মায়াবতী পর্ব ৩০
তানিশা সুলতানা
তন্নি চলে গেছে শুনে আব্দুল্লাহ ভীষণ ভেঙে পড়ে। নাতনির মধ্যে মেয়েকে খুঁজে নিয়েছিলো তিনি। ভেবেছিলো যে কয়দিন বাঁচে এই মুখটা দেখে কাটিয়ে দেবে।
বয়সকালে খুব দাপট ছিলো তার। বংশের অহংকার ছিলো। গর্ব করে বলতো সে খান বংশ। সমাজে তাদের একটা নামডাক ছিলো। সেই খান বংশের একমাত্র মেয়ে একটা ছোটজাতের ছেলের সাথে পালিয়ে গেছিলো। মল্লিকদের তারা বরাবরই হেনা করে এসেছে। লজ্জায় তিনি মুখ দেখাতে পারতো না।
সমাজের দাপট রক্ষা করতে মেয়েকে মেনে নেয় নি। মুখটা পর্যন্ত দেখে নি মেয়ের।
উনি বুঝতেই পারে নি জাত বংশ এসবে কিচ্ছু এসে যায় না। মনুষ্যত্বটাই বড় বিষয়।
এখন বুঝতে পারে।
মল্লিক জাতের একটা মেয়ের সাথে ওনার বড় ছেলে সাইদুলের বিয়ের কথা বলেছিলো একজন। মেয়েটা ভালো। আব্দুল্লাহ দাপটের সাথে তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। ছোট জাত বলে অপমান করেছিলো।
এসব কথা মনে হতেই তার বুকটা পুরতে থাকে। চোখ দিয়ে পানি গড়াতে থাকে। সেদিন যদি এতোটা কঠোর না হতো মেয়েটাকে আগলে নিতো তাহলে আজকে তার মেয়ে পৃথিবী ছাড়া হতো না ছোট্ট নাতনীটা মা হারা হতো না। তাকে এভাবে পুরতে হতো না।
__
সোফায় বসে জোরে জোরে শ্বাস টানছে অর্ণব। তন্নিকে দেখে সে থেমে গেছে। তন্নি যে ভীষণ রেগে গেছে বুঝতে পেরেছে। আয়েশা একজন নার্স সে ফাস্ট এইচ বক্স আনতে বলে অথৈকে। অথৈ দৌড়ে চলে যায়। আশা অর্ণবের পাশে বসে আঁচলে মুখ ঢেকে কান্না করছে। তন্নি বুকে হাত গুঁজে অর্ণবের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর্থি চুপচাপ বসে আছে।
আয়েশা যত্ন করে অর্ণবের হাত পরিষ্কার করে দিতে থাকে।
অথৈ অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে
“ভাইয়া কেনো রেগে গেছিলে? আমরা কি কিছু করেছি?
তন্নি বলে ওঠে
” এমন ভাবে কেনো বলছিস অথৈ? তোরা কিছু করলেও রেগে কেনো যাবে? কেমন রাগ এটা? যে রাগে প্রিয় জনদের কাঁদায়। ওনার কাছে নত কেনো হচ্ছিস?
কিসের এতো দরদ?
ওনার তো কোনো দরদ নেই।
তন্নির ঝাঁঝালো গলার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। কারণ তন্নি কখনোই এভাবে কথা বলে না। আশার কান্না থেমে যায়। অর্ণব মাথা চুলকায়। মহারানী যে ভীষণ রেগে গেছে বুঝতে পারে।
তন্নি সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়। অথৈ ঠোঁট কামড়ে হাসে। আর্থির ঘোর এখনো কাটছে না। সে হা করে তাকিয়েই আছে। আয়েশা ইমপ্রেস হয়। এরকম মেয়েই সে খুঁজছে। তার ছেলের জন্য পারফেক্ট।
অর্ণব সবাইকে সরি বলে। আশার সামনে দাঁড়িয়ে কান ধরে উঠবস করে সরি বলে। আর কখনো সে এমনটা করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে।
আজকে অর্ণব খাবে না। বিকেলে বাইরে থেকে খেয়েছে পেট ভরা বলে কাটিয়ে চলে যায় রুমে। সে জানে তন্নি তার জন্য খাবার নিয়ে আসবেই। আর আজকে সে তন্নির হাতে খাবে।
তন্নি সবার সাথে বসেছে ডিনার করতে। আনোয়ার ব্যবসায়ের কাজে বেরিয়েছে।
খেতে খেতে আশেয়া তন্নির বাবার পুরো নাম জিজ্ঞেস করে।
তন্নিও সরল গলায় বলে
“তারেক মল্লিক
আয়েশার মুখখানা চুপসে যায়। অসন্তুষ্ট হয় আশাও। মল্লিক কেনো হলো?
আশা আগে কখনো জিজ্ঞেস করেনি পুরো নাম আজকেই শুনলো।
খাওয়া শেষে তন্নি চলে আসে অথৈয়ের রুমে। অথৈকে পাঠিয়েছে খাবার আনতে। পুরো বিকেল অর্ণব তন্নির সাথে ছিলো। কোথাও কিছু খায় নি। তবুও সে মিথ্যে বললো খেয়েছি?
মিথ্যুক একটা। আজকে কিছু কড়া কথা শুনিয়েই দিবে। সব সময় মজা পছন্দ না তন্নির।
অথৈয়ের ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে সাগর নামটা ভেসে ওঠে। তন্নি মুচকি হেসে ফোন তুলে হেলো বলে। এই সময় তন্নির গলা শুনতে পাবে স্বপ্নেও ভাবে নি সাগর। তার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
” তন্নি?
“জ্বী ভাইয়া কেমন আছেন?
” আলহামদুলিল্লাহ
তুমি?
“আমিও ভালো
সাগর এখন কি বলবে খুঁজে পাছে না। নার্ভাস লাগছে তার। গলায় কথা আটকে আটকে যাচ্ছে। খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে।
” ভাইয়া?
“হ্যাঁ তন্নি
“অথৈ খাবার আনতে গেছে তার ভাইয়ের জন্য আসলে বলবো আপনি কল করেছিলেন।
” ঠিক আছে
তন্নি কল কেটে বিছানায় রাখে।
সাগর ফোনটা বুকের সাথে চেপে ধরে বিরবির করে বলে “মানুষ সৌন্দর্যের কথা বলে
আর আমার তো তার ভয়েস শুনলেই কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়”
একটু পরেই অথৈ থালা ভর্তি ভাত নিয়ে চলে আসে।
তন্নির হাতে প্লেটটা দিয়ে বলে
” তোদের প্রেম দেখে আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।
“কর না করছে কে?
” ছেলেই তো পাই না। তোর নাহয় বান্ধবীর ভাই ছিলো পটিয়ে নিলি। আমার তো আর তা নেই। পুরা কপাল।
“এতো ঢং কেমনে করে মানুষ?
” এমনে করে।
“সাগর ভাইয়া কল করেছিলো।
অথৈ দৌড়ে ফোনের কাছে চলে যায়।
তন্নি ভেংচি কেটে চলে যায় অর্ণবের রুমে। অর্ণব বসে বসে ফোন ঘাটছিলো। ধুপধাপ পা ফেলে তন্নিকে ঢুকতে দেখে ফোন রেখে সোজা হয়ে বসে। তন্নি গিয়ে অর্ণবের পাশে বসে।
কথাবার্তা ছাড়া তরকারি দিয়ে ভাত মাখতে থাকে। অর্ণব মুচকি হাসে।
চুপচাপ পুরো প্লেট ভাত খাইয়ে দেয় অর্ণবকে। অর্ণবও তৃপ্তি নিয়ে খায়। যদিও তার খেতে একটু অসুবিধা হচ্ছিলো। কারণ সে মাখোমাখো খাবার খায় না। আর তন্নি ভাতকে ইচ্ছে মতো মাখছে আর অর্ণবের মুখে ঢুকাচ্ছে। আর তন্নির হাত একটুখানি। ভাতও একটুখানি মুখে দিচ্ছে। অর্ণবের চিঁবানোর প্রয়োজন পড়ছে না। এমনিতেই গিলে ফেলছে। একবার বলতে চেয়েছিলো বড় করে দিতে কিন্তু পরে চিন্তা করলো একটুখানি হাত। আর কতো বড় করে লোকমা দিবে?
খাওয়া শেষে তন্নি বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে প্লেট রেখে এসে অর্ণবের মুখোমুখি বসে চোখ মুখ শক্ত করে বলে
“পবলেম কি আপনার? কেনো এমনটা করলেন?
অর্ণব তন্নির দিকে খানিকটা এগিয়ে যায়। তন্নি পিছিয়ে যায়।
” can i kiss you?
তন্নি বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে দুই হাতে নিজের ঠোঁট আটকে ধরে। অর্ণব হেসে ফেলে।
“সো সুইট মাই ডেয়ার জান
ঠোঁট বাঁকিয়ে তন্নির কোমর জড়িয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। তন্নি পড়ে যাওয়ার ভয়ে দুই হাতে অর্ণবের শার্ট খামচে ধরে।
তন্নি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। সে এই মুহূর্তে কোথায় আছে জানা নাই তার।
চলবে……………..