দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ থাকার পর ভাতিজা ফিরে এসেছে। এই খবর শুনে শব্দরের বুকের ভেতর আনন্দের ঢেউ খেলছে। তার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে অপার খুশির ছাপ। কিন্তু সেই আনন্দের রেশ বেশিক্ষণ টিকল না। নিচ তলায় নেমে আসতেই শব্দরের চোখে পড়ল সুফিয়ানের গম্ভীর মুখচ্ছবি, চোখে মুখে ফুটে উঠেছে এক অদ্ভুত রাগের ছাপ। তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে, মুখমণ্ডল ধারণ করেছে এক অগ্নিবর্ষী রূপ। নিশ্চয়ই কোনো অঘটন ঘটেছে।
শব্দর কিছু বলার আগেই সিঁড়ি থেকে জাওয়াদের পদশব্দ ভেসে এল। ধীর পদক্ষেপে জাওয়াদ নামছে। তার চলনে আত্মবিশ্বাস, যেন সে কারো পরোয়া করে না। শেষ সিঁড়িতে পা রাখতেই জাওয়াদ গলা উঁচিয়ে ডাকল, “মনির!”
মনির দ্রুত ছুটে এল। জাওয়াদ তাকে নির্দেশ দিল, “রাই আর আমার খাবার উপরে দিয়ে যা। আমরা ওপরেই খাব।”
এই কথা বলেই জাওয়াদ আবার সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায়। তখনই শব্দর এগিয়ে এল তার দিকে। ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে সুফিয়ানের গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “জাওয়াদ!”
সুফিয়ানের গলায় কর্তৃত্বের সুর।জাওয়াদ ধীরে ঘুরে দাঁড়াল। তার চোখে ফুটে উঠল অবহেলার ভাব।
স্বামীর এই গম্ভীর আহ্বান শুনে ললিতাও বেরিয়ে এল পাশের ঘর থেকে। তার পেছনে খাস দাসী রেণু।
সুফিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, “জাওয়াদ, তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে। বৈঠকখানায় এসো।” রেগে গেলে তিনি পুত্রকে তুমি করে বলেন।
জাওয়াদ অনিচ্ছা সত্ত্বেও পিতাকে অনুসরণ করে। হঠাৎ তার চোখ পড়ল শব্দরের দিকে। শব্দর হাসি মুখে এগিয়ে এল জাওয়াদের দিকে, “জাওয়াদ, বাবা!” বলে কোলাকুলি করতে উদ্যত হয়।
কিন্তু জাওয়াদ যেন পাথর হয়ে গেছে। সে এক পা পিছিয়ে যায়, চাচার আলিঙ্গন এড়িয়ে। শব্দরের মুখের হাসি মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল, চোখে ফুটে উঠল গভীর আঘাতের ছাপ। শব্দর হতভম্ব। সে বিশ্বাস করতে পারল না দৃশ্যটি। জাওয়াদ তার নেওটা। মনের পর্দায় ভেসে উঠল অতীতের স্মৃতি, রাজধানী থেকে ছুটিতে এলে জাওয়াদ কীভাবে তার সঙ্গে সময় কাটাত, কত গল্প করত, কত আবদার করত। চাচা-ভাতিজার সম্পর্ক ছাপিয়ে তারা ছিল দুই বন্ধু। শব্দরের চোখে জল এসে গেল। সে বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জাওয়াদের দিকে, মনে মনে প্রশ্ন করছে – “কেন, বাবা? কী হয়েছে তোর?”
জাওয়াদের চোখেও একটু জল চিকচিক করে ওঠে, সে দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিল।
বৈঠকখানার দরজা খুলে গেল। সুফিয়ান ভারী পদক্ষেপে ঘরে ঢুকলেন। তার মুখে কঠোর ভাব, চোখে দৃঢ় সংকল্প। তিনি তার নির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বসলেন। সেই আসন যেখান থেকে তিনি বহু বছর ধরে এই পরিবার, এই সম্পত্তি শাসন করে আসছেন।
জাওয়াদ ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকল। তার চোখে এখন একটা অদ্ভুত দৃঢ়তা।
সুফিয়ান শুরু করলেন, “জাওয়াদ, এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস তুমি জানো। আমাদের পূর্বপুরুষেরা কঠোর পরিশ্রম আর সম্মান দিয়ে এই সম্পদ গড়ে তুলেছেন। আমাদের রয়েছে একটা মর্যাদা, একটা ঐতিহ্য।”
জাওয়াদ বিরক্তিভরে বলল, “আবার সেই পুরনো কথা! আমি জানি, বাবা।”
সুফিয়ান কঠিন সুরে বললেন, “না, তুমি জানো না। যদি জানতে, তাহলে এমন একটা অপরিচিত মেয়েকে নিয়ে আসতে না। এটা আমাদের মর্যাদার পরিপন্থী।”
জাওয়াদ উত্তেজিত হয়ে বলল, “রাই কোনো অপরিচিত নয়। সে আমার বন্ধু।”
সুফিয়ান দৃঢ়তার সাথে বললেন, “বন্ধু? একজন অবিবাহিত যুবতীকে তুমি এভাবে বাড়িতে নিয়ে আসবে? এটা আমাদের সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। লোকে কী বলবে?”
জাওয়াদ অবহেলার সুরে বলল, “লোকে যা খুশি বলুক। আমি কারো পরোয়া করি না।”
সুফিয়ান ক্রোধে গর্জে উঠলেন, “এই তোমার শিক্ষা? এই জন্যই কি তোমাকে রাজধানীতে পাঠিয়েছিলাম? তুমি ভুলে গেছো যে তুমি একটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান?”
জাওয়াদ বিদ্রূপের সুরে বলল, “সম্ভ্রান্ত? এই সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোই তো দেশকে পিছিয়ে রেখেছে। আমি নতুন যুগের মানুষ, বাবা। আমি পুরনো সংস্কার মানতে বাধ্য নই।”
সুফিয়ান গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন, “জাওয়াদ, তুমি বুঝতে পারছ না। আমাদের সমাজে কিছু নিয়ম আছে। আমরা সেই নিয়মের বাইরে যেতে পারি না।”
জাওয়াদ উত্তেজিত হয়ে বলল, “কেন পারব না? কে আমাদের বাধা দেবে? এই নিয়মগুলো তো মানুষই বানিয়েছে। আমরা চাইলে এগুলো বদলাতে পারি।”
সুফিয়ান শান্তভাবে বললেন, “হ্যাঁ, কিন্তু সেটা একদিনে হবে না। সমাজ পরিবর্তনের জন্য সময় লাগে। আর তোমার এই আচরণ সেই পরিবর্তন আনবে না, বরং আমাদের পরিবারের সম্মানহানি করবে।”
জাওয়াদ বিরক্তিভরে বলল, “তাহলে আপনি কী চান? আমি আমার বন্ধু রাইকে চলে যেতে বলব?”
সুফিয়ান দৃঢ়তার সাথে বললেন, “হ্যাঁ, ঠিক তাই। সে এখানে থাকতে পারবে না।”
জাওয়াদ রাগে ফেটে পড়ল, “কী অন্যায় কথা! আমি কখনোই তা করব না।”
সুফিয়ান কঠিন সুরে বললেন, “তাহলে তোমাকেও চলে যেতে হবে। আমি আমার বংশের মর্যাদা নষ্ট হতে দেব না।”
সুফিয়ানের এই কথা শুনে বৈঠকখানার বাতাস থমকে যায়। জাওয়াদের মুখ পাংশু হয়ে গেল। শব্দর এতক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়েছিল, হঠাৎ যেন সম্বিৎ ফিরে পেল। অবাক কণ্ঠে বলল, “কী বলছেন ভাইজান? এ কী কথা বলছেন আপনি? কতদিন পর জাওয়াদ ফিরেছে। আপনি কীভাবে তাকে চলে যেতে বলতে পারেন?”
সুফিয়ান দৃঢ় স্বরে উত্তর দিলেন, “আমাদের বংশের মর্যাদা, আমাদের কুলের মান – এসব রক্ষা করা আমার দায়িত্ব।”
ললিতার হৃদয় কেঁপে উঠল। মনে পড়ল সেই দিনগুলোর কথা, যখন জাওয়াদ ছোট ছিল। কীভাবে সুফিয়ান ছেলেকে কোলে নিয়ে ঘুরতেন, কত আদর করতেন। আর আজ? আজ সেই ছেলেই তার কাছে বংশমর্যাদার চেয়েও কম মূল্যবান।
হঠাৎ তার ভিতর থেকে জেগে উঠল এক অদম্য শক্তি, মাতৃত্বের শক্তি। সে ছুটে গেল জাওয়াদের দিকে, তাকে জড়িয়ে ধরল এমনভাবে যেন কেউ তার সন্তানকে কেড়ে নিতে এসেছে।
“না!” ললিতার কণ্ঠ কেঁপে উঠল, “আমার ছেলে কোথাও যাবে না!”
তার চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে। সে জল শুধু দুঃখের নয়, রাগেরও। সে সুফিয়ানের দিকে তাকাল, তার চোখে জ্বলজ্বল করছে অভিমান আর প্রতিবাদের আগুন। তিনি প্রায় চিৎকার করে উঠলেন, “আমার ছেলেকে কতদিন পর ফিরে পেয়েছি। আপনি এভাবে বলতে পারেন না। আপনি কি জানেন না, এই ছেলের জন্য আমি কত রাত জেগেছি? কত দোয়া করেছি? আর আজ যখন সে ফিরে এসেছে, আপনি তাকে তাড়িয়ে দিতে চান?”
জাওয়াদ এতক্ষণ স্তব্ধ ছিল, ধীরে ধীরে বলল, “ঠিক আছে, বাবা। আমি চলে যাচ্ছি।”
জাওয়াদ ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। ললিতা তখনও তাকে আঁকড়ে ধরে আছে, “না, না আমার ছেলে কোথাও যাবে না। কোথাও যাবে না…”
জাওয়াদ মায়ের হাত সরাতে চেষ্টা করল, “মা, ছাড়ো। আমাকে যেতে দাও।”
ললিতা পাগলিনীর মতো কাঁদতে লাগল, “না, তুই যেতে পারবি না। আমি তোকে ছাড়ব না!” এবার তার কণ্ঠে একটু নরম সুর, “এই ছেলে আপনারও সন্তান। আপনার রক্ত। আপনি কীভাবে তাকে এভাবে ত্যাগ করতে পারেন?”
সুফিয়ান নীরবে দাঁড়িয়ে রইল। তার চোখেও দেখা গেল একটু দ্বিধার ছায়া। কিন্তু তিনি কঠিন হয়ে রইলেন।
ললিতা তখন জাওয়াদের দিকে তাকাল। তার চোখে অসীম মমতা, “বাবা, তুই কোথাও যাবি না। আমি তোকে যেতে দেব না। তোকে ছাড়া আমি বাঁচব কী করে?”
শব্দর আবার বলতে শুরু করল, “ভাইজান, আপনি একটু ভেবে দেখুন। জাওয়াদ তো আর ছোট নেই। ওর নিজের বিবেচনা আছে। আপনি…”
সুফিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শব্দরের দিকে তাকালেন, “তুমি এ কথা বলছো শব্দর?”
চেঁচামেচি শুনে জুলফা ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে। তার মুখে উদ্বেগের ছাপ।
“মা, আমি রাইকে ছাড়া এ বাড়িতে থাকব না। সে আমার জীবনের অংশ। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি,” জাওয়াদ বলল, তার কণ্ঠস্বরে অকম্পিত দৃঢ়তা।
সুফিয়ানের চোখে জ্বলে উঠল রাগের আগুন। তিনি গর্জে উঠলেন, “কী বললে? তুমি কি জানো না যে আমাদের সমাজে এসব গ্রহণযোগ্য নয়? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?”
জাওয়াদের চোখে জ্বলে উঠল বিদ্রোহের আগুন। সে তীব্র স্বরে উত্তর দিল, “আপনার সমাজ! আপনার সমাজ! আমি এই সমাজের বাঁধন ভাঙতে চাই। আমি মুক্ত হতে চাই। কেন আমি নিজের মনের মানুষকে ভালোবাসতে পারব না? কোন অধিকারে আপনারা আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে চান?”
সুফিয়ান ছেলের এই অভূতপূর্ব রূপ দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তার চোখে মুখে ফুটে উঠল বিস্ময় আর হতাশা। তিনি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন, নিজেকে সামলে নিতে। তারপর একটু নরম সুরে বললেন, “মেয়ের বাবা-মাকে ডাকো। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব।”
জাওয়াদ তার বাবার চোখের দিকে সোজা তাকিয়ে উত্তর দিল, “আমি ও’কে বিয়ের আসর থেকে তুলে এনেছি।”
এই কথা শুনে ঘরের সবাই বজ্রাহত হলো। সুফিয়ান সহ সকলের মুখ দিয়ে একসঙ্গে বেরিয়ে এল, “কী বললে?”
জাওয়াদের মুখে ফুটে উঠল অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস। তার মধ্যে কোনো ভয় বা লজ্জা নেই। বরং সে গর্বভরে বলল, “আমি রাইকে তার বিয়ের আসর থেকে নিয়ে এসেছি। কিছুদিনের মধ্যে ওর ভাই আসবে ইংল্যান্ড থেকে। তারপর আমরা বিয়ে করব। আমি জানি এটা আপনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।”
সুফিয়ান বাকহারা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার চোখে মুখে ফুটে উঠল হতাশা, রাগ, আর অসহায়তার এক অদ্ভুত মিশ্রণ। এই অবস্থায় কী যে বলা যায় তিনি ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি একবার ললিতার কান্নায় ভেজা মুখের দিকে তাকালেন, যেখানে ফুটে উঠেছিল মাতৃসুলভ উদ্বেগ। আরেকবার শব্দরের দিকে তাকালেন, যার চোখে গভীর চিন্তার ছায়া। তারপর আবার ছেলের দিকে তাকালেন, যার দৃঢ় ভঙ্গি দেখে তিনি বুঝতে পারলেন, এ ছেলে মত পাল্টাবে না।
সুফিয়ান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। তার হাতের লাঠিটা যেন আরও ভারী হয়ে গেল। তিনি ঠকঠক করে হেঁটে নিজের ঘরের দিকে এগোলেন। তার পিঠের কুঁজোটা যেন আরও বেঁকে গেল।
শব্দর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জাওয়াদকে হেসে বলল, “তুই এখানেই থাকবি। ভাইজান যেহেতু কিছু বলেনি আর…”
জাওয়াদ তার কথা শেষ হওয়ার আগেই মায়ের আলিঙ্গন ছেড়ে দ্রুত পায়ে উপরে চলে যায়। ললিতা অসহায় দৃষ্টিতে শব্দরের দিকে তাকায়। তার চোখে অশ্রু, মুখে উদ্বেগ।
শব্দর ললিতাকে আশ্বস্ত করে বলল, “চিন্তা করবেন না। সময় সব ঠিক করে দেবে।”
||
ঘরের মাঝখানে একটি বিশাল মেহগনি কাঠের চারপোস্টার পালঙ্ক, যার উপর মখমলের পর্দা ঝুলছে। পালঙ্কের পাশে সোনালি কারুকাজ করা একটি ড্রেসিং টেবিল, যার উপর নানা রকম সুগন্ধি ও প্রসাধনী সামগ্রী সাজানো। একপাশে বিশাল জানালা, যার ভারী পর্দা সরিয়ে দেখা যায় বাইরের বাগানের একাংশ। এই বিলাসবহুল পরিবেশের মাঝখানে, পালঙ্কের উপর বসে আছে রাইহা। তার পরনে সাদা রঙের পোশাক, যা তার সাদা ত্বকের সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলেছে। তার কালো চুল অলসভাবে কাঁধের উপর ছড়িয়ে পড়েছে। এই সৌন্দর্যের মাঝেও তার নীল চোখে ছিল বেদনার ছায়া। তার হৃদয়ের অব্যক্ত যন্ত্রণা মুক্তির পথ খুঁজছে চোখের জলের মাধ্যমে। নিঃশব্দে কাঁদছে সে, তার অশ্রুই এখন তার একমাত্র সান্ত্বনা এই নির্মম পৃথিবীতে।
ভেসে আসা দ্রুত পদশব্দে রাইহা চমকে ওঠে। তার নীল চোখ দুটি প্রশস্ত হয়ে উঠে, ভয়ে কুঁকড়ে যায় সারা শরীর। মুহূর্তের মধ্যে রাইহা নিজেকে সামলে নিয়ে চঞ্চল হাতে চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুর শেষ বিন্দুটুকু মুছে ফেলল।
দরজা খুলে যায় প্রচণ্ড শব্দে। যেন ঘূর্ণিঝড় এসে আছড়ে পড়ল ঘরের মধ্যে। জাওয়াদ ঢুকল সেই ঝড়ের মতোই, অশান্ত, অস্থির, ক্রুদ্ধ। তার চোখে জ্বলছে রাগের অগ্নিশিখা। মুখের রেখায় রেখায় ফুটে উঠেছে হতাশা আর ক্ষোভের গভীর দাগ।
জাওয়াদ রাইহার দিকে আঙ্গুল তুলে তর্জন গর্জন শুরু করল। তার কণ্ঠস্বরে একসঙ্গে ক্ষোভ, রাগ আর অভিযোগের সুর, “শোনো,” সে বলতে শুরু করল, “তুমি কি জানো, তোমার জন্য আমাকে কতটা নিচে নামতে হয়েছে? কত মিথ্যের জালে জড়িয়ে পড়েছি আমি? আমি একটা নাটকের অভিনেতা হয়ে গেছি।”
জাওয়াদের কথার মধ্যে একটা গভীর যন্ত্রণার সুর। “এই বাড়িতে আসতে হয়েছে শুধু তোমার জন্য। কেন? কার জন্য? যাকে আমি চিনি না, জানি না। এখন তুমি বলো, কী করবে তুমি? কোথায় যাবে? আমাকে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দাও। এই দুঃস্বপ্ন থেকে বের করে নাও আমাকে।”
রাইহা নীরবে দাঁড়িয়ে রইল। তাকে দেখাচ্ছে নিরুপায় পাখির মতো, যার ডানা ভেঙে গেছে। ধীরে ধীরে সে মাথা নাড়ল।
চলবে….
~ ইলমা বেহরোজ