#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১০]
ঘেমে জুবুথবু অবস্থায় বসে আছে উজ্জ্বল।সে কী করবে না করবে ভেবে কোন কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।ভয়ে কাঁপছে বুক কি থেকে কি হয়ে গেল।সে কী করেছে?একটা চুমুই তো দিয়েছে।তার চুমুতে কি এতটাই ভোল্টেজ যা রুমুকে অজ্ঞান করতে সক্ষম!উজ্জ্বল রুমুর গালে হাত রাখলো মেয়েটাকে ডাকলো বেশ কয়েকবার অথচ কোন সাড়া শব্দ নেই।ফুলে সুভাসিত বাসরটা এক মুহুর্তে তার কাছে আতঙ্কে পরিনত হলো।দ্রুত ফোন হাতে তুলে সিদ্ধান্ত নিল সিয়ামকে ফোন করবে এই মুহুর্তে বন্ধুরা ছাড়া তাকে সাহায্য করার আর কেউ নেই।তবে আবার ভাবলো এরা নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে মজা লুটবে।সারাজীবন বন্ধুরা বলে বেড়াবে উজ্জ্বল বাসর ঘরে বউকে অজ্ঞান করেছে।ছিহ ছিহ ছিহ এসব কথা পাঁচ কান হওয়া মানে মানসম্মান ঝুলে যাওয়া।
উজ্জ্বল যখন চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে তখন রুমু স্বল্প চোখ খুলে উজ্জ্বলের অবস্থা দেখছে।হঠাৎ উজ্জ্বলের আবেগী হওয়াটা সহজ করে নিতে পারেনি রুমু মেয়েটা যদি এখন পালটা প্রতিক্রিয়া দেখায় উজ্জ্বল নিশ্চয়ই ঝামেলা করবে।তাই নিজেকে বাঁচাতে মেয়েটা অজ্ঞানের নাটক করেছে।উজ্জ্বলের বেসামাল কর্মকান্ডতে রুমু নিজেও পা পিছলে বাসরের দুনিয়ায় হারিয়ে যেত কিন্তু সে চায় না এমনটা হোক উজ্জ্বলভাইকে একটু নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানো যাক।
উজ্জ্বল উঠে গিয়ে জগ থেকে পানি নিয়ে রুমুর মুখে ছিটা দিল।এই মুহুর্তে রুমু আর নাটক ধরে রাখতে পারলো না।পিটপিট চোখ খুলে তাকালো উজ্জ্বলের দিকে।রুমুর জ্ঞান ফিরেছে ভেবে উজ্জ্বল নিশ্চিন্ত হলো।
” রুমু ঠিক আছিস?”
” আমার কি হয়েছে?”
” কিছু না মাথাটা একটু ঘুরে গেছে।”
“আমার কেমন কেমন লাগছে উজ্জ্বল ভাই।সব ঘুরছে,আমি ঘুরছি,আপনি ঘুরছেন।”
” এই তো ঠিক হয়ে যাবে একটু অপেক্ষা কর।বিশ্রাম নে।”
” আপনার ঠোঁটে লিপস্টিক কেন?”
রুমুর প্রশ্নে উজ্জ্বল ঠোঁটে হাত রাখে।দ্রুত ফোন ক্যামেরায় নিজেকে পরখ করে গলা ঝেরে কেশে টিস্যুর সাহায্যে ঠোঁট পরিষ্কার করে।রুমুর ঠোঁটে থাকা লাল টকটকে লিপস্টিক উজ্জ্বলের ঠোঁট লেগে গেছে।ছেলেটার লজ্জা পাওয়া মুখভঙ্গিমা দেখে ঠোঁট কুচকে হাসে রুমু।
” উজ্জ্বল ভাই আপনি কাজটা ঠিক করেননি।”
” কি করেছি?মাত্র একটা চুমু!আমার রুমুকে আমি চুমু খাব না?”
” না খাবেন না।আমি প্রস্তুত ছিলাম না।”
“আশ্চর্য এভাবে সেজেগুজে বসে ছিলি আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়ে এখন বলছিস প্রস্তুত ছিলি না!মানে খেতে ডেকে এখন বলছে রান্না হয়নি।”
” এই জীবনে আমি কখনো অজ্ঞান হইনি।কড়া রোদে স্কুলে পিটি করেছি,আব্বার ধমক খেয়েছি,আম্মার মার খেয়েছি অথচ আপনার একটা চুমুতে আমি কুপোকাত।
বুঝতে পারছেন আপনি?আমি কতটা ভয় পেয়েছি।
” কি বলেছিলাম মনে নেই?প্রমান করবো এই উজ্জ্বলের কলিকাতা হারবাল লাগবে কি না।একদম প্রেক্টিক্যালি বুঝিয়ে দিব।এখন তো আমার মনে হচ্ছে তোর কলিকাতা হারবাল লাগবে।”
” বাজে কথা বলবেন না উজ্জ্বল ভাই।”
” ওও আমি বললেই বাজে!ঠিক আছে তুই যতদিন না প্রস্তুত হচ্ছিস এই উজ্জ্বল ক্ষুদার্ত থাকবে।আরেকটা কথা উজ্জ্বল ভাই উজ্জ্বল ভাই করলে দ্বিতীয়বার অজ্ঞান করার ব্যবস্থা করে দেব।”
” তাহলে কী ডাকবো?”
” যা ইচ্ছা ডাক তবুও ভাই ডাকিস না।”
রুমু শোয়া থেকে উঠে বসলো।শাড়ি পালটে তাকে ঘুমাতে হবে আয়নায় নিজেকে দেখে ভারি অস্বস্তি হলো।সারা ঠোঁটে লিপস্টিক লেপ্টে।অপরদিকে বিছানায় থাকা গোলাপের পাপড়ি গুলোর দিকে ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে উজ্জ্বল।এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে গোলাপের পাপড়িগুলো তার পরিস্থিতি দেখে হামাগুড়ি দিয়ে কাঁদছে।
রুমু বেশ কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো।উজ্জ্বল তার ভেজা চুল দেখে ভ্রু কুচকে বলে,
” গোসল করলি কেন?আমি কিছু করেছি?”
” গোসল করলে রাতে ঘুম ভালো হবে।আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন?”
” কই?আমি রেগেছি?”
” আমি ঘুমাবো সরুন তো।পারলে ঝাড়ু দিয়ে ফুলগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিন।”
” তোর মায়া লাগছে না রুমু? আজ আমাদের… “
” আমাদের কি?আমি বাচ্চা মেয়ে এসব…’
” ফাজিল মেয়ে তুই বাচ্চা?তুই যে একেরপর এক রিলেশনে গেলি তখন কি তুই বুড়ি ছিলি?এই উজ্জ্বলকে প্রমান করার সুযোগ দে প্রমান করে দেব তুই বাচ্চা না তুই বাচ্চার মা হওয়ার ক্ষমতা রাখিস।”
রুমু প্রত্যুত্তর করলো না বরং চুপচাপ শুয়ে পড়লো সে।উজ্জ্বল আশাহত নয়নে তাকিয়ে রইল রুমুর পানে।একবার ছুঁয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়েছে দ্বিতীয়বার ছুঁয়ে দিলে যে কী হবে ভাবতেই ঢোক গিললো উজ্জ্বল।
সময় তো স্থির নেই সে গড়িয়ে গেল।মাঝ রাতে এখনো জেগে আছে উজ্জ্বল সে তাকিয়ে আছে রুমুর পানে।উজ্জ্বল ছোট বেলা থেকে একটা বিষয় খেয়াল করেছে যতই সে হাসিখুশি ভাবটা ধরে রাখুক কখনো সে ক্ষুধা,রাগ,জেদ,কান্না,হাসি কন্ট্রোল করতে পারে না।যখন যা মাথায় এসেছে করেছে,যা মনে হয়েছে দরকার তা ছিনিয়ে নিয়েছে।আর বিয়ের পর বুঝতে পারলো এখনো তার কোন কন্ট্রোল নেই।এই যে বিছানায় শুয়ে থাকা ফুটফুটে বউটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু সে তো পারছে না।
উজ্জ্বল আর বসে থাকলো না।উঠে গিয়ে রুমের বাইরে গেল এবং ফিরলো ঝাড়ু হাতে।বিছানা ঝেরে ফ্লোরে থাকা সব ফুলের পাপড়ি ঝাড়ু দিয়ে ডাস্টবিনে ফেললো।হাত মুখ ধুয়ে এসে শুয়ে পড়লো রুমুর পাশে।মনে মনে বার বার বললো। ” সোনায় সোহাগা কপাল আমার।”
.
বেশ সকাল সকাল রুমু ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়েছে।গায়ে জড়িয়েছে বেগুনি রঙের সুতির শাড়ি।এই শাড়ি উজ্জ্বল গতকাল এনেছিল।অন্ধকার রুমটায় আলোর সঞ্চার হতে ভ্রু কুচকে নেয় উজ্জ্বল চোখ পিটপিট করে তাকাতে রুমুকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়।
” তুই শাড়ি কেন পড়েছিস?”
” আপনি জানেন না নতুন বউরা শাড়ি পড়তে হয়।”
” নতুন বউ?হুহ।বরের খোঁজ রাখিস?গতকাল আমি কিছু করিনি তারপরেও চিটপটাং হয়ে পড়লি, আমাকে একা ফেলে ঘুমিয়ে পড়লি।খোঁজ রেখেছিস আমার?”
” আপনি কি বাচ্চা?”
” হুহ নাদান বাচ্চা।একসময় মাকে জ্বালিয়েছি এখন বউকে জ্বালাবো।”
রুমু প্রত্যুত্তর করলো না।উজ্জ্বলকে তাড়া দিয়ে বলে,
” উজ্জ্বল ভাই আপনার কিডনি দিয়ে আমাকে কয়েকটা ছবি তুলে দিন।”
” কিডনি মানে?”
” আইফোন।”
বউয়ের আবদার ফেলা যায়?উজ্জ্বল উঠে এলো ঘুম ঘুম চোখে রুমুকে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে দিল।রুমুর একেরপর এক রংঢং উজ্জ্বলকে পাগল করে তুলছে।বেচারা এবারেও ধীরে ধীরে কন্ট্রোল হারাচ্ছে।রুমু ফোনটা নিয়ে কিছুটা দূরে রাখলো এবং উজ্জ্বলকে বললো,
” আসুন একটা রোমান্টিক পোচ দিয়ে ছবি তুলি।আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন আমি টাইমার সেট করে দিয়েছি ছবি উঠে যাবে।”
রুমু দ্রুত ক্যামেরা ক্লিক করে উজ্জ্বলের পাশে দাড়ালো।তাকালো উজ্জ্বলের চোখে। অপলক দৃষ্টিতে দু’জোড়া চোখ আটকে গেল এদিকে উজ্জ্বল ক্রমশ ঘোরে পড়ছে শিরায় উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ছে অনামিক অনুভূতি।বদ স্নায়ুটা তাকে বার বার নির্দেশ দিচ্ছে এই মেয়েটা তার বউ এক্ষুনি মেয়েটাকে কিস করা উচিত এক্ষুনি।উজ্জ্বল নিজেকে সামলাতে পারলো না রুমুর দু’গাল আঁজলায় পুরে ঠোঁটে ঠোঁট মেশালো।নিজের কন্ট্রোল হারালো সে এলোপাতাড়ি চুমুতে ভরিয়ে দিল মেয়েটাকে।রুমু বাঁধা দিতে গিয়েও পারলো না উজ্জ্বলের করুন চাহনি তাকে বশ করেছে।হঠাৎ দরজায় করাঘাতে রুমু ছিটকে দূরে সরে সেই সাথে ভড়কে যায় উজ্জ্বল নিজেও।
হঠাৎ বাঁধায় ছেলেটার গায়ের কাঁপুনি কিছুতেই কমে না।দু’হাতের সাহায্যে নিজের চুল খামছে বলে,
” এত বাঁধা কেন?
কেন? কেন?কেন?একটু কিছু করতে দে দে দে।সব সহ্য হয় রোমান্সে বাঁধা সহ্য হয় না এই কথা আমি কাকে বোঝাবো?ওহ গড!”
চলবে…