#ফাবিয়াহ্_মমো
আকাশটা বেগুনি আভায় ছেয়ে আছে, প্রকৃতি জানান দিচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সোফার শেষ কোণাটায় পিঠ ঠেকিয়ে আইপ্যাডে কাজ করছে পূর্ব। সোফাটা বিরাট জানালার সাথে ঘেঁষে সাজানো, দখিনা বাতাস হু হু করে এখান দিয়ে ঢুকে। বাতাসের তীব্রতায় পর্দা কখনো স্থির থাকেনা, উড়তে যেয়ে সিলিং ছুঁই ছুঁই করে। নিরালা শান্ত পরিবেশে আইপ্যাডের পাশ দিয়ে দরজার দিকে তাকায় পূর্ব। মেয়েটা বন্ধু পেয়ে ওকে ভুলেই গেছে। দুবার খবর পাঠিয়েছে রুমে আসতে, পূর্ণতা ‘না’ বলেছে শুনে তখনই ইচ্ছে করছিলো নিচে নেমে ঠাস করে মেরে আসতে।
সময় যাচ্ছিলো…আকাশ বেগুনি রঙ ছেড়ে কালো তর্জমায় গা ঢেকে নিতেই পুরো রুম অন্ধকারে আবৃত হলো। বাতাসও প্রবল ধাক্কায় পর্দার পেট ফুলিয়ে রুমে প্রবেশ করছে। ঠান্ডা হাওয়ায় মাথা পিছনে ঠেকিয়ে সযতনে আইপ্যাডটা পেটের উপর রেখে চোখ বন্ধ করলো পূর্ব। প্রকৃতির ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস…মোহনীয় সুভাষ…শরীর শীতল করে দেওয়ার মতো স্নিগ্ধ কোমল পরশে পূর্ব পরম শান্তি অনুভব করছে। এই বাতাস শত শত যান্ত্রিক ফ্যানকেও যেন ধূলো দেখাবে। এসিও প্রকৃতির বাতাসের নিকট যেন খুবই তুচ্ছ। মুখের উপর দখিনা হাওয়ার সৌহার্দ্য স্পর্শে মন হালকা হলে চোখ বন্ধ করেই সুর তুলে পূর্ব। ধীরগতিতে সুর টেনে আস্তে আস্তে গানের রঙিন পসরায় ডুবে যায়। কি মাদকতা, কি শান্তি, কি কন্ঠ, প্রকৃতি আজ যেনো মনোমুগ্ধ।
‘ চলতি সময় থমকে দাড়ায়,
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি হায়…
তোমারই হাত ধরতে চাই
ফাগুন হাওয়ায়…
কি মায়ার কোন সে নেশায়,
বারেবারে মন ছুঁতে চায়
চেনা মুখ ঘুরপাক খায়
চোখের পাতায়…
আমি বারবার, বহুবার
তোমাকে চাই,
আমি বারবার, হাজারবার
তোমাকে চাই…’
তুমি আমি আর নিরবতা,
শুনতে কি পাও এই মনের কথা,
ভোর আধারেও তোমায় দেখি
তুমি কবিতা, তুমি কবি
আজকাল মন ডুবে যায়
অনুভবে তুমি ফাঁসো তাই…
এই আমি না চিনি আমায়,
চেনা আয়নায়,
আমি বারবার বহুবার,
তোমাকে চাই,
আমি বারবার হাজারবার
তোমাকে চাই,
ধীরে ধীরে সুর তুললো আবার। শেষের চারট লাইন এমন স্নিগ্ধতায় ভেসে যাচ্ছিলো যেনো চারপাশটা কেবল আমার। পাশে কেউ নেই, নিজের সুখবিলাসে শখের খান গাওয়া পরম শান্তি। বাতাসের নম্রতায় পূর্বের ঠান্ডা গলায় এক পশলা পবিত্র বৃষ্টি ছোঁয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছিলো। এমন সুরে গা ভাসাতে ইচ্ছে হয় বহুবার। যেনো প্রকৃতি তার গরমের উষ্ণভাব থামিয়ে শীতলতা দুয়ার মেলে দিয়েছে। পূর্ণতা রুমের কাছাকাছি আসতেই পূর্বের গলা শুনে চমকে গিয়ে থেমে যায়। বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করতে থাকে কন্ঠের নেশা শুনে। এ কি করছে পূর্ব! ওর সুরের মাদকতায় হৃৎপিন্ড যে স্থির গতিতে চলছেনা! বুকে হাত রাখলো পূর্ণতা, বেগতিক শ্বাস টান পরছে ওর। শরীরে পশমগুলো কাটা ফুটাচ্ছে। রুমটা অন্ধকার সত্ত্বেও সহনীয় আধারে ওর চোখের পলক স্থির হয়ে আছে পূর্বের বন্ধ চোখের মায়া দেখে। পূর্ব সুর ছেড়ে আবার গানের ছন্দতালে গলা তুললো, পূর্ণতা নিঃশব্দে সামান্যতম আওয়াজ না করে পাশে এসে চুপ করে পূর্বের উপর শুয়ে পরলো। আচমকা গান থেমে যায় পূর্বের। মনের কোণে সুক্ষ অভিমানে পূর্ণতাকে ঝাঁঝালো গলায় বলে,
– আমার কাছে এসেছো কেন?
– ওমা রাগ করে আছো? রাগ নিয়ে মানুষ এতো সুন্দর গান করে? কন্ঠ শুনলে তো চুমু খেতে ইচ্ছে করে।
– চুপ! হাজারবার ডাকার পরেও যে মহারানী আমার খোঁজ করেনা তার সাথে আমার কিসের রাগ? সরো বলছি! উঠো।
পূর্বের বুকে মাথাটা আলতো ঘষে নড়েচড়ে বলে উঠলো পূর্ণতা,
– সরছি না।
– ঢঙ করছো এখন? ডাকলাম তখন আসোনি কেন? বন্ধু পেতেই আমাকে টাটা বায় বায়?
পূর্ণতা ঝট করে মাথা তুলে পূর্বের দিকে তাকালো। অদ্ভুত গলায় বললো,
– তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো? বিশ্বাস করো, ও আমার ভাই। ও রাতে চলে যাচ্ছে এজন্য ছিলাম।
পূর্ব থমকানো দৃষ্টিতে তাকায়। শেষ কথাটা ওভাবে বলা ঠিক হয়নি। পূর্ব ওর মাথাটা সন্তর্পনে কাছে টেনে দুগালে হাত রেখে নিজের মুখের দিকে আনে। পূর্ণতা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে পূর্বের মোহবিষ্ট দৃষ্টিতে। পূর্ব গাল ধরে আরেকধাপ কাছে টেনে ওষ্ঠজোড়ার মধ্যবর্তী দূরত্ব কমিয়ে ফেলে। পূর্ণতা বড় বড় নিশ্বাসে কেঁপে উঠছে। পূর্বের স্পর্শে, সৌহার্দ্যে, দৃষ্টিতে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যে বুক ধুকপুক করছে। দুই জোড়া ওষ্ঠদ্বয়ের দূরত্ব এতো স্বল্প ও সংকুচিত যে যেকোনো একজন কথা বললেই কোমল স্পর্শে অদ্ভুত শিহরণে গা আচ্ছন্ন করবে। পূর্ব হঠাৎ চোখ বন্ধ করে নেশাচ্ছন্ন কন্ঠে কিছু বলে উঠলে পূর্ণতা চোখ খিচে বুকের টিশার্ট খামচে ধরে। প্রতিটা ঠোঁট নিঃসৃত শব্দগুচ্ছ অপর ঠোঁটের পাতায় ছুঁয়ে যাচ্ছে। পূর্ণতা তীব্র খিচুনিতে হাতের জোর চালালো। শুধু ফিসফিস হালকা সুর কানে আসলো..
– ভা-লো-বা-সি..।
পূর্ণতা শিউরে উঠে তীব্র খিচুনির চোখ মেলে প্রচণ্ড চমকিত দৃষ্টিতে দেখলো পূর্ব হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে আছে। সেই চোখের হাসিটা সারা চেহারায় রাঙাবেশে ছেয়ে আছে। পূর্ব দিগন্তে তাপদগ্ধ সূর্যিমামা ঠাঁই নিয়ে বিরক্ত করলেও পশ্চিমে ডুবে গেলে চারধার তিমির আধারে ডুবেই পূর্ব আকাশটা ঠান্ডা হয়ে শান্তি জোগায়। দিনেরবেলা পূর্ব উত্তপ্ত চিত্তক্ষোভে থাকলেও রাত্রি নামলে চিত্তবিকারে শীতল হয়ে যায়। কি স্নিগ্ধ লাগছে পূর্বকে!! মনের অজান্তেই চোখের বাঁকোণ থেকে নাকের ধার ঘেঁষে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো পূর্ণতার। খুশিতে নাকি অন্যকিছুতে অশ্রুপাত হলো জানা নেই তার। পূর্ণতা টলমল চোখে উপরপাটির দাতঁ দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ফোপানোর মতো কাঁপছিলো। পূর্ব গাল থেকে হাত সরিয়ে কানের পাশ ঘেঁষে চুলে আঙুল ঢুকিয়ে বললো,
– অবাক হলে?
পূর্ণতা জড়িয়ে যাওয়া গলায় থেমে থেমে হাপানো সুরে বললো,
– আবার…ব..লো ..
– শুনোনি? দাঁত বের করে মিষ্টি হেসে বললো পূর্ব।
পূর্ণতা বাকশক্তিহীন মেয়ের মতো মাথা ডানেবামে না বোঝাতেই চোখের সামনে কালো কুচকুচে অন্ধকার দেখতো পেলো। কেউ চোখের সামনে কালো পর্দা টেনে দিচ্ছে, পূর্ণতা কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। হঠাৎ চোখ বন্ধ করে ধপ করে পরে গেলো ধুকধুক করা উষ্ণ স্থানে। পূর্ব পুরো হতভম্ব ! পূর্ণতা বেহুঁশ? পূর্ণতা এইটুকু শব্দ শুনেই সেন্স হারালো? অতিরিক্ত কষ্টে জ্ঞান হারানোর প্রবাদ আছে। অতিরিক্ত খুশিতে কেউ চেতন হারায়? কি সর্বনাশ! ‘অতিরিক্ত’ শব্দটা দূর্বল নার্ভের ব্যক্তির জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত!! একদম সিল দেওয়া ঠিক!!
.
ওয়াসিফ ভিলা সবার আগমনে জমজমাট। পূর্বের বাবা পলাশ ওয়াসিফ পূর্ণতা বলতে হয়রান। ছেলের বউ নিয়ে দিব্যি সময় কাটাতে পারছে পলাশ ওয়াসিফ। পূর্বিকার স্বামী অতি শীঘ্রই দেশে ফিরছে বলে জানিয়েছে গতকাল। ধুমধাম করে পূর্বিকাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে বরপক্ষ। পূর্বের আরো দুই চাচা পরশ ওয়াসিফ ও পলক ওয়াসিফ বিদেশের মাটিতে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড শেষে সবার ঢাকায় আসার দুদিন পরে দেশে ফিরেছে। বাড়ির বড় ছেলে হুট করে বিয়ে করে ফেললো অথচ কেউ উপস্থিত থাকতে পারেনি এ নিয়ে বিরাট আফসোস করছে চাচা ও চাচীরা। পূর্ণতা এখন সবার কাছে বিশেষ সাদরে সমাদৃত হলেও মিথুন বাদে জাওয়াদ, ফুয়াদ ও সায়মা এতে বেশ ক্ষিপ্ত। পূর্ব বাড়ির বাইরে যেতেই ছলচাতুরির কৌশল নিয়ে পূর্ণতার কাছে আসে কিন্তু কারো না কারো জন্য সেসব সফল হয়না। কখনো আয়েশা এসে পূর্ণতার পাশে গল্পগুজব করে, কখনো পূর্বিকা, কখনো পলাশ, কখনোবা অন্যকেউ। আয়মানের সাথে প্রতিদিন একবার হলেও কথা হয় পূর্ণতার। পূর্ণতা ব্যস্ত হয়ে ভুলে গেলে নিজ থেকেই কল দিয়ে খোঁজখবর রাখে ও। গ্রামের বাড়ি এখন সদস্যবিহীন শূন্যতায় খা খা করছে। পূর্ণতার নানীবাড়ি থেকে কণেপক্ষ সবাই একযোগে ফিরে আসার পর মন উদাসী হয়েছে। অপরদিকে পূর্বের দাদাকে অনেক করে বুঝানোর পরও ঢাকায় ফিরবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে। যতদিন শ্বাস থাকবে গ্রামের ভিটেমাটি আকড়ে বাচঁতে চায় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। দুটো কাজের লোক ও একজন দেখভালের মানুষ ওখানে ঠিক করে দিয়েছে পলাশ ওয়াসিফ। ঢাকার বাড়িতে ফিরার পর কেনো যেনো পূর্ণতার সৌজন্যতায় বড্ড খুশি হয়েছে সে। মনেমনে অবাক হয়, ছেলে যতো ভুলই করুক! বউটা হীরার চেয়েও দামি জিনিস কোহিনূর খুজে এনেছে। মাত্র অল্প দিনের ব্যবধানে কেউ এতো সহজে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে পলাশ খুব বিষ্মিত। বিকেলে ইজিচেয়ারে দুলতে দুলতে পলাশ ডেকে উঠলেন,
– মা গো, কোথায় তুমি? একটু এদিকে আসবে?
পূর্ণতা চট করে কোত্থেকে উদয় হয়ে রুমের দরজায় নক করে বলে,
– বাবামশাই ডেকেছেন?
– হ্যাঁ মা, এলাচ দিয়ে এককাপ মশলা চা দাও তো আমায়। চায়ের তেষ্টায় মরে যাচ্ছি।
পূর্ণতা ঠোঁট প্রসার করে হেসে দিয়ে সম্মতি সূচকে মাথা নাড়িয়ে চটপট কন্ঠে বলে,
– এক্ষুন্নি আনছি!!
পূর্ণতা শ্বাশুড়ির অগোচরে রান্নাঘরে গিয়ে চুলায় পানি বসালো। পড়ন্ত বিকেলে চায়ের তেষ্টা মাঝেমাঝে পায় পলাশের আর তখনই পূর্ণতা চুপিচুপি রান্নাঘরে এসে চা বানিয়ে আনে। আয়েশার কড়া নিষেধাজ্ঞা, ভুলেও রান্নাঘরে ঢুকবেনা। তুমি ছেলের বউ, বাড়ির চাকর না। এ আজ্ঞাবহ পালনের জন্য চোরের মতো কাজ করা লাগে ওর। দূর থেকে পূর্ণতাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে নিঃশব্দে ফুয়াদ দরজায় বাহু হেলিয়ে দাড়ায়। জুসের বোতল হাতে মুখে স্ট্রং নিয়ে কর্মব্যস্ত পূর্ণতার পা থেকে মাথা পযর্ন্ত চোখ বুলাচ্ছে। হঠাৎ পূর্ণতা চামচের মধ্যে ফুয়াদের প্রতিচ্ছবি দেখলে বুঝে যায় ফুয়াদ আবারও চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। একটা ছেলে কোন কাজে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে পারে পূর্ণতা সেই জ্ঞান আছে, ও চামচটা রেখে কাপে চা ঢেলে রেখে হুট করে পিছু ঘুরলো। ফুয়াদ থতমত খেয়ে চোখ পিটপিট করতেই জোরপূর্বক হাসি দিতেই পূর্ণতা জিজ্ঞেস করে,
– এখানে কি করছো?
– নাথিং ভাবি।
ফুয়াদ আর কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে চুপচাপ চলে গেলো রুমে। পূর্ণতা চায়ের কাপ নিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে পলাশের কাছে দিয়ে দাড়ালো। পলাশ চায়ে চুমুক দিতেই লক্ষ করলো পূর্ণতা কিছু একটা বিষয় নিয়ে ভাবছে। তিনি পূর্ণতাকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে কিন্তু পূর্ণতা শঙ্কাজনিত ব্যাপারটা টেলে দিয়ে চলে আসে।
সন্ধ্যা সাতটা বেজে পন্ঞ্চান্ন মিনিটে প্রবেশ বাড়িতে করে পূর্ব। পূর্ণতার সাথে চোখাচোখি হতেই দরদর করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় ও। চোখের দৃষ্টি যেনো বলছিলো, রুমে আসো জলদি, তোমায় দরকার।। পূর্ণতা সন্ধ্যার হালকা নাস্তার গল্পগুজবে শামিল হয়েছিলো সবার সাথে। খানিকটা সময় পর পূর্ণতা একটা কাজের বাহানা দর্শিয়ে টুপ করে কেটে পরে সেখান থেকে। সবাই অগোচরে হাসলেও সায়মার খুবই ফালতু লাগলো। পূর্ণতা চলে যেতেই সায়মা হাসির মহলে বিষপূর্ণ কথায় বললো,
– লজ্জা শরম খেয়ে এসেছে এই মেয়ে! স্বামী ঘরে আসতে দেরি একটুও অপেক্ষা নেই সে ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে গেছে।
আয়েশার মুখ শক্ত হয়ে এসেছে সায়মার মা ব্যাপারটা বুঝতেই পারলো। একগাল ধমকের সুরে সায়মাকে বললো,
– দিনদিন অশিক্ষিতের মতো কথা বলো কেন! এগুলো কি ধরনের কথা! এতো বড় স্পর্ধা কি করে হলো হ্যাঁ !
আয়েশা ডানপাশ থেকে সায়মার মায়ের কোলে হাত রেখে শান্ত হতে বললো। হঠাৎ পলাশ বিনীত মুখে গম্ভীর আভায় সায়মার উদ্দেশ্যে বললো,
– তোমার ভাইটা কেমন তা নিশ্চয়ই জানা আছে ? আমাদের মাঝখানে পূর্ব কিছু না বললেও পূর্ণতার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো তা অবশ্যই চোখ লুকায়নি কারোর। এখানে তুমি লাজ-শরমের কথা উঠিয়ে পূর্ণতার পরিবারকে টেনেছো! আমি যেনো এরকম ব্যবহার কখনো না দেখি সায়মা। মনে থাকে যেনো।
সায়মা দারুন লজ্জায়, অপমানে সেখান থেকে উঠে চলে গেলো। ওই পূর্ণতাকে চিবিয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। আহামরি ওকে কি এমন বলেছে পলাশ পযর্ন্ত কথা শুনালো? আশ্চর্য!
পূর্ণতা নিরিবিলি পায়ে রুমের ভেতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে কপাল কুচকে ফেললো, রুমের কোথাও পূর্ব নেই! উদ্বিগ্ন মনে রুমে আবার চোখ বুলাচ্ছে পূর্ণতা, পূর্ব কি গায়েব হলো নাকি? হঠাৎ পেছন থেকে ক্যাচ ক্যাচ শব্দ হতেই ঝটাং মেরে পিছু ঘুরে দেখলো পূর্ব দরজা লাগিয়ে পিঠ ঠেকিয়ে হেলে দাড়িয়ে আছে। তারমানে পূর্ব দরজার পেছনে লুকিয়ে তামাশা দেখছিলো? কি খারাপ! পূর্ব ঘাড় নাড়িয়ে কাছে আসতে বললো। পূর্ণতা ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে ধীরভাবে এগিয়ে ওর সামনে দাড়ালো। পূর্ণতার পিঠের সব চুলগুলো একগুচ্ছে মুঠো করে যেদিকে আচঁল ছেড়েছে সেখানে ঠিক ডানেপাশে চুলের স্তুপ রাখলো।। ইদানিং পূর্ব যা শুরু করেছে তা বোঝার বাইরে। বলা কওয়া ছাড়াই হুট করে অত্যাচার করা শুরু করে। আগের তুলনায় কম কথা বলছে পূর্ব। এখন কথায় কম, ইশারায় কথা বোঝাতে পছন্দ ওর। পূর্ব আচমকা ওকে জড়িয়ে ধরে বাঁ কাধে মুখ রেখে দিলো। শিরশিরিয়ে উঠে কেঁপে উঠলো পূর্ণতা! পূর্ব কোমরের কাছে হাত এনে কিছু একটা করছে পূর্ণতা স্পষ্ট অনুভব করছে সেটা। পূর্ব কাপা কাপা গলায় বলতে গিয়ে তোতলিয়ে উঠলো,
– কি…কি ককরছছো?
– শশশ..চুপ! দেখাচ্ছি তো,
পূর্ণতার কাধে থুতনি রেখে পিঠের দিকে চোখ নুয়ে কাজ করছিলো পূর্ব। পিঠের ব্লাউজের সাথে লুজ হয়ে নেমে পরা শাড়ির পাড়টা একত্র করে সেইফটিপিন লাগিয়ে দিলো। ডানদিকের আচঁলটা টেনে দিয়ে শাড়ি ঠিক করে পূর্ণতাকে ছেড়ে দিয়ে আলমারি খুলতে চলে গেলো পূর্ব। পূর্ণতা নিজের তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আছে, এতোক্ষন পিঠের নিচ থেকে শাড়ি লুজ হয়ে শরীর দৃষ্ট হচ্ছিলো সেটা ওর খেয়াল ছিলো না! ছিঃ! চাপা উৎকন্ঠায় নিজের উপর রাগ হলো পূর্ণতা। পূর্ব বাড়িতে ঢুকে এজন্যই হয়তো লজ্জামুখ করে দাড়িয়েছিলো, কিচ্ছু বলতে পারছিলো না। পূর্ণতা নিস্পৃহ কন্ঠে বলে উঠলো,
– তুমি কি আগেই দেখেছো?
– কি?…আলমারি থেকে টিশার্ট সিলেক্ট করতে করতেই উত্তর দেয় পূর্ব।
– শাড়ি পরার অভ্যাস নেই তো, এজন্য..
– ব্লাউজ লং করে বানানোর অর্ডার দিয়ে দিবো। যেগুলো আছে দু একটা রেখে সব আগুনে পুড়িয়ে ফেলো। ড্রয়ারের থার্ড সেকশনে লাইটার পাবা।
গম্ভীর গলায় শূলের মতো কথাগুলো বিদ্ধ করে ওয়াশরুমে ঢুকলো পূর্ব। শাওয়ার ছাড়ার আওয়াজ হতেই আলমারির দিকে এগুলো পূর্ণতা। আলমারির একধার খুলতেই হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজা খুলে উকি দিলো পূর্ব।
– এই শোনো তো! তুমি দুপুরে গোসল করেছো?
পূর্ব কোমরে টাওয়েল পেঁচিয়ে ইতিমধ্যে পুরো ভিজে গেছে, চুলগুলো থেকে নির্বিকারে পানি পরছে। পূর্ণতা দ্রুত সেখান থেকে দৃষ্টি নামিয়ে কৌতুহল গলায় জবাব দিলো,
– হ্যাঁ করেছি। কিন্তু কেনো?
পূর্ব সরু চোখ করে কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
– আমার সবচেয়ে পছন্দের শাড়িটা নিয়ে এসো।
– তুমি কি করবে?
– ধুয়ে দিবো। খাবো। ফেলে দিবো।
– আরে আজব তো, কেমন কথা এগুলো? পূর্ব তুমি বেশি বেশি করছো, তাড়াতাড়ি গোসল করে বের হও তো।
– পাকনামি করছো আমরা সাথে? বাংলা কথা বুঝোনা?
– কি বিপদে পরলাম! আমি পাকনামোর কি করেছি? তোমার জ্বালায়…আচ্ছা আনছি।
পূর্ণতা কথামতো ওয়াশরুমের দরজায় এসে শাড়ির হাত এগিয়ে দিতেই পূর্ব ওকে টেনে ভেতরে এনে দরজার ছিটকিনি তুলে দিলো। পূর্ণতা আকাশ থেকে ভূমিতে পরার মতো আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে! পূর্ব দুই ঠোঁট টিপে বাঁকা হেসে ভ্রুঁ নাচিয়ে কিছু ইশারা করতেই পূর্ণতা ভীষন লজ্জায় কুনো হয়ে ফ্লোরে তাকালো। মনে মনে আওড়ায়, নিজের গালে কষিয়ে মার পূর্ণতার বাচ্চা। তোর এই বেটা তো দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছে ! কার খাপ্পায় পরলি? এইবার নে! ঠ্যালা সামলা!
‘চলবে’
#FABIYAH_MOMO
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক