# এক মুঠো রোদ .
# writer :নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্ব -২৭
সকাল ১০ টা। রোজা,তীর্থ,মৃন্ময় ছুটেছে গন্তব্যে। রোজার গায়ে হোয়াইট লেডিস শার্ট, ব্ল্যাক জ্যাকেট, ব্লু জিন্স। লম্বা চুলগুলো খোঁপা করা। চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস,পায়ে কেটস। পিঠে ঝুলছে ছোট্ট ব্যাগ। রোজার এমন রূপ তীর্থর জন্য পুরোনো হলেও মৃন্ময়ের কাছে একদমই নতুন। রোজাকে এমন পোশাকে দেখে শান্ত বুদ্ধির অধিকারী মৃন্ময়ও খানিকটা হকচকিয়ে যায়। এই মেয়েটাকে দেখে বুঝার উপায়ই নেই যে, মেয়েটা আদৌ কখনো শাড়ি পড়েছিলো কিনা। অথচ ঢাকার অলিগলিতে সবসময় শাড়িতে মোড়ানো রূপেই দেখা যায় তাকে। মৃন্ময় নিজের মনেই হাসে। বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
— একদম ইনভেস্টিগেটর লুক! নট বেড,মিস.রোজা।
রোজা টোল পড়া হাসি দিয়ে বলে উঠে,
— খাশিয়াপুঞ্জিগুলো নাকি জঙ্গল পরিষ্কার করে তৈরি করা হয়। শাড়ি পড়ে পাহাড়ে উঠা তো মুশকিল তাই এই ব্যবস্থা।
মৃন্ময় মাথা ঝাঁকায়। আলী গাড়ি স্টার্ট দিতেই জানালার দিকে ঝুঁকে পড়ে রোজা। প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে হাসিমুখেই বলে উঠে,
— খাসিয়ারা তো মাতৃপ্রধান তাই না?
মৃন্ময় হাসিমুখে উত্তর দেয়,
— হ্যাঁ। মাতৃপ্রধান। ওদের রীতিগুলো আমাদের রীতি থেকে সম্পূর্ণই ভিন্ন। পরিবারের সব দায়িত্ব মেয়েদের ঘাড়ে। এমনকি কাকে বিয়ে করবে সেই ডিসিশন নেওয়ার স্বাধীনতাও মেয়েদের ঘাড়ে। অন্যগোত্রের পছন্দমতো ছেলেকে বিয়ে করতে পারে। অধিকাংশ সময়ই মেয়েদের ইচ্ছেয় বিয়ে হয়। মেয়েরা যাকে ভালোবাসে তাকে নিজেদের বাড়িতে দাওয়াত দেয়। কখনো বা ২/৪ দিন একসাথে টাইম স্পেন্ড করে তারপর ডিসিশন নেয় যে বিয়ে করবে কি না।
মৃন্ময়ের কথা শেষ না হতেই সামনের দিকে হামলে পড়ে তীর্থ। চোখ বড় বড় করে রোজার দিকে তাকায়। বলে,
— দোস্ত? এরা কি ফরওয়ার্ড দেখছো নি? বিয়ের আগেই হানিমুন। উফফ….এই নিয়মটা আমাগো ওইখানে নাই কেন বল তো? কি জোস একটা নিয়ম বস।
মৃন্ময় নিঃশব্দে হাসে। রোজা বিরক্তিতে কপাল কুঁচকায়। ঝাঁঝালো গলায় বলে,
— তুই জীবনে সুধরাবি না তীর্থ। ফ্লার্ট কইরা মন ভরে না? এখন তোর হানিমুনও করা লাগবো! খাঁড়া মালিহাকে বলতাছি।
তীর্থ মুখ কালো করে শান্ত হয়ে বসে। চোখা চোখে তাকিয়ে বলে,
— জিন্দেগীতে আমার খুশিতে খুশি হইলি না তুই রোজা। সারাদিন মালিহা মালিহা করস কেন? ভাল্লাগে না। স্যার? আপনি শুরু করুন তো। এই মহিলার বকবকের চেয়ে আপনার মুখে খাসিয়া মেয়েদের গল্প শোনা ঢের ভালো।
মৃন্ময় হেসে দেয়। গ্লাসে রোজার ভ্রু কুঁচকানো মুখটা দেখে নিয়ে আবারও বলে সে,
— খাসিয়া মেয়েরা বিয়ের পাশাপাশি বিচ্ছেদেও অগ্রাধিকার পায়। ওদের ইচ্ছে হলে স্বামীকে ত্যাগ করে নতুন কাউকে বিয়ে করতে পারে। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আমাদের সমাজে ছেলেরা একসাথে একাধিক বিয়ে করতে পারলেও রাখাইনদের সমাজে মেয়েরা একসাথে একাধিক বিয়ে করতে পারে। ছেলেদের সেই অধিকার নেই বললেই চলে।
রোজা ড্যাবড্যাব করে তাকায়। তারপর চোখমুখ কুঁচকে বলে,
— ছিঃ একসাথে দুটো স্বামী?
মৃন্ময় হেসে বলে,
— ছিঃ এর কিছু নেই মিস.রোজা। ওটা ওদের সমাজে প্রচলিত। তাছাড়া সবাই তো করে না যাদের প্রয়োজন হয় তারাই করে।
তীর্থ বাঁকা হেসে বলে,
— খাসিয়ার মাইয়াদের দেখি খুব সুবিধা। আচ্ছা? এদের ধর্মটা কি? মুসলিম আছে নাকি?
— ওদের ৮০% ই খ্রিষ্টান তবে হিন্দু,খ্রিষ্টা
ন, মুসলিম তিন ধর্মের প্রভাবই রয়ে গেছে ওদের উপর। ওরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করে আবার দেবদেবীর পূজাও করে। ওরা মারা গেলে মৃতদেহ প্রথমে পুড়িয়ে তারপর কবর দেওয়া হয়। ওদের শবদাহ করার আগে ওদের ধর্মগুরু মৃতব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করেন। সেই প্রার্থনার বাংলাটাও বেশ ইন্টারেস্টিং।
রোজা উৎসাহ নিয়ে বলে,
— আপনি জানেন সেই বাংলা?
মৃন্ময় হেসে মাথা ঝাঁকায়। বলে,
— হ্যাঁ জানি। ওদের প্রার্থনাটা অনেকটা এরকম, “বিদায়, ঈশ্বরের রাজ্যে গিয়ে তুমি পান খাবে।”
তীর্থর ভ্রু কুঁচকে আসে। কুঁচাকানো ভ্রু নিয়ে বলে,
— পান? মিষ্টি,মন্ডা, সন্দেশ সব রেখে পান কেন?
মৃন্ময় মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
— তা তো জানি না। তবে ওদের জীবিকার প্রধান কাজই কিন্তু পাহাড় থেকে পাহাড়ী পান সংগ্রহ করা। মিস.রোজা? ওইতো উপরে দেখুন।
রোজা দ্রুত মাথা হেলিয়ে পাহাড়ের উপর তাকায়। সেখানে পাহাড়ের গাঁ বেয়ে বেড়ে ওঠা লম্বা সরু সুপারি ও পাম গাছ গুলোতে বেড়ে উঠেছে খসিয়া পান গাছ। লতানো পান গাছগুলো সুপারি গাছ বেয়ে উঠে গেছে অনেক দূর। রোজা বিস্ময় নিয়ে বলে,
— এগুলো কি পান গাছ?
মৃন্ময় মাথা দোলায়। তীর্থও রোজার দিকে ঝুঁকে পড়ে ঝটপট ছবি তুলে নেয়। মৃন্ময় বলে,
— এটিই খাসিয়াদের প্রধান অর্থকরী ফসল। এখানে বরজ করে পান চাষ হয় না। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বনজ সম্পদকে কাজে লাগিয়েই খাসিয়ারা গড়ে তুলেছে তাদের ব্যবসা আর জীবন ধারণের উপায়।
রোজা আবারও মাথা বের করে। পাহাড়ের গায়ে আরও এক ধরনের লতান গাছ দৃষ্টি কাড়ল তার। অন্য গাছের উপর কি নিঃসংকোচে বেড়ে উঠেছে এই লতা। তাতে আবার গোল গোল ফলও ধরেছে বেশ। রোজা উৎসাহ নিয়ে বলে,
— নায়ক সাহেব? ওটা কি গাছ?কোনো ফল?
মৃন্ময় বাইরে নজর দেয়। রোজার খুশিতে ঝলকানো মুখটির দিকে তাকিয়ে বলে,
— ওটা গোল মরিচ গাছ,মিস.রোজা। বন্য গোল মরিচ।
রোজা অবাক চোখে তাকায়। রাস্তার দু’পাশে, পাহাড়ে ফুটে থাকা অসংখ্য বনফুল দেখে মুখে হাসিফুটে তার। চারপাশের সবকিছুতেই মুগ্ধ সে। আর মৃন্ময় মুগ্ধ রোজার গালে পড়া ওই টোলে। কিছুক্ষণ যেতেই আবারও ব্যস্ত কন্ঠে ডাকে মৃন্ময়। বাইরে ইশারা করে বলে,
— ওই দেখুন, মিস.রোজা। ওটা হলো বনদেবীর মূর্তি। এখানকার আদিবাসীরা বিশ্বাস করে জঙ্গলের প্রতিকূলতা আর সকল রকম বিপদ থেকে একমাত্র বনদেবীই রক্ষা করে তাদের। সুন্দর না?
রোজা মৃন্ময়ের কথায় মনোযোগ দিয়েই বাইরে তাকায়। পাহাড়ের গায়ে বসানো বনদুর্গার মূর্তি। কি সুন্দর কারুকার্য! রোজা আবারও মুগ্ধ হয়। সকালের সূর্যের নবীন আলোয় মুগ্ধ চোখদুটো চিকচিক করে উঠে রোজার, মুখে জাগে অদ্ভুত এক আভা। সাথে সাথে খুবই অদ্ভুত এক ইচ্ছে জাগে মৃন্ময়ের। জগতের সব মুগ্ধতায় রোজাকে জড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে তার। আর প্রাণভরে দেখতে ইচ্ছে করে খুশিতে চিকচিক করা ওই চোখ, মাতাল করা ওই ঠোঁট, বিধাতার অসম্ভব কারুকার্যে তৈরি গালের ওই গভীর টোল। পাহাড়ী উঁচু নিচু বন্ধুর পথ বেয়ে এগিয়ে চলে তারা।পাহাড়ের উপর থেকে নুয়ে পড়া সূর্যের ছটায় রাঙা আকাশ আর নিচে সবুজ বন, দুইই চোখ মেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে আগ্রহী করে তুলে তাদের। কখনো পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে উপরে উঠা, আবার কখনো বা নিচের দিকে নামা। বলা যায় আরোহন-অবরোহন। এই অাধুনিক যুগেও পাহাড়ি পুঞ্জিগুলোতে চলে বেঁচে থাকার লড়াই। বেহাল রাস্তায় প্রাণ হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয় তাদের। রোজাদের গাড়িটাও এঁকেবেঁকে চলে। কখনো ঝাঁকিয়ে উঠে ভীষণভাবে। তবুও বিন্দুমাত্র বিরক্ত নেই কারো চেহারায়। দীর্ঘ শহর জীবন পেরিয়ে প্রকৃতির কোলে এসে কি বিরক্ত হওয়া যায়?
৫০.
দীর্ঘ দশ ঘন্টা অপারেশন চলার পর হাসিমুখেই বেড়িয়েছেন ডক্টর। আরমান সাহেব এখন বিপদ মুক্ত। সারারাত গিয়ে সকাল ১১ টার দিকে জ্ঞান ফিরেছে আরমান সাহেবের। কেভিনে দেওয়ার পর আরিফ,আরু,লিনা সবাই-ই দেখা করতে যায় তার সাথে। ঠিক তখনই দু’জন ডক্টরের সাথে কেভিনে ঢুকে রাফিন। হসপিটালের বিভিন্ন সমস্যার জন্য কাল রাতে আর বাড়ি ফেরা হয় নি তার। সকাল সকাল হসপিটাল থেকে একটা ফাইল নিতে এসে ডক্টর সারার অনুরোধেই রোগীকে দেখতে এসেছে সে। গম্ভীর মুখে আরমান সাহেবের দিকে খানিকটা ঝুঁকে চেক-আপ করে রাফিন। দু-একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে কথা বলতে পারছে কি না পরীক্ষা করে বেরিয়ে যেতে নিলেই মৃদু গলায় থেমে থেমে প্রশ্ন করেন আরমান সাহেব,
— আরিফ? তোর গালে কিসের ছাপ বাবা?
আরিফ মৃদু হেসে রাফিনকে শুনিয়েই বলে,
— তেমন কিছু না বাবা। কুকুরে কামড়ে ছিলো কাল। বোনের পালিত কুকুরকে কি আর কিছু বলা যায় বাবা? তাছাড়া তুমিই বলেছিলে, কুকুর কামড়াতেই পারে তাই বলে কুকুরকে কামড়ে নিজে তো আর কুকুর হতে পারি না বাবা।
সাথে সাথেই থমকে যায় রাফিন। পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় তার। হাত দুটো মুঠো হয়ে আসে। আরিফকে এই মুহূর্তে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে। তাকে অপমান! কিন্তু সামলে নেয় রাফিন। এখন মাফিয়া নয় ডক্টর সে। প্যাশেন্টের সামনে কোনো হাঙামা করতে একদমই পছন্দ করে না রাফিন। লিনা ভয়ে খাঁমচে ধরে আরিফের হাত। চোখ দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে বলে সে। কপালে ফুলে উঠা রগ নিয়েই চুপচাপ বেরিয়ে যায় রাফিন। চোখদুটো লাল হয়ে আসে তার। কাল আরিফকে অযথায় মেরেছিলো সে। আরিফ যে আরুর ভাই তা জেনেই হাত উঠিয়েছিলো রাফিন। মেয়েদের গায়ে হাত তোলাটা দুর্বলতা মনে করে রাফিন তাই আরিফের গালেই চড় বসিয়েছে সে। কথায় আছে না? নিজের কষ্টের থেকে আপনজনের কষ্ট চোখে পড়ে বেশি। রাফিনও আরুর সাথে ঠিক তাই করতে চেয়েছিলো। আর প্রচেষ্টা সফলও হয়েছিলো। রাফিনের রাগটা কমেও গিয়েছিলো কিন্তু আরিফের শেষ কথাগুলো যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়ে গেলো। আবারও জ্বলে উঠলো সেই রাগ। চেম্বারে ঢুকে ফাইলগুলো ছুঁড়ে ফেলে টেবিলে দু’হাত রেখে ঝুঁকে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা চালায় রাফিন। সাথে সাথেই দরজায় টোকা পড়ে। রাফিন গলা উঁচিয়ে বলে,
— কাম ইন।
অনুমুতি পেয়ে দরজা ঠেলে পেছন এসে দাঁড়ায় মধ্যবয়স্ক এক লোক। রাফিন ঘুরে তাকায়। লোকটিকে পর্যবেক্ষন করে নিয়েই ভ্রু কুঁচকে বলে,
— আপনি? এখানে কেন এসেছেন?
আগুন্তুক হাসিমুখে বলে,
— আপনার সাথেই কথা বলতে এসেছি মিষ্টার চৌধুরী।
— কিন্তু আপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। গেট লস্ট!
— একবার ব্রেইন দিয়ে চিন্তা করে দেখুন মিষ্টার চৌধুরী। এতে কিন্তু আপনারই লাভ।
রাফিন বিরক্ত গলায় বলে,
— অদ্ভুত মানুষ তো আপনি। আপনার কি মনে হয়?আমার টাকা কম আছে আমার? আমি খারাপ কাজ করি ঠিক এবং ভবিষ্যতেও করবো তাই বলে একজনকে মেরে তার সব সম্পত্তি নিয়ে নিবো এমন মানুষ আমি নই। এমন ব্যবসা করলে বাংলাদেশে একজনও ধনী লোক থাকতো না ডিরেক্টর সাহেব। প্লিজ যান তো…
— তাই বলে, একশো কোটি টাকা ছেড়ে দিবেন? আমার শুধু ছেলেটার লাশ চাই, টাকা নয়। আর ছেলেটাকে মারলে তার সব সম্পত্তিই আপনার কব্জায়। এই দুনিয়ায় তার আর কেউ নেই,মিষ্টার চৌধুরী।আর তাছাড়া, এমন তো নয় যে মার্ডার করেন না আপনি। এটা তো রোজকার কাজ আপনার। তাহলে সমস্যাটা কি?
— আমি কোনো রাস্তার গুন্ডা নই যে ভাড়া করবেন আমায়।
লোকটি হাসে। চেয়ার টেনে বসে বলে,
— জানি। কিন্তু ওকে মারলে আপনার লাভটায় সবচেয়ে বেশি চৌধুরী সাহেব। শুনলাম, তারজন্য বস্তি কব্জা করতেও পেরেশানি হচ্ছে আপনার। মাত্র তো তিনটা খুন। ব্যস, কাজ খতম।
রাফিন ভ্রু কুঁচকে বলে,
— তিনজন কেন? মেয়েটাকে মেরে কি লাভ আপনার?
— কোনো লাভ নাই তবে ক্ষতি আছে। খুনের প্রমাণটা থেকে যাবে। এই প্রমাণ ডাকতেই তো ১৪টা বছর ধরে এতো কসরত করে চলেছি চৌধুরী সাহেব। এমনভাবে খুন করবেন যেন ওই পাহাড় থেকে তিনজনই হাওয়া হয়ে যায়। তাছাড়া মেয়েটা কিন্তু আপনার শত্রুর একমাত্র কন্যা। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যাবে। ছবিগুলো দেখেছেন? ব্যাপক সুন্দরী মেয়ে। চাইলে তোলেও আনতে পারেন। ইউজ করে বেঁচে দিতেও কোনো সমস্যা নাই।
কথাটা বলেই গা জ্বালানো হাসি দেয় লোকটি। চোয়াল শক্ত হয়ে আসে রাফিনের। আচমকা কলার চেপে ধরে বলে,
— আমি মেয়েদের ব্যবসা করি না, ইডিয়ট। মেয়েরা মেয়েই হয়। মেয়েদের সম্মান দিয়ে কথা বল বাস্টার। নয়তো পুঁতে রেখে দিবো। আর যার কথা বলছিস সে কোনো বাজারের মেয়ে নয় যে ইউজ করবো৷ ভদ্র ঘরের মেয়ে। সো, মুখ সামলে। গট ইট?
লোকটি ভয় পেয়ে যায়। বামহাতের উল্টোপাশ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বলে,
— সরি মিষ্টার চৌধুরী। কিন্তু খুন করতে তো কোনো সমস্যা নেই। তিনটা খুনে একশো কোটি টাকা হাতে আসছে আপনার। একটু তো ভেবে দেখুন। নিজ হাতে না করলে অন্য কাউকে দিয়ে করান। আমার কিছু লোক পিছু নিয়েছে ওদের। লোকেশন ট্রেক করতে কোনো সমস্যায় হবে না। এবার ডিশিসন আপনার।
রাফিন কলার ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। চেয়ারা বসে গা এলিয়ে দেয় সে। চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস টেনে নিয়ে বলে,
— আপনি যান ডিরেক্টর সাহেব। ( একটু থেমে) কাজ হয়ে যাবে।
লোকটি চলে যেতেই চেয়ার থেকে উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় রাফিন। আবারও রাগ লাগছে তার। ভীষণ রকম রাগ। এই আরিফকে ধরে আর দু-চারটা চড় দিলে বেশ হতো। ভাই-বোন মিলে কি শুরু করেছে তার সাথে? একজন বিনা কারণে চড় লাগায় আরেকজন গালি দেয়। আর অন্যদিকে রোজা! উফফ… রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। কাউকে ধরে ইচ্ছেমতো পেটাতে পারলেই রাগটা শান্ত হতো তার। টেবিল থেকে একটা ফাইল তোলে নিয়ে সোফায় রাখা কোটটা হাতে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো রাফিন। মাথায় আরু,রোজা,আরিফ সবকিছুই যেন একবারে চলছে তার। এই আরু আর আরিফকে কিছুতেই একসাথে থাকতে দেওয়া চলবে না। শরীরের যন্ত্রণার থেকে মানুষিক যন্ত্রনা বেশি কাঁদায়। রাফিনও তাই করবে। আরিফকে মানুষিক যন্ত্রনায় মারবে সে। বোন হারানোর যন্ত্রণা। কথাটা ভাবতেই বাঁকা হাসে রাফিন। মনে পৈশাচিক আনন্দ হয়।
# চলবে….
(যারা আরু-রাফিনের সীন কম কেন বা মৃন্ময় -রোজার সীন কম কেন বলে অভিযোগ করেন তাদের বলছি। অযথা, এসব কমেন্ট বন্ধ করুন। টাইম মেইনটেইন করে লিখতে হয়। লেখিকা ইচ্ছে করলেই কোনো ক্যারেক্টার নিয়ে বাড়িয়ে লিখতে পারে না। এরপরও কারো বিরক্ত লাগলে দয়া করে এবোয়েড করুন। ধন্যবাদ)