কলমে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(১৪)
“ গফুর! গফুর!”
মোটা গলার ডাক শুনে হন্তদন্ত কদমে ছুটে এলেন ভদ্রলোক। বড় বিনয়ে বললেন,
“ জি স্যার?”
অফিসে তখন ফোরকান, প্রিন্সিপাল মকবুল সাহেব আর তীব্র বসে। বাকীরা নেই অনেকক্ষণ। তীব্রর সঙ্গে আলাপ শেষেই বেরিয়েছে তারা।
মকবুল বললেন,
“ রুমের সামনে এত হল্লাহল্লি কেন? কলেজের মেয়েরা এলোমেলো ভাবে হাঁটাহাঁটি করছে, ক্লাস হচ্ছে না? যাও সবাইকে বলো, এখানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে, যেন এভাবে রুমের সামনে দিয়ে পায়চারি না করে!”
গফুর মাথা কাত করলেন।
“ জি স্যার।”
তারপর বেরিয়ে গেলেন দ্রুত। অফিস কক্ষের সামনে ছুঁকছুঁক করা যতগুলো মেয়ে ছিল,কষে ধম*ক দিলেন ওদের।
সেই ধমকে রুহু উড়ে গেল পুষ্পিতার। কলেজ পড়ুয়া ছোট ছোট মেয়েরা ছুটে ঢুকে গেল ক্লাসে। কিন্তু প্রভাব পড়ল না তনুজাতে। সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে। দৃষ্টিযূগল তীব্রর দিকে আবদ্ধ।
পুষ্পিতা খপ করে ওর হাত চেপে হাঁটা ধরল।
“ অনেক দেখেছ,এবার চলো ভাই। এত ধমক খাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই আমার।”
তনুজা মানা করেনি। পা বাড়ালেও, কটমট করল মকবুলের ওপর। বলল,
“ এই বুইড়া ব্যাটার কথা শুনলে? গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে বলে কেউ এখান থেকে হেঁটেও যেতে পারবেনা।”
পুষ্পিতা সেই একই কথা আওড়াল,
“ এভাবে বলতে নেই। উনি আমাদের স্যার।”
“ আরে রাখো তোমার স্যার। তুমি এনাকে চেনো না।
এই ব্যাটা, আমাদের কলেজ লাইফটা পুরো তেজপাতা বানিয়ে ছেড়েছে। ফোন অবধি আনলে নিয়ে যেত জানো। কত হাতে-পায়ে ধরতাম,তারপর মন চাইলে দিত,আর মন না চাইলে গার্ডিয়ান ডেকে পাঠাত। এইত কলেজের ছিড়ি, তাতে আবার এত রেস্ট্রিকশন কীসের? আর এখন কী করল দেখলে? আমি নতুন নতুন ক্রাশ খেলাম,তাকে একটু ভালো করে দেখছি ওর তাতেও সমস্যা? ইচ্ছে করছে বুইড়ার সাদা দাড়ি গুলো ধরে ঝুলে পড়ি ।”
পুষ্পিতার এসব শুনে,নিজের কান দুহাতে চেপে ধরতে মন চাইল। তনুজা কাঠখোট্টা! তাই বলে এত? শিক্ষক-টিক্ষক ও মানবে না? স্যারের দাড়ি ধরে ঝুলে পড়তে চায়? ছি! ছি!
তনুজা হঠাৎ থেমে দাঁড়ায়।
“ আচ্ছা, তুমি যেন তখন কী বললে পুষ্পিতা?”
পুষ্পিতাও দাঁড়াল ওর দেখাদেখি,
“ কখন?”
“ ঐ যে শিক্ষক বাবা মায়ের সমান, বললেনা?”
সে নিষ্প্রভ আওড়াল,
“ বলে তো ছিলাম। কিন্তু তুমি শুনবে বলে মনে হচ্ছেনা।”
তনুজা হাসল। দু গাল ফেঁপে উঠল তাতে। আনন্দ চিত্তে বলল,
“ একদম ঠিক ভেবেছ। শুনব তো না-ই।
তুমি আমার বাবার বয়স জানো? আমি তার সব থেকে ছোট মেয়ে। ওনার বয়স এখন ষাটের কোঠায়। আর স্যারের বয়স কত হবে? বড় জোড় ২৮/২৯? আচ্ছা ধরলাম ত্রিশ। আমার বাপের হাঁটুর বয়সী স্যার। তাহলে কোন দুঃখে তাকে বাপের সমান মানব শুনি?”
পুষ্পিতা রা করল না এবার। চুপচাপ শুনে গেল। কিছু বললেও এ মেয়ে শুনবে না,এতক্ষণে ঢেড় বুঝেছে।
তনুজা হৈহৈ করে বলল,
“ সবথেকে বড় কথা এখন যুগ পাল্টেছে পুষ্পিতা। এই যুগে স্যারকে কেউ বাবা মায়ের চোখে দেখেনা। এখন ভাইয়া থেকে ছাইয়া হয়,আর স্যার থেকে ওগো,হ্যাগো.. কী গো!”
পুষ্পিতা তাজ্জব হয়ে বলল,
“ কীহ? তোমার মাথা আছে না গেছে? কী বোলছো নিজে জানো?”
তনুজা বলল,
“ জানব না কেন? অবশ্যই জানি। আমার এক কাজিনের তো ওর টিউটরের সাথে বিয়ে হয়েছিল। ওদের একটা বাচ্চাও আছে।”
পুষ্পিতা নিঃসহায়ের মতোন শুনে যাচ্ছে। হু-হা নেই।
তার চোখমুখের নিষ্পৃহতা দেখে, তনুজা বিদ্বিষ্ট হয়ে বলল,
“ উফ আল্লাহ! তুমি এত ব্যাকডেটেড কেন? থাক, ব্যাপার না। আমার সাথে মিশছো না? আমি আস্তে আস্তে তোমাকে সব শিখিয়ে দেব।”
ফোরকান আহমেদের ঠিক পেছন বরাবর একটা কাঠের তৈরী বইয়ের শেল্ফ আছে। পুরোনো, তবে ছোট ছোট কাচ বসানো প্রতিটি তাকে।
তীব্রর কান ভদ্রলোকের কথাতে রইলেও, চোখের দৃষ্টি সেদিকে। ওষ্ঠপুট সাবলীল, অথচ চাউনীতে ওর চকচকে হাসি। সেই কাচের মধ্যে স্পষ্ট ফুটে আছে পুষ্পিতার বিম্ব। ওইত করিডোরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তনুজার বকবক শুনছে সে। কী নিষ্পাপ তাকানোর ধরণ! যেন কিচ্ছুটি বোঝে না।
কিন্তু এই মেয়ে আসলে কী,সেটা তার মত ভালো কে জানে! মাত্র দুবার দেখাতেই, মাস্তান বিট্টুকে ভদ্রতার মুখোশ পড়িয়ে বসিয়ে রেখেছে এখানে।
তীব্র নিম্নাষ্ঠ দাঁতে কাম*ড়াল। তর্জনী দিয়ে চশমা ঠেলল ঈষৎ। ঠোঁটে সূক্ষ্ণ হাসির ছোঁয়া বহাল রেখে ভাবল,
“ খুব কাছাকাছি এসেছি ভীতু মেয়ে। আমাকে এখানে টেনে আনার খেসারত,এবার প্রতি প্রহর দেবে তুমি।”
তন্মধ্যে মকবুল সাহেব বিদায় নিলেন। কিছু কাজ আছে ওনার।
পরপরই ডাকলেন ফোরকান,
“ মিস্টার তালুকদার!”
তীব্র চোখ ফেরাল। মৃদু জবাব,
” জি।”
উনি প্রস্তাব ছু*ড়লেন,
“ চলুন, আপনাকে ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট দের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেই।”
মুচকি হাসল সে। দাঁড়িয়ে বলল,
“ নিশ্চয়ই!
তারপর পথ দেখিয়ে বলল,
“ আপনি গুরুজন, আপনি আগে যান।”
ফোরকান বিস্মিত! বিমোহিত সাথে! তীব্রর পরিচয় তিনি জানেন। তাইত এমন তোষামোদ! নাহলে কত টিচার এলো-গেল,এতটা সময় কখনওই নিজের কক্ষে বসিয়ে খাতির করেননি উনি। করার দরকারই বা কী?
কিন্তু এ ছেলে কত বড় লোক! তারওপর সাক্ষাৎ মন্ত্রীপূত্র। অথচ বিন্দুমাত্র অহংকার নেই? আহা কী শিক্ষা! কী ভদ্রতা!
তিনি আপ্লুত হেসে বললেন,
“ আগে-পরে নয়,চলুন একসাথে যাই।”
তীব্র ঘাড় নাড়ে। পাশে পা মিলিয়ে বলে,
“ একটা কথা বলার ছিল আপনাকে।”
“ জি জি নিশ্চয়ই, বলুন।”
“ আপনাকে আমার বাবা কিছু বলেছেন?”
“ জামশেদ স্যার? কী ব্যাপারে বলুন তো….”
ফোরকান থামলেন। মিনিট কয়েক মনে করার চেষ্টা করেই, উদ্বেগ নিয়ে বললেন,
“ ও হ্যাঁ, ওই ব্যাপারটা তো? আপনার আসল পরিচয় যাতে আমি কাউকে না বলি? আই মিন আপনি যে জামশেদ স্যারের ছেলে সেটা।”
“ জি। কারণটাও তো বলেছে আপনাকে।”
“ হ্যাঁ,শুনলাম। আর সত্যি বলতে কথাটা শোনার পর থেকেই আপনার ওপর আমার অন্যরকম ইম্প্রেশন কাজ করছে মিস্টার তালুকদার। এমন অমায়িক চিন্তাধারা কিন্তু সকলের হয়না। যারা বাবার বিশাল নাম ডাক, পরিচয় লুকিয়ে,আত্মসম্মানের সাথে নিজে কিছু করতে চায়।
আমি আপনাকে মন থেকে এপ্রিসিয়েট করছি। আর আপনি রিল্যাক্সে থাকুন,আমি কাউকেই জানাব না।”
শিষ্টাচারে ভরপুর হাসি হাসল তীব্র। সংক্ষেপে জানাল,
“ থ্যাংক ইউ!”
**
উচ্চরবের ক্লাসরুম স্তব্ধ হয়ে গেল ফোরকান আহমেদ প্রবেশ করার সাথে সাথে। পেছনে তীব্র ঢুকল ওনার। শিক্ষার্থীরা বসা থেকে তটস্থ বেগে দাঁড়িয়ে যায়। সমস্বরে আওড়ায়,
“ আসসালামু আলাইকুম স্যার!”
ভদ্রলোক উত্তর দিলেন সালামের। হাত ইশারায় বসতে বোঝালেন সবাইকে।
তনুজা, তীব্রকে দেখতেই চোখ কপালে তুলে বলল,
“ এর মানে উনি আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই স্যার?”
ইয়া আল্লাহ! খুশিতে ম*রেই যাব আমি।”
পুষ্পিতা শুনল। নীরবে মাথা নাড়ল দুপাশে। এই জীবনে স্যার দেখলে, কোনও ছাত্রীকে সে এমন করতে দেখেনি। এই মেয়ে পাগল! নির্ঘাত পাগল! স্যারের মত সম্মানীয় ব্যক্তিকে জড়িয়ে কীসব বলে, তওবা তওবা!
উপস্থিত সবার চোখ-মুখ ব্যগ্র, আগ্রহী। ফোরকান আহমেদ তীব্রকে দেখিয়ে ঘোষণার মতন বললেন,
“ মিট উইথ ইওর নিউ লেকচারার… মিস্টার তীব্র রেজা তালুকদার! গ্রাজুয়েটেড ইন ইকোনোমিক্স!”
সবগুলো নজর এক যোগে তীব্রর দিক বর্তালে অপ্রস্তুত হয় সে৷ কিন্তু ধরা দেয় না। তামাটে ঠোঁট দুদিকে স্বল্প ছড়িয়ে মৃদু হাসল। ছোট করে বলল,
“ হ্যালো!”
ফোরকান ওকে বললেন,
“ মিস্টার তালুকদার, আপনি চাইলে কিন্তু আজকে থেকেই ক্লাস নিতে পারেন। এতে খুব দ্রুত ফ্রিও হয়ে গেলেন আপনার স্টুডেন্টদের সঙ্গে!”
তীব্রর মুখের ওইটুকু হাসিটা,সহসা দপদপ করে নিভে যায়। ছোট্টখাট্টো বাঁজ আছড়ে পড়ে তালুতে।
ভেতর ভেতর ফোরকানের ওপর ফুঁ*সে উঠল সে।
ঠোঁটগহ্বরের মধ্যে লুকোনো দাঁত গুলোকে গায়ে গায়ে পি*ষে ধরল সজোরে। ইচ্ছে করছে, এক থা*প্পড়ে ব্যাটাকে পুরো দুনিয়া ঘুরিয়ে আনতে।
সে কেবল পরিচিত হতে এসেছে আজ। ক্লাস নেওয়ার একটা প্রস্ততি আছে না? নিয়েছে সেটা? নেয়নি। কীভাবে নেবে! এই আদর্শ শিক্ষকের বেশ ভাবতে ভাবতেই তো দিন কাটিয়ে ফেলেছে।
বলা নেই, কওয়া নেই,ক্লাশ নিতে বলে দিলেই হোলো?
আরে ব্যাটা সময় তো দিবি না কী! জীবনে নিজের জন্য বই ছোঁয়নি,সেখানে হঠাৎ করে এদের কী পড়াবে?
কিন্তু বুদ্ধিতে প্রখর,আর আত্মস্থে তৎপর তীব্রর সময় লাগেনি নিজেকে সামলাতে।
এখন মুখের ওপরে প্রস্তাব নাকচ করলেই বিপদ! নিষ্ঠাবান শিক্ষক হওয়া থেকে এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার জোড়াল আ*শঙ্কা।
ফোরকান ওকে চুপ দেখে বললেন,
“ এনি প্রবলেম মিস্টার তালুকদার? আপনি আজকে ক্লাস নিতে না চাইলেও, কোনও সমস্যা নেই।”
তীব্র মুখের কাছে হাত নিয়ে কাশল দুবার। ঠোঁটের ডগায় চমৎকার হাসির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বলল,
“ নো স্যার, আই’ল টেক ক্লাস ফ্রম নাও।”
খুশি হয়ে গেলেন ফোরকান। দ্বিতীয় বার তুষ্টতায় উপচে এলো দৃষ্টি।
এই কলেজে এখন অবধি যতগুলো শিক্ষক তিনি দেখেছেন, একেকটা চূড়ান্ত পর্যায়ের ফাঁকিবাজ। ক্লাসের কথা উঠলেই, ওদের পেট কা*মড়ায়,শরীর খারাপ করে।
কেউ তো সময়ের আগেই বেরিয়ে আসে। ওইজন্যেই প্রতিষ্ঠানটার কিছু হচ্ছে না। নিতান্তই যাচ্ছে তাই অবস্থা!
তার মধ্যে তীব্রর এই আগ্রহে ভীষণ রকম প্রসন্ন হলেন তিনি।
ওর কাঁধ ছুঁয়ে বললেন,
“ অল দ্য বেস্ট! আমি এখন আসি। আপনি তাহলে আপনার স্টুডেন্টদের সঙ্গে একটা ভালো সময় কাটিয়ে ফেলুন।”
তীব্র হাসল। জোর করে ভেতর থেকে হিঁচড়ে আনা হাসি৷ এক পাশে অল্প মাথা নাড়তেই, কক্ষ ছাড়লেন ফোরকান। তীব্র জ্বল*ন্ত চোখে প্রস্থান দেখল তার। মন চাইল, ছুটে গিয়ে এই দোতলা থেকে ওটাকে এক ধা*ক্কা মে*রে নীচে ফেলতে।
লেকচারার তীব্র রেজা না হয়ে,মাস্তান বিট্টু হলে ফেলেও দিত। দ্বিতীয় বার ভাবত কী না সন্দেহ!
ও খুব ক*ষ্টে বখাটেপনার পুরোনো রা*গ-ঢাক মাটি চাপা দেয়।
তেঁতো মেজাজে, সামনে ফিরতেই ভড়কে উঠল কেমন। ছেলে-মেয়ে সবাই হা করে চেয়ে আছে।
তীব্র অপ্রস্তুতিতে গলা খাকাড়ি দিল। আশ্চর্য তো! এগুলো এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? ওর কী রূপ বেঁয়ে পড়ছে?
সে আরেক-বার গলা ঝাড়ে। কোত্থেকে শুরু করবে, কী বলবে, কিছুই বুঝতে পারছে না। জীবনে কাউকে পড়িয়েছে না কী! না মনোযোগ দিয়ে ক্লাশ করেছে! পাশ মার্ক তোলার মতও পড়ত কী না সন্দেহ।
তীব্র ঘাড় চুলকায়। কী সম্বোধন করবে এগুলোকে? তুই,তুমি,না আপনি?
তুই বললে ভালো দেখাবে? এই তুমি জ্বিভে আনতে তার কষ্ট হবে, ভীষণ কষ্ট! ফোরকান ব্যাটাকেই স্যার স্যার করতে হিমশীম খাচ্ছিল খুব। অনেকবার আটকে আটকে আসছিল গলায়। আরেকটু অসাবধান হলেই,অভ্যেস বশত তুই -তোকাড়িটা বেরিয়ে যেত বাইরে।
তীব্র শ্বাস ফেলল। প্রস্তুতি নিলো পরিস্থিতি মোকাবেলার। সামনে চেয়ে সহজ সাবলীল ভাষায় শুধাল,
“ তাহলে, কী খবর সবার?”
উত্তর এলো একসাথে,
“ গুড স্যার।”
তীব্রর ক্লাশে ব্যাষ্টিক অর্থনীতি পড়ানোর কথা। এটাই নির্ধারণ করেছেন ফোরকান। কিন্তু কোন চ্যাপ্টার কীরকম দেখতে ওর মনে নেই। ছাত্র জীবনে একটু ভালো ভাবে পড়লে হয়ত মনে থাকত।
কিন্তু এখন করারও নেই কিছু । যা কীর্তি ঘটিয়েছে অতীতে, সেসব তো আর পালটানো যাবে না। আর এইজন্যেই সে নাহিদকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। কারণ,ওদের দলে একমাত্র ওটাই পড়াশুনায় ভালো!
যদি একটু কাজে লাগে এখন।
তীব্র ঠোঁট কা*মড়ে কাম*ড়ে ভাবল এই মুহুর্তে কী করা যায়! নৌকার দাড় তো অন্যদিকে টেনে নেয়া জরুরি।
সে ভাবা-ভাবি রেখে ঝট করে চাইল। একেবারে গাঢ় চোখে চেয়ে মুগ্ধ হওয়ার মতন হাসতেই,চোখ আটকে গেল তনুজার। বেঞ্চের সাথে কনুই রেখে, গালে হাত দিয়ে বলল,
“ কী হাসি! মে*রে ফেলল রে…”
তীব্র হোয়াইট বোর্ডের সামনে পাতানো, টেবিলের কাঠের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল। এক পায়ের সাথে অন্য পা আড়া-আড়ি রেখে দুই হাত গুঁজল পকেটে। সবার দিক চেয়ে খুব ধীর-স্থির গলায় বলল,
“ আজকে আমার প্রফেশনাল লাইফের প্রথম দিন। সবার সাথে আলাপও হচ্ছে প্রথম। আর এই সুন্দর দিনটাতে পড়াশোনার মত বোরিং বিষয়ে আমি যাব না। তার চেয়ে বরং গল্প করি? আমরা না হয় কাল থেকে বইপত্র ঘাঁটব?”
সে ভ্রু উঁচায়। জবাব চায় সকলের। নিমিষে হৈহৈ পড়ে গেল। উঁচু উঁচু কণ্ঠে জানাল,
“ জি স্যার জি।”
তীব্র দেয়াল ঘেঁষে রাখা, প্রথম সাড়ির বেঞ্চের দিক ঘাড় বাঁকিয়ে চাইল। জানলা হতে ঠিকড়ে আসা সূর্যকিরণ চশমার গ্লাসে সোজাসুজি পড়েছে তার। সাদাটে চোখ সহ কাচ দুটোও জ্বলে উঠল হীরের মতন।
বেঞ্চের কর্ণারে বসা মেয়েটিকে বলল,
“ পরিচয় দে..দিন আপনার!”
তুইটুকু অতি বেগে গিলে ফেলেছে সে। সন্তর্পণে লাফ দিয়েছে আপনি -আজ্ঞেতে।
মেয়েটি উঠে দাঁড়াল। স্ফুর্ত গলায় নাম-ধাম জানাল।
আলাপের সূচনা শুরু হলো তারপর। সাড়ি বেঁধে বেঁধে একেকজন দাঁড়িয়ে পরিচয় জানাচ্ছে নিজেদের।
অথচ তীব্র বিন্দুসম উৎসুক নয় এসবে। কান দিয়ে সব ঢুকে বের হওয়ার অবস্থা।
সে পরিবেশের মোড় ঘুরেছে বুঝতেই, স্বস্তির শ্বাস ঝাড়ে আড়ালে।
এক সময় পালা এলো তনুজার। সে বসা থেকে লতিয়ে দাঁড়ায়। চোখে-মুখে লজ্জাভাব। আড়ষ্টতায় গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। কোন রকমে আওড়াল,
“ তনুজা জাহান মিমি!’’
তীব্র বলল,
“ আচ্ছা বসুন!”
একই ভাবে বসল মেয়েটা। তার দুচোখ ভর্তি মুগ্ধতা। সবটা সামনের সুতনু তীব্রকে ঘিরেই। এরপরে পুষ্পিতা দাঁড়াল।
নাম বলতে হা করবে যেই,তীব্র হাতঘড়ি দেখে, ব্যস্ত কণ্ঠে বলে,
“ আপাতত পরিচয় পর্ব থাক। আমার কিছু কাজ আছে,যেতে হবে এখন। কাল দেখা হচ্ছে আপনাদের সঙ্গে।”
পুষ্পিতার মুখ বন্ধ। থতমত খেয়ে নাম গিলে নিয়েছে।
পুরো কথাটা বলার সময় তীব্র একটা বার দেখেনি ওকে। চোখ অবধি তোলেনি। বাকীদের দিক চেয়ে বলেছে, বিদায় নিয়েই বেরিয়ে গিয়েছে লম্বা পায়ে।
পুষ্পিতার পেছনে আরো বেঞ্চ ছিল। সেখানে আরও মেয়েরা বসে। ওরাও সমান বঞ্চিত হয় এই আলাপচারিতা থেকে। তাই মন খারাপ করল। চাপা গুঞ্জন চলল এ নিয়ে।
পুষ্পিতা জায়গায় বসে। তনুজার দিক চাইতেই, দেখল ও অধর ফাঁকা করে দেখছে দরজায়। সে ব্যর্থ শ্বাস ফেলে বলল,
“ স্যার চলে গেছেন তনুজা। এবার তো মুখটা বন্ধ করো।”
তনুজা শুনল,তবে মানল না। হাসি হাসি চেহারায়, শুধু ঠোঁট নেড়ে বলল,
“ তুমি তীব্র রেজা,আর আমি তনুজা। ইশ কী মিল আমাদের নামে! এ জোড়ি তো রাব নে খোদ বানা দিয়া।”
পুষ্পিতার বিষম ওঠার জোগাড়। হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে কিয়ৎক্ষণ। এসব শুনে মাথা ঘুরছে তার।
দুনিয়া কোথায় চলে গেল! শিক্ষকের সাথেও এখন নামের মিল খোঁজে মেয়েরা।
*****
নাহিদের অবস্থা বিপন্ন। মহাবিপাকে পড়েছে সে। বিষয়টা হলো, সে আজ তীব্রর সাথে গাজীপুরে এসেছে। না, একসাথে আসেনি। তীব্র সকাল সকাল এলেও,সে পৌঁছাল কেবল। সাথে এক ট্রাক আসবাব। একটা ফাঁকা বাসায় দুজন ছেলে থাকতে যতটুকু লাগে, ঠিক তাই তাই। না কিছু বাড়তি,না কিছু কম।
যে ঘরটা ওরা ভাড়া নিয়েছে,সেটার দরজায় বিশাল জং ধরা তালা ঝুলিয়েছেন বাড়িওয়ালা। খোলার জন্য দিয়েও গেছেন মরীচা পড়া চাবি। এখন জং-এ জং-এ মিলে সব ওলট-পালট হয়ে গেল। সেই কতক্ষণ ধরে তালা খোলার চেষ্টায় সে, খুলছেইনা?
ওদিকে গেটের বাইরে ট্রাক দাঁড়িয়ে। তালা না খুললে সেসব ঢোকাবে কী করে? বজ্জাত বাড়িওয়ালাটাও না! জানেইত ওরা আজ আসছে এখানে। ঘরটা আগেভাগে খুলে রাখতে পারল না?
নাহিদ অনেকবার চেষ্টার পর বিরক্ত হয়। আশপাশ দেখে নেয় হন্যে চোখে। তার পাশের ফ্ল্যাটেও তালা ঝুলছে। কাউকে ডেকে যে একটু সাহায্য চাইবে,তারও উপায় নেই।
শান্ত ছেলেটার মেজাজ চটে এলো। কপালে জমা ঘাম মুছল বা হাতে। বিড়বিড় করে করে কাজে ব্যস্ত থাকার মাঝেই কানে এলো অন্য চাবির ঝনঝন শব্দ। তৎক্ষনাৎ পাশ ফিরে চাইল ও। নেত্রদ্বয় চকচক করে ওঠে সবেগে।
একটা মেয়ে! সেও তালা খুলছে। নাহিদ দেখল, মেয়েটা চাবি দিয়ে একটা মোড় দিতেই, আরামসে লক নেমে গেল।
আরে বাহ! সে সাহায্যের কথা বলতে গিয়েও থামে। ভাবে, বিষয়টা ঠিক হবে না। আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেলে,ওকে খারাপ ভাবে যদি? গালিও দিতে পারে। না না, বাবা থাক। দরকার পড়লে এই তালা খুলতে খুলতে ও জান দেবে,কিন্তু কোনও মেয়ের কাছে মান দেয়া যাবে না।
নূহার হঠাৎ মনে হলো ওকে দেখছে কেউ একজন। ঘরে ঢুকতে গিয়েও পেছন ফিরে তাকাল। যা ভেবেছিল তাই। কোথাকার কোন ছেলে রীতিমতো ড্যাবড্যাবে নজরে চেয়ে এদিকে। ভ্রু কোঁচকাল নূহা। মেজাজটাও খারাপ হলো বটে। খ্যাক করে বলল,
“ কী সমস্যা? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
এক আকাশ সিদ্ধান্তহীনতা সমেত চেয়ে থাকা নাহিদ নড়েচড়ে উঠল। থতমত খেয়ে বলল,
“ জি? কই, কিছু না তো।”
নুহা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াল ওর দিকে।
“ কিছু না হলে ঠোঁট দুটো অমন ইস্ট-ওয়েস্টে ছড়িয়ে ছিল কেন?”
নাহিদ অপ্রতিভ হয়। চোখ নামিয়ে নেয়। সে তো বাজে ভাবে তাকায়নি। শুধু ভাবছিল, সাহায্য চাইবে কী না! আর এতেই বিশ্রী একটা অবস্থা হয়ে গিয়েছে। মেয়েটা তার ফুলের মত পবিত্র চরিত্রখানা নিয়ে সন্দেহ করল না?
নূহা তীক্ষ্ণ নজরে নাহিদকে দেখছে। নিতান্ত ভোলাভালা একটা মুখ। ঢিলে শার্ট পড়নে। কলার অবধি বোতাম লাগানো। গলার হাড় দেখার অবস্থাও রাখেনি। শার্টের হাতা কব্জি অবধি টানা। কালো চুল গুলো একপাশে সিঁথি করে আচড়েছে।
সে কপাল কুঁচকে রেখেই নাহিদের আপাদমস্তক মেপে নেয়। এতে অধিক অস্বস্তিতে গাঁট হয় ছেলেটা। হাত দিয়ে কলারটা ঠিকঠাক করে আরেকটু।
নূহা মনে করার ভঙি করে বলল,
” আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি। চেনা চেনা লাগছে।”
” কিন্তু আমি যে আপনাকে চিনি না। ”
নূহার প্রয়াস ব্যর্থ! সে মনে করতে পারল না। তবে স্বর পুরু করে শুধাল,
“ নতুন এসেছেন?”
নাহিদ দাঁত মেলে হেসে বলল,
” জি৷”
নূহা কাট কাট গলায় বলল,
“উত্তর জানতে চেয়েছি। দাঁত দেখতে চাইনি।
দাঁত দেখাচ্ছেন কেন?”
নাহিদের হাসি মুছে যায়। চটপট দাঁত গুলো ঢুকিয়ে নিলো ভেতরে।
নুহা ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“ ফ্যামিলি সহ থাকবেন?”
নাহিদ মুখ কালো রেখেই বলল,
“ জি না। দুই বন্ধু উঠেছি।”
নূহা অবাক হয়ে বলল,
“ দুই বন্ধু মানে? ব্যাচেলর? আমরা এখানে মেয়েরা আছি জেনেও বাড়িওয়ালা আঙ্কেল ব্যাচেলর কীভাবে ভাড়া দিলেন?”
বিপরীতে নাহিদ খুব আস্তে আস্তে বলল,
“ জি সেটাত আমি জানিনা আপু। চাচাই ভালো বলতে পারবেন।”
মাথায় আ*গুন ধরে গেল নূহার। উষ্ণ দুপুরের, রাগ বর্তাল বাড়ির মালিকের ওপর।
একে তো মা সারাদিন বাইরে থাকে। ঘরে ওরা দুটো যুবতি মেয়ে। তার ওপর পুষ্পিতার অমন সুশ্রী চেহারা! বিপদ তো পাশের ফ্ল্যাট থেকে হেঁটে হেঁটে আসবে।
সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা তুমুল ঝ*গড়া বাঁধানোর সিদ্ধান্ত নিলো। আগে হাত মুখ ধুয়ে আসা যাক। যেই ঘুরে ঢুকতে যাবে, নাহিদ ওমনি পিছু হতে ডাকে
“ ইয়ে, আপু শুনুন।”
ফিরে চাইল নূহা।
“ কী হয়েছে?”
কর্কশ গলা শুনে আর কথা বলার সাহস পেলো না ও। দুধারে মাথা নেড়ে জানাল,
“ কিছু না,কিছু না।”
নূহার মেজাজ পুরো তেঁতিয়ে এলো এবার।
“ কিছু না হলে ডাকলেন কেন? শুধু শুধু ডেকে আমার মাথা গরম করাটা আপনার উচিত হয়েছে?”
নাহিদ নিষ্পাপ কণ্ঠে বলল,
“ শুধু শুধু ডাকিনি তো আপু। আসলে আমি তালাটা কিছুতেই খুলতে পারছি না৷ আপনি কী আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন?”
নূহা একবার তালার দিক দেখে। ছেলে মানুষ একটা তালা খুলতে ওর সাহায্য চাইছে? কী হাস্যকর ব্যাপার-স্যাপার!
তবে মানা করল না। এগিয়ে এসে বলল, “ সরুন।”
বাধ্যের ন্যায় সাইড হয়ে দাঁড়াল নাহিদ।
নুহা তালা হাতে ধরে উল্টেপাল্টে দেখল।
ওর দিক চেয়ে বলল,
“খুলব কী আমার মাথা দিয়ে? চাবি কই?”
“ ও হ্যাঁ হ্যাঁ,এই যে!”
শশব্যস্ত চাবির রিংটা ওর দিক এগিয়ে দিলো নাহিদ।
নূহা নিলো,গাঁথল তালাতে। কিন্তু প্রথমেই খোলা গেল না। বহুদিন এই ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া ওঠেনি। তাই তালা ব্যবহারও হয়েছে হাতে গোণা।
নূহা মোচড়া-মুচড়ি করল কিছু সময়। নাহিদ কানের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“হচ্ছেনা?
“ পারছেন না?”
“ খুলেছে?”
“ খুলছে না?”
খেই হারিয়ে রুষ্ট চোখে চাইল নূহা। ধমকে বলল,
“ আপনি চুপ করবেন? কানের পাশে এমন মাছির মত ভনভন করলে আমার মাইন্ড ডিস্ট্র্যাক্ট হয়ে যাবে না?”
নাহিদ জ্বিভ কে*টে বলল,
“ সরি! সরি!”
কিছু সময় লাগাতার চেষ্টার পর খুলল তালা। নাহিদ ওমনি বাহবা জানিয়ে বলল,
“ আরে বাহ,খুলেছে তো। কী গুণ আপনার!”
প্রসংশা শুনে নূহা খুশি হয়নি বোধ হয়। চাবির গোছা ঝুলিয়ে ধরে থমথমে চেহারায় বলল,
“ তালা খুলতে গুণ লাগে না। ধৈর্য্য লাগে। যেটা আপনার আমার মত ছিল না।”
নাহিদ মেনে নিয়ে বলল,
“ হতে পারে আপু।”
নূহা চেঁতে বলল,
“ এই আপনি একটা তালগাছের মতন ছেলে হয়ে আমাকে আপু আপু করছেন কেন? এত সভ্যতা দেখাতে হবেনা। ছেলেদের স্বভাব জানা আছে। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ বুঝেছেন?”
নাহিদ মাথা কাত করল,
অর্থাৎ বুঝেছে।
নূহা বিভ্রান্ত হয়ে বলল,
“ আজব তো! আমি যা বলছি আপনি এমন মেনে নিচ্ছেন কেন?”
নাহিদ বোকা বোকা গলায় বলল,
“ কেন,মেনে নেওয়া টা ভুল হলো?”
নূহা আশ্চর্য না হয়ে পারছে না। গায়ে -গতরে কী লম্বা পুরুষ! দেখতেও ভালো। অথচ এমন নির্বোধের মতন চাল-চলন কেন?
তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,
“ঢেড়স কোথাকার!”
হতভম্ব নাহিদ তাজ্জব বনে তাকায়। ঢেড়স কাকে বলেছে? ওকে? জিজ্ঞেস করার আগেই,
ভাব নিয়ে পাশ কাটাল নূহা। নাহিদ আর কথা বাড়াল না। তার কাজ তো হয়েছে। দরজা খুলে রেখে আবার নেমে গেল নীচে।
নূহা আবার ঘরে ঢুকতে গেলেই,পিছু হতে উদ্বেলিত ডাক এলো,
“ নূহা নূহা!”
সে থামল, ফোস করে শ্বাস ফেলল। আজ বোধ হয় ওর ঘরে ঢোকা হবে না। তিনবারই বাধা পড়েছে। আবার তাকাল ঘুরে। পুষ্পিতা দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে উঠছে। ছটফটে গলায় বলল,
“ জানিস কী হয়েছে? আমাদের কলেজে একজন নতুন টিচার এসছেন। তনুজার কথা বলেছিলাম না তোকে? ও তো পুরো সেই স্যারের ওপর মেল্ট হয়ে গিয়েছে। আমি কত করে বোঝালাম যে…..”
“ এক্সকিউজ মি!”
আচমকা, খুব কাছ থেকে আসা স্থূল কণ্ঠটায় কথা থেমে গেল পুষ্পিতার। থামল পা জোড়াও। চকিতে চাইল। ওমনি চমকে -থমকে একাকার হলো গতিতে।
তীব্র দাঁড়িয়ে। হাতে লাগেজ। পুষ্পিতার চোখ কোটর ছড়ায়,বিকট হয়। বড় বড় করে চেয়ে থাকে। অস্ফুটে বলে
“ সস্যার!”
তারপর একটু আস্তে…
“ আসসালামু আলাইকুম স্যার!”
তীব্র হাস্যহীন জবাব দিলো,
“ ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
খুব নম্র তার গলার স্বর। ততোধিক নরম ভাবে বলল
“সাইড দিন,যাব।”
“ জি।”
পুষ্পিতা সঙ্গে সঙ্গে সিড়ির হাতলের সঙ্গে লেপ্টে দাঁড়াল। কিন্তু কোনও কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না। স্যার যাবেন,কোথায় যাবেন?
তীব্র উঠে যায় ওকে ছাড়িয়ে। নূহার সামনে দিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে,মুখের ওপর দরজা লাগায়।
গোটা দৃশ্যে, ভ্রু আকাশে উঠল পুষ্পিতার। শশব্যস্ত তাকাল নূহার পানে। সেও সমান বিস্মিত।
দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বলল,
“ ইনিই তোর স্যার?”
পুষ্পিতা ওপর নীচ মাথা নাড়ে।
নূহা নিজেও মাথা দুলিয়ে বলল,
“ ও… এর মানে এনারাই এখানে নতুন উঠেছেন। তোর স্যার,আর সাথে ওই ঢেড়স ছেলেটা।”
চলবে,