রাতের_নীরবতায়_নারীর_নিসঙ্গতা
.. মুনিরুল ইসলাম চঞ্চল
আমি নারী,
আমি, ঈশ্বরের অনুপম সৃষ্টি,
আমি, শিল্পীর শিল্পিত রূপ,
অনন্ত দহনে পুড়ে পুড়ে
আমি সুবাস বিলানো ধূপ।
এক একটা নির্ঘুম রাতে
নিজেকে বড় একা মনে হয়,
মৌন আঁধার রাতের কান্নায়
নিসঙ্গতার নোনা জল মিশে রয়।
কোনো কোনো গভীর রাতে
হটাৎ ঘুম ভেঙে যায়,
ফেলে আসা দিনগুলো সব
কড়া নাড়ে মনের আঙ্গিনায়।
বিছানাটাকে গারদ মনে হয়,
তৃষিত বুকে বয়ে যায়
মরু সাহারার ভীষণ ঝড়,
আকন্ঠ চুমুকে শেষ হয়
শিয়রে থাকা বোতলের জল ,
তবু থেকে যায় বুকের ভেতর,
আজন্মের এক তৃষ্ণা অটল।
জন্মান্তরের তৃষ্ণা এই বুকের ভিটায়,
এমন কি কোনো জল আছে
তেষ্টা যাতে সহজে মিটায়!
দূর থেকে ভেসে আসা
উদাসী পেঁচার কান্না আর
সারমেয়দের সম্মিলিত চিৎকার
কেন জানি আমাকে কাঁদায়,
অমানিশার এই নিকষ রাতে,
পেজা তুলো শুভ্র স্মৃতিগুলো
কেনোযে আমায় তাড়িয়ে বেড়ায়!
আদরের কিছু প্রিয় মুখ
ভীড় করে হৃদয়ের জানালায়,
যৌবন মাথা কুটে জীবনের আয়নায়।
গুমরে উঠা দীর্ঘশ্বাস চেপে ভাবি,
যতোই উঁকি দেক বিরহ বেদনা,
কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়া স্মৃতির ঝাঁপি,
রাতের কান্নায় কিছুতেই খুলবো না।
খুলে দিলেই আসবে প্লাবন,
চোখের তারায় নামবে শ্রাবণ।
ভাসিয়ে নেবে শ্রাবণের ঢল,
ভিজিয়ে দেবে প্লাবনের জল।
স্মৃতির প্লাবনে ভেসে ভেসে
আজ আমি বড় ক্লান্ত,
অশ্রু শ্রাবণে ভিজে ভিজে
আজ আমি বড় শ্রান্ত।
আমি আর প্লাবন জলে ভাসবো না
আমি আর শ্রাবণ মেঘে ভিজবো না।
আমি নারী,
স্বপ্ন আর সম্ভবনার কাব্য
পুরুষ ও প্রকৃতির সংশয়হীন গন্তব্য,
আমার মাঝেই প্রানের আধার
আমি অসাধারণ, আমি অনবদ্য!
কোন কোন বিরহী রাতে
খুব বেশি একা লাগে
ঘুমহীন এই আমার সাথে
অশ্রু ভেজা রাতটা জাগে
নিসঙ্গতার স্বাক্ষী হয়ে।
বুকের কান্না চেপে ভাবি
আজ আমি আকাশ দেখবো।
গুচ্ছ গুছ তারা দেখবো।
নক্ষত্রের সাথে কথা কইবো।
কতদিন দেখিনা আমি রাতের আকাশ!
কতোদিন গায়ে মাখি না
ভোরের সুবাস!
প্রতিদিনই ভাবি দেখবো রাতের আকাশ।
নাগরিক কোলাহলে হয়ে উঠে না!
রাত হলেই অশ্রুদেবী চোখে ভর করে,
কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ি নীরব অশ্রু জলে।
আমার আর রাতের আকাশ দেখা হয় না!
আমার আর ভোরের সুবাস গায়ে মাখা হয় না!
মায়াবী আঁধার রাত আমায় বিবাগী করে,
ভেজা চোখ মুছে;উঠে যাই ছাদে,
আঁধার মাখা রাতে; আকাশ দেখবো বলে।
রাতের আকাশের এই যে এতো মোহনীয় রুপ
দেখা হয় নাই তা আগে,
আজ এই কৃষ্ণপক্ষ রাতে
চাঁদ নেই মৌন আঁধারেতে!
তাই বুঝি সারাটা আকাশ জুড়ে,
তারার মেলায় নক্ষত্ররা রাজত্ব করে!
নিসঙ্গ আমি রাতের কান্না নিয়ে
হারিয়ে যাই হাজার তারার মাঝে।
সেই ছোটবেলায় ঘরের দাওয়ায়,
বাবার সাথে মাদুর পেতে শুয়ে
তারা চিনবার চেষ্টা করতাম।
কোনটা ধ্রুবতারা, কোনটা সপ্তর্ষিমণ্ডল,
কোনটা লুব্ধক, কোনটা অবসকিওর,
কোনটা সাইরাস, কোনটা অরিয়ন ??
আমি আবার ছোট হবো।
বাবার সাথে তারা চিনবো।
হটাৎ করেই ভাবনা ভাঙ্গে,
চোখের তারায় শ্রাবণ নামে।
আজ আমি কিছুতেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলবো না।
আজ আমি কিছুতেই স্মৃতির ভেলায় ভাসবো না!
এভাবেই নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সকাল হবে।
সকালটা কি আমার জন্য নতুন হবে?
আসবে কি ভোর আমার কাছে
নতুন করে বাঁচার মতো
নতুন কিছু স্বপ্ন নিয়ে!
নতুন করে বাঁচবো বলে
চোখের তারায় স্বপ্ন আঁকি,
স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার তরে
তারার আলো গায়ে মাখি,
নতুন ভাবে বাঁচবো ভেবে
নতুন আশায় বুকটা বাঁধি
দুঃখের তিমির রাত্রি শেষে
সোনালী সকালের আশায় থাকি।
নিসঙ্গ এক রাত্রি শেষে
ভোরের আলো আমায় ডাকে,
সকল ব্যাথার কান্না ভুলে
আবার আমি উঠি জেগে।
আমি নারী, আমি শাশ্বত।
আমি নারী, সৃষ্টির বিষ্ময়।
আমি নারী, জীবনের সুর
আমি নারী ধারণ করি
আগুন এবং আলো,
মানবিকতা এবং মাতৃত্ব,
পৃথিবী এবং পুরুষ।
______
[ আমার কথাঃ আমি খুব অনুসন্ধিৎসু হয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন নারী চরিত্রের বিভিন্ন ফেসবুক স্ট্যাটাস পর্যবেক্ষন করে দেখেছি যে একটা সময়ে প্রতিটি নারীই নিসঙ্গ বিষন্ন। স্বামী সন্তান আত্মীয় পরিজন পরিবেস্টিত হয়েও কোন কোন সময়ে সে নিসঙ্গ। নারীর এই একাকীত্ব টাই তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। নারী কখনও পিতার, ভায়ের, স্বামীর বা ছেলের, তার নিজস্বতা একসময় এমনই ক্ষয়ে যায় যে সে নিসঙ্গ হয়ে পড়ে। ব্যাক্তি নারী চরিত্র চিত্রন এখানে গৌন তাই নারীর সার্বজনীন চরিত্রটাই চিত্রন করেছি।
প্রতিটি নারী এই নিসঙ্গতা থেকে মুক্তি পাক, হয়ে উঠুক স্বমহিমায় ভাস্বর,শাশ্বত প্রেমময়ী, সফল ও সম্পূর্ণ। এটাই কাম্য।
2.একা রাতের কবিতা
এই তো সেদিন নদীর ধারে,
বসেছিলাম একা।
সূর্য ছিলো গোলগাল আর,
চাঁদটা ছিলো বাঁকা।
নৌকা গুলো দেখতে যেনো,
আস্ত একটা কাস্তে।
হঠাৎ করে মনটা বললো,
নদীর জলে ভাসতে।
নদীর ঘাটে রমনীদের,
বাড়ছে আনাগোনা।
জাল দিয়ে জেলে ভাই,
ধরছে মাছের পোনা।
চেয়ে দেখি হুটোপুটিয়ে,
এলো খোকার দল।
পানির মাঝে দাপিয়ে তারা,
ছুয়ে এসেছে তল।
দুর আকাশে কালো হয়ে,
ঘনিয়ে এলো মেঘ।
পাখিটাও উড়াউড়ির,
বাড়িয়ে দিলো বেগ।
ঝড়ে উঠছে তাই বুঝি,
খালি হলো তীর।
মাঝে মাঝে এমন স্বপ্ন,
মনে করে ভীড়।
কবিতাঃ নদী তীর।
,,,,,,,ইমন মৃধা,,,,,,।।
3. নির্ঘুম রাতের কবিতা
আমি একা,
বড্ড একা।
আমার একটা পাহাড় নেই—
মন খারাপে যে,
তার দেহ হেঁটে বেড়াবো।
আমার একটা সমুদ্র নেই—
মন খারাপে যে,
তাকে একটু ছুঁয়ে দেবো।
আমার একটা নদী নেই—
মন খারাপে যে,
তার পাড়ে বসে থাকবো।
তবে আমার একটা মাত্র আকাশ আছে
যে নাকি ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়,
সেও মন খারাপে মেঘাচ্ছন্ন থাকে
আমার মতো খুব কান্না করে।
তাই আমার বড্ড একা লাগে।
কেউ কি আছেন—
যার পাহাড়, সমুদ্র কিংবা নদী আছে।
আরে না না!
পাহাড়, সমুদ্র কিংবা নদী দিতে হবে না।
আপনি বরং আমার হলেই যথেষ্ট
কারণ আমি বড্ড একা!
—আমি বড্ড একা
—আকির হোসেন
4. নীরব রাতের কবিতা
একা থাকার সময়গুলো হলো
মানুষ চেনার সময়।
আপন মানুষ, পর মানুষ
কাছের কিংবা দূরের মানুষ।
নিঃশ্বাসের প্রতিটি শব্দ তখন
অর্থবোধক উক্তি দেয়।
দিন শেষে আসলে নিজেই নিজের সঙ্গী।
—– উম্মে কুলসুম লাইজু