মায়াবতী পর্ব ১৫
তানিশা সুলতানা
বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে আসছে। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। তন্নি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আর অর্ণব এক মনে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
এই পর্যন্ত একশত বার বলা হয়ে গেছে “আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসুন” কিন্তু অর্ণব কানেই তুলছে না। যেনো সে শুনতেই পায় নি। এখন তন্নি বিরক্ত হয়ে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছ। এই লোকটার মতিগতি কিছুই বুঝতে পারেনা তন্নি।
“ও ভাইয়া।
অর্ণব তাকায় না পর্যন্ত।
” জানালাটা খুলে দিন।
তন্নি মুখ গোমড়া করে বলে।
“তোমাকে হ*ট লাগছে। এভাবে সবাই দেখুক এটা চাইছি না আমি।
সোজা সাপ্টা উওর অর্ণবের। তন্নি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে। মনে মনে শখানিক গালি দেয় অর্ণবকে।
চুল গুলো ভালো ভাবে মেলে নিজেকে ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তন্নি।
আচমকা গাড়ি থামিয়ে ফেলে অর্ণব। তন্নি অর্ণবের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
“কাজি অফিসে যাবে অথৈয়ের তন্নি?
তন্নি চমকে আবার তাকায় অর্ণবের দিকে।
” ভাইয়া আমার আঠারো হয় নি এখনো। শাক্ষি হিসেবে নেবে না আমায়।
তন্নি রিনরিনিয়ে বলে।
শেষের কথা কানে তুলে না অর্ণব।
“আঠারো হয় নি তো কি হইছে? আঠারোতে নাহয় বেবি হবে।
তন্নির হাতটা মুঠো করে ধরে বলে অর্ণব। তন্নি নিজের হাতের দিকে তাকায়।
” আমার সাথে এমন করেন কেনো আপনি? এমন তো নিধি আপুর সাথে করা উচিৎ।
আপনি এখন এখানেই বা কেনো? আপনার বাড়িতে তো নিধি আপু আর আপনার বিয়ের কথা বার্তা চলছে।
তন্নি নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে রিনরিনিয়ে বলে।
“চলতে থাকুক।
” হ্যাঁ তাতো থাকবেই। আমার সাথে কেনো করেন এমন?
“কারণ তুমি আমার মায়াবতী
তন্নির হাতটা টেনে নিজের বুকে নিয়ে বলে অর্ণব। তন্নি চোখ ঘুরিয়ে তাকায় অর্ণবের দিকে৷ অর্ণব আপাতত চোখ বন্ধ করে আছে।
” দেখো মায়াবতী
জেলাসি ঠেলার মতো পাবলিক আমি না। তুমি অন্য ছেলেদের সাথে ঘেসাঘেসি করবে আমি সেটা দেখে জেলাস হবো। বিরহের গান গাইবো এটা কখনোই হবে না।
হয় তোমাকে শে*ষ করে দিবো নাহয় সেই ছেলেকে শে*ষ করে ফেলবো।
খুব শান্ত গলায় বলে অর্ণব। তন্নি মাথা নিচু করে শুনতে থাকে।
“আজকের পর থেকে তোমার যত মামাতো চাচাতো পড়াতো ভাই আছে তাদের সাথে কথা বলা তো দূর তাদের দিকে চোখ তুলে তাকালেও চোখ তুলে নিবো আমি।
তারপর সারাজীবন কোলে করে ঘুরবো। ওয়াশরুমেও কোলে করে নিবো যাবো।
মাইন্ড ইট
তন্নির হাতের আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে বলে অর্ণব।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে।
” হাতটা ছাড়ুন ভাইয়া। আমার কেমন কেমন লাগছে।
অসহায় ফেস করে বলে তন্নি। অর্ণব বিরক্ত হয়। হাত ছেড়ে দেয়।
“বাসর ঘরেও বলে বসবে ভাইয়া ছাড়ুন প্লিজ আমি ফিটার খাই।
গাঁধা একটা।
অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
” নিধি আপু বলবে না। উনি খুব স্মার্ট
তন্নি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে।
“মুখ বন্ধ রাখো ইডিয়েট
বলেই আবার গাড়ি চালানো শুরু করে।
তন্নি চুপচাপ কিছুখন বসে ছিলো। তারপর আর ভাল্লাগছে না। কখন বাড়ি দিয়ে আসবে এটাই মাথা থেকে সরছে না। অস্থির লাগছে। তাই ফট করে প্রশ্ন করে ফেলে।
” ভাইয়া সন্ধা হয়ে গেলো। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
“তোমার শশুড় বাড়ি।
অর্ণব ফট করেই বলে ফেলে।
” কিন্তু আমার তো বিয়ে হয় নি।
“তুমি বেশি জানো না কি?
এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করতে হয় না। মনের বিয়েই বড় বিয়ে। তোমার বর তোমায় মনে মনে বিয়ে করে ফেলেছে।
ব্যাস হয়ে গেছে। এখন তুমি একজন বিবাহিত মহিলা।
অর্ণব ভ্রু কুচকে বোঝার চেষ্টা করতে থাকে অর্ণব কি বললো।
“যদি অনেক গুলো ছেলে আমায় মনে মনে বিয়ে করে ফেলে তাহলে আমি অনেকগুলো ছেলেরই বউ হয়ে যাবো?
প্রশ্নটা করেই ফেলে তন্নি। আর ফট করে গাড়ি থেমে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তন্নির গলায় ঠোঁটের ছোঁয়া পায়। খুবই অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু ছোঁয়াটা একদম লেগে আছে। ভেজা গলায় হাত দেয় তন্নি। অর্ণব আবার গাড়ি চালানো শুরু করে দিয়েছে।
তন্নি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। শ্বাসও টানছে না। একদম স্টাচু হয়ে গেছে। পুরো শরীর কাঁপছে।
” শ্বাস টানো।
অর্ণব তন্নির দিকে আড়চোখে এক পলক তাকিয়ে বলে ওঠে।
কথাটা তন্নির কানে পৌছায় না। সে স্বাভাবিক হতে পারে না। ওভাবেই থাকে। অর্ণব বাঁকা হাসে।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে অর্ণব নেমে যায়। তন্নি এখনো একইভাবে বসে আছে।
ড্রয়িং রুমে এখনো আসর জমে আছে। আনোয়ার নিধির বাবাকে নিয়ে বেরিয়ে। নিধিকে ঘিরে ধরে গল্প করছে আশা আর্থি আর অথৈ।
অর্ণব সোজা গিয়ে অথৈয়ের পাশে বসে পড়ে।
“কোথায় ছিলি তুই এতোখন?
আশা জিজ্ঞেস করে।
” মম বউকে দেখতে গেছিলাম।
হেসে বলে অর্ণব। আশা চোখ পাকিয়ে তাকায়। নিধি রেগে থা*প্প*ড় মারে অর্ণবের পিঠে।
“গাড়িতে তোর তন্নি আছে। একটা ওড়না নিয়ে গিয়ে ওকে নিয়ে আয়।
অথৈয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে অর্ণব।
অথৈ ভ্রু কুচকে তাকায় অর্ণবের দিকে।
” ডিটেইলসে পড়ে বলছি। আগে তার কাঁপা-কাঁপি বন্ধ কর গিয়ে।
অথৈকে কিছু বলতে না দিয়ে বলে অর্ণব। অথৈ এক দৌড়ে চলে যায়।
গাড়ির দরজা খুলে দেখে তন্নি স্টাচু হয়েবসে আছে। হালকা কাঁপছে মেয়েটা। গায়ে ওড়না নেই। চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। এভাবে কখনোই দেখেনি তন্নিকে অথৈ। কি হয়েছে আজকে।
“এই তন্নি
জান ঠিক আছিস তুই?
অথৈ তন্নির কাঁধে হাত রেখে বলে। তন্নি চোখ খুলে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে তাকায় অথৈয়ের দিকে।
” তোর ভাই আমার সাথে এমনটা কেনো করছে অথৈ?
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে তন্নি। অথৈ জড়িয়ে ধরে তন্নিকে।
“কি করেছে ভাইয়া বল আমায়? আজকে আমি ওকে মে*রেই ফেলবো।
তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে অথৈ।
” আমাকে বাসা থেকে নিয়ে এসেছে। আবার কিস করেছে।
তন্নির কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকায় অথৈ। কিস করেছে?
তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে। দুই হাতে চোখের পানি মুছতে থাকে।
“কিসস করেছে?
তন্নি মাথা নারিয়ে হ্যাঁ বলে।
” আজকে ভাইয়াকে এর জবাব দিতেই হবে।
চল আমার সাথে।
তন্নির গায়ে ওড়না জড়িয়ে দেয় অথৈ। তারপর তন্নির হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যায়।
চলবে……………..