৪১.
অক্টোবর মাস। ভ্যাপ্সা গরমে জনজীবন অতিষ্ট। হঠাৎ হঠাৎ সাদা মেঘ দেখা যায় আকাশে। তারপর আবার রোদের খেলা শুরু হয়। সারাদিন গরমে কাটলেও রাতের দিকে হালকা ঠান্ডা ভাব শুরু হয়।
কথায় আছে, ভালোবাসার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ইগো। এই ইগোর জন্য মানুষ অনেক সময় কাছের মানুষকে হারিয়েই ফেলে। যারা ইন্ট্রোভার্ট তারা তো হারানোর সময় বুঝতে পেরেও মুখফোটে বলতে পারে না কিছু। আর মলি আর আবিদের ক্ষেত্রে এখন এমন অবস্থা দুইজন ই মন থেকে চায় সব কিছু ঠিক হোক কিন্তু পূর্বের অভিজ্ঞতা এতটাই বাজে যে সেসব স্মৃতি মনে পরলে মলি কখনো আবিদ কে মাফ করার চিন্তা করতে পারে না। অপরপক্ষে আবিদ খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে ভালোবাসার মানুষ টির মন শক্ত পাথুরে রুপান্তর হয়েছে।
কোনো এক সকালে। তিতলির স্কুলে যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে জনাব মোখলেসুর রহমান মলির বাসার কলিং বেল বাজালেন। পেশায় উনি উকিল, আবিদ হাসান চৌধুরীর ব্যাবসাপাতি কিংবা বাড়ি কিংবা সম্পত্তি, সমস্ত কিছুর কাগজ পত্রের ব্যপারে পরামর্শ দাতা। চোখে চিন্তার ছাপ নিয়েই মলির দরজায় দাঁড়ানো। দরজা খুলে দিলো কাজের মেয়ে ময়না। তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা,
মলি মামনি আছেন? ময়না ভেজা হাত ওরনাতে মুছতে মুছতে বলল, জি উকিল চাচা। আছেন তো। আফনে বসেন।
ময়না দ্রুতপায়ে মলির রুমের দিকে ছুটলো। মলি কেবল বিছানা ছেড়ে হাত খোপা করে বারান্দার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। গতকাল রাতের কথা ভাবছিলো। ঘুমের ঘোরে থাকাকালীন মলি টের পেয়েছিলো আবিদ এসেছিলো রুমে। মলি ভীষণ ক্লান্ত থাকায় চোখ খুলতেই পারছিলো না। মলির তখন মনে হচ্ছিলো স্বপ্নই দেখছে সে। তবে মলির পাশে বিছনায় আবিদ বসেছিলো বেশ কিছুক্ষণ। মলির হাত ধরে রেখেছিলো তারপর আবিদের ঠোঁট ছুয়েছিলো মলির দুই হাতের উল্টোপিঠ। যেন স্বপ্নের ঘোরেই দেখলো মলি আবিদ উঠে চলে যাবার আগে মলির কপাল আর দুই চোখ ও ছুঁয়েছিলো। কিন্তু ঘুম কাটছিলোই না। সকাল হতেই বুঝতে পারছে না এটা কি কোনো স্বপ্ন ছিলো নাকি আবিদ আসলেই রুমে এসেছিল। এসব ভাবতে ভাবতেই ময়না এসে খবর দিলো মোখলেছুর রহমান সাহেব ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করছেন।
মাথায় কাপড় টেনে দ্রুত পায়ে মলি ছুটলো সেই দিকে। উনি খুব জরুরী কাজ ছাড়া তো আসেনই না, তার উপর এত সকালে এসেছেন। আসতে আসতে ময়না কে বলল দুই কাপ চা পাঠিয়ে দিও।
আসসালামু আলাইকুম আংকেল। কেমন আছেন আপনি?
মোখলেছুর রহমান ঠোটের হাসি বেশি প্রশস্ত করতে পারলো না, অল্পবিস্তর হাসি রেখেই উত্তর করলো,
ওয়ালাইকুম আসসালাম মা। কেমন আছো? তোমার গান কেমন হচ্ছে?
মলি লজ্জিত ভংগীতে বলল, আংকেল তা তো আপনারা বলবেন কেমন লাগছে আপনাদের কাছে। আমার করা গান আপনি শোনেন তো?
হ্যা হ্যা শুনেছি অনেকবার। আমার বড় মেয়েটা তো তোমার বিরাত ফ্যান। প্রায় ই বলে তাকে তোমার কাছে নিয়ে আসতে আসলে সময় হয়ে উঠে না।
মলি ভদ্রতার হাসি হেসে বলেন, কেন নিয়ে আসেন না আংকেল। আচ্ছা আমি ই একবার সুযোগ করে গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে আসবো ওকে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে মলি ই জিজ্ঞেস করলো।
আংকেল কোনো সমস্যা? এত সকালে এলেন তাও অনেক দিন পর তাই জিজ্ঞেস করলাম আর কি!
মোখলেসুর রহমান চিন্তত ভংগীতে বলল, আবিদ কোথায়? সে কি বাসায় আছে? ততক্ষনে চা চলে এসেছে,ময়না চা দিতে দিতে বলল,
না, ভাই জান তো বাড়িত নাই। মলি চমকে উঠে বলে, কখন বের হয়েছে?
ময়না বলে, আমি তো কইতে পারি না। সকালে আফনারে ডাকার আগে ভাবলাম ভাই জান রেও বলি উকিল চাচা আসছে। গিইয়া দেখি নাই উনি রুমে।
মোখলেছুর রহমান চিন্তিত ভংগীতে বলে উঠেন, আমি ঠিক এই ভয় টাই পাচ্ছিলাম। উনি উনার ফাইল পত্র ঘেটে বেশ কিছু কাগজ পত্র বের করেন। মলির দিকে কাগজ গুলো এগিয়ে দিয়ে বলেন,
এই নাও, আমি এসেছি এই কাগজগুলো বুঝিয়ে দিতে।
মলির হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কি হচ্ছে এসব, কিসের কাগজ, ডিভোর্স পেপার নাতো। মলি রীতিমতো ঘেমে উঠছে। পেপার গুলোর দিকে তাকিয়েই আছে নেবার নাম গন্ধ নেই। মোখলেছুর রহমান বুঝতে পারছেন মলির মনের অবস্থা। তাই উনি আবার বলে উঠলেন,
আগে হাতে নাও, আমি সব বুঝিয়ে বলছি। মলি হাতে নিলো কাগজপত্রগুলো। কিন্তু সেদিকে কোনো মন নেই, তার মন মস্তিষ্ক জুরে আবিদ কি করতে পারে এই প্রশ্ন খেলা করছে। এবার সে অসহায় ভংগীতে বলল,
এগুলো কি ডিভোর্স পেপার আংকেল? উকিল সাহেব মাথা এদিক উদিক দুলিয়ে না বলে উঠে।
এগুলো সব প্রোপার্টি পেপার। আবিদ কয়েকদিন যাবত ই এসকল পেপার আমাকে দিয়ে রেডি করাচ্ছিলো। এখানে ওর ব্যংক ব্যালেন্স, ওদের ঢাকার বাড়ি সহ আরো বেশ কিছু প্রোপার্টি আর ওর বিজনেস ওনারশিপ ও, সব সব তোমার নামে ট্রান্সফার করেছে। আমি বার বার জিজ্ঞেস করছিলাম কোনো সমস্যা কিনা। ও হাসি মুখে কেবল বলে যাচ্ছিলো না আংকেল কি সমস্যা হবে। যাদের জন্য এসব করছি তাদের ভালোবেসে সব দিয়ে দিচ্ছি। তাছাড়া আর কিচ্ছু না। কিন্তু ও বাসায় না তাহলে গেলো কোথায়। আমাকে আজকে সকালেই আসতে বলল। আসতে আসতে আমি তো বেশ কয়েকবার ফোন দিলাম, সুইচড অফ পাচ্ছি।
মলি যেন এতক্ষণ রুদ্ধশ্বাসকর কোনো এডভেঞ্চার কাহিনী শুনলো। হুস আসতেই আবিদের রুমের দিকে দিলো ছুট। আবিদের রুমে এসে দেখলো আবিদ নেই, এদিক ওদিক তাকিয়ে কি মনে করে আলমারি খুললো, দেখলো কয়েক টা শার্ট ছাড়া মোটামুটি বেশকিছু কাপড় নেই। নেই মেক্সিমাম প্যান্ট গুলো ও। মলি গিয়ে ধপ করে বসে পরে বিছানার এক কোণায়। নি:শব্দে চোখের জল পরছিলো কেবল। হঠাৎ ই চোখ গেলো সাইড টেবিলে গ্লাসের নিচে একটা কাগজের দিকে। মলি হাত বাড়িয়ে নিলো সেটা, চিঠি। আবিদের লিখা শেষ চিঠি।
মলি,
প্রিয়তমা স্ত্রী,
তুমি যখন চিঠিটি পাবে তখন আমি তোমাদের থেকে অনেক অনেক দূরে। আমি সত্যি তোমার চোখের ঘৃণা আর নিতে পারছিলাম না। তাই চলে গেলাম।
আমি এক সময় চেয়েছি তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আপন করে নাও। কিন্তু ইদানীং মনে হয়, নাহ এটাই আমার শাস্তি। তোমার চোখে আমি আর কখনো ভালোবাসা দেখতে পাবো না, এই অবস্থায় আমাকে বেচে থাকতে হবে, কষ্টকর,ভীষণ জ্বালাময় এই দিন গুলো।
তুমি তো জানো আমি যতকিছুই করি, আমার বাচ্চাদের আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি কখনো চাইনি আমার বাচ্চারা ব্রোকেন ফ্যামিলির সদস্য হোক। আবার তোমার ঘৃণার ছিটেফোঁটাও বাচ্চাদের চোখে যেদিন দেখবো সেদিন ই আমার মরণ হবে। ওরা আমার জীবনের কালো অধ্যায় জানুক তা আমি চাই না। ওরা জানুক তাদের বাবা আছে কিংবা মরে গিয়েছে। তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতী,এই ডিসিশন টা তাই তোমাকে নিতে হবে। আমার বেঁচে থাকা না থাকা এখন একি। তাই আমার কথা তাদের কে কিভাবে বলবে সেটা তোমার উপরই নির্ভর করে।
অর্থ প্রাচুর্য কোনো কিছুই আমাকে টানে না। তোমরা আমার ভালোবাসার মানুষ। তোমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তাই সব দিয়ে গেলাম।
মলি, মানুষ ভুল করে, আবার মানুষই শুধরাতে চায়। হয়তো আমাকে বিশ্বাস করতে পারোনি তাই শুধরানোর সুযোগ টাও পাইনি আমি। আমি অনেক রাত ভেবেছি। ভেবে চিনতে মনে হলো তোমার এই নতুন জীবনটাই তোমার ঘুরে দাড়ানোর টার্নিং পয়েন্ট। আমার সাথেই নতুন করে শুরু করতে হবে তা নয়, তুমি দেখিয়ে দিয়েছো জীবন শুধুমাত্র সংসার জীবনেই আটকে থাকে না। তোমার জন্য অনেক শুভকামনা, আর অনেক ভালোবাসা। আমার আধখোয়া সংসার টাকে তুমি আঁকড়ে রেখো, আমার রেখে যাওয়া সন্তান দের নিয়ে। আমার বিশ্বাস এবার তোমার সংসার কানায় কানায় পূর্ণ হবে সুখ আর ভালোবাসায়।
ভাল থেকো।
ইতি, তোমার বাচ্চাদের বাবা।
বি:দ্র: আমি জানি আমাকে খুঁজবে না, তবু যদি খোঁজার চেষ্টা করো, আমার অনুরোধ সময় নষ্ট করো না।
মলি হাতে চিঠি নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। চিঠির পাশেই একটা খাম রাখা ছিলো। খামের ভিতরে একটা ব্রেসলেট। আর ছোট্ট চিরকুট।
” তোমার জন্য হয়তো আমার শেষ উপহার, তোমার সাকক্সেস পার্টিতে দিতে পারিনি, প্লিজ এটা হাতে পরে থেকো সব সময়। আমাকে ক্ষমা করতে হবে না,শুধু এটা গ্রহণ করো। ”
মলি ঢুকরে কেঁদে উঠে, কি থেকে কি হয়ে গেল। একটা মেয়ে বিয়ের সাথে সাথে সোনার সংসারের আশায় ঘর বাধে। এই যদি হয় সংসারের অবস্থা তবে এই সংসার তার চাইনা। যেখানে ভালোবাসা নেই, বিশ্বাস নেই, নেই ভালোবাসার মানুষ টা। কি হবে এমন সংসার দিয়ে। এমন সংসার মলির চাই না, কান্নায় ভেংগে পরলো মলি। কই খুজবে সে আবিদ কে, হারানো মানুষ কে খুজে পাওয়া সম্ভব কিন্তু নিজ থেকে নিখোঁজ হওয়া মানুষকে কোথায় খুঁজবে?
*********
৪২.
সময়…. সময়ের চেয়ে বড় ওষুধ আর জগতে নেই। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যায়। কখনো কখনো পরিস্থিতি অনুকূলে আনার জন্য সময়ের অপেক্ষা করতে হয়। এই সময় টাই মলি পায় নি। আবিদ আরো ধৈর্যশীল হলে মলি সময়ের সাথে সাথে হয়তো কিছুটা সম্পর্ক কে মেনে নেউয়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু এখন যেন জীবনটা খাপছাড়া হয়ে গিয়েছে।
কয়েকবছর পর, তিতলি ক্লাস সিক্সে পরে। তোতন তাও স্কুলে ভর্তি হয়েছে। মলি অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে, মাঝে মাঝে গান টাও করে। তবে গান কে আর প্রোফেশনালী নিতে পারে নি। সারাদিন অফিস সামলে বাচ্চাদের সময় দিয়ে ইচ্ছা করেই একটু দূরে দূরে থাকে গান থেকে। গান নিয়ে সময় কাটাতে চাইলেই মন খারাপের আগমনী বার্তা পায়। পুরো স্মৃতি গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
এখনো ফাহাদ রুমকি আর পলাশের সাথে আড্ডা জমে। সেদিন মলি সেন্স হারিয়ে ফেললে ময়না রুমকি কে খবর দেয়। বাসাতে রুমকি আসলে সব জেনে নিজেও অবাক হয়। আর তারপর খবর দেয়া হয় ফাহাদ আর পলাশকে। একে একে তিন জন ই আবিদের চিঠি পড়ে। তারা কি বলবে ভাষা খুজে পাচ্ছিলো না। আসলে আবিদ এমন টা করবে তা তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবে নি।
ফাহাদের মলির প্রতি দূর্বলতা আছে সেই কলেজ লাইফ থেকে। মলির এমন অবস্থায় ফাহাদ নিজেও বিধ্বস্ত হয়ে পরে। একদিন পলাশই ফাহাদ কে প্রস্তাব দেয়, ফাহাদ যদি চায় তবে সে আর রুমকি মলির সাথে কথা বলবে। কিন্তু ফাহাদ পলাশ কে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বলে,
বিশ্বাস কর,আবার যখন মলির সাথে দেখা হয়েছে তার জীবন সম্পর্কে জেনেছি। আমি সব সময় চেয়েছি সে ভালো থাকুক। প্রথমে আবিদ ভাই এর সম্পর্কে জেনে খারাপ লেগেছিলো, মনে হয়েছিল কেন এই সম্পর্ক বয়ে নিবে। কিন্তু যখন ই ভেবেছি বাস্তবতা অনেক কঠিন। ডিভোর্সি তকমা লাগানো অতটা সহজ না আমরা দূর থেকে যতটা দেখি। তখন ই তোদের সাথে আমি ও বুঝিয়েছি আবিদ ভাই কে ক্ষমা করে দিতে।
আমার মাঝে কখনোই খারাপ ইনটেনশন ছিল না। আমি শুধু চেয়েছি মলি ভালো থাকুক। এত কিছুর মাঝে তুই এমন প্রস্তাব দিলে আমি লজ্জায় তার সামনেই আসতে পারব না কখনো।
তারপর আর কখনো পলাশ ও এ ব্যপারে কথা বলেনি। বন্ধুত্ব সম্মানজনক সম্পর্ক। তাদের চারজনের মাঝেই এই বোঝাপড়া টাই থাকুক আজীবন।
জীবন সংগ্রামে মলি এগিয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন। ব্যবসাপাতির ও অনেক উন্নতি হচ্ছে। গানের জগতেও নিজের অবস্থান করেছে পাকাপোক্ত। এর মাঝেই মলির নতুন এক অফিস খুলেছে। সেখানে নতুন করে নিয়োগে অনেকেই ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। মলি সচরাচর এসব হ্যান্ডেল করে না। আলাদা লোক আছে অফিস নিয়োগের জন্য। কাকতালীয় ভাবে সেদিন ফ্রি থাকাতে সেই ইন্টারভিউ নিচ্ছিলো। তিন চার জন পরেই একজন মহিলা তার চেম্বারে প্রবেশ করলো। এক্সিকিউটিভ অফিসার পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে। মলি কে দেখেই সে সরি বলে বের হয়ে যেতে চায়। পিছন থেকে মলি ডেকে উঠে,
মিস কেয়া, আসুন। প্রফেশনাল লাইফ কে পারসোনাল বানিয়ে দিচ্ছেন কেন?
কেয়া ইতস্তত করে বসলো। পরনে জরজেট শাড়ি। মুখে আগের সেই লাবন্যতা নেই। মলি ই শুরু করলো কথা বলা।
আপনি হঠাৎ এত ছোট পোস্টের জন্য। কেয়া আমতা আমতা করে বলল, সরি আমি জানতাম না এটা আপনার কোম্পানি।
মলি মুচকি হাসলো, এখানে কিন্তু ছেলে বস নেই, চাকরি পেলে করবেন তো?
কেয়া আহত চোখে বলল,আমি উঠি ম্যাম। আপনার সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত।
কেয়া উঠে দাড়ালো। যেতে যেতে কি মনে করে আবার ফিরে এলো, বলল,
আসলে আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। এই বলতে বলতে কেয়া এগিয়ে এসে মলির পায়ে পরে যায়। দুই হাতে মলির পায়ে আঁকড়ে ধরে। তারপর হাও মাও করে কান্না করে বলতে থাকে,
আপনি ক্ষমা না করলে হয়তো আল্লাহ পাক ও আমাকে ক্ষমা করবেন না। আমি আমার পাপের শাস্তি পাচ্ছি। বছর দুই হলো আমি কিডনিজনিত অসুখে ভুগছি। ছেলে টাকে নিয়ে এখন দিন চালানোই মুশকিল। এই অবস্থায় ও তাই চাকরী খুজঁতে এলাম। মলি উঠে দাঁড়াতে ও পারছে না, কেমন একটা অকওয়ার্ড পরিস্থিতিতে পরে গেল। কেয়াকে টানছে সে তবু কেয়ার উঠার নাম নাই।
কেয়ার চোখ চিক চিক করছে নোনা জলে, প্লিজ, আপনার পায়ে পরি, আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি বাঁচতে চাই, আমার বাচ্চার জন্য হলেও বাচঁতে চাই। আপনার যে ক্ষতি আমি করেছি আমি জানি তার ক্ষমা হয়না। তবু আমাকে মাফ করে দিবেন। কেয়া বের হয়ে গেলো।
মলি অবাক নয়নে সব টা দেখলো শুনলো জানলো। কেয়াকে কিছু বলার সুযোগ পেল না মলি। অতীত ঘাটাতেও ইচ্ছে করলো না আর। আবিদের ছবিটা টা টেবিলের এক সাইডেই রাখা। মলি হাতে নিলো। তারপর বিরবির করে বললো
তোমাদের সবাই কে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু তাতে কি আর আমার সোনার সংসার ফিরে পাবো? তোমরা তো ক্ষমা পেলে, কিন্তু আমার বাচ্চারা কি বাবার আদর পাবে? কিংবা আমি কি আমার স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত নই? আবিদের ছবিটি উল্টিয়ে রেখে দিলো মলি। চোখ মুছে বলল, আজ থেকে তোমার প্রতি আমার আর কোনো রাগ নেই আবিদ। নেই কোনো অভিযোগ। তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। আমার বিশ্বাস যে বাচ্চাদের জন্য তুমি আমি সেপারেশন এ যেতে চাইনি সেই বাচ্চাদের জন্য হলেও তুমি ফিরে আসবে। সেটা কবে তা জানিনা তবে আমার মন বলছে তুমি ফিরে আসবে। আমি অপেক্ষায় থাকবো আবিদ। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা আমি যেনো ততদিন বেঁচে থাকি।
সমাপ্ত।
বি:দ্র: বানান চেক করার সময় পাইনি। আপনাদের সবাই কে ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। অনেকের ই অপছন্দ হতে পারে গল্পের শেষ টা। নেগেটিভ পজিটিভ যেমন ই হোক জানাবেন কেমন লাগলো। বাস্তবতা দেখাতে চাইলে হয়ত সেপারেশন অথবা সব মেনে নিয়ে সংসার করতে হবে মলির। আমি চেয়েছি দুপক্ষই অপেক্ষা করুক। আবিদ অপেক্ষা করুক মলির ক্ষমা পাবার কিংবা মলি অপেক্ষা করুক আবিদ ফিরে আসার। অপেক্ষা যে ভালোবাসার শুদ্ধতম পরীক্ষা।