রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ৪১
#লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
সূর্যটা পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়ার পরই পরই তুমুল বর্ষণের সমাপ্তি হয়েছে। খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে ল্যাপটপে গেইম খেলছে ছেলেরা। তাদের পাশেই মুখ ফুলিয়ে বসে আছেন আলিফ ভাইয়া। ‘টেবিল তলার রহস্য’ উদ্ধার করতে না পেরে ভীষণভাবে হতাশ তিনি। তারওপর আদিবার কচি কিন্তু ধারালো দাঁতের কামড়ে চোখ-মুখে যথাসম্ভব অসহায়ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন তিনি।
তাকে দেখে মনে হচ্ছে, এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষটা উনি ব্যতীত অন্যকেউ হতে পারে না, সম্ভব না। আমি অপর পাশের সোফায় বসে কলি আপুর গল্পে তাল মিলাচ্ছি। কানে হেডফোন লাগিয়ে আমার গায়ে ঠেস দিয়ে বসে আছে রাফিয়া। বয়ফ্রেন্ডের সাথে তুমুল ঝগড়াঝাটি করে আপাতত দেবদাসীর রূপ ধারণ করেছে সে। রাফিয়ার ধারণা, তার এবারের বয়ফ্রেন্ডটা বেশিদিন টিকবে না।
দিন দুইয়ের মাঝেই ব্রেকআপ হবে নির্ঘাত। যদিও ব্রেকআপ নিয়ে তার তেমন মাথাব্যাথা নেই তবুও আগামী দু’দিন দুঃখী দুঃখী মুখ করে বসে থাকবে সে। টানা তিনদিন দুঃখী দুঃখী গান শুনবে। ব্রেকআপ হওয়ার পর নাকি এমনটাই করতে হয়, নিয়ম আছে। কলি আপু আমার দূরসম্পর্কের ফুপ্পির মেয়ে। বছরে এক অথবা দু’বার কালভাদ্রে দেখা হয় আমাদের। দাদুবাড়িতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা না হলে তাদের দেখা পাওয়া মুশকিল। সামনের মাসে কলি আপুর বিয়ে বলেই এই অসময়ে আগমন তাদের।
বাসায় আমাদের কাউকে না পেয়ে ভাইয়াকে সঙ্গে নিয়ে মামুর বাসায় হানা দিয়েছেন উনারা, উদ্দেশ্য বিয়ের কার্ড বিতরণ।শুভ্র ভাই এবং মামু কারো সাথেই তাদের পরিচয় নেই বললেই চলে। কলি আপু তার বিয়ের শপিং আর হবু বর নিয়ে কথার ঝুড়ি সাজাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই দৌঁড়ে এসে কলি আপুর পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল আদিবা। কলি আপু খুবই মিশুক ধরনের মেয়ে। আদিবাকে দুইহাতে কাছে টেনে নিতেই আধো আধো গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো আদিবা,
—-” তুমিই বউ আপু? তোমার বিয়ে হবে?”
কলি আপু খুশিতে ঝুমঝুম করে বললেন,
—-” হুম। আমিই বউ আপু।”
আদিবা বেশ উৎসাহ নিয়ে কলি আপুর কোলে চেপে বসলো। বড়দের মতো করে বলল,
—-” আমি তোমার বিয়েতে শাড়ি পড়বো। আমার দুইটা শাড়ি আছে।”
আমি হাসলাম। কলি আপু আদিবার গাল টিপে দিয়ে বললেন,
—-” বাপরে! তোমার দুই দুইটা শাড়ি আছে? আচ্ছা! বল তো, তোমার কোন আপুকে আগে বউ আপু বানানো যায়? রুহি, রাফিয়া, রোদ কাকে আগে বিয়ে দেওয়া যায়?”
আদিবা কিছু না ভেবেই ফট করে উত্তর দিলো,
—-” রোদাপু।”
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। কলি আপু হাসলেন। কৌতূহল নিয়ে জিগ্যেস করলেন,
—-” কেন? রোদাপু কেন?”
—-” রোদাপুর দিকে তাকিয়ে থাকে মানুষ।”
কলি আপু ফিচেল গলায় বললেন,
—-” কোন মানুষ? ছেলেরা?”
—-“সব্বাই।”
কথাটা বলে চুপ করলো আদিবা।কলি আপু মজার ছলে বললেন,
—-” ওরে বাবা। সব্বাই?”
আদিবা খানিক ভাবলো। তারপর মাথা দুলিয়ে বলল,
—-” উহু। সব্বাই না, দাদাভাই। দাদাভাই তাকিয়ে থাকে।”
আদিবার কথার মর্মার্থ করতে না পেরে কপাল কুঁচকে তাকালেন কলি আপু। শুভ্র ভাইয়েরা পাশের সোফায় বসেই গেইম খেলছিলেন। আদিবার কথায় সবকটায় চোখ বড় বড় করে তাকালেন। শুভ্র ভাই হালকা কেশে নড়ে চড়ে বসলেন। ল্যাপটপের স্যাটারটা একটু নামিয়ে ভারী গলায় ডাকলেন,
—-” এই আদিবুড়ি? তোর জন্য যে চকলেট রাখা হয়েছিলো নিয়েছিস ওগুলো? তোর ভাইয়া নির্ঘাত সব খেয়ে নেবে। তোর মামানির কাছে রাখা আছে, জলদি যা। এক দৌঁড়।”
আদিবা এক মুহূর্ত বসে না থেকে ছুটে গেল ভেতরের ঘরে। আর যায় হোক, দাদাভাইয়ের কথার খেলাপ করে না সে। বাচ্চাদের কাছে শুভ্র ভাইয়ের কথা মানেই বেদ বাক্য। পৃথিবী উল্টে গেলেও শুভ্র ভাইয়ের কথার নড়চড় হওয়া চলবে না। কিছুতেই না। আমি আড়চোখে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনার ফর্সা মুখে একঝাঁক রক্তিম আলো চোখে পড়ছে। আচ্ছা, উনি কি লজ্জা পাচ্ছেন? শুভ্র ভাই আমার দিকে না তাকিয়ে মনোযোগ সহকারে শার্টের হাতা ফোল্ড করলেন। একহাতে কপালের চুলগুলো পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে আবারও ল্যাপটপের স্কিনে মুখ ডুবালেন। কলি আপু ভ্রু কুঁচকে ফিসফিস করে বললেন,
—-” এই দাদাভাইটা কে রে রোদ?”
আমি আমতাআমতা করে বললাম,
—-” কি জানি? ওই পুচকোর কথা ধরতে আছে? বাদ দাও তো।”
কলি আপু বাদ দিলেন না। কিন্তু তৎক্ষনাৎ ছোট ফুপ্পির আগমনে সে বারের মতো বেঁচে গেলাম আমি। ফুপ্পি কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েই গদগদকণ্ঠে বললেন,
—-” খালামণিকে তো একদম ভুলে গিয়েছ কলি। এসেছো থেকে তো একবারও কথা বললে না।”
কলি আপু উঠে দাঁড়িয়ে অপ্রস্তুত হাসলেন। বললেন,
—-” আপনাকে দেখি নি খালামণি।আপু আমাকে রেখেই গটগট করে ভেতরে চলে গেল। কেমন আছেন?”
—-” এইতো ভালো আছি, মা। রোদের মামির সাথে পরিচয় আছে তোমার? চলো ভেতরে চলো, পরিচয় করিয়ে দিই।”
কলি আপু হাতের পার্সটা তুলে নিয়ে ফুপ্পির পিছু পিছু ভেতরের দিকে হাঁটা দিলেন। যেতে যেতে হাতের ইশারায় বললেন, ‘থাকো, আসছি।’ আমি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে চুপচাপ বসে রইলাম। কলি আপু বসার ঘরের দরজার আড়াল হতেই একরকম আর্তনাদ করে উঠলেন অদুদ ভাইয়া,
—-” ওরে আল্লাহ! আমাদের এই গোল মরিচ তো দেখি ব্যাপক ঝাল। আমাদের চোখে যা পড়লো না, তা ওর চোখে পড়ে গেল? ‘আদিবা কিছু বুঝে না’ এই বিশ্বাসে অটুট থেকে ওর সামনে বসে তনিমাকে কতশত প্রেমের কবিতা শুনিয়েছি আমি। থেংক গড শুধু কবিতায়ই শুনিয়েছি। এর থেকে উপরের লেভেলে উঠি নাই৷ নয়তো এই গোল মরিচ, আমার বাপের সামনে মুখ খুলে আমাকে এক্কেবারে ওপরে উঠার ব্যবস্থা করে দিতো নির্ঘাত।”
অদুদ ভাইয়ার কথায় এক পল্টন হাসলো সবাই৷ আমি মুখ কাঁচুমাচু করে উঠে যেতে নিলেও রাফিয়ার জন্য পেরে উঠলাম না। সে আপাতত দেবদাসী রূপ থেকে বেরিয়ে এসে ঘুমের সাগরে হামাগুড়ি খাচ্ছে। আমি অসহায় চোখে রাফিয়ার ঘুমন্ত মুখটির দিকে তাকাতেই ফিচেল গলায় বলে উঠলেন আলিফ ভাইয়া,
—-” সে যায় হোক, আমাদের মেইন পয়েন্ট হলো শুভ্র ভাই। তো, শুভ্র ভাই? আজকাল আমাদের বোনের দিকে তাকিয়ে টাকিয়ে থাকো শুনছি, কাহিনী কি?”
আমি চোখদুটো খিঁচে বন্ধ করে অন্যদিকে তাকালাম। আলিফ ভাইয়ার পাশেই বসে আছে ভাইয়া। এই মুহুর্তে লজ্জার থেকে ভাইয়ার উপস্থিতিটাই বেশি তাড়া করছে আমায়। ছি, ভাইয়া কি ভাবছে! আমি আড়চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া খুব মনোযোগ দিয়ে ফোন ঘাটছে। মুখ-চোখ দেখে মনে হচ্ছে আলিফ ভাইয়ার কথাটা কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি তার। কিছুক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটি করে বেশ স্মার্টলি উঠে দাঁড়ালো ভাইয়া। ফোনের দিকে নজর রেখেই ধীর পায়ে জায়গা ছাড়লো সে। ভাইয়া উঠে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। সেই সাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন শুভ্র ভাইও। ডানহাতের আঙ্গুলগুলো চুলের মাঝে চালাতে চালাতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
—-” চোখ দুটো আল্লাহ দিয়েছেন কেন বল তো? অবশ্যই দেখার জন্য। সো, আমি দু’চোখ ভরে দেখবো এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহর দেওয়া চোখদুটোকে তো আর আনইউজড ভাবে ফেলে রাখতে পারি না। চোখের সৎ ব্যবহারটাকে যদি তোরা তাকিয়ে থাকা বলিস তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। কারণ, আই নো.. তোরা জন্মগত বলদ।”
আলিফ ভাইয়া প্রত্যুত্তরে কিছু বলবেন তার আগেই তারস্বরে কান্নার আওয়াজ কানে এলো। কলি আপুর বড় বোন কণা আপুর ছোট্ট ছেলেটা কাঁদছে। জারিফ তাকে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক লাফালাফি করছে। শুভ্র ভাই জারিফকে ডাকতেই বাবু নিয়ে ছুটে এলো জারিফ। শুভ্র ভাই হাত বাড়িয়ে দিতেই পিচ্চিটা লাফিয়ে শুভ্র ভাইয়ার কোলে চেপে বসলো। শুভ্র ভাই কোলে নিয়ে খানিক নাড়াচাড়া করতেই খিলখিল করে হেসে উঠলো বাচ্চাটি। শুভ্র ভাই ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলেন,
—-” এই যে আব্বু? নাম কি আপনার, হ্যাঁ?”
বাচ্চাটি তার বড় বড় কৌতূহলী চোখ মেলে শুভ্র ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছোট্ট হাতটি বাড়িয়ে শুভ্র ভাইয়ের ছোট ছোট দাঁড়িগুলোতে হাত বুলিয়ে দন্তহীন হাসলো। উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে আধো আধো করে বলল,
—-” বা বা বাবা।”
বাচ্চাটা বাবা বলার সাথে সাথেই দাঁত কেলিয়ে হাসলেন অদুদ ভাইয়া। মজার ছলে বললেন,
—-” কিরে শুভ্র? তলে তলে চলতাছে টা কি? পোলা তোরে প্রথম দেখায় বাপ ডাকে কেন? তোর গায়ে বাপ বাপ গন্ধ পায় নাকি? আয় তো দেখি।”
কথাটা বলে শুভ্র ভাইয়ের দিকে ঝুঁকে পড়তেই শুভ্র ভাই বাচ্চাটাকে বাম কোলে নিয়ে ডানহাতে ধুম করে একটা চড় বসালেন পিঠে। মুখে বললেন,
—-” গায়ের ওপর পড়বি না, সর।”
অদুদ ভাইয়াকে দেওয়া শুভ্র ভাইয়ের চড়টায় বেশ খুশি হয়ে উঠলো বাচ্চাটি। তার উচ্ছ্বাসিত চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে বড়দের এই অদ্ভুত খেলা দেখে ভীষণ রকম আনন্দিত সে। বাচ্চাটা কিছুক্ষণ বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে থেকে হাত-পা নাচিয়ে দন্তহীন খিলখিল হাসিতে মত্ত হলো। শুভ্র ভাই আবারও বাচ্চাটির দিকে তাকালেন। দু’হাতে এই ছোট্ট দেহটিকে উপরদিকে ছুঁড়ে মেরে আবারও লুফে নিতেই খিলখিল হাসিতে খেলে উঠলো পুরো ঘর। তার ছোট্ট হাতটি শুভ্র ভাইয়ের নাকের উপর রেখে চোখ পিটপিট করে বলল,
—-” বাবা।”
শুভ্র ভাই হেসে বললেন,
—-” এখনও বিয়ে করি নি বাপ। বারবার বাবা বলে আর দহন বাড়াস না।”
শুভ্র ভাইয়ের কথার জবাবে বাচ্চাটি গোল গোল চোখে তাকাল। শুভ্র ভাইয়ের ছোট্ট ছোট্ট দাড়িগুলো আঙ্গুল দিয়ে ধরার চেষ্টা করল। কিছুক্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কৌতূহলী দৃষ্টিতে শুভ্র ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালো। শুভ্র ভাইয়ের গালে বার কয়েক আলতো চড় বসিয়ে ভারি আনন্দিত গলায় বলল,
—-” বাবা।”
সাথে সাথেই চারপাশে হাসির ফোয়ারা বইলো। অদুদ ভাই হাসিতে গড়াগড়ি খেতে খেতে বললেন,
—-” দেখেছিস? বলেছিলাম সমস্যা আছে। নয়তো একাধারে বাপ বাপ করবে কেন এই পোলায়? কাহিনী ইজ ভেরি ভেরি আন্ধার।”
অদুদ ভাইয়ের কথায় শুভ্র ভাইয়াও হেসে ফেললেন। সবার হাসাহাসির শব্দে ততক্ষণে উঠে বসেছে রাফিয়া। রাফিয়া উঠে বসতেই সোফা ছেড়ে শুভ্র ভাইদের সোফার কাছে হাঁটু গেড়ে বসলাম আমি। দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
—-” হ্যালো বেবি। আসো… আমার কাছে মজ্জা আছে।”
বাচ্চাটা আমার দিকে তাকালো। শুভ্র ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—-” যা…বা বা।”
আমি ভ্রু কুঁচকালাম। শুভ্র ভাই হেসে আমাকে ইশারা করে বললেন,
—-” এটা মামনি। বলো মামনি।”
বাচ্চাটি শুভ্র ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
—-” বা বা। বাবা।”
—-” আরে বাপ, বুঝছি তো আমি তোর বাপ। আমি বাবা আর সে মামনি। ছে, মামনি।”
বাচ্চাটা এবারও তুমুল উৎসাহ নিয়ে বলল, বাবা, বাবা। শুভ্র ভাই বিরক্ত চোখে তাকালেন। উনার আশেপাশের সব কিছুকে উনার ইচ্ছে মতো চালিয়ে অভ্যস্ত তিনি। এই ছোট্ট বাচ্চাটা তার কথা শুনছে না তা যেন কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। অদুদ ভাইয়া বাচ্চার এক হাত টেনে ধরে বললেন,
—-” এই যে আব্বু? আমার কোলে আসো। আমাকে ইচ্ছেমতো বাপ ডাকতে পারো, কোনো সমস্যা নাই। আসো..”
অদুদ ভাইয়ের প্রস্তাবের প্রত্যুত্তরে আবারও শুভ্র ভাইয়ের গলায় ঝাপটে ধরলো সে। অর্থাৎ সে বাবার কোলেই থাকতে চায়। অন্যকারো কোলে যাওয়া তার পছন্দ নয়। বাচ্চাটিকে নিয়ে টানাটানির একপর্যায়ে কণা আপু এলেন। পিচ্চিকে শুভ্র ভাইয়ের কোল থেকে জোরপূর্বক নিজের কোলে নিয়ে বললেন,
—-” আসলে, ওর বাবারও সেইম কালার শার্ট আছে তো তাই বারবার বাবা বাবা করছে। কিছু মনে করবেন না।”
শুভ্র ভাই নম্র হেসে বললেন,
—-” না না। ঠিক আছে। আপনার বাচ্চাটা খুব মিষ্টি আপু।”
কণা আপু হেসে বললেন,
—-” মিষ্টির থেকে দুষ্ট বেশি। আচ্ছা, আজ আসি ভাইয়া। আপনার সাথে তো ঠিক মতো পরিচয়টাই হয়ে উঠলো না। আমাদের বাসা শম্ভুগঞ্জের দিকেই, ওদিকে গেলে আমাদের বাসায় যাবেন। আন্টিকে সাথে নিয়ে যাবেন আমাদের ভালো লাগবে।”
—-” এখন তো ওইদিকটা তেমন যাওয়া হয় না। তবুও, চেষ্টা করবো। কিন্তু এখনই যাওয়া কেন? মাত্রই আসলেন আপাতত ডিনারটা করে যান।”
কণা আপু বিগলিত হেসে বললেন,
—-” না ভাইয়া। অন্য একদিন। এমনিতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে প্রায়। আসি তাহলে।”
সবার থেকে বিদায় নিয়ে দরজার কাছাকাছি যেতেই আমার ডানহাত খামচে ধরলেন কণা আপু। ফিসফিস করে বললেন,
—-” ওই? এটা সত্যিই তোর মামাতো ভাই?”
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,
—-” হ্যাঁ। কিন্তু কেন?”
—-” হারামি! দুই বছর আগে কই লুকিয়ে রাখছিলি এই ভাইকে? তাহলে আজকে আমি তোর ভাবি হইতাম। আমার ছেলে তোর ভাতিজা হতো। তোর কাজিনটাকে দেখে বিয়ে নিয়ে বিরাট আফসোস হচ্ছে আমার। ধুর!”
আমি হেসে বললাম,
—-” তুমিও না আপু। তোমার থেকে এক দুই বছরের ছোট হবেন উনি। শুভ্র ভাই মাস্টার্স ফাইনাল। তোমার এক বছর জুনিয়র।”
—-” তো? মানুষ সাত/আট বছরের ছোট বিয়ে করে ফেলছে আর আমি একবছরের ছোট বিয়ে করতে পারতাম না? এক বাচ্চার মা হয়ে ক্রাশ খাইলাম। হায়রে কপাল আমার!”
আমি হাসলাম। মনের কোথাও একটা ধারালো সূঁচও ফুটলো। শক্ত গলায় বলতে ইচ্ছে করতে লাগলো,
—-” তোমাকে কেউ বলেছে ক্রাশ খাইতে? নেচে নেচে ক্রাশ খাইতে আসো কেন শুনি? যত্তসব আজাইরা পক পক।”
____________________
ঘন্টাখানেক আগেই মাগরিবের আযান পড়েছে। ছাঁদের চারপাশটাই জমাট বাঁধা অন্ধকার। বিকেলে বৃষ্টি থামার পর মামানি কিছু কাপড় মেলে দিয়েছিলেন ছাঁদে। সেগুলোর কথা বেমালুম ভুলে গিয়েই এই ভর সন্ধ্যায় ছাঁদে ছুটে আসা আমার। ছাঁদের কাপড়গুলো নিয়ে পেছন ফিরতেই ছাঁদের ওপাশ থেকে কারো কন্ঠ কানে এলো। কৌতূহল বশত ছাঁদের অন্য পাশটাই উঁকি দিতেই তুষার ভাইয়াকে চোখে পড়লো। কারো সাথে ফোনালাপ ব্যস্ত উনি। আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে সিঁড়ি ঘরের দিকে রওনা দিতেই অনিচ্ছাকৃত ভাবেই তুষার ভাইয়ার একটি কথা কানে এলো,
—-” আমিও বিশ্বাস করি তোমার আর শুভ্রর যতটুকু যায়, রোদের সাথে ততটুকু যায় না। আরে ও তো বাচ্চা একটা মেয়ে। শুভ্রও সেটা বুঝতে পারছে আজকাল। রোদ ওর আবেগ ছাড়া কিছুই না। আচ্ছা, তুমি…”
কথাটুকু বলতে বলতে ছাঁদের এদিকটায় আসতেই আমাকে চোখে পড়লো উনার। তুষার ভাইয়া ফোন কেটে হালকা হেসে বললেন,
—-” কেমন আছো রোদ?”
আমি দুর্বল গলায় বললাম,
—-” ভালো।”
—-” একটু কথা ছিলো তোমার সাথে। সময় হবে?”
তুষার ভাইয়ার কথায় অজানা একটা ভয়ে কেঁপে উঠলো আমার বুক। আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
—-” জ্বি বলুন।”
—-” চলো ওদিকটায় দাঁড়াই। দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কথা বলতে অস্বস্তি লাগে।”
আমি ধীর পায়ে ছাঁদের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ালাম। তুষার ভাইয়া আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,
—-” আমার কথাগুলো তুমি কিভাবে নেবে বুঝতে পারছি না। আমি তোমাকে ছোট বোনের মতোই স্নেহ করি। কথাগুলো তোমার ভালোর জন্যই বলা।”
আমি শক্ত গলায় বললাম,
—-” বলুন ভাইয়া।”
তুষার ভাইয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললেন,
—-” তুমি হয়তো জানো না যে, শুভ্র স্কুল লাইফে একটা মেয়েকে পছন্দ করতো। মেয়েটির নাম তাসনিম।”
—-” আমি জানি উনার ব্যাপারে।”
তুষার ভাইয়া খানিক অবাক হলেন। তারপর বললেন,
—-” জানলে তো প্লাস পয়েন্ট। আচ্ছা? তোমার কি কখনও মনে হয় না যে শুভ্র কোথাও না কোথাও এখনও তাসনিমকেই চায়? বা তাসনিমের মতোই কাউকে? তাসনিম সুন্দরী সেইসাথে ওয়েল স্যাটেলড। ওরা দু’জনই জুটি হিসেবে অসাধারণ। কিন্তু, তবুও শুভ্র ওর দিকে এগুচ্ছে না। কেন এগুচ্ছে না বল তো?”
আমি মৃদু গলায় বললাম,
—-” কেন?”
—-” তোমার জন্য। শুভ্র যে এখন প্রায় প্রায়ই কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত থাকে খেয়াল করেছো? তার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুটা হলে তুমি। তাসনিম ওর প্রথম ভালোবাসা। আর যায় হোক, কেউ কখনো তার প্রথম ভালোবাসাটা ভুলে যেতে পারে না। আর শুভ্রর মতো লয়েল ছেলেরা তো একদমই নয়। তাছাড়া, তাসনিমের কাছে ওই সবকিছুই আছে যা একজন ছেলে তার স্ত্রীর মাঝে চায়। তারওপর তাসনিম শুভ্রর জন্য পাগলপ্রায়। তাকে ছেড়ে শুভ্রর তোমাকে বেছে নেওয়াটা বোকামো। আর শুভ্র বোকা নয়।
তবে, সে তোমাকে নিয়ে চিন্তিত। আবেগ হোক আর যায় হোক শুভ্র একসময় তোমাকে পজিটিভ সাইন দিয়েছিলো। তার ধারণা, হুট করে তোমার থেকে সরে গেলে তুমি হয়তো সামলে উঠতে পারবে না। উলোটপালোট কিছু করে ফেলবে। ওর এই চিন্তাটাই ওকে তোমার থেকে আলাদা হতে দিচ্ছে না। আর না, তাসনিমকে ফেলতে পারছে। আমার মনে হয়, এই সমস্যার সমাধান একমাত্র তুমি। তুমি যদি নিজ থেকে সরে যাও তাহলে শুভ্র খানিকটা রিলিফ পাবে। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে ওর হয়ে এটুকু বলার রাইট নিশ্চয় আমার আছে, তাই না?”
আমি লম্বা একটা শ্বাস ফেললাম। তুষার ভাইয়ার প্রতিটি কথা অপমানের এক একটা সূঁচ হয়ে বিঁধতে লাগলো বুকে। উনি আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন আমি শুভ্র ভাইয়ের যোগ্য নই। আমি কোনো কিছুর বিনিময়েই উনাকে ডিজার্ভ করি না। অথচ, আমি কখনো উনাকে আমার জীবনে আসতে বলি নি। উনি নিজ ইচ্ছায় অনেকটা জবরদস্তির ওপর ঢুকে গিয়েছেন আমার জীবনে। নানা কাজকর্মে আমাকে বাধ্য করেছেন উনাকে নিয়ে ভাবতে। আর আজ…প্রাক্তোনকে পেয়ে সেই আমিই দুধে মাছি? এই আমিই এখন তৃতীয়পক্ষ? কথাগুলো ভেবেই ভেতরটা ভয়ানক ক্ষোভে হাসফাস করতে লাগল। কষ্ট আর অপমান মিলে বুকটা ভার হয়ে এলো। শক্ত গলায় বললাম,
—-” শুভ্র ভাই আর আমার মাঝে কখনোই কোনো সম্পর্ক ছিলো না ভাইয়া। তাই আমাকে নিয়ে উনার এতো চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন দেখছি না। সমস্যার সমাধান আমি নই। আবেগ বা অন্যকিছু যা ছিলো সব উনার দিক থেকেই ছিলো, আমার দিক থেকে নয়। তাই সমাধানটা উনার আবেগ বৈ অন্য কিছু নয়। আপনার উচিত আপনার বন্ধুকে বুঝানো। তার আবেগটাকে নিজের আয়ত্তে আনতে শিখতে বলুন। হুটহাট আবেগ পরিবর্তন খুব একটা ভালো লক্ষ্মণ নয়।”
আমার শক্ত জবাবে বেশ খানিকটা থতমত খেয়ে গেলেন তুষার ভাইয়া। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
—-” না মানে। তুমি যদি নিজ থেকে দূরে সরে যেতে তাহলে ওর সুবিধা হতো…”
—-” কেন? আমি নিজ থেকে কোনোদিন কাছে এসেছি বলেই তো আমার মনে পড়ছে না। কাছে যেহেতু আসি নি সেহেতু দূরে যাওয়ারও প্রশ্ন আসছে না। উনার যখন আবেগ তৈরি হয়েছিলো তখনও নিতান্তই উনার সমস্যা ছিলো এখন আবেগ কেটে গিয়েছে এখনও নিতান্তই উনার সমস্যা। আমার নয়। তাই এডভাইসগুলো আপনার বন্ধুকে দিন। আমার সাথে যে তার যায় না সেটা বুঝিয়ে বলুন, কেমন?”
কথাটুকু বলে এক মুহূর্ত দাঁড়ালাম না আমি। অদ্ভুত এক তেজে নিচে নেমে এলাম। বুকের কোথাও একটা দৃঢ় বিশ্বাস কাজ করছিলো, শুভ্র ভাই এমনটা ভাবতেও পারেন না। কখনোই না। তবে, তুষার ভাইয়ার কথাও ঠিক। এই দুইদিনে বেশ কয়েকবারই শুভ্র ভাইকে অন্যমনস্কভাবে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। এমনকি বিকেলে খাবার টেবিলেও। তাহলে কি শুভ্র ভাই সত্যিই এমন কিছু ভাবছেন? তাসনিমকে নিয়েই জীবন গোছাতে চাইছেন? মনে নানা প্রশ্ন নিয়ে নিচে নামতেই শুভ্র ভাইয়ের সুরেলা কন্ঠ ভেসে এলো৷ আমি পর্দা সরিয়ে বসার ঘরে উঁকি দিলাম। শুভ্র ভাই গান গাইছেন। তার ঠিক সামনেই শাড়ি পরহিতা যুবতীটি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকে দেখছে,
“I was hanging with you
And then I realized
I didn’t think it was true
I was surprised
When I found out I’d fallen for you
I didn’t wanna believe
My feelings for you
I didn’t wanna believe
That I could lose you
If I told you just how I felt
But I can’t help it (ooh, ooh, ooh)
I’m falling for you
And I can’t quit it (ooh, ooh, ooh)
‘Cause I’m stuck on you…..”
শুভ্র ভাইয়ের কন্ঠে ইংলিশ গান বরাবরই ভীষণ ভালো লাগে আমার। কিন্তু আজ ভালো লাগল না৷ শুভ্র ভাইয়ের পাশে বসা রমনীটিকে দেখে ভালো লাগাটা যেন উবে গেল। বারবার একই প্রশ্ন মাথায় ঠুকতে লাগলো, গানটা কি তাসনিমকে উদ্দেশ্য করেই গাইলেন শুভ্র ভাই? অতীতে না বুঝলেও এখন কি তিনি নতুন করে ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারছেন? আমি কি তবে সত্যিই উনার আবেগ? তিন বছর নয় মাসের দীর্ঘ আবেগ! আমি ধীর পায়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরটির দিকে এগিয়ে গেলাম।
দরজায় ছিটকানি দিয়ে অযথাই কান্নায় ভেঙে পড়লাম। তুষার ভাইয়ার কথাগুলো মনে পড়তেই নিজেকে বড্ড ঠুনকো আর প্রয়োজনহীন মনে হতে লাগল। প্রায় ঘন্টাখানেক কেঁদে কেটে সিদ্ধান্ত নিলাম শুভ্র ভাইয়ের সাথে কথা বলব আমি। কিন্তু, কি জিগ্যেস করব উনাকে? উনি তো কখনও সরাসরি ভালোবাসার কথা বলেন নি আমায়। কোনও প্রতিশ্রুতিও দেয় নি কখনো। তাহলে কিসের জবাবদিহিতা চাইবো আমি? কথাটা ভেবেই মাথা চেপে ধরে বসে পড়লাম আমি। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে থাকার পর হঠাৎই উঠে দাঁড়ালাম। দরজা খুলে সরাসরি বসার ঘরে গেলাম।
বসার ঘরটা ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখে শুভ্র ভাইয়ের রুমের ভেতর উঁকি দিলাম। শুভ্র ভাই ব্যালকণির দেয়ালে ঠেস দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছেন। উনার কপালে চিন্তার ভাঁজ। চোখ-মুখ রক্তশূণ্য। আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মৃদু গলায় ডাকলাম, উনি সাড়া দিলেন না। আরও দু’বার ডাকার পরও সাড়া না পেয়ে বেশ জোরেই ডাকলাম আমি। উনি চমকালেন। বিরক্তি নিয়ে তাকালেন।ঝাঁঝালো গলায় বললেন,
—-” কি সমস্যা? আমাকে ডিস্টার্ব করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তোর? কারো রুমে ঢুকার আগে যে অনুমতি নিতে হয় জানিস না? এই সিম্পল কার্টিসিও কি তোর নেই? দিন দিন মূর্খ হচ্ছিস।”
শুভ্র ভাইয়ের কথার মাঝেই শুভ্র ভাইয়ের ওয়াশ রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো তাসনিম নামের মেয়েটি। আমি একবার তীক্ষ্ণ চোখে মেয়েটির দিকে তাকালাম। শুভ্র ভাইয়ের বলা বাকি কথাগুলো কানে ঢুকলো ঠিক কিন্তু মষ্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছালো না।
অপরিচিতা এক মেয়ের সামনে শুভ্র ভাইয়ের করা অপমান মুহূর্তেই ক্ষতবিক্ষত করে দিলো আমায়। তীব্র আত্মসম্মানবোধে শুভ্র ভাইয়ের কথাগুলো চুম্বকের মতো কাজ করলো। অপমানে চোখ-মুখ মুহূর্তেই থমথমে হয়ে এলো। শুভ্র ভাই না জেনেই এমন একটা জায়গায় আঘাত করলেন যার কোনো ক্ষমা হয় না। কোনো কিছুর বিনিময়েই না। এই অসহ্যকর মেয়েটার সামনে আমাকে এতোগুলো অপমানকর কথা শুনানোর শাস্তি তাকে পেতে হবে৷ আমি দুর্বোধ্য হেসে কাঠ কাঠ গলায় বললাম,
—-” সরি! এখানে যে প্রাইভেট টাইম চলছে বুঝতে পারি নি৷ আর দরজাটাও খোলা ছিলো তাই আর অনুমতি নেওয়া হয় নি। নেক্সট টাইম এই ঘরে যদি পা রাখি তাহলে অনুমতি নিয়েই ঢুকবো৷ ইউ গাইস,সরি এগেইন। ”
কথাটা বলেই ঘুরে দাঁড়ালাম আমি৷ তাসনিম আপুর ঠোঁটের কোণে এক মুহূর্তের জন্য একটা দাম্ভিক হাসি চোখে পড়লো। উনি উচ্ছসিত গলায় বললেন,
—-” তুমিই রোদ?”
—-” না। আমি রোদেলা।”
তাসনিম আপু অবাক হয়ে বললেন,
—-” রোদ আর রোদেলা একজন নয়?”
—-” না। একজন নয়। তারা দু’জন আলাদা। রোদের মাঝে কার্টিসি জ্ঞান নেই। আত্মসম্মান তাকে তাড়া করে না। কিন্তু, রোদেলা ভিন্ন। তার আত্মসম্মানবোধ তীব্র। সেই আত্মসম্মানে হাত দিলে পুড়ে ছাই করে দেওয়ার মতো উত্তাপ সে রাখে।”
এটুকু বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম আমি৷ ঘর থেকে বেরুতেই প্রথম যে কথাটা মনে পড়লো তা হলো, তুষার ভাইয়ার কথাগুলো ঠিক ছিলো আর আমার মন ভুল। রোদ নামক মেয়েটা শুভ্র ভাইয়ের আবেগ বৈ অন্যকিছু নয়। যাকে আজকাল দূরে কোথাও ছুঁড়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তিনি৷ কথাগুলো ভাবতেই কান্নাগুলো গলার কাছে দলা পাকিয়ে এলো।
কিন্তু কান্নার দলাগুলো চোখের পাতায় ঝড়লো না। কান্না মানেই দুর্বলতা। যে মানুষটি আমাকে ছুঁড়ে ফেলতে চাইছে তার জন্য চোখের জল ভাসানো বোকামো। আমি তো দুর্বল বা বোকা নই। এই অহেতুক চোখের জল আমায় মানায় না। দোষটা মনের ছিলো, মনেই জল নামুক। এই বিষাক্ত মনটা কেঁদে কেটে নিশ্চল হোক। কিন্তু তার ছাপ বাইরের দেহটাতে পড়া চলবে না। সেই লোকটাকে ‘আমি ভালো নেই’ ‘আপনাকে ছাড়া ভালো থাকবো না’ কথাটা বুঝতে দেওয়ায় চলবে না। তিল পরিমাণও না।
#রোদবালিকা
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/
[ বিঃদ্রঃ কালই দিতাম গল্পটা। কিন্তু কাল থেকে প্রচন্ড জ্বর আর শরীর ব্যাথায় কাহিল হয়ে পড়প আছি। আজকেও লেখাটাও আবেগহীন হয়েছে। রি-চেইকও করা হয় নি। দুঃখিত]