#ত্রিংশ_প্রহর #Yasira_Abisha (#Fatha)
“বারবার কি আমি ইরাদের কাছেই ছোট হবো? আল্লাহ এইটাই তোমার বিচার? দুনিয়ায় কি আর ইরাদ ছাড়া অন্য কোনো ডাক্তার নেই? আমার সত্যি আর ভালো লাগে না। জীবনেও আমি কোনোদিন কারো কাছে ছোটো হইনাই আর তুমি আমাকে ইরাদের সামনে ছোটো হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে ফেলে দাও। আমার সত্যি এমন অশান্তি আর ভালো লাগে না। একবার হইসে হইসে, কিন্তু বারবার না। সাহিলের অবস্থা নাহয় ক্রিটিকাল ছিলো মায়ের ও কি ইরাদেরই অপারেশন করা লাগবে? আমি চাই না এমন কিছু। ইরাদের সামনে দাড়াতে আমার ভালো লাগে না। নিজেকে মনে হয় কোনোদিক দিয়ে আজকে ওর সামনে আমি ছোট আর এইটা আমি আসলেও সহ্য করতে পারি না। তুমি তো সব জানো আল্লাহ, তাহলে এমন কেনো হচ্ছে? আমাকে উত্তর দাও?”
মেঘা দাত খিটমিট করে কাদছে আর একা একা কথা গুলো মনে মনে বলছে। মেঘার রাগে সারা শরীর কটকট করছে কেমন একটা অজানা ভয় ও হচ্ছে আজকে। সকাল থেকেই জেনো কিছু ঠিক হচ্ছে না, সবকিছুই অশান্তি লাগছে।
.
এদিকে ভোর হয়ে গেছে, চারিদিকে আলো ফুটে গেছে ঠান্ডা পরিবেশ, তবে আকাশে সোনালি রোদ আকাশ ছেয়ে আছে আর গাছপালা ভর্তি পাহাড়ি পরিবেশ। এই পাহাড় গুলোর মনোরম সৌন্দর্য দেখে যে কেউ বিমোহিত হয়ে যাবে। তবে এতো কিছু থাকতেও ইরাদ বাইরের দিকে একটুও তাকাচ্ছে না।ইরাদের চোখ ঘুরে ফিরে রুহির দিকেই আছে, পুরোটা সময় ইরাদ বিমোহিত হচ্ছে রুহির ঘুমন্ত মুখটা দেখে। আজকে সবকিছুই রুহি আর ইরাদের জন্য সুন্দর, শুভ্র একপ্রকার স্নিগ্ধতা এসে জুড়ে গেছে ইরাদের মনে। অনেক বছর পরে ইরাদ শান্তিতে ঘুমিয়েছে। চোখ বুঝার সাথে সাথেই যেনো ঘুমের রাজ্যে রাতে পার লাগাতে পেরেছিলো ও।আর রুহি? ইরাদের ভালোবাসা পেয়ে জীবনের একটা সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণ হতে দেখছে। তাই তো সুখে ভোর হওয়ার পর ও ঘুম খুলে নি ওর। তবে বেশ ভালোই হয়েছে ইরাদের জন্য। ইরাদ রুহিকে মন ভরে দেখতে পারছে। কতো গুলো বছর রুহিকে না দেখে থেকেছে ও, রুহির থেকে দূরে থেকেছে। কিছুক্ষণ পরে রুহি চোখ খুলে দেখে ইরাদ মিটমিট করে হাসছে আর রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি একটা হাসি দিয়ে ইরাদকে বলে,
– গুড মর্নিং হ্যান্ডসাম
– গুড মর্নিং টু দা মোস্ট গর্জিয়াস লেডি।
রুহি একটু লজ্জা পায়, ইরাদ তখন কিছু না বলেই রুহিকে বিছানা থেকে কোলে তুলে ফেলে,
রুহি ভয় পেয়ে যায়
– আরে আরে কি হচ্ছে?
– ফ্রেশ হবেন না?
– হ্যাঁ তো?
– তো নিয়ে যাচ্ছি ফ্রেশ হতে
– আমি যেতে পারবো না?
– ডক্টর রুহি আপনার কি ভুলে যাওয়ার রোগ আছে?
রুহি ভ্রু কুচকে বলে
– তা কেনো হবে?
– তাহলে আপনি যে পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন এটা মাথায় নেই?
– ওইটুকুতে কিছু হবে না আমি পারবো হাটতে।
– কিন্তু আমি দিবো না, অনেক কষ্ট করেছেন আমাকে ছাড়া এখন থেকে আর কোনো রকম কষ্ট করতে দিবো না ইনশাআল্লাহ যতদিন বেচে আছি।
ইরাদের কথাটা শুনে রুহির চোখে অশ্রু চলে আসে।
রুহির গাল বেয়ে পানি পড়তে দেখে ইরাদ অবাক হয়ে যায়।
– আই এম সরি জান।
রুহি সে অবস্থাতেই ইরাদকে জড়িয়ে ধরে, আর বলে
– বোকা আপনি সরি কেনো বলছেন?
– আপনি পুরোনো কথা ভেবে কাদছেন যে তাই।
– উহুম আমি কত ভাগ্যবতী,যে আপনাকে পেয়েছি তাই ভেবে চোখে পানি চলে এলো। আর কষ্ট গুলো আপনি ইচ্ছে করে দেননি। আমি এটাও জানি। খুব ভালোবাসি আপনাকে।
– আমিও আমার নিজের চেয়ে বেশি আমার রুহিকে ভালোবাসি।
এমন সময় শুধা চাকমা ঘরে আসে আর ইরাদের কোলে রুহিকে দেখে হেসে উঠে,
-আচ্ছা এইজন্যই তো কইতাসি তোমরা খাইতে আসো না কেন, নাতিকে ডেকে গেসি। (ইরাদের কথা বলছিলেন) এখন জলদি আসো খাইবা।
রুহি আর ইরাদ খানিকটা লজ্জা পায় তার কথা শুনে।
রুহি- জ্বি আসছি নানু।
শুধা চাকমা চলে যায়।
ইরাদ নাস্তা করার পরে ২০ হাজার টাকা শুধা চাকমাকে দিয়ে বলে নানু আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন তার কোনো মূল্য কোনোদিন হতে পারে না তবে নাতি হিসেবে এইটুকু উপহার দিতে চাই। তখন তারা সাফ মানা করে দিলো এমন কিছুই নিবে না। তাদের বাসায় কেউ থাকে না রুহি আর ইরাদ আসায় তারা অনেক খুশি এবং ওরা যদি আরো দু-একদিন থাকে তবেই নাকি তারা খুশি হয়ে। তাদের আবদার রুহি বা ইরাদ কেউ ফেলতে পারে নি। আর তারা মধ্যবিত্ত ধরনের বয়ষ্ক একটা দম্পত্তি দেখে রুহি আর ইরাদের খুব মায়া হলো তবে তারা টাকাকড়ি নেবে না বলে, রুহি আর ইরাদ নিরুপায় হয়ে ভাবে তাদেরকে তাহলে আজকে বিকেলে কিছু গিফট কিনে দেওয়া যাক, সামনের বাজারের দিক থেকে। আর এদিকে সবাই সিলেট ও ফিরে যাবে আজকে অর্থাৎ রুহি আর ইরাদের কাজ ও শেষ তাই এখানে থেকে ও যাওয়া যাবে।
নাস্তা খাওয়ার পরে রুহি ঘরে বসে শুধা চাকমার সাথে কথা বলে আর ইরাদ বাজারে যায় দুপুরের বাজার করার জন্য। রুহির আজকে নিজেকে একদম বউ বউ লাগছে, ইরাদকে কতটা ভালোবাসে ও এটা জানতো তবে ইরাদ যে ওকে আসলেও ভালোবাসে এটা ধারনা ও করতে পারে নি।
ইরাদ ফিরে এসে দেখে রুহি ফোনে কথা বলছে,
– হ্যাঁ পাপা আমি একজনকে বিয়ে করতে চাই।
রুহির কথা শুনে ইরাদ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পরে, বাবা মেয়ের মাঝে হয়তো এখন যাওয়াটা ঠিক হবে না।
– হুম পাপা বাসায় সবাইকে ম্যানেজ করবে তুমি আমি কিছু জানি না।
– না পাপা অন্য ছেলে দেখবো না। যতই ভালো হোক প্লিজ।
– হুম ছেলে সিনিয়র ডক্টর, আমি এলে পরিচয় করিয়ে দেবো ইনশাআল্লাহ তোমার ভালো লাগবে। উনি তার জীবনে যতটা সফল তার থেকে উনি মানুষ হিসেবে আরো সফল। কেননা পাপা তার মতো পবিত্র মনের ও মাটির মানুষ আমি সত্যিই কোনোদিন দেখিনি।
– আচ্ছা পাপা রাখছি।
ইরাদ দরজার ওপাশে দাড়িয়ে মুচকি হেসে ভাবছে সত্যিই কি এই রকম ভালোবাসা ইরাদের জীবনে আসবে ওর স্ত্রী হয়ে? যে ওকে এতোটা সম্মান ও মূল্যায়ন করে।
(চলবে…)