ফিল্টার ম্যাসেজ চেক করতে গিয়ে দেখলাম তানভির অহনাফ নামের একটা আইডি থেকে আমার বউয়ের কিছু নুড পাঠানো হয়েছে। ছবিগুলোতে রিতুর মুখ স্পষ্ট। আমি আরো সিওর হওয়ার জন্য ছবিগুলো ভালোভাবে জুম করে দেখলাম। না এটা রিতুই। বামপাশে বুকের উপরে তিলটাও স্পষ্ট। এডিট করা হলে তিল থাকতোনা নিশ্চয়। আইডিটা থেকে আমাকে টেক্সটটা দিয়েই ডিএক্টিভেট করে রাখা হয়েছে। মুহূর্তেই আমার হাত কাপতে লাগলো। এইতো একটু আগেও আমি রিতুর সাথে দুষ্টুমি করে এলাম। অফ ডে বলে আজকে বাসাতেই আছি। রিতু কিচেনে আমার জন্য মালাই চা আর সিঙারা বানাচ্ছে। আমি রিতুকে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। রিতু হাসিহাসি মুখ করে আমাকে রুমে এসে ওয়েট করতে বললো। রুমে এসে আমি ফেসবুকে ঢুকতেই এ কি জিনিস দেখলাম। রিতুর সাথে যদিওবা আমার এরেঞ্জ ম্যারেজ বাট আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো। একজন আরেকজনকে অনেক ভালোবাসি। বিয়ের আগে আমার কোন পছন্দ ছিলনা তাই বাবা মায়ের পছন্দেই রিতুকে বিয়ে করা। রিতু আমাকে কখনো বলেনি যে ওর আগে কারো সাথে রিলেশন ছিল বা আমি কখনো শুনিওনি কারো কাছে। হঠাৎ করেই আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো যেন। রিতু কি তাহলে অন্য কারো সাথে কিন্তু ওর কোন আচরনে তো মনে হয় না। আমার ভাবনার মাঝেই রিতু এসে ডাক দিলো,
-কি হলো মশাই। কি এত ভাবছেন শুনি?
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। বিষয়টা রিতুর চোখ না এড়ালেও ও যেন পাত্তা দিলো না। চায়ের কাপটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো
-এই নাও চা আর দুপুরের রান্না কম্পিলিট না হওয়া পর্যন্ত আমাকে ডিস্টার্ব করবেনা একদম। আজকে তোমার জন্য স্পেশাল ডিস বানাবো।
আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রিতুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। একটা মেয়ের কত রূপ হতে পারে। রিতু আমাকে তাগাদা দিলো। কি হলো আমার মুখের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? চা টা খাও। খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?
অনিচ্ছা সত্ত্বেও চায়ে চুমুক দিলাম। স্বাদ কিরকম হলো বুঝতে পারলাম না। রিতু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভালো হয়েছে বলতেই রিতু আমার দিকে চেয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে আবার রান্নাঘরে ঢুকলো। রিতুর রান্নার হাত খুব ভালো। কিন্তু এই চা এই মুহূর্তে আমার কাছে পানসে লাগছে। যেই রিতু এক কাপ গরম পানি দিলেও আমার কাছে অমৃত মনে হত এখন এত সুন্দর করে বানানো মালাইচা ও আমার কাছে বিস্বাদ লাগছে। সিঙারা তো মুখেই দিতে ইচ্ছে করছে না অথচ রিতুর হাতের বানানো মালাই চা এর সঙ্গে সিঙারা ডুবিয়ে খেতে আমি সবথেকে পছন্দ করি। আমি উঠে আস্তে আস্তে হেটে গিয়ে কিচেনে উকি দিলাম। রিতু গুনগুন করে গান গাইছে আর রান্না করছে। বাবা মা বাসায় থাকলে মা নিজেই সবসময় রান্না করে। রিতু টুকিটাকি হেল্প করে তখন। তিনচারদিন হল তারা দেশের বাড়ি গিয়েছে। আরো সপ্তাহখানিক থেকে তবে আসবে। আমি ভাবতে লাগলাম রিতুকে কি সরাসরি জিজ্ঞেস করবো। ছবিগুলো দেখাবো। না নিশ্চিত না হয়ে রিতুকে কিছু বলা ঠিক হবে না। আমি অন্য একটা আইডি খুলে তানভির অহনাফ লিখে সার্চ দিলাম। এ নামে বেশ কয়েকটাই আইডি পেলাম। কিন্তু কোন আইডি কিভাবে বুঝবো। ওই আইডির প্রোফাইল তো দেখিনি। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না। রিতু যদি কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় আমাকে তো অন্তত বলতে পারতো। আমি তো কখনোই ওকে আটকে রাখতাম না। আমাদের বিয়ে হয়েছে ছয় মাস হবে কিন্তু রিতু কখনই বলেনি যে আমাকে ওর পছন্দ না বা রিতুর কোন আচরনে মনেও হয়নি। রিতু আমার প্রতি যথেষ্ট কেয়ারিং। তাহলে কি রিতুর আগে কোথাও সম্পর্ক ছিলো। হয়তো আমি জানিনা। আর আমাকে এভাবে এসব ছবি পাঠানোর মানে কি। আমাকে বিষয়টা আরো ভালোভাবে ক্লিয়ার হতে হবে।
বিকেলে রিতু বায়না ধরলো চলনা বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
আমার একটুও যেতে ইচ্ছে করলোনা তাই রিতুকে বুললাম শরীরটা খারাপ লাগছে। রিতু আমার কপালে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো জ্বর টর এসেছে কিনা। কি আশ্চর্য শরীর খারাপ হলে কি খালি হাত দিলেই বোঝা যাবে। রিতু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি কি কোন ব্যাপার নিয়ে টেনশন করছো। চোখমুখ এরকম শুকনো লাগছে কেন?
না কি হবে। কিছু হয়নি
আমি স্মিত হেসে বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিছু হয়নি। রিতু কি বুঝলো জানিনা আমাকে শুয়ে পড়তে বলে আমার উল্টদিকে ফিরে ও শুয়ে পড়লো। আউলাঝাউলা চিন্তা চিন্তা করতে করতে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে জেগে দেখি সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে ঘুমিয়েছি। পাশে রিতুকে দেখতে পেলাম না। উঠে দেখি রিতু বসার ঘরে টিভি দেখছে। আমি ফ্রেশ হয়ে রিতুর পাশে এসে বসলাম। মনটা ভালো লাগছে না। রিতুকে বাসায় রেখেই বাইরে আসলাম। এদিক সেদিক কতক্ষণ হাটাহাটি করলাম। হানিফ মামার দোকানে কড়া করে বেশ কয়েক কাপ চা খেলাম। সাড়ে দশটা নাগাদ রিতু কল দিলো।
-কই তুমি বাসায় আসতেছো না কেন?
আসছি আমি। আরো প্রায় দেড় ঘন্টা পড় বাসায় গেলাম। রিতু ঢুলুঢুলু চোখে দরজা খুললো।
কই ছিলে এতক্ষণ। এত দেরি হল কেন বাসায় আসতে?
আর বলনা আরিফের সাথে অনেকদিন পড়ে দেখা হল তাই একটু আড্ডা দিলাম।
ফোন করে বলে দিলেই পারতে। আমি তো খাবার টেবিলে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়েই গিয়েছিলাম।
আমি এই মেয়েটাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। রিতুকে টেবিলে বসিয়ে আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম। রিতু জিজ্ঞেস করলো তুমি খাবেনা?
আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। আরিফ জোর করলো তাই।
বিছানায় শুতেই রিতু ঘুমিয়ে পড়লো। আমি শুধু ছটফট করছিলাম। আস্তে করে উঠে বেলকুনিতে গিয়ে ইজিচেয়ারটায় বসলাম। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। হঠাৎ আমার মনে হল রিতুর ফোনটা একবারও চেক করিনি। আস্তে করে এসে রুম থেকে রিতুর ফোন নিয়ে নিলাম। ফোন ঘেটে কিছুই পেলাম না। রিতু সেভাবে ফেসবুক চালায় না। পিকচার ও আপ্লোড করে না। খুব কম এক্টিভ থাকে। ম্যাসেঞ্জারে তেমন কিছুই পেলাম না। তানভির অহনাফ লিখে সার্চ কোন আইডির সাথে সংযুক্ততা পেলাম না। কললিস্ট ঘেটেও দেখলাম সব পরিচিত নাম্বার। কিন্তু ফোন বুকে একটা নাম্বারে চোখ আটকে গেল। তানভির লিখে সেভ করা একটা নাম্বার। আমি সাথে সাথেই নাম্বারটা আমার ফোনে তুলে নিলাম এবং কল করলাম। প্রথমবার রিং হলো কেউ পিক করলোনা। সেকেন্ডটাইম পিক হলো। আমি হ্যালো বলতেই চমকে গেলাম।
চলবে…
আড়ালে কে ১ম পর্ব
©Tasmima Yeasmin
গল্পটি ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করুন