#ফাবিয়াহ্_মমো
পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে পড়ছে থামবার কোনো অবকাশ নেই! মেয়েটার কি লিউকেমিয়া রোগ আছে? রক্ত একবার পড়া শুরু হলে থামেনা এমন রোগ? পূর্ব খপ করে পাশের মেয়েটা থেকে তুলোর প্যাকেট নিয়ে নিলো! মেয়েটা তারা চক্ষুতারকা ইয়া বড় করলেও পূর্বের কিছু একটা দেখে সে ঘোর আবেশে অপলক তাকিয়ে রইলো! ছেলেটা কি দারুণ দেখতে! এতো সুন্দর কি কোনো ছেলে হয়? এই ছেলে যদি নায়কের পার্ট করার জন্য ইন্টারভিউ দেয় তাহলে ফার্স্ট অডিশনেই চান্স পেয়ে যাবে! কি সাংঘাতিক রকমের সুন্দর! পূর্ব হাত চালিয়ে তুলো ছিড়তে ছিড়তে রক্ত পড়া বন্ধ করলো! এতো রক্ত দেখতে পেয়ে শরীর, হাত থরথর করে কাপছিলো ওর। ইশশ…পূর্ণতার কি অসহ্য ব্যথাই না হচ্ছে! মেয়েটা ডুকরে কাঁদছে, ফুপাচ্ছে, মাঝেমাঝে চোখ কুঁচকে দাঁত দিয়ে শক্ত করে ঠোঁট কামড়াচ্ছে! ব্যান্ডেজ শেষ করে উঠে দাড়ালো পূর্ব। পূর্ণতাকে সাহায্য করা মেয়েটিকে ‘ধন্যবাদ’ দিতেই দেখলো মেয়েটি ওর দিকে সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকও পড়ছেনা। পূর্ব এমন একটা ভাব করলো যেনো এইসব কীর্তিকলাপে ও বেশ অভ্যস্ত। মেয়েরা ওর দিকে এভাবেই তাকিয়ে থাকে! আবার কেউ কেউ তাকিয়ে থাকতে থাকতে হুশঁজ্ঞান ছাড়াই বকবক করতে থাকে। পূর্ব পূর্ণতার হাত ধরে শপের বাইরে দাড়িয়ে আছে। রাস্তার আশেপাশে মানুষজন কেমন কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই পূর্বর। পূর্ব পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে শান্তসুরে বললো,
– তোমাকে কোলে নিলে প্রবলেম হবে? দেখো তুমি কিন্তু একপা-ও হাটতে পারছো না! লোকে কি বলবে টাইপ ফিলিং থাকলে আগেই বলছি ওসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো! কোলে তুলবো?
পূর্ণতা চারিদিকে মাথা ঘুরিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। মানুষ ড্যাবড্যাব করে ওদেরকেই দেখছে বোঝা শেষ। পূর্ণতা মিইয়ে যাওয়া চাহনিতে পূর্বর দিকে তাকিয়ে না-বোধকে মাথা নাড়লো! পূর্ব শব্দযোগে নিশ্বাস ছাড়লো দেখা গেলো ওর বাম ভ্রুটা উচুতে উঠে গেছে। ছেলেদের প্রচণ্ড রাগ হলে ওদের ভ্রু খানিকটা উচুঁতে উঠে যায় তাহলে পূর্ব কি রেগেছে? সর্বনাশ! ওর রাগ প্রচুর ভয়ানক!পূর্ব পকেট থেকে কালো কভারের একটা ফোন বের করে পরপর দুটো হুঙ্কার গলায় কল করলো! পূর্ণতা অজান্তেই পূর্বের হাত ছেড়ে দূরে সরে দাড়িয়েছে। পূর্ব কল কেটে দেখলো পূর্ণতার মুখটা ভয়ে কুনো হয়ে আছে। তীক্ষ্ম দৃষ্টি ছুড়ে চোখ ছোট করে বললো,
– আমাকে ভয় পাওয়া ভালো বৈশিষ্ট্য! আই লাইক দিস! উবার গাড়ি আসছে আমরা কমলাপুর স্টেশন যাবো! দ্যান গোয়িং টু দেওয়ানগন্জ!
স্টেশনে পৌছতে লাগলো দেড়ঘন্টা! তিস্তা এক্সপ্রেস ছয় নং লাইনে দাড়িয়ে আছে ঠাঁই নিয়ে তার উপর ভীড় হয়েছে যাত্রীর। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম ‘কমলাপুর স্টেশনের’ দীর্ঘ পথটা পূর্ব পূর্ণকে কোলে করে এনেছে এবং সেই হাঁটা থেমেছে বগি নাম্বার চার, এসি কেবিন -৬ এ। পূর্ব গ্রামে গেলে একা একটা মেয়েকে কারো ভরসায় রেখে যাবেনা। নিজের কাজিনদের উপর যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে অন্য কারোর উপর পূর্ণতার দায়িত্ব সপে দেয়া ভালো হবেনা। পূর্ণতাকে সিটে বসিয়ে এসি অন করে বাইরে থেকে খাবার আনতে গেলেই এনাউন্সমেন্ট হয়.. ট্রেন আর কিছুক্ষনের মধ্যেই ছেড়ে দিবে। ট্রেন চলছে। পূর্ণতা জানালার বাইরে ট্রেনের ধীরগামী গতিবেগ লক্ষ করতে করতেই ট্রেন বেগ বাড়িয়ে চলতে লাগলো। আরামদায়ক সিট, কেবিনের ভেতর থেকে দরজা লাগানো, এসিটা মৃদ্যু ভোল্টেজে পরিবেশ শীতল করছে, পাশে একহাত দূরত্ব বজায় রেখে পূর্ব মোবাইলে ফেসবুক স্ক্রল করছে।
– পূর্ব ভাইয়া আমি আপনাকে চিনি..
পূর্ব হাসলো। এরপর এমন করে পূর্ণতার দিকে তাকালো ওর হাত থেকে ফোনটা ধপাস করে পড়ে গেলো! ফোনটা সিটের নিচে তলিয়ে গেছে। পূর্ব আশ্চর্য হয়ে দাড়িয়ে পড়লে পূর্ণতা আলতো করে জিহবা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল,
– আপনি চমকাচ্ছেন কেনো? ফোনটা তুলুন।
পূর্ব আশ্চর্যের স্তর অতিক্রম করতে পারছেনা! এতো বেশি আশ্চর্য হয়েছে যে, লাড্ডু মার্কা পরীক্ষায় একশো নম্বর পেয়েও হয়নি পূর্ণতা নিজেই সিটের নিচে উবু হয়ে ফোনটা তুলে রাখলো। পূর্ব হতভম্ব!
– আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি আপনাকে কিভাবে চিনি? আসলে আমি আনিশা আপুর আত্মীয় হই। আপু আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছে। কিন্তু পথিমধ্যে এমন দূর্ঘটনায় পড়ি…
পূর্ব ঘন করে গলায় ঢোক ফেলে ধীরেসুস্থে পাশে বসলো। চোখের চাহনি এখনো অবাকের কোটরে। পূর্ণতা জ্যাকেট খুলে কোলে রেখে বলে উঠলো,
– আমি পূর্ণতা কবির। আইইউবি(IUB)-তে পড়ছি অনার্স প্রথম বর্ষে। আপনি আমাকে চিনবেন না এটাও আমি জানি। কিন্তু আপনাকে চিনতে আমার কোনো কষ্ট হয়নি। আমি আপুর ফোন থেকে আপনার ছবি দেখেছি।
– আনিশা তোমার কেমন বোন! কোন উদ্দেশ্যে তুমি আমার কাছে এসেছো!
– উত্তেজিত হবেন না প্লিজ আমি এখনো খুব দূর্বল। আমার নার্ভ খুব তাড়াতাড়ি উইক হয়ে যায়। একটু শান্ত হন আমি সব খুলে বলছি।
পূর্ব শান্ত হলো। অনেকগুলো নিশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করলো। পূর্ণতা হাত দিয়ে কপালের কাছে ছোট চুলগুলি পেছনে ঠেলে বললো,
– আপু আমার কাজিন হয়, মামাতো বোন। উনি বড় মামার মেয়ে। আমরা আপুর বিয়ে এটেন্ড করতে উত্তরা থেকে রওনা দিয়েছিলাম হঠাৎ আপু আমাকে রিকুয়েস্ট করলো আপনার কাছে একটা চিঠি পৌছে দিতে। আমি যেনো নিজ হাতে আপনার কাছে চিঠিটা পৌছে দেই। আপুর কথামতো আমি বাবা-মাকে বিদেয় দিয়ে বাসা থেকে রওনা দিয়েছিলাম। হঠাৎ বনানীর মোড়ে এক চোর এসে আমার ব্যাগ চুরি করে নিয়ে যায়। আমি পেছন পেছন অনেকক্ষন ধাওয়া করি, সে নাগালের বাইরে চলে গেলে এমন এক রাস্তায় আবিস্কার করি যেখানে আমি কখনো পা দেইনি। সেই থেকে আমার দূর্ভোগ শুরু। চা ওয়ালার কাছ থেকে ফোনটা চেয়ে হেল্প চেয়েছিলাম কিন্তু লোকটা সাহায্যের বদলে আমার ইজ্জতে হাত দিলো। আমি ভয়ে ছুটে পালাই। তবুও লাভ হয়নি চা ওয়ালার কিছু সহযোগী আমায় ধরে ফেলে। প্রচুর মারে, লাঠিপেটা করে। আমি আঘাতের চোটে চুপচাপ হয়ে গেলে ওর সুযোগ লুটতে চলে আসে। আমি ধূলো মেরে আবারো দৌড়ে পালাই, বাকিটা ইতিহাস আপনি হয়তো জানেন।
পূর্ব বোতলে মুখ লাগিয়ে ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে নিজেকে স্থির করলো। পূর্ণতা ওর প্রেমিকার মামাতো বোন হয়। তার উপর পূর্ণকে দিয়ে ও চিঠি পাঠিয়েছে। এক্ষুনি চিঠিটা পড়তে ইচ্ছে করছে পূর্বর! পূর্ব কাছে এসে বললো,
– চিঠি কোথায়? চিঠি দাও! এক্ষুনি দাও!
– আমার কাছে চিঠিটা নেই, ব্যাগসহ চুরি হয়েছে। ব্যাগে ছিলো চিঠিটা।
– কি লিখা ছিলো? কি লিখেছিলো আনিশা!
– মাফ করবেন আমি জানিনা। আমি চিঠির খামও খুলে দেখিনি।
– চুপ করো ফালতু মেয়ে! তুমি আমার সাথে বোবা সাজার অভিনয় করছিলে! কেন! কেন করলে!
– আমি অভিনয় করিনি বিশ্বাস করুন।আমি সত্যি নিবার্ক হয়ে গিয়েছিলাম। পরপর আমার সাথে যেসব ঘটনা ঘটলো, আমি মানতে পারছিলাম না সেসব।
– একদম মিথ্যা কথা বলবেনা বেয়াদ্দব! তুমি ইচ্ছে করেই নাটক করেছো! কি ভেবেছো আমি বুঝিনা?
– আপনি আসলেই দেখছি খুব রাগি। আপু আমাকে বলেছিলো আপনার সাথে কম কথা বলতে।
– ইয়ার্কি হচ্ছে?
– না না তওবা তওবা। ইয়ার্কি করার কি আছে? আমি এখানে যে সুস্থ হয়ে আছি তা কেবল আপনার জন্যেই। আমি তো কৃতজ্ঞ।
পূর্ব ভাই শান্ত হয়ে বসলেন সিটে। উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি আমার উপর প্রচন্ড রেগে আছেন। পারলে গলা টিপে মেরে ফেললে হয়তো উনি শান্তি পেতেন। ট্রেন এয়ারপোর্ট স্টেশনটা পেরুতেই কথা বললেন পূর্ব ভাই। এতোক্ষনে অনেকগুলো স্টেশন কভার হয়েছে কিন্তু উনি আমার সাথে একটা কথাও বলেননি। উনি বললেন,
– আনিশা আমাকে কেনো ছাড়লো?
– আপনি উনাকে যে কারনে ছেড়েছেন।
– আমি বাবার জন্য ওকে বিয়ে করতে পারিনি।
– উনিও উনার বাবার জন্য বিয়ে করতে পারেনি।
আবারো দুজনের মধ্যে নিরবতা। চলন্ত ট্রেনে ভুম ভুম সাইরেনের বিকট শব্দ, ঝুনঝুন শব্দ সব মিলিয়ে নিরবতা আরো আচ্ছন্ন করে ধরলো। পূর্ণতা পূর্বের দিকে মাথা ঘুরিয়ে বললো,
– আপনি খুব সুন্দর।
চমকে উঠলো পূর্ব! চোখে বেশ বিরক্তি এনে কপাল কুচঁকে তাকালো! এ তো ফালতু মেয়ে! আমায় আবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখাও শুরু করেছে নাকি! একটা চড় মারতে ইচ্ছা করছে ফালতু কোথাকার। পূর্ব কঠিন কঠিন কিছু কথা বলবে তার আগেই পূর্ণতা বলে উঠলো,
– কথাটা আমি না, যেকোনো মেয়েই বলতে বাধ্য হবে। আমি তো শুধু সত্য বললাম। আপনি সিরিয়াসলি কিউট!
পূর্ব জোরে শ্বাস ছেড়ে প্রসঙ্গ পাল্টে বললো,
– পায়ের অবস্থা কেমন? ব্যথা করছে?
– পূর্বের তুলনায় ভালো। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
– কেনো?
– না মানে আসলে…মানে ধন্যবাদ তো দেওয়াই লাগে। আপনি আমার সেবা করছেন।
– ওহ্। চোখ নামাও! আমার দিকে তাকাবা না!
– তাকাবো না সরি। আপনি কি ঘুমাবেন? বারবার হাই তুলছেন। প্লিজ আপনি ঘুমিয়ে নিন, রাতে ঘুমাননি।
– সেটা তোমার বুঝা লাগবে না।
কথাটা উনি এতো খারাপ ভাবে বললেন কেউ আজ পযর্ন্ত আমার সাথে এমন উচুস্বরে কথা বলেনি। আমি মন খারাপ করে সিটে পিঠ ঠেকিয়ে বসলাম। ভালো লাগছেনা। জার্নিটা তাড়াতাড়ি শেষ হোক। আমি চলে যাবো। আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা হঠাৎ কোলের উপর ভীষণ ভার অনুভব করতেই আমি মাথা নিচু করে দস্তুর অবাক! পূর্ব ভাই কোলে মাথা রেখে জ্যাকেট দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন! উনি এখানে কি করে? মানে আমার কোলে কখন ঘুমালো? ভাবতেই ভাবতে ট্রেন এসে গফরগাঁও স্টেশনে থামলো! ট্রেনের ব্রেক একটু জোরে হলে চোখ খুলে তাকালেন পূর্ব ভাই। উনি চোখ কচলাতে কচলাতে বললেন,
– কোথায় এসেছি? কোন স্টেশন?
কি মারাত্মক কন্ঠ! ঘুমের কারনে কন্ঠস্বর এতো চমৎকার লাগে? আগে তো জানতাম না!! উনি আমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে আমার ধ্যান ভাঙতেই চেচিয়ে বলে উঠলেন,
– কি সমস্যা ! বাংলা ভাষা কি বুঝো না? কোন স্টেশন জিজ্ঞেস করছি বলো না কেন!
– সরি সরি, আমি খেয়াল করিনি, এটা গফরগাঁও।
– ফালতু মেয়ে! তুমি কিভাবে যে আনিশার বোন হও আই জাস্ট কান্ট বিলিভ!
– আমিতো ফালতু কাজ করিনি,
– তা তো চোখকান খোলা রেখেই দেখতে পাচ্ছি! এমন আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকো কেন! চোখ সরাও!
– পৃথিবীর সুন্দর জিনিসগুলো দেখার অধিকার অবশ্যই সবার আছে ঠিকনা?
– হোয়াট ডু ইউ মিন!
– কিছু না, আমি আর তাকাবো না।
– ফালতু মেয়ে — আমি এভাবে এভাবেই বলিনা! যত্তসব ড্রামা!
গফরগাঁও স্টেশন ছাড়ানোর পর প্রকৃতির সবুজপ্রাণ দেখতে পাচ্ছি। কি সুন্দর বাতাস! তাতে একরত্মি ধূলো নেই, একচিলতে দূষিত পর্দাথ নেই, সতেজতায় মাখা নির্মল সেই হাওয়া! উফ! গ্রাম যে এতো সুন্দর হয় তা কখনো শহুরে মানুষ বুঝবেনা! জানবেনা! কখনো ভাবতেও পারবেনা ব্যস্ত নগর ছেড়ে গ্রামে আসার বাসনা! ট্রেন যতই গতি বৃদ্ধি করছে ততই শান বাজিয়ে আসছে বাতাস। উদ্যম বাতাসে চন্ঞ্চল হয়ে উঠেছে কপালের সামনের চুলগুলো। এবড়োথেবড়ো হয়ে পড়ছে মুখের উপর। প্রকৃতির এই মায়া, মোহ, সৌন্দর্য এতো অপরূপ! একদিকে যেমন দেহের ক্লান্তি মেটায় অপরদিকে মনকে প্রশান্তিতে ঘুম পাড়ায়! আমার এখন চোখ ঠেলে ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছে করছেনা। বারবার প্রাকৃতিক পবিবেশে নিজেকে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে, ভাসিয়ে দিতে চাইছে মনটা দুমকা কোমল হাওয়ায়। চোখবন্ধ করে বুকভরা নিশ্বাস টেনে নিচ্ছি কি শান্তি! কি অদ্ভুত শান্তি! হঠাৎ আমার পেটের কাছে তপ্তকর নিশ্বাস ফেলার অনুভব হলো! আমি চোখ খুলে দেখলাম পূর্ব আমার পেটের দিকটায় কিছুটা চলে এসেছেন এবং গভীর ঘুমে বশীভুত হয়ে নিশ্বাস ছাড়ছেন। উনার সবচেয়ে বেশি আর্কষনীয় জিনিস হলো চোখ! উনার চোখগুলো বেশ বড় বড়। মায়াকাড়া! ঘন লম্বা পাপড়িবেষ্টিত কালো মণির চোখ। বাতাসের ঝাপটায় আছড়ে পড়ছে উনার চুলগুলো। কখনো প্রশস্ত কপালে, কখনো চমৎকার ভ্রুয়ের কাছে চোখজোড়ার নিচে। কি দারুণ দৃশ্য!
– এই ফালতু মেয়ে তাকিয়ে আছো কেন! চড়ায়া গাল ফাটিয়ে দিবো! বেশশরম! ফালতু! আমার তো ডাউট হচ্ছে তোমার ক্যারেক্টার নিয়ে! প্রস্টিটিউটের মতো নজর! ডিসগাস্টিং! চোখ নামাও!
পূর্ব মাথা উঠিয়ে সোজা কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। মাথা নষ্ট হয়ে যায় মেয়েদের এমন লুক দেখলে! আরে বাবা পায় কি আমাকে দেখে? যেখানেই যাই জাস্ট এমনেই তাকিয়ে থাকে! আমারো তো শেম বলতে জিনিসটা আছে! খালি মেয়েদেরই কি লজ্জা বেশি? ধ্যাত! মেজাজটাই হাইপার করে দিছে ফাজিল! হঠাৎ ট্রেনের দরজার কাছ থেকে লোকজনের হৈচৈ শোনা গেল। কেউ কেউ হৈহৈ করে চিল্লাচ্ছে ‘ওই ওই..ধর!! ধর!!হাত ধর!! ছেড়ি টাল হইয়া গেছে!! ছেড়ি মরতে যাইতাছে ধর!!’
আমি পাশের বগি থেকে দৌড় দিয়ে ছুটে গেলাম! এই পূর্ণতা আবার কাহিনি করলো নাকি!রেগে কথা বলেছি দেখে এভাবে মরতে যাবে!শিট! যা ভেবেছি তাই! পূর্ণতা চলন্ত ট্রেনের দরজা ধরে দাড়িয়ে আছে একপা অলরেডি বাইরে বের করেছে! লোকজন ওকে টানাটানি করার সাহস পাচ্ছেনা যদি ঝাঁপ দেয়? মেঘনা নদীর সেতুতে ঝনঝন করে ট্রেন চলছে!লাফ দিলে ওর রূহ এখানেই দেহ ছাড়বে ! আমি চিৎকার দিলাম!
– পূর্ণ! পূর্ণ প্লিজ ডোন্ট বি ইনসেইন! লাফ দিবেনা! পূর্ণ প্লিজ লিসেন!
লোকজন আমার দিকে অত্যাশ্চর্যের মতো তাকিয়ে আছে। আমি রাস্তা ফাঁকা করতে তুড়ি বাজালাম। সবাই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জায়গা খালি করে দিল। আমি এগোতে যাবো পূর্ণ মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো! দুইহাত দরজার হ্যান্ডেলে চেপে দরজার শেষপ্রান্তে দুইপা ঠেকিয়েছে! আমার বুক ধকধক করছে ওর কান্ড দেখে! বায় চান্স উনিশ থেকে বিশ হলে ছিটকে চলন্ত ট্রেনের উচু থেকে পড়ে মরবে! আমি অস্থির হয়ে চিৎকার করলাম,
– পূর্ণ প্লিজ!! ডোন্ট ট্রায় টু বি হিরোইন! এটা ফিল্ম না! তুমি মরে যাবে! হাত দাও!!
পূর্ণ কথা শুনছেনা! এই বেয়াদ্দবটাকে কষিয়ে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা করছে! পূর্ণ দরজার বাইরে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে! মনে হচ্ছে নেচার ইফেক্ট ইনজয় করছে! রাগে, জিদে, তেজে আমি কন্ট্রোল হারাচ্ছি! ওফ ওফ ওফ!! পূর্ব কন্ট্রোল!! কন্ট্রোল! রাগিস না!
পূর্ব নিজেকে সামলাতে না পেরে চোখমুখ শক্ত করতেই ধুম করে কানে তাক লাগা এক বিভৎস শব্দ হলো! সবাই কানে হাত দিয়ে ‘আল্লাহ্! ও আল্লাহ্’ করছে!! একটা লোক বলে উঠলো,
-ভাইসাব ডর দেহাইয়েন না, আমরা সাধারণ মানুষ আমাগো ছাইড়া দেন…আপনার বিবি লইয়া যান গা ভাইসাব…এইহানে কিছু ক্ষতি করিয়েন না…পুলিশ আইলে সমেস্যা হইবো ভাইসাব..এট্টু বুজেন…
পূর্ব হো হো করে শ্বাস ছাড়ছে দরজায় ঘুষি বসিয়ে! দরজার ওখানটায় ডেবে গেছে একটুখানি! পূর্ণতা প্রচন্ড ভয় পেয়ে ঠোঁট কাপাচ্ছে। ও একটু প্রাকৃতিক হাওয়া নিতেই দরজায় দাড়িয়েছিলো পূর্বসহ বাকি লোকজন যদি ভুল ভেবে চিল্লাহুল্লা করে এতে ওর কি দোষ? পূর্বর কপালে নীল হয়ে ওটা কয়েকটা রগের অস্তিত্ব ফুটে উঠেছে! পূর্বের শরীর অস্বাভাবিক মাত্রায় হিংস্ররূপ ধারন করছে! পূর্ণতা নিভুনিভু গলায় ঢোক গিলতে গিলতে বললো,
– আই এম সরি…
ঠাস করে এক ভয়ংকর শব্দ হলো! কান তব্দা লেগে শ্রবনশক্তি কিছুক্ষণের জন্য ব্রেক নিয়েছে! মাথা ঝাকিয়ে চোখের পলক ফেললেও এখনো মাথা ঝিম খেয়ে আছে! কান থেকে ‘ভোওও’…শব্দ হচ্ছে। পূর্ণতা আরেকটুর জন্য উল্টো হয়ে ট্রেন থেকে পড়ে যায়নি। হঠাৎ ওর কবজি আকড়ে নিজের দিকে হেচকা টানে মিশিয়ে ধরতেই মুখের উপর গরম উত্তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বজ্রকন্ঠে বলে উঠলো,
– ব্লাডিফুল! তোর মরার এতো ইচ্ছা! আয় তোকে মেরে ফেলি! তোকে আজ খুন করবো! কুটিকুটি করে তোর মাংস নদীতে ফেলবো আমি! তুই অপেক্ষা কর..
-চলবে…………………
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
#FABIYAH_MOMO