আমি আস্তে আস্তে ঢিবিটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যতই এগোচ্ছি আমার পা দু’টো মনে হচ্ছে পিছন থেকে কেউ আঁকড়ে ধরছে। ভয়ে আমার শরীর জমে আসছে। তবুও আমি নিজেকে শক্ত করে এগিয়ে গেলাম ঢিবিটার দিকে। একটা টকটকে লাল কাপড় দিয়ে ঢিবিটা ঢাকা। আমি কাপড়টা ধরতে যাবো, ঠিক এমন সময় শুনলাম কেউ কাঁদছে। হ্যা, স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি আমি কেউ কাঁদছে। কি আশ্চর্য, এই অদ্ভুত জায়গায় কে কাঁদবে? আপা? না তো, এটা তো আপার স্বর মনে হচ্ছে না। আমি খুব খেয়াল করে এদিক ওদিকে তাকালাম। কান্নার উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আমি বুঝলাম কান্নাটা কোথা থেকে আসছে। এই ঢিবিটা থেকেই আসছে। আমি আস্তে আস্তে কানটা ঢিবির কাছে নিতেই চমকে উঠলাম। কেউ স্পষ্ট কথা বলছে ওটার মধ্যে। কান্নার সুরে কথা বলছে কেউ অনেক মিহি একটা সুরে। আমি ভয়ে ছিটকে পড়লাম দূরে। অতিপ্রাকৃত জিনিসে আমার বিশ্বাস এবং ভয় দুইটাই মোটামুটি আছে৷ আমি জেনেশুনেই এখানে এসেছি। আমি জানি এখানে এমন কিছুর সম্মুখীন আমাকে হতে হবে যা আমি আগে কখনো হইনি। আমি আয়াতুল কুরসি পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দিলাম। আমাকে এখন অনেক শক্ত হতে হবে।
আমি আবারও কানটা ওই ঢিবিটার কাছে নিয়ে গেলাম। কি বলছে শোনার চেষ্টা করলাম।
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে এখান থেকে যেতে দে, যেতে দে।”
বুকটা ধকধক করে উঠলো আমার। কার কণ্ঠ এটা? কিসের এতো কষ্ট তার?
আমি বলবো না বলবো না করেও বলে ফেললাম,”কে আপনি? কিসের কষ্ট আপনার?”
ব্যস! মুহুর্তেই সব সুনশান। কারো কোনো কথা নেই, কান্না নেই। আমি আবারও ঢিবির কাছে কান বাড়িয়ে দিলাম। কোনো শব্দ নেই। আমি থতমত খেয়ে বসে আছি। তবে কি সবই আমার মনের ভুল? আমি কি এটা নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি তাই এসব ভুল শুনছি? কিন্তু স্পষ্টই শুনলাম যে।
আমি আস্তে আস্তে লাল কাপড়টার দিকে হাত বাড়ালাম। আমার হাত কাঁপছে থরথর করে। আমার মন বলছে এই সেই জায়গা যেখানে দাদীর মা মানে রুহজানিয়াকে মীর মতলেব খাঁ এর লোকেরা পুঁতে রেখেছিলো। আমি কাঁপতে কাঁপতে কাপড়টা এক টান দিয়ে সরিয়ে ফেললাম।
কাপড়টা সরানোর সাথে সাথেই আমি ভয়াবহভাবে শিউরে উঠে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমি ভেবেছিলাম এটা একটা ক*বর হবে হয়তো। কিন্তু এটা কি? এটা তো একটা গর্ত। বিশাল একটা গর্ত। গর্তের মুখে হাজার হাজার লাল পিঁপড়া। পিঁপড়াগুলো মুখে করে রক্তের মতো কি যেনো নিয়ে এদিকে ওদিক ছুটছে। আমি বিস্ফারিত চোখে ওদিকে তাকিয়ে আছি। জায়গাটা কেউ যেনো খাবলা দিয়ে খুঁচে উঠিয়ে নিয়েছে। আরো হাজার হাজার পিঁপড়া যেনো গর্ত থেকে বেরোচ্ছে। আমি বসা অবস্থাতেই পা সামনে ছুঁড়তে ছুঁড়তে পিছে হঠতে থাকি। আমার সারা শরীর গুলিয়ে ওঠে, বমি আসে আমার। ইচ্ছা করছে মুখ ভরে বমি করতে। আমি কোনোমতে দরজার কাছে এসে বসি। আকুল হয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকি।
“মা মা গো। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও মা। আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে নিয়ে যাও।”
আমার গলার স্বর প্রতিধ্বনি হয়ে আমার কাছেই ফিরে আসে। কোথাও কোনো সাড়া নেই। আমি দুইহাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কাঁদতে থাকি। আপা কোথায়? আমি একা কেনো হয়ে গেলাম?
হঠাৎ কোথা থেকে যেনো আচমকা ভীষণ ঝড়ো একটা বাতাস আসতে থাকে। আমি অবাক হয়ে যাই। এই বদ্ধ ঘরে এতো বাতাস কোথা থেকে আসবে? আমার চোখ যায় জানালার দিকে। ঘরের জানালা খোলা। এতো জোর বাতাসে জানালার কপাটগুলো সজোরে আঘাত করতে থাকে। আমার মনে একটু আশার আলো জাগে। এইতো জানালা। এখান থেকে চিৎকার দিয়ে কাউকে ডাকলে কি দোতলা থেকে শোনা যাবে না? আমি হাঁপাতে হাঁপাতে দরজার কাছে যেতে শুরু করি। এতো বাতাসের মধ্যে এগোনো যাচ্ছে না। তাও আমি প্রাণপণ চেষ্টা করি ওখানে পৌঁছানোর।
জানালার কাছে যেতেই আমি অবাক হয়ে দেখি বাইরের গাছের একটা পাতাও নড়ছে না। তাহলে ঘরের মধ্যে এতো বাতাস কোথা থেকে আসছে? আমি জানালার শিক ধরে আবারও চিৎকার করতে থাকি।
“মা মা, দাদী। কে আছো আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। আপা এই আপা।”
হঠাৎ-ই আমাকে চরম অবাক করে দিয়ে ঘরের মধ্য থেকেই আপার গলার স্বর শুনতে পাই।
খুব টেনে টেনে আপা সুর করে বলছে,”সাজ সাজ। আমি তো এখানে। তুই ওদিকে কাকে খুঁজিস? আয় সাজ, এখানে আয়।”
আমার প্রাণে যেনো পানি ফিরে আসে। এই মুহুর্তে আমার মাথায় এটা আসেনি যে, এই ঘরে তো আমি একা প্রবেশ করেছিলাম। আর তারপরেই দরজা আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তাহলে আপা কোথা থেকে আসবে এখানে? আর আমি আসার আগে আপার এখানে আসা অসম্ভব। আমিই বদ্ধ দরজার সামনে একা দাঁড়িয়েছিলাম।
এসব কিছুই আমার মাথায় নেই। আমি এলোপাতাড়ি ছুটতে থাকি সারা ঘরজুড়ে। কোথাও আপা নেই।
আমি হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বলি,”আপা কই তুই? তোকে তো কোথাও পাচ্ছি না আমি। আমাকে এখান থেকে বের কর আপা। এই ঘরে আমি আর বেশিক্ষণ থাকলে দমবন্ধ হয়ে মরে যাবো। তুই কোথায়?”
আমার মনে হলো আপা হাসছে, কুটকুট করে হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু আপাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। আমি আবারও কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,”আপা তুই কোথায়? আমাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যা।”
“এখানে যে একবার আসে সে তো আর ফিরতে পারে না সাজ। জীবিত অবস্থায় তুই আর ফিরতে পারবি না।”
এই বলে আপা বিকট শব্দে হাসতে থাকে। আমি হতবাক হয়ে যাই আপার কথা শুনে। আপার কণ্ঠটা মনে হচ্ছে ওই গর্ত থেকে আসছে।
আমি ধীর পায়ে আস্তে আস্তে আবারও ওই গর্তটার দিকে এগিয়ে যাই। আমি জানিনা গর্তের ভিতর কি দেখতে পাবো আমি। এই ইট-কংক্রিটের দালানে এমন গর্ত কোথা থেকে আসবে এটাই তো বুঝতে পারছি না আমি।
আমি আস্তে আস্তে উঁকি দিই গর্তের মধ্যে। তাকাতেই একটা বিকট আর্তচিৎকার দিয়ে পিছনে চলে যাই আমি। একটা ঘুঙুরে পা পিছলে খানিকটা দূরে যেয়ে পড়ে যাই।
“আহা আহা সাজ সোনা আমার। ব্যথা পেলি সোনা? সাবধানে চলবি তো বাবা।”
আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,”আপা তুই ওখানে গেলি কীভাবে? ওই গর্তের মধ্যে তো হাজার হাজার পোকা, পিঁপড়া। তুই ওখানে কি করিস? ওখান থেকে উঠে আয় তুই।”
আমি স্পষ্ট দেখেছি আপা সহস্র পোকার মধ্যে চুপ করে বসে আছে, তার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কিছু হাড়গোড়।
“আপা, তুই ওখানে কেনো?”
“শুধু আমি না রে সাজ। এখানে আরো দুইজন আছে। দেখিস নি তাদের?”
“দুইজন মানে? আরো কে আছে ওখানে?”
“এইযে মীর মশাররফ খাঁ আর মীর আনোয়ার খাঁ। দুইজনই তো আছে।”
আমি ভয়ার্ত চোখে তাকালাম ওদিকে। মীর মশাররফ খাঁ আমার বাবা আর মীর আনোয়ার খাঁ আমার ছোট চাচা। তারা ওখানে কীভাবে আসলো? কখন আসলো? তবে কি দাদীর সব কথাই সত্য হতে যাচ্ছে? আর আপা? আপার দ্বিতীয় সত্ত্বা কি তবে ওর মধ্যে চলে এসেছে? মানে এতোক্ষণ যে আমার সাথে কথা বলছিলো সে আপা নয়? আপার শরীরে থাকা রুহজানিয়া?
“আপা, তোরা ওখান থেকে বের হয়ে আয়। বাবা আর ছোট চাচাকে ছেড়ে দে।”
বিকট শব্দে আপার হাসির আওয়াজ শুনলাম, সেই হাসি এতোটাই ভয়ানক ছিলো যে আমার আত্মা কাঁপতে থাকলো। আমি মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে থাকি। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায় আমার।
“সাজ, আমিও যে সেদিন এভাবে মুক্তি চেয়েছিলাম। আমি সেদিন চিৎকার করে বলেছিলাম আমাকে আর আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও। আমরা অনেক দূরে চলে যাবো এখান থেকে। কেউ জানবে না তোমাদের আজকের এই কীর্তির কথা। আমি তো ওদের পা ধরে ভিক্ষা চেয়েছিলাম আমার আর আমার মেয়ের জীবন। কিন্তু ওরা সেদিন শোনেনি। এই দেয়ালের, এই জানালার, এই দরজার যদি জীবন থাকতো তারাও আমার সেই বাঁচার আকুতি শুনে কেঁদে দিতো। কই সেদিন তো কেউ বাঁচায়নি আমাকে। এতো সাজসজ্জাপূর্ণ মীর বাড়ির আভিজাত্য কোথায় ছিলো সেদিন? একটা ভীনদেশী মেয়ের র ক্তে ভেসে গিয়েছিলো এই ঝকমকে মীর বাড়ি। আমাকে মেরে এখানেই চাপা দিয়ে রাখা হলো। আমি দিনের পর দিন ছটফট করেছি। মুক্তির আশায় আমার আত্মা এই চার দেয়ালের মধ্যে আর্তনাদ করেছে। কোথায় ছিলি তোরা সেদিন? কেউ তো আসিস নি আমাকে বাঁচাতে। কোনো মেয়ের শরীর ছাড়া আমার আত্মা তার সত্ত্বা খুঁজে পেতো না। এটা কে জানতো জানিস? মীর মতলেব খাঁ, ওই নরপিশাচ সব জানতো। তাই তো আমার মেয়েটাকে এই বাড়িতেই পাগল সাজিয়ে বউ করে রেখে দিয়েছিলো। তোর বাবা চাচারা জন্ম নেওয়ার আগে আমার মেয়েটা তিন তিনটা কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। সবাইকে ওই মীর মতলেব খাঁ হ*ত্যা করেছে। কেনো জানিস? যাতে আমি এখান থেকে মুক্তি পেতে না পারি। নিজের মৃত্যু অবধারিত জানার পরে নিজের আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছে। কার কাছে জানিস? তোর মেজো চাচা মীর মোস্তাফা খাঁ এর কাছে। হ্যা, তোর মেজো চাচা মীর মোস্তাফা খাঁ এর মধ্যে মীর মতলেব খাঁ এর আরেক সত্ত্বা রয়েছে। তাই মীর মতলেব খাঁ ইচ্ছা করেই আগে থেকে রাখা এই বাড়ির নাম সাঁঝবাতির সাজবাড়ি থেকে এই বাড়ির প্রথম কন্যা সন্তানের নামকরণ করে যায়। যাতে ওই মীর মোস্তাফা খাঁ হিংসার বশবর্তী হয়ে ওই মেয়েগুলোকেও মেরে ফেলে। আর কন্যা সন্তান মারা যাওয়া মানেই আমি আবারও এক প্রজন্ম অপেক্ষায়। আমি না পারবো মীর বংশকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে না পারবো নিজের মুক্তির পথ খুলতে। কিন্তু না, মীর মোস্তাফা খাঁ আর জিততে পারেনি তোর মায়ের কাছে। তোর মা নিজের বুক পেতে দুই মেয়েকে আগলে রেখেছে। তাই আমি এতো বছর পর নিজেকে মুক্ত করতে পারবো। তার সাথে সাথে ধ্বংস করে দিবো এই মীর বংশকে।”
আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি আপার মধ্যে থাকা রুহজানিয়ার কথা শুনে। দাদীর বাবা মাকে মেরে ফেলার পরেও দাদীকে শান্তি দেয়নি? তার তিনটা মেয়েকে মেরে ফেলা হয় তারই সামনে? লোকটা এতোটা নিকৃষ্ট ছিলো?
আমি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললাম,”দেখুন, আমি আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি। আমি চেষ্টা করবো আপনার আত্মার শান্তির ব্যবস্থা করতে। এখান থেকে যেয়েই আমি আপনার আর আপনার স্বামীর আত্মার জানাযার ব্যবস্থা করবো। আর কোনো কষ্ট হবে না আপনাদের। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি। কিন্তু আমার আপা, বাবা আর ছোট চাচাকে ছেড়ে দিন। ওদের তো কোনো দোষ নেই।”
আবার সেই ভয়ংকর গলায় রুহজানিয়া হাসতে থাকে। আমার হাত-পা জমে যায় সেই হাসি শুনে।
“তাই নাকি সাজ? এতো সহজ সব কিছু? এই মীর বাড়ি আমাকে বাঁচতে দেয়নি, আমার স্বামীকে বাঁচতে দেয়নি। আমার মেয়েটার জীবন নষ্ট করেছে। সারাজীবন সবার কাছে পাগল বানিয়ে রেখেছে। তার সামনে তার তিন মেয়েকে হ*ত্যা করেছে। এই বংশকে আমি কীভাবে ছেড়ে দিবো? কোনোভাবেই না। মীর মোস্তাফা খাঁ এর মধ্যে রয়েছে ওই পিশাচটার সত্ত্বা। ওকে আমি শেষ করবো তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে। কিন্তু তার আগে তোদের সবাইকে শেষ করবো আমি। আজ এতো বছর পর আমি আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবো। প্রতিশোধের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলবে এই মীরবাড়ি।”
“দেখুন, আমরা তো কোনো দোষ করিনি। মীর মতলেব খাঁ আমাদের আদিপুরুষ। তিনি যা করেছেন আমরা তার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাষাও নেই। কিন্তু আমাদের তো কোনো দোষ নেই। আমরা তো নির্দোষ। আর মেজো চাচা? মীর মতলেব খাঁ যখন মারা যান মেজো চাচা তখন দুগ্ধপোষ্য শিশু। তার কাছে যদি মীর মতলেব খাঁ এর আত্মার দ্বিতীয় প্রকাশ ঘটে এখানে তো তার কোনো দোষ নেই। আমাদের জীবনটা এভাবে শেষ করে দিবেন না। আর আমার বাবা চাচারা তো সেসব নোংরা কাজের সাথেও জড়িত নয়। তারা সবাই ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেনো তাদের শেষ করে দিতে চান আপনি?”
হঠাৎই আমার মনে পড়ে দেওয়ালের মীর মতলেব খাঁ এর তৈলচিত্রটা দেখে আমার কেনো এতো চেনা চেনা চেনা লাগছিলো, কারণ আমার মেজো চাচা মীর মোস্তাফা খাঁ এর চেহারা যে একদম মীর মতলেব খাঁ এর মতো।
“এই ছোট্ট মেয়ে, একদম চুপ। আমাদের কি দোষ ছিলো? আমার, আমার স্বামীর আর আমার ছোট্ট মেয়েটার? তার কি দোষ ছিলো? কতো আশা ছিলো তার মনে। পড়াশোনা করে বড় উকিল হবে। আমরা আবার চলে যাবো পারস্য। ওখানে মেয়েটা ওকালতি করবে। কতো স্বপ্ন ছিলো আমাদের। এই মীর বংশ আমাদের সেই সব স্বপ্ন এক রাতের মধ্যে ধ্বংস করে দিলো। ওদের সবাইকে আমরা শাস্তি দিয়েছি। তোদেরও দিবো। আমার মেয়ের সামনেই যেমন তার বাবা মা আর তার তিন মেয়ের জীবন নেওয়া হয়েছিলো, ঠিক তেমনই তোর সামনেই তোর বোনকে দিয়ে প্রথমে তোর বাবা আর ছোট চাচার জীবন নিবো। এরপর তোদের। আর তার পরেই মিলবে আমার মুক্তি৷ আর ওই মীর মোস্তাফা খাঁ এর ভিতরে থাকা মীর মতলেব খাঁ কে শেষ করবো আমি নিজে, আর আমার স্বামী। এরপর আমাদের দুইজনের মুক্তি। এই বাড়ি পরিত্যক্ত করে আমরা চলে যাবো। তোর বাবা আর চাচার মৃ ত্যু হবে ভয়ংকরভাবে। গর্তের চারপাশে থাকা হাজার হাজার পিঁপড়া খুবলে খাবে তাদের শরীর। তিলে তিলে কষ্ট পেতে পেতে হবে তাদের মৃত্যু। সেই কষ্ট দেখে আমি শান্তি পাবো।”
আমি থরথর করে কাঁপতে থাকি রুহজানিয়ার কথা শুনে। এতো নির্মমভাবে মারা হবে আমার বাবা চাচাকে? এরপর তো আমাকে আর আপাকেও। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে আমার।
“আপনার মেয়ের কথা একবারও ভাববেন না আপনি? আপনার মেয়ের কতো আদরের কতো ভালোবাসা সন্তান আমার বাবা চাচারা। এরপর আমরা দুইবোন তো দাদীর প্রাণ। আমরা চলে গেলে দাদী কাকে নিয়ে থাকবে? তার শেষ জীবনটা তো কষ্টেই কেটে যাবে। হয়তো সহ্য করতে না পেরে উনি মারা যাবেন। মীর মতলেব খাঁ দোষী। সে দাদীর সামনেই তার বাবা মা আর তিন মেয়েকে মেরে ফেলেছে। সেই একই শাস্তি যদি বাবা মা হয়ে আপনারা তাকে দেন তাহলে আপনাদের সাথে মীর মতলেব খাঁ এর কি পার্থক্য থাকলো?”
আমি এতোটুকু বলে চুপ করে যাই। ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ শুনতে পাইনা। বুকটা একটু কেঁপে ওঠে আমার। তবে কি রুহজানিয়া আমার কোনো কথা শুনবে না? সে তার কাজ শুরু করে দিয়েছে? আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাই গর্তটার দিকে।
ঠিক এমন সময় গর্তের ভিতরটা যেনো একটু কেঁপে ওঠে। কে যেনো গর্তের মধ্য থেকে উপরে উঠে আসার চেষ্টা করছে। আমি ভয়ে দুই কদম পিছিয়ে যাই। এবার কি তবে আমার পালা?
(চলবে…..)
[পরের পর্বে ইনশাআল্লাহ গল্পের সমাপ্তি।]