পরের দিন বাজারে দৌড়ে গেলাম খাসির মাংস আনতে। শ্বশুরবাড়ির লোক বলে কথা!
সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম, রাতে বাসায় ফিরে দেখি সেই মেহমান তখনও আছে। এক সাথে খেতে বসেছি, সে আবার জানালো,তার অনেক দিনের শখ,হাঁসের মাংস দিয়ে চিতই পিঠা খাবে।
কি আর করা!
পরের দিন সকালে বাজারে গিয়ে দুটো হাঁস কিনে আনলাম।
রাতে বাসায় ফিরে দেখি আমার সেই মেহমান হাঁসের মাংস দিয়ে আরাম করে চিতই পিঠা খাচ্ছে। আমি ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেছি, লক্ষ করলাম, গিন্নি নাক মুখ কুঁচকে আছে। আমি বললাম, ঘটনা কী?
গিন্নি তেজ দেখিয়ে বলল, হাঁসের লোম বাছতে গিয়ে আমি শেষ। আঙুল ব্যথা করছে। বাজারের নাম শুনলে পারো তো অজ্ঞান হয়ে যাও,নিজের পক্ষের আত্মীয় হলে ঠিকই বাজার করো,আমার পক্ষের আত্মীয় হলে আজকে কখনও বাজারে যেতে না। অন্য কাউকে পাঠাতে বাজার করতে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,আমার পক্ষের আত্মীয় মানে? তোমার পক্ষের আত্মীয় বলেই এত খাতির করছি। গিন্নি আকাশ থেকে পরলো, আমার পক্ষের আত্মীয় ! তোমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো বলে আমি ভাবলাম তোমাদের ঘনিষ্ট কোন আত্মীয় হবে!
আমি হেসে বললাম, তোমার মামা বাড়ির আত্মীয় আর তুমি চিন না? হাউ ফানি! গিন্নি এবার সত্যি অবাক হলো, আমার মামা বাড়ির আত্মীয় আর আমি চিনিনা! এতো আমার মামা বাড়ির আত্মীয় নয়।
সে তক্ষুনি তার মামা বাড়ি ফোন দিল।
তার মামা জানালো,সেই লোক তাদের কোন আত্মীয় নয়,তবে মাঝে মাঝে ফাইফরমাশ খাটে। তাদের গ্রামের লোক। সে লোককে তার মামা কিছু টাকা দিয়ে পাঠিয়েছিল আমাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য। এ পর্যন্তই ব্যাপার।
গিন্নি তিনদিন যাবৎ গাধার মতো খেটে এদের সেবা করছে আমার আত্মীয় ভেবে। আর আমি কামকাজ ফেলে আমার সব,চে অপছন্দের কাজ বাজার করছি শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় ভেবে!
কিন্ত এরা কীভাবে আমাদের বাসায় এলো?
গিন্নি গিয়ে সেই লোকের কাছে যা শুনলো,তা শুনে তার অজ্ঞান হবার জোগাড়! সেই লোক তাকে জানালো,আমার শালার কাছে থেকে সে ঠিকানা জেনে রেখেছিল। আমি ফিরতি পথে তাকে ধন্যবাদ দিয়েছি এবং তাকে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসার দাওয়াত দিয়েছি, নইলে তার ঠেকা পরে নাই কামকাজ ফেলে এখানে এসে পরে থাকার! অতি ভদ্রলোক বিধায় তিনি সেই দাওয়াত কবুল না করে পারেন নাই!
আমি স্ত্রীর ভয়ে দুইদিন বাসায় ফিরলাম না। প্রতিজ্ঞা করলাম, মরে গেলেও জীবনে কাউকে ধন্যবাদ দিবো না।
কখনোই না!
#হানিফ_ওয়াহিদ
২.পরিস্থিতি নিয়ে স্ট্যাটাস
# পরিস্থিতি #
আম্মা ফোন করে যেতে বললেন। কি কারণ তা বলেনি। আম্মার গলা খুব চিন্তিত লাগছিল। কি হতে পারে ভাবছিলাম।
বিকেলে গেলাম আম্মার বাসায়।
-“আম্মা কি হয়েছে?”
আম্মা বলল- রাফিনের চাকরি চলে গেছে দুই মাস হয়ে গেল।
আমি হা হয়ে আম্মার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। রাফিন আমার বড় ভাই।
-“দুইমাস ভাইয়ার চাকরি নেই আর আমি কিছু জানিনা?”
– তোকে বলিনি। কারণ এসব বলে তোকে আর চিন্তায় ফেলতে চাইনি। ভেবেছিলাম যদি চাকরি হয়ে যায় আবার…।
-এটা তুমি কি বললা আম্মা?
ভাইয়ার চাকরি চলে গেছে আর আমাকে জানাবা না?
-বাদ দে, এখন কথা হলো আমরা বাসা ছেড়ে দিয়েছি। আগামী মাসে আমি আর তোর আব্বা গ্রামের বাড়ি চলে যাব। তুইত জানিস আমাদের জমানো টাকা যা ছিল তা দিয়ে আর তোর আব্বা অফিস থেকে যা টাকা পেয়েছিল তা দিয়ে তোর বিয়ে দিয়েছি। এখন বাসা ভাড়া করে থাকার মত অবস্থা নেই। তার উপর কত্ত রকমের খরচ। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি গ্রামে চলে যাব।
-ভাইয়া এই কথা বলেছে?
আম্মা চুপ করে রইল। দেখ। ওই বা কি করবে। ওত আর এতো বেশি বেতন পেতনা যে অনেক টাকা জমানো আছে। তাছাড়া ওরওত একটা সংসার আছে। যা ছিল তা দিয়ে দুইমাসত চলল। তাছাড়া এই করোনাকালে কতদিনে আবার চাকরি হবে কে বলতে পারে। চেষ্টা ত করছে।
-ভাইয়া -ভাবী কোথায় থাকবে বাসা ছেড়ে দিলে?
-মিলির মার বাসায়।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। পরিস্থিতি মানুষকে কি করতে বাধ্য করে। ভাবীর বাবা নেই। এক ভাই বিদেশে থাকে। ভাবীর আম্মা একাই থাকেন। ভাবী হয়ত মার বাসায় থাকতে পারে। কিন্তু ভাইয়া!
আম্মা বলল, এখানে না থাকলে চাকরি খুঁজবে কিভাবে?
আমি কি বলব বুঝতে পারছিনা। আমার মাথা কাজ করছেনা।
আম্মা আব্বার বয়স হয়েছে। উনারা দু’জনেই প্রেশার, ডায়াবেটিসের রুগি। আব্বার আবার হার্টের সমস্যা। প্রতিমাসে ডাক্তার দেখাতে হয়। এই অবস্থায় উনারা গ্রামে গিয়ে কিভাবে থাকবে।
-আম্মা তোমরা আমার বাসায় চল।
আম্মা বলল, তা কি হয় মা? মেয়ের শশুর বাড়ি কেউ থাকে?
আমি তাকিয়ে আছি আম্মার দিকে। কি বলব বুঝতে পারছিনা। নিজেকে আমার কেমন যেন লাগছে। বুক চেপে কান্না আসছে। এই বিপদের দিনে বাবা মার পাশে দাঁড়াতে পারছিনা। আমিত চাকরি করিনা। আব্বা আম্মাকে বাসা ভাড়া করে রাখব কিভাবে।
আম্মা চা নিয়ে এলো। আব্বা বাইরে ছিল। আব্বাও এলেন। আব্বা আমার মাথায় হাত রেখে বলল, মন খারাপ করিস না মা। এই বয়সে আমরা এখানে থেকেইবা কি করব। তার চেয়ে গ্রামের খোলা মেলা পরিবেশেই ভাল থাকব।
আমি জানি এটা আব্বার মনের কথা না। সারা জীবন শহরে কাটাল। আর এখন?
আমি বললাম, আব্বা আমার বাসায় থাকলে কি হয়। ছেলের বাসায় যদি বাবা মা থাকতে পারে তাহলে মেয়ের বাসায় থাকতে পারবেনা কেন? ভাইয়ার চাকরি হলে আবার চলে এসো। সারা জীবনত আর চাকরি ছাড়া থাকবেনা।
আব্বা বলল দূর পাগলী, তা কখনো হয়? লোকে কি বলবে?
-লোকের কথা বাদ দাও। তোমরা আমার সাথে যাবা। গ্রামে আব্বার চিকিৎসা হবে কিভাবে?
আম্মা বলল, আমরা এসে তোর খালার বাসায় থেকে ডাক্তার দেখাব। তখন তোর বাসায় গিয়ে দেখা করে আসব।
আমি আর কিচ্ছু বললামনা। মনে মনে ভাবলাম সবুজ নিশ্চয়ই সব শুনলে আব্বা আম্মাকে যেতে দিবেনা।
আমি বাসায় ফিরে এলাম। আমার শাশুরের পাঁচতলা বাড়ি। সবুজ এক ছেলে। ওর দুই বোন বিয়ে হয়ে গেছে। আমার শশুর নেই। শাশুড়ি আমি আর সবুজ থাকি তিন তলায়। দু’তলায় থাকে ওর ছোট বোন। আর বাকী তলাগুলি ভাড়া দেওয়া।
রাতে সবুজ বাসায় এলে ওকে সব বললাম। ও শুনে বলল গ্রামে থাকলে সমস্যা কি। তাছাড়া তোমাদের বাড়িত অনেক সুন্দর। মাঝে মাঝে তুমি গিয়ে বেড়াতে পারবে।
আমি থ হয়ে সবুজের মুখের দিকে তাকিতে আছি। আমি আশা করেছিলাম সবুজ বলবে আব্বা আম্মাকে আমাদের বাসায় এনে রাখ।
রাত অনেক গভীর। সবুজ ঘুমাচ্ছে। আমি তাকিয়ে আছি ওর মোখের দিকে। এই এতো বড় বাড়ি, সবুজ সব আমার কেমন অচেনা লাগছে। সবাই, সব কিছু কেমন দূরের। আপন শুধু বাবা-মা। আমি যদি চাকরি করে আব্বা আম্মার দায়িত্ব নিতে পারতাম। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আব্বা আম্মার জন্য। সিদ্ধান্ত নিলাম কাল থেকে আমিও চাকরি খুঁজব। আব্বা আম্মার দায়িত্ব নিব।
সমাপ্ত।।
৩.মানুষ নিয়ে স্ট্যাটাস
বেইলী রোডের এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় সামনে ইফতারের জমজমাট বাজার। দামী দামী গাড়ি থেকে মানুষ নেমে হট্টগোল করে ইফতারি কিনছে। চারিদিকে অভিজাত দোকান গুলোতে নানা বাহারের ইফতার সাজানো আর দাম সেই রকম উচ্চমূল্যের । একটা খালি গায়ে ৬/৭ বছরের বাচ্চা ছেলে হাতে এক টুকরো বন রুটি ২/৫ টাকা ভিক্ষা চাইছিলো। দুই নাক দিয়ে অঝোরে পানি ঝরে যাচ্ছে, ময়লা প্যান্টা দড়ি দিয়ে লাগানো, চেইন টা ছেড়া। কারো তার দিকে তাকানোর সময় নেই। আমার কর্ম স্থল ছিলো নিকটবর্তী, নিজের ব্যাক্তিগত কাজে গিয়েছিলাম বেইলী রোডে । দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম মানুষের কর্মকাণ্ড, দেখে মনে হচ্ছিলো, কে বলে বাংলাদেশ গরীব! এখানে আকাশে বাতাশে উড়ছে টাকা। যারা পারছে তারা ধরছে আর উড়াচ্ছে আর যারা পারছেনা তারা প্যান্টের চেইন ছেড়া বাচ্চাটার মতো। বাচ্চাটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো, হতাশ কারন প্রয়োজনীয় ভিক্ষা পায়নি।
ধীরে ধীরে মানুষের ভীড় কমছে কারণ ইফতারের সময় চলে আসছে। বাচ্চা ছেলেটাকে হাতে গোনা ২/৩ জন কিছু ভিক্ষা দিয়েছে। মাগরিবের আযান দেওয়ার বেশ আগেই দোকানীর ইফতার আইটেম প্রায় শেষ। যা সামান্য পরে আছে তা নিজেদের জন্য তুলে রাখছে। পাশে একটা ভ্যানে টেম্পোরারি ইফতারির পশরা। তারো বিক্রি হয়েছে কিন্তু খুব বেশি নয় কারন বেশ কিছু বুট আর তেলে ভাজা তার ভ্যানের ঝুড়িতে পরে আছে। তার ক্রেতা মূলত সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মানুষ গুলো যাদের মাঝে আছে বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী, অফিসের পিয়ন বা সি এন জি/রিক্সা চালক, বাড়ির দাড়োয়ান। মাগরেবের আযানে অপেক্ষায় যে যার সাধ্যমতো ইফতারি সামনে নিয়ে বসেছে। ভ্যান ওয়ালা একটা পেপারে মুড়ি, ছোলা, বেগুনি মেখে ইফতারি বানিয়ে আশে পাশে অপেক্ষমান ২/৩ জন রিক্সাওয়ালা সহ বাচ্চা ছেলেটা কে ডাকলো তার সাথে খেতে। আযান দেওয়ার সাথে সাথে ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পেট গুলো তাদের জ্বালা মেটাচ্ছে। বাচ্চাটা খুব ধীরে ধীরে রাস্তার ফুটপাতে গোল হয়ে বসা মানুষ গুলোর সাথে খাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছিলো, এই সাধারণ খাবারগুলো কতোই না তৃপ্তিদায়ক।
খুব জানার ইচ্ছে থেকে তাদের ইফতারি খাওয়ার পরে, আমি ভ্যানওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, রিক্সাওয়ালারা বা ছেলেটা তার পূর্ব পরিচিত কিনা? ছোট করে, উত্তর দিলো, “না”। তাকিয়ে রইলাম লোকটার দিকে। মনে হলো আমি সত্যকারের ধর্ম আর মানবতা খুজে পেয়েছি এই গরীব ভ্যান ওয়ালার মাঝে।
৪.মানুষ চেনা নিয়ে স্ট্যাটাস
“ভার্সিটিতে পড়ে এমন একটা মেয়ে দেখা, যে মেয়েটা এখনো ভার্জিন আছে? আমি মেয়েদের হাটা দেখে বলে দিতে পারবো কোন মেয়েটা ভার্জিন আর কোন মেয়েটা ভার্জিন না। ভার্সিটিতে পড়ে কোন মেয়েকেই আমার ভার্জিন মনে হয় নি। ”
আমার বন্ধু তানবীরের মুখ থেকে এইকথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
-তার মানে তুই বলতে চাইছিস মেয়েরা ভার্সিটিতে উঠলেই তার ভার্জিনিটি হারায়?
“ অবশ্যই হারায়। বান্দা গরু যেমন একবার ছাড়া পেলে পুরো এলাকা দৌড়ে বেড়ায় তেমনি ভার্সিটিতে উঠার পর মেয়েরা স্বাধীনতা পেয়ে যা তা করে বেড়ায়। বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যায়, রাত বিরাতে আড্ডা মারে। যে মেয়ে বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার, সাজেক ট্যুরে যেতে পারে। রাতে ৯টা ১০টা পর্যন্ত আড্ডা মারতে পারে সেই মেয়েটা কিভাবে ভার্জিন থাকে আমাকে বল তো?”
আমি মুচকি হেসে তানবীরকে বললাম,
– তুই বন্ধু একদম ঠিক কথা বলেছিস। আমার খুব আফসোস হয় রে অর্পার জন্য
তানবীর অবাক হয়ে বললো,
“কোন অর্পা?”
– কেন তোর ছোট বোন।
“আমার ছোট বোনের জন্য তোর আফসোস হবে কেন?”
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
– আফসোস হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। আমার কোন ছোট বোন নেই। অর্পাকেই তো ছোট বোনের চোখে দেখেছি। তুই যখন কথাগুলো বললি তখন অর্পার কুকর্ম গুলো আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠলো।
তানবীর অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“মানে কি! আমার বোন আবার কি করেছে?”
আমি মনমরা হয়ে বললাম,
– তোর বোন তো রাজশাহী ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। তাছাড়া ফেসবুকে ছবি দেখলাম কয়েকদিন আগে তোর বোন বন্ধুদের সাথে সেন্টমার্টিন ঘুরতে গিয়েছিলো। মাঝেমধ্যে দেখি বন্ধুদের সাথে রাত বিরাতে গিটার বাজিয়ে গানও করে। এইবার অর্পা বাসায় আসলে ওর হাটা টা দেখে তুই নিশ্চিত হোস তো ও এখনো ভার্জিন আছে কি না। তুই তো আবার মেয়েদের হাটা দেখেই ভার্জিনিটি বুঝে যাস। আমার মনে হয় না অর্পা এখনো ভার্জিন আছে।
আমার কথা শুনে খেয়াল করি তানবীরের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,
“ আমার কথা শুনে তোর যতখানি রাগ হচ্ছে ঠিক ততখানি রাগ আমারও হয়েছিলো তোর কথা শুনে। মেয়েদের নিয়ে যে কিছুক্ষণ আগে এই নিম্নমানের কথাগুলো বললি কথাগুলো বলার সময় তোর কি একবারও মনে হয় নি তোর নিজের একটা ছোটবোন আছে? সেও ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। সেও ট্যুরে যায়, বন্ধুদের সাথে মাঝে মধ্যে আড্ডা দেয়। তারমানে তোর বোন খারাপ হয়ে গেছে? আমি মানছি ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় কিছু মেয়ে স্বাধীনতা পেয়ে খুব উশৃংখল জীবন যাপন করে। তাই বলে হাতে গোনা দুই একজনের জন্য তো তুই সবাইকে খারাপ বলতে পারিস না। মেয়েদের সম্মান করতে না পারলেও অসম্মান করতে যাস না”
—-
——-
“অসতী মেয়ের সাথে সংসার করার চেয়ে ডিভোর্স দিয়ে দেওয়া অনেক ভালো। বিয়ের দুইবছর পর জানতে পারি আমার বউ বিয়ের আগে ওর মামাতো ভাইয়ের সাথে নাকি প্রেম করতো। তাই চিন্তা করছি বউকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো”
এলাকার বড় ভাইয়ের মুখ থেকে কথাটা শোনার পর বললাম,
-ভাবী কি বিয়ের পরেও এই ছেলের সাথে সম্পর্ক রেখেছেন?
বড় ভাই বললো,
“আরে না, ঐ ছেলে বিয়ে শাদী করে বউ বাচ্চা নিয়ে দেশের বাহিরে থাকে”
কথাটা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
– তাহলে আপনি কেন ভাবীকে এখন ডিভোর্স দিতে চাইছেন? এইখানে তো ভাবীর কোন দোষ আমি দেখছি না।
বড় ভাই আমার কথাটা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো,
“ পিয়াস, তুমি শিক্ষিত ছেলে হয়েও বুঝতে পারছো না আমি কেন আমার বউকে ডিভোর্স দিতে চাইছি? আরে প্রেম মানেই তো দেহের আদান-প্রদান। আমার বউ যে বিয়ের আগে তার মামাতো ভাইয়ের সাথে লটর-পটর করে নাই তার কি প্রমান আছে?”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-বিয়ের আগে ভাবীর লটর-পটর কাজের প্রমান না থাকলেও আপনার বিয়ের আগে লটর-পটর কাজের প্রমান ঠিকই আছে। প্রেমিকাকে নিয়ে আপনি হোটেলে গিয়ে ধরা খেয়েছেন সেটা আমার মতো অনেকেই জানে। তাছাড়া প্রেম মানেই যে দেহের বিনিময় এটা আপনাকে কে বলেছে? সব প্রেমেই যদি দেহের টান থাকতো তাহলে প্রেম নিয়ে এতো গান, কবিতা, উপন্যাস লেখা হতো না। অবশ্য যে যেমন সে সবাইকে তেমনটাই ভাবে। আপনার ভাবীকে অবশ্যই ডিভোর্স দেওয়া উচিত কারণ ভাবী আপনার মতো নিম্ন মনমানসিকতার মানুষকে ডির্জাভ করে না।
বড় ভাই আমার কথা শুনে খুব রেগে গেলো। আমি বড়ভাইকে শান্ত করে বললাম,
– বিয়ের পরেও যদি ভাবী রিলেশন রাখতো তাহলে আপনি ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবতে পারতেন। যেহেতু এখন কোন সম্পর্ক নেই সেহেতু এখন কেন এইসব ভাবছেন? তাছাড়া আমাদের কমবেশি সবারই অতীত থাকে। অতীতটাকে সামনে না এনে বর্তমানটাকে সুন্দর করার চেষ্টা করুন। অন্যকে দোষারোপ করার আগে নিজের কথাটাও ভাবুন। দিনশেষে আমরা কেউই ধোয়া তুলসী পাতা না।
—
——
“অল্প শিক্ষিত মেয়ে কখনোই বিয়ে করা উচিত না। ওরা কখনোই কিছু বুঝতে চায় না। কত ভালো পাত্র ছিলো। অথচ আমার বউ এখনি তার মেয়েকে বিয়ে দিবে না। মেয়েকে লেখাপড়া করাবে। আর দেখেন, ভালো করেই জানে আমি পটলের তরকারি খেতে পারি না। অথচ আমাকে আজকে পটলের তরকারি দিয়েছে। আজ বাসায় গিয়ে গাল লাল করে ফেলবো যাতে আর ভুল না করে”
লাঞ্চ টাইমে আমার অফিস কলিগ হাসান ভাইয়ের মুখ থেকে এই কথাটা শুনে তেমন অবাক হই নি। উনি প্রায় সময় উনার বউয়ের গাল লাল করে দেওয়ার কাহিনী বলে। আমি আমার তরকারীর বাটিটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-আপনার মেয়ে কিসে যেনো পড়ে?
হাসান ভাই বললো,
“ ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে”
-মেয়ের তো এখনো বিয়ের বয়স হয় নি। এতটুকু মেয়েকে বিয়ে দিলে সংসারের তো কিছুই বুঝবে না।
হাসান ভাই হেসে বললো,
“কি যে বলেন না ভাই। আমি যখন বিয়ে করি তখন আপনার ভাবী ক্লাস টেনে পড়তো। সে কি এতো বছর ধরে সংসার করছে না ? খুব ভালো পাত্র ছিলো। আমি বুঝলাম না বউ কেন রাজি হচ্ছে না”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
– বিয়ের পর আপনার মেয়ের গাল যেন লাল না হয় সেজন্যই হয়তো ভাবী এখনি মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইছে না।
হাসান ভাই অবাক হয়ে বললো,
“মানে!”
আমি হেসে বললাম,
-মানেটা খুব সহজ। ভাবী অল্প শিক্ষিত বলেই তরকারীতে পটল দেওয়ায় অপরাধে আপনি খুব সহজেই ভাবীর গাল লাল করে দিতে পারেন। অথচ ভাবী যদি শিক্ষিত থাকতো আর নিজে কোন কিছু করতো তাহলে এতো সহজে উনার গায়ে হাত তোলার সাহস আপনি পেতেন না। ভাবী চায় না উনার কপালের মতো মেয়ের কপালটাও খারাপ হোক। তাই মেয়েকে এখন বিয়ে না দিয়ে পড়াশোনা করাতে চাচ্ছে…
আমার কথা শুনে খেয়াল করি হাসান ভাই খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমি উনার প্লেটে মুগরীর দুই টুকরো মাংস দিতে দিতে বললাম,
-ভাই বাজারটা তো আপনিই করেন। পটল যেহেতু খান না সেহেতু পটল না কিনলেই পারেন। তাহলে আপনারও রাগ উঠলো না আর ভাবীরও গাল লাল হলো না…
আমাদের সমাজে অনেক ছেলে আছে যারা অন্যের বোনকে নিয়ে নোংরা কথা বলার সময় নিজের বোনের কথাটা ভাবে না, অনেকেই আছে নিজের দোষটা না খুঁজে অন্যেরটা খুঁজে, অনেকেই আছে ছোট ছোট কারণে বউয়ের গায়ে হাত তুলে অথচ নিজের মেয়েটার কথা ভাবে না।
আমরা নিজেরা সংশোধন না হয়ে অন্যের ভুল নিয়ে পড়ে থাকি
সংশোধন
আবুল_বাশার_পিয়াস
৫.মানুষ চিনতে পারলাম না
কেবল সামান্য একটি বাক্যই কাছের মানুষ থেকে আপনাকে দূরের মানুষ বানিয়ে দিতে পারে।
নো ম্যাটার- আপনাদের পরিচয় কত দিনের? কত গভীর সম্পর্ক? কত বেশি আন্ডারস্ট্যান্ডিং? দিনশেষে এসব কিছুই আসলে দূরে যাওয়ার ব্যাপারে প্রভাব ফেলতে পারেনা।
সুতরাং, যখন কথা বলবেন; বুঝে, শুনে, চিন্তা করে মার্জিত ভাষায় কথা বলবেন। কারো আত্মসম্মানে লাগে, এমন বাক্য বলা থেকে বিরত থাকবেন। যখন কোন কথা মানুষের আত্মসম্মানে আঘাত করে, তখন আপনি তাকে আরো হাজারটা সুন্দর কথা দিয়েও আটকাতে পারবেন না।
একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার আত্মসম্মান এবং যে মানুষটি কখনো কারো আত্মসম্মানে আঘাত করে কথা বলেনা, সে’ই সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিত্ববান।