#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ49
কথাটা বলতে বলতে মিহির সাঈফাকে ওদের রুমে নিয়ে আসলো।ভিতরে ঢুকে সাঈফাকে বেডের উপর শুইয়ে দিয়ে ও গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।দরজা বন্ধ করতে দেখে ভয়ে সাঈফার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।ওর মনে হচ্ছে মিহির ওকে মারার জন্য দরজা বন্ধ করেছে।মিহির সাঈফার দিকে এগিয়ে আসতেই ও ভয়ে একদম নিজেকে গুটিয়ে নিলো।সাঈফাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে মিহির মৃদ্যু হাসলো।তারপর মিহির সাঈফার দিকে একটু ঝুকে ওর কপালে নিজের হাতের উল্টোপিঠ ছুইয়ে বললো
“টেম্পারেচার তো ঠিকঠাকই আছে।ফিবার তো নেই তাহলে তোকে এরকম দেখাচ্ছে কেনো?কি হয়েছে তোর?”
সাঈফা মিহিরের হাতটা কপাল থেকে সরিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো
“কি আবার হবে?কিছুই হয়নি আমার।”
মিহির ভ্রু কুচকে বললো
“কিছুই যখন হয়নি তখন চোখ মুখ এমন শুকনো শুকনো কেনো লাগছে।কিছু তো একটা অবশ্যই হয়েছে?”
সাঈফা খানিক কর্কশ গলায় বললো
“বললাম তো কিছুই হয়নি।”
মিহির বললো
“কিছুই যখন হয়নি তাহলে রুম আটকে বসে আছিস কেনো?কাজ করার ভয়ে?সবাই কাজ করে মরবে আর তুই অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে রুমের মধ্যে বসে থাকবি তাইতো?”
মিহিরের কথাটা শেষ হতেই সাঈফা মিহিরের দিকে শক্ত চোখে তাকালো।ওর চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব।আজকে ওর নিজেরই নিজের উপর ভীষন দয়া হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে ওর মতো দূর্ভাগ্য আর কারোর নেই।নাহলে যাকে ভালোবাসে তার মুখ থেকেই আজকে এরকম কথা শুনতে হতো না।ভালোবাসার মানুষেরা নাকি কিছু বলার আগেই সবটা বুঝে যায়।আর ওর ভালোবাসার মানুষটা কিনা ওকে এতো কষ্ট পেতে দেখেও এই কথা বলছে?একতর্ফা ভালোবাসার পরিনতি হয়তো এরকমই হয়।সাঈফা শক্ত কন্ঠে বললো
“হ্যা,একদম ঠিকই ধরেছেন।আমি কাজ করবো না বলেই সারাদিন রুম আটকে বসে অসুস্থতার নাটক করেছি।আমি একদম ঠিক আছি।এবার আপনি আমার রুম থেকে যেতে পারেন।”
“যাবো তো অবশ্যই।কিন্তু সাথে করে তোকে নিয়ে তবে যাবো।সবাই নিচে বসে কাজ করে মরবে আর তুমি এখানে বসে আরাম করবে?সেটা তো কিছুতেই হবে না।তুই এক্ষুনি আমার সাথে নিচে গিয়ে সবাইকে কাজে হেল্প করবি।”
কথাটা বলেই মিহির সাঈফার হাত ধরে টান দিয়ে এক ঝটকায় দাড় করিয়ে ফেললো।তারপর ওকে টেনে দরজার দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।কিন্তু দু-পা যেতেই সাঈফা আবার মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে যেতে নিলেই দ্রুত মিহিরের হাত শক্ত করে ঝাপটে ধরলো।এইবার মিহির ভিষন রেগে গেলো।ও সাঈফা কে ধাক্কা দিয়ে বেডের উপর ফেলে দিলো,তারপর সাঈফার দুই হাত বেডের সাথে চেপে ধরে রাগি কন্ঠে বললো
“এতো জিদ কিসের তোর?আমি কখন থেকে তোকে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছি আর তুই আমাকে তোর ওই সো কল্ড ইগো দেখাচ্ছিস?”
সাঈফা ভীতু দৃষ্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“কি করছো ভাইয়া?প্লিজ ছাড়ো আমাকে।”
মিহির বিদ্রুপের স্বরে বললো
“আরেহ বাহ একটু আগেই তো আপনি করে বলছিলি।এখন আপনি থেকে সোজা তুমি?ভালোই তো রং পাল্টাথে শিখে গেছিস দেখছি।”
সাঈফা মাথাটা নিচু করে ছটফট করতে লাগলো মিহিরের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য।সাঈফা কে ছটফট করতে দেখে মিহির ওর হাতটা আরো জোড়ে চেপে ধরে বললো
“ছটফট করে লাভ নেই সাঈফা।যতোক্ষন পযর্ন্ত না আমি আমার প্রশ্নের অ্যান্সার পাচ্ছি ততোক্ষন পযর্ন্ত তোকে ছাড়বো না।তাই নিজের ভালো চাস তো আমাকে বল তোর কি হয়েছে।নাহলে কিন্তু আমি তোকে হার্ট করতে বাধ্য হবো।”
সাঈফা কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“আমার কি হয়েছে সেটা আমি তোমাকে বলতে পারবো না।”
সাঈফার কথা শুনে মিহিরের মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।ও দাতে দাত চেপে বললো
“লাষ্ট বারের মতো বলছি সাঈফা সত্যিটা বল। নাহলে কিন্তু উল্টাপাল্টা কিছু করতে আমার বেশি সময় লাগবে না।এমনিতেই এখন এই রুমে শুধুমাএ আমরা দুজন আছি।আর আমার রাগ উঠলে মাথার ঠিক থাকেনা।তাই আমাকে বেশি রাগাস না,তাহলে যখন তখন যা খুশী হয়ে যেতে পারে।উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে গেলে পরে আবার আমাকে দোষ দিতে পারবি না।”
মিহিরের কথা শুনে সাঈফার বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।ও শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো
“কি হয়েছে সেটা বলতে পারলে তো এতোক্ষনে বলেই দিতাম।”
সাঈফার কথা শুনে মিহির ওর দুই হাত নিজের এক হাতের মুঠোয় বন্ধি করে, অন্য হাত দিয়ে সাঈফার গাল চেপে ধরে বললো
“তুই সত্যিটা বলবি নাকি আমি সত্যি সত্যি উল্টাপাল্টা কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলবো?”
সাঈফা বুঝলো এখন সত্যিটা না বললে কিছুতেই মিহিরের হাত থেকে ওর নিস্তার নেই।মিহির যা রাগি আর জেদি তাতে নিজের ইগো বজায় রাখতে যা খুশী তাই করতে পারে।তাই ও চোখ খিচে বন্ধ করে কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“ল-লেডিস প-প্রভলেম!ত-তলপেটে প-পেইন হচ্ছে ভিষন।”
কথাটা বলেই সাঈফা পিটপিট করে চোখ খুলে মিহিরের দিকে তাকালো।দেখলো মিহির এক ভ্রু উচু করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।’ও’ মিহিরের এভাবে তাকানোর কোনো কারন খুজে পেলো না।মিহির কিছুক্ষন ওভাবে তাকিয়ে থেকে ওর উপর থেকে সরে উঠে দাড়ালো।মিহির সরে যেতেই সাঈফা যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।ও নিজেও শোয়া থেকে উঠে বসলো। মিহির শান্ত স্বরে বললো
“এই সামান্য ব্যাপ্যারটা নিয়ে এতো ড্রামা করার তো কোনো দরকার ছিলো না?আগে বলে দিলেই পারতি।”
মিহিরের কথা শুনে সাঈফা বেশ অবাক হলো।মিহির ছেলে হয়েও ব্যাপ্যারটা এতোটা স্বাভাবিক ভাবে নিলো?সাঈফাকে আরেক ধাপ অবাক করে দিয়ে মিহির বললো
“পেইন কিলার নিয়েছিস?”
সাঈফা একটু ইতস্ততো করে বললো
“না অনেক খুজেছিলাম কিন্তু পাইনি তাই ঘুমের ঔষধ খেয়েছি।”
সাঈফার কথা শেষ হতেই মিহির চেচিয়ে বললো
“হোয়াট?শ্লিপিং পিলস খেয়েছিস,সিরিয়াসলি?পেইন কমানোর জন্য পেইন কিলার না খেয়ে শ্লিপিং পিলস খায় কোন গর্দপে?বাসায় এতো লোক আছে,মেডিসিন খুজে না পেলে তাদের কাউকে বলতে পারতি,তারা ফার্মেসি থেকে এনে দিতো।কোন আক্কেলে শ্লিপিং পিলস খেতে গেলি আমাকে একটু বুজা?”
“সবাই অনেক ব্যাস্ত ছিলো তাই আর কাউকে বিরক্ত করিনি।আমি নিজের প্রভলেম নিজেই সলভ করতে পারি।আই ডোন্ট নিড এ্যানিঅন।”
সাঈফার কথা শুনে মিহির বিদ্রুপের স্বরে বললো
“হ্যা কতোটা সলভ করতে পারেন সেটা তো দেখতেই পেলাম।পিরিয়ড টাইমে পেইন কমানোর জন্য ঘুমের ঔষধ খেয়ে বার বার উল্টে পাল্টে চিৎ পটাৎ হয়ে পড়ে যাচ্ছেন।ঠিকঠাক মতো সোজা হয়ে দাড়াতে অবদি পারছেন না,সে যে কিভাবে নিজের প্রভলেম সলভ করতে পারে ভালোই বুঝতে পারছি।”
মিহিরের কথার প্রতিউওরে সাঈফা কিছুই বললো না।চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো।মিহির মুখ থেকে বিরক্তকর একটা চ শব্দ উচ্চারন করে পকেট থেকে ফোনটা বের করে ব্যালকনিতে চলে গেলো।তারপর কিছুক্ষন পর রুমে এসে ফাষ্ট এইড বক্স খুলে মেডিসিন গুলো উল্টৈ পাল্টে কিছু একটা খুজতে লাগলো।কিছুক্ষন খোজার পর পেয়েও গেলো।তারপর ঔষধ টা টি-টেবিলে উপরে রেখে বললো
“সকালে তো ব্রেকফাস্ট টেবিলে দেখলাম না।তারমানে সকাল থেকে নিশ্চয়ই কিছু খাওয়া হয়নি।মেঘের কাছে কল করে খাবার টা উপরে পাঠিয়ে দিতে বলেছি।খাবার টা নিয়ে এলে সেগুলো খেয়ে এখান থেকে একটা মেডিসিন খেয়ে নিস।একজন গাইনাকলজিষ্টের সাথে কথা বলেছি। ওনি বলেছে এগুলো খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।আমি এখন যাচ্ছি,আমার ভিষন ঘুম পেয়েছে।”
কথাটা বলেই মিহির ব্যাস্ত পায়ে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে নিলো,ঠিক তখনই পিছন থেকে সাঈফা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলো
“থ্যাংক ইউ সো মাচ।আপনার মূল্যবান সময় আমার মতো একটা ছ্যাচড়া মেয়ের পিছনে দেওয়ার জন্য।আমার উপরে আপনি এতো দয়া না দেখালেও পারতেন।”
সাঈফার কথাটা কানে আসতেই মিহির দাড়িয়ে গেলো।সাঈফার কথাটা যেনো মিহিরের ভীষন গায়ে লাগলো।ও পিছনে ঘুড়ে সাঈফার দিকে কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গটগট করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
____________________________
আজকে হিয়ান আর আলিশার মেহেন্দি অনুষ্ঠান।সবাই মিলে ডিসিশন নিয়েছে দুই পরিবার একসাথে মিলে অনুষ্ঠান টা এক জায়গায় বসে করবে।সন্ধ্যায় আলিশারা সবাই হিয়ানদের বাড়িতে আসবে।তারপর এখানে বসে মেহেন্দি হওয়ার পর ডিনার করে সবাই আবার রাতেই চলে যাবে।দুই পরিবারের লোকেরাই ছেলে মেয়েদের বিয়ে নিয়ে বেশ উৎফুল্ল আছে।শুধু এক জনের মুখেই কোনো হাসি নেই। সে হলো আহান।আহান ঘোমরা মুখ করে ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।রাগে ওর শরীর জ্বলে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে এই বিয়ে এতো সাজ সজ্জা সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে।তার কারন হচ্ছে মেঘ।মেঘ আজকে সকালেই বায়না ধরেছে ও সাড়িকা,সাঈফা কনে পক্ষের হয়ে বিয়েটা এ্যাটেন্ড করবে।তাই ওরা বিয়ের কয়দিন আলিশাদের বাড়িতে গিয়ে থাকবে।কথাটা শোনা মাএই আহান ডিরেক্ট ওদের মানা করে দিয়েছে।কিন্তু ওরা তো থামবার পাএি না।তিনজন মিলে এক প্রকার ন্যাক্যা কান্না করে বাসার সবাইকে রাজি করিয়েছে।সবাই মিলে আহানকে বুঝিয়েছে কিন্তু তাতেও যখন কোনো কাজ হলো না,তখন ওরা অভিকে ফোন করে ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিয়েছে আর বলেছে আহান ওদের অভিদের বাসায় যেতে দিচ্ছে না।সেটা শুনে অভি আহানের কাছে ফোন করে বলে
“আহান তুই কি আমাকে এতোটাই পর ভাবিস?তোর কি মনে হয় মেঘ আমাদের বাড়িতে আসলে আমি ওর খেয়াল রাখতে পারবোনা?এই তোর আমার উপর বিশ্বাস?আরে আমি আলিশাকে যতোটা ভালোবাসি মেঘ,সাড়িকা,সাঈফাকেও ততোটাই ভালোবাসি।এই বাড়িতে ওদের কোনো অসুবিধা হবে না।তুই যদি আমাকে নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ড মনে করিস আর আমাকে একটুও বিশ্বাস করিস তাহলে ওদের এখানে আসতে দে।কথা দিচ্ছি ওদের কারো গায়ে আমি এক চুল পরিমানও আচড়ও লাগতে দেবো না।”
অভির কথা টা শোনার পর আহানের আর মানা করার সাহস হয়নি।এরপরেও যদি ও মেঘদের যেতে না দিতো তাহলে অভি ভিষন কষ্ট পেতো।আর আহান কিছুতেই অভিকে কষ্ট দিতে চায় না।অভি ওর ফ্রেন্ড হলেও,ও অভিকে নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসে।অভির কোনো আবদার কখনো ও ফেলতে পারে না।
আহানের এই মুহুর্তে রাগটা লাগছে মেঘের উপর।কারন যতো নষ্টের গোড়া হচ্ছে এই মেঘ।এই সব কিছু ওরই প্লান ছিলো।নিজে তো গেছেই সাথে সাড়িকা সাঈফাকেও নিয়ে গেছে।তার উপর এখন দিশাও ওই বাড়িতেই আছে।এই চার বজ্জাত একসাথে মিলে কি যে খিচুরি পাকাবে সেটা ভেবেই আহানের টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে।আহান হাতের দুই আঙুল কপালে ঠেকিয়ে শ্লাইড করতে করতে বিরবির করে বললো
“সুইটহার্ট খুব শখ না তোমার কনেপক্ষ হওয়ার?আজকে তোমার এমন অবস্থা করবো কনেক্পক্ষ হওয়া তো দূরের কথা জিবনে কোনোদিন আর বিয়েতেই যেতে চাইবে না।একবার এখানে আসো জান তারপর তোমাকে দেখাবো কতো ধানে কতো চাল।”
কথাটা বলেই আহান একটা বাকা হাসি দিলো।
_____________________________
মেঘ অভির রুমের ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখে অভি নিজের বেডের উপরে বসে আছে।আসলে বিয়ে বাড়িতে অনেক গেষ্ট থাকায় সব রুমই অলমোষ্ট লোকজনে ভর্তি।কিন্তু অভির রুম একদম খালি।ও ওর রুমে কাউকেই এলাউ করে না।লোক জনের ঝামেলা ওর একদম পছন্দ নয়।তাই অন্যান্য গেষ্টরা ওর রুমের চারপাশেও কেউ আশে না।অভি কিছুতেই চায় না এই বাড়িতে মেঘদের থাকতে কোনো সমস্যা হোক। এজন্য ও নিজের রুম মেঘদের জন্য ছেড়ে দিয়ে কাজিনদের সাথে গেষ্ট রুমে চলে গেছে।
অভিকে দেখে মেঘ মিষ্টি হেসে অভির দিকে এগিয়ে এসে বললো
“ভাইয়া আপনার কিছু লাগবে?”
অভিও বসা থেকে দাড়িয়ে মুচকি হেসে বললো
“না আমার কিছু লাগবে না।আর সরি পারমিশন না নিয়েই চলে আসলাম।আসলে তোমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা সেটা দেখতে এসেছি।”
“আরেহ না ভাইয়া আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।বরং আমরাই এসে আপনাকে অসুবিধায় ফেলে দিলাম।আমাদের জন্য আপনাকে আপনার আপনার রুম থেকে চলে যেতে হলো।আর পারমিশন নিয়ে কেনো আসবেন?বোনদের রুমে ঢুকলে ভাইকে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হয় নাকি?”
মেঘের কথা শুনে অভি মেঘের গাল টেনে দিয়ে বললো
“সেই ছোট্ট মেঘ দেখতে দেখতে কতোটা বড় হয়ে গেছে।কি সুন্দর বড়দের মতো সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারে।যাই হোক ওদের সাথে থাকতে আমার কোনো অসুবিধা হবে না।তোমার যদি কিছুর দরকার হয় রুমের বাইরে বের হবে না,আমাকে কল করবে আমি সব ব্যাবস্থা করে দিবো।”
অভির কথা শুনে মেঘ ঘোমরা মুখে বললো
“ভাইয়া আপনিও আহান ভাইয়ার মতো কথা বলছেন?যদি সারাক্ষন রুমেই থাকতে হয় তাহলে আমাদের এখানে এসে কি লাভ হলো।জানেন এতো দিন আহান ভাইয়া আমাদের রুম থেকেই বের হতে দেয়নি।সব সময় চোখে চোখে রেখেছে।যদি দেখেছে দাদু বাড়ির কারো সাথে কথা বলেছি তাহলে ইচ্ছা মতো বকা দিয়েছে।এতোদিন মনে হয়েছে কোনো বিয়েতে না জেলখানায় বসে আছি।তাইতো এই বাড়িতে চলে আসলাম যাতে একটু আনন্দ করতে পারি।কিন্তু আপনিও ওনার মতো শুরু করে দিলেন।”
কথাটা বলেই মেঘ ঠোট ফুলিয়ে বেডের উপরে বসে পড়লো।মেঘের অবস্থা দেখে অভি হেসে দিয়ে বললো
“আচ্ছা তোমার যা খুশী করো।তবে ছেলেদের সাথে কথা বলবে না।আমার কাজিনরা কোনো কিছু জিঙ্গেস করলে অথবা কোনো রকম ফাজলামি করলে টোট্যালি ইগনোর করবে।যদিও আমি ওদের বারন করে দিয়েছি কিন্তু কয়েকটা আছে অতিরিক্ত ফাজিল।যদি তোমাকে উল্টাপাল্টা কিছু বলে বসে তাহলে ওদের বাচানোর সাধ্য আমারও নেই।আমার বিশ্বাস আহান তোমাকে একদম একা ছাড়েনি, নিশ্চয়ই কাউকে পাঠিয়েছে তোমার উপর নজর রাখার জন্য।তাই যাই করো প্লিজ বি কেয়ার ফুল,যদি শুনেছে তুমি কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলেছো তাহলে তোমাকে তো ধোলাই দিবেই সাথে আমাকেও দিবে।আমি কিন্তু এখনো সিঙ্গেল মেঘ।বউ বাচ্চার মুখ না দেখে এতো তাড়াতাড়ি নিজের প্রানটা হারাতে চাই না।”
অভির কথা শুনে মেঘ ফিক করে হেসে দিলো।অভি গিয়ে ওর কাবার্ড খুলে একটা প্যাকেট বের করে মেঘের হাতে দিয়ে বললো
“মেঘ এইটা দিশাকে দিয়ে দিও।আর বলবে আজকে যেনো এইটাই পড়ে।ও তো এখন আলিশার রুমে।আর ওখানে এখন অনেকে আছে।আমি গিয়ে এটা দিশাকে দিলে সবাই হাজারটা প্রশ্ন করবে।তার থেকে তুমি নিয়ে গিয়ে চুপিচুপি দিয়ে দিও ওকে?”
মেঘ ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন প্যাকেটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
“এটা তো সেই দোকানের প্যাকেট যেখান থেকে আহান ভাইয়া আমার জন্য আর নিজের জন্য কেনাকাটা করেছে।তারমানে আপনিও সেদিন ওনার সাথে কেনাকাটা করার জন্যই গিয়েছিলেন?”
মেঘের প্রশ্ন শুনে অভি উপর নিচ করে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।মেঘ একটু সন্দীহান কন্ঠে বললো
“দিশার জন্য আপনি কেনো শপিং করেছেন?ওর নিজেই সেদিন বিয়ে উপলক্ষ্যে শপিং করেছিলো।তাহলে এখন এসবের আবার কি দরকার।”
অভি মেঘের নাক টেনে দিয়ে বললো
“তোমাকে এতো কিছু জানতে হবে না।যেটা বলেছি চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো সেটা গিয়ে করে এসো।সময় আসলে আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে।”
কথাটা বলেই অভি চলে গেলো।মেঘ ছোট ছোট চোখ করে অভির তাকিয়ে বললো
“জানতে হবে না মানে?আলবাদ জানতে হবে।নিশ্চয়ই ডালমে কুচ কালা হে।নাহলে এতোদিন যাকে দুচোখে সহ্য করতে পারেনি আজকে তার জন্য সোজা গিফট কিনে নিয়ে এসেছে?খবর নিতে হবে অবশ্যই এর মধ্যে কোনো কাহিনি আছে।”
#চলবে,,,,,,,