#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২৮]
” পরিক্ষা কেমন হয়েছে?”
” ভালো।”
” শুধু ভালো?”
” নাহ ভীষণ ভালো।”
রুমু ঘেমে একাকার অবস্থা।পরিক্ষার কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে হাটছে উজ্জ্বলের পাশাপাশি।চারিদিকে ভীড় সবার সাথেই অভিভাবক এসেছে বোর্ড পরিক্ষার সময় এই ভীড়টা অস্বাভাবিক কিছু না।রুমুর এক মুহূর্তের জন্য মনে হয় পরিক্ষা তাদের না অভিভাবকদের কেননা ডানে বামে যেদিকেই তাকানো হয় শিক্ষার্থীর তুলনায় অভিভাবকের সংখ্যা বেশি।ক্লান্ত শরীর টেনে বাইকে চড়ে বসল সে।রাস্তায় তাদের জ্যামে পড়তে হয়েছিল অনেকটা সময়।এর মাঝেই রুমুর আবদার করে বলে,
” উজ্জ্বল চলেন বার্গার খাই।”
” দুপুরে বার্গার খাবি!আম্মা তোর জন্য রান্না সেরে অপেক্ষা করছে।”
” আরেহ আমার ক্ষুধা পেয়েছে বাড়ি ফিরতে অনেকটা সময় লাগবে চলেন না।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”
উজ্জ্বল রুমুকে নিয়ে কাছের একটি রেস্টুরেন্টে গেল।দুজনে হাত মুখ ধুয়ে খাবার অর্ডার করে বসল।উজ্জ্বলের কাছে রুমুর ফোন ছিল তাই এত ঘন্টা পর ফোন হাতে পেয়ে জহুরি চোখে কিছু একটা দেখছে।উজ্জ্বল ভ্রু কুচকে রুমুর প্রশ্নটা দেখছে আজকে রুমুর বাংলা পরিক্ষা ছিল।
” এই রুমু এমসিকিউ সব হবে তো?”
” হবে না মানে ফুল মার্ক পাবো দেখবেন।”
” আচ্ছা দেখা যাবে।তোকে কয়েকটা এমসিকিউ জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিবি দেখি কি দাগিয়ে এসেছিস।”
” আরে করেন করেন বাংলায় এ প্লাস নিশ্চিত থাকুন।”
” অপরিচিতা গল্পের কথক কে?”
” কল্যাণী।”
” কি!কল্যাণী!আমি তোকে কল্যাণী পড়িয়েছি?”
” নয়তো কী?”
” মাসি-পিসি গল্পের মূল বিষয় কী?”
” যৌতুকপ্রথা।”
” তুই আমার সাথে তামশা করছিস?এসব কি দিয়েছিস!মাসি-পিসি গল্পের মূল বিষয় নারী জীবনের অস্তিত্বের সংকট।”
” ও হ্যাঁ তাই তো।দেখলেন ভুল করে এলাম।”
“আশ্চর্য তোর মাঝে অনুশোচনা জাগছে না?ব্যাপারটা তুই সহজভাবে নিয়ে নিলি!”
” যা হওয়ার হয়েছে এত চিন্তা করে কি হবে?সবচেয়ে বড় কথা আগে ভয় ছিল ফেল করলে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিবে এখন তো আমি বিবাহিত নো টেনশন ডু ফুর্তি।”
উজ্জ্বল দাঁত খিচে তাকিয়ে রইল রুমুর পানে অপরদিকে রুমুর এসবে পাত্তা নেই।রেজাল্ট ভালো হোক বা খারাপ তাতে তার কী?যা হবার হবে।সবচেয়ে বড় কথা সে প্রশ্নগুলোর উত্তর ঠিকঠাক দিয়ে এলেও উজ্জ্বলকে রাগিয়ে দিতে ভুলভাল উত্তর জানাচ্ছে।
কিন্তু রুমু যে আরেক দিকে গন্ডোগোল পাকিয়েছে উজ্জ্বল ভাই যখন জানবে তাকে নিশ্চয়ই কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
বাড়ি ফিরে রুমু গোসল সেরে খেতে বসল।উজ্জ্বল ইদানীং একটু বেশি ব্যস্ত থাকে রেস্টুরেন্টের কাজ চলছে কি না।টিভি দেখতে দেখতে রুমু হাড্ডি মুখে ধরে বসে আছে।হঠাৎ মাথায় থাবা পড়তে ভয় পেয়ে যায় ঘুরে তাকাতে দেখতে পেল রাগী রাগী চোখ করে দাঁড়িয়ে থাকা উজ্জ্বলকে।ছেলেটাকে দেখে রুমুর আত্মার পানি শুকিয়ে যায়।উজ্জ্বল ভাই কি তবে জেনে গেছেন ব্যাপারটা?
” তুই আমার গাওয়া গান আপলোড করলি কোন সাহসে?”
যা ভয় পেয়েছিল তাই হলো।সেদিন উজ্জ্বল যে ছাদে গান গাইলো সেই গান রুমু একটি পাবলিক গ্রুপে পোস্ট করেছে।একদিনের মধ্যেই হঠাৎ গানটা ভাইরাল হয়ে যায় সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ে।
” এত রেগে যাচ্ছেন কেন?”
” রেগে যাচ্ছি মানে!রাগের তুই দেখলি কি?তুই জানতি না আমার এসব পছন্দ না।”
” আমি কি জানতাম ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যাবে।”
“রুমু ভিডিওটা ডিলেট কর।”
” করব না।এই যে মুরগির হাড্ডির কসম ডিলেট করব না।”
উজ্জ্বল এবার দ্বিগুন রেগে গেল।তাদের ঝগড়ার মাঝে উপস্থিত হয় নার্গিস তিনি আড়ালে শুনেছেন তাদের বাক্যালাপ।নার্গিস নিজেও ছেলের গানটা শুনেছেন তাকে রুমুই দেখিয়েছেন।ছোট বেলা থেকেই উজ্জ্বলের গান গাওয়ার নেশা ছিল সেই নেশাটাকে পুনরায় উজ্জীবিত করার বাসনা জাগছে নার্গিসের মনে।মূলত উজ্জ্বলের বাবা গান পছন্দ করেন না তাই ছেলেটাকে এসব ছাড়তে হয়েছে।
রুমুর সাথে তর্কাতর্কির মাঝে নার্গিস বলেন,
” উজ্জ্বল এই ভিডিও ডিলেট হবে না তুই একদম রুমুর সাথে ঝামেলা করবি না।”
” এসবে তুমিও আছো?”
” না।রুমু তো আমাকে ভিডিওটা একটু আগে দেখাল।তোর না গান পছন্দ?তুই গেয়েছিস সবাই শুনে প্রশংসা করেছে এতে ক্ষতি কি?”
উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করে না।যেভাবে এসেছিল সেইভাবেই রাগে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়।
.
উজ্জ্বল ঘোমড়া মুখ করে বসে আছে রুমু বই হাতে নিয়ে টেবিলে বসে তবে তার পড়া হচ্ছে কম উজ্জ্বলকে দেখা হচ্ছে বেশি।দুপুরের রাগারাগির পর উজ্জ্বল রাগ দেখিয়ে কথা বলছে না অথচ ঠিকি রুমুকে পড়ার জন্য ইনিয়েবিনিয়ে বলে যাচ্ছে, ধাপে ধাপে হুমকি দিচ্ছে।
” উজ্জ্বল।”
” পড়তে বলেছি।”
” কোথা থেকে পড়ব?আম গাছ নাকি জাম গাছ?”
” ফাজলামো না করে পড়তে বস।”
” বুঝতে পারছি না,পড়তে বসবো নাকি জামাইর কোলে উঠে বসবো!”
“কোলে নিতেও জানি কোল থেকে আছাড় দিয়ে ফেলতেও জানি।”
” এত নির্দয় হচ্ছেন কেন?রাত বাজে একটা এই সময় কেউ পড়ে?কাল পরিক্ষা নাই আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাব।”
” ঘুম টুম বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিন এখন পড়ার সময় পড়ুন।”
রুমু উজ্জ্বলের কথা পাত্তা দিল না।বইটা বন্ধ করে উঠে বসল উজ্জ্বলের কোলে।পড়াচোর রুমুর আদর আদর ভাবের কথা বেশ ভালো করেই জানা আছে উজ্জ্বলের যখনি পরিক্ষা শেষ হবে তখনি রুমু আগের রূপে ফিরে আসবে তখন উজ্জ্বল কাছে ঘেঁষলেও পালাই পালাই করবে।
” উজ্জ্বল রেগে আছেন?”
” সর সামনে থেকে।”
” সরব না।”
” না সরলে ছুড়ে ফেলব।”
” এতটা নির্দয় কবে হলেন?”
” পড়তে বস তোকে পড়তে দেখলে শান্তি লাগে।”
” উহ, শান্তি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি।”
” তুই আমাকে বশে আনার চেষ্টা করছিস তাই না রুমু?এসব ছলছুতা করে লাভ নেই।উজ্জ্বল তোর কথায় গলবে না।”
রুমু ঠোঁট বাঁকাল।উজ্জ্বলের পরনে ছিল শাট মেয়েটা একে একে সব বোতাম খুলে দিল।উজ্জ্বলের লোমশ বুকে মাথা রেখে বলে,
” ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম।”
” এটা তোর ঘুমানোর জায়গা?”
” ইসস ঢং নাটক করছে।ঠিকি তো টেনে টেনে বুকে জড়ান এখন ভাবটা করছে এমন যেন… “
উজ্জ্বল রুমুকে না ধরেই উঠে দাঁড়াল।অল্পের জন্য ছিটকে পড়তে নিলে মেয়েটা দ্রুত হাতে উজ্জ্বলের গলা জড়িয়ে,কোমড়ে পা গুজে নিজেকে রক্ষা করল।রুমু কান্নার সুরে বলে,
” এবার কিন্তু খুব বেশি বেশি হচ্ছে।আমি কিন্তু চলে যাব বাপের বাড়ি।”
” বেশি বেশি এখন হবে।”
উজ্জ্বল রুমুকে ছুড়ে ফেলল বিছানায়।দ্রুত বাতি নিভিয়ে এগিয়ে এলো রুমুর কাছে।
” কন্ট্রোলে ছিলাম কেন যে এসব করিস।”
” উজ্জ্বল আ..আমি ঘুমাব।শুভ রাইত আমি কাইত।”
রুমু উজ্জ্বলকে সরিয়ে দিতে চাইলে উজ্জ্বল উলটা তাকে চেপে ধরে।ঘুট ঘুটে অন্ধকার কক্ষে কেউ কাউকে দেখার সুযোগ নেই।রুমু ঢোক গিলে উজ্জ্বলকে ইনিয়েবিনিয়ে অনেক কিছু বোঝাতে চাইলেও উজ্জ্বল বাঁধা মানে না।রুমুর গলায় মুখ ডুবিয়ে স্থির হয় সে।উজ্জ্বলের একেরপর এক ছোঁয়ায় ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠে মেয়েটা শ্বাস আটকে আসার উপক্রম হলে উজ্জ্বল ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।নিজের ভুল বুঝতে পেরে রুমুর কপাল চাপড়াতে মন চাইল।একবার উজ্জ্বল কন্ট্রোল হারানো মানে সারারাত উজ্জ্বলের দখলদারিতে থাকা।
অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল উজ্জ্বলকে সরিয়ে দিতে চাইলেও আর সরাতে পারল কই?দেহের নেশায় বুদ হয়ে থাকা দুটি সত্তা তখন শীৎকার ধ্বনিতে মেতে।মাঝ রাতে থেকে থেকে কুকুর ডাকছে উজ্জ্বল উঠে বসল পরপর রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে তাকিয়ে রইল রুমুর পানে।অন্ধকারে মুখখানি দেখা না গেলেও উজ্জ্বল ঠাহর করার চেষ্টা চালাল।
উজ্জ্বলকে উঠে বসতে দেখে রুমু নিজেও উঠে ঘেঁষে বসল উজ্জ্বলের বুকে।
” রুমু।”
” হু।”
” গানের ব্যাপারটা আব্বার কানে গেলে রাগারাগি করবেন।আমি গান গাই আব্বা একদমি চাননা।”
” কিন্তু আমি চাই।”
” তুই চাইলে তো হবে না।এমনিতেই আব্বার অনেক কাজে বিরোধীতা করেছি।”
” আপনার নিজের সুখের জন্য গানটা আবার ধরুন।আমি তো বলছি না গান নিয়ে পড়ে থাকতে শুধু মাঝে সাঝে গাইবেন।আমি আপনার গানগুলো আপলোড করব জানেন আপনার গলার প্রশংসা কত হাজার হাজার মানুষ করেছে।”
” ভেবে দেখব।”
উজ্জ্বল চিন্তায় বুদ হলো।রুমু শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরল উজ্জ্বলকে।
চলবে…