ভাবীর সংসার ৪৯ তম পর্ব
পলিকে দেখতে সবাই হাসপাতালে এসেছেন, বাথরুমে পড়ে গিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে গিয়েছে। সম্ভবত বাচ্চাটা আর নেই। মাত্র তিন মাছ হয়ে ছিল প্রেগ্ন্যাসির।
রাহেলা বেগম সমানে কেঁদেই যাচ্ছেন। কি হয়ে গেল মেয়েটার! জুয়েল এক ব্যাগ বি পজেটিভ রক্ত পলিকে দিয়েছে। পলি তার বাবার রক্ত পেয়েছে। সাত জন ভাই বোনের মধ্যে পলি আর নাহিদ বি পজেটিভ। আর সবাই ও পজেটিভ।
নাহিদ এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছে, জুয়েল এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছে। কিন্তু ডাক্তার বলছেন, আরও রক্ত লাগবে! আপনারা ম্যানেজ করুন। আবিদ অসহায় হয়ে দৌড়া দৌড়ি করছে। শাহিদ ও আবিদের সাথে আছে।
কলি আর রাহেলা দূর থেকে দেখছে পলিকে, নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে। ডাক্তার মনিটরিং মেশিন লাগিয়ে রেখেছে।
ডাক্তার রিফাত আলভী বের হয়ে বললেন, রোগীর হাসব্যান্ড কে?
– জি বলুন।
– দেখুন আপনার ওয়াইফ এর অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয়ে গিয়েছে। চট্টগ্রাম রাখলেন না কেন?
– সে কোন ভাবেই থাকবেনা, এজন্য এম্বুলেন্স করে নিয়ে এসেছি।
– ভুল করেছেন। উনার অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। আর স্যাড নিউজ হচ্ছে আপনার বেবি কে আমরা বাঁচাতে পারেনি।
আবিদ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, চোখের কোণ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে।
আপনারা আরেক ব্যাগ রক্ত রেডি রাখবেন, লাগতে পারে। আর আল্লাহ কে ডাকুন, আমরা আমাদের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
রাহেলা বেগম শুধুই আল্লাহকে ডাকছেন আর বলছেন আল্লাহ, আমার মেয়েটিকে ফিরিয়ে দাও, আমি আমার মেয়েটিকে দেখতে চাই, আর কিছুই চাই না।
পরের দিন সকালে, ডাক্তার পলিকে কেবিনে ট্রান্সফার করেছে। পলিকে নীল গাউন পরিয়ে রেখেছে। তার শরীর এখনো অনেক খারাপ। এতো রক্ত শরীর থেকে চলে গিয়েছে যে, মুখ টা নীল হয়ে গিয়েছে।
পলি, কেবিনে এসেই বলছে, আবিদ আমি বাবু কে রাখতে পারলাম না। আমার বাচ্চাটা আমাকে ছেড়ে কত দূরে চলে গেল।
আবিদ মাথায় হাত রেখে বলছে, আল্লাহ চাইলে, আমরা আবারও বাবু পাবে। তুমি সুস্থ হও পলি! আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার!
রাহেলা বেগম মেয়েকে শান্তনা দিচ্ছেন, পলি তুই কেন এতো ভেঙে পড়েছিস? তুই সুস্থ হ, আল্লাহর ঘর কি খালি আছে?
– মা, আমি বাথরুমে ভেজা স্যান্ডেল পরে গিয়েছি সেজন্যই এমন হয়েছে মা।
– সব আল্লাহর ইচ্ছা। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, তুই এক্টু চোখ বন্ধ করে থাক মা!
আবিদের কেবিনের বাইরে এসে ঠিকই তার বাবুর কথা মনে করে কান্নাকাটি করছে। কত কিছু ভেবেছিল, কন্যা হবে! নাম রাখবে আবিদা হিয়া ইসলাম। ছেলে হলে, পিয়াল হাসান। অথচ! সব এলো মেলো হয়ে গেল। পলির সামনে খুব স্বাভাবিক আছেন আবিদ, কিন্তু কষ্ঠে তিনি কুঁকড়ে যাচ্ছেন!
তিন দিন পর বাসায় নিয়ে আসা হলো পলিকে! তার সম্পূর্ণ বেড রেস্ট দরকার। রক্ত শরীরে এখনো কম। তার প্রচুর যত্ন দরকার। এদিকে এই বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া আসবে, ত্রিশ তারিখ। আর মাত্র দশ দিন আছে। কি করবেন রাহেলা ভেবে পাচ্ছেন না!
পলি বাসায় এসেই আবার কান্নাকাটি শুরু করেছেন। কলি বার বার সান্ত্বনা দিচ্ছে। তবুও পলি কেঁদেই চলেছে।
জুয়েল বিকালে এসে বললো আপা, আর আট দিন আপনি এই বাসায় থাকবেন, কলিও আপনার সাথে থাকবে। নবম দিন সোজা আমার বাসায়। এক মাস হওয়ার আগে আমরা আপনাকে ছাড়বো না!
– তোমার সাথে প্রথম পরিচয় এতো বাজে ভাবে হবে, ভাবিনি কখনো!
– বাজে হবে কেন? অবশ্যই ভালো। আমার তাজা রক্ত পেয়ে আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন।
– আমি অনেক দিন বাড়ী যাইনা, মায়ের সাথে আমি বাড়ী যাবো। তোমরা জমিয়ে সংসার কর, ভাই।
– সরি আপা। আপনাকে বাড়ীতে এলাউ হলো না।
শারমিন রাতে এসে বললেন পলি, একটা কাজের মানুষ রাখবেনা! কি ক্ষতি হয়ে গেল।
– এটা আমার কপাল ভাবী।
– এখন, মাও বাড়ী চলে যাবে। তুমি ও কি বাড়ী যাবে?
– না। ঢাকায় থাকবো।
– ওহ!
শারমিনের মুখ কালো হয়ে গিয়েছে। যদি তার বাসায় বাকি পনেরো দিন থাকে, তবে!
পলি মা বাড়ীতে যাওয়ার সময় বারবার বলছে, মা আমাকে সাথে নিয়ে যাও। আমি ভালো আছি।
– সাঈদ বলেছে ওর বাসায় থাকতে।
– না মা, থাকবো না।
– বউমা, এখন অনেক ভালো হয়েছে। তুই থাকলে সমস্যা নাই।
কলি বার বার বলছে কেন যাবে ওই বাসায়? রস কষ হীন সংসার। আমার সংসার কি খারাপ?
– আমি বাড়ীতে যেতে চাই।
– তুমি কি পাগল পলিপা?
আবিদ স্কুল থেকে তিন দিন ছুটি পেয়েছিল সেই তিন দিন ছিল। এরপর আর আবিদ ঢাকায় আসেনি। নিয়মিত ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছে পলির।
রাহেলা বেগমের যাওয়ার দিন সকাল থেকে মন খুব খচখচ করছে, এই কয়েক দিন এই বাসার জন্য কেমন যেন এক ধরনের মায়া হয়ে গিয়েছে। এখন এক্কেবারে চলে যাওয়ার সময় মনটা বিচিত্র কারণে অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে!
পলিকে কোথায় রেখে যাবেন রাহেলা? মেয়ে কোন ভাবে সাঈদের বাসায় যাবো না। আর সাঈদ বার বার থাকতে বলছে। এদিকে পলির ছোট বোনের বাসায় গিয়ে থাকতে ইচ্ছুক নেই। রাহেলা যে থাকবেন সেই উপায় নেই, এই সংসার ছেড়ে এতো জিনিস নিয়ে কেমন করে একা দুই ছেলে যাবে? আবার মেয়ের জন্য ভেতর পুড়ছে! কোথায় রেখে যাবেন! মেয়েকে কোথায় রেখে যাবেন, সে চিন্তায় ভালো লাগছেনা রাহেলার।
চলবে…
আন্নামা চৌধুরী
২৩.০৩.২০২২