মায়াবতী পর্ব ২৫
তানিশা সুলতানা
পরিবার মানেই আলাদা এরকম শান্তি, ভালোবাসা। এই যে আজকে অর্ণবের বার্থডে এটা জানতোই না অর্ণব। মনেই ছিলো না তার। ছাঁদে পা রাখতেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছে। দুই বোন কেক হাতে মাথায় তাজ পড়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। বাবা মায়ের মাথায়ও তাজ। তাদের ঠোঁটের কোণেও হাসি। তন্নি বড় টেবিলে সুন্দর করে ফুলের পাপড়ি দিয়ে বড়বড় করে অর্ণব লিখছে। আর নিধি? সে এসব দেখছে।
অর্ণব ছাঁদে পা রাখতেই দুই বোন কেক মায়ের হাতে দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় অর্ণবের কাছে। দুই হাতে দুই বোনকে আগলে নেয় অর্ণব।
তারপরই অর্ণবের চোখ যায় তন্নির পাশে। সেখানে বেলুন ফুলাচ্ছে সাগর। সাগরকে অথৈ ডেকেছে। মাথাটা গরম হয়ে যায়। একে এখানে আসতে কে বলেছে?
অথৈ ভাইয়ের গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বলে
“আমার সোনা ভাই শুভ জন্মদিন।
অর্ণব মুচকি হেসে বোনের কপালে চুমু খায়।
অথৈ মুখ ভার করে ফেলে। এটা দেখে আর্থি ভেংচি কাটে। অর্ণব আর্থির কপালেও চুমু দেয়।
ততখনে তন্নি আর সাগর বাকিটুকু কমপ্লিট করে ফেলে।
তারপর কেক কাটার পালা। বাবা মাকে দুই পাশে রেখে বাবার পাশে অথৈ আর মায়ের পাশে আর্থি। আর্থির পাশে নিধি আর অথৈয়ের পাশে তন্নি আর তন্নির পাশে সাগর।
অর্ণব তন্নির দিকে এক পলক তাকিয়ে কেক কাটতে থাকে৷ ওরা হ্যাপি বার্থডে বলতে থাকে।
কেক কাটা শেষে বাবা মা অথৈ আর্থি সাগর নিধি সবাইকেই খাইয়ে দেয় কিন্তু তন্নিকে খাওয়ায় না।
তন্নির হাসি মুখটা চুপসে যায়। চোখে পানি চলে আসে। অথৈ এটা খেয়াল করে নি। তাহলে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিতো।
নিরবে ওখান থেকে চলে যায়।
সাগর বিষয়টা খেয়াল করে। সে তন্নির পেছনে যায়।
আনোয়ার আর আশা চলে যায়। অথৈ আর্থি পিক তোলায় ব্যস্ত।
নিধি অর্ণবের পাশে এসে দাঁড়ায়।
অর্ণব এক মনে ফোন দেখছে। নিধির মুড ফুরফুরে। অর্ণব তন্নিকে কেক খাওয়ায় নি তার মানে তন্নির প্রতি ইন্টারেস্ট নাই।
“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে তন্নি।
তন্নি চমকে পেছনে তাকায়। সাগরকে দেখে মুচকি হাসে।
” ধন্যবাদ
“হাসলে তোমায় খুব সুন্দর লাগে।
” আর রেগে গেলে আপনাকে খুব সুন্দর লাগে।
তন্নির কথায় হেসে ফেলে সাগর। তন্নিও হাসে।
তখনই অর্ণবের নজর পড়ে তন্নির দিকে। সাগর তন্নিকে এক সাথে দেখে রাগ হয়। অথৈয়েরও চোখ পড়ে ওদের দিকে।
বুকটা কেঁপে ওঠে। তবুও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। তন্নি হাসছে।
“আমি সাগরকে ভীষণ ভালোবাসি। এটার মানে এটা নয় যে সাগর তন্নিকে ভালোবাসে বলে পিছিয়ে যাবো বা তন্নিকে হিংসা করবো। সাগর যদি তন্নিকে ভালো রাখতে পারে তাহলে আমি গোটা দুনিয়ার বিরুদ্ধে গিয়েও ওদের এক করে দিবো। আই প্রমিজ”
অথৈ মনে মনে বলে। তন্নির জন্য সব করতে পারে সে।
অর্ণব বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় ওদের কাছে। নিধিও যায় পেছন পেছন।
অর্ণব গম্ভীর গলায় বলে
“সাগর তোমার এবার যাওয়া উচিত। অনেক রাত হয়েছে।
সাগর মুচকি হাসে। তন্নিকে গুড নাইট বলে চলে যায় সে।
তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে। তাকাবে না অর্ণবের দিকে।
নিধি তন্নির পাশে এসে বলে
” তুমিও যাও অনেক রাত হয়েছে।
তন্নি যেতে নেয় অর্ণব সামনে এসে দাঁড়ায়।
“ওর কাছে এইটুকু রাত কিছুই না। তুমি যাও তোমার ঘুমানো দরকার।
নিধির রাগ হয়।
” আমি ওকে বলেছি।
“একচুয়েলি একটু আগে মুখ দিয়ে অনেক কাজ করেছে তো এখন ক্লান্ত হয়ে গেছে। কথা বের হচ্ছে না। তো আমি হেল্প করে দিচ্ছি।
নিধি দাঁত কটমট করে তাকায় অর্ণবের দিকে।
” নিধি একদম দাঁতের ওপর রাগ খাটিও না। বাই এনি চান্স যদি দাঁত ভেঙে যায় তাহলে তোমার বেবিরা তোমাকে মা না ডেকে নানু ডাকবে তো।
তখন কি হবে? হাই আল্লাহ
নিধি ভরকে যায়। তন্নি ফিক করে হেসে ফেলে৷ অর্ণবও হাসে। নিধি অপমানিত হয়ে চলে যায়।
তন্নিও যেতে নেয় অর্ণব হাত টেনে ধরে।
তারপর অথৈকে ডাকে
“অথৈ আমাদের পিক তুলে দে।
আর্থির বর কল করেছে তাই সে নেমে যায়। তন্নি হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে।
” হাত ছাড়ুন। আপনার সাথে পিক তুলতে চায় না আমি।
অর্ণব কাঁধ জড়িয়ে ধরে তন্নির। তারপর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে
“ছোট ছোট বিষয় নিয়ে রাগ করতে নেয় জান। ইউ নো অর্নব চৌধুরী মারাক্তক রোমান্টিক। তুমিই তো লজ্জা পেতে।
তন্নি থেমে যায়। নরাচরা বন্ধ হয়ে যায়। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে তার। লোকটা জানলো কি করে ও এটার জন্যই অভিমান করেছে?
অথৈ ক্যামেরা নিয়ে হাজির।
” পোস দে
অর্ণব তন্নিকে নিয়ে নানাভাবে দাঁড়াচ্ছে। তন্নি অনইজি ফিল করছে তবুও চেষ্টা করছে স্বাভাবিক থাকতে। অথৈ সুন্দর করে পিক তুলে দেয়।
তারপর অথৈ হাই তুলতে তুলতে অর্ণবের দিকে এগিয়ে আসে। এখনো তন্নির হাত অর্ণবের হাতের মুঠোয়।
“নিধি আপুকে কালকেই বিদেয় করবি তুই। আর ওইখানে রোজ আর রিং আছে।
ইমপ্রেস করা চাই।
অথৈ চোখ টিপে চলে যায়। অর্ণব মাথা চুলকে হেসে ফেলে।
তন্নি আড়ালে একটু হাসে।
অর্ণব তন্নিকে নিয়ে দোলনায় বসিয়ে দেয়। তারপর এক টুকরো কেক এনে তন্নির পাশে বসে পড়ে।
নিজের মুখে কেক নিয়ে মুখটা এগিয়ে দেয় তন্নির দিকে।
তন্নি বড়বড় চোখ করে তাকায়। অর্ণব চোখের ইশারায় খেতে বলে। তন্নি অসহায় চোখে মাথা নারিয়ে না বলে। অর্ণব চোখ পাকিয়ে তাকায়। তন্নি শুকনো ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে মুখটা এগিয়ে নিয়ে একটুখানি কেক মুখে নেয়।
এই টুকুতেই লজ্জায় হার্ট দুর্বল হয়ে গেছে।
অর্ণব বাকি টুকু খেয়ে নেয়।
“এতো লজ্জা পেলে হবে মায়াবতী? এভাবে চলতে থাকলে অনিকে কিভাবে আনবো?
তন্নি অর্ণবের হাতে চিমটি কাটে। বড্ড খারাপ লোকটা। অর্ণব হেসে উঠে যায়।
এক গুচ্ছ লাল গোলাপ এনে তন্নির সামনে হাঁটু মুরে বসে পড়ে।
গোলাপগুলো তন্নির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে
” একবার আমার হয়েই দেখো প্রতি সেকেন্ডে শুকরিয়া আদায় করার মতো জীবন গিফট করবো তোমায়। বিশ্বাস করে হাতটা ধরে দেখো গোটা দুনিয়া ছেড়ে দিবো তোমার জন্য।
তন্নি অর্ণবের থেকে ফুলগুলো নিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে
“কথা রাখতে পারেন আপনি? কিভাবে বিশ্বাস করবো?
অর্ণব উঠে আবার তন্নির পাশে বসে। তন্নির হাত ধরে তাতে রিংটা পড়িয়ে দিয়ে চুমু খায় হাতের উল্টো পিঠে। তন্নি কেঁপে ওঠে।
” কথা রাখতে পারি আমি।
তন্নি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“তাহলে নিধি আপুকে দেওয়া কথা রাখছেন না কেনো?
অর্ণব তন্নির মাথাটা নিজের কাঁধে রাখে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি কখনোই নিধিকে বিয়ে করতে চায় নি। ভালোবাসি কথাটাও বলি নি কখনো।
চলবে…………….