“সমস্যাটা মূলত আমার মেয়েকে নিয়ে।”
“কী সমস্যা?”
“কখনও মাঝরাতে উঠে কোনো কারণ ছাড়াই গোসল করে। কখনও শরীরের সমস্ত কাপড়চোপড় খুলে রুমের এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে।”
“বয়স কত তার?”
“প্রায় বারো বছর।”
সবেমাত্র ফজরের নামাজ সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলেন আহমেদ সাবাজ। গায়ের উপর সাদা কম্বলটা উঠানোর আগেই কলিং বেলের শব্দ বাতাসে তার কান অব্দি ভেসে আসে। এই সময়টাতে ঘন্টা দুয়েক ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে। খুব বিরক্তির সাথেই বিছানা ছাড়েন তিনি। ওপাশের মানুষটা বিরামহীনভাবে বেল চাপছে। সুইচটাই ভেঙ্গে ফেলবে এমন অবস্থা। আরে বাবা দরজা অব্দি যেতে সময়টুকু তো অন্তত দে, এমন অধৈর্য হওয়ার কী দরকার?
দরজা খুলতেই ওপাশে একজন মহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তাকে দেখেতে পেয়েই মহিলা প্রশ্ন করে বসেন, “আহমেদ সাবাজ?”
“জি।”
“ভিতরে আসতে পারি?”
তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে না সে উত্তরের অপেক্ষায় থাকবে। তাকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে পারলেও ঢুকবে এমন একটা ভাবসাব বিরাজ করছে। বাইরের আলো এখনও স্পষ্ট হয়নি। তাছাড়া এখনও শীত শীত আবহাওয়া রয়ে গেছে৷ এই সময়ে অপরিচিত এক মহিলা কোত্থেকে এলো চিন্তা হয় তার।
টেবিলের অপর পাশের চেয়ারে মহিলাটি বসা। আহমেদ সাবাজ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তার কথা শুনতে বসেছেন। বিরক্তির কারণটা স্পষ্ট, সকালের ঘুমটা নষ্ট হলো।
মহিলাটি তার সমস্যার ব্যাপারে বললেন। তার বলতে সমস্যাটা তার মেয়ের।
“স্যার আপনি কি কোনো কারণে চিন্তিত?”
“না।”
“কিন্তু আপনার চেহারা অন্য কিছু বলছে। ভাবছেন এতো ভোরবেলা এই মহিলা কোত্থেকে উদয় হলো। ভাবছেন না এমনটা?”
“হ্যাঁ ভাবছি।”
বিজয়ী একটা ভাব ফুটে ওঠে মহিলাটির মুখে। বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে আবারে প্রশ্ন করে- “আপনাকে কেমন বিরক্তও দেখাচ্ছে। বিরক্ত থাকা মানুষের দুই ভ্রুর মাঝের চামড়া সামান্য ভাজ হয়ে যায়। আমি কি জানতে পারি আপনি কেন বিরক্ত? আচ্ছা আপনার আমার নাম জানতে ইচ্ছা করছে না? না করলেও বলি৷ আমার নাম রাফিয়া আনওয়ার।”
নামের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সাবাজ বলেন, “এই সময়টাতে আমার ঘুমানোর অভ্যাস। না ঘুমালে সারাদিন মাথা চিনচিন করবে।”
“আচ্ছা তাহলে আপনি ঘুমিয়ে নিন আমি অপেক্ষা করছি।”
“যেভাবে কলিং বেল চাপছিলেন, অপেক্ষা করার ধৈর্য আপনার আছে বলে মনে হয় না।”
রাফিয়া মুখে হাত দিয়ে মৃদুস্বরে হেসে ফেললেন। তার চাপা হাসির আওয়াজ সাবাজের কান অব্দি পৌঁছায়। নারীকণ্ঠে মৃদু হাসি আকর্ষণীয় বটে। তবে এখন হাসিটা একদমই ভালো লাগছে না তার। বিরক্তির মাত্রা এখনও কমেনি।
কিন্তু মহিলাটি বুদ্ধিমান, সাবাজ ঠাহর করতে পারে।
“আমি জানি আমার ধৈর্য থাকলেও আপনি একজন অপরিচিত মহিলাকে ঘরে রেখে ঘুমাতে যেতেন না।”
সাবাজ কথা বলে না কোনো।
“ঘরে চা-পাতি আছে? থাকলে বানিয়ে নিয়ে আসি। চা খেতে খেতে কথা বলবো।”
তাকে বসিয়ে রেখে দু’কাপ চা বানিয়ে আনেন সাবাজ। ঘুম থেকে ঝেড়ে উঠতে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া ছাড়া আপাতত কোনো উপায় খুঁজে পান না তিনি।
রাফিয়া নামের এই মহিলাটির পরনে দামি জামদানী শাড়ি। বারো বছর বয়সী মেয়ে আছে মানে বয়স ত্রিশের এপার কিংবা ওপার হবে। মাথা হিজাব দিয়ে ঢাকা তবে মুখ খোলা। কিন্তু তাকে দেখে মনে হয় না তার বারো বছর বয়সী কোনো মেয়ে থাকতে পারে। মুখে ভারী মেকাপের কোনো ছাপ নেই। শুধুমাত্র চোখে কাজল দেওয়া আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। ব্যাস এটুকুই, এতেই তাকে প্রচণ্ড সুন্দরী লাগছে। এই বয়সের মহিলাদের এতো বেশি সৌন্দর্য খুব কম থাকে।
“আচ্ছা আমাকে প্রশ্ন করলেন না যে আমি এতো সকালে কেন আসলাম?”
চায়ের কাপটি টেবিলে রেখে সাবাজ উত্তর দেন, “আমার মনে হয় উত্তর পেয়ে গেছি।”
রাফিয়ার চোখজুড়ে কেমন একটা আনন্দের ছাপ। যেন চোখদুটো বলছে- আমি জানতাম বিখ্যাত আহমেদ সাবাজের ভাবনা শক্তির কোনো তুলনা নেই।
“আপনার বাসা যেখানেই হোক একেবারে কাছে কোথাও নয়। তাই সন্ধ্যা কিংবা তার একটু পরেই রওনা হয়েছেন যাতে আপনি সকাল সকাল এখানে এসে পোঁছাতে পারেন। কিন্তু এতো সকালে পৌঁছে যাবেন আপনি বুঝে উঠতে পারেননি। আমার অনুমান সঠিক হলে আপনার প্রাইভেট কার আর ড্রাইভার আশেপাশে কোথাও অপেক্ষা করছে।”- এতটুকু বলে আবার চায়ের কাপ হাতে নেন আহমেদ সাবাজ।
সামনে থাকা মহিলাটি কিছুটা চমকে উত্তর দেন, “আপনার অনুমান সঠিক। আমি আগেও আপনার ব্যাপারে শুনেছি কিন্তু এখন বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো। কিন্তু কীভাবে বুঝলেন আমি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে এসেছি?”
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সাবাজ উত্তর দেন, “বুঝতে না পারার কিছুই নেই। আমরা সকলে গভীরভাবে চিন্তা করি না এই যা।”
“আপনি গভীরভাবে ভাবতে পারেন বলেই আপনি আহমেদ সাবাজ। আশা করি আপনার অনুমানের ব্যাখ্যা পাব।”
“হাল্কা শীত এখনও বইছে। আমার এই বাড়ির সামনের গলিতে রিকশা, সাইকেল আর মোটরসাইকেল বাদে কোনো গাড়ি দেখা যায় না। আপনি বাইরে থেকে এসেছেন কিন্তু শিশিরের কোনো ফোঁটা আপনাকে ছোঁয়নি। মানে আপনি অবশ্যই হেঁটে আসেননি। মোটরসাইকেলে বা রিকশায় আসলে ঠাণ্ডা বাতাসে আপনার অবশ্যই কিছু্টা হলেও শীত লাগতো কিন্তু এখানে আসার পর থেকে আপনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তাহলে এসব যানে না আসলে আর হেঁটেও না আসলে এমন কিছুতে এসেছেন যার চারপাশে আটকানো থাকবে। তো সেক্ষেত্রে প্রাইভেট কার হতে পারে ভাবলাম।”
“কিন্তু আমি সকালে রওনা হয়ে সন্ধ্যার দিকেও তো এখানে পোঁছাতে পারতাম আর রাতে চলে যেতে পারতাম। তবে আমি সকালেই কেন আসলাম?”
“উত্তরটা পরে একসময় দেব। আরেকটা বিষয় হলো আপনি এখানে প্রথমবার নয়, আগেও এসেছেন।”
“আপনার এমনটা কেন মনে হচ্ছে?”
“এতো সকালে গলির পাশের দোকানগুলি খোলেনি যেখান থেকে আপনি আমার ঠিকানা জানতে পারেন। বলতে পারেন দু-একটা যে রিকশা চলছে ঐ রিকশাওয়ালার থেকে ঠিকানা জেনে নিতে পারেন৷ কিন্তু এই ঢাকা শহরে কোনো রিকশাওয়ালা কারো বাড়ি চেনে বলে আমার মনে হয় না। এই সকালে এসে একদমই ঠিক মানুষের দরজায় এসে দাঁড়ালেন এটা অবশ্যই অলৌকিক নয়। মানে আপনি আগে থেকেই আমার বাড়ি চিনতেন।”
এবার রাফিয়া হাসিমুখে বলে ফেললেন, “বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা শুনে মনে হয়- আরে এ তো একদমই সোজা।”
“এক্সাক্টলি এটাই। আমরা গভীরভাবে ভাবি না তাই উত্তর পাই না। তবে আমার অনুমানও সবসময় সঠিক হবে তেমনটা নয়। অনেক সময়ই যেটা ভাবি দেখা গেছে সেটা ভুল হয়ে দাঁড়ায়।”
“আচ্ছা সকালের খাবারের জন্য কিসের আয়োজন করেছেন?”
“কিছু ভেবে রাখিনি।”
“ঘরে চাল-ডাল নিশ্চয় আছে। না থাকলেও সমস্যা নেই। ড্রাইভারকে বাজারে পাঠাবো। আজকে আমার হাতের ভুনা খিচুড়ি খেয়ে দেখবেন।”
আহমেদ সাবাজ সম্ভবত অবাক হয়েছেন রাফিয়া আন্দাজ করে নেন। তার কিছু বলার আগেই রাফিয়া বলে ওঠেন, “দয়া করে অবাক হবেন না। আপনাকে আসল বিষয়টা বলা হয়নি।”
“কী বিষয়।”
“আমি আপনাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই। আমার মেয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য।”
“আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি তার সমস্যার সমাধান করতে পারবো?”
“আমার স্বামী আপনাকে খুব শ্রদ্ধা করেন। তার একান্ত ইচ্ছা আপনি নিজেই আমাদের মেয়ের সমস্যা খুঁটিয়ে দেখবেন।”
রাজি হন আহমেদ সাবাজ। রাফিয়ার রান্না করা ভুনা খিচুড়ি খেয়েই বেরিয়ে পড়েন তারা। তার রান্নার হাতটাও চমৎকার, জাদু আছে বলতে হয়।
“আপনার দ্বৈত চরিত্রের ব্যাপারে জানার খুব আগ্রহ আমার। আপনি কীভাবে একইসাথে একজন সাইকোলজিস্ট আবার প্রাইভেট ডিটেকটিভ? বিষয়টা আরও জটিল লাগে এজন্য যে, আমি শুনেছি আপনার মধ্যে যখন এর কোনো একটি চরিত্র জাগ্রত হয় অন্য চরিত্রকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।”
সাবাজ মুচকি হেসে উত্তর দেন, “সময় নিয়ে বলবো সম্ভব হলে।”
রাফিয়া মনে মনে সাবাজের হাসির প্রশংসা করেন। লোকটি খুব বেশি হাসেন না। আর যারা কম হাসেন তাদের হঠাৎ করে হাসতে দেখলেই মুগ্ধ হতে হয়। তাদের হাসির মধ্যে যেন কোনো অদ্ভুত সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে।
“আচ্ছা কত সময় লাগবে আমাদের পৌঁছাতে?”- প্রশ্ন আহমেদ সাবাজের।
“সন্ধ্যা পার হয়ে যাবে।”
পাঁচিলঘেরা একটি বাড়ির সামনে এসে তাদের গাড়ি থামে। অন্ধকার ছেয়ে এসেছে অনেকটা। বাড়ির ভিতরে লাইট জ্বলছে তবে আশেপাশের পরিবেশ অন্ধকার। বুঝাই যাচ্ছে লোকালয় থেকে দূরে বাড়িটা। দারোয়ান গেট খুললে তারা ভিতরে প্রবেশ করেন। কলিং বেল চাপতে একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে গেল। যতদূর বুঝা গেল সে কাজের মেয়ে হবে। বয়স সতেরো বা আঠারো হতে পারে। ফর্সা চেহারা। সবুজ-কালো কম্বিনেশনের একটা থ্রি-পিস পরে আছে। দরজা খুলেই সালাম দিল সে।
বাড়ির ভিতরটা বেশ সুন্দর। রাফিয়ার স্বামী অনেক পয়সাওয়ালা হবেন হয়তো। রাফিয়া বলেছিল তিনি নাকি বেশ সম্মান করেন তাকে। কিন্তু এ মূহুর্তে তাকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। সম্ভবত কোনো কাজে বাইরে আছেন।
“আপনার জন্য পানি গরম করা আছে। ট্যাপের পানি বেশ ঠাণ্ডা এখন।”- মেয়েটি সাবাজকে উদ্দেশ্য করে বলে, “হাত মুখ ধুয়ে নিবেন।”
সাধারণত বেশিরভাগ কাজের মেয়েদের কথায় কেমন আঞ্চলিক একটা টান থাকে, কিন্তু এর মাঝে তা লক্ষ্য করা গেল না। শব্দের উচ্চারণ সুস্পষ্ট, কণ্ঠটাও বেশ সুন্দর।
সাবাজকে লক্ষ্য করে রাফিয়া বলেন, “ফ্রেস হয়ে আসুন আমার স্বামীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।”
সাবাজ বুঝতে পারে যে তার স্বামী বাড়িতেই আছে। কিন্তু এখানে তার অনুপস্থিতির কারণ তিনি বুঝে উঠতে পারেন না।
_____
জানালার পাশে হুইল চেয়ারে বসে বাইরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ভদ্রলোক। রাফিয়ার ডাকে পিছনে ফিরে তাকান তিনি। সাবাজের দিকে তাকিয়ে মুখে তার আনন্দের হাসি ফুটে ওঠে। সম্ভবত চিনতে পেরেছে তাকে। যদিও না চেনার কোনো কারণ স্পষ্ট নেই।
“আমার স্বামী মোস্তফা আনওয়ার। গত দুই বছর ধরেই তিনি এই অবস্থায়। দাঁড়াতে আর কথা বলতে পারেন না।”
সাবাজের মন কিছু মূহুর্তের জন্য বিষন্ন হয়ে যায়। লোকটিও তার সাথে কথা বলতে না পারার দুঃখ পাচ্ছে হয়তো।
তবে যার কারণেই এখানে আসা তাকেই দেখা হলো না এখনও। রাফিয়া তার মেয়ের রুমের দিকে আহমেদ সাবাজকে নিয়ে যান।
ঘুমাচ্ছে সে।
রাফিয়া বললো, “মেয়েটির চেহারায় কেমন অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে আছে দেখছেন? কিন্তু যখনই তার ঘুম ভাঙবে এই মায়াভরা মুখে ভয় আর উদ্বেগ ছাড়া কিছুই দেখতে পাওয়া যাবে না।”
রাফিয়ার চোখ টলমল করছে। এক্ষুণি চোখের বাঁধ ভেঙ্গে লোনা পানির স্রোত বয়ে যেতে পারে। সাবাজ বুঝতে পেরে তাকে বলে, “আসুন, তাকে ঘুমাতে দিন।”
একসাথে সবাই রাতের খাবার সেরেছেন। শুধুমাত্র রাফিয়ার মায়াবী চেহারার মেয়েটা বাদে। সাবাজ তার রুমে একটা অদ্ভুত বিষয় লক্ষ্য করেছেন। বিছানায় বেডশিট নেই, স্রেফ ফোমের উপর শুয়ে আছে মেয়েটা। জানালায় কোনো পর্দা টাঙানো নেই। একটু খটকা লেগেছে বিষয়টা।
খাওয়া শেষে রাফিয়াকে প্রশ্ন করেন সাবাজ, “কতদিন ধরে তার এই সমস্যা?”
“প্রায় পনেরো-ষোল দিন।”
“মানে বলতে চাচ্ছেন হঠাৎ-ই সে এ সমস্যাতে ভুগছে?”
“হঠাৎ বলা যায়। আবার বললেও ভুল হয়।”
“কেন?”
“এই পনেরো বা ষোল দিন আগে একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করানোর পর থেকেই তার এই সমস্যা।”
“আপনি নিশ্চিত?”
“শতভাগ।”
“তার রুম নম্বর কত ছিল মনে আছে?”
“হ্যাঁ, নয়শত নয়।”
“তাহলে ক্লিনিক থেকেই বিষয়টি খোলাসার যাত্রা শুরু করতে হবে। কিন্তু তার আগে আপনার মেয়ের সমস্যাটা ধরাও কম জরুরী নয়।”
কিছু সময় বাদেই চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে। রাফিয়া দৌঁড়ে তার মেয়ের রুমের দিকে যান। মোস্তফা সাহেব কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে হুইল চেয়ারেই বসে আছেন। তার এই মূহুর্তে কিছুই করার সামর্থ্য বা শক্তি কোনোটাই নেই। সাবাজ রাফিয়ার পিছে মেয়েটির রুম পর্যন্ত যায়। দরজার কাছে যাওয়ার আগেই রাফিয়া আটকে দেয় সাবাজকে।
“প্লিজ ভিতরে আসবেন না। বা দরজার সামনেও আসবেন না। কিছু সময় কষ্ট করে ধৈর্য ধরুন।”
সাবাজ দাঁড়িয়ে পড়েন। নিষেধাজ্ঞার কারণ বুঝতে পারলেন না তিনি। তাকে তো ডাকা হয়েছে তার মেয়েকে দেখানোর জন্য তবে সে নিষেধ করছে কেন তার সাথে মেয়েটির রুমে যেতে?
মেয়েটি এখনও চিৎকার করছে। রাফিয়া রুমে যাওয়ার পর আরও জোরে চিৎকার করছে। রাফিয়া রুমের বাইরে চলে আসেন। তার চোখদুটো বেয়ে অল্প করে পানি পড়ছে। এসে সাবাজের পাশে দাঁড়ান তিনি। সাবাজের ইচ্ছা হচ্ছে ভিতরে গিয়ে দেখতে আসলে কী ঘটছে। কিন্তু রাফিয়া নিষেধ করেছে যেহেতু, তিনি আর পা বাড়াননি।
কয়েক সেকেন্ড বাদেই দরজার সামনে একে একে কিছু কাপড় জড়ো হলো। সম্ভবত ভিতর থেকে মেয়েটি তার গায়ের সব কাপড় এক এক করে খুলে ছুড়ে মেরেছে। যেমনটা রাফিয়া বলেছিল তাকে।
এই মুহূর্তে সম্ভবত মেয়েটির শরীরে সুতাটুকুও নেই। সাবাজ এটা বুঝতে পারেন যে রাফিয়া তাকে তার রুমে যেতে নিষেধ করেছিলেন কেন। মূর্তির মতো দু’জনেই দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে।
চলবে…
#রুম_নম্বরঃ ৯০৯
পর্ব ১
©Sayan
সকল পর্বের লিংক একসাথে