#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ২৩
#Writer_Mousumi_Akter
র*ক্তশূন্য মুখ টা কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে মৃথিলার।এমনিতেই তার শরীরে ফর্সার কমতি নেই তারউপর তীব্র র*ক্তক্ষরণ এ সাদা শরীর একদম ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।সুপ্তির মন কাঁদছে মনের কাঁন্না সব বাঁধা ভেঙে চোখে বৃষ্টি হয়ে ঝরছে।পৃথিবীর কেউ জানেনা কেনো মৃথিলার প্রতি তার এত ভালবাসা।কেনো এত টান?এটা আত্মার টান। সুপ্তি মৃথিলার হাত ধরে কাঁদছে আর বলছে,
‘এই মিথু জানিস আমার কেমন লাগছিলো।পুরো পৃথিবী ঘুরছিলো আমার।আমি বোধ হয় পা*গ*ল হয়ে যেতাম রে তোর কিছু হলে।আমি একবার যদি তাকে পাই আমি ছা*ড়*বো না তাকে।শুধু একবার তাকে পাই পৃথিবীতে তার শে*ষ দিন হবে।তাকে মে*রে জেলে গিয়ে বসে থাকবো তাও আমার মন শান্তি পাবে এটা ভেবে যে তোকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে শাস্তি দিতে পেরেছি আমি।’
মৃথিলা দূর্বল কন্ঠে বললো,
‘আমি সুস্থ হয়ে গেছি গাধী মহিলা।আমি জানি তুই ছাড়া আমি ম*রে গেলে কাঁদার কেউ নেই।আমার তো আর কেউ নেই সুপ্তি এই দুনিয়াতে।’
সুপ্তি এবার একটু কঠিন গলায় বললো,
‘ম*র*তে ম*র*তে বেঁচে উঠেছিস তুই।আমার ম*রা*র কথা বলছিস কেনো তুই।তোকে বাঁচতে হবে মিথু।তোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কি আমি কম চেষ্টা করেছি।বারবার তুই মৃ*ত্যু*র মুখে পড়েছিস।ভুলে গেছিস অতীত।’
‘না সুপ্তি কিছুই ভুলি নি।ভয়ানক অতীত ভোলা যায় না।’
নিরব সুপ্তির কথা গুলো খুব ভালোভাবে অভিজ্ঞ মস্তিষ্ক দিয়ে শুনছে।বারবার মৃ*ত্যু*র মুখে পড়েছে ব্যাপার টা বোধগম্য হলোনা নিরবের।
‘তবে একটা জিনিস কি জানিস মিথু আমার থেকেও তোকে কেউ বেশী ভালবাসে।যে ভালবাসার পরিমাপ করার সাধ্য কারো নেই।যে ভালবাসার তুলনা পৃথিবীর কোনো কিছুর সাথেই করা সম্ভব নয়।ভালবাসার মানুষের কিছু হলে একটা মানুষ যে এভাবে নিশ্চুপ হয়ে যেতে পারে সেটা তাকে না দেখলে বুঝতাম না।’
‘কার কথা বলছিস।’
‘নিরব ভাইয়া।’
মৃথিলার হৃদয়ে গিয়ে ধারালো ছুরির মতো বিঁধলো কথাটা।মৃথিলা সাথে সাথে নিরবের ব্যাথিত মুখের দিকে তাকালো।নিরব ও তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।মৃথিলা স্পষ্ট খেয়াল করলো নিরবের চোখ মুখ আহত,ব্যাথিত, ভেঙে চুরে চূর্ণ বিচূর্ণ।এ কদিনে যে নিরব কোনো আহার মুখে দেয় নি সেটা নিরবের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে।এলোমেলো চুল,ক্লান্ত শরীর, চোখ লাল সব কিছুই ভীষণ বিষন্নতার প্রমান দিচ্ছে।হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হলে সেটা গোপন রাখা যায় না।মুখশ্রীতে তার প্রভাব পড়বেই।
নিরা এবার গাল ফুলিয়ে বললো,
‘ভাবি এটা কি বললে।আমি কি ভালবাসিনা তোমায়।মা বাবা ও খুব ভালবাসে তোমায়।আমরা সবাই ভালবাসি তোমায়।সবাই তোমার জন্য কত কষ্ট পাচ্ছিলো জানো।’
মৃথিলা মন খারাপ করা কন্ঠে বললো,
‘আমার কপালে এত সুখ ও ছিলো।সব হারিয়েও যেনো অনেক কিছু পেয়েছি।নিজেকে আজ খুব সুখি মনে হচ্ছে।’
সবাই বিভিন্ন প্রশ্ন করছে মৃথিলাকে।মৃথিলার কষ্ট হচ্ছে কিনা?খারাপ লাগছে কিনা।সুস্থ হয়ে যাবে খুব শিঘ্রই বিভিন্ন প্রশ্ন করে যাচ্ছে।কিন্তু নিরব স্হির হয়ে ভেবে চলেছে মৃথিলাকে ধাক্কাটা কে মারলো।দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর ভেবে চলেছে।নিরব বারবার স্মৃতিচারণ করে চলেছে সেদিন সন্ধ্যায় কারা কারা এসছিলো বাইরের কে কে এসছিলো।সবার মুখ স্পষ্ট হচ্ছেনা দু’একজনের মুখ অস্পষ্ট।অভিজ্ঞ চোখে নিরব মৃথিলার দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে আবার নবনিতার দিকে তাকালো।মৃথিলা আবার নবনিতাকে সেফ করার জন্য মিথ্যা বলছেনা তো।মৃথিলাকে এতদিনে নিরব খুব ভালোভাবে চিনে গিয়েছে সে মানুষকে ক্ষমা করতে জানে।কেউ তাকে কষ্ট দিলেও সে প্রতিশোধ নেওয়া মেয়ে নয়।এত কিছুর পরেও সে নীলাভ কে ক্ষমে করেছিলো।তাছাড়া মৃথিলা কোমলতার প্রতীক।কয়েকদিন আগেও নবনিতার বাবা পিস্তল ধরেছিলো তবুও মৃথিলা অভিযোগ করেনি।এবার ও কি তাই করছে।রহস্য আর সন্দেহ ঘিরে রেখেছে নিরব কে।নিরব মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো,
‘মৃথিলাকে যে মৃত্যুর পথে নিতে চেয়েছিলো তাকে ও সে জীবীত রাখবে না।’
সবার সব কথার মাঝে মৃথিলার মনে পড়লো তার বাচ্চার কথা।তার পি*রি*য়*ড হচ্ছে অস্বাভাবিক ভাবে তাহলে কি বাচ্চাটা নেই।হঠাত মৃথিলা বলে উঠলো,
‘ আমার বাচ্চার কিছু হয়নিতো।’
মৃথিলার এক প্রশ্নে সবাই থমকে গেলো।সবার মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেলো।সবার মুখ মলিন হয়ে গিয়েছে।মৃথিলা সবার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কেউ কিছুই বলছে না।নিরব কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।এখন বাচ্চাটা নেই শুনলে যদি মৃথিলা আবার অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে কি বলবে সে।নিরব নিজেকে কন্ট্রোল করতে আর স্বাভাবিক রাখতে বেডের সাদা চাঁদর খামছে ধরে রেখেছে।মৃথিলার মন বলছে তার বাচ্চা নেই তবুও প্রশ্ন করছে যদি পজিটিভ কিছু উত্তর সে পায়।নিরব উপর দিকে তাকিয়ে আছে।মৃথিলা সুপ্তিকে বললো,
‘সুপ্তি কি হয়েছে। কিছুতো বল।’
সুপ্তি মলিন মুখে বললো,
‘বাচ্চাটা নেই মৃথিলা।’
বাচ্চাটা নেই শুনেই মৃথিলা উঠে বসার চেষ্টা করলো।কিন্তু মাথার ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো।
ইরিনা হাসান মৃথিলাকে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করে বললেন,
‘মা আমার নীলাভের শেষ চিহ্ন ছিলো তোমার পেটে।কিন্তু তোমার জীবনের থেকে তো বাচ্চা বড় ছিলো না।তুমি বেঁচে আছো আলহামদুলিল্লাহ।যে পৃথিবীতে আসার ছিলোনা তাকে আনার ক্ষমতা আমাদের নেই।’
ইরিনা হাসানের চোখে পানি।ইসহাক হাসানের চোখ ছলছল করছে নীলাভ এর কথা শুনে।ছোট ছেলের খু*নীকে আজ ও পাওয়া গেলো না।কেউ তার বাড়িতে ঢুকেই তার ছেলেকে মে*রে চলে গেলো।ইসহাক হাসান বাইরে বেরিয়ে গেলেন কেবিনের নিজের কষ্ট লুকাতে।এসব দৃশ্য সে সহ্য করতে পারছে না।
মৃথিলা চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে।চোখ দিয়ে গরম পানি বের হচ্ছে।
রিফাত বললো,
‘মৃথিলা মাথায় অনেক বড় আঘাত পেয়েছো তুমি?এখন বেশী কথা বলা ঠিক হবেনা।প্লিন শান্ত হও তুমি।’
মৃথিলা চোখ খুলে নিরবের দিকে তাকালো।চোখ ভরা পানি মৃথিলার।
নিরবের কাঁন্না পাচ্ছে খুব।কিন্তু ছেলে মানুষ তাই কাঁদতে পারছেনা।কাঁন্না আটকাতে উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে ঘন ঘন কয়েক টা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
‘আমি চেষ্টা করেছি মৃথিলা কিন্তু পারিনি।প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে।’
নিরবের এমন মায়াভরা কথা শুনে মৃথিলা আবার ও আবেগে বেশ জোরে কেঁদে দিলো।কষ্ট হলেও বাস্তবতা মেনে৷ নিতেই হবে।
মৃথিলাকে আরো কিছুদিন হসপিটালে রাখতে রাখতে হবে।তা না হলে সুস্থ হবে না।আঘাত টা বেশ বড় সড় ছিলো।নিরবের ডিউটি তার পাশের জেলায়।দুই ঘন্টা লাগে বাইকে যেতে।নিরব রোজ বাইকে ডিউটি তে যাচ্ছে আর আসছে।কেননা রাতে তার মৃথিলার কাছে থাকতে হবে।শারিরীক ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে নিরব রোজ বাইকে জার্নি করছে। একবার ডিউটি তো একবার হসপিটাল।ধীরে ধীরে মৃথিলা সুস্থ হয়ে উঠছে।কেটে গিয়েছে আরো পনেরো দিন।
নিলয় সাদা গেঞ্জি আর সাদা গ্যাবাডিং পরে হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নিলয়ের হাতে দুইটা আর্টিফিশিয়াল গোলাপ।আজ নিরব রাতে আসবে হসপিটালে।তাই নিলয় আজ নির্ভয়ে গেটে দাঁড়িয়ে আছে।নিরা রিক্সা থেকে লাল টপ্স আর কালো জিন্স পরে নামলো।নিরা কে দেখেই নিলয় এর হৃদয় জুড়ালো।এক শীতল বাতাস বয়ে গেলো।হাজার ও ভীড়ের মাঝে এই বাচ্চা মেয়েটা তার ভাল লাগার কারণ।
নিরা রিক্সা থেকে নামতেই নিলয় বললো,
‘কষ্ট হয়নিতো আসতে।’
নিরা লজ্জামিশ্রিত ভাবে হেসে বললো,
‘না হয়নি।এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?’
‘ফুল বিক্রি করছি।তুমি একটা নিবে।’
‘নিবো তবে উপহার দিলে।কিনবো না।’
নিলয় ফুলটা নিরার হাতে দিয়ে বললো,
‘তোমারি জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। এই ফুল তোমার জন্য।’
এই পনেরো দিনে নিরা রেগুলার ই হসপিটালে এসছে।এখানে নিলয় এর সাথে এসে প্রতিদিন একটু একটু করে কথা হয়েছে।কথা বলাটা বন্ধুত্ত্বের থেকে বেশীদূর এগিয়ে গিয়েছে।নিরার এখন হসপিটালে আসার অন্যতম কারণ নিলয়।নিলয়ের চমৎকার কথায় মুগ্ধ নিরা।নিরার কিশোরী মনে মাত্রই প্রেমের সূচনা শুরু হয়েছে।এই বয়সে বোধহয় প্রেম টা হুটহাট করেই হয়ে যায়।সবার আড়ালে দুজনের মাঝে প্রেম টা বোধহয় হয়েই গেলো।
রাত দশটায় নিরব হসপিটলে এসছে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে।তার মেজাজ কেনো যেনো বিগড়ে আছে।কেবিনে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো।কোনো কথা না বলে টিফিন বক্স খুলে খাবার বের করে মাখাতে শুরু করলো।বেডের পাশে টুল টেনে বসলো।মৃথিলার বেশ অবাক লাগছে।নিরব কে আজ এমন লাগছে কেনো?কেমন যেনো গম্ভীর।
মৃথিলা শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
‘কিছু হয়েছে।আপনাকে এমন লাগছে কেনো?’
অনিচ্ছাকৃত হাসলো নিরব।স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,
‘আমি যে প্রফেশন এ আছি এটা খুব কঠিন জায়গা মৃথিলা।যার দায়িত্ত্ব এড়িয়ে যায় তাদের চিন্তা নেই।কিন্তু আমি তো পারিনা দায়িত্ত্ব এড়াতে।’
‘কি হয়েছে বলুন না প্লিজ’
নিরব মৃথিলার মুখে খাবার গুজে দিতে দিতে বললো,
‘আজ ও রানীগঞ্জের তিনটা মেয়ে নিঁখোজ।’
‘আজ আবার ও।আচ্ছা তারা কারা আর তাদের ধরা যাচ্ছে না কেনো?’
‘এইবার মনে হয় তাদের ধরা যাবে।’
‘কিভাবে ধরা যাবে।’
‘আমার হাত থেকে পালানো অতটা সোজা নয়।আমার একটা জিনিস খুব অবাক লাগে। ‘
‘কি?’
‘আমার করা প্লান গুলো কিভাবে যেনো বুঝে যায় ওরা।কথায় আছেনা মেয়ে মানুষ অত্যান্ত কুটিল হয়।এই মেয়ে দুইটা অত্যান্ত চালাক।’
‘বললেন নাতো কিভাবে ধরতে পারবেন।’
‘ওদের ছবি পেয়ে যাবো আজ হাতে।কিন্তু সমস্যা ওদের মুখমন্ডল সব ঢাকা থাকে।সামান্য একটু চোখ ঢাকা থাকে।এইজন্য সামনে দিয়ে ঘুরলেও আমরা কেউ ই বুঝতে পারিনা।’
‘মুখ ঢাকা তাহলে ছবি পেয়ে লাভ কি।’
‘তবুও আইডিয়া হয়ে যাবে আমার।ওই সাইজের যত মেয়ে আছে সবাইকে চেক করবো।’
‘আপনি মেয়েদের চেক করবেন? এইজন্য এই চাকরি তে গিয়েছেন তাইনা?খাবোনা আর আমি।’
মৃথিলা হঠাত রেগে গিয়েছে।নিরব বিস্মিত ভঙ্গিতে মৃথিলার দিকে তাকালো।মৃথিলা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে।রাগ ফুসছে।নিরব আস্তে করে পকেট থেকে ফোন বের করলো।আর সাথে সাথে কয়েকটা ছবি তুলে ফেললো ফটাফট।ছবি তুলেই নিরব ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে হাসছে।মৃথিলা ছবি তুলতে দেখে উঠে এলো উদ্দেশ্য নিরবের ফোন নিয়ে ছবি ডিলেট করবে।নিরব ভাতের প্লেট রেখে দরজা খুলে দৌড় দিলো।মৃথিলা ও পিছপিছ দৌড় শুরু করলো।নিরব হাসছে আর দৌড়াচ্ছে বার বার পেছনে তাকাচ্ছে।মৃথিলা রাগি মুডে নিরবের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে আর বলছে দাঁড়ান বলছি।হসপিটালের সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের দিকে।দুজনের খুনসুটি দেখে হসপিটালের সবাই হাসছে।মৃথিলা কিছুক্ষণ ছুটে হাঁপিয়ে গিয়েছে।মৃথিলা দুই হাঁটুতে ভর দিয়ে কুজো হয়ে হাঁপাচ্ছে।নিচু দিকে ঝোঁকার জন্য মৃথিলার খোলা চুল ফ্লোর স্পর্শ করেছে।
নিরব এবার এগিয়ে এলো মৃথিলার সামনে এসে স্ট্রং হয়ে দাঁড়ালো বুকে হাত বেঁধে।মৃথিলা নিরবের দিকে তাকালো।নিরব ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললো,
‘কি চায় আমার কাছে।’
‘আপনার ফোন।’
নিরব বিড়বিড় করে বললো,
‘কেনো আমাকে চাইতে কি হয়।’
মৃথিলা বিরক্ত হয়ে বললো,
‘আমাকে গালি দিলেন কেনো?’
নিরব যেনো আসমান থেকে পড়লো কথা টা শুনে।ভীষণ আশ্চর্য হয়ে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,
‘আমি গালি দিয়েছি।’
‘হ্যাঁ দিয়েছেন।’
‘তুমি শুনেছো।’
‘না শুনলে কিভাবে বললাম।আপনি বিড়বিড় করে গালি দিয়েছেন।আমি কি এমন করেছি এভাবে গালি দিচ্ছেন।’
নিরব মাথায় হাত চালিয়ে দিয়ে এক মুঠো চুল খামছে ধরে বললো,
‘এই মেয়ে এই আমি জীবনে কাউকে গালি দেয় নি।আর তোমাকে গালি দিবো ভাবলা কেমনে। ‘
‘আপনি গালি ই দিছেন বিড়বিড় করে।’
‘বললাম দেই নি।’
‘,তাহলে কি বলেছেন।’
‘বলবো না।’
‘ভালো কিছু হলে তো বলতে পারতেন।গালি দিছেন তাই বলতে পারছেন না।’
নিরব বিরক্ত কন্ঠে উত্তর দিলো,
‘বলেছি আমাকে চাইলে কি হতো ফোন না চেয়ে।কোনো প্রকার গালি দেই নি।’
মৃথিলা এবার গাল ভরে হেসে দিয়ে বললো,
‘আমি শুনেছিলাম এটাই বলেছেন।আপনার মুখ থেকে শোনার জন্য এমন করেছি।’
বলেই মৃথিলা কেবিনের দিকে রওনা হলো।নিরব একটু লজ্জা পেলো।মাথা চুলকাতে চুলকাতে মৃথিলাকে ডাকলো,
‘মৃথিলা তোমাকে কিছু বলার ছিলো।’
মৃথিলা পেছনে তাকিয়ে বললো,
‘বলুন।’
‘এভাবে না।’
‘তাহলে?’
‘একটু স্পেশাল ভাবে।’
‘আপনার প্রিয়দর্শিনী আছেনা।’
‘যদি বলি তুমিই প্রিয়দর্শিনী।’
”বাজে কথা।’
মৃথিলা হেসে দিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো।
লজ্জা লাগছে তার।পাতলা কম্বল মুড়ি দিয়ে মৃথিলা সুয়ে পড়লো।নিরব কেবিনে প্রবেশ করে দেখলো মৃথিলা সুয়ে পড়েছে। নিরব ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলো।ঠিক সেই মুহুর্তে কেউ কেবিনের ভেতর ঢুকে বাইরে থেকে ওয়াশ রুমের দরজায় সিটকিনী লাগিয়ে দিলো।সাথে সাথেই মৃথিলার গ*লা চে*পে ধরলো।চাঁদর মুড়ি দেওয়া অবস্থায় মৃথিলা কারো মুখ দেখতে পেলো না।চাঁদরসহ মৃথিলার গ*লা চে*পে ধরেছে।মৃথিলা চাদরের ভেতরে ছটফট করছে।পা ছটফট করছে মৃথিলার জিভ বার হয়ে গিয়েছে,শুকনো কাশি হচ্ছে।হাত দিয়ে অজ্ঞাত লোকটার হাত সরিয়ে মৃথিলা নিরবের নাম ধরে চিৎকার দিলো।লোকটা আবার ও মৃথিলার গ**লা চেপে ধরলো।মৃথিলার চিৎকার কানে যেতেই নিরবের র*ক্ত উথাল পাথাল করে উঠলো।দরজা খুলতে যেতেই দেখলো দরজা দেওয়া।নিরব পা*গ*লে*র মতো ছটফট করছে ভেতরে।গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে দরজায় লা**থি দিতেই পারটেক্স এর পাতলা দরজা ভেঙে গেলো।লোকটা সাথে সাথে মৃথিলাকে ছেড়ে দিয়ে পালালো।নিরব ভেতরে আসতেই নিরব কে দেখেই মৃথিলা নিরব কে জড়িয়ে ধরলো খুব জোরের সাথে।ভ*য়ে থর থর করে কাঁপছে মৃথিলা।হৃদপিন্ড তীব্র গতিতে লাফাচ্ছে।নিরব মৃথিলার হৃদপিন্ড এর ভয়ার্ত স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে।মৃথিলা কাঁপতে কাঁপতে বললো,
‘আমাকে বাঁ* চান প্লিজ।’
জীবনে প্রথম মৃথিলা নিরব কে জড়িয়ে ধরেছে।নিরব ও শক্তভাবে মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরলো।একদম যেনো দুজনের হৃদয় এক জায়গা হয়ে গিয়েছে।এটা যেনো নিরবের জীবনের সব থেকে বড় কোনো পাওয়া।মৃথিলার অজান্তে মৃথিলার মাথায় চুমু দিলো নিরব পরম আদরে।মৃথিলা চোখ মুখ বুজে নিরবের বুকে মাথা গুজে আছে।নিরব ভাবতেও পারেনি এমন একটা ঘটনা ঘটবে।এক্ষুনি নিরবের মন চাচ্ছে শহর তন্ন তন্ন করে সেই লোকটাকে খুজে বের করে কয়েক টু*ক*রো করে ফেলতে।কিন্তু মৃথিলাকে এই অবস্থায় ফেলে সে যেতে পারছেনা।মৃথিলাকে স্বাভাবিক করতে নিরব বললো,
‘মৃথিলা কি হয়েছে।কোনো ভ*য় নেই।এইতো আমি চলে এসছি।’
মৃথিলা নিরবের বুকে মাথা গুজেই প্রচন্ড ভ*য় ভ*য় কন্ঠে বললো,
‘ও আমাকে মে*রে ফেলবে।আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ।আমাকে আপনি বাঁ*চা*ন।’
‘তুমি কি ওর মুখটা দেখেছো?আর কে ও।তোমাকে মা*র*তে চাইছে কেনো?’
মৃথিলা এবার হু হু করে কেঁদে দিয়ে বললো,
‘ওরা আমাকে মে*রে ফেলতে চাইছে।ওরা কারা আমি চিনি না।’
‘ওরা নিজেরাই কেউ বাঁ*চ*বে না।নার্সদের ডেকে দিচ্ছি ওরা তোমার কাছে থাকবে আমি আসছি।আজ পৃথিবী তন্ন তন্ন করে হলেও খুজে বের করবো কে ছিলো।যে তোমাকে মা*র*তে চেয়েছে।আমার শান্তি হবেনা ওদের কু**ত্তা* দিয়ে না খাওয়ালে।’
মৃথিলা এবার আরো জোরে নিরব কে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আপনি কোথাও যাবেন না প্লিজ।আপনাকে আমি কোথাও যেতে দিবোনা।আমার খুব ভ*য় করছে।’
মৃথিলা নিরব কে ছাড়ছে না।নিরবের তেজস্রী র*ক্ত ফুটছে।হসপিটালের ভেতর বাইরের মানুষ কিভাবে প্রবেশ করলো।আর বাইরের মানুষ এসে মৃথিলাকে মা*র*তে চাইছে।বারবার মৃথিলাকে কে এট্যাক করছে।প্রশ্নের উপর প্রশ্ন নিরবের মাথায়।এইসব প্রশ্ন নিয়ে বেশীক্ষণ ভাবতে পারলো না।প্রিয়তমার গভীর আলিঙ্গনে নিরব বেশীক্ষণ অন্য ভাবনায় থাকতে পারলো না।মৃথিলার মাঝে কোনো অনুভব হচ্ছে কিনা নিরবের জানা নেই।তবে মৃথিলার তাকে এইভাবে আলিঙ্গন করে থাকাটা তার শরীরে শীতল হাওয়া দিচ্ছে।নিরব মৃথিলাকে নিয়ে সুয়ে পড়লো।দুজনের গায়েই পাতলা কম্বল।কম্বলের নিচে প্রিয়দর্শিনীর আলিঙ্গনে নিরব অজানা এক অনুভূতি পাচ্ছে।এই আলিঙ্গন তার ভালো লাগছে।নিরব গভীর অনুভূতির সাথে মৃথিলাকেও মৃথিলার মতো আলিঙ্গন করে নিলো।
চলবে……