#ফাবিয়াহ্_মমো
আকাশে গুচ্ছাকারে মেঘ জমছে যেকোনো সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে মেটো রাস্তা কর্দমাক্ত করে দিবে। পূর্ব আমার থেকে বিশাল দূরত্ব বজায় রেখে জানালার পাশে চেপে বসেছে। আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি ওর চোখ মুখ কঠিন। আমি বুঝতে পারছিনা হঠাৎ আমার উপর রেগে আছে কেন! আমি ওকে রাগিয়ে দেওয়ার মতো কিছুই এখনো করিনি শুধু বিদায়ের বেলায় যতটুকু কেদেঁছি। এটাই কি আমার অপরাধ? বিদায়ের বেলায় মেয়েরা কি কাদেঁ না? আমি অশ্রুপূর্ণ চোখ মুছে ডানে ওর দিকে তাকালাম, পূর্ব জানালার বাইরে রাগান্বিত মুখ করে তাকিয়ে আছে। ওর ওই অবস্থা দেখে আমার সাহস হচ্ছেনা ওর হাতটা ধরে একবার বলি ‘আমার ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করো’। ওর রাগ মানেই ভয়াবহ বস্তু আমি প্রচুর ভয় পাই। কিছুটা সময় হুরহুর করে পেরিয়ে গেলে গলায় ঢোক ফেলে একটু কাছে যেয়ে বলি,
– আমার সাথে এখনি রাগারাগী করছো? আমার ভুলটা কি শুধুই কেদেঁছি বলে? তাকাও না একটু।
আমি যে একটা জ্যান্ত মানুষ আকুতি বিকুতি করছি তার কোনো ভাবাবেগ নেই একদম সরল, স্বাভাবিক, নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আকাশে মেঘের পসরা দেখছেন। ড্রাইভার নরমাল গিয়ারে গাড়ি টানছেন আশেপাশে রাস্তায় চলা মানুষগুলো আমাদের দেখছে তাদের কাছে গাড়িতে চড় মানুষগুলো রাজা-বাদশার মতো লাগে। কয়েক ঘন্টা পূর্বেও আমি বাবার কাছে ছিলাম, মায়ের দিকনির্দেশনা শুনছিলাম, শ্রেয়ার ফাজলামি শুনছিলাম, আয়মানের বলা উল্টাপাল্টা কথায় হো হো হাসছিলাম…জানিনা সময়টা এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে চলে গেলো। আমার এই গাড়িতে পূর্বের পাশে বসেও বড্ড শূন্যতা অনুভব হচ্ছে। খালি খালি লাগছে বুকের ভেতরে মনে হচ্ছে আমার সবকিছু ‘বিয়ে’ নামক চুক্তিতে ছিনিয়ে গেছে। আচ্ছা পূর্বকে বিয়ে না করলে কি ঠিক হতো না? আমি কেন ওর জন্য পাগলামি করলাম? আজ যেখানে পূর্ব আমার পাশে, এতোটা কাছে, নিজের ডানদিকে…সেখানে আমি ওকে নিছক ঘটনার জেরে স্পর্শ করতে পারছিনা। ওর হাতের বাহুডোরে নিজের হাত মিলিয়ে চওড়া কাধে মাথা হেলিয়ে আমি দুঃখপূর্ণ অনুভূতি ঝেড়ে ফেলতে পারছিনা। ও আমাকে মূল্য দিচ্ছেনা। মাথা নিচু করে কোলের উপর রাখা হাত দুটোর উপর নিঃশব্দে নোনাজল ফেলছি পূর্ব আমার দিকে এক সেকেন্ডের জন্য তাকাচ্ছে না। আরো ধেয়ে বুক ফাটিয়ে কান্না আসছে! ওর অবহেলা আমি সহ্য করতে পারছিনা! ইচ্ছে করছে ওর গলা জড়িয়ে বুকে মাথা লুকিয়ে সর্বস্ব ছেড়ে আসার যন্ত্রণায় তুমুল কান্নাকাটিতে মন হালকা করি। বাবার সাথে এতো বড় বড় ওয়াদা করলো সেই ওয়াদার কি হলো? ও কি মিথ্যে কথার জালে বাবাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দিলো, ‘বাবা আপনি টেনশন করবেন না আপনার মেয়েকে দুঃখ ছাড়া কিছুই দিবো না’? আমি যদি এখনি ওর অবহেলাপূর্ণ রাগ সহ্য করতে না পারি পরে কি অবস্থা হবে আমার? জানিনা আমি। শুধু এটা জানি আমি মরে যাবো। যার জন্য আমি আমার স্বাভাবিক জীবনে অস্বাভাবিক আচরন করেছি, মায়ের কাছ থেকে সার্বক্ষনিক বকা, মার, কটু কথা শুনেছি, নিজের অবস্থা দূর্বিসহ করেছি…তার কাছ থেকে এটা আশা আমি কোনোদিন করিনা। দুহাতের আঙ্গুলে চোখের কার্নিশ মুছে পূর্বের দিকে তাকিয়ে বলি,
– আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছো না? তোমার কথা বলাও লাগবেনা। আমি একবার মরে যাই তারপর একদম শান্তি করে দিবো।
পূর্ব চমকে গিয়ে আমার দিকে ভয়ংকর আশ্চর্যজনক চাহনিতে তাকালেন। ভ্রু কুচঁকে আমার দিকে কিছুকালব্যাপী স্থির থেকে ড্রাইভারকে বললেন গাড়ি থামাতে! ড্রাইভার ভিড়মি খেয়ে হঠাৎ ব্রেক কষে দিলে আমি তাল হারিয়ে সামনে সিটের সাথে জোরে কপালে বারি খাই। পূর্ব ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বাজে একটা গালি দিয়ে একা ছাড়তে বললো। ড্রাইভার বের হতেই পূর্ব আমার কাছে এসে আমার কপালে ডলা হাত সরিয়ে দেখতে চাইলে আমি এক ঝটকায় সরিয়ে দেই।
– মার খেতে চাও তুমি? হাত সরাচ্ছো কোন্ সাহসে? দেখতে দাও পূর্ণতা! তুমি কি আমার হাতে কঠিন মার চাচ্ছো?
পূর্ণতা অশ্রুসিক্ত নয়নে লাগাতার পূর্বের হাত কপাল দেখা থেকে বাধা দিচ্ছে। এতে পূর্ব তিন ডাবল আরো ক্ষেপে যাচ্ছে! একটু আগে যে কথাটা বলেছে তার জন্য রাগে দাউদাউ করছে পূর্বের শরীর! মাথার রগ উত্তপ্ত হয়ে ফুলে উঠছে! অবস্থা আরো বেগতিক হলে পূর্ব পূর্ণতার গলা চেপে ধরার মতো রাগে কাঁপতে থাকে। পূর্ণতা দুঃখে, ভয়ে, কান্নায় থেমে থেমে শিউরে উঠে। ও পূর্বের এই রূপ কক্ষনো দেখতে চায় না, চায়না পূর্ব কখনো এভাবে রেগে ওর উপর হামলে পরুক! পূর্ণতা হু হু কান্নায় চোখ কুচকে বলে উঠে,
– তোমার এই রাগের জন্য রাজিবের সামনে সেদিন ‘চিনি না’ বলেছিলাম। তোমাকে আমি ওইসময় চিনতে পারিনা…তুমি আমাকে মেরে ফেলো! এখুনি মেরে ফেলো! গলা টিপে দম বন্ধ করে দাও। তুমি আমার জীবনে এসে দুঃখ ছাড়া কিছুই দাওনি বাকি জীবনও যে দুঃখবিহীন হবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। (একটু থেমে ঢোক গিলে) গলা ধরে আছো কেন? হাত চালাও। মেরে ফেলো।
পূর্ব চোখ বন্ধ করে পূর্ণতার গলা ধরে চুপ করে আছে। কৈলেশের কাছ থেকে চ্যাটার্জীর লোক পাঠানোর খবর শোনার পর আর থেকে স্বাভাবিক থাকতে পারছেনা পূর্ব। মনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় চলছে, মাথা ভো ভো করছে, বিগত ক’দিনের নৃশংসতায় কিচ্ছু ভাবতে পারছেনা।পূর্ব জোরে নিশ্বাস ছেড়ে চোখ খুলে পূর্ণতাকে একটানে বুকে চেপে ধরে। চোখ বন্ধ করে গাড়ির সিলিংয়ে মাথা নিবদ্ধ করে নিচু কন্ঠে বলে,
– আমি থটলেস হয়ে আছি পূর্ণতা। আমার সামনে এসব কথা বলো না।
পূর্ণতা আছড়ে পরা কান্নায় আটকে যাওয়া গলায় একটু একটু করে বলে,
– তাহলে আমার সাথে এমন আচরন কেন?কি দোষ আমার?
পূর্ব সিলিং থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নুয়ে বুকে চেপে ধরা মানুষটার দিকে তাকায়। ভেতরে আকাশপাতাল ঘুরপ্যাঁচ চিন্তায় পূর্ণতার সাথে অযথা রাগ দেখাচ্ছে, চুপ করে আছে, অদ্ভুত আচরন করছে আরো কত কি। পূর্ব শক্ত করে পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে জোরালো ভাবে চেপে ধরলো। পূর্ণতার দম আটকে আসলো কিনা কে জানে? পূর্ব তোয়াক্কা না করে ধীরভাবে শান্ত গলায় বললো,
– পার্টির কাজে আমি একটু চিন্তিত পূর্ণ। দয়াকরে আর কখনো ওসব ছাইপাঁশ কথাবার্তা বলবেনা।
পূর্ণতা চুপ করে থাকে কিছু বলতে গিয়েও বলেনা। যে সাক্ষাৎ একজন রাজনীতির সাথে জড়িত তার মাথায় কেমন গোজামিল অবস্থা হতে পারে পূর্ণতা একটু ধারনা পেলো যেনো। পূর্বকে ছেড়ে চোখ মুছে পূর্বকে বলে উঠলো,
– ড্রাইভার চাচাকে আসতে বলো। আমার এখানে ভালো লাগছেনা। বাড়ি নিয়ে চলো।
পূর্ব জানালার কাঁচ নামিয়ে ড্রাইভারকে আসতে বললে সে দ্রুতবেগে ছুটে এসে গাড়িতে উঠে। পূর্ব পকেট থেকে রুমাল নায়ে পূর্ণতার চোখ মুছে দিচ্ছে। কাজল লেপ্টে চোখের নিচে নষ্ট হয়ে গেছে। ড্রাইভার আড়চোখে মিররে দেখলেও পূর্ব সেদিকে ধ্যান না দিয়ে পূর্ণতার চোখ ঠিক করে দিলো।
গাড়ি গ্রামের রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির ফটকের সামনে থামতেই দেখতে পেলো ছোটখাটো ভিড়। আম্মু, পূর্বিকা আপি, দাদী,দাদা সহ সবাই দাড়িয়ে আছে। ওদের গাড়িটা মাঝরাস্তায় থেমেছিলো বলে সবাই ওদের আগেই উপস্থিত। পূর্ব গাড়ি থেকে নেমে পূর্ণতার হাত ধরে সাবধানে নামালে পূর্বিকা এসে ভেতরে নিয়ে যায়।
পূর্ব নিজের রুমের দিকে যাত্রা ধরবে হঠাৎ দাদাভাই পেছন থেকে কাধ কাধ আটকে বলে উঠে,
– দাদুভাই এখনই রুমে যেতে নেই, আসো এখানে বসো।
দাদা ওকে বারান্দায় খাটানো চৌকির উপর বসতে বলছে। পূর্ব সবার আদেশ অমান্য করলেও দাদাভাইয়ের আদেশ অমান্য করার মতো স্পৃহা এখনো হয়নি। ফুয়াদ একটা কাঠের চেয়ার টেনে পূর্বের পাশে বসে, মিথুন বসে পূর্বের পাশে চৌকিতে, জাওয়াদ প্লাস্টিকের টুল টেনে দাদার কাছে বসে। দাদী সবার উদ্দেশ্যে মিষ্টি, সন্দেহ, পায়েস, রসমালাই, দই এনে বাটিতে সাজিয়ে ট্রেতে করে জগ ও জনপ্রতি পানির গ্লাস রেখে যায়। পূর্বের দাদা একটা মিষ্টি পুরো মুখে ঢুকিয়ে বললেন,
– দাদুভাই একটা কথা বলবে?
– জ্বী দাদাজান বলুন।
– তুমি জানো আমি একসময় সংসদ সদস্য ছিলাম। রাজনীতি করেছি, সংসার করেছি, ভবিষ্যত নিয়েও ভেবেছি। কিন্তু কাজের সাথে কখনো পরিবার মিলিয়ে চলিনি।
পূর্ব আচঁ করতে পেরেছে দাদাভাই ওকে কি বুঝাতে এই কথা তুলেছে। পূর্ব চুপ করে থাকলে কথার মাঝখানে হঠাৎ জাওয়াদ প্রশ্ন করে উঠে,
– দাদু, আমার এখন পলিটিক্সের প্যাঁচামুখো কথা শুনলে ভয় করে। এগুলো ভালো লাগেনা। অন্যকিছু বলেন না!! যেই হরতাল, অবরোধ, হাবিজাবি সংঘর্ষ এগুলো সহ্য হয়না।
পূর্বের দাদা স্মিত হেসে জাওয়াদের পিঠ চাপড়ে বলে উঠেন,
– নাম নিতেই ভয় পাও আর বাড়িতে আস্তো একটা আগুন পুষে রেখেছো।
– এ্যা…দাদু কি বললেন বুঝলাম না।
মূসা ওয়াসিফ পূর্বের তীক্ষ্ম দৃষ্টির দিকে চোখ রেখে বলে উঠলেন,
– বাড়িতে আগুন পুষলে আগে নিজের হাত পুড়া লাগে তারপর অন্যকে পুড়াতে হয়।
–
জাওয়াদ এ দফাও বুঝলো না দাদাভাই ওকে কি বোঝাতে চাচ্ছে। পূর্ব ঠিকই সব বুঝে ফেলেছে কিন্তু মুখের উপর ‘কিছুই বুঝেনি’ ভাব রাঙিয়ে বসে আছে। এবার ফুয়াদ বলে উঠলো,
– আপনি যে রাজনীতি করতেন তখনকার সাথে এখনকার সময় তুলনা চলে? আগে সুশৃঙ্খল ভাবে সুন্দর রাজনীতি চলতো কিন্তু এখন দেখেন? পুলিশের চেয়ে ছাত্ররাই দাপট দেখায়। আর মাথা নষ্ট হলে তো গাড়িতে পেট্রোল মারতেও সময় লাগেনা। আগে কি এগুলো ছিলো?
– অবশ্যই ছিলো। রাজনীতি মানেই রাজপথে নামা লাগবে। রাস্ট্রীয় রীতিনীতি নিয়ে দলীয় সরকার, অন্যান্য দল, ডানপন্থী – বামপন্থীর ঢল সবই থাকবে। কিন্তু মানুষের লোকসান করা কখনো রাজনীতির কাতারে পরে না। এখানে পুলিশের দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। তাদের উপর আদেশই থাকে ছাত্রদের হানি করা যাবেনা।
– দাদু আপনি একটা কথা বলেন, ১৯৭১সালে যেই রাজনীতির প্রেক্ষাপট ছিলো ওগুলার সাথে এখনকার রাজনীতির কিছু মিলে? ছাত্রদের কথাই ধরেন, ওরা তো একাই একশো। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদের কেমন ডেন্জারাস পাওয়ার ছিলো ভাবুন! গদি থেকে একটা সরকার নামিয়ে ফেলে খুব অদ্ভুত না? আর আজকের অবস্থা বিবেচনা করেন দাদু। এদিকে ধর্ষণের মতো হাজারটা কেস কোট-কাচারিতে স্তুপ হয়ে যাচ্ছে, সরকার কিছুই করতে পারছেনা। আবার ছাত্ররা রাস্তায় নেমে অরাজকতা সৃষ্টি করলে পুলিশ কিছুই করতে পারেনা। এসবের মানে কি দাদু?
অনেকক্ষন পর এবার পূর্ব গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলো,
– তুই দাদাজানের কাছে কোন আক্কেলে এমন বেকুবের মতো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিস সেটা বুঝা! উনি তোকে একটা বুঝায় তুই বুঝিস আরেকটা, আবার মুখেও বলছিস অন্য আরেকটা। শোন্ বেকুব, তৎকালীন সরকার নিয়ে মানুষের ক্ষোভের ব্যাপারটা বেশি ছিলো তাই রাস্তায় নেমে পুলিশ হটিয়ে সরকার সরাতে টাইম লাগেনি। বাঙালি জাতিকে ঘুমন্ত হিংসের সাথে তুলনা করা হয়। তুই একবার যদি ঘুম ভেঙ্গে ফেলিস তোর রক্ষে নেই! ১৯৬৯ সালে ঠিক এমনটাই ঘটেছে যার ফলাফল সামরিক সরকারের পতন। এবার এ যুগের ধারায় আসি, এ যুগে রাজনৈতিক আলাপন নিয়ে যে তুচ্ছ উদাহরণ দিলি আমার হাসি পেয়ে যাচ্ছিলো। ধর্ষণের কেস সামনে আনলি এটা কোনো কথা হলো? এটা কিসের উদাহরন দিলি হারামজাদা? সরকারকে নিচু করলি নাকি বিরোধী দলের চামচামি করলি? নাকি বামপন্থীর মতো নখ দিয়ে কথা তুললি? কোনটা ভাববো? ছাত্রদের কথা যেহেতু তুললি একটা জিনিস বলি, ২০১৮ সালে ‘সড়ক দূর্ঘটনা’ নিয়ে যে তুমুল হুঙ্কার রাজপথে নেমেছিলো! শত শত তরুণ ছাত্রছাত্রীরা কি হাঙ্গামা করেছিলো ভুলে গেলি এতো তাড়াতাড়ি? কোনো মন্ত্রী- মিনিস্টার, ডিজি-আইজি ওরা মানেনি। গাড়িতে লাইসেন্স না পেলে রাস্তায় কিভাবে ইজ্জত খসিয়েছে সেটা সবাই জানে! মনে করিয়ে দেই, এক নামকরা নেতার গাড়িতে লাইসেন্স পায়নি বলে সামান্য একটা কলেজ স্টুডেন্ট তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কঠিন কথা শোনায় এরপরও তুই বলবি এ যুগের ছাত্ররা কিছু পারেনা? আরে ছাত্ররা না থাকলে রাজনীতির ‘র’-ও টিকবেনা। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল সবার আগে তরুণ সমাজকে শলা-মসুরা দেয়। তাদের এগিয়ে আসতে বলে, তাদের দ্বারা দেশের মান গৌরব উজ্জ্বল করতে পরামর্শ দেয় সেখানে এসব কি ফাউ কথার উদাহরণ টানিস? কোনো দলকে হেঁট করবি যুক্তি দিয়ে কর! এসব ফাউল উক্তি দিয়ে যুক্তি টানার চেষ্টা করবি না।
পরিবেশ জমজমাট। বিয়ের আমোদ শেষ না হতেই রাজনৈতিক বিষয় দিয়ে যে দফা দফায় কথা উঠছে তা তর্কযুদ্ধের চেয়ে কম না। মূসা ওয়াসিফ নাতীদের নিয়ে একটু খোশগল্পে পূর্বের আলাপ করতো সেটা উল্টো ঘুরে তর্কের দিকে চলে গেলো। বলে রাখা ভালো, ফুয়াদ বর্তমান সরকারকে মোটেও পছন্দ করেনা। সবসময় খুঁত বের করার জন্য ওত পেতে থাকে। ফুয়াদের এই আচরনের জন্য পূর্ব প্রতিবার যুক্তি দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেয় তাতে খুব ক্ষুদ্ধ হয় ফুয়াদ।। মিথুন এবার নিজের পক্ষপাত পেশ করে বলে উঠলো,
– মানুষের জন্য যেখানে রাজনীতির সৃষ্টি সেখানে মানুষের অসুবিধা সৃষ্টি করে সরকার পায় কি? কোন জায়গায় লিখা আছে রাজনীতির জন্য মানুষ ক্ষতি করা যাবে? হরতাল, ধর্মঘট, মানববিক্ষোভ এসব করে কি পায়? উল্টো মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। দেখো ভাই, আমরা জানি তুমি আগামীতে ইলেকশন লড়বা, তোমার পার্টির মান রক্ষা করবা। কিন্তু এর মানে তো এটা না তুমি মানুষের অধিকার নিয়ে চিন্তা করা ভুলে যাবে।
– তোর মার্কসবাদী চিন্তাধারা এখানে ভুলেও ফলাতে আসবিনা মিথুন। মুখে তালা লাগা।
পূর্ব সত্যি ক্ষেপে গেছে ওর চোখ মুখ লাল হতে শুরু করেছে। পূর্বের অবস্থা বুঝতেই মূসা ওয়াসিফ নাতিদের তুমুল আকারে ফেটে পরা তর্কবিদ্যায় ঘাটা বসিয়ে বলে উঠেন,
– দাদুভাইরা তোমরা এবার থামো। আজ তোমার ভাইয়ের বাসর ওকে আর জ্বালাতন করো না। দাদুভাই? তুমি ভেতরে আসো..চলো।
.
পূর্ণতা লম্বা ঘোমটার আড়ালে মুখ ঢেকে জবুথবু হয়ে বিছানার মাঝখানে বসে আছে। বিশ মিনিট ধরে পূর্বের জন্য ব্যকুল হয়ে অপেক্ষা করছে। পূর্বিকা অনেক তোষামোদ করলেও পূর্ণতাকে নিজের রুমে রাখার প্ল্যান সফল হয়নি। শাশুড়ি আম্মা কঠিন একটা ধমক দিয়েছে পূর্বিকা আপু। ছোট ভাইয়ের বউকে নিজের কাছে রাখা নিয়ে বকা খেয়ে আপুর মুখটা পটকার মতো চুপসে গিয়েছিলো তখন। আমার খারাপ লাগছিলো প্রচুর আম্মা শুধুশুধুই আপুকে বকা দিলেন। হঠাৎ দরজার ওপাশ থেকে পায়ের আওয়াজ আসতে না আসতেই ধপ করে দরজা খুলে যায়। ঘোমটার আড়ালে স্পষ্ট দেখলাম পূর্ব রুমে এসে হাজির সে দরজার ছিটকিনিতে হাত দিতে গিয়েও হাত সরিয়ে ফেলছে।। দরজা লাগানো নিয়ে ও দ্বিধাগ্রস্ত কেন? দরজা না লাগিয়েই পূর্ব আমার দিকে ধীরেসুস্থে আসতে লাগলো। আমি চোখ নামিয়ে ফেলি তৎক্ষণাৎ প্রচুরপরিমাণে নার্ভাস লাগছে আমার। এই প্রথম এতোটা অস্বস্তিকর লাগছে পূর্বের আগমন দেখে। সবসময় ওকে কাছে পেয়ে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতাম আজ সবকিছু উল্টাফুল্টা হয়ে যাচ্ছে নিজের কাছে। পূর্ব বিছানার কাছে দাড়িয়ে আমার দিকে নিজের দুহাত বারিয়ে বললেন,
– বিছানা থেকে একটু নামবে পূর্ণ?
আমি ঘোমটা দেওয়া মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখি পূর্ব আমার হাত ধরার জন্য নিজের হাত এগিয়ে অপেক্ষা করছে। আমি হাটু থেকে হাতযুগল সরিয়ে তার দুহাতে আমার হাতদুটো দিতেই পূর্ব আমাকে বিছানা থেকে নামাতে সাহায্য করলেন। পূর্বের মাথায় কি চলছে? হঠাৎ আমাকে বিছানা থেকে নামিয়ে দিলো কেন? দরজাটাও লাগায়নি? আমার মাথায় প্রচুর প্রশ্নমালা ঘুরপাক খেতেই পূর্ব আমার ঘোমটা উঠিয়ে গালে দুহাত রেখে বলে উঠলো,
– তুমি আপুর রুমে চলে যাও পূর্ণ, আমার কাছে পরে থেকো।
#FABIYAH_MOMO
( রিচেক দিতে পারিনি সরি)
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক