#ফাবিয়াহ্_মমো
সময় যত এগুচ্ছে তত বীভৎস হয়ে উঠছে পূর্বের জীবন। একদিকে বাবার কঠিন অসুস্থতা অপরদিকে পারিবারিক রেষারেষি, রাজনৈতিক সাইড থেকে একমুখো ব্যাপারটা ছিটকে এসে ধীরে ধীরে ক্লান্ত, ভগ্ন, দূর্বল করে দিচ্ছিলো পূর্বকে। গোটা একটা সপ্তাহ পেরুলে ফুয়াদের অবস্থার কিছুটা ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। কিন্তু ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে আর কখনোই স্বাভাবিক রূপে ফিরতে পারবেনা ফুয়াদ। জীবন্ত লাশের মতো বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকাটাই ওর জীবনের প্রতি মূহুর্ত হয়ে দাড়িয়েছে। ফুয়াদকে টানা তিন সপ্তাহ পর বাড়িতে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ফেলে পরশ ওয়াসিফ। পূর্ব সবার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলো ঠিকই কিন্তু আগ বারিয়ে ঝামেলা ডেকে পূর্ণতার উপর জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে দূর্ভোগ পোহাতে চাইছিলো না।উঠতে-বসতে-খেতে-হাটঁতে ক্রমশ প্রতিটি পদে পদে পূর্ণতাকে হেনস্থা করা হচ্ছিলো তখন। পূর্ণতা চুপচাপ পূর্বের অবস্থা ভেবে সব সহ্য করে যাচ্ছিলো। পূর্ব চব্বিশ ঘন্টা যেহেতু নানা ব্যস্ততায় পূর্ণতার উপর নজর রাখতে পারতো না তখনই কটু কথা শোনানোর জন্য সুযোগ পেতো চাচীরা। মিথুন নিজের সহোদর ভাইয়ের এমন দূর্দশায় প্রচুর ভেঙ্গে পরলেও নিজেকে পরে সামলে নিয়েছে। ফুয়াদের যে চরিত্র খারাপ এবং সে যে পূর্ণতার ক্ষতি করার জন্য বহু আগে থেকেই পরিকল্পনায় লিপ্ত ছিলো এ ব্যাপারে মিথুনও সব জানে কিন্তু ছোট বলে কিছু বলতো না ফুয়াদকে। ফুয়াদের যতো উগ্রবাদী আচরণ আছে তার ঠিক বিপরীত আচরণটাই মিথুন পেয়েছে। তাই পূর্বের অনুপস্থিতিতে সায়মাও যখন তেড়ে এসে পূর্ণতাকে কথা শোনাতো তখন কড়া কড়া কথা শুনিয়েছে সায়মাকে। অন্তত মিথ্যাচারকে প্রশ্রয় দেওয়া আর সহ্য করতে পারেনা মিথুন।
পূর্ণতা দিনের পর দিন নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিলো পূর্বের কাছ থেকে। পূর্ব এই এক মাসের মধ্যে ভালো করে কথাও বলেছে কিনা ওর সন্দেহ। পূর্ণতা ইতিমধ্যে বুঝে গেছে বাবার অসুস্থতার পেছনে মূল কারনটা যে ওকে ভাবছে সেটা মুখে না বললেও আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছে পূর্ব। পূর্ণতা শুধু চুপ করে সবকিছু হজম করছিলো। মেয়েদের দোষ না হলেও দোষী হতে হয় এ সত্য হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলো পূর্ণতা। পূর্ব যতই ওকে পাগলের মতো ভালোবাসুক দিনশেষে পরিস্থিতি যে এমন বিশ্রী করে দিয়েছে পূর্ণতা খুব ভালো করেই জানে পূর্ব ওর সাথে সংযোগ দূর্বল করছে। একদিন পলাশ ওয়াসিফ পূর্বকে নিজের কক্ষে কিছু জরুরী কথা বলতে ডাকে। অসুস্থ হৃদরোগে আক্রান্ত বাবার পাশে বসে পূর্ব। পলাশ পূর্বের হাতটা নিজের মুঠোয় এনে বলেন,
– তুই কখনো এরকম করবি আমি ভাবতে পারিনি পূর্ব। তুই তো বাপের মতো হতে পারলি না বেটা।
পূর্ব খুবই চমকিত দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়। পলাশ ঠিক কি বিষয়ে বলতে চাইছে এখন? ব্যবসার ব্যাপার নিয়ে? পূর্ব জিজ্ঞাসু সুরেই বললো,
– আব্বু আমি তোমার কথা বুঝতে পারিনি। ঠিক করে বলো।
– বউমার সাথে লাস্ট কবে কথা বলেছিস? দেখ, ঢপবাজি আমার সহ্য না।
পূর্ব ভারি নিশ্বাস ছেড়ে মাথা নিচু করে বললো,
– একজেক্ট মনে নেই। ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করেনা।
– কেন? রাগ পুষেছিস কি জন্যে?
– রাগ না কি সেটা আমি জানিনা।
– মেয়েটার দিকে দুইটা মিনিট তাকিয়ে থাকবি! শুধু দুই মিনিট! আমি আজ অসুস্থ নাহলে তোকে লাঠি এনে মারতাম পূর্ব! তোর মা বাধা দিলেও দুআনা মূল্য করতাম না তোকে পেটাতে!
কথাগুলো বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পরায় পলাশ ওয়াসিফ খুব কাশতে লাগলেন। পূর্ব তাড়াতাড়ি গ্লাসে পানি নিয়ে বাবার গলা ভিজিয়ে কথা বলতে নিষেধ করলো। রুম থেকে বেরিয়ে যখন নিজের রুমের দিকে সিড়ি ধরে উঠছিলো তখন ঘড়িতে রাত আটটা বাজে। পূর্ণতা দশ মিনিটের জন্যও রুমে থাকেনা শ্বাশুড়ির জন্যে নিজ হাতে সব সেবা শুশ্রূষা দিয়ে থাকে। বরাবরের মতো এখনো পূর্ণতা রুমে নেই। পূর্বের বুক চিড়ে হঠাৎ তীব্র যন্ত্রণার শ্বাস বেরিয়ে আসে। কেন সে পূর্ণতার উপর অভিযোগ টানছে? পূর্ণতার উপর কিসের রাগ চাপাতে চাচ্ছে সে? নিজের কর্মের জন্য পস্তাতে লাগলো পূর্ব। কতো বড় জঘন্য কাজ করছে ও! একটা মানুষকে কাছে রেখেও দূরে ঠেলে দিচ্ছে এর চেয়ে নষ্টালজিক কাজ আর কি হতে পারে! পূর্ণতা শাড়ির আচঁলে হাত মুছতে মুছতে রুমে ঢুকতেই হঠাৎ পূর্বকে দেখে থমকে যায়। পূর্বের সাথে ভালো করে কথা হয়না ঠিক কতদিন? এক বিছানায় শোওয়া সত্ত্বেও দুজনের মাঝে হঠাৎ এতো ফাটল হয়েছে যে পূর্ব আর ওকে কাছে টেনে ঘুমায় না। ওকে রেখেই নিজে সবার আগে ঘুমিয়ে যায়। পূর্ব রুমের দরজায় কারোর অস্তিত্ব টের পেতেই পিছনে ঘুরে দেখলো.. পূর্ণতা স্থিরপানে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ কথা বলতে গেলে শব্দ খুজে পায়না পূর্ব। এদিকে পূর্ণতা চুপচাপ চেয়ে আছে। শেষে প্রচুর দ্বিধাপূর্ণে পূর্ব মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,
– ব্রাউন টিশার্টটা দাও।
পূর্ণতা আদেশ শুনে সেটা পালনের জন্য আলমারি খুলে টিশার্ট এনে ওর হাতে দিলো। পূর্ব এখনো বাড়তি কিছু বলতে পারছে না। এতোটা অস্বচ্ছন্দ্য, অস্বস্তি লাগছে যে পূর্বের ইচ্ছের করছে ভেতর থেকে অস্বস্তির দলাগুলোকে টেনে উপড়ে ফেলতে। পূর্ব শার্ট খুলে টিশার্ট গায়ে দিতেই পূর্ণতা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মুখে পানি ছিটিয়ে তোয়ালেতে মুখ মুছতে লাগলো। খোপায় বাধা চুলগুলো কানের দুপাশ থেকে এলোমেলো হয়ে ঝুলে আছে। একবার কাছে যাবে ওর কাছে? গেলে পূর্ণতা কি করবে? রাগ করবে? দূরে চলে যাবে? চিন্তার টানাসেতুতে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে পূর্ব একদম পূর্ণতার সামনে যেয়ে দাড়ালো। পূর্ণতা তোয়ালেতে গলা মোছা বাদ দিয়ে কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকালে পূর্ব বিদ্যুৎ স্পিডে ওর গালে চেপে ঠোঁটে আলতো চুমু খেয়ে বললো,
– আমাদের সম্পর্কটা সহজ করো পূর্ণ। প্লিজ চুপ করে থেকো না। আমি আর কিচ্ছু সহ্য করতে পারছিনা, বিশ্বাস করো!
পূর্ণতা থমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির আগে বজ্রপাত হলে মানুষ ভয়ে বা শঙ্কায় যেভাবে চমকে যায় পূর্ণতার অবস্থা ঠিক সেটাই হয়েছে। এই মানুষ নিজে চুপ থেকে পূর্ণতাকে কথা বলতে বাধ্য করছে? আশ্চর্য না? পূর্ণতাকে চুপটি দেখে পূর্ব ওর দুবাহু ঝাঁকিয়ে বললো,
– পূর্ণ প্লিজ! কথা বলো আমার সাথে,
কয়েক সেকেন্ড নিরব! একদম পিনপতন নিস্তব্ধতা! এরপর হু হু করে কেদেঁ উঠে পূর্ণতা। ঠোঁট উল্টে প্রবল কান্নায় হাত থেকে তোয়ালে ছেড়ে দেয় ও। পূর্ব আশা করেছিলো পূর্ণতা হয়তো অভিমান দেখিয়ে কথা বলা ছেড়ে দিবে কিন্তু হঠাৎ কান্নার বারিধারায় পূর্বের মনটা অপরাধপূর্ণে প্রচণ্ড নিংড়ে আসে। পূর্ব আর একমূহুর্ত অপেক্ষা করেনা পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরতে। বুকের মধ্যখানে যতটা সম্ভব প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে চেপে ধরে পূর্ণতাকে। অস্থিতি মনের দোষযুক্ত ভাবনাটা ধূলোয় মিশিয়ে পূর্ণতার কানের পিনায় চুমু দিতে থাকে সে। আর নাহ্! কেনো সে পূর্ণতাকে কষ্ট দিবে? আজ তার বিবেচনাধীন মস্তিষ্কটা কি করে এতোটা নিচু হলো? যেই পূর্ণতার প্রতিটি অবস্থা সে স্বচ্ছ পানির মতো দেখতে ও পড়তে পারে তাকে নিয়ে কেনো এমন উদ্ভট ভাবনার সৃষ্টি হচ্ছিলো? মন ও মস্তিষ্কের বিরাট যুদ্ধ কৌশলে বারবার নিজের স্বাভাবিক চিন্তাধারার কাছে হেরে যাচ্ছিলো পূর্ব। বহুদিনের কষ্টে যখন নতুন আচঁড় লাগে, প্রচুর যন্ত্রণা হয়। পূর্ণতা এতোদিন চুপচাপ সব সহ্য করলেও পূর্বের কাছ থেকে উপেক্ষার যন্ত্রণা খামোশ হয়েই মেনে নিয়েছিলো কিন্তু আজ পূর্বের আকষ্মিক পরিবর্তন দগ্ধ করে দিচ্ছে ক্ষতহৃদয়ে। এই পরিবর্তনটা এতোদিন কেন দেখায়নি পূর্ব? নিষ্ঠুরভাবে প্রতিটা দিন ওকে উপেক্ষার পাতায় ফেলে কষ্ট দিয়েছে!
.
পলক ওয়াসিফ বারান্দার ইজিচেয়ারে গা হেলিয়ে দোল খাচ্ছিলো। রাতের মস্ত আকাশটা যতো বড় তার চেয়ে বিশাল চিন্তা সে তার ছোট্ট মাথায় জমিয়ে রেখেছে। ফুয়াদের মলিন, কাটা-ছেড়া মুখটা দেখলে বাবা হিসেবে খুব ছোট মনে হয়। ফুয়াদ দোষ করেছিলো বলে এভাবে মেরে ওকে লাশ বানিয়ে দিবে? এই অধিকার পূর্বকে কে দিয়েছে? হঠাৎ মাথার ভেতর প্রতিশোধের জলন্ত ফোয়ারা যেনো দপদপ করে উঠলো। যে করেই হোক পূর্বকে ওয়াসিফ ভিলা থেকে বিদায় করবে পলক! পূর্ব ও তার বউ পূর্ণতা এই বাড়িতে থেকে সুখ শান্তিতে আর নিজের ছেলে ফুয়াদ বিছানায় লাশের মতো জীবন যাপন করবে…এটা মানা যায় না। হয় পূর্ণতা এ বাড়ি থেকে চলে যাক! নয়তো পূর্ব ওকে নিয়েই ওয়াসিফ ভিলা ত্যাগ করুক! কিন্তু এ বাড়িতে ওই দুজন আয়েশ করে থাকতে পারবেনা কখনো।
.
পূর্বের মেজো চাচী আফরিন ফুয়াদের পাশ থেকে উঠে পূর্ণতার দিকে নজরদারি করতে যায়। চাকরের কাছ থেকে খবর পায় পূর্ণতা রুমের দিকে যে গিয়েছে এখনো গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসেনি। শুনেই মাথা খারাপ হয়ে যায় আফরিনের। পূর্ণতাকে এটা ওটা বিভিন্ন কাজের উছিলায় রাতে দেরি করে রুমে পাঠাতো কিন্তু আজ এতো তাড়াতাড়ি যেহেতু চলে গিয়েছে নিশ্চয়ই পূর্বের সাথে সব মিটিয়ে ফেলছে। খুবই চিন্তায় পরে যায় আফরিন। পূর্ণতাকে ভালোমতো শিক্ষা দেওয়ার যে পণ করেছিলো সেটা এভাবে ভেস্তে যেতে পারেনা। আফরিন একটা ছুতো দেখিয়ে চুপচাপ ওদের রুমের দিকে চলে যায়। রুমের দরজা চাপানো থাকলেও সরু ফাঁক ছিলো যার মধ্য দিয়ে চোখ রেখে ভেতরের অবস্থা দেখা সম্ভব। আফরিন চুপিসারে দরজার সরু ফাঁকটাতে চোখ দিয়ে দেখলো পূর্ব ওর সারা মুখে চুমু খাচ্ছে। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলতেই বুদ্ধি করতে লাগলো পূর্ণতাকে রুম থেকে কিভাবে বের করে আনা যায়। পূর্ব যদি একবার দেখতো বা খেয়াল করতো ওরই রুমের বাইরে মেজো চাচী কেমন লজ্জাহীন ভাবে দাড়িয়ে আছে তাহলে হয়তো পূর্ব আত্মসম্মান বোধে বাড়ি এমনেই ছেড়ে দিতো। যে বাড়িতে নূন্যতম প্রাইভেসি নেই সেই বাড়িতে থাকার জন্য পূর্ব মরে যাবেনা!
পূর্ব ওর কোমর ধরে উঁচু করে রুমের বারান্দায় নিয়ে গেলো। এরপর আর দেখতে পারলো না আফরিন। সরু ওইটুকু পথ দিয়ে বারান্দার কর্মকাণ্ড না দেখতে পেয়ে পরিকল্পনা ফলানোর সময় ওর আর হলো না। বারান্দার একপাশে বিছানো ফ্লোর বিছানায় পূর্ণতাকে শুয়িয়ে দিয়ে পূর্ণতার মাঝে লুকিয়ে পরলো পূর্ব। পূর্ণতার কাধের মাঝে মুখ লুকিয়ে সকল দূরত্ব ঘুচিয়ে শান্তির ঘুমের জন্য চোখ বন্ধ করলো। পূর্ণতা ওর চুলে হাত রেখে পিঠে ক্রমাগত হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ পূর্বের গাল ধরে মুখটা তুললো পূর্ণতা। পূর্বের শান্ত চাহনির মাঝে নিজের নিরব চাহনি ছুড়ে দিয়ে কপালে ঠোঁট বসিয়ে দিলো পূর্ণতা।। মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধানে মানুষটার মুখ আরো গম্ভীর হয়ে বিষন্ন আভায় ছেয়ে গেছে। ইশশ! কতদিন এই মানুষটার ঠোঁটে হাসি দেখেনি পূর্ণতা! হাসিটা কি ঝলমল, সুন্দর, প্রাণঘাতী! পূর্ব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আচমকা পূর্ণতার চাহনির মাঝেই চোখের পাতা বুজে নেয়। গালদুটো এখনো পূর্ণতার নরম হাতের দখলে। বাইরে থেকে যে ঠান্ডা শীতল বাতাস আসছিলো পূর্বের চুলগুলো ক্রমান্বয়ে উড়িয়ে দিচ্ছিলো তখন। পূর্ণতার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপতেই পূর্বের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ঈষৎ হেসে বলে উঠে,
– তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে পারো পূর্ব। আমার কিন্তু আপত্তি নেই।
পূর্ব ঝট করে চোখ এমনভাবে খুললো সাথে সাথে মারাত্মক চেঁচিয়ে উঠলো,
– কিসের ডিভোর্স? কেনো ডিভোর্স দিবো? আশ্চর্য! আমাদের সম্পর্ক কি নষ্ট হয়ে গিয়েছে নাকি? তুমি এসব কি ভাবছো পূর্ণ! আমি তোমার সাথে কিছুদিন কথা কি বলিনি তাই ভেবে নিয়েছো আমি তোমাকে আলাদা করার ফন্দি আঁটছি?
পূর্ণতা হেসে হেসে বলে,
– আলাদা ইতিমধ্যে করে দিয়েছো ওয়াসিফ পূর্ব। তুমি অবশ্যই জানতে আমি তোমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারিনা তবুও তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছো কিন্তু আমাকে নিয়ে না! আমি তো এসব ভুলতে পারিনা পূর্ব। তবে যার জন্য এতো কাঠখোট্টা খেয়ে পরে আছি সেই যদি ছিটেফোঁটা মূল্য না দেয় তখন খুব কষ্ট হয়। আমি আজ তোমার সামনে কাঁদতাম না। ওই মূহুর্তে নিজেকে এতো করে বুঝাচ্ছিলাম আমি কিছুতেই তোমার সাথে কথা বলবো না কিন্তু দেখো? আমি চুপ ছিলাম ঠিকই আমার মনটা চুপ থাকতে পারেনি।
পূর্ব আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাইনি পূর্ণতা।
– জানো? সারাদিন খাটুনি শেষে আমি ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরতাম। তুমি ওপাশ ফিরে যে ঘুমাতে একটাবারো দেখতে না আমি ঘুমিয়েছি কিনা। আশায় থাকতাম, এইতো তুমি আমার দিকে ফিরে ঘুমাবে। কিন্তু না, ফিরতে না। মাঝরাতে যখন ঘুম ভাঙ্গতো তখন দেখতাম তুমি আমার হাতের উপর তুমি ঘুমিয়ে আছো। সেই দৃশ্যটা দেখে আমার এতো খারাপ লাগতো। কি দোষ ছিলো আমার? ফুয়াদকে আমি মারতে বলেছিলাম? অমনুষ্যত্বের মতো পিটাতে বলেছিলাম? তুমি আমার জন্য খারাপ অবস্থায় না পরো অনেক চেষ্টা করেছি সেদিন। ফুয়াদকেও বুঝিয়েছি ও শোনেনি। তোমাকে পাগলের মতো ফোন দিয়েছি তুমি ধরোনি! আমি ভয় পেয়েছিলাম! যদি আমার কথা কেউ বিশ্বাস না করে? যদি তুমিও না করতে? তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে মায়ের কাছে চলে গিয়েছি। আজ আমার মনেহচ্ছে, হয়তো আমার ক্ষতিটা হলেই বুঝি সবার জন্য ভালো হতো। আমি গলায় দড়ি দিতাম আর তুমিও শান্তি পেতে।
পূর্ণতার কথাগুলো এতোটাই সত্য ছিলো যে পূর্ব নিজেকে ছোট থেকে ছোটস্তরের জঘন্য ব্যক্তি ভাবছিলো। লজ্জায় মাথানত করে মনেমনে নিজেকে গালিগালাজ করছিলো পূর্ব। পূর্ণতা কথা বলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছিলো প্রতিবার। গলা বন্ধ হয়ে আসছিলো ওই ঘটনাগুলো স্মরন করে। চোখের কোণে জমা হওয়া অশ্রুগুলো চিকচিক করছিলো ওর। পূর্ণতা নাক টেনে আলতো ঢোক গিলে বালিশ থেকে মাথা উঁচিয়ে পূর্বের চোখের পাতায় অসংখ্য চুমু দিলো। পূর্ব এতোটা চুপ হয়ে গিয়েছিলো যে নিঃশব্দে শুধু নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস চালানো ছাড়া কিচ্ছু করার মানসিকতায় ছিলোনা। পূর্ণতা বালিশে পুনরায় মাথা হেলিয়ে দিতেই নম্রস্বরে বললো,
– আমি সব সহ্য করে যাবো পূর্ব। সহ্যের সীমা যদি ছিড়েও যায় তবুও আমি সহ্য করবো। কিন্তু আমার আত্মসম্মানে লাগা দাগগুলো যতো পুরু হতে থাকবে আপনা আপনি দূরত্ব এসে ভর করবে ওয়াসিফ পূর্ব। আমি তখন কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না।
পূর্ব আর সহ্য করার উপক্রমে নেই, একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পরে পূর্ণতার গলার কাছে। কঠিন কঠিন কথাগুলো দুকানে এতোক্ষন কিভাবে সহ্য করছিলো আর পূর্ণতা কিভাবে সেগুলো উচ্চারণ করছিলো পূর্বের জানা নেই। বর্তমানে প্রচণ্ড অস্থির হয়ে পরেছে পূর্ব। মনেহচ্ছে পূর্ণতাকে হেলা করে বিরাট বড় অপরাধ করে ফেলেছে সে। যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন বোনা হলো, যার জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে মৃত্যু শব্দটা হাতে টেনে আনলো তাকে নিয়ে হেয়ালি করে বড্ড ভুল করেছে পূর্ব। পূর্ণতাকে পাগলের মতো জাপটে ধরে চান্ঞ্চল্যকর স্থিতিতেই ঠোঁট এঁকে দিচ্ছিলো। কিন্তু সময় হয়তো পক্ষে ছিলোনা সেদিন! হুট করে নিচ থেকে ব্যাপক চিল্লাচিল্লির শব্দ আসতেই দুজন তৎক্ষণাৎ চিল্লাহুল্লার উৎসের দিকে চলে যায়। আকাশ পাতাল এক করে সবকিছু মাথায় তুলে ফেলে পূর্ব তখনই !
– চলবে ……………..
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
#ফাবিয়াহ্_মমো
#নোটবার্তা : আমার নামে আপনাদের কাছে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলে দয়াকরে কেউ একসেপ্ট করবেন না। এমনকি কোথাও যদি আমার গ্রুপের লিংক ও হবহু পেজের সমস্ত কিছু কপি দেখেন অনুরোধ রইলো, বিভ্রান্তিকর সিচুয়েশনে ফাঁসবেন না। (আমার পেজ ও গ্রুপ একটাই, মমো কাউকে রিকুয়েস্ট দিলে এমনেই বুঝবেন।)