নীল চিরকুট
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
৬৬.
তখন দুপুর। আকাশ ভর্তি ঝলমল করছে রোদ। বেশিক্ষণ রোদে থাকায় তাতিয়ে উঠেছে পিঠ। অন্তু যখন বাইক নিয়ে বাড়ির পাশের রাস্তাটা ধরল ঠিক তখনই পেছনের এক রিকশা থেকে ডেকে উঠল কেউ। মহিলাগোছের মানুষ। অন্তু প্রথমে খেয়াল না করলেও লুকিং গ্লাসে চোখ পড়ায় থমকে দাঁড়াল। বাইক থামিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই রিকশাটা এসে থামল তার পাশে। অন্তু অবাক হয়ে বলল,
‘ আমাকে ডাকছিলেন?’
ভদ্রমহিলা ঠোঁট ভরা হাসি নিয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ। তুমি নয়তো আর কে?’
অন্তু কপাল কুঁচকে বলল,
‘ জি, বলুন।’
ভদ্রমহিলা এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে বলল,
‘ বলুন মানে? তুমি আমাকে চিনতে পারছ না? আমি তোমাদের সামনের বাসাতেই থাকি। তোমার সাবিনা আন্টি। তোমাদের বাসায় তো প্রায়ই যাই। দেখোনি?’
অন্তু ঠোঁট টেনে ভদ্রতার হাসি হাসল। ভদ্রমহিলা রিকশা থেকে মাথা বের করে প্রায় ফিসফিসিয়ে বললেন,
‘ তোমার বউ যে কনসিভ করেছে আগে বলোনি তো! তোমার মাকে সেদিনও জিজ্ঞেস করলাম, সাফ মানা করে দিলেন। বুঝলাম অ্যাবোরশন করাবে। তাই বলে বলা যাবে না? আমি কী পর? মেডিকেলে পরিচিত ডাক্তার আছে আমার। আমাকে বললে হাফ খরচে হয়ে যেত।’
ভদ্রমহিলার বাঁধনহারা, নির্লজ্জ আলাপে স্তব্ধ হয়ে গেল অন্তু। তার থেকেও স্তব্ধ হয়ে গেল আলোচনার বিষয়বস্তু জেনে। কিছুক্ষণ পলকহীন, হতভম্ব চোখে চেয়ে থেকে বলল,
‘ আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আন্টি। এমন কোনো ব্যাপার নেই।’
ভদ্রমহিলা দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,
‘ ওমা! আমার থেকে লুকচ্ছ কেন বাবা? আমি কী তোমাদের ক্ষতি চাই নাকি? কেউ বলতে পারবে কখনও কারো ক্ষতি টতি করেছি? নেহাৎ তোমার বউকে মেডিকেলে দেখে এলাম। কোনো দরকার টরকার লাগতে পারে, তাই নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করছি। তোমাদের আপন ভাবি বলেই তো জিজ্ঞেস করেছি নাকি?’
অন্তুর কপাল কুঁচকে এলো। ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে বলল,
‘ আপনি নীরার কথা বলছেন?’
ভদ্রমহিলা মাত্রাতিরিক্ত বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘ তা নয়তো কে? আমার ননদের মেয়ের সিজার হলো আজ। আলহামদুলিল্লাহ, ছেলে বাচ্চা হয়েছে। ওখানেই, সি সেকশনেই তোমার বউকে দেখলাম এক নার্সের সঙ্গে কথা টথা বলছে। আমি ভাবলাম, কোনো রোগী টোগী দেখতে এসেছে বোধহয়। পরে নার্সকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, নীরা অ্যাবোরশন করাতে চায়। অ্যাবোরশন কোথায় করে। কিভাবে কী করতে হয়। কত টাকা লাগে হেনতেন নাকি জিজ্ঞেস করছিল।’
অন্তু ভদ্রমহিলার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল, কথা খুঁজে পেল না। ভদ্রমহিলা গলার স্বর আরও একটু নামিয়ে বলল,
‘ কোনো সমস্যা টমস্যা হয়েছে নাকি বাবা? আজকালকার বউদের একটু ছুঁকছুঁক স্বভাব থাকে। শুনেছিলাম তোমার বউয়ের নাকি অন্য এক জায়গায় বিয়ে ভেঙেছিল? অন্য…’
বাকি কথাগুলো যেন কান পর্যন্ত পৌঁছাল না তার। অবাক চোখে ভদ্রমহিলার থলথলে মুখের দিকে চেয়ে রইল অন্তু। একটা মানুষ মুখের উপর এত নির্লজ্জ কথাবার্তা কিভাবে বলতে পারে, তা যেন বুঝে আসল না তার। প্রচন্ড রাগে শরীরটা রি রি করে উঠল। ভদ্রমহিলা অন্তুর লাল চোখ, আর থমথমে মুখ দেখে থেমে গেলেও অন্তুর রাগ থামল না। মাথাটা ধপধপ করতে লাগল। মনে জাগতে লাগল একটিই প্রশ্ন,
‘ নারী প্রেগন্যান্ট? নীরা অ্যাবোরশন করাতে চায়? এতোকিছু হয়ে গেল অথচ ওকে একটিবার বলার প্রয়োজন মনে করল না? আশ্চর্য!’
শীতের দুপুরের মতোই ধীরে ধীরে তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হতে লাগল অন্তুর রাগ,জেদ। মাথাভর্তি দুর্দমনীয় রাগ নিয়েই বাড়ি ফিরল অন্তু। জাহানারা বেগম দরজা খুলতেই ব্যস্ত কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‘ আম্মা নীরা কই?’
জাহানারা বিরক্ত চোখে তাকালেন, জবাব দিলেন না। অন্তু ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে মনেপ্রাণে চাইতে লাগল, নীরা যেন বাসাতেই থাকে। সেই মহিলার সকল কথা যেন মিথ্যে হয়। অকাট্য মিথ্যে! বসার ঘরে নীরাকে না দেখে নিজের ঘরে গেল অন্তু। ঘরে না পেয়ে রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়াল।
‘ আম্মা নীরা কই?’
জাহানারা এবারও উত্তর না দেওয়ায় রাগটা আর ধরে রাখতে পারল না অন্তু। কেবিনেটের উপর থাকা তরকারির বাটি, থালা সবই আছড়ে ফেলল মেঝেতে। প্রচন্ড ঝনঝন শব্দে চমকে উঠলেন জাহানারা। হলুদ গুঁড়োর কৌটাটা হাতের কাছে পেয়ে সেটাও ছুঁড়ে ফেলল অন্তু। তীক্ষ্ণ ঝনঝন শব্দ তুলে ভেঙে গেল কাচের বয়াম। রান্নাঘর জুরে ছড়িয়ে পড়ল কাঁচা হলুদ গুঁড়ো। অন্তু উঁচু কন্ঠে বলল,
‘ কখন থেকে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি? ঠিকঠাক জবাব দিতে পারো না? নীরা কই? বাসায় নাই কেন?’
জাহানারা ছেলের দিকে শান্ত চোখে চেয়ে থেকে ক্ষীপ্ত কন্ঠে বললেন,
‘ তোর বউ কই গেছে ওইডা আমারে জিজ্ঞেস করছ কেন? আমি তোর বউয়ের কামলা খাটি? তোর বউ কই কই যাইতাছে তার লিস্ট রাখতে হবো এখন আমার? তোর বউ তুই সামলাতে পারছ না? সেই সকাল বেলা এক ঘন্টার নাম কইরা বের হইছে। এখনও ফেরার নাম গন্ধ নাই। দুইদিন ধরে নাকি শরীর খারাপ লাগে। এটা খাইতে পারে না, ওটা খাইতে পারে না৷ ভাত খাইতে মন চায় না। কাজ করতে মন চায় না। এখন বাইরে ঢিং ঢিং করে ঘুরাতাছে কেমনে? এইটা তার শরীর খারাপের নমুনা? তোর বউয়ের তো রঙ ঢঙের অভাব নাই। রঙ ঢঙ করতে গেছে।’
অন্তু প্রত্যুত্তর করল না। ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় লাথি দিয়ে চেয়ারটা উল্টে ফেলল শুধু। জাহানারা শান্ত চোখে ছেলের কর্মকান্ড দেখলেন।
নীরা যখন বাড়ি ফিরল তখন সব শান্ত। বাড়িতে কোনো হৈ-চৈ নেই। কোনো উচ্চবাচ্য নেই। নিঝুম দুপুরে ঘুমুন্ত পুরীর মতোই নিস্তব্ধ সব। অয়ন দরজা খুলে দিয়েই নিজের ঘরে দোর দিল। বসার ঘর ফাঁকা। জাহানারারও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এই অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় বুকটা কেমন ধুকপুক করে উঠল নীরার। এদিক ওদিক চেয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল। বিছানার উপর অন্তুকে বসে থাকতে দেখেই চমকে উঠল সে। অন্তুর তো এখন ফেরার কথা না! নীরা ভয়ে ভয়ে অন্তুর দিকে তাকাল। অন্তু আগের মতোই বসে আছে। চোখ-মুখ শান্ত, থমথমে। নীরাকে দেখতে পেয়েই বলল,
‘ কোথায় গিয়েছিলি?’
নীরা থতমত খেয়ে গেল। ঘামতে লাগল কপাল। আমতা আমতা করে বলল,
‘ ন ন নমুর বাসায় গিয়েছিলাম। আন্টি না খেয়ে আসতেই দিল না।’
অন্তু হেসে বলল,
‘ আচ্ছা?’
নীরা ঢোক গিলল। ঠোঁটে হাসি টানার চেষ্টা করে মাথা নাড়ল। অন্তু হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ হাতে এগুলো কী? নমুর বাসা থেকে আনলি বুঝি? দেখি।’
নীরা চমকে হাতের দিকে তাকাল। বাম হাতের পিঠ দিয়ে ঠোঁটের উপরের ঘাম মুছে অসহায় চোখে তাকাল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দ্রুত ভাবার চেষ্টা করল। তার আগেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টটা ছিনিয়ে নিল অন্তু। নীরা কপালের ঘাম মুছে ভয়ে ভয়ে তাকাল। অন্তু গোটা রিপোর্টটা মন দিয়ে পড়ল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ প্রগন্যান্সি পজিটিভ!’
কথাটা বলে নিজস্ব ভঙ্গিতে ঠোঁট উল্টাল অন্তু। রিপোর্টটা উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
‘ তোহ! অ্যাবোরশন কমপ্লিট ম্যাম?’
নীরা চমকে উঠে বলল,
‘ মানে?’
অন্তু এবার চোখ তুলে তাকাল। অন্তুর রক্তলাল চাহনী দেখেই আত্মা কেঁপে গেল নীরার। অন্তু রিপোর্টটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে নীরার কাছাকাছি দাঁড়াল। শীতল কন্ঠে বলল,
‘ বাচ্চাটা কার? আমার না?’
নীরা হতভম্ব কন্ঠে বলল,
‘ এটা কোন ধরনের প্রশ্ন?’
‘ বাচ্চাটা যেহেতু আমার সেহেতু তার সম্পর্কে জানার অধিকার সর্বাপেক্ষা আমার, তাই না?’
নীরা উত্তর দিল না। অন্তু তার ডানহাতের বাহু খামচে ধরে বলল,
‘ তোর সাহস কীভাবে হলো আমাকে না জানিয়ে আমার বাচ্চা মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার? সমস্যা কী তোর? ওকে মারতে চাস কেন? ওহ, বদলা নিচ্ছিস? তোকে জোর করে বিয়ে করেছি বলে বদলা?’
নীরার চোখ টলমল করে উঠল। অন্তুর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থেকে বলল,
‘ ও আমারও বাচ্চা অন্তু।’
অন্তু দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ তোর বাচ্চা? অসম্ভব। তোর বাচ্চা হয় কী করে? তোর বাচ্চা হলে তো অ্যাবোরশনের চিন্তা মাথায় আসতো না। আসলে তোর সমস্যাটা কোথায়? আমার বাচ্চা জন্ম দিতে সমস্যা? এতোই যদি সমস্যা তাহলে বিয়ে করেছিস কেন আমাকে? আমার কাছে আসার জেদ তো তোরই বেশি ছিল। তখন মনে হয়নি এসব?’
নীরার গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। অন্তুকে প্রচন্ড ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই অন্তুর পা গিয়ে লাগল ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে। অন্তুর রাগ বেড়ে গেল। নীরার ডানহাতটা মোচড়ে ধরে বলল,
‘ কথায় কথায় হাত চলে কেন এত? মানা করছি না?’
নীরা ব্যথায় ককিয়ে উঠল। ডুকরে কেঁদে উঠে বলল,
‘ ব্যথা পাচ্ছি।’
অন্তু তৎক্ষনাৎ হাত ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়াল। নীরার কান্না দেখে রাগ বেড়ে যেন আকাশ ছুঁলো। প্রচন্ড রাগে লাথি দিল ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে। ড্রেসিং টেবিল থরথর করে কাঁপতে লাগল। টেবিলের উপর থাকা ফুলদানিটা ছুঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
‘ খবরদার কাঁদবি না। চুপ! একদম চুপ!’
নীরা দুই হাতে মুখ চেপে ফুপিয়ে উঠল। রেগে গেলে অন্তুর মাথা ঠিক থাকে না। এই মুহূর্তে নীরার কোনো কথায় সে বুঝবে না। বুঝার চেষ্টা করবে না। শান্ত অন্তু যতটা বুঝদার, যত্নশীল। অশান্ত অন্তু ততটাই অবুঝ, ভয়ানক। নীরা ভয়ার্ত চোখে চেয়ে এই ভয়াবহ ধ্বংসলীলা দেখতে লাগল। অন্তু হঠাৎ তার দিকে তেড়ে এসে মুখোমুখি দাঁড়াল। তাকে আগাগোড়া নিরক্ষণ করে বলল,
‘ অ্যাবোরশনের জন্য কোনো ঔষধ টৌষধ খেয়েছিস? কোনো স্টেপ নিয়েছিস? ও আছে নাকি মরে গেছে নীরু?’
অন্তুর শেষ কথাটা খুব অসহায়ের মতো শুনাল এবার। নীরা কাঁপা কন্ঠে বলল,
‘ আছে। ও ঠিক আছে। কিছু করিনি আমি।’
অন্তু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ সত্যি?’
নীরা মাথা নাড়ল। অন্তু পরমুহূর্তেই হুঙ্কার দিয়ে বলল,
‘ কিছু করিসনি! যদি কিছু করে ফেলতি তখন কী হতো?’
কথাটা বলেই খুব শক্ত করে বাহু চেপে ধরল অন্তু। নীরা অসহায় চোখে তাকাতেই গাল চেপে ধরে ভীষণ ক্রোধ নিয়ে বলল,
‘ আজ যদি কোনো অঘটন ঘটে যেত, আমি তোকে খুন করে ফেলতাম নীরু। বাচ্চা আমার অথচ তুই বাচ্চার জীবন মরণ নিয়ে আলোচনা করিস অন্য লোকের সাথে? বুক কাঁপে না? কাঁপে না বুক?’
ছেলের ঘরে অত্যাধিক চেঁচামেচিতে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন জাহানারা। তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ভয়ে জড়োসড়ো অয়ন। ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে কয়েক সেকেন্ড বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইলেন জাহানারা। পরমুহূর্তেই দুই ঘা বসিয়ে দিলেন ছেলের পিঠে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন,
‘ এই হারামির বাচ্চা! বউয়ের গায়ে হাত তুলিস। এতো সাহস! বাপের থেকে শিখছিস এগুলো? হ্যাঁ! বাপের থেকে শিখছিস? বের হ আমার বাড়ি থেকে। বের হ।’
অন্তু নীরাকে ছেড়ে দিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,
‘ যাদের কাছে গিয়েছিলি তাদের কাছেই যা। আমার সাথে থাকার দরকার তোর নাই। মেইন পয়েন্ট হলো, আমাকেই তোর দরকার নাই।’
জাহানারা বেগম চেঁচিয়ে উঠে বললেন,
‘ এই হারামির বাচ্চা তুই বের হ। আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে তুই বউয়ের গায়ে হাত তুলিস। কুলাঙ্গার। বের হ তুই।’
এতো চিৎকার চেঁচামেচিতে মাথা চেপে ফ্লোরে বসে পড়ল নীরা। অন্তু রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠল নীরা। পৃথিবী সমান দুঃখগুলো ভেসে উঠল তার আর্ত চিৎকারে। জাহানারা বেগম এই প্রথমবারের মতো নীরার মাথায় হাত রাখলেন পরম স্নেহে। হঠাৎ করেই পাশের মানুষটিতে নিজের মাকে দেখতে পেল নীরা। নীরার কান্না বেড়ে গেল। ঘেমে নেয়ে আচ্ছন্নের মতো কাঁদতে লাগল সে। অন্তু, নম্রতার প্রতি জন্মাল রাজ্যের ক্ষোভ। কেন এতো রাগ অন্তুর? কেন এতো জেদ? একটুও কী বুঝার চেষ্টা করা যায় না? নম্রতায় নিশ্চয় বলেছে সব? আর তো কেউ জানত না। এর আগেও ভালোবাসার কথাটা জানিয়ে দিয়েছিল নম্রতা। এবারও জানাল। না জানালে কী চলত না? ও কী জানে না, অন্তু কতটা ডেস্পারেট? একটুতেই মাথা গরম করা ছেলে? তবুও কেন জানাল সে? প্রতিবারই নীরার সুখ-সংসার এভাবেই কেন জ্বালিয়ে দেয় সে? কেন?
সেদিন রাতে আর বাড়ি ফিরল না অন্তু। সবটা শোনার পর জাহানারা বেগমও হ্যাঁ, না কিছু বললেন না। তার চেহারায় উচ্ছ্বাস যেমন দেখা গেল না। তেমনই দেখা গেল না কোনো বিষণ্নতা। নিজের মতো রান্নাবান্না সারলেন। ঘরের কাজ গোছালেন। কিন্তু পরেরদিন সকালেই নীরাকে অবাক করে দিয়ে, নীরাকে বগলদাবা করে পৌঁছে গেলেন হসপিটালে। বাচ্চা ঠিক আছে কি-না চেকআপ করালেন। নীরা ভীষণ বিস্ময়ে চেয়ে রইল শুধু।
#চলবে…