এক সমুদ্র প্রেম পর্ব ৩
লেখনী: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
সারাটা কলেজ আমি রবিনকে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। ক্লাশেতো পাই-ইনি,এমনকি ফোনেও না। গত কাল ধরে লাগাতার ফোন দিয়েছি অথচ ছেলেটা ধরেনি। সেই যে শেষবার পালাতে বললাম তারপর আর না। ধূসর ভাই ওকে পেলেন কী না,ওর সাথে দেখা হলো কী না,কী কী বললেন, এসব জানার জন্যে আমার ভেতরটা আঁকুপাঁকু করছিল। ধূসর ভাই ওকে না পেলে আমি মিথ্যে বলেছি, ওমন কেন বললেন? আমি জানি,হতচ্ছাড়াটা ইচ্ছে করে আমার ফোন রিসিভ করছেনা। হয়ত ভাবছে আমার ফোন থেকে ধূসর ভাই ওকে কল করছেন! সত্যি,কী আজগুবি চিন্তা মানুষের!
আমার অস্থির অস্থির মনটা খুব বেশিক্ষন শান্ত থাকতে পারল না। টিফিন পিরিয়ডে তামিমকে একা দেখেই ছুট্টে গেলাম ওর কাছে। রবিনের কাছের বন্ধু ও-ই। গিয়েই জিজ্ঞেস করলাম,
” রবিন আসেনি কেন কলেজে?”
আমার অতর্কিত প্রশ্নে তামিম খানিক হতভম্ব হল। কয়েকদিন যাবত সহ্য করতে না পারা ছেলেটার খোঁজ খবর নেয়ার জন্যে কেমন করে তাকাল। পরপর চোখ ছোট করে বলল,
” কী ব্যাপার, তুই হঠাৎ ওর খোঁজ করছিস ?হু হু! ”
তামিম ভ্রু নাঁচালো। ও ঠিক কীসের ইঙ্গিত দিলো বুঝতেই আমি রামধম*ক দিয়ে বললাম,
” চুপ কর! আসেনি কেন তাই বল।
তামিম কাধ উঁচু করে বলল,
” আমি কী জানি? কাল বিকেল থেকেই তো লা-পাত্তা। মাঠে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কথা ছিল,সেখানেও আসেনি।”
আমি ঠোঁট কা*মড়ে কিছুক্ষন ভাবলাম। বললাম,
” ফোনে এনেছিস তুই?”
” এনেছি। “
আমি হাত পেতে বললাম ” দে।”
তামিম পকেট হাতাতে হাতাতে বলল
” রবিনকে ফোন করবি না কি!”
আমি উত্তর দিলাম না। হাতে ফোন পাওয়া মাত্রই রবিনের নম্বর খুঁজে ডায়াল করলাম। কয়েকবার রিং হওয়ার পরেই রিসিভ করল।
” হ্যা বল তামিম।”
” তুই কোথায়?”
অনাকাঙ্ক্ষিত মেয়েলী স্বরে রবিন থমকালো হয়ত। একটু চুপ থেকে বলল,
” কে?”
” আমি কে জেনে লাভ নেই। আগে বল তুই কোথায়? লুকোতে বলেছি বলে কী সত্যিই ইঁদুরের গর্তে গিয়ে ঢুকেছিস?”
চোটপাটের ধরনেই রবিন বুঝে ফেলল এটা আমি! সহজ হয়ে বলল,
” ও পিউ!
পরপরই উদ্বেগ নিয়ে বলল,
” লুকোবো না তো কী করব? তোর ধূসর ভাইকে বিশ্বাস আছে না কি! গতবার আমাদেরই এলাকার এক ছেলেকে মে*রে আধম*রা করে দিয়ে গেছে। ওই লোকের হাতের পরার ইচ্ছে নেই আমার। আমি যদি বুঝতাম,তুই ওনাকে গিয়ে নালিশ করে দিবি, বিশ্বাস কর কোনওদিন তোকে চিঠি দেয়ার ভুল করতাম না। এখন তার খেসারত হিসেবে আমাকে জান হাতে নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে।”
আমার ভীষণ হাসি পেল। গত পনের দিন যাবত রবিন আমার পেছনে ছুঁকছুঁক করছিল। তুই সম্বোধন টা চটজলদি পালটে হয়ে গেছিল ‘ তুমি’। আর আজ? ধূসর ভাইয়ের ভ*য়ে জায়গার গরু জায়গায়। ঠোঁট চেপে হেসে বললাম,
” আছিস কোথায়?”
রবিন থমথমে কণ্ঠে জানাল,
” বগুড়া এসেছি,নানা বাড়িতে।”
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম,
” কী? “
একটু আগের আটকে রাখা হাসিটা প্রচন্ড শব্দে বেরিয়ে এলো এবার । তামিম ভ্রু কুঁচকে তাকাল,চোখ পিটপিট করল। আগামাথা বুঝলোনা “কেন এত হাসছি”!
আমি হাসতে হাসতে বললাম,
” এই সাহস নিয়ে তুই এসেছিলি আমার সাথে প্রেম করতে? ভী*তুর ডিম। থাক ওখানেই থাক। রাখছি!”
রবিন আর পালটা উত্তরের সুযোগই পেলোনা। আমি লাইন কে*টে ফোন তামিমের হাতে দিতেই ও সন্দেহী কণ্ঠে বলল,
” তোদের মধ্যে কী চলছে বলতো?”
আমি প্রচন্ড অনীহা নিয়ে বললাম,
” তোর এই বন্ধু কী চলাচলের আদৌ যোগ্য? আমাকে সন্দেহ করলে ড্যাশিং কারো সাথে করবি।
উম, লাইক ধূসর ভাই? এসব আতিপাতি লোকের সঙ্গে নয়। ওকে? ”
আমি চলে এলাম। আর পেছনে তামিম বেকুব বনে চেয়ে থাকল। এই কথার মধ্যে ধূসর ভাই ঠিক কোত্থেকে এলেন,হয়ত সেটাই বোঝেনি।
টিফিনের পর আরো দুটো ক্লাস হয় আমাদের। প্রথম ক্লাস নেন কবিতা ম্যাম। দুমাস হলো এসেছেন আমাদের কলেজে। ভালোই শেখান। এই যেমন এখন,হোয়াইট বোর্ডে গ্রামার বোঝাচ্ছেন তিনি। সাথে সহজ করে বিশ্লেষণ করে দিচ্ছেন। অথচ আমার মনোযোগ ওদিকে নেই। আমার মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে ছুটছে ধূসর ভাইয়ের নাম। ওনার হাসি,কথা বলা,তাকানোর ধরন,রা*গলে ফুলে ওঠা ওনার সরু নাকের ডগা,আর কুঁচকে ফেলা ঘন ভ্রুঁ দুটো আমার রাতের ঘুম তো হা*রাম করেছেই , সাথে কে*ড়ে নিয়েছে সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান।
বোর্ডে ম্যামের লেখা একটা লাইন ও খাতায় তুলিনি আমি। উলটে ‘ধূসর ভাই’, ‘ধূসর ভাই’ লিখে পুরো পাতা ভরিয়ে ফেললাম।
আমার পরিষ্কার মনে আছে তিন বছর আগে ওনার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎকার। সে-ই যখন উঁকিঝুঁকি দিয়ে ওনার ওপর ক্রাশ খেলাম? তারপরপই একটা উদ্ভব ভাবনা উঁকি দিলো মনে। এমন সাদামাটা ভাবে কিছুতেই ওনার সামনে যাবনা আমি। পেছন দিক থেকে ওভাবেই ছুট লাগিয়ে কক্ষে এলাম নিজের। তাড়াহুড়ো করে ঝুঁটি বাধা চুল খুলে দিলাম,কপালে টিপ পরলাম, হাতে ডজন খানেক কচের চুড়ি,চোখে কাজল আর ঠোঁট ভর্তি লিপস্টিক মেখে ফের ছুটলাম বসার ঘরের উদ্দেশ্যে।
ধূসর ভাই লম্বায় আমার কাছে পাহাড়ের সমান। ওনার কাছে আমাকে এইটুকুন মনে হবে ভেবে সূচালো হিল অবধি পরেছিলাম পায়ে।
সমস্ত আত্মীয় স্বজন ওনাকে ঘিরে বসেছিল । দেশের বাইরে কেমন কাটল,শুকিয়ে গেল কেন,খাওয়া দাওয়া করেনা? এরকম হাজারটা প্রশ্নের মধ্যেই সেজো মা হঠাৎ আমাকে দেখেই বললেন,
” আরে পিউ,কোথায় ছিলিস তুই? আয় এদিকে আয়,ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে তোর? ”
ঠিক তখনি ধূসর ভাই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। আমার মনে হলো দৃষ্টি নয়,যেন ত*লোয়ার নিক্ষেপ করলেন উনি। যেটা নিমিষে বক্ষপিঞ্জর এফো*ড় ওফো*ড় করে দিয়ে চলে গেল। পাথর বানিয়ে রাখল আমাকে।
আম্মু বললেন, ” দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চাচি ডাকলেন না? এদিকে আয়।”
আমি এদের কী করে বোঝাব! আমি দাঁড়িয়ে নেই। পা দুটোই চলছেনা আসলে। কীভাবে চলবে,এই যে ধূসর ভাই এইভাবে চেয়ে রয়েছেন,এরপরেও আগাবে কার সাধ্যি?
আমি খুব ক*ষ্টে পা বাড়ালাম হাঁটতে। হিল পরার অভ্যেস একদমই ছিলনা। আমার হিল জুতো নেইও। তাই পরেছিও আপুরটা। দু পা হাঁটতে গিয়েই জুতো কাঁত হলো,আর আমি ধপাস করে পরে গেলাম ফ্লোরে। এক ঘর মানুষের মধ্যে আমার ইজ্জ্বতের দফারফা করতে সেটুকুই ছিল যথেষ্ট। ঘরভর্তি মানুষ হু-হা করে হেসে উঠেছিল আমার অবস্থায়। আর আমি, আমি রা*গে দুঃ*খে, অপ*মানে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁ*দে ফেলেছিলাম। ওভাবেই ধূসর ভাইয়ের সাথে ঘটেছিল প্রথম আলাপ। এরপর হাজারবার ওনার সামনে আছাড় খেয়ে পরেছি। কখনও ওনার রুমে,কখনও আমার রুমে,কখনও ওনার থেকে পালাতে গিয়ে,কখনও ওনার কাছে পৌঁছাতে গিয়ে। আমি মানুষটাই এরকম, আন্দাজহীন!
আর এসবের জন্যে দ্বায়ী ধূসর ভাই। মনটাতো নিলেনই, সাথে নিয়ে গেলেন আমার চিন্তাচেতনা! কী ফাজিল লোক!
” হাসছো কেন তুমি? ”
আচমকা এমন ক*র্কশ ভাষা শুনে চমকে উঠলাম। ধূসর ভাইয়ের ধ্যান কে*টে গেল। তটস্থ হয়ে আশেপাশে চেয়ে বুঝলাম পুরো ক্লাশ আমার দিকে তাকিয়ে। ম্যাম রীতিমতো সরু চোখে দেখছেন। এতগুলো দৃষ্টিতে ভ্যাবাচেকা খেলাম । ম্যাম রে*গে বললেন,
” স্ট্যান্ড আপ! “
আমি কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ালাম। ম্যাম এগিয়ে এলেন,
” আমি ক্লাস করাচ্ছি আর তুমি হাসছো? হাসার কিছু ঘটেছে এখানে?”
আমি মাথা নিচে করে দুপাশে দোলালাম।
” তাহলে হাসছিলে কেন? ”
” এম….
বলতে বলতে দেখলাম ম্যাম আমার খাতা হাতে তুলেছেন। আমার চোয়াল ঝুলে পরল । কলিজা লাফ দিলো ভ*য়ে। ঠোঁট দুটো বিড়বিড় করল,
স*র্বনাশ! ম্যাম পৃষ্ঠা ভর্তি ধূসর ভাই লেখাটা দেখে ক*টমট করে তাকালেন । ক্ষে*পে একাকার হয়ে বললেন,
” আউট! এক্ষুনি ক্লাশের বাইরে গিয়ে কান ধরে দাঁড়াও, যাও। ”
আমি মুখ কালো করলাম। ঠোঁট উলটে গুটিগুটি পায়ে ক্লাশের বাইরে এলাম। ম্যাম ভেতর থেকে উচু কন্ঠে বললেন,
” কান ধরো! “
তৎক্ষনাৎ কান ধরে দাঁড়ালাম। ক্লাসের ভেতরের কতগুলো ছাগল আমাকে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। ইচ্ছে করছিলো ইট দিয়ে বা*রি মে*রে দাঁত ভে*ঙে দেই। তোরা কান ধরলে ছবি তুলে রাখব দেখিস!
পুরো কলেজ দেখছে আমি কান ধরেছি। কিন্তু আমার একটুও খারাপ লাগছেনা। ভালোবাসার জন্যে মানুষ কত কী করে আর আমি একটু কান ধরতে পারবনা?
আধঘন্টা পার হয়েছে আমি দাঁড়িয়ে আছি। ম্যাম ক্লাস নিচ্ছেন তো নিচ্ছেন। ওনার কী মায়া-দয়া নেই? এতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা যায়? আমার যে পা ব্যা*থা করছে! একটু বসতে বললেও তো পারেন। আমি না হয় বসে বসে কান ধরতাম!
হঠাৎ বাইকের শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। অসময়ে,অপ্রত্যাশিত ধূসর ভাইকে দেখেই রীতিমতো ভড়কে গেলাম। ধূসর ভাইয়ের তো বাইক নেই। কার বাইক এটা? উনি বাইক থেকে নামলেন। একা নন,সাথে আরেকটি ছেলে আছে।
আচ্ছা, ধূসর ভাই এখানে এসেছেন কেন? আমার জন্যে?
এই ভিত্তিহীন ভাবনাটাতেই আমার চেহারা চকচকায়। খুশিতে চোখ ছলছল করে । ধূসর ভাই সিনেমার হিরোর মত আমার টানে চলে এসেছেন ভেবেই আটখানা হয়ে পরলাম আনন্দে।
অকষাৎ মনে পড়ল আমি শা*স্তিস্বরূপ কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি। খুশি,আনন্দ, ওমনি লেজ গুঁটিয়ে পালিয়ে গেল । যে লজ্জ্বা এতক্ষন পাইনি সেই লজ্জ্বায় হাঁ*সফাঁ*স করে উঠলাম। প্রথম বার ধূসর ভাইয়ের উপস্থিতি আমার ভালো লাগল না। আসার আর সময় পেলেন না উনি? এই অবস্থায় আমাকে দেখলে প্রেসটিজ যা আছে সব শেষ! ধূসর ভাই আমাকে খেয়াল না করেই কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকলেন।
আমি স্তম্ভের মত দাঁড়িয়ে। খুব করে চাইলাম উনি বের হওয়ার আগেই ম্যাম ডেকে পাঠাক,বসতে বলুক। বিধিবাম! এমন কিছুই হলোনা। বেশ কিছুক্ষন পর ধূসর ভাই বের হলেন। সাথে কলেজের অধ্যক্ষ । আমি ভুলেও ওদিকে তাকালাম না। উলটে চোখমুখ খিঁ*চে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভীষণ রকম চাইলাম,ধূসর ভাই আমাকে না দেখুক।
কিন্তু হলোনা। টের পেলাম ক’জোড়া পা আমার দিকে এগোচ্ছে। আস্তেধীরে চোখ ওঠাতেই দেখলাম, ধূসর ভাই,স্যারকে নিয়ে আমার দিকেই আসছেন। আমার সমস্ত চাওয়া পাওয়া ফুস করে উড়ে গেল। হাওয়াই মিঠাইর মতন চুপসে এলো।
স্যার ঠিক সামনে এসে অবাক কন্ঠে শুধালেন,
” কী ব্যাপার পিউ, এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
আমি ভ*য়ে ভ*য়ে ধূসর ভাইয়ের দিক তাকালাম। ওনার ভাবমূর্তি বোঝা গেলনা। রে*গে, না কী খুশি হয়ে দাঁড়ানো দ্বিধাদ্বন্দে ভুগলাম।
স্যারকে দেখেই ম্যাম ক্লাসরুম থেকে এগিয়ে এলেন।
” কিছু হয়েছে স্যার?”
” মেয়েটা এভাবে দাঁড়িয়ে কেন ম্যাম? কোনও সমস্যা?”
ম্যাম মুহুর্তেই বিরক্ত হয়ে বললেন,
” পিউ দিন দিন পড়াশুনায় অমনযোগী হয়ে পরছে স্যার। আমি বোর্ডে যা লিখেছি নোট তো করেইনি, উলটে হাবিজাবি লিখে খাতা ভরিয়ে ফেলেছে। ”
আমার বুক হুহু করে উঠল চি*ন্তায়। ভেতরে ভেতরে হা হুতা*শ লাগাল।
” হে আল্লাহ! স্যার বা ধূসর ভাই কেউ যেন প্রশ্ন না করেন আমি কি লিখেছি খাতায়। “
হলো, এবার আমার প্রার্থনা কবুল হলো। কেউই জিজ্ঞেস করলেন না। তবে স্যার নম্র কণ্ঠে আমাকে বললেন,
” এরকম টা তোমার থেকে আশা করা যায়না পিউ। তুমি ব্রাইট স্টুডেন্ট। সে যদি এরকম করে…. বিষয়টা হতাশাজনক! “
আমি চোখ নামিয়ে আস্তে করে বললাম,
” স্যরি স্যার!”
স্যার থেমে গেলেন না। এরপরেই আমার সবথেকে অপছন্দের আর বিদ*ঘুটে লাইনটা আওড়ালেন,
,
” তুমি ধূসরের বোন। ধূসরের রেজাল্টস তো ব্রিলিয়ান্ট ছিল। তোমারও উচিত সেভাবে আগানো।”
দিলো, আমার মেজা*জটাই খারাপ করে দিলো এই ভদ্রলোক। মাথা নিচে রেখেই আমার ভ্রু কুঁচকে এলো। ইচ্ছে করল স্যারের কানের কাছে গিয়ে চেঁচিয়ে বলি, “আমি ধূসর ভাইয়ের বোন নই, বুঝেছেন আপনি?
স্যার একের পর এক উপদেশ দিচ্ছেন। আমাদের সব ভাইবোন এই কলেজ থেকেই পাশ করে বেরিয়েছে। কারন ভালো কলেজ,আবার বাসার কাছে। সে অর্থে ধূসর ভাইও এই কলেজের প্রাক্তন স্টুডেন্ট।
আমি চোখা চোখে একবার ধূসর ভাইয়ের দিকে তাকালাম। ঠিক তক্ষুনি উনি স্যারকে বললেন,
” আমার মনে হয় আপনাদের আরেকটু স্ট্রি*ক্ট হওয়া দরকার। ক্লাশে মনোযোগ না দিলে শুধু কান ধরানোই নয়, প্রয়োজন পরলে হাফ চেয়ার বানিয়ে রাখা উচিত।”
আমি হা করে ওনার দিকে তাকালাম। শ*ত্রুতো আমার ঘরে রে ভাই! কোথায় আমি এতক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে দেখে,উনি ক*ষ্টে ম*রে যাবেন। তা না!
” আমি এখন আসছি স্যার। আপনি কিন্তু আসবেন!”
ধূসর ভাইয়ের কথাটায় স্যার গলেগলে বললেন,
” আরে নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই! তুমি নিজে এলে আমন্ত্রন জানাতে আমি আসবনা?”
” থ্যাংক ইউ।”
স্যারের সাথে হাত মিলিয়ে ধুসর ভাই চলে গেলেন। একবার পেছন ফিরে আমায় দেখলেন অবধি না। কি নি*র্দয় মানুষ! আমার অভিমান হলো। ছোট্ট হৃদয় খানা দুঃ*খের সাগরে ভেসে গেল। উনি আমার জন্যে নয়,এসেছিলেন কোনও একটা প্রোগ্রামের জন্যে স্যারকে নিমন্ত্রন করতে। প্রতিবার কেন আমার মনটাই ওনার খানখান করে দেয়ার জন্যে পছন্দ হয়? আমি শ*ক্ত হলাম। প্রতিজ্ঞা করলাম ” আজ থেকে ওনার জন্যে পাগলামো করা বন্ধ। হুহ!”
ম্যাম আমাকে ক্লাশে যেতে বললেন। হঠাৎই আমার প্রতিজ্ঞা ঘুরে গেল। যেতে যেতে ভাবলাম,
” এইটুকুতেই কেন হার মানব আমি? না না,ধূসর ভাই তো আর বোঝেন না আমি তাকে ভালোবাসি। বুঝলে কখনওই এরকম করতেন না। এই সামান্য কারনে পিউ ধূসর ভাইয়ের পিছু ছাড়বে? নট পসিবল!
একটু আগের মান অভিমান উড়িয়ে দিলাম বাতাসে। হাসি হাসি মুখ করে বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। আমার বেস্টফ্রেন্ড তানহা এগিয়ে এলো। ম্যামের চোখ এড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
” হাসছিস কেন পিউ? এভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে তোর লজ্জ্বা করছেনা?”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
” নিজের কানইতো ধরেছি,লজ্জ্বা করবে কেন?”
তানহা তব্দা খেয়ে কিছুক্ষন বোকার মত চেয়ে রইল আমার মুখের দিকে। আমি ম্যামের দিক চোখ রেখেই বললাম,
” গ্রামার আমার চেহারায় না। বোর্ডের দিক তাকা।
মেয়েটা ধাতস্থ হয়। হা করা মুখটা তৎক্ষনাৎ বন্ধ করে বোর্ডের দিকে ফেরে।
আর আমি গালে হাত দিলাম। খুব করে ভাবতে বসলাম ” কী করলে ধূসর ভাই বুঝবেন আমি ওনাকে ভালোবাসি?”
___
কলেজ,কোচিং সব সেড়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয় আমার।
যেহেতু শীতের সময়, বেলাও বেশ ছোট। সাদিফ ভাই সন্ধ্যার পরপর বাড়ি ফেরেন। এইতো, এক্ষুনি এসেই ধপ করে বসে পরলেন সোফায়। যার অন্য মাথায় বসে ছিলাম আমি। উনি ক্লান্তিতে মাথাটা এলিয়ে দিলেন পেছনে। আমি টেলিভিশনে মুভি দেখছিলাম। ইন্টারেস্টিং সিন চলছে। চোখমুখ সিরিয়াস।
তখনি সাদিফ ভাই মাথায় টোকা দিয়ে বললেন,
” সারাক্ষন টিভি দেখিস। এক গ্লাস পানি নিয়ে আয় যা।”
আমি একটু বিরক্তই হয়েছি। তবে সাদিফ ভাইয়ের শ্রান্ত মুখখানা দেখে মায়াও হলো। উঠে গেলাম দ্বিরুক্তি না করে। গ্লাসে পানি এনে হাতে দিলাম৷ নেয়ার সময় সাদিফ ভাই তাকালেন,সাথে হাসলেন চমৎকার করে। আমিও মৃদূ হাসলাম উত্তরে। সাদিফ ভাইকে পানি দেয়ার কাজটা নতুন নয়। এটা যেন আমারই। উনি অফিস থেকে ফিরেই আমার থেকে পানি চাইবেন। তাতে চোখের সামনে থাকি, বা না থাকি। রুমে থাকলেও নাম ধরে ডেকে আনবেন নিচে, তারপর সুন্দর করে হেসে বলবেন
” এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়।”
তাতে আশেপাশে লোক থাকুক বা না থাকুক। এ নিয়ে প্রথম প্রথম ভীষণ চোটপাট করেছি। এটা কী আমার চাকরি না কী?
তারপর ভাইয়া ঠিক করলেন, প্রতিদিন প্রতি গ্লাস পানির জন্যে একশ টাকা বরাদ্দ। এই চাকরি পাওয়ার জন্যে আপু,রাদিফ কম চেষ্টা করেনি। অথচ সাদিফ ভাইয়া যেন পণ করে বসেছেন উনি আমাকেই নিয়োগ করবেন, অন্য কাউকে না।
সাদিফ ভাই পেশায় একজন ” Chartard Accountant “। সবে সবে চাকরি পেয়েছেন উনি। স্যালারিও আলহামদুলিল্লাহ!
আর এতেই উনি হয়ে উঠেছেন, আমাদের পরিবারের চোখের মনি। প্রথম প্রথম বাবা-কাকারা চাপ দিয়েছিলেন ব্যাবসায় যোগ হতে। কিন্তু না,সাদিফ ভাই প্যাশন ছাড়বেন না।
ধূসর ভাই অবশ্য সাদিফ ভাইকে ছোট থেকেই ভীষণ আদর করেন। পিঠা-পিঠি তো,মিলটাও বেশি৷ সাদিফ ভাইকে নিয়ে আমার বাবা-চাচাদের বেশ গদগদ ভাব৷ দিনরাত ওনার নাম জপলেও কম হবে হয়ত। সাদিফ ভাই শান্ত,ধীরস্থির, হাসিখুশি ধরনের মানুষ। অথচ ধূসর ভাই, বাউন্ডুলে,বেপরোয়া, অশান্ত গোছের। পরিবারের দুই ছেলে দুইরকম। আর এই নিয়েই বাকীদের যত চিন্তা। বিশেষ করে আমার বাবার,আর ওনার বাবার। আমাদের চাচাতো ভাইবোন সবার মধ্যে সব থেকে ব্রিলিয়ান্ট বয় হচ্ছেন ধূসর ভাই। সে নিয়েই ওনাদের যত আহাজারি,হাহা*কার । কারন,মেধা কাজে লাগাচ্ছেন না ধূসর ভাই, এরকমটাই তাদের ধারনা। কিন্তু কী আর করার! ধূসর ভাই কথা শুনতে রাজি, কিন্তু রাজনীতি ছাড়তে নয়। ওনার সামনে দিনরাত ‘রাজনীতি ছাড়ো’ ‘রাজনীতি ছাড়ো’ বলে হেদিয়ে ম*রলেও লাভ হবে বলে, আমার মনে হয়না। অন্যদিকে মা চাচীদের আদরের দুলাল হচ্ছেন ধূসর ভাই। সেজো মা তো মাঝে-মধ্যে ভুলে যান ওনার আপন ছেলে কোনটা। দুইভাই খেতে বসবে কিন্তু সেজো মা খাতির যত্নে ভরিয়ে দেবেন ওনাকে।
সাদিফ ভাই চটপটে ভঙিতে গ্লাস ফাঁকা করলেন। লম্বা করে শ্বাস ফেলে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি কপাল গুঁটিয়ে বললাম,
” আপনার খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করা দরকার সাদিফ ভাইয়া।”
প্রথম বার আমার থেকে ধারনাতীত কিছু শুনে ভাইয়া অবাক হলেন।
” কেন? ”
” এই যে আপনাকে পানি দিতে গিয়ে আমি মুভির কতকিছু মিস করি,একটা ভাবি থাকলে এটা আর হবেনা।”
” ফ্রিতে খাওয়াস? স্যালারি দেইনা?”
আমার কথা আটকে গেল। আসলেই তো, আমিও কোনও ভাবে সাদিফ ভাইয়ের বেতনভুক্ত কর্মচারী।
সাদিফ ভাই উঠে দাঁড়ালেন রুমে যাবেন বলে। তবে যাওয়ার আগে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন,
” এই রহস্য একদিন বুঝবি পিউ। আরেকটু বড় হ, তারপর বলব।”
ভাইয়া চলে গেলেন। আমি কৌতুহলী হয়ে চেয়ে রইলাম সেদিকে। আঠের তে পা দেব,আর কত বড় হব? আর কী এমন কথা, যা তখন বলবেন, এখন না?
____
ধূসর ভাইকে সকালে নাস্তার টেবিল ছাড়া পাওয়া যায়না। উনি খুব কম খেতে বসেন সবার সাথে। দুপুরে তো আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকি। রাতে উনি ফেরেন খাওয়া দাওয়ার পর। অবশ্য তা এই কদিন যাবত। কারন ওনাদের দলের মেয়র নির্বাচন সামনে। সে নিয়েই ছোটাছুটি করছেন ।
আজ শুক্রবার। একমাত্র সাদিফ ভাই ছাড়া বাকী সকলের ছুটির দিন। ধূসর ভাই এদিনেও বাড়ি থাকেন না । উনি খুব চেষ্টা করেন যাতে আব্বু,চাচ্চু এদের সামনে না পরতে হয়। পরলেও তাদের এক প্রশ্ন, ‘ব্যবসায় জয়েন করবে কবে? আর কত রাজনীতি করবে,এবার ওসব ছাড়ো। ‘
এসব শুনে শুনে আমার নিজেরই কান পঁ*চে গেছে সেখানে ধূসর ভাইয়ের না জানি কত খারা*প অবস্থা!
আজ সকালে আমি আগে আগে এসে চেয়ারে বসেছি। যত্ন করে পাশের চেয়ারটা খালি রেখেছি। ধূসর ভাই আসবেন,বসবেন এখানে। রাদিফ বাঁদড়টা খুব চেষ্টা করলো। অথচ আমি কিছুতেই ওকে বসতে দিলাম না। বয়সে ওর থেকে আট বছর বড় হয়েও সমানতালে বাচ্চামো করলাম। আম্মু ধ*মকালেন,আপু চোখ পা*কাল
। কিন্তু আমার অটল সিদ্ধান্ত বদল হলোনা। এটা ধূসর ভাইয়ের জন্যে। উনি বসবেন আর আমি খাওয়ার সাথে সাথে একটু একটু আড়চোখে তাকাব। এই অনুভূতি কী কাউকে বোঝানো যায়?
কিন্তু প্রতিবারের মত আমাকে আ*হত করে দিয়ে, সাদিফ ভাইয়া দুম করে বসে পরলেন। আমি বারনও করতে পারলাম না। এই মানুষ টা কে নিয়ে আর পারিনা! কত্তগুলো চেয়ার ফাঁকা এখানেই বসতে হলো? আমার মন খা*রাপ হলেও টু শব্দ করতে পারিনি। ওপাশ থেকে আপু কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
” তুই কি এতক্ষন সাদিফ ভাইয়ার জন্যে চেয়ার ধরে রেখেছিস?”
আমি দুদিকে মাথা দোলাতে গিয়ে খেয়াল করলাম সাদিফ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে। তৎক্ষনাৎ ওপর নিচে দুলিয়ে বোঝালাম ” হ্যাঁ। ”
সাদিফ ভাই মুচকি হেসে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। আর আমি বসে রইলাম থমথমে চেহারায়।
আম্মু পরোটা সেঁকে প্লেট ভরে নিয়ে এলেন। ছোট মা তার থেকে একটা নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে ছিড়লেন। ওনার পাশেই চেয়ারে দুপা উঠিয়ে বসে রিক্ত। আমাদের পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। বয়স মাত্র আট হলেও পাঁকামোতে এগিয়ে। চাচী এখনও খাইয়ে দেন ওকে। মাঝে মাঝে আমরাও দেই।
সেজো চাচি আম্মুকে বললেন,
” আপা তুমি এখন বসো। আমি বাকিটা সামলাই।”
আম্মু ঘাড় নাড়লেও বসলেন না। একিরকম কাজে ব্যস্ত রইলেন। বাড়ির বড় বউ হওয়ায় ওনার কাঁধে দায়িত্বের ভীষণ চাপ । এমনটা নয় যে কেউ চাপিয়ে দিয়েছে,আম্মু আসলেই এরকম। কাজ ছাড়া দুদন্ড বসে থাকতে পারেন না। আম্মু পুরো টেবিলে একবার চোখ বুলিয়ে বললেন,
” একী! ধূসর এখনও আসেনি?”
রান্নাঘর থেকে মেজো মা উত্তর দিলেন,
” রাত করে ফিরেছে আপা। ঘুমোচ্ছে মনে হয়।”
আম্মু আপুকে বললেন,
” এই যা তো, তোর ধূসর ভাইকে ডেকে দিয়ে আয়।”
আমি চকিতে তাকালাম।
তড়িঘড়ি করে বললাম,
” আপু থাক,আমি যাচ্ছি।”
অনুমতির তোয়াক্কা করলাম না।
কেউ কিছু বলার আগেই ছুট লাগালাম। সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ছোট মা সাবধান করছিলেন,
” আস্তে আস্তে,পরে যাবি।”
কে শোনে কার কথা! আমি এক দৌড়ে ধূসর ভাইয়ের ঘরে ঢুকে গেছি। ওনার ঘরের দরজা চাপানো ছিল। আমার জোরাল ধা*ক্কায় দেয়ালের সঙ্গে লেগে, বি*কট এক শব্দ হলো। আর আমি থমকে দাঁড়ালাম, ভড়কে গেলাম। চকিতে বিছানার দিক তাকালাম। না, ধূসর ভাই জেগে যায়নি। মুখ ফুলিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলে পিলপিল পায়ে এগোলাম ওনার দিকে। ধূসর ভাই উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছেন। ভারি নিঃশ্বাস পরছে ওনার। কোমড় অবধি টানা কম্বলে, ওনার উদাম শ্যামলা পিঠ উন্মুক্ত। এই শীতে কে খালি গায়ে শোয়? আমি তো পারলে আরো দশটা ব্লাঙ্কেট গায়ে পরতাম। আমি আস্তেধীরে গিয়ে ওনার মাথার কাছে বসলাম।
না বিছানায় নয়, ফ্লোরে হাটুভেঙে বসেছি। তারপর গালে হাত দিয়ে নিপুন অভিনিবেশে দেখতে শুরু করলাম আমার ধূসর ভাইকে। ইশ! কী নয়নাভিরাম মুখশ্রী ওনার!
কেন সবাই সাদিফ ভাইকে সুন্দর বলে? ওরা কী আমার চোখ দিয়ে কখনও ধূসর ভাইকে দেখেনি? এই যে মানুষটা ঘুমিয়ে আছে, এতেও যেন পৃথিবীর সবথেকে শোভিত পুরুষ লাগছে ওনাকেই। আমি হাত দিয়ে ওনার মাথার চুল এলোমেলো করে দিলাম। ওনার চাপদাড়ি ভর্তি গালটা টেনে দিলাম পরপর।
মিহি কন্ঠে মিষ্টি করে ডাকলাম,
” শুনছেন? উঠুন। সকাল হয়েছে তো!
ধূসর ভাই একটু নড়ে উঠলেন। উপুড় থেকে সোজা হয়ে শুলেন। চোখ না খুলে ঘুমঘুম কণ্ঠে আওড়ালেন
” উম,পরে…!
আমি মিটিমিটি হেসে ওনার পাশ ঘেঁষে বসলাম। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
” আচ্ছা ধূসর ভাই, সারাজীবন আপনাকে এভাবে ঘুম থেকে তোলার দায়িত্বটা আমাকে দিতে পারেন না আপনি? আমি আমার এই নরম হাত দিয়ে প্রতি ভোরে আপনার জন্যে চা বানাব। তারপর রুমে এসে আলতো করে ছুঁয়ে দেব আপনাকে। পৃথিবীতে যতরকম মধু পাওয়া যায় সব আমার কণ্ঠে মিশিয়ে ডাকব,
” ওগো শুনছো, তোমার চা এনেছি। উঠবেনা?
ঘুমে জুবুথুবু ধূসর ভাই জবাব দিলেন না। ওনার এত গভীর ঘুম দেখে দারুন এক দুষ্টুমি চেপে বসল আমায়। ডান হাতের তর্জনী ওনার কপাল ঠেকালাম। তারপর ওনার নাক ছুঁয়ে ধীরে ধীরে সোজা টেনে নামাতে শুরু করলাম। যেই মাত্র আঙুলটা ওনার ঠোঁট বরাবর এনেছি, ওমনি খপ করে ধরে ফেললেন ধূসর ভাই। আমি আঁ*তকে তাকালাম ওনার দিকে। ধূসর ভাই চোখ মেলেছেন। তক্ষুনি, আমার ভেতরটা চেঁচি*য়ে বলল,
” আব তেরা ক্যা হোগ্যা পিউ?”
চলবে,………………….
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/somudro/
আমি রিচেইক করার সময় পাচ্ছিনা। তাই বানান ভুল হতে পারে।