#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২১]
উজ্জ্বল ভাইয়ের সল্প সময়ের মজা যে অন্য দিকে মোড় নেবে কে জানত?গতকাল প্রফাইলের পিকটি হঠাৎ ভাইরাল হয়ে যায়।নানান পাবলিক পেইজে তাদের নিয়ে চলছে মাতামাতি এইছাড়াও কেউ কেউ ফেসবুক প্রফাইলটি শেয়ার করে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।যদিও সবাই মজার ছলেই নিয়ে ছিল ব্যপারটি।ভাইরালের ব্যপার নিয়ে রুমুর কোন ভাবাবেগ নেই।উজ্জ্বল ভাই যে এমন একটা কাজ করতে পারে কখনো তার ভাবনায় আসেনি।ভাইরাল ছবিটি দেখে রাশেদ,হিমেল বেজায় চটে আছে তাদের সুখের সম্পর্ক ওদের কাছে যেন বিষ ফোঁড়া।
সামনে ফাইনাল পরিক্ষা।এভাবে আর কতদিন ঘর বন্দি থাকা যাবে?পড়াশোনায় ব্যাপক হচ্ছে বিধায় উজ্জ্বল রুমুকে নিয়ে আজ কলেজে গেল।
উজ্জ্বলের বাইকে চড়ে কলেজের সামনে নামতেই পরিচিত সবাই তাদের দিকে অবাক পানে তাকিয়ে আছে।তাছাড়া ভাইরাল ছবিটির কথা কেউ ভুলেনি সবার মাঝেই কানাঘুষা চলছে।রুমু বাইক থেকে নামতে উজ্জ্বল আদেশ সুরে বলে,
” আমি ফোন করা ছাড়া কলেজ মাঠেও আসবি না।ক্লাসে বসে থাকবি।এতদিন কি কি করিয়েছে সব নোট’স নিবি সুরাইয়ার কাছ থেকে।আমি আবার নিতে আসবো।”
” ঠিক আছে।তুমি ক্লাসে যাবে না?”
” না।কাজ আছে।আমি ফোন করলে বের হবি দুপুরের খাওয়া সেরে বাসায় যাব।”
“আমি তাহলে ক্লাসে যাই।”
” যা।”
রুমু চলে গেল ক্লাসে।উজ্জ্বলের মাথা ভরতি চিন্তারা বাসা বেঁধেছে।বাবার কি এখনো রাগ পড়বে না?তিনি কি তার জেদে অটল থাকবেন!এই মুহূর্তে কিছু তো উজ্জ্বলকে করতেই হবে রুমুর পড়াশোনার খরচ এছাড়াও অন্য খরচের তো কমতি নেই।উর্মি আপা বলেছে চিন্তা করতে হবে না খরচ তারা দেবেন কিন্তু বোন দুলাভাইয়ের কাছ থেকে কতদিন হাত পেতে নেওয়া যায়?
যেভাবে এসেছিল সেই ভাবে আবার চলে গেল উজ্জ্বল।নিয়ম মাফিক এভাবে কেটে গেল আরো সাতটি দিন।উজ্জ্বলের সংসারে ভালোবাসার কমতি নেই মিলেমিশে চলছে তাদের পুতুল পুতুল সংসার।সৈয়দ শামসুল রেগে থাকলেও নার্গিস কিছুটা দমে গেছেন।মাঝে মাঝে তার রান্না করা খাবার আড়ালে উজ্জ্বলের রুমে রেখে যান রুমুর সাথেও ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলেন।মনকে বুঝিয়ে তিনি উত্তর পায় না কার উপর রাগ করবেন তিনি?
ছেলের বউয়ের উপর?ছেলের বউটাকেও তো ছোট বেলা থেকে নিজ হাতে গড়ে মানুষ করেছেন।সেই ছোট্ট রুমু চাচি আম্মা বলে যতটা পাগল ছিল নিজের মায়ের জন্যেও ততটা পাগল ছিল না।অপরদিকে উজ্জ্বলের উপর রাগ দেখাবে?বুঝ হওয়ার পর থেকে উজ্জ্বলের একটাই কথা সৈয়দ বাড়ির বউ রুমু হবে আর কেউ নয়।
দুজন যখন দুজনকে মেনে নিয়েছে তখন তাদের রাগ করাতে কি যায় আসে?এসব যুক্তি সৈয়দ শামসুলের কাছে খাটে না।তিনি তার যুক্তিতে অনড়।
.
উজ্জ্বলের বুকের কোণে লেপ্টে শুইয়ে আছে রুমু।মেয়েটার উদাম শরীরে তর্জনির আঙুলের সাহায্যে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুমুকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে উজ্জ্বল।সূর্য্যি মামা জানলার পর্দা গলিয়ে আলোর তীর্যক রশ্মি ফেলছে।নিস্তব্ধ রুমটায় রুমুর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিধ্বনি শোনা যায়।
” রুমু রুমু।”
নরম স্বরে ডাকল উজ্জ্বল।কলেজে পরিক্ষা চলছে এতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকলে উঠবে কখন, রেডি হবে কখন,
আর যাবে কখন।উজ্জ্বল রুমুকে শরীর থেকে সরাতে চায় কিন্তু অবাধ্য রুমু উজ্জ্বলের গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে রয়।
” রুমুরে উঠ না পরিক্ষা দিতে যাবি না?”
” আরেকটু ঘুমাই।শরীরটা ভালো লাগছে না।”
” অজুহাত দিবি না রুমু।”
রুমু পিটপিট চোখে তাকায় উজ্জ্বলের পানে।এতদিন অজুহাত দেখালেও তার শরীরটা আজ সত্যিই ভালো লাগছে না।মাথাটা কেমন ঘুরছে সারা শরীর মেজমেজে করছে।
রুমুর মায়াময় চাহনি উজ্জ্বলকে ঘায়েল করে।অতি যত্নে পরপর বেশ কয়েকবার ওষ্ঠ ছোঁয়ায় রুমুর গালে।
” উঠে যা চুমু বউ।”
” আরেকটু শুই?ভালোলাগছে না।”
” কেন?”
রুমু প্রত্যুত্তর করে না।গায়ের কাঁথা টেনে আড়মোড়া কাটিয়ে বলে,
” আজকের পরিক্ষাটা না দিলে কিছু হবে না।সব তো দিলাম।”
” রুমু উঠ।নাটক করিস না তো।”
রুমু উঠে বসল তবে তার আগে বিরক্তি নিয়ে উজ্জ্বলের গালে কামড় বসাল।উজ্জ্বল অবাক হয় না রুমুর এটা পুরোনো অভ্যস।অন্তত বিয়ের পর থেকে এই মেয়েটার কামড় খেতে খেতে কুকুর দেখলে এখন আর ভয় লাগে না।আচ্ছা রুমু যদি উজ্জ্বলের এই কথা জানে নিশ্চয়ই রাগারাগি করবে।উজ্জ্বল হেসে উঠে বসে।
” ডার্লিং উঠে যান।আমাকে কনভেন্স করে লাভ নেই আমি এখন রোমান্টিক মুডে নেই সিরিয়াস মুডে আছি।”
” আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।”
” উঠে যা।পরিক্ষা শেষে আমি নিতে আসবো যেহেতু পরিক্ষা শেষ আজকে আমরা বাইরে খাবো ঠিক আছে?”
” ঠিক ভুল সবটাই আপনি বিচার করেন আমি আর কি বলবো?”
রুমু রাগ দেখিয়ে উঠে যায় তাতে উজ্জ্বল হাসে।
.
আজকে রুমুর পরিক্ষাটা আগে আগে শেষ হয়েছে।মেয়েটা কাগজ জমা দিয়ে কলেজের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে।মাঠে যাওয়ার ইচ্ছে জাগলেও একা মাঠে যাওয়া তার জন্য নিষিদ্ধ আর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উজ্জ্বল।হঠাৎ দপ্তরি এসে রুমুর খোঁজ করলেন যেহেতু রুমু ক্লাসের আশেপাশে ছিল তাই সুরাইয়া দেখিয়ে দিল রুমুকে।দপ্তরি রুমুকে দেখে বলেন,
” তোমার গার্জিয়ান এসেছে আমার সাথে আসো।”
” আমার গার্জিয়ান কে?”
” আসলে দেখতে পাবে।”
রুমু দপ্তরির পেছন পেছন যায় ভেবেছিল উজ্জ্বল এসেছে তবে এত তাড়াতাড়ি আসার তো কথা নয়।অফিস কক্ষের সামমে এসে রুমু দেখা পেল তার ভাবীর।আনিকাকে দেখে মেয়েটা চমকে যায় মুখ ফুটে কিছু বলার আগে আনিকার অশ্রুসিক্ত চাহনি দেখে কলিজাটা মোচড় দেয়।
” ভাবী কি হয়েছে?”
” আম্মা আর নেই রুমু।”
” নেই মানে?”
” আম্মার এক্সিডেন হয়েছে।অবস্থা খুব খারাপ আব্বা বলল তোকে নিয়ে যেতে।যেকোন সময় অঘটন হয়ে যাবে। তুই আমার সাথে চল।”
” এসব কি বলছো।আম্মার কিছু হবে না।”
” তুই চল রুমু।আব্বা বলল তোকে নিয়ে যেতে।”
” কিন্তু উজ্জ্বলকে ছাড়া আমি যাব না।উজ্জ্বল আর কিছুক্ষণ পরেই আসবে।”
” এখন উজ্জ্বল তোর সব আমি জানি।কিন্তু তুই তোর মাকে শেষ দেখা দেখবি না?যত যাই হয়ে যাক মা তো মাই।”
রুমু কান্না পেয়ে যায়।নিজেকে না দমাতে পেরে মেয়েটা কেঁদেও ফেলে।অবশেষে উজ্জ্বলের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে দিয়ে রুমু আনিকার সহিত বেরিয়ে যায়।
.
প্রায় আধাঘন্টা পর কলেজে এসে উপস্থিত হয় উজ্জ্বল।সুরাইয়ার কাছে জানতে পারে রুমু বেরিয়ে গেছে দপ্তরি নাকি তাকে খুঁজেছে।উজ্জ্বল দপ্তরির কাছে যোগাযোগ করে জানতে পারে তার ভাবী এসে তাকে নিয়ে গেছে।রুমুর মা নাকি এক্সিডেন করেছে।
কলিজা মোচড় দেয় উজ্জ্বলের রুমুকে নিয়ে যাওয়ার মানেটা উজ্জ্বল যানে।একটা মিথ্যা নাটক সাজিয়ে রুমুকে উজ্জ্বলের আড়ালে নিয়ে গেল!উজ্জ্বল বাইক স্টার্ট দেয় কয়েক মিনিটে পৌঁছে যায় রুমুদের বাড়ি।উজ্জ্বল কোন কিছু তোয়াক্কা না করে রুমুকে জোরে জোরে ডাকতে থাকে উজ্জ্বলের ডাকাডাকিতে উপস্থিত হয় আনিকা এবং রাবেয়া।
তাদের উপস্থিত পেয়ে উজ্জ্বল রাগান্বিত স্বরে বলে,
” আমার বউকে মিথ্যা বলে নিয়ে গেলেন।ঝামেলা করতে চাই না আমার বউকে ফিরিয়ে দিন।”
রাবেয়া তেতে উঠলেন।
” কে তোর বউ?”
” জানেন না?আপনার একমাত্র মেয়েকে এখানে এনে হাজির করুন।আমি প্রেক্টিক্যালি বুঝিয়ে দিব কে আমার বউ।”
চলবে..