মায়াবতী পর্ব ১৯
#তানিশা সুলতানা
ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে তন্নি আর অথৈ। ডাক্তার নেই চেম্বারে। তাকে খুঁজতে গেছে অর্ণব৷
অথৈ এখনো তন্নিকে জাপ্টে ধরে আছে। তন্নি হাজার বার বলেছে সে ঠিক আছে। তবুও অথৈ শুনছে না। অথৈয়ের শরীর কাঁপছে এখনো। মনে হচ্ছে ব্যাথা তন্নি নয় অথৈ পেয়েছে।
“ডাক্তার কেনো আসছে না তন্নি? আর খানিকটা এগোলেই হাসপাতাল পাওয়া যেতো। শুধু শুধু জোর করলি তুই।
অথৈ কপাট রাগ দেখিয়ে বলে।
” এইটুকু ব্যাথা নিয়ে কেউ হাসপাতালে যায়?
এরই ডাক্তারের কলার ধরে টেনে নিয়ে আসে অর্ণব৷ তার পেছনে কাচুমাচু হয়ে আসছে ড্রাইভার চাচা। ডাক্তারের হাতে আধখাওয়া কাটা রুটি। সে খেতেই গেছিলো।
তন্নি আর অথৈ দাঁড়িয়ে যায়।
ডাক্তারের কলার ছাড়তেই উনি খেঁকে উঠে
“আমাকে এভাবে টেনে আনলেন কেনো? এটা কি ধরণের অসভ্যতামী? পাবলিক প্লেসে আমাকে রীতিমতো ইনসাল্ট করেছে।
ডাক্তার রেগে বলে।
অর্ণ হাতা গোটাতে থাকে। ডাক্তার ভয় পেয়ে যায়। অথৈ শুকনো ঢোক গিলে। মারা শুরু করবে না কি এখন?
” দশ মিনিট হলো আমরা এখানে বসে আছি। চেম্বার খালি রেখে দাঁত কেলিয়ে হাসছেন আর আড্ডা দিচ্ছেন। আপনার দাঁত ভেঙে পেটে দিতে পারলে আমার শান্তি হতো।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অর্ণব। ডাক্তার শুকনো ঢোক গিলে। ভয় পাচ্ছে তবুও এক বুক সাহস নিয়ে বলতে যায়
“আআপনি আমার চেম্বারে এসে আমাকেই অ
বাকিটা আর বলতে পারে না। অর্ণব আবার দুই হাতে কলার টেনে ধরে। ডাক্তারকে খানিকটা শূন্যে তুলে ফেলে।
” বাইরে পেশেন্টের লাইন পড়ে গেছে। আর আপনি আড্ডা দিচ্ছেন। ডাক্তার কে বানিয়েছে আপনাকে? ডাক্তার হওয়ার যৌগ্যতা আছে আপনার? একজন ডাক্তারের রেসপন্সিবিলিটি কিরকয় হয় বিন্দু মাত্র আইডিয়া আছে?
ইচ্ছে করছে আপনার মাথা ফাটিয়ে দিয়ে এখানে বসিয়ে রাখতে। ননসেন্স
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে আসে। অর্ণবের মুখের দিকে তাকায়।
“প্লিজ
ব্যস হয়ে গেলো অর্ণব শান্ত। কলার ছেড়ে দেয় ডাক্তারের। ডাক্তার হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বেচারা ঘেমে গেছে একদম। শুকনো ঢোক গিলছে ঘনঘন।
“অথৈয়ের তন্নির ভালো করে টিটমেন্ট করেন। একটুও যেনো ব্যাথা না পায়। আমার মায়াবতী যদি ব্যাথা পায় না তাহলে আপনাকে একদম উপরে পাঠিয়ে দিবো আমি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অর্ণব।
ডাক্তার কিছু বলার জন্য হা করে। তন্নি ইশারায় থামতে বলে।
” ব্যাথা পাবো না। আপনি বসুন।
অর্ণব চুপচাপ বসে পড়ে চেয়ারে।
তন্নিকে ডাক্তার বেডে বসতে বলে। অথৈ তন্নিকে ধরে রাখে।
কপালের রক্ত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেস করে দেয়।
” এভাবে থাপ্পড় কে মেরেছে? নিশ্চয় তোমার বর? ওনাকে দেখেই বোঝা যায় পাগলা ঘোড়া।
তন্নির কানে কানে ফিসফিস করে বলে ডাক্তার। পাগলা ঘোড়া শব্দ শুনে তন্নি ফিক করে হেসে ফেলে। অর্ণব অথৈ ভ্রু কুচকে তাকায় তন্নির দিকে।
ওদের তাকানো দেখে ডাক্তার আবার শুকনো ঢোক গিলে।
“বিশ্বাস করুন
উনি ব্যাথা পেয়ে হাসছে না। খুশিতে হাসছে। মামনি কিছু বলো। দেখো কিভাবে তাকাচ্ছে।
ডাক্তার অসহায় চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে। তন্নি এবার খিলখিল করে হেসে ওঠে।
” পাগলা ঘোড়া যে এভাবেই তো তাকাবে।
তন্নি হাসতে হাসতে বলে৷ অথৈ ঠোঁট টিপে হাসে। অর্ণব রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তন্নির দিকে। কোন দিক থেকে তাকে পাগলা ঘোড়া মনে হয়?
“এতো দাঁত কেলানোর কিছু হয় নি।
অর্ণব গম্ভীর গলায় বলে ওঠে। তন্নি চুপ হয়ে যায়। ডাক্তার শুকনো ঢোক গিলে তার জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে।
” ফিস হয়েছে……. টাকা।
রিনরিনিয়ে বলে।
“আপনাকে ফিস দিবো এটা আপনার মনে হয়? নাকটা আস্ত রেখেছি এতেই শুকরিয়া আদায় করুন।
অর্ণব দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাজ করে বলে।
” তন্নি জান চল
অথৈ তন্নির হাত ধরে বলে। তন্নিও উঠে দাঁড়ায়। তারপর আচমকা অর্ণব কোলে তুলে নেয়। তন্নি বড়বড় করে ফেলে। অথৈ দুই হাতে চোখ চেপে ধরে।ডাক্তার ভেমরি খেয়ে যায়।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে।
“আরে আরে কি করছেন? আমার মাথায় লেগেছে পায়ে না। হাঁটতে পারবো আমি।
তন্নি বলে ওঠে।
“বেশি কথা বললে একদম ছাঁদে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলবো। ইডিয়েট
বলেই হাঁটতে থাকে। ডাক্তার অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। অথৈ নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ডাক্তারকে দেয়।
” সরি আংকেল আমার ভাই একটু বেপারোয়া।
বলেই অথৈ চলে যায়। ডাক্তার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে
“একটু বেপারোয়া? পুরো পাগলা ঘোড়া। এর সাথে যেনো আর কখনো আমার দেখা না হয়।
ডাক্তার বিরবির করে বলে।
ড্রাইভার গাড়িতেই অপেক্ষা করছিলো। অর্নবের কোলে তন্নিকে দেখে দরজা খুলে দেয়। অর্ণব তন্নিকে বসিয়ে পাশে বসে পড়ে। অথৈ এসে তন্নির আরেকপাশে বসে পড়ে।
” চাচা কাজি অফিসে নিয়ে যাও।
অর্ণব সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে। তন্নি চমকে ওঠে। অথৈ চোখ বড়বড় করে ফেলে।
“কারো কোনো কথা শুনবো না আমি। ও রাজি না থাকলে জোর করেই বিয়ে করবো। তবুও আমি বিয়ে করবোই। এট এনি কস্ট।
তন্নি অথৈয়ের দিকে তাকায়।
” ভাইয়া বাবা মাকে বলবি না বল? তাছাড়া তন্নি ভীষণ সিক। ওর রেস্ট দরকার। দেখ মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। আগে ওকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত।
অথৈ আমতা আমতা করে বলে। অর্ণব একটুখানি ভেবে দেখে।
“ঠিক আছে তাই করেন।
অথৈ খুশি হয়। তন্নি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। গাড়ি চলতে শুরু করে। অর্ণব এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। তন্নি একটুপর পর অর্ণবের দিকে তাকাচ্ছে।
” আপনাকে আমার পছন্দ না।
ফট করে বলে তন্নি।
“আই নো দেট।
বিয়ে হয়ে গেলে এক সাথে থাকতে থাকতে পছন্দ হয়ে যাবে।
অর্ণবের সোজাসাপ্টা জবাব। তন্নি গাল ফুলিয়ে অথৈয়ের দিকে তাকায়।
” তোর নিধি
অথৈ বলে।
“সাটআপ অথৈ। তুই আর তোর তন্নি ঘাড়ে চাপিয়েছিস আমার।
” আর তুই যে প্রেম করেছিস।
“জাস্ট গার্লফ্রেন্ড ছিলো। প্রেমের মানে বুঝিয়ে তুই? খালি পকপক। চুপ করে থাক।
ধমক খেয়ে অথৈ ভেংচি কাটে।
” আমার সাগর ভাইয়াকে ভালো লাগে।
তন্নি বলে ওঠে। অর্ণব তন্নির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।
“এতোখন ভেবেছিলাম বিয়েটা দুই চারদিন পরে করবো। কিন্তু এখন আমাকে কেউ থামাতে পারবে না।
চাচা গাড়ি ঘোরান।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে। অথৈ কপাল কুঁচকে তন্নির দিকে তাকায়। এটা বলা কি খুব দরকার ছিলো?
অর্ণব পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করে
” দশ মিনিটের মধ্যে শাড়ি মালা গহনা আই মিন বিয়ে করতে যা যা প্রয়োজন সব নিয়ে চলে আস কাজি অফিসের সামনে।
চলবে…………….
রেসপন্স এতো কমে গেলো কেনো? ভালো লাগছে না?