মায়াবতী পর্ব ৭
তানিশা সুলতানা
এভাবে ঠিক তন্নিকে দেখা যাচ্ছে না। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাতে হচ্ছে। ড্রাইভ করতে করতে কতোবারই পাশে তাকাবে?
বিরক্ত অর্ণব।
লুকিং গ্লাসে দিব্যি অথৈকে দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই গাড়ি থামায় অর্ণব। চমকে ওঠে অথৈ আর তন্নি। মেইন রোডে মাঝ রাস্তায় হঠাৎ গাড়ি থামানোর কারণ কেউ বুঝতে পারছে না।
তন্নি ছোট ছোট চোখে তাকায় অর্ণবের দিকে।
“অথৈয়ের তন্নি নামো। জলদি নামো। নামো নামো নামো
তন্নির ছিট বেল্ট খুলতে খুলতে বলে অর্ণব। তন্নি ভ্রু কুচকে ফেলে। আসলে বুঝতে পারছে না।
” আরে বাবা নামছো না কেনো?
ইউ নো আমার পাশে কোনো বেডি বসলে আমার লজ্জা করে। ঠিকঠাক ভাবে ড্রাইভ করতে পারি না।
তন্নির কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে যায়। ও বেডি?
“কোন দিক থেকে তন্নিকে তোর বেডি মনে হয়? আর আমি দেখি তো। শতশত মেয়ে পাশে বসিয়ে চক্কর কাটো।
” মেয়ে বসিয়ে। বেডি বসিয়ে না।
আরে অথৈয়ের তন্নি নামছো না কেনো? তুমি কি আমাকে লজ্জায় একদম গাড়ির সাথে মিশিয়ে দিতে চাইছো?
অর্ণব পূর্ণ দৃষ্টিতে তন্নির দিকে তাকিয়ে বলে। অথৈ বিরক্ত হয়ে যায়।
“তোর পবলেম টা বলবি প্লিজ? মাঝ রাস্তায় ড্রামা করছিস কেনো?
অথৈ রেগে বলে।
” তুই বুঝবি না। বয়স হয় নাই।
তন্নি নেমে পড়ে। অর্ণব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
“তন্নি ওই দিক দিয়ে ঘুরে আয়।
অথৈ বলে। অর্ণব বড়বড় চোখ করে তাকায় অথৈয়ের দিকে।
” নাহহহহ
তোর জায়গায় বসুক ও। এখানেই পারফেক্ট। আরে বুঝিস না কেনো? পেছনে বসলেও বাসাত আসবে সামনে।
তন্নি দাঁত কটমট করে। ইচ্ছে করছে দুটো কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু পারছে না। ছোট থেকে কারো মুখের ওপর কথা বলার অব্ভাস নেই।
অথৈ সরে বসে। তন্নি অথৈয়ের জায়গায় বসে। অর্ণব এক গাল হেসে আয়নাটা একটু মুছে নেয়।
“এবার পারফেক্ট।
কলেজে গাড়ি থামতেই তন্নি সবার আগে নেমে যায়। এবং অথৈয়ের অপেক্ষা না করেই হনহনিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। অর্ণব গাড়ি পার্ক করে এসে দেখে তন্নি নেই। বেশ রাগ হয় অর্ণবের।
অথৈ আঁচল ঠিক করছে।
” তোর তন্নি কই?
“চলে গেছে। তুই পেছন থেকে আমার শাড়িটা একটু টেনে দে তো।
অর্ণব বসে বোনের শাড়ি ঠিক করে দেয়। তারপর দুজন মিলে ভেতরে যায়।
ভেতরে ঢুকতেই অর্ণবের দুজন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায় অর্ণবের। তারা হচ্ছে এই কলেজের সভাপতি। অর্ণব তাদের সাথে যোগ দেয়।
স্টুডেন্টরা নাচ গান করছে। তন্নি আর অথৈ পেছনে বসে দেখছে। কখনো কখনো হাত তালিও দিচ্ছে।
তখনই তন্নিকে আলাদা ডেকে নেয় তন্নিদের কলেজের ম্যাম সালমা।
তন্নি আর অথৈ ম্যামের সাথে যায়।
” তন্নি তুমি কোন গানে ডান্স করবে?
“আমি তো নাম দেই নি ম্যাম।
” আমি দিয়ে দিয়েছি। অথৈয়ের জন্মদিনে তোমার নাচ দেখেছিলাম আমি। অপূর্ব নাচো তুমি।
“ম্যাম আমার মা আমায় মে*রেই ফেলবে।
” আমি কথা বলবো তোমার মায়ের সাথে।
অথৈও রিকোয়েস্ট করা শুরু করে। শেষমেশ বাধ্য হয়েই তন্নি নাচতে রাজি হয়।
একটু পরেই তন্নি নামটা এনাউন্সমেন্ট করা হয়। চমকে ওঠে অর্ণব। তন্নি নাচবে না কি? স্টেজের এক কোণায় অতিথির আসনে বসেছে অর্ণব।
একটু পরেই তন্নি স্টেজে উঠে আসে। কোমরে বিছা নিয়েছে চুল গুলো বিনুনি গেঁথে তাতে ফুলের মালা দিয়েছে।
এই মেয়েটা একেক সময় একেক রূপে এসে পাগল করবে অর্ণবকে।
বসন্তের গানের তালে তালে নাচতে শুরু করে তন্নি। অথৈ ভিডিও করছে।
অর্ণব সহ বাকি সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
“মেয়েটা জাস্ট অসাম।
আশিক অর্ণবের কানে কানে বলে। অর্ণব চমকে ওঠে। বুকটা কেঁপে ওঠে অর্ণবের।
” এই মেয়ে বিবাহিত। একটা বাচ্চা আছে। আরেকটা হবে। দুই সপ্তাহ সবে।
অর্ণব বলে ওঠে। আশিক ভ্রু কুচকে ফেলে।
“এই টুকু মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে?
” তাহলে আর বলছি কি? খালি কি বিয়ে? বাচ্চাও আছে। আর বলিস না। চোখ ফোঁটার আগেই পেকে গেছিলো। দেখা করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেছে তারপরই বিয়ে। আর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাচ্চা। ভাব একবার?
অর্ণব বেশ পাকাপোক্ত ভাবে বসে বলে।
“তুই এতোকিছু জানিস কি করে?
সন্দেহীন চোখে তাকিয়ে বলে আশিক।
” আমি জানবো না? আমাদের এলাকার তো।
“ওহহ
আশিক বিশ্বাস করেছে বলে অর্ণব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” মিসস অথৈয়ের তন্নি। আপনার পা টা আমিই ভাঙবো। আপনার বাড়িতে বিচার দিবো আমি। পর পুরুষের সামনে ধৈই ধৈই করে নাচার শখ একদম মিটিয়ে দিবো।
অর্ণব বিরবির করে বলে।
তন্নির নাচ শেষে সবাই হাত তালি দেয়। তন্নি মুচকি হেসে স্টেজ থেকে নেমে পড়ে। তন্নির দেখাদেখি অর্ণবও নামে।
তন্নি আর অথৈ খানিকটা দূরে কথা বলছে হেসে হেসে। অর্ণব ওদের দিকে এগোতে যাবে তার আগেই নিধি সামনে চলে আসে। ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে অর্ণব। নিধির ঠোঁটের কোণে হাসি। নিধির পরণে অর্ণের দেওয়া শাড়িটা।
“ততুমি এখানে?
অর্ণব তুতলিয়ে বলে।
” তুমি ভূলে গেছো না কি আমি এই কলেজেই অনার্স করছি। (আমাদের দেবেন্দ্র কলেজে অনার্স ইন্টার ডিগ্রি সব আছে। সেই হিসেবে লিখেছি)
অর্ণব শুকনো ঢোক গিলে।
“কেমন লাগছে আমায়?
লাজুক হেসে বলে নিধি। অর্ণব পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকায় নিধির দিকে। মন্দ লাগছে না। তবে মেকাপ বেশি করেছে।
অর্ণবের চোখ যায় নিধির পেছনে তন্নির দিকে।
” দারুণ
তন্নির দিকে তাকিয়েই বলে। নিধি খুশি হয়ে যায়।
“চলো চলো বন্ধুদের সাথে তোমায় মিট করাবো।
অর্ণবের হাত ধরে বলে নিধি। অর্ণব না করবে তার আগেই নিধি টানতে শুরু করে।
চলবে
বানান ভুল থাকতে পারে। তারাহুরো করে লিখেছি।