#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ58
একটা রুমের বেডের উপর হাত-পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে মেঘ।কিছুক্ষন আগেই ওর জ্ঞান ফিরে এসেছে।হুশ আসার পর চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো চারপাশের সবকিছু একদম অন্ধকার।’ও’ একটু নড়ার চেষ্টা করতেই অনুভব করলো ওর হাত-পা শক্ত করে বাধা।চিৎকার করতে যাবে তখনই বুঝতে পারলো মুখটাও বেধে রেখেছে।মেঘ ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো।ওর দম আটকে আসছে।মাথায় প্রচন্ড পরিমান যন্থনা শুরু হয়েছে।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।মেঘ অনেকক্ষন ছটফট করতে করতে ক্লান্ত হয়ে চুপ করে রইলো।ওর চোখ দিয়ে নিশব্দে পানি গরিয়ে পড়ছে।ভয়ে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।কারা ওকে এখানে এভাবে তুলে আনলো সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।আচ্ছা যারা ওকে এখানে এনেছে তাদের কোনো খারাপ উদ্দ্যেশ্য নেই তো?তারা কি এখন ওকে মেরে ফেলবে?নাকি ওকে আটকে রেখে ওর পরিবার কে ব্লাকমেইল করবে?এসব চিন্তা ভাবনা মেঘের মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে মেঘের ভাবনায় ছেদ ঘটে।দরজা খুলতেই বাইরে থেকে আসা লাইটের আলোতে রুমটা মৃদ্যু আলোকিত হয়ে যায়।মেঘ পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা অভয়ব রুমের মধ্যে প্রবেশ করছে।’ও’ ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।
অভয়বটি রুমে ঢুকে সুইচ টিপে লাইট অন করে ধীরে ধীরে মেঘের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।মেঘ চোখ বন্ধ করা অবস্থায়ই বুঝতে পারছে সামনের ব্যাক্তিটি ওর দিকে এগিয়ে আসছে।ব্যাক্তিটি যতো একপা একপা করে ওর দিকে এগোচ্ছে ততো ‘ও’ নিজেকে ভয়ে গুটিয়ে নিচ্ছে।’ও’ এতোটাই ভয় পেয়ে গেছে যে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে ব্যাক্তিটি কে দেখার সাহসও পাচ্ছে না।ব্যাক্তিটি গিয়ে মেঘের পাশে বসে আচৎমকা ওর বাহু ধরে টেনে বসালো।তারপর কোনো কিছু না বলে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ঘটনার আকষ্মিকতায় মেঘ হতবম্ভ হয়ে গেলো।’ও’ ঝট করে চোখ খুলে ছটফট করতে লাগলো।হাত পা ছুড়ে নিজেকে লোকটার বাহু বন্ধন থেকে মুক্ত করতে চাইলো।ওর এমন ছটফট দেখে লোকটি বিরক্তির স্বরে বললো
“উফফ মেঘ পরী লাফালাফি টা একটু বন্ধ করবে?আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও প্লিজ।”
গলার স্বর টা কানে আসার সাথে সাথে মেঘ শান্ত হয়ে গেলো।কন্ঠস্বর টা চিনতে ওর একটুও ভুল হলো না।এটা আহানের কন্ঠ!তারমানে কি আহান ওকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে?মেঘ ভালো করে চারপাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো এটা সেই আহানের ফার্ম হাউজের রুমটা।যেখানে ‘ও’ আগেও একবার এসেছিলো।যেদিন আহান আর ওর উপর এ্যাট্যাক করা হয়েছিলো সেদিন।কিন্তু মেঘের মাথায় এটাই ঢুকছে না যে আহান ওকে কেনো কিডন্যাপ করলো?
মেঘ কিছুক্ষন শান্ত হয়ে বসে থেকে আবার ছটফট করতে লাগলো।এবার আহান ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো
“কি সমস্যা?লাফাতে না বারন করেছি তার পরেও লাফাচ্ছো কেনো?”
মেঘ কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু মুখ বাধা থাকা কারনে বলছে পারছে না।আহান মেঘের মুখ থেকে বাধন টা খুলে দিলো।বাধন খুলতেই মেঘ চিল্লিয়ে বললো
“আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?আমাকে এখানে এনে এভাবে বেধে রেখেছেন কেনো?”
মেঘের কথাটা শেষ হতেই আহান হাতের আঙুল দিয়ে কান চেপে ধরে শান্ত গলায় বললো
“উফফ মেঘ পরী এতো জোড়ে চিল্লাচ্ছো কেনো?আমি কানে কালা নই যে তুমি আস্তে কথা বললে আমি শুনতে পাবো না।”
আহানের এমন শান্ত স্বরে কথা বলার ধরন দেখে মেঘ আরো ক্ষেপে গেলো।’ও’ আবার চিল্লিয়ে বললো
“আপনি আমার হাত পায়ের বাধন খুলে দিন নাহলে আমি আরো জোড়ে চেচাবো।”
আহান বিদ্রুপ করে হেসে বললো
“ওকে!যতো পারো চেচাও কোনো সমস্যা নেই।তবে তোমার এই চিল্লাচিল্লি শুনে তোমাকে সাহায্য করতে আসার মতো এখানে কেউ নেই।”
আহানের কথা শুনে মেঘের কান্না চলে আসলো।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।যাকে এতোটা ভালোবাসে সে আজকে ওকে এভাবে আটকে রেখে কষ্ট দিচ্ছে?’ও’ কি বুঝতে পারছে না তাই মেঘ অসহায় কন্ঠে বললো
“হাত পায়ের বাধন গুলো খুলে দিন প্লিজ।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।হাত পায়ে প্রচন্ড ব্যাথ্যা পাচ্ছি।”
মেঘের এমন অসহায় কন্ঠ শুনে আহান ওর দিকে তাকালো।দেখলো মেঘ অশ্রুসিক্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আহান মেঘের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে ওর দু-গালে আলতো করে হাত রেখে বললো
“আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে মেঘ।বুকের বাম পাশটায় বড্ড যন্থনা হচ্ছে।জানো তুমি যখন বলেছিলে “আপনি আমাকে ভালোবাসতেই পারেন কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না” তখন আমার মনে হয়েছিলো কেউ আমার কলিজাটা টেনে বেরে করে নিয়েছে।”
মেঘ ঠোট কামরে কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করছে।এখন কিছুতেই ‘ও’ আহানের সামনে দূর্বল হতে চায়না।যাই হয়ে যাক নিজের অনিশ্চিত জিবনটাকে কোনো ভাবেই আহানের সাথে জড়াবে না।আহান ভেজা কন্ঠে বললো
“এসব কেনো করছো মেঘ পরী?কেনো আমাকে এভাবে ইগনোর করছো?আমি কি কোনো অন্যায় করে ফেলেছি?আচ্ছা যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে তুমি যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নিবো।তবুও আমাকে নিজের থেকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিও না প্লিজ।”
মেঘ কি বলবে বুঝতে পারছে না।কিছু বলতে গেলেই নির্ঘাত এখন কেদে দিবে।আহান মেঘকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে ওর গাল থেকে হাত সরিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
“মেঘ পরী আমি তোমাকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবো না।মরে যাবো আমি তোমাকে ছাড়া।প্লিজ আমাকে দূরে সরিয়ে দিও না।প্লিজ!”
আহানের কথা শুনে মেঘ আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না হাউমাউ করে কেদে দিলো।হঠাৎ মেঘ এভাবে কেদে দেওয়ায় আহান একটু হকচকিয়ে উঠলো।আহান ব্যাস্ত স্বরে বললো
“কি হয়েছে মেঘ এভাবে কাদছো কেনো?”
মেঘ কাদতে কাদতে বললো
“আমি আপনাকে ভালোবাসি না।বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি না।আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসুন প্লিজ।আমি এখানে থাকবো না।”
মেঘের কথা শুনে আহান রেগে গেলো।’ও’ ঝট করে মেঘকে ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ওকে বিছানায় ফেলে দিলো।তারপর বসা থেকে দাড়িয়ে রাগি কন্ঠে বললো
“কেনো ভালোবাসো না হ্যা?কিসের কমতি আছে আমার মধ্যে?এতো গুলো বছর ধরে নিলজ্জের মতো তোমার পিছনে পড়ে আছি।আমার ভালোবাসার কোনো দাম নেই তোমার কাছে?এতো গুলো বছর ধরে আমি হাজার টা মেয়েকে ইগনোর করেছি শুধুমাত্র তোমার জন্য।খাওয়া,গোসল,ঘুম সব ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র তোমার কথা ভেবেছি।আর তুমি কতো সহজে বলে দিলে তুমি আমাকে কখনো ভালোই বাসোনি।সবকিছু শুধু তোমার ক্ষনিকের মোহ ছিলো।”
কথাটা বলেই আহান বেডের পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলটার উপরে একটা লাথি মারলো।লাথি মারার সাথে সাথে টেবিলটা কাৎ হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।মেঘ ভয়ে পিছাতে পিছাতে বেডের অন্যপাশে গিয়ে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিলো।আহান মেঘকে ভয় পেতে দেখে নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো।জোড়ে জোড়ে দুটো দম নিয়ে রুমের এক সাইডে থাকা টি-টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।মেঘ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে ওর কাজ দেখছে।আহান পানি টা খেয়ে জগ থেকে আরেক গ্লাস পানি ঢাললো।তারপর গ্লাস টা হাতে নিয়ে বেডের উপর উঠে মেঘের মুখের সামনে ধরলো।মেঘের ভিষন পানির পিপাসা পেয়েছে তাই ‘ও’ ভীতু দৃষ্টিতে একবার আহানের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে পুরো পানিটা শেষ করে ফেললো।আহান বেড থেকে নেমে গ্লাস টা রেখে এসে বেডের এক কোনায় আবার বসে পড়লো।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বললো
“মেঘ পরী একটা ষ্টোরি শুনবে?”
আহানের কথা শুনে মেঘ ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালো।এভাবে হাত-পা বেধে রেখেও যে কেউ ষ্টোরি শোনানোর কথা বলতে পারে সেটা মেঘের জানা ছিলো না।মেঘের কোনো রেসপন্স না পেয়ে আহান আলতো হেসে বললো
“আচ্ছা শোনো তাহলে,আমরা তখন অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারের এক্সাম দিয়েছি সবেমাএ।বাসায় বসে আমি হিয়ান,রিয়ান,অভি ভিষন বোর হচ্ছিলাম তাই ভাবলাম বাইরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসবো।কিন্তু কথাটা বাড়ির লোকদের জানাতেই সবাই সাফসাফ মুখের উপরে মানা করে দিয়েছিলো।সবাই এমন ভাবে রিয়্যাক্ট করেছিলো যেনো আমরা ঘুরতে যাওয়ার কথা না,বিয়ে করার কথা বলেছি।পরে আমরা চারজন মিলে প্লান করলাম আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে তারপর ঘুড়তে যাবো।প্লান মাফিক রাতের অন্ধকারে আমরা আমাদের বাবাদের আলমারি থেকে টাকা চুড়ি করে পালিয়েও ছিলাম।”
আহানের কথা শুনে মেঘের মুখটা হা হয়ে গেলো।ওর বিশ্বাসই করতে পারছে না যে আহান টাকা চুড়ি করে তারপর বাসা থেকে পালিয়ে ঘুড়তে গিয়েছিলো।মেঘকে ওভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহান মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আবারও বলা শুরু করলো
“আমরা চারজন মিলে ঘুরতে সিলেট চলে গেলাম।ওটাই আমাদের কোনো গার্ড ছাড়া ফাষ্ট টুর ছিলো।তো ফাষ্ট দিন ট্রেন থেকে নেমে আমরা সোজা রিসোর্টে চলে গিয়ে ছিলাম।সেখানে গিয়ে রুম বুক করলাম।তারপর একটু রেষ্ট নিয়ে দুপুরের লাঞ্চ করে ঘুরতে বের হলাম।তবে আমরা চারজনই হুডি আর মাক্স দিয়ে নিজেদের ফেইজ হাইড করে তারপর বের হয়ে ছিলাম।বিকজ কলেজ আর ভার্ষিটি লাইফে আমরা রাজনীতিতে জড়িয়ে গিয়ে ছিলাম।ঝগরা মারামারি করা আমাদের প্রতিদিনের রুটিং হয়ে গিয়েছিলো।আর শএুরও অভাব ছিলো না।”
মেঘ মনোযোগ সহকারে আহানের কথা গুলো শুনছে।আহান বললো
“আমি সাথে করে ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিলাম চারপাশের সুন্দর প্রকৃতির দৃশ্য ক্যামেরায় ক্যাপচার করার জন্যে।ফটো তুলতে তুলতে যে কখন হিয়ানদের থেকে আলাদা হয়ে রোডের মাঝে চলে এসেছিলাম টেরই পাইনি।ওরাও ওদের মতো জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো তাই আমার দিকে কারোরই খেয়াল ছিলো না।হঠাৎ কেউ একটা এসে আমাকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার সাইডে ফেলে দিলো।সাথে নিজেও আমার গায়ের উপরে পড়লো।আচৎমকা কি হয়ে গেলো আমি বুঝতে না পেরে সামনে তাকাতেই দেখলাম আমি যেখানে দাড়িয়ে ছিলাম সেখান দিয়ে বড় একটা ট্রাক যাচ্ছে।বুঝতে পারলাম আমাকে অ্যাক্সিডেন্টের হাত থেকে বাচানোর জন্যই ধাক্কাটা দিয়েছে।আমি ধন্যবাদ বলার জন্য আমার গায়ের উপর পরে থাকা মানুষটার দিকে তাকাতেই ওর দিকে আমার চোখ টা আটকে গেলো।দেখলাম আমার বুকের উপর বাচ্চা একটা মেয়ে পড়ে আছে।মেয়েটার মাথায় কালো রঙের হিজাব,চোখে গোল চশমা পড়া।ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে আছে।মেয়েটাকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে আমার পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো।বলতে পারো লাইফে ফাষ্ট টাইম কারো উপর বড়সড় একটা ক্রাশ খেয়ে ছিলাম।”
ক্রাশ খেয়ে ছিলাম কথাটা শুনে মেঘের মুখটা একদম কালো হয়ে গেলো।’ও’ মাথাটা নিচু করে মনে মনে বললো,ওহ তারমানে আমার আগে আপনার ভালো লাগার মানুষ আরো একজন ছিলো।আহান মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তারপর আবারও বলতে শুরু করলো
” আমি কোনো রকম নিজেকে সামলে মেয়েটাকে ধন্যবাদ দিতে যাবো তার আগেই মেয়েটা আমার বুক থেকে উঠে রেগে বললো”
“এই যে মিষ্টার হুডি ম্যান!দিন কানা নাকি আপনি?চোখের সামনে দিয়ে এতো বড় একা ট্রাক আসছিলো আর আপনি বগার মতো ওখানে ঠায় দাড়িয়ে ছিলেন?আমি সময় মতো না আসলে কি হতো বলুন তো?আপনি,আপনার হুডি,মাস্ক আর আপনার ক্যামেরা সব এতোক্ষনে ট্রাকের চাকার নিচে পড়ে চ্যাপ্ট্যা চিড়া হয়ে যেতো।”
আমি ওভাবেই শুয়ে থেকে মেয়েটার কথা হা করে শুনছিলাম।তখনই হিয়ান,অভি আর রিয়ান দৌড়ে এসে আমাকে টেনে তুলে।মেয়েটি আমাদের চার জনের দিকে কিছুক্ষন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বলে
“এইযে হুডি ওয়ালা হনুমানেরা নিজেদের বন্ধুকে সামলে রাখুন।আরেকটু হলেই তো আপনাদের বন্ধু টাটা বাই হয়ে যেতো।আর এই গরমের মধ্যে দিনের বেলা এভাবে হুডি পড়ে ঘুরছেন কেনো?আপনাদের কি হুডির ফ্যাক্টরি আছে নাকি?”
মেয়েটার কথা শুনে হিয়ান,অভি,রিয়ান হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।ওদের এভাবে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা একটু বিরক্তির স্বরে বললো
“আরেহ ধুর এতোক্ষন তো এদের শুধু কানা ভেবেছিলাম।এখন দেখি এরা কথাও বলতে পারে না।”
মেয়েটার কথা শেষ হতেই দুজন লোক দৌড়ে এসে মেয়েটার পাশে দাড়িয়ে হাফাতে লাগলো।ওদের মধ্যে থেকে একজন চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো
“ছোট মামনী তুমি ঠিক আছো?এভাবে না বলে হুটহাট দৌড়ে কোথায় চলে যাও বলোতো?তোমার কিছু হয়ে গেলে বড় বাবা আমাদের গুলি করে মারবে।”
লোকটার কথা শুনে মেয়েটি ঝাড়ি দিয়ে বললো
“হ্যা আমি একদম ঠিক আছি।আমার আবার কি হবে?আর তোমরা আমার পিছে চুইঙ্গামের মতো লেগে না থেকে এদের মতো দিন কানাদের রাস্তা পার করতে হেল্প করো।তাহলে যদি আমাদের দেশে অ্যাক্সিডেন্টের সংখ্যাটা একটু কমে।আর তোমাদের বড় বাবা কে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?’ও’ বাঘ নাকি ভাল্লুক?উজবুক একটা,ওকে বলে ছিলাম আমার সাথে আসার জন্য,কিন্তু উনি তো ওনার বন্ধুদের নিয়ে সব সময় বিজি থাকেন।আমার জন্য ওনার টাইম আছে নাকি?আজকে আসুক বাসায় ওর সাথে আমি একদম কথা বলবো না।পচা ছেলে একটা।”
“কথাটা বলতে বলতে মেয়েটা ওখান থেকে চলে গেলো।ওর পিছনে পিছনে লোক দুটোও চলে গেলো।আমি মেয়েটার যাওয়ার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলাম।”
এই টুকু বলে থামলো আহান।মেঘ আহানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।পুরনো কিছু স্মৃতি ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।মেঘকে এভাবে তাকাতে দেখে আহান আবারও বলা শুরু করলো
“আমরা সেদিন আর ঘুড়াঘুড়ি করিনি।সোজা রিসোর্টে চলে এসে ছিলাম।চলে তো এসে ছিলাম বাট মেয়েটার চেহারাটা আমার চোখের সামনে থেকে কিছুতেই যাচ্ছিলো।আমি ভাবলেশিল ভাবে এক জায়গায় বসে শুধু মেয়েটার কথা ভাবছিলাম।মেয়েটার কথা বলার ষ্টাইল,হাটার ষ্টাইল সব কিছু চোখের সামনে বারবার ভেষে উঠছিলো।বিকেল গরিয়ে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা গরিয়ে রাত হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু আমার কোনো নড়চড় ছিলো না।আমাকে এভাবে শান্ত হয়ে বসে থাকতে দেখে রিয়ান,অভি,হিয়ান বেশ অবাক হয়েছিলো কারন যেই আমি কোথাও একটা সেকেন্ডও চুপচাপ বসে থাকতাম না,সেই আমি কয়েক ঘন্টা এক টানা ওভাবে বসে ছিলাম।অবাকের সাথে সাথে বিরক্তও হয়েছিলো কারন আমার জন্য ওরা কোথাও ঘুড়তে যেতে পারছিলো না।রাতে ডিনারের জন্য ওরা অনেক ক্ষন আমাকে ডাকাডাকি করেছিলো কিন্তু আমি নিজের জায়গা থেকে এক বিন্দুও নড়াচড়া করিনি।অবশেষে ওরা ডাকতে ডাকতে বিরক্ত হয়ে নিজেরাই না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।”
একটু থেমে আহান একটা লম্বা দম নিলো।তারপর আবারও বললো
“রাত বারোটার সময় ক্ষিদেয় অভি ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিলো।বেচারা একদম ক্ষিদে সহ্য করতে পারতো না।ঘুম থেকে উঠে ‘ও’ সোজা এসে আমার পায়ের সামনে বসে পড়েছিলো।তারপর পা ধরে রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলো।ওর কান্নাকাটি শুনে হিয়ান আর রিয়ানও উঠে গিয়েছিলো।পরে তিনজন আমাকে এক প্রকার জোড় করে টানতে টানতে রিসোর্ট থেকে দূরে রাস্তার পাশের একটা ছোট পাহাড়ি রেষ্টুরেন্টে নিয়ে এসেছিলো।সেখানে এসে আমরা ভিষন অবাক হয়ে ছিলাম।আমি এক প্রকার আকাশের চাদ হাতে পেয়ে গিয়েছিলাম।”
#চলবে,,,,,,